স্ট্যাটাসসমগ্র-১

(অনেক দিন সিসিবিতে কিছু লেখিনা। জাভেদ ওমর বেলিম গুল্লুর মত এককালের ডাকসাঁইটে(!?) জন্মদিন প্রিফেক্ট এখন অবসরে। তবে ফেসবুকে গরম গরম স্ট্যাটাস দেয়া চলছে।আজ সক্কাল সক্কাল উঠেই প্রিয় ছোটভাই এবং ভবিষ্যৎ এ্যাডমিরাল নাফিস উজরাতের খোঁচা খেলাম-” কি ভাইজান, সিসিবিতে লিখা দিতে ইচ্ছা করেনা, তাইনা??” ওর এই খোঁচা থেকেই স্ট্যাটাসসমগ্রের জন্ম। পুরোন স্ট্যাটাসগুলো দুই তিনটা এক করে প্রথম পর্ব আজ শুরু করছি। দায়দায়িত্ব এবং গালাগালির দায়ভার সম্পূর্ণ এ্যাডমিরালের 😀 )

১।

“সেলফ-হেল্প লিটারেচার” এর সাথে মনে হয় আমরা সবাই পরিচিত। গালভরা এই নামের অন্তর্ভুক্ত যে বইগুলো সেগুলো হচ্ছে আত্ম-উন্নয়নমূলক-অর্থাৎ পাঠক এই বইগুলো পড়ে নিজে নিজেই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবেন।যাঁরা এখনো ভ্রূ কুঁচকাচ্ছেন তাঁদের জন্যে একটি উদাহরণঃ সদ্য”প্রয়াত” ডেসটিনি গ্রুপ তাদের সদস্যদের(মতান্তরে ডেচটিনি “ভুদাই”দের) মাল্টি লেয়ার মার্কেটিং-এর মাধ্যমে জীবন পালটে ফেলার জন্যে যেসব বই বিক্রি করত সেগুলোর মধ্যে ভারতীয় লেখক শিভ খেরার “You Can Win” বা “তুমিও জিতবে” অন্যতম।আর যাঁরা একটু পুরোন পাঠক, তাঁরা নিশ্চয়ই ডেল কার্নেগীর “বন্ধু ও প্রতিপত্তিলাভ” বইটার কথা শুনেছেন!

প্রতিটি সেলফ হেল্প বইয়ের শুরুতেই একটি কমন কথা থাকেঃ

…পৃথিবীতে দুই ধরণের মানুষ আছে। ১) যাঁরা ভাগ্যের হাতে নিজেকে ছেড়ে দিয়ে বিফল হয়ে বসে থাকে আর ২) যারা নিজের ভাগ্য পরিবর্তনে সক্ষম। তুমি দ্বিতীয় দলে পড়ো, কারণ এই বইটা তুমি কিনেছ। এই বইটা পড়লেই তোমার যাবতীয় শারীরিক/মানসিক/মৌন/যৌন সব সমস্যা এক ফুৎকারে উড়ে যাবে … 😀

