বার বার হেরে যাবার গল্প

দুহাজার তিন সালে সায়েন্স গ্রুপ থেকে আমি এইচ এস সি পাস করি, 3.60 আউট অফ 5 এর ভয়াবহ সিজিপিএ নিয়ে| ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ছিলাম, আন্ত: ক্যাডেট কলেজ প্রতিযোগিতাগুলোর কারণে প্রায় সবাই চিনত| ক্যাডেট কলেজের শেষ এক বছর এক্সট্রা কারিকুলামই শুধু করেছি, কারিকুলামটা আর করা হয়ে ওঠেনি| সায়েন্স বিভীষিকার মত লাগত, বিশেষ করে কেমিস্ট্রি| আমার বড় চাচা কেমিস্ট্রি গোল্ড মেডালিস্ট শিক্ষক, কেমিস্ট্রিকে বাবা বলতেন “পারিবারিক সাবজেক্ট”| সেই কেমিস্ট্রিতে পেলাম বি , ম্যাথে সম্ভবত সি|

এইচ এস সি পরীক্ষার রেজাল্টের পরের দু মাস ছিল রীতিমত নরকসম| সফল কোন আত্মীয়/বন্ধুর মা ফোন করতেন আমার মা কে, দূর থেকে অপরাধীর মত শুনতাম আম্মুর কণ্ঠ- “না ভাবী, আমার ছেলে ভাল করেনাই, পাস করেছে কোনরকম”| টপ টপ করে চোখ বেয়ে পানি পড়ত, আমারও, আম্মুরও- কিন্তু যন্ত্রণার সেটা কেবল শুরু|

ইংরেজিতে কিছুটা ভাল ছিলাম, প্রাণপণ চেষ্টা শুরু করলাম আইবিএ এর জন্যে| দিনে বারো থেকে আঠের ঘন্টা পড়াশোনা, ফলাফল হল অশ্বডিম্ব- লিখিত পরীক্ষাতেই টিকলাম না| আইবিএ রেজাল্টের পর মোটামুটি গৃহবন্দীতে পরিণত হলাম- আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে সারাজীবন যাকে তৃতীয় শ্রেনীর গর্ধব বলে জেনেছি, তিনিও আব্বু আম্মুকে ফোন করে জ্ঞান দেয়া শুরু করলেন- আপনার ছেলের কি হবে এখন?

আমাদের সমাজটা কেন জানি ব্যর্থদের প্রতি প্রচন্ড নির্মম| জীবনের কোন একটা লড়াইয়ে আপনি হেরেছেন কি মরেছেন, হায়েনার দল ওত পেতে বসে আছে আপনার দগদগে ঘা তে মরিচগুঁড়ো সহকারে লবন দেবার জন্যে|কেউ একটিবারের জন্যে আপনার ক্ষতবিক্ষত বুকে হাত বুলিয়ে বলবেনা, ” ধুর বোকা, ভেঙে পড়ার কি আছে, এ লড়াই তো শেষ লড়াই না!”

আঁধারের মাঝে আলোকচ্ছটা হয়ে এল আমার আইএসএসবি তে টেকা, তাও সেটা মাত্র কয়েক মাসের জন্যে| বিএমএ যাবার তিন মাসের মধ্যে বুঝতে পারলাম, প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ম মেনে চলা কঠোর এ সেনাজীবনের উপযুক্ত আমি নই| স্বেচ্ছায় চাকুরি ছেড়ে চলে আসার দিন প্লাটুন কমান্ডার মেজর এম বলেছিলেন- You are just a goddamn failure.You have failed here, I can write down in the stamp paper that you will never succeed anywhere in your life.

আর্মিতে যাবার আগে শেষবারের মত জীবনের “রঙ” দেখতে নর্থ সাউথে পরীক্ষা দিয়েছিলাম, ওটাই শেষে ঠিকানা হল| প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ি শুনে আত্মীয় স্বজনদের মধুর মন্তব্য- “বাপের টাকা আছে দেখে করে খাচ্ছে, নাহইলে তো রাস্তায় ইঁট ভাঙারও যোগ্যতা ছিলনা| জানি তো, আর্মি থেকে লাত্থি মেরে বের করে দিয়েছে!”

