শৈশব

১.

বাসা থেকে এক দৌড়ে বের হয় সাজিদ। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই অপেক্ষা করছিল কখন আব্বু অফিস যাবে। স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি চলছে। আম্মুকে সে থোড়াই পাত্তা দেয়। শুধু আব্বু যখন বাসায় থাকে তখন একটু বাঁদরামিতে লাগাম থাকে। নইলে সারাদিন খালি টো টো করে ঘোরা। মফস্বলে থাকা বলে ঘোরার যায়গার অভাব নেই। বাসা থেকে দু’পা বেরোলেই অজানার হাতছানি।

আজকে বেশি দূরে যাবার ইচ্ছে নেই। বাসার পিছনেই পুরানো অফিসার্স কোয়ার্টার। অনেক আগেই পরিত্যাক্ত। ভাঙ্গাচোরা কয়েকটা ঘর, বাদুরের বিষ্ঠা আর ময়লায় সয়লাব। গাছের পাতা ভাঙ্গা লাল টালির ছাদ দিয়ে মেঝেতে পড়ে আছে। তবে সেদিকে সাজিদের উৎসাহ নেই। তার নজর ঘরগুলোর কাঠের বীমগুলোর দিকে। পুরানো কাঠের ভিতর গর্ত করে থাকে অনেকগুলো বড় বড় কালো ভোমরা। ঠিক যেন রুপকথার গল্পের মত। সহজে কামড়ায় না, তবে দেখলেই ভয় লাগে। তবে সাজিদ খুব একটা পাত্তা দেয়না। খুব সাবধানে পকেট থেকে সাজিদ তার মালমসলা বের করে। রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া একটা সিরিঞ্জ আর একটা হোমিওপ্যাথির মাঝারি সাইজের শিষি। শিষির মধ্যে গতকাল রাতেই ও কেরোসিন ভরে রেখেছে।

খুব সাবধানে শিষির ভেতর সিরিঞ্জ ঢুকিয়ে সাজিদ কেরোসিন টেনে নিতে থাকে। মুখে কেমন যেন একটা নেশার মত ফুটে ওঠে। ভরা হয়ে গেলে খুব সাবধানে পা টিপে টিপে কাঠের বীমের ভিতর থাকা ভোমরা গুলোর গর্তের দিকে এগিয়ে যায়। প্রথমে সামান্য চাপ দিয়ে সিরিঞ্জ থেকে একটু কেরোসিন গর্তের মধ্যে ছিটিয়ে দেয়। তাতে ভোমরাগুলো কেমন যেন অজ্ঞানের মত হয়ে গর্ত থেকে বের হয়ে আসে। এরপর ধীরে ধীরে একটা আধমরা ভোমরাকে সাজিদ কাঠি দিয়ে চেপে ধরে। সিরিনজের বাকি কেরোসিন এবার ধীরে ধীরে কালো পেটমোটা ভোমরার পেটে ঢুকিয়ে আরো মোটা করে ফেলে। সাজিদের মুখটা উত্তেজনায় আরো চকচক করে ওঠে। সাবধানে এবার পকেট থেকে মার রান্নাঘর থেকে মেরে দেয়া দেশলাইটা বের করে। ফস করে একটা কাঠি জ্বালিয়ে ছুড়ে দেয় পেটমোটা ভোমরাটার উপর ছুড়ে দেয়। দপ করে জ্বলে ওঠে কালো পতঙ্গটা। পুটপুট করে পুড়তে পুড়তে একসময় ফট করে বেশ বড় একটা শব্দ করে ফেটে যায়। যাক, আজকের মত খেলা শেষ। মালমসলা পকেটে ঢুকিয়ে সাজিদ সন্তুষ্ট মনে হাঁটা দেয়ে।

২.

নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয়েছে। এখনো সব বই কেনা হয়নি। কিনি কিনি করেও সাজিদের আর হল থেকে নীলক্ষেতের দিকে যাওয়া হয় না। তবে আজ বিকেলে যেতেই হবে। সামনের সপ্তাহে কুইজের ডেট দিয়েছে। বই না কিনলেই নয়। বিকেল বেলা রিকশাওয়ালার সাথে ভাড়া নিয়ে এক পশলা ঝগড়া করে নীলক্ষেতে এসে নামে সাজিদ। দোকানে বই দেখতে দেখতে পাশের দোকানে দাঁড়ানো মহিলার দিকে চোখ চলে যায় হঠাৎ। খুব সম্ভবত গল্পের বই দেখছেন। হাল্কা গোলাপী রংয়ের ছাপ দেয়া শাড়ী পরনে। বেশ আকর্ষনীয় সৌন্দর্য মহিলার। শরীরের বাঁকগুলো চোখে নেশা ধরিয়ে দেয়ার মত। বই দেখতে দেখতে আড় চোখে মহিলার দিকে তাকাতে থাকে সাজিদ। কোমরের কাছে শাড়ীর ফাক গলে মহিলার সাদা কোমর দেখতে থাকে। ভাবতে থাকে ব্লেড দিয়ে ওখানে পোচ দিলে কিরকম হবে ব্যাপারটা। প্রথমে মনে হয় কিছুক্ষন সাদা চামড়াটা হা হয়ে থাকবে। তারপর ধীরে ধীরে গাড় লাল রক্ত চামড়ার নিচের সাদা চর্বি চুয়ে বেরোতে থাকবে। নিশ্চই দেখার মত হবে জিনিসটা। কানটা কেমন যেন গরম হয়ে ওঠে সাজিদের।

৩,১৭০ বার দেখা হয়েছে

৪৪ টি মন্তব্য : “শৈশব”

  1. তানভীর (৯৪-০০)

    খাইছে......কি সাঙ্ঘাতিক গল্প! :boss:

    মরতুজা ভাই, আপনার প্রোফাইল পিকটা দারুণ হইছে... 🙂
    ইয়ে মানে......ভাইয়া, আমাদের মত কচিকাঁচাদের নিয়ে আপনার সিরিজের পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি... 😀

    জবাব দিন
  2. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    সাইকো গল্প ! 😀

    এই ব্যাটা দেখি মহা বেকুব। মেয়েদের সাদা কোমর দেখলে আমার তো অন্য কিছু করতে মনে চায়। 😛

    ......
    আপনার সাথে কথা নাই। রাগ কইরা আছি, রাগ কমে নাই। 🙁


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  3. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    ১। মর্তুজা ভেংগে এক আর দুই মার্কিং করে দাও। শৈশব থেকে এক দৌড়ে বুয়েটের কুইজে ডুকে পড়েছো। গ্যাপ্টা বুঝা যাচ্ছে না।

    ২। গল্পের দ্বিতীয় অংশের সংগে প্রথম অংশের কোন মিল পেলাম না, শুধু এক বাচ্চার বিকৃত ইচ্ছার বিবর্তিত রূপ দেখলাম,

    গল্প কি এখানে শেষ নাকি তুমি সিরিজ করছো?


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  4. মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

    নায়ক এক। স্থান ও পরিবেশ ভিন্ন। কিন্তু মানসিকতা একই যা বিকৃত। সময়ের ব্যাবধানে শৈশবের বখে যাওয়া সাজিদের পরিনতি ভাল একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না হলে ভাল হত।

    লেখাটা পড়তে পড়তে শেষ হয়ে গেল। ভাল লেগেছে। সিরিজ হিসাবে চললে খুব ভাল হবে। :salute: :salute:

    জবাব দিন
  5. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    একটা ভিন্ন স্বাদ পেলাম মরতুজা। একেবারেই অন্যরকম। তোমার লেখার হাতটা কিন্তু ভালো। লিখ না কেন মাঝে-মধ্যে? :hatsoff:

    কেন মেহেদী ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শয়তান বের হয় না? প্রকৌশলীরা বউ পেটায় না, ডাক্তাররা রোগীকে জিম্মি করে টাকা আদায় করে না! অর্থনীতির ছাত্র বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যৌতুক নেয় না?? বরং ধাক্কাটা ওখানেই দেওয়া দরকার বেশি।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  6. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    ডরাইছি পইড়া।আন্দা ভাইয়ের সাঁ-ঝুপের কথা মনে পইড়া গেল।কেউ আছেন নি মনে করতে পারেন ওই পিজ্জা কাহিনী আর কোপ দিয়া মাংস আলাদা কর।।ওরে বাবা রে... 🙁 🙁

    জবাব দিন
  7. সাজিদ (১৯৯৩-৯৯)

    নায়কের নাম আমার আমার নামের সাথে মিলে যাওয়ায় বেজায় মন খারাপ হইল। 😡 :bash: =(( ~x( :no:


    অভিলাষী মন চন্দ্রে না পাক,
    জ্যোস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই,
    কিছুটাতো চাই, কিছুটাতো চাই।

    জবাব দিন
  8. আহমদ (৮৮-৯৪)

    perfect short-story ... শেষ হইয়াও হইলনা শেষ।

    সিরিজ লেখার দরকার নাই। আরেকটা নতুন কিছু লিখ। সিরিজ লিখলে short-story-এর মজা নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।

    :just: :thumbup:


    চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কামরুল হাসান (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।