প্রাপ্তবয়ষ্ক – ৩ (well, not entirely!)

CCB তে জয়েন করেছি প্রায় এক সপ্তাহ হোল। জীবনে কোনদিন বাংলায় লিখিনি কম্পিউটার এ, ব্লগ তো দূরের কথা। এমনকি হাতে বাংলা লিখেছি সেও মনে হয় বছর পাঁচেক আগে (প্রেমিকাকে তো আর ইংরেজিতে চিঠি লেখা যায় না)। সেদিন হাতে লিখতে গিয়ে দেখি হাত কাঁপে, দুলাইন লিখেই হাত ব্যাথা। এমনকি হাতে ইংরেজিও লেখা হয় না। গণক মহাশয়ের সামনে সারাদিন বসে থাকি, বোতাম টিপি,অন্য কিছু করার উপায় কই। জামান স্যার এর ঝাড়ি শুনে (আমার হাতের লেখা নাকি ক্লাস টু-থ্রির পোলাপাইনের মত) এস এস সি পরীক্ষার আগে রীতিমত ঘ্যান্না দিলাম। মান ইজ্জত নিয়া টানাটানি। টানা এক বছর লেগে থাকার ফল মিললো, চলনসই হাতের লেখা দিয়ে পাশ করলাম। মাগার এতদিন পর যেই লাউ সেই কদু, আবার ক্লাস টু থ্রির পোলাপাইন এর স্তরে প্রত্যাবর্তন।

জীবনে কোনদিন না লিখলেও এই ব্লগে লিখে যে উৎসাহ পেয়েছি তাতে কলেজে আমার একমাত্র লেখাজোখার পুরস্কার এর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। প্রত্যেক বছরেই আর সব কলেজ এর মতই হাউজ দেয়াল পত্রিকার কম্পিটিশান হোত। কতিপয় পোলাপাইন মহা উৎসাহে লেখা দিত। আমারে ত এটম বোমা মারলেও অইসব হইতো না। কিন্তু এইসব আঁতেল পোলাপাইন তো আর বেশি ছিল না, যথারীতি ঘুরেফিরে পূর্ববর্তি বছরের লেখা গুলোই ঘুরে ফিরে আসত। তখন ক্লাস টুয়েল্ভ এ, কোনপ্রকার এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটি না কইরাও কেমন কইরা জানি আমারে HP বানাইয়া দিলো। এখন হাউজ ম্যাগাজিন পাব্লিস এর সময় যখন আসলো, আমি হাউস কালচার আর কতিপয় জুনিয়র পোলাপাইনরে কইলাম তোমরা যা ইচ্ছা কর, আমি কিছু জানিনা। যথারীতি হাউজ হইল সেকেন্ড না থার্ড। বছর শেষে ফাইনাল প্রাইজ দিতাছে। আমগো হাউজ চ্যাম্পিয়ন হইতাছে সবাই জানি, আমিও সেই উত্তেজনায় সামনে বইসা আছি কখন হাউজ চ্যাম্পিয়ন ট্রফি নিমু এই প্রিপারেশান নিতাছি। হঠাৎ দেখি আমার নাম ঘোষনা করতাছে। প্রিন্সিপাল এর কাছ থিকা প্রাইজ নিলাম একখান বই, মাগার আমি নিজেই জানিনা কিসের পুরস্কার। পরে জানলাম যথারীতি ম্যাগাজিন এর লেখা যথেষ্ট পাওয়া যায় নাই, পোলাপাইন বছর তিনেক পুরান আগের ম্যাগাজিনের এক প্রাইজ পাওয়া গল্প আমার নামে লিখখা দিছে। হালায় বদ পোলাপাইন আমারে কয়ও নাই যে আমার নাম দিছে। মানির মান আল্লায় রাখে, দুই নাম্বারির পুরস্কার গোল্লায় যায়। কলেজ থিকা বাইর হইয়া অই বই কই হারাইছে আর খুইজা পাই নাই। আহারে আমার সাহিত্য চর্চার একমাত্র পুরস্কার!