নর্থ সাউথের পারফরম্যান্সও তথৈবচ, প্রথম দু সেমিস্টারে ছটা সাবজেক্টের পাঁচটায় ফেইল, আরেকটায় সি মাইনাস| এরপর জোর করে কিছুটা পড়াশোনা করে পাস করলাম সাড়ে তিনের কাছাকাছি সিজিপিএ নিয়ে, আমার ডিপার্টমেন্টের ছাত্রছাত্রীদের তুলনায় যেটা আহামরি কিছুই না| অর্থনীতির ছাত্র,কিন্তু ইংরেজিতে কিছুটা দখল থাকায় চাকুরি হল ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে, টিচিং এ্যাসিস্টেন্টের কাজ|

আমার বন্ধুরা একে একে বাইরে পড়তে গিয়েছে , কিন্তু আমার সে যোগ্যতা ছিল না| ঠিক করলাম বিসিএস দেব, বাবার মত সরকারী চাকুরি করব|

“এনেসিউ তে পড়ে বিসিএস? বাবা, ওসব জায়গায় টেকা প্রাইভেটের ছেলেপেলের কম্মো না, যাও বাপের বিজনেসে বসো গিয়ে, নইলে মামা চাচা ধরে দেখ কোন কোম্পানিতে ঢুকতে পারো কিনা| মাল্টিন্যাশনালে ঢোকা তোমার যোগ্যতায় কুলাবে না, দেখলাম তো”

প্রিয় পাঠক, আজকে আপনারা আদর করে আমাকে সুপার কপ ডাকেন| মাত্র পাঁচ বছর আগেই আমাকে প্রতিনিয়ত উপরের কথাগুলো শুনতে হয়েছে|

বিসিএস পরীক্ষার রেজাল্ট হল, ফরেন সার্ভিস পেলাম না| রেজাল্ট খারাপ হয়নি, পুলিশ ক্যাডারের মেধাক্রমে চতুর্থ হয়েছিলাম| তবু জেনে গেলাম, ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাট হিসেবে কোনদিনও আমি জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে লাল সবুজ পতাকার প্রতিনিধিত্ব করতে পারছিনা| বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখা পরম মমতায় লালিত স্বপ্নের কি করুণ অপমৃত্যু!

পুলিশ একাডেমিতে যাবার আড়াই মাসের মাথায় হঠাৎ একদিন দুবছর ধরে স্বপ্ন দেখানো মেয়েটি জানালো, পুলিশের চাকুরি করা কারো সাথে বাকি জীবন কাটানো তার পক্ষে সম্ভব না, শি ইজ ডেটিং সামওয়ান এলস|

প্রথম প্রেম ছিল ওটা, ওকে ছাড়া কাউকে কল্পনাও করতে পারতাম না| উফ, কি কষ্ট, কি ভয়াবহ কষ্ট! মনে হত শত শত বিষাক্ত কেঁচো আমার ভেতরের সবটুকু প্রাণ শুষে নিয়েছে!

দুবছর যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি, পুরো স্বপ্নটুকু নিষ্ঠুরের মত ছিঁড়ে ফেলার যন্ত্রণা কেবল আমিই জানি| আমার ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড ছিল ওর নামে| হাউমাউ করে দরজা আটকে কি কান্নাটাই না কেঁদেছিলাম ওটা বদলানোর সময়!

মজার ব্যাপার, হৃদয়ঘটিত কষ্টের ঘটনাক্রমে এ ঘটনাটির স্থান প্রথম নয় আমার জীবনে| প্রথমটির গল্প অন্য কোন দিন, যেদিন আমি আরেকটু শক্ত হব তখন|

পুলিশ একাডেমি থেকে পাস আউট করার পর সিলেক্টেড হলাম মাননীয় প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর দেহরক্ষী বাহিনী স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সে| সেখানেও যোগ দেয়া হলনা, পুলিশ বিভাগে আমার আইডল বেনজীর স্যার আমাকে নিয়ে এলেন ডিএমপি হেডকোয়ার্টারে| সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর গেলাম উত্তরায়, এসি (প্যাট্রোল ) হিসেবে| ফেসবুকের পোকা ছিলাম তখনো, পিএটিসিতে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং-এ শেখা “কাইজেন” (KAIZEN) পদক্ষেপ হিসেবে উত্তরাবাসীকে পুলিশি সহায়তা দিতে খুলে ফেললাম ছোট একটা ফেসবুক পেজ|

বাকি গল্পটা আমার পরিচিত অনেকেই জানেন, পুনরাবৃত্তি করে আর বিরক্তি উৎপাদন করছিনা|

এবার মজার কিছু তথ্য দেই:

1) প্লাটুন কমান্ডার ভদ্রলোকের সাথে আরেক জায়গায় দেখা হয়েছিল| বেনজীর স্যারের সাথে গাড়ি থেকে আমাকে নামতে দেখে ভূত দেখার মত চমকে উঠেছিলেন তিনি, আমি মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়েছিলাম মাত্র|

2) গত বছর আইবিএ তাদের অভিজাত Brandedge ম্যাগাজিনে আমার একটা সাক্ষাতকার ছাপিয়েছিল| ম্যাগাজিনটা হাতে পেয়ে কেন জানি আনন্দিত হইনি, আইবিএ রেজাল্টে বাদ পড়া রক্তহীন মুখে দাঁড়ানো সেই কিশোরটার মুখ বড্ড চোখ ভিজিয়ে দিচ্ছিল| ম্যাগাজিনে ছাপানো নিজের ছবিটা দেখেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না|

3) জাপানের সেরা ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল Tokyo Institute of Technology এর গেইটে পা রেখে প্রথম যে কথাটি মাথায় এসেছিল তা হচ্ছে, বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দেবার মত সিজিপিএ আমি এইচ এস সি তে পাইনি|

আমি এমন এক বাবা, যে তার দুমাসের অনাগত সন্তানকে বাঁচাতে পারিনি| কষ্টটা ভুলে থাকি কিভাবে জানেন?

এই আপনাদের নিয়ে|

সবশেষে এই বার বার হেরে যাওয়ার গল্পের ইতি টানছি আমার খুব প্রিয় তিনটি উক্তি দিয়ে:

প্রথমটা “ব্যাটম্যান বিগিন্স” থেকে:

:Why do we fall, Bruce?
:So that we learn to pull ourselves up.

দ্বিতীয়টি দ্য আলকেমিস্ট এর লেখক পাউলো কোয়েলহোর:

“The meaning of life is to fall seven times and get up at eighth”

আর সর্বশেষটা টম হ্যাংক্স অভিনীত মুভি “কাস্ট এ্যাওয়ে” এর:

“I know what I have to do now. I gotta keep breathing. Because tomorrow the sun will rise. Who knows what the tide could bring?”

আমার মত হারু পার্টির স্থায়ী সদস্য যদি হাল না ছেড়ে লড়ে যেতে পারে, আপনি পারবেন না?!

এইটা কোন কথা?!?

সবাইকে শুভেচ্ছা!

(দুহাজার আট সালে সিসিবিতে প্রথম ব্লগ লেখার মাধ্যমে আন্তর্জালে আমার বিচরণ শুরু হয়, পুলিশে যাবার আগে বিসিএস পরীক্ষা দেবার সিদ্ধান্ত, পরীক্ষায় পাস করা, পুলিশ একাডেমিতে আসার প্রথম দিন, জীবনের নানা ব্যর্থতা- প্রতিটা মুহূর্তে সিসিবি আমার পাশে ছিল। এটি আমার নিজের ঘরের মত, একান্ত আপন। এখানের লেখালেখি-ই আমার হাতকে সাবলীল করেছে( মানে যতটুকু হয়েছে আরকি)। ঘরের ছেলে বাইরে ছিলাম, এই ফিরে এলাম।এখন থেকে নিয়মিত লিখব)

৪,৫৫৮ বার দেখা হয়েছে

৩৫ টি মন্তব্য : “বার বার হেরে যাবার গল্প”

  1. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    এই লেখাটা এই আসরে যতদিন থাকবে, ততদিন এটা দিকভ্রান্ত নাবিকদেরকে বাতিঘরের মত পথ দেখাবে।
    যেসব ব্যর্থতার কথা শুনিয়েছো, থাক সেসব শুধুই স্মৃতির আর্কাইভে, যেন সেগুলো অন্যসব ব্যর্থতাক্রান্ত হৃদয়ে প্রেষণা ছড়াতে পারে।
    ভবিষ্যত হোক শুধুই সাফল্যের ইতিকথা। যে সাফল্যে আমরা সবাই হবো ক্যাডেটীয় গর্বে গর্বিত।

    জবাব দিন
  2. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    গতকালই সম্ভবত একটি সুইসাইড নোট দেখলাম। এতটুকুন একটি ছেলের লিখায় এত কষ্ট থাকতে পারে চিন্তা করতেও কষ্ট হচ্ছিল। এই লিখাটি ছোট ছেলে মেয়েদের না পড়িয়ে তাদের উন্মাদ হয়ে উঠা পিতামাতাদের পড়ানো উচিৎ।