কেউ যাদুমন্ত্রের মত এইসব মোটিভেশনাল বই পড়ে নিজের জীবনকে আকাশসম উচ্চতায় নিয়ে যাবেন এমনটি ভাবা বাতুলতা। অর্থনীতির বর্তমান সময়ে খুব নামকরা একটা বই আছে- “ফ্রিকোনমিক্স Freakonomics। এই বইতে মজার একটা উদাহরণ দেয়া আছেঃ পাশ্চাত্যে যেসব পিতামাতা তাদের সন্তানদের লালন পালন করার জন্যে ডজনখানেক “কিভাবে সন্তান মানুষ করবেন” টাইপের বই কেনেন তাদের সন্তানেরা সাধারণত চমৎকার মানুষ হয়। এর মানে কিন্তু এই না যে ওই বইগুলো পড়েই বাবা-মা-রা সন্তান লালন পালনের মত জটিলস্য জটিল একটি বিষয় শিখে ফেলেছেন।তবে যেসব বাবা-মা তাদের সন্তান লালন পালন আরো ভালোভাবে কিভাবে করা যায় এটি শিখতে এতগুলো বই কেনেন- এই অভ্যাস থেকে বোঝা যায় যে তাঁরা তাঁদের সন্তান লালন পালনের ব্যাপারে খুব সিরিয়াস। সন্তান মানুষ হয় মূলতঃ ওই সিরিয়াসনেসের ফসল হিসেবেই।ঠিক একইভাবে, একজন শিক্ষিত পাঠক যখন আত্ম-উন্নয়নের এতগুলো বই কেনেন, এর অর্থ নিজের উন্নতির ব্যাপারে তিনি সিরিয়াস। যেসব পাঠক এই বইগুলো পড়ে নিজের জীবন পালটে ফেলেছেন বলে দাবী করেন তাঁদের উন্নতির রহস্য আসলে বই না,আসল রহস্য হচ্ছে তাঁদের ওই সিরিয়াসনেস। মোটামুটি মেধাবী একজন মানুষ লেগে থাকলে জীবনে উন্নতি করবেন- এটা বোঝার জন্যে কমন সেন্সই যথেষ্ট।

আমাদের বিদগ্ধসমাজ ( কেউ কেউ আদর করে সুশীল বা আঁতেলসমাজও বলে থাকেন) এইসব সেলফ হেল্প বইগুলোকে “পরম মমতায়” তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে থাকেন। আমি যেহেতু ওই দলে পড়িনা, কাজেই তাঁদের চোখ এড়িয়ে লুকিয়ে চুরিয়ে এই সেলফ হেল্পের বই আমি নিয়মিতই কিনি এবং পড়ি। Robin Sharma এই সেলফ হেল্প জগতের মাস্তান লোক। তাঁর The Monk Who Sold His Ferrari বইটাকে এই সেলফ হেল্প লিটারেচারের একটি মডার্ন ক্লাসিক বলা যেতে পারে। তাঁর আরেকটা বই আছে, The Greatness Guide. লেখক এই বইয়ে চমৎকার একটি উপদেশ দিয়েছেন- সেটি হচ্ছে, “Everyday, have a conversation with Gandhi”. -প্রতিদিন গান্ধীর সাথে বাতচিৎ করো।

গান্ধীজীর সাথে কিভাবে আপনি কথা বলবেন, তাও তাঁর মৃত্যুর অর্ধশতাব্দী পর??

খুব সহজ। My Experiments with Truth খুলে বসুন।পড়া শুরু করুন। মহাত্মা গান্ধী নিজের ভাষায় বলছেন নিজের জীবনের কথা। জন্মের পর তাঁর সংগ্রামের কথা, সত্যের সন্ধানে লড়াইয়ের কথা, অহিংস আন্দোলনের প্রস্তুতির কথা।

কি, মনে হচ্ছেনা আপনি গান্ধীর সাথে কথা বলছেন? শুধু কি তাই? গান্ধীজীর সাথে আপনার কথা হচ্ছে আপনার নিজের সময়ে, যতক্ষণ ইচ্ছে ততক্ষণ।

