স্ট্যাটাস-টাইপ পোস্ট

অনেকদিন পর অনেকের উপস্থিতি দেখে ভাব্লাম হাল্কার উপর ঝাপ্সা লিখখা ফালাই।

১। শান্তাপু, প্রথমে আপনার কাছে মাফ চেয়ে শুরু করতে চাই। আপনি আমাকে মনে রেখেছেন কিনা জানিনা, তবে ২০০৭ এর ফেব্রুয়ারীতে আপনাদের বাসায় এক সপ্তাহ আতিথ্য নেয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল ব্রডকমে ইন্টার্ন করার সুবাদে। আমি অনেকভাব ভেবেছি আপনাকে বা নির্ঝর ভাইকে ফোন করব (ফোন নাম্বার এখনও সেভ করে রেখেছি), কিন্তু অতিরিক্ত মুখচোরা হবার কারনে করা হয়নি। আমার বউ এখনো বলে ফোন কর (অকৃতজ্ঞ বলে ঝাড়ি মেরে), আমি বলি থাক, একবারে বে-এরিয়াতে গিয়ে সরাসরি আপনার বাসায় হানা দিয়ে আমার কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আসব।

এখনো আশা ছাড়িনি, সিয়াটল থেকে ড্রাইভ করে আপনাদের ওখান থেকে ঢু মেরে যাবার প্ল্যান এখনও আমার টপ লিস্টে। নির্ঝর ভাইকে আমার সালাম দিয়েন, বইলেন এই অকৃতজ্ঞ এখনো ভোলে নাই। আপনার পিচ্চি দুইটার কথা অনেক মনে পড়ে নিজের মেয়েটাকে দেখলে।

২। নভেম্বরে ঢাকা গিয়েছিলাম। কামরুল, জিহাদ, আরো অনেকের সাথে দেখে হোল। জিতুপির বাসায় জিটুজিও খেলাম। তবে এবারের ঢাকা সফরের সবচাইতে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে কলেজের রি-ইউনিয়ন। যেদিন কলেজে গেলাম, সেদিন দুপুর হতেই পেট বাবাজি বিগড়ে বসলেন, রাত হতে না হতেই বার বিশেক বদনা হাতে দৌড়ানি, সারা রাত জেগে থেকে খালি যাওয়া আর আসা, শেষ পর্যন্ত সকালে কলেজ হাস্পাতালে ভর্তি ফুড পয়জনিং এর জন্য। ফলে রি-ইউনিয়নের সেকেন্ড দিন/রাত থাকলাম হাসপাতালে। পরের দিন সকালে ছাড়া পেলাম।

কলেজে থাকার সময় কত দোয়া করতাম যাতে দু-একদিন হাসপাতালে থাকা যায়। ছয় বছরে সর্বসাকুল্যে সেভেনে দুই দিন ছিলাম জ্বর নিয়ে। আর এবার না চাইতেই…

৩। বাসা বদলানো যে কি ঝামেলার কাজ তা ভুক্তভোগি মাত্রই জানেন। আমার কপাল এমনই যে গত আড়াই বছরে তিন বার এই ঝামেলা করলাম। না না মনে হয় চার বার। প্রথম যখন বউ দেশ থেকে এখানে এল তখন একবার। কারন তার আগে বড় এক বাড়িতে এক রুম সাব্লেট নিয়ে থাকতাম। বউ আসার আগে নিজের বাসা দরকার। তাই খুজে পেতে এক বেড-এক ড্রইং এর এক অ্যাপার্টমেন্টে উঠলাম।

কিপটামি করে টাকা বাচানোর জন্য দুই বেড নিলাম না। কিন্তু মাস খানেক পর যখন পিচ্চি হবার সময় হোল তখন মাথায় হাত। কারন দেশ থেকে বাব-মা আসবে, তাদের কোই রাখব? অতএব, বাসা বদলাও, দুই বেডের বাসা নিলাম। কিন্তু বাসা সেলেক্ট করার দায়িত্ত্ব দিলাম বৌয়ের হাতে। বললাম তুমি যে বাসা নিবা সেটাতেই আমি রাজি। গাধামি হয়েছে বুঝলাম মাসখানেক পরে। প্রতিদিন লম্বা কমিউট করে অফিসে যাওয়া আসা বিরক্তিকর হয়ে উঠল। তার উপর বাসা ছিল ডুপ্লেক্স, মানে সিড়িওয়াল। পিচ্চি একটু বড় হতেই সিড়ি বাওয়া শুরু করল। অতএব আবার বাসা পাল্টাও।