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  3. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    আমাদের মাস্ফুর আজকের 'মাসরুফ হোসেন' হয়ে ওঠার পেছনে সিসিবির কিছুটা হলেও অবদান আছে বলে মনে করি।
    তোদের মত সেলিব্রিটিদের সিসিবিতে ট্রাফিক বাড়াবার দায়বদ্ধতা আছে।
    আশা করব ১/২ মাসে একটি হলেও তুই সিসিবিতে লেখা দিবি এবং তোর প্রোফাইল/পেজে সেটা শেয়ার করবি।
    তা না হলে কিন্তু লুঙ্গি গিফট পাবি... 😉

    জীবনের সকল ক্ষেত্রে আরও অনেক অনেক সফলতা অর্জন করবি- এই দোয়া ও শুভকামনা রইল। :clap:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  4. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    🙂 🙂 🙂 🙂

    সোশ্যাল মিডিয়াতে আমার বিচরণ উল্লেখযোগ্য নয়, তাই বোধকরি তোমার সাথে আই মিন তোমার লেখার সাথে পরিচয় হয়নি আমার, মাসরুফ। ভেরী ইন্সপায়ারিং লেখা তোমার। :clap: :clap: :clap: :clap:

    গ্ল্যাড টু মিট ইউ ফাইনালি!

    জবাব দিন
  5. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    এই লিখাটা দ্বিতীয়বার পড়লে শুধু চোখ নয়, মনের উপরে চাপ পড়ে।
    প্রথম যখন ফেবু স্ট্যাটাস হিসাবে দিলে, তখনই পড়েছিলাম।
    এরপর আর পড়ার সাহস করি নাই।

    বেড়ে লিখেছো ব্রাদার। খুবই ইন্সিপায়ারিং।
    আর হ্যাঁ, সাইদুল ভাই-এর কথাটা মনে রেখো "আরও অনেক দূর যেতে হবে কিন্তু........."


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  6. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    এই নিয়ে তৃতীয়বার পড়া হলো এই ব্লগে । এর আগে ফেবু স্ট্যাটাসে আর ফেবু গ্রুপে ।
    এই কথা আর ভাবনা অন্তহীন সময় ধরে সবার মনে প্রেরণা যুগিয়ে যাক ।
    ভালো থেকো আর এমনই প্রেরণার উৎস হয়ে থেকো ।

    লেখার জন্য সাধুবাদ । তোমার জনো শুভকামনা নিরন্তর ।

    জবাব দিন
  7. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    আজকাল ফেইসবুক, ব্লগ, ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে, এর আগে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ হতো ই-মেইলে বা সংশ্লিষ্ট সাইটে। এরকম একটি সাইট ছিলো (এখনও আছে বোধহয়) আমাদের সিলেট ক্যাডেট কলেজের সাইট। কলেজের এক্স ক্যাডেটরা এই সাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ করতাম। ঘটনাটি ২০০৪/২০০৫ সালের কথা, আমি তখন বিদেশে পড়ালেখা শেষ করে কর্মরত - আমাদের কলেজের এক ছোট ভাই প্রথমে সাইট, তারপর ই-মেইলের মাধ্যমে আমার সাথে যোগাযোগ করে তার দুঃখ (ব্যর্থতা)-র কথা বলেছিলো। এর মধ্যে একটি হলো যে, সে অল্পের জন্য জাপানের স্কলারশীপ মিস করেছে। আমি তখন তাকে সাহস দেয়ার জন্য লিখেছিলাম - 'আমাদের জীবন হলো একটি লং ডিসটেন্স রেইস। এই রেইসে কখনো কখনো হোচট খেতে হয়, কখনো ফিল্ডে পড়েও যেতে হয়, কিন্তু তাতেই মন ভেঙে রেইস ছেড়ে দিলে চলবে না, উঠে দাঁড়িয়ে আবার দৌড়াতে হবে। প্রচেষ্টা থাকলে ঠিকই সফলভাবে (হয়তো অনেক-কে পিছনে ফেলেই) গন্তব্যে পৌছানো যাবে।' (বিষয়টি আমি শিখেছিলাম প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের 'অমানুষ' উপন্যাস থেকে, এবং বিদেশে থাকাকালীন এক খ্যাতিমান রাজনীতিবিদের ইন্টারভিউ থেকে)।

    হৃদয়ঘটিত যে ব্যাপারটি তুমি লিখেছি মাশরুফ সেটা সত্যিই খুব কষ্টকর। কেন এমন হয়? সে প্রশ্ন আমারো। হয়তো এমন এক জমানা এসেছে যেখানে আবেগ-অনুভূতির চেয়ে ম্যাটেরিয়াল চাহিদাই-টা বড় হয়ে দেখা গিয়েছে। হৃদয় আজ আর হৃদয় নেই।