ঠিক এইভাবে, এক একজন মহামনীষীর সাথে কত্থোপকত্থনের এপয়েন্টমেন্ট আপনি নিজেই ঠিক করবেন।আপনার সাথে কথা বলার জন্যে অপেক্ষা করবেন স্টিভ জবস, মহাত্মা গান্ধী কিংবা নেলসন ম্যান্ডেলা। মানবজাতির এই কৃতী সন্তানদের সাথে কত্থপকত্থনের ফলে তাঁদের সূর্‍্যসম ঔজ্জ্বল্যের ছিঁটেফোটা আপনার উপরেও পড়বে। একেকটি আত্মজীবনী পড়বেন, আপনার মানসিক ঔজ্জ্বল্য একটু করে বাড়বে। ম্যান্ডেলা আপনাকে শেখাবেন কিভাবে ২৭ বছর কারারূদ্ধ থেকেও তিনি আশা ধরে রেখেছিলেন, গান্ধীর কাছে শিখবেন কিভাবে তিনি অহিংসভাবে একটা গোটা সাম্রাজ্য ধ্বসিয়ে দিয়েছিলেন- স্টিভ জবস আপনাকে বলবেন কিভাবে তিনি প্রযুক্তির সংজ্ঞাটাকেই পালটে দিয়েছেন। স্টিভ কোভি’র 7 Habits of Highly Effective People বা টনি রবিন্সের Awaken The Giant Within নয়, আমার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ সেলফ হেল্প লিটারেচার তাই এই আত্মজীবনীগুলো।

নির্বাচনের কারণে গত তিন দিন থানাতেই ঘুম থানাতেই খাওয়া, বাসায় যাবার অবকাশ পাইনি। বাবা মা মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন, এই আজ তাঁরা আসলেন। বাবাকে বলেছিলাম মাহাথিরের আত্মজীবনী পাওয়া গেলে নিয়ে আসতে। এয়ারপোর্ট যেহেতু আমার এলাকায় পড়ে, তাই একফাঁকে তাঁদের রিসিভ করতে গিয়েছিলাম। আমার বাবাও আমার মতই বইপাগল, প্লেন থেকে নেমেই আমার হাতে বইটা তুলে দিলেন। তিনি জানেন, তাঁর ছেলের কাছে সবচাইতে প্রিয় উপহার হচ্ছে বই-ঠিক তাঁর মতই।

সারাংশটা বইয়ের পেছনের ফ্ল্যাপ থেকে সংক্ষেপে তুলে দিচ্ছিঃ

…পশ্চিম তাঁকে ডাকে বর্ণবিদ্বেষী আর দাম্ভিক হিসেবে। উন্নয়নশীল দেশের কাছে অবশ্য তিনি একজন দূরদর্শী নেতা, যিনি গোটা তৃতীয় বিশ্বকে মাথা উঁচু করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তুন ডাঃ মাহাথির মোহাম্মদ পৃথিবীর সবচাইতে উপেক্ষিত কিছু অঞ্চলকেও উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের আশা জাগিয়ে দিয়েছেন- তাঁর সবচাইতে বড় সমালোচকও এটা উপেক্ষা করতে পারবেনা।

…তাঁর এই কর্মজীবন বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। মাহাথিরের ২২ বছরের নেতৃত্ব একই সাথে একনায়কসুলভ এবং অনুপ্রেরণাদায়ক। খুব অল্প নেতাই পেরেছেন একটি গোটা দেশকে আদিম কৃষিসমাজ থেকে পালটিয়ে শিল্পের পাওয়ারহাউস হিসেবে গড়ে তুলতে। তার চাইতেও কম নেতা পেরেছেন মাত্র দুই দশকে এটি করে দেখাতে।

… আধুনিক মালয়েশিয়া গড়তে নিজের অনন্য ভূমিকার কথা ডাক্তার মাহাথির পুরো সার্জিকাল দক্ষতায় তুলে ধরেছেন এখানে…

নতুন বই হাতে পেয়ে জিভ লালায় টইটম্বুর। হার্ড কভার, ঝকঝকে বাঁধাই। আপনাদের হিংসা জাগাতে নীচে একটা ছবি দিলাম 😛

সবশেষে বুকের ভেতরে ধুকপুক করা একটা প্রশ্নঃ

আমার দেশের অবাক করা উন্নয়নের গল্পও কি আমার মতই আগ্রহ নিয়ে কোন ভিনদেশী পাঠক একদিন পড়বেনা? কত দূরে সেই দিন? আজ? কাল?? ঠিক কবে??

