সাময়িক প্রতিক্রিয়া পোস্টঃআমাদের টিভি আম্পায়ারিং!

(সতর্কীকরণঃ পোস্টটি তাৎক্ষণিক ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া থেকে লেখা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তি আক্রমণে পরিপূর্ণ।সুশীল পাঠক নিজ দায়িত্বে পড়বেন)

বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার চৌধুরী জাফরুল্লাহ শরাফত ওরফে আমাদের শরাফত ভাই আমাদের নানাভাবে বিনোদন দিলেও ওনার একটা উক্তি মোটামুটি ক্লাসিকের পর্যায়ে ফেলা চলে-“কেনো জানি আম্পায়াররা বাংলাদেশের সাথে ভাল খেলেননা”।

শ্রীলঙ্কান দাঁতাল গন্ডার অশোকা ডি সিলভার কথা বাদই দিলাম,জোকার বিলি বাওডেন থেকে শুরু করে এমনকী স্টিভ বাকনরের মত আম্পায়াররাও হর-হামেশাই বাংলাদেশের বিপক্ষে এমন সব বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দেন যে মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করে।গত ইংল্যান্ড সিরিজে আম্পায়ারিং(ক্রিস টাকার এবং আরো এক আম্পায়ার-নাম ভুলে গেছি) সম্পর্কে তো ক্রিকইনফোতে সরাসরি এক দর্শক মন্তব্য করেছিল- “এই দুই আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলো না হলে টেস্ট সিরিজের ফলাফল বাংলাদেশের পক্ষেও যেতে পারত।”

আম্পায়াররাও মানুষ,খেলার মাঠে তাঁদের বারংবার ভুল সিদ্ধান্তে আমাদের মেজাজ খারাপ হলেও এইটুকু অন্তত মনে রাখতে হয় যে মাঠে খেলা চলাকালীন কি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে তাঁদের খেলা পরিচালনা করতে হয়।

উপরের যুক্তিতে যাঁদের পার করে দেবার কোন উপায় নেই তাঁরা হচ্ছেন টিভি আম্পায়ারেরা।এসি রূমে আরামদায়ক পরিবেশে বসে নানারকম প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব সম্পাদন করেন যা কিনা মাঠের আম্পায়ারদের তুলনায় বেশ কিছুটা সহজই বটে।

এই “সহজ” কাজটি মোটামুটি চমৎকারভাবেই সম্পন্ন করতে দেখা যায় অধিকাংশ টিভি আম্পায়ারদের-ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশের টিভি আম্পায়ারেরা।বিশেষ করে বাংলাদেশের খেলায় যদি টিভি আম্পায়ার বাংলাদেশের কেউ হন তাহলে তো কথাই নেই-নিজেদের “নিরপেক্ষ”(??!!) প্রমাণ করার জন্যে তাঁরা এতই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে যেখানে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের পক্ষে সিদ্ধান্ত যাবার কথা সেটাও তাদের বিপক্ষে দিতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননা।দুটি উদাহরণ দেই,একটি বেশ আগের আর আরেকটি আজকের।

১) ১৯৯৭ সালের এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে আতহার আলী খানের ৮২ রানের ইনিংসটির কথা মনে আছে???? বাংলাদেশের দর্শকেরা যখন প্রথম বারের মত কোন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের ওয়ানডে সেঞ্চুরি দেখার আগ্রহে ব্যাকুল-ঠিক সেই সময়ে আতহার আলী খান পাকিস্তানি অফ স্পিনার সাকলায়েন মুশতাকের একটি বল ডাউন দা ট্র্যাক এগিয়ে খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পিং এর আবেদনের মুখোমুখি হলেন।প্রায় ৫ মিনিট ধরে বিভিন্ন এ্যাঙ্গেল দিয়ে দেখেও কোন নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছিলোনা।তখন কমেন্টেটররা বলছিলেন যে বেনিফিট অফ ডাউট সব সময় ব্যাটসম্যানের পক্ষে যায়-সুতরাং আতাহারকে নট আউট ঘোষণা করা হবে বলেই তাদের ধারণা।

কিন্তু না! সবাইকে অবাক করে দিয়ে লাল বাতি জ্বলে উঠলো,বাংলাদেশি দর্শকদের সেঞ্চুরি দেখার আশায় গুড়ে বালি দিয়ে মাঠ ছেড়ে চলে গেলেন আতহার আলী খান।বলুন তো টিভি আম্পায়ার কোন দেশের? ঠিক ধরেছেন-তিনি আমাদেরই জাতভাই যিনি কিনা সঠিকভাবে খেলা পরিচালনার বদলে নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমাণে ব্যস্ত 😀

২)আজকে সাকিবের আউটটা দেখেছেন??? ক্যাচ নেবার পর ফিল্ডার নিজে এবং দলের অন্যান্য সদস্যরা যখন নিজেরাই দ্বিধান্বিত,টিভি রিপ্লাইতেও যখন কোন সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছেনা(বরং ড্রপ ক্যাচ বলেই মনে হচ্ছে) তখন কিউই ধারাভাষ্যকার ড্যানি মরিসন বলছিলেন-

“আউটের ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র দ্বিধাও যদি থাকে তবুও ব্যাটসম্যানকে নট আউট ঘোষনা করা হয়ে থাকে।কাজেই,আমার মনে হয় সাকিব নট আউট”।

আমরা দর্শকেরাও তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিলাম-কিন্তু একী! সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমাদের টিভি আম্পায়ার লাল সিগনাল দিয়ে দিলেন!!! ক্রিকইনফোতে দেখুনঃ

Over28.5 Elliott to Shakib Al Hasan, OUT, on leg, pick-up stroke is significantly better timed but straight into the hands of Williamson at deep square leg who dives forward. He is unsure if the ball has carried, the umpires go upstairs. Replays are inconclusive. And against the benefit of the doubt, Shakib is sent on his way!!