    গতকাল আমার শিশু সন্তানটি আমাকে বললো, "ভাইয়া আমাকে রাগ করেছে, আমি এখন পুলিশে কল করবো।" এই বলে সে বাসার ইন্টারকমটা তুলে বাটন টিপতে শুরু করলো। লক্ষ্য কর, ছোট্ট একটি শিশুও পুলিশের উপর আস্থা রাখতে চায়। তোমার কাছে আমার অনুরোধ এই দেশের অসহায় মানুষগুলোর আস্থার মর্যাদা রাখার চেষ্টা করো।

    তোমার লেখাটি একদিকে হার্ট টাচিং আর একদিকে সাহসী। ব্যক্তিগত বিষয়গুলো এতো সাহস করে কেউ লিখতে চায়না। সাহস করে লিখে সুন্দর একটা লেখা উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

    জবাব দিন
  8. মাহবুব (৭৮-৮৪)

    মাঝে মাঝে ফেইলিওর আর সাকসেস কি বিষয় তাই গুলিয়ে ফেলি। আমার বড় ছেলের মাত্র চার বছ্- ওকে আমার সম্মতি ছাড়াই "ইশকুলে" দেয়া হয়েছে। কদিন আগে তার আবার নাকি পরিক্ষাও নিয়েছে। সেখানে সে "৪র্থ" হয়েছে দেখে কারো কারো মন খারাপ। বলছে "বাপের মতন হয় নাই"। এসব নির্বোধ কান্ড দেখে নিজেকেই খুব অপরাধী লাগছে।
    কোথায় যেন পড়েছিলাম "for a good cause, there is no failure, only delayed success" এই লেখাটা পড়ে আবারো মনে পড়ে গেল। ::salute::

    জবাব দিন
  9. আমার অসীম শুভেচ্ছা রইল তোমার সুদীর্ঘ যাত্রাপথে--এক সোনার সাফল্য থেকে অন্য সাফল্যে।

    মাসরুফ, মানুষের প্রতি এই মমতা--ক্রমবর্ধমান থেকে হোক তোমার ধারাবাহিক সাফল্য। আমি প্রায় নিশ্চিত তুমি ভুলে যাবে না।

    তোমার মাধ্যমে আমার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রইলঃ সালাম!

    মুজিব (ফকক, ৫৫-৬১)

    জবাব দিন
    • খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

      মুজিব ভাই, সালাম!
      জানিনা আপনি কোথায় আছেন, কোথায় থাকেন, তবে আপনার মত একজন এত জ্যেষ্ঠ বড়ভাইকে আজ এখানে পেয়ে ভীষণ ভালো লাগছে। আর আপনার অমূল্য মন্তব্যটাতো মনে গেঁথে রইলো। মাসরুফের মত আমিও ভীষণ আপ্লুত হ'লাম এটা জেনে যে আপনার বয়সী বড় ভাইদেরও এখানে পদচারণা ঘটে অলক্ষ্যে। মাসরুফের লেখায় আপনার মন্তব্য পড়ে বুঝতে পারছি ওর লেখাটা আপনাকে কতটা গভীরভাবে স্পর্শ করেছে।
      আগামী শনিবার ১৩ জুন ২০১৫ তারিখে ক্যাডেট কলেজ ক্লাবে সকাল ১০.০০ টায় এক্স ক্যাডেট (জেসিসি, ৭৮-৮৪) কাজী আহমদ পারভেজ এর উদ্যোগে যে সাংস্কৃতিক আড্ডার ব্যাবস্থা করা হচ্ছে, সম্ভব হলে চলে আসুন না সেখানে, একটা চাক্ষুষ পরিচয় হতো!

      জবাব দিন
  10. নাফিস (২০০৪-১০)

    এই লেখাটা এবার এসএসসি পাস করা কাজিনকে পড়াইছি.. গোল্ডেন মিস করেছে বালক। ইংরেজিতে। এইচএসসি তে আমিও গোল্ডেন পাইনি। জীবন থেমে থাকেনা। ব্যাপারটা চোখে আঙ্গুল তুলে দেখানোর জন্য ধন্যবাদ ভাই !

    হারাইয়া যাইয়েন না, থাকেন সিসিবির আশেপাশে 🙂 (সম্পাদিত)

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।