মাহাথির মোহাম্মদের আত্মজীবনী-আনকোরা নতুন, হার্ডকভার :D

মাহাথির মোহাম্মদের আত্মজীবনী-আনকোরা নতুন, হার্ডকভার 😀

(৫/১/২০১৪)

২)

আজ নীলক্ষেত গিয়েছিলাম, যথারীতি পুরোন বই কিনতে। গোটাপাঁচেক বইয়ের মধ্যে অন্যতম যেটি কিনলাম তার নাম “মহাভারত”- কাশীরাম দাস বিরচিত।দে’ব সাহিত্য কুটীর প্রকাশিত প্রায় ৪০ বছর পুরোন বিশাল এই পুস্তক হাতে পেয়ে আনন্দে মনে মনে দুপাক নেচে নিলাম!

মহাভারতের সাথে আমার প্রথম পরিচয় খুব ছোটবেলায়, সত্যজিৎ রায়ের দাদু উপেন্দ্রকিশোর রচিত “ছেলেদের মহাভারতের” মাধ্যমে। মহাভারতের মত প্রাচীন এবং জটিলস্য জটিল মহাকাব্যকে কিশোরদের উপযোগী করে লেখার মত এই কঠিন কাজ যিনি করতে পেরেছেন, তাঁর নাতি যে অস্কার পাবে এ আর বেশি কথা কি!

সত্যজিতের চরিত্র ফেলুদাকে মাঝে মাঝে দেখতাম মহাভারতের উপরে কুইজ নিতে।ফেলুদার ভাষায়- “এ হচ্ছে ননস্টপ ভুরিভোজ, একের পর এক মজাদার গল্প আসছে তো আসছেই, বিরাম নেই!”

ছোটবেলায় রাজা রাজড়ার যুদ্ধ, রাক্ষস-খোক্কস, দেবদেবী আর তীরধনুকের গল্প অন্যান্য রূপকথার মতই ভীষণ আগ্রহ নিয়ে পড়তাম।সেই সুবাদে মহাভারতের গল্প পড়া হয়েছে বারংবার। ফলে মূল চরিত্রগুলোর নাম সেই ছেলেবেলাতেই মাথায় গেঁথে গিয়েছিল। উপেন্দ্রকিশোরের মূল মাহাত্ম ঠিক এইখানে- তাঁর মৌলিক ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে থেকে পরবর্তীতে মহাভারতের শতমূখী বিশ্লেষণ অনুধাবন করতে অসুবিধা হয়নি একফোঁটাও। ছেলেবেলায় যে কর্ণকে ঘৃণা করতাম, সুনীলের কর্ণকথা এবং রবিবাবুর কর্ণকুন্তী সংবাদ পড়ার পর সে-ই হয়ে দাঁড়ালো পৌরুষের চরমতম নিদর্শন। I simply started to admire this man’s guts!

একদিন আগে লিখেছিলাম গডফাদার সিনেমাটির কথা। গডফাদারের সাথে মহাভারতের কাহিনীর সংমিশ্রণ ঘটিয়ে যে সিনেমাটি তৈরি হয়েছে তার নাম “রাজনীতি”।

নানা পাটেকার, অর্জুন রামপাল এবং আমাদের সবার প্রিয়মুখ ক্যাটরিনা অভিনীত এই বলিউড মুভিতে অজয় দেবগন যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন সেটিই আজকের দিনের কর্ণচরিত্র। পুরাণ-পুস্তকে যাঁদের অরূচি, তাঁরা এই সিনেমাটি দেখলে কিছুটা ধারণা পাবেন। এ এমনই এক অমৃত, এর ছিঁটেফোঁটা স্বাদও মনকে মাতিয়ে তুলতে যথেষ্ট!