পরের বাসাটা খুব ভাল মতে হোল। অফিস থেকে দু-মিনিটের রাস্তা, রুমগুলো বড় বড়, আলো একটু কম, তবে সবমিলিয়ে স্টার মার্ক। ছাড়ার কোন ইচ্ছেই ছিল না। কিন্তু যখন দেখলাম আরেক দিকে সুযোগ চলে যাচ্ছে, সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বাধ্য হলাম। আমেরিকার বাড়ির বাজার এখন সবচাইতে খারাপ, মানে অর্থনৈতিক মন্দার কারনে বাড়ির দাম মারাত্তক পড়ে গিয়েছে। কিন্তু একই সাথে বাড়ির জন্য লোন পাওয়াও মুস্কিল হয়ে গেছে। আগে যেমন ব্যাংকে লোন চাইলেই দিয়ে দিত কোন প্রকার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক না করে, এখন তার উলটো। তাই অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম বাড়ি কিনব। কিন্তু ব্যাটে বলে হচ্ছিল না। ব্যাংক যে পরিমান ডাউন পেমেন্ট চায় তা দেবার সামর্থ ছিল না। মেয়ের ভাগ্যেই মনে হয় (সাথে সিসিবির সকলের দোয়া), রিসেশনের পর থেকে স্টক মার্কেটে বেশ কিছু লাভ করেছিলাম। গত মাসে তা ডাউন পেমেন্ট দেবার পর্যায়ে পৌছালে ভাব্লাম কিনেই ফেলি। ফলাফল এক সপ্তাহের নোটিশে বাড়ি কেনা এবং আবার বাসা বদল। শান্তাপু, আপনাদের দাওয়াত রইল, যদি কোনদিন এদিকে আসার প্ল্যান থাকে জানাবেন। নিজেকে কৃতার্থ মনে করব। বাকিদেরও দাওয়াত রইল।

৪। মেয়ে আমার দিন দিন চোখের সামনে বড় হয়ে যাচ্ছে। নিজের ভাষায় কি কি বলে কে জানে, কিন্তু বাবা-মা বলতে তার যত আপত্তি। প্রতিদিন বাসায় ফেরার পর সে দু-হাত উপরে তুলে দৌড়ে আমার কোলে আসে, আমি বাবা বলানোর চেস্টা করি, সে কোলে থেকে দু-সেকেন্ড আঙ্গুল চুষে আবার নেমে মায়ের কোলে গিয়ে ওঠে। কিন্তু বাবা আর বলে না। কবে যে অপেক্ষা শেষ হবে!

আপাতত স্ট্যাটাস এইটুকুই। মেয়ে কথা বলা শুরু করলে আবার হাজির হবনে।

৪,৪৩১ বার দেখা হয়েছে

৬৬ টি মন্তব্য : “স্ট্যাটাস-টাইপ পোস্ট”

  1. ইফতেখার (৯৫-০১)

    খাইসে ... পুরা বাড়ির মালিক হৈয়া গেসেন !! সব্বেশ !! কনগ্র্যাটস!

    আরেক্টু হৈলেই তো বলতেন যে মেয়ে কলেজে গেলে আসবোনে ... তাও তা হয় এক্টু ট্রাফিকের সুবাদে এখনই চৈলা আসছেন 😉 মেয়ে কিউট হৈসে মাশাল্লাহ।

    ভালো থাইকেন মর্তুজা ভাই।

    জবাব দিন
  2. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    ইয়ে মরতুজা ভাই আমাদের বাচ্চালোকদের জন্য লেখা আনার সিরিজ খুব মিস করি :shy: :shy: :shy:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  3. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    ঐ মরতুজা, আছো টাছো কেমন?

    তোমার বাচ্চা তো মাশাআল্লাহ খুব সুন্দর হইছে, হাসিটা মারাত্মক।

    বাড়ির মালিক হবার জন্য অভিনন্দন। খাওয়াইবা কবে? আবার আম্রিকায় দাওয়াত দিয়া বইসো না কিন্তু, যা দিনকাল পড়ছে, 😛


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  4. রাব্বী (৯২-৯৮)
    ভাইয়া, খুব ভাল লেখা। আপনার লেখা যত পড়ছি, আপনাকে যতো বেশি জানতে পারছি, মুগ্ধতা যেন ততোই বাড়ছে।

    একটা চোথা মেরে দিলাম মুর্তজা ভাই 😀


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
  5. সামিয়া (৯৯-০৫)

    ওমগ!! আপনি তো বিশাল বড়লোক...!! বাড়ি আছে, মেয়ে আছে...এবার দরকার জামাই... 😀
    বাবা ডাক নিয়ে এত দুঃখ করেন না মরতুজা ভাই, আমার ভাগনী বাবা-মা কিছুই বলতে পারে না, পারে 'ডেকচী' বলতে। এত কিছু থাকতে তার ডেকচীর ওপর কেন এত ভালবাসা জানিনা 🙁
    আপনার মেয়েটা এত্ত সুইট এত্ত সুইট... অনেক দিন পর মরতুজীয় পোস্ট পড়লাম...খুবই ভাল্লাগলো। দোয়া করেন এরপর যেন আপনার পস্টে এসে 'অনেকদিন পরে পড়লাম' কথাটা না বলতে হয় 😀

    জবাব দিন
  6. তাইফুর (৯২-৯৮)

    মর্তুজা ভাই,
    খুব ইচ্ছা ছিল দেখা করার ...
    ইনশাল্লাহ আগামীতে ...

