প্রাপ্তবয়ষ্ক – ১

টাইটেল দেখেই বোঝা উচিত এই পুষ্ট খানা সকলের জইন্য প্রযোজ্য নাও হইতে পারে। তয় আমার ধারনা ইহা সকলেই পড়িবে এবং সকলের জইন্যই ইহা প্রযোজ্য হইবেক।

আজ রবিবার ছিল। এমনিতে রোযা, তারওপর বাসায় কোন কাজ নাই। সন্ধায় এক বাসায় ইফতার এর দাওয়াত আছে। তাই সকালে (আমার উইকএন্ড এর সকাল মানে আবার দুপুর বারোটার পর) ঘুম থেকে উঠে ভাব্লাম বাসায় কাম কাজ যহন নাই, যাই অফিস গিয়া কম্পিউটার গুতাই গিয়া। তাছাড়া সোমবার দিন একটা কাজ এর ডেডলাইন আছে। ভাবসিলাম দুই ঘন্টার মামলা, মাগার ঘন্টা চাইরেক পরে কোনমতে ফাইনাল বিল্ড/টেষ্ট শেষ হইলো। ক্ষুদ্রনরম কোম্পানির আরামদায়ক অফিস এ বইসা বইসা ভাবতাসি এহন কি করি। হঠাত মনে হইলো আমার গত পুষ্ট এ এক ছোট ভাই এর আবদার “বস ট্রেইলার তো দেখাইলেন। আসল লেখা এইবার ছাড়েন। ” তো ভাব্লাম আসল লেখাই লিখি। শুরুর আগে গুরুর নাম লইয়া লই। জয় বাবা রসময় গুপ্ত, গুরু তোমায় পেন্নাম।

ঠিক কবে বড় হয়েছিলাম খেয়াল নেই। তবে অতি পাকনা আর ত্যাদড় কিছু পোলাপাইন এর কাছে অচেনা কিছু উচ্চমার্গিয় পুস্তক দেখিয়া বুঝিতে পারিলাম চারিদিকে কিছু একটা ঘটিতেছে। প্রথম প্রথম অইসব অশ্লীল মাগার গীয়ানগর্ভ পুস্তিকা দেখিয়া ভয়ে গুটাইয়া গেলেও বুঝিলাম ইহাই নিয়তি। সেই ৯৩/৯৪ এর দিকে অতটা উচ্চমানের প্রিন্টিং এর পাওয়া যেত না। যা ছিল সবই সাদাকালো, অদ্ভুত সব সাদাকালো ছবি। পুস্তকের সাইজ ও ছিল বড়। তবে শেষের দিকে মনে হয় রঙ্গিন ও পাওয়া যেত। আমার হাউজের একজনের কাছে আবার সবসময় ষ্টক ফুল থাকতো। ওর লুকানোর টেকনিক দেইখা আমিই মাঝে মইদ্ধে ভিরমি খাইতাম। কখনো নোট খাতার মলাট এর ভিতরে সেলাই করা, কখনো লকার এর ডেকরেশান এর পিছনে। একদিন দেহি হালায় প্রেপ টাইমে কালো জুতার সুকতলির নীচ থিক্কা এক পিস রঙ্গিন ছবি বাইর করছে। ওস্তাদের মাইর জুতার তলে। শুরু হইল সত্যিকারের গীয়ান অর্জন।

প্রতিবার যখন কলেজে ফিরতাম, ঢাকা-বরিশাল লঞ্চই ছিলো মোক্ষম যাতায়াত এর বাহন। আর লঞ্চগুলা ছিল রসময় গুপ্ত সাহেবের নোবেল প্রাইজ কোয়ালিটির পুস্তকে ভরপুর। কত চাই। যথারিতি প্রত্যেক টার্ম এ নতুন নতুন ষ্টকের আগমন আর পোলাপাইন এর চোদ্দটা বাজা। স্ট্যাটিস্টিক্স এর পোলাপাইন গুলা পর্যন্ত বায়োলজি বইখানার বিশেষ বিশেষ চ্যাপ্টার পড়িয়া যাইতে লাগিল। মনে পড়ে বাংলা ছিঃনেমার পরসিদ্ধ নায়িকা মৌসুমি তখনও কেয়ামত সে কেয়ামত করে নাই। সদ্দ্য টিভিতে মৌসুমির জনী প্রিন্ট শাড়ীর অ্যাড দেখানো শুরু করছে। অ্যাড এর আওয়াজ সুনলেই হইত, মনে হইত যেন তিন হাইজে ভুমিকম্প লাগছে। সব রুম থিক্কা পোলাপাইন দৌড়াইয়া দৌড়াইয়া টিভি রুম এর দিকে রওয়ানা দিত। আইজকাইল্কার পোলাপাইন যাহারা মৌসুমির ৩০০ কেজি বস্তা দেখিয়া অভ্যস্ত, তাহারা যতই হাসো না কেন ইন দা ইয়ার অফ ১৯৬৯ যখন তোমরা বাচ্চালোগ জন্ম গ্রহন করো নাই, তখন মৌসুমি আপা সত্তই বড় সৈন্দর্য ছিলেন। সিনিয়র রা হয়ত আজকে স্বীকার করতে চাইবেন না, মাগার মনে মনে সকলেই জানেন সেই সব দিনে বাথরুম টয়লেট এ যে কত হাহাকার আর ক্ষনিক উত্তেজনা জলে মিশিয়া গিয়াছে শরতচন্দ্রের ভাষায় “তাহার ইয়ত্তা নাই”। আজো কানে বাজে সেই গান “প্রিয় প্রিয় প্রিয়, প্রিয় সুন্দরি প্রিন্ট শাড়ি”।