মহাভারতের ফাঁকে চলুন ফিরে যাই আমাদের প্রতিদিনের সূর্যের কাছে। পড়ছিলাম রবি ঠাকুরের “জীবনস্মৃতি”।

ঢেঁকি যেমন স্বর্গে গিয়েও ধান ভানে, আমিও তেমন অবচেতন মনে রবিরচনাতেও জাতভাই খুঁজি। আর কিমাশ্চর্যম! পেয়েও যাই! রবিবাবু লিখেছেনঃ

……মনে নাই, সত্য কী কারণে আমাকে ভয় দেখাইবার জন্য সকলে হঠাৎ “পুলিসম্যান” “পুলিসম্যান” করিয়া ডাকিতে লাগিল। পুলিসম্যানের কর্তব্য সম্পর্কে অত্যন্ত মোটামুটি রকমের একটা ধারণা ছিলো। আমি জানিতাম, একটা লোককে তাহাদের হাতে দিবামাত্রই, কুমির যেমন খাঁজ-কাটা দাঁতের মধ্যে শিকারকে বিদ্ধ করিয়া জলের তলে অদৃশ্য হইয়া যায়, তেমনি করিয়া হতভাগ্যকে চাপিয়া ধরিয়া অতলস্পর্শ থানার মধ্যে অন্তর্হিত হওয়াই পুলিসকর্মচারীর স্বাভাবিক ধর্ম……

পুলিসকর্মচারীর এই “স্বাভাবিক ধর্ম” চলে এসেছে প্রায় আড়াইশ বছর ধরে। আমরা যারা স্বাধীন বাংলাদেশের নবীন পুলিস, প্রাণপণ চেষ্টা করছি এ জঞ্জাল সরিয়ে আমাদের পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য করতে।হাজার সদস্যের মুখে রক্ত তোলা পরিশ্রমে এই বাহিনীটার মাথা যখন অল্প একটু উঁচু হয়, তখনই আসে নতুন কোন অপকর্মের সংবাদ। হতাশার সরিসৃপ হিসহিসিয়ে কানের কাছে বলে- “চেষ্টা যতই করিস, ফলাফল দেখে যেতে পারবিনা” ।

ঠিক তখনই কানে বেজে ওঠে শ্রীকৃষ্ণের অমিয়বানী- ” কর্মেই তোমার অধিকার, ফলে নয়।”

আসলেই তো! ফলাফল উপভোগ করার আমি কে! ক্ষুদ্র মানুষ আমি, আমার পক্ষে ফলাফলের প্রত্যাশা করাটা অনধিকার চর্চা। কর্মেই আমার অধিকার, ফলে কভূ নয়

জয়তু মহাভারত! (২৮/১২/২০১৩)

"দুঃশাসন দুরাত্মার করি রক্ত পান/ কার সাধ্য এরে আজ করে পরিত্রাণ!" - ভীম কর্তৃক দুঃশাসনের রক্তপাণের দৃশ্য...

“দুঃশাসন দুরাত্মার করি রক্ত পান/ কার সাধ্য এরে আজ করে পরিত্রাণ!” – ভীম কর্তৃক দুঃশাসনের রক্তপাণের দৃশ্য…

৩।

আমার পুলিশে যোগদানের ঘটনাটিকে মোটামুটি কাকতালীয়ই বলা যেতে পারে। পুলিস ছিলো আমার দ্বিতীয় পছন্দ( প্রথম পছন্দ ফরেন সার্ভিস, দুইবার চেষ্টা করেও পারিনাই দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর আর ইচ্ছেমত বই পড়ার জন্যে এই চাকুরির উপরে কিছু নাই )।

the-untouchables

দ্বিতীয় পছন্দ এ্যাডমিন হবার কথা, কিন্তু দি আনটাচেবলস নামের মুভিটি সব এলোমেলো করে দিলো। ইটালিয়ান আমেরিকান গ্যাংস্টার আল কাপোন, যে কিনা দোর্দণ্ড প্রতাপে রাজত্ব করত শিকাগো শহরে- সেই আল কাপোনকে মাটিতে নামিয়ে আনলেন লিজেন্ডারি পুলিস অফিসার এলিয়ট নেস। মজার ব্যাপার , এই ভদ্রলোক নিজেও আমার মত অর্থনীতির ছাত্র ছিলেন ( এটা ভেবে আমি বেশ আত্মশ্লাঘা অনুভব করি )। মা