    ভাতিঝি মাশাল্লাহ সিরাম কিউটি-মিউটি হইছে ... আদর দিয়েন। ভাবী'কে সালাম
    আর সিসিবি'তে ইট্টু নিয়মিত হন ... আপনাদের ছাড়া ভাল্লাগে না


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  7. জিহাদ (৯৯-০৫)

    এইটা আপনার বাড়ি? দেখে মনে হইতেসে গুগল সার্চ দিয়ে জোগাড় করা। কত বড় বড়লোক রে ভাই! 😀
    ভাতিজি তো সিরাম। কিন্তু কয়দিন আগেই না হইলো, এখনই এত বড়। মানুষ কত তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যায়। খালি নিজের বেলাতেই মনে হয় বয়স বাড়তেসেনা , আগে যতটুকু ছিলাম ততটুকুই আছি 🙁
    নিয়মিত লিখেন ভাই। এত গ্যাপ দিয়া আইলসামি করলে দুই ইঞ্চি ভুড়ি বাইড়া যাবে।


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  8. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    অভিনন্দন বাড়ির মালিক মরতুজা ভাই... ভাগ্নিও মাশাল্লাহ দারুন কিউট হইছে, স্ট্যাটাস তো আপনেই দিবেন 😀


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  9. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    কিউট আম্মুটাকে আদর করতে মন চাইছে। আমার পক্ষ থেকে করে দিও মরতুজা।
    আর বাড়িটা? খুবই সৌন্দর্য্য। অভিনন্দন। :thumbup:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  10. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    মরতুজা - কিছুটা বুঝতে পারতেছি্লাম কিন্তু মেলাতে একটু কষ্ট হচ্ছিল যে এই সেই আমাদের আগুন্তক মরতুজা। কারণ তোমার অতি ভদ্র, মাছ ভাজা উল্টে খেতে না পারা ইমেজের সাথে ব্লগার মরতুজার একতু বেমিল ছিল। আর কৃতজ্ঞতা ধরনের এইসব কী বলতেছ? কী আর করছি আমরা? নির্ঝর অবশ্য বেশ কিছুদিন চিন্তায় ছিল। বলতেছিল বৌ আসতে না পারলে ছেলেটা বোধহয় চলে যাবে। পরে আমি ওকে জানিয়ে দিয়েছি বৌ আসতে পেরেছে।
    অবশ্যই অবশ্যি ক্যালিফোর্নিয়া ঢু মারবে। এই সামারে আমরা অবশ্য দেশে যাচ্ছি। এখন তো আপাতত অফিস কাজ থেকে দূরে আছি। তাই সামারে অনেকদিন দেশে থাকার ইচ্ছে।
    বৌএর নাম ভুলে গেছি। আর মেয়েকে অনেক অনেক আদর।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  11. রাশেদ (৯৯-০৫)

    অনেকদিন পর লিখলেন মরতুজা ভাই 🙂
    এর আগে একদিন লিখলেন তখন পিচ্চি একদম পিচ্চি, অনেকদিন পর আজকে লিখলেন দেখি পিচ্চি বড় হয়ে যাচ্ছে আশা করি পিচ্চি স্কুলে যাওয়ার আগেই আরেকবার লিখবেন 😀
    আর স্ট্যাটাসে লাইক মারলাম 🙂


    মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

    জবাব দিন
  12. আন্দালিব (৯৬-০২)

    পিচ্চির কথা মনে করে পোস্টে ঢুকলাম। বাড়ির ছবি দেখে তাব্ধা খেয়ে পরে পিচ্চির ছবি দেখে আরো বড়ো তাব্ধা খেয়ে গেলাম! বাবুটা হুট করেই বড়ো হয়ে যাচ্ছে। দেখেই ভালো লাগলো!

    জবাব দিন
  13. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    মরতুজা ভাই,
    মেয়েই এত বড় হয়ে গেছে, আপনি না জানি কত বড় হয়েছেন!!! :dreamy:

    সপরিবারে সগৌরবে মহাসমারহে ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন...


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  14. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    অসাধারণ কিউট একটা মেয়ের বাবা হোয়ার জন্য :hatsoff:
    স্বপ্নের মতো বাড়ির মালিক হওয়ার জন্য আবারও :hatsoff:
    বহুদিন পর এমন নদারুণ এক্টা লেখা দেয়ার জন্যও :hatsoff:


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  15. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    ভাইয়া অনেকদিন পরে মনে পড়ল দেখি। পিচ্চিটা মাশা আল্লাহ অনেক কিউট হয়েছে। মানুষ হোক প্রোটোটাইপ কিংবা হাল জামানার মানুষের মত নয়। একেবারে আস্ত একটা সত্যিকারের মানুষ।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মরতুজা (৯১-৯৭)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।