আজকের পুষ্ট খানা একখানা ছোট গল্প বলিয়া শেষ করিবো। তখন মনে হয় ক্লাস নাইন এ পড়ি। প্রত্যেক মাসে হাউজে ভিসিপি তে সিনেমা দেখা হত। বাচ্চালোগ, আবার হাসিও না, in the year of 1969 (মানে ১৯৯১-১৯৯৭) ভিসিপি ই ছিল একমাত্র ভরসা। সিডি প্লেয়ার তখন ও আসে নাই। যাই হোক। প্রায় সব সিনেমাই হত হিন্দি, হঠাত হঠাত হয়তবা ইংরেজি। তো সেদিন একখানা হিন্দি দেখার পরে কলেজ কালচারাল ভাই সাব একখানা কি জানি সিনেমা ঢুকাইয়া দিলেন। বলা নাই কওয়া নাই, যে চিত্র টিভি তে ভাসিয়া উঠিল তাতে ক্লাস টুয়েল্ভ ও বুঝিতে পারেতেছিল না কর্তব্য কি। শুধু মনে আছে হাউজের সব পোলাপাইন হা করিয়া টিভির দিকে তাকাইয়া আছি। ৫-১০ সেকেন্ডের সীনে কি দেখেছিলাম আজো আমার মনে আছে। আজ পর্যন্ত অনেক কিছু দেখিয়াছি, এমনকি লাইভ শোও দেখিয়াছি এই বিদেশ বিভুইএ বেশ কয়েকবার (সে গল্প আরেক দিন করব)। স্যান ফ্রান্সিস্‌কোর সেই সব লাইভ অপ্‌সরির (I mean it) চেহারা ভুলিয়া গিয়াছি মাগার সেদিন যা দেখিয়াছিলাম তাহা আজো ভুলি নাই।

যাই হোক, আইজকা এইখানেই ক্ষ্যামা দিতে হচ্ছে। ইফতার এর টাইম সমাগত। আল্লায় দিলে ইফতার আইজকা সাড়ে সাতটায়। কদিন আগেও ছিল আটটায়। সামার এ সুর্য অস্ত যায় পোনে দশটায়। তখন কি হবে আপাতত সেটাই ভাবছি। নেক্সট কিস্তিতে কি লেখব সেইটা পরে ভাব্বো। খোশ আমদেদ মাহে রমজান (জয় বাবা রসময়)।

২১,৪৯২ বার দেখা হয়েছে

৬৮ টি মন্তব্য : “প্রাপ্তবয়ষ্ক – ১”

  1. রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

    অনেক কথা মনে পড়ে গেল। আমাদের ইন্টারের সময় মৌসুমী আপার কাহিনির মতো একটা কাহিনী ঘটছিল। ঐ সময় বি৪ইউতে একটা গান প্রায়ই দেখাইতো। ঘরজায়েঙ্গি, ঘরজায়েঙ্গি...দিনের বেলা শুধু শরীয়তুল্লাহ হাউসের কমনরুমটাই খোলা থাকতো। ঐ গান শুরু হইলে সারা হাউসে ধুপ ধাপ স্টার্ট হইতো। আহ!!। B-)

    জবাব দিন
  2. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    মরতুজা,
    তোমার তো দেহি বহুত উন্নতি হইছে...
    চশমার আড়ালের অবুঝ (!!!!!) চউখ দুইটা যে এত জটিল আকার ধারন করছে তা বিশ্বাসই হইতে চায়না...।
    তুমি যে এত জটিল এইটা তো কলেজে থাকতে বুঝি নাই...।
    মুগ্ধ হবো...না অবাক হবো ঠিক বুইঝা উঠতে পারতেছিনা...।
    যাই হউক... তোমার সত্যবাদিতা প্রশংসার যোগ্য।
    ভালো থাইকো...।

    জবাব দিন
  3. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    আমি এই জায়গায় নতুন আসছি।আইসাই ত মাক্ষামারা এক্তা পুস্ত পইরা বিমলানন্দ লাভ করলাম।আমরা যখন কলেজ এ আসিলাম তখন রাশিয়ান এক্তা চেনেল আসত।আমরা নাম দিসিলাম "পকা"।সেই সময় আমাদের থাকার জায়গাই আসিল tv রুম।