মাসুদরানা সিরিজের অগ্নিপুরুষে পড়েছি সিসিলিয়ান মাফিয়ার কথা, আর মারিও পুজোর “গডফাদার” পড়ার পর দেখলাম মার্লোন ব্রান্ডো আর আল পাচিনো অভিনীত তিন পর্বের ক্লাসিক মুভিগুলো। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো চার বছর ফেসবুক গ্রুপ “Everything I learned about life, I learned it from The Godfather” এর অত্যন্ত সক্রিয় সদস্য ছিলাম- জানিনা এটা এখনো আছে কিনা। ইতালি, সিসিলি আর মাফিয়া নিয়ে আমার পাগলামির মাত্রা বুঝুন তাহলে!

গত সপ্তাহে জানতে পারলাম “ট্রেনিং বিল্ডিং” নামে দুসপ্তাহের একটি কোর্সে বাংলাদেশ পুলিশের মধ্য থেকে আমি নির্বাচিত হয়েছি। পুরো কোর্স হবে ইতালিতে- ভেনিসের খুব কাছে ইতালিয়ান পুলিস “কারাবিনিয়ারি” সদর দপ্তরে। একেই বোধ হয় বলে বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়া! দুসপ্তাহের কোর্সে সম্ভবত দুটি উইকএন্ড পাবো, ইচ্ছে আছে ইতালির পাশাপাশি ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড আর ফেরার পথে ওরহান পামুকের শহর ইস্তানবুল ঘুরে আসার। ফ্রান্সে দেখার ইচ্ছে ল্যুভ মিউজিয়াম আর আইফেল টাওয়ার, সুইজারল্যান্ডে দেখব জুরিখ। শুনেছি ল্যুভ মিউজিয়ামে আগে থেকে টিকেট না কাটলে পুরো দিনটাই মাটি, তাই ফ্রান্সের কোন সহৃদয় ব্যক্তি সাহায্যের হাত বাড়াবেন কি? এমন কেউ থাকলে দয়া করে আমাকে জানান, এই অধম চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।

আগামি মাসের ২৬ তারিখ য়ুরোপ যাত্রা, জীবনের প্রথম বারের মত- তাই উত্তেজনার বশে ট্রাভেল গাইড খুঁজছিলাম। পেয়েও গেলাম, একেবারে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠটি। মাত্র ৭০ টাকায় কিনলাম আমাদের প্রতিদিনের সূর্য রবি ঠাকুরের “য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়েরী”।

Photo0072

… সূর্যাস্তের সময় হয়ে এল। আমি কোলের উপর এক থোলো আঙ্গুর নিয়ে বসে বসে এক-আধটা করে মুখে দিচ্ছি।এমন মিষ্টি টসটসে সুগন্ধ আঙ্গুর ইতিপূর্বে কখনো খাই নি। মাথায়-রঙ্গিন-রুমাল-বাঁধা ঐ ইতালীয়া যুবতীকে দেখে আমার মনে হচ্ছে, ইতালীয়ানরা এখানের আঙ্গুরের গুচ্ছের মত, অমনি একটি বৃন্তভরা অজস্র সুডোল সৌন্দর্য, যৌবনরসে অমনি পরিপূর্ণ- এবং ঐ আঙ্গুরেরই মত তাদের মুখের রঙ, অতি বেশি শাদা নয়… (পৃষ্ঠা-৮৯)

মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়ছি আর চোখের সামনে ভেসে উঠছে দৃশ্যকল্প।”ম্যালেনা” খ্যাত ইতালিয়ান বংশোদ্ভূত মনিকা বেল্লুচ্চি আমার অন্যতম প্রিয় অভিনেত্রী। কবিগুরু কি এঁরই মাতামহীকে দেখেছিলেন ইতালীর যাত্রাপথে?
(২৫/১২/২০১৩)

বোনাস হিসেবে মনিকা বেল্লুচ্চির দ্রাক্ষাফল ভক্ষনরতা চিত্রবিশেষ! 😉

936full-monica-bellucci

…………………………………………………… (চলবে)

১,৬৬৫ বার দেখা হয়েছে

৩২ টি মন্তব্য : “স্ট্যাটাসসমগ্র-১”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ভাবছিলাম বান্দা পরার পর গরুর চারিত্রিক উন্নতি হবে, কিন্তু এখনো মনিকা :no:

    ব্লগে (গরীবের ঘরে) হাতির পাড়া দেখে ভাল লাগলো 😛


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. নাফিস (২০০৪-১০)

    যাক দিলেন শেষ পর্যন্ত 🙂 টাইটেল এর পর যেহেতু লেখা আছে প্রথম পর্ব , সুতরাং ধরে নেওয়া যায় যে আরো অনেক লেখা আসছে। সুদিন চলিয়া এসেছে :tuski: :tuski:

    আর "এডমিরাল" বলাতে কেন জানি আমার একটু হাসি পাইলো। দিনকাল খারাপ। আমার কেন জানি এডমিরাল জেনারেল আলাদিন এর কথা মনে পরলো 😛

    জবাব দিন
  3. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    নাহ লেট পার্টি হয়ে গেলাম্। দুষ্টু নেশায় ব্যস্ত ছিলাম। পুর‌োনো মানুষগুলোকে দেখে কি যে ভাল লাগছে এটা বলে ব‌োঝানো সম্ভব না। আপনাদের উপস্থিতি মনে করিয়ে দেয় যে নাহ, আমিও পারবো! :boss:


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  4. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    …পৃথিবীতে দুই ধরণের মানুষ আছে। ১) যাঁরা ভাগ্যের হাতে নিজেকে ছেড়ে দিয়ে বিফল হয়ে বসে থাকে আর ২) যারা নিজের ভাগ্য পরিবর্তনে সক্ষম। তুমি দ্বিতীয় দলে পড়ো, কারণ এই বইটা তুমি কিনেছ। এই বইটা পড়লেই তোমার যাবতীয় শারীরিক/মানসিক/মৌন/যৌন সব সমস্যা এক ফুৎকারে উড়ে যাবে …

    :awesome:


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  5. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    আমার দেশের অবাক করা উন্নয়নের গল্পও কি আমার মতই আগ্রহ নিয়ে কোন ভিনদেশী পাঠক একদিন পড়বেনা? কত দূরে সেই দিন? আজ? কাল?? ঠিক কবে??

    ::salute:: অবশ্যই আসবে।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  6. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    … সূর্যাস্তের সময় হয়ে এল। আমি কোলের উপর এক থোলো আঙ্গুর নিয়ে বসে বসে এক-আধটা করে মুখে দিচ্ছি।এমন মিষ্টি টসটসে সুগন্ধ আঙ্গুর ইতিপূর্বে কখনো খাই নি। মাথায়-রঙ্গিন-রুমাল-বাঁধা ঐ ইতালীয়া যুবতীকে দেখে আমার মনে হচ্ছে, ইতালীয়ানরা এখানের আঙ্গুরের গুচ্ছের মত, অমনি একটি বৃন্তভরা অজস্র সুডোল সৌন্দর্য, যৌবনরসে অমনি পরিপূর্ণ- এবং ঐ আঙ্গুরেরই মত তাদের মুখের রঙ, অতি বেশি শাদা নয়…

    😮


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোস্তাফিজ (১৯৮৩-১৯৮৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।