লেখালেখির কথা যখন বলছি, আমিও অনেকের সাথে একমত যে শুধুমাত্র সৃতিচারনমুলক লেখা লিখলে বল্গ অনেকটাই একঘেয়ে হয়ে যাবে। অন্যান্য বিষয়ে লেখা হলে ব্লগ অনেক সমৃদ্ধ হবে বলে আমার ধারনা। ভ্রমন, ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা, পড়াশোনা, চাকরি, বিদেশের জীবন, নানা বিষয়ে ব্যাক্তিগত অভিমত, উপদেশ অন্যান্যদের উপকারে আসতে পারে। বিশেষ করে আমাদের বড় একটা অংশ যখন ছাত্র, ভবিষ্যত জীবনে তারা যেন সফল হতে পারে সে বিষয়ে সিনিয়ররা যারা প্রতিষ্ঠিত তারা তাদের ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে সহায়তা করতে পারেন। কলেজের ছয় বছর তো অনেক পোংটামি করছেন, এইবার ভাল কিছু করেন 😉 । ভেবে দেখার অনুরোধ রইল। পলিটিক্স এক কথায় না।

লেখার টাইটেল এর সাথে ব্লগ এর বিষয়বস্তু মনে হয় খুব একটা মিলছে না। পোলাপাইন খেইপা যাইতে পারে। তো লাইনে আসি। কলেজে পোলাপাইনের মধ্যে অনেক রকম প্রতিযোগিতা হোত। কেউ পড়াশোনায়, কেউবা এক্সট্রা কারিকুলার এ, কেউবা অ্যথলেটিক্স এ। কিন্তু দুই বদ এর মধ্যে একটু অন্য রকম কম্পিটিশন ছিল (ইচ্ছা কইরা না হইলেও)। কে কত জায়গায় নিজের হতেও পারত বংশধরের(!) চিহ্ন রেখে গেছে। বাপ মায়ের বিদেশ থাকার সুবাদে একজন কত দেশে তার কৃতীত্তের সাক্ষর রেখেছে, আরেক জন ছিল কলেজের কতসব আজীব যায়গায়। প্রথম জন ইংল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড সহ আর কিছু দেশে বাংলার দামাল ছেলের চিহ্ন স্থাপন করে গেছেন(আল্লাহ তার হায়াত দারাজ করুন, সবাই বলেন আমিন)। দ্বিতীয় জনের অনেক কয়েকটির মধ্যে ছিল কলেজ সুইমিং পুল (while swimming in the moddle of the pool, I don’t know how he did that, একহাতে সাঁতরানো বেশ অসম্ভব কাজ বলেই আমার জানা ছিল), শীতের রাতে কলেজ ফুটবল গ্রাউন্ড এর মাঝখানে মাঝরাতে। আরেকটি ছিল ক্লাস সেভেন এর ক্লাস রুমে রাতে প্রেপ গার্ড দেবার সময়। পাঠক বিবেচনা করবেন কার জয় হয়েছিল।

২,১৫৮ বার দেখা হয়েছে

১৮ টি মন্তব্য : “প্রাপ্তবয়ষ্ক – ৩ (well, not entirely!)”

  1. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)
    আরেকটি ছিল ক্লাস সেভেন এর ক্লাস রুমে রাতে প্রেপ গার্ড দেবার সময়।

    এইটা কেমনে সম্ভব?ওই মিয়া...কি কন এইগুলা?ও বুঝছি।ভাইজান কেলাস সেভেন রে সারা কলেজ চক্করে পাঠাইছিলেন আর সেই সু্যোগে... 😛

    নিঃসন্দেহে এই ভাই পরথম পুরষ্কারের দাবীদার...

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    দ্বিতীয় জনের অনেক কয়েকটির মধ্যে ছিল কলেজ সুইমিং পুল
    মর্তুজা ভাই, কন কলেজের সুইমিংপুল?


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    মাসরুফ, আমি ৫১'র, আমি জাহাঙ্গীর কম্পানিতেই ছিলাম, তাসফিক আর আমি পুরা ২ বছর জাহাঙ্গির এই ছিলাম। বিএমএ তে নাম কি ছিল তোমার?


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  4. মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)
    আমিও অনেকের সাথে একমত যে শুধুমাত্র সৃতিচারনমুলক লেখা লিখলে বল্গ অনেকটাই একঘেয়ে হয়ে যাবে

    সহমত। ব্লগের একঘেয়েমিত্ব বাঁচাতে অন্যান্য বিষয়েও লেখা চাই।

    জবাব দিন
  5. তৌহিদ (৯৫-০১)

    মরতুজা ভাই

    অসম্ভব কিছু লেখা লিখছেন । আমরা সবসময় নিজেরা এই সব নিয়া আড্ডা মারি কিন্তু ব্লগে এত গুছায়া লেখা...গ্রেট ।
    ক্যাডেট কলেজ জিন্দাবাদ...

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাসরুফ

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।