    জবাব দিন
  4. জিহাদ (৯৯-০৫)

    আমিও ছুড বেলায় মৌসুমী আপুর ফ্যান ছিলাম। কিন্তু এখন মৌসুমি আন্টিকে আমার একটুও ভাল লাগেনা 🙁

    লেখাটা পুরা লা জওয়াব হইসে। এরম খারাপ খারাপ কথা এত ভাল করে লেখা আসলেই শক্ত কাম। তো আপনে ক্ষুদ্র নরমই থাকেন আর বৃহৎ নরমই থাকেন। 😛 😛


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  5. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    রফিক নওশাদ স্যার আমাদের কলেজে এসেই শেরে বাংলা হাউসের হাউস মাস্টার হলেন। তার নেয়া নতুন কার্যক্রমের মধ্যে একটা ছিল 'অপরাধ খাতা'। হাউসের ক্যাডেটরা কেউ কোন গেঞ্জাম করে ধরা খাইলে ঐ খাতায় নাম উঠে যেত আর এই বলে প্রতিজ্ঞা করে স্বাক্ষর করতে হত যে "ইহজনমে এই কর্ম আর করিব না"। ঐ অপরাধ খাতাটা শুরু হইছিল মৌসুমী আপার ভিউকার্ড দিয়ে। ভিকটিম (আমার ক্লাসমেট) "কেয়ামত থেকে কেয়ামত" দেখে মৌসুমীতে দিওয়ানা হয়েছিল। আর ঐ ভিউকার্ডখানা ক্লাসরুমের বোর্ডে টাঙ্গিয়ে দিয়েছিল মাত্র। সদ্য ক্লাস এইটে ওঠা পোলার এহেন দুষ্কর্মে রফিক নওশাদ স্যার "কেয়ামতের আলামত" দেখতে পেয়েছিলেন।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  6. সাব্বির (৯৭-০৩)

    সেই ৯৩/৯৪ এর দিকে অতটা উচ্চমানের প্রিন্টিং এর পাওয়া যেত না। যা ছিল সবই সাদাকালো, অদ্ভুত সব সাদাকালো ছবি
    সিনিয়র রা হয়ত আজকে স্বীকার করতে চাইবেন না, মাগার মনে মনে সকলেই জানেন সেই সব দিনে বাথরুম টয়লেট এ যে কত হাহাকার আর ক্ষনিক উত্তেজনা জলে মিশিয়া গিয়াছে শরতচন্দ্রের ভাষায় ”তাহার ইয়ত্তা নাই”।

    :shy:

    জবাব দিন
  7. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    লেখা লাজওয়াব হইছে। :boss:
    কলেজে থাকতে আবার আমি হুজুর টাইপের আছিলাম। এইসব দেখলে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়তাম। x-( অধিকাংশ ক্যাডেটেরই যা হয়, বড় হইতে হইতে বদ হইয়া যায়। আমিও ভাই বদ হয়া গেছি। 😛
    লেখতে থাকেন। কলেজে আমার এই ধরণের কোন স্মৃতি নাই। তাই পড়তে আরও মজা। :))
    কোন রাখঢাক কইরেন না। দরকার হইলে আমরা বয়স আরেকটু বাড়ায়া লমু নে। 😀

    জবাব দিন
  8. আজীজ হাসান মুন্না (৯১-৯৭)

    হা হা হা...কেয়ামত থেকে কেয়ামত(১৯৯৩) - আমাদের কিশোর বেলার জটিল স্মৃতি ...সেই আমলে যখন internet technology আসে নাই ,আসে নাই adobe photoshop তখন আমাদের এক বন্ধু (hunain,28)দিন রাইত সাধনা কইরা মৌসুমি-সালমান শাহ এর একটা ভিউ card থেকে সালমান শাহ এর মস্তক অদ্ভূত শৈল্পিক দক্ষতায় সরিয়ে নিজেকে বসালো! হাল্কা এবং পাতলা গোলাপি শাড়ী পরিহিতা মৌসুমিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছে সালমান (আমাদের সেই বন্ধু ) দৃশ্যটা ছিল বাপক উত্তেজক আর আজকের হস্তিনি মৌসুমি তখন বেশ স্লিম ছিল, আমরা দল বেধে খায়বার এবং বদর হাউস থেকে ঐটা দেখতে যেতাম|যথারিতি কোন এক ইনসপেকশনে জিনিসটা ধরা পরে গেল...বন্ধুটির কি হয়েছিল সেইটা থেকেও মজার হল পূণেন্দু কুমার রায় স্যার (JCC, SCC) এর শেই বিখ্যাত নাঁকি সুঁরে চিঁতকার ঃ
    "নঁর্তকির সাঁথে ছঁবি তুঁলেছে শূয়ার"

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহসান (১৯৮৮- ১৯৯৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।