আমি তখনও জানতামনা টিভি আম্পায়ার কে বা কোন দেশি,কিন্তু বেনিফিট অফ ডাউট সাকিবের বিপক্ষে যাওয়ামাত্র আমি ধরেই নিলাম যে এই লোক নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের।ক্রিকইনফোতে ঘাঁটতেই দেখা গেল আমার সন্দেহ অমূলক নয়-ভদ্রলোকের নাম শরফুদ্দৌলা এবং অতি অবশ্যই তিনি বাংলাদেশের লোক 😀

সাকিবের এরকম আউটের ফলে মাথায় যখন আগুন জ্বলছে,ঠিক তখনই এই ভদ্রলোক আরেকটি কাজ করলেন- বর্ণনাটা ক্রিকইনফো থেকেই দিইঃ

Over 37.2 Bennett to Mahmudullah, 2 runs, full on leg, clipped fine and Mills puts in a valiant dive and flicks it back, umpires go upstairs to check if his foot was touching the rope, again the fielder is given the benefit of the doubt

আমি বলছিনা সব আম্পায়াররা খারাপ বা তাঁদের ভুলগুলো ইচ্ছাকৃত।কিন্তু আমার মত আনকোরা ক্রিকেট দর্শকও যেখানে জানে যে বেনিফিট অফ ডাউট সব সময় ব্যাটসম্যানের পক্ষে যায়,সেখানে এই ভুলগুলো কি আদৌ মেনে নেয়ার মত?

জনাব শরফুদ্দৌলা এবং তাঁর মত বাকি বাংলাদেশি আম্পায়ারদের বলছি- নিরপেক্ষতা প্রমান করতে হলে দয়া করে সত্যিকারের নিরপেক্ষতা অর্জন করার চেষ্টা করুন।আম্পায়ারিং ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ করতে নিজ দেশের খেলোয়াড়দের বলির পাঁঠা বানিয়ে আর যা-ই হোক,নিরপেক্ষ হওয়া যায়ন-বরঞ্চ নিজের বাপ,দাদা চৌদ্দগুষ্টিসহ পাবলিকের গালি খেতে হয়।আমাদের খেলোয়াড়েরা ১৯৯৭ সালের সেই এশিয়া কাপ পর্যায় থেকে ২০১০ সালে বহুদূর এগিয়েছে কিন্তু আপনারা পড়ে আছেন সেই প্রাচীনকালেই।

দয়া করে নিজের পেশার প্রতি যথোপযুক্ত সম্মান দিন- আর না পারলে মানে মানে কেটে পড়ুন,পাবলিক ঘাড় ধরে টেনে নামানোর আগেই।

আমাদের টিভি আম্পায়ারদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক!

পুনশ্চঃ আজকে বিটিভির বিরতিকালীন আলচনায় আমাদের প্রিয় চৌধুরী জাফরুল্লাহ শরাফত ভাই আশরাফুলের সাথে ঠিক এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।তাঁর চিরপরিচিত অরিজিনাল পরচুলার সাথে সাথে কোটের কলারে চাইনিজ জাদুকরদের মত আঁকিবুকি খেয়াল করেছেন কেউ?

পুনশ্চ-২

আজকের টিভি আম্পায়ার ভদ্রলোকের একটা ছবি দেবার লোভ সামলাতে পারছিনাঃ

সর্বশেষ খবর হচ্ছে নিউজিল্যান্ড ৪২/৫।আজ বাংলাদেশ জিতে গেলেও এই গুনধর ভদ্রলোকের কীর্তিকলাপ আশা করি আইসিসির চোখে পড়বে,ভবিষ্যতের বাংলাদেশি টিভি আম্পায়ারেরাও দয়া করে চেষ্টা করবেন এঁর মত না হতে।

১,৫০৮ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “সাময়িক প্রতিক্রিয়া পোস্টঃআমাদের টিভি আম্পায়ারিং!”

  1. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

    মাসরুফ, শুধু বাংলাদেশী আম্পায়ারদের দোষ দিলে ভুল হবে, অনেক ভালো ভালো আম্পায়াররাও ছোট দলগুলোকে বেনিফিট অফ দ্য ডাউট না দিয়ে বড় দলগুলোর পক্ষে রায় দেন|

    জবাব দিন
  2. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    অবিশ্বাস্য একটা ম্যাচ দেখলাম আজকে।মন অনেক খুশি-ইট্টু পরে পার্টি করতে যামু।তবে তার মানে এই না যে আম্পায়ারগুলার আবালগিরি ভুইলা যামু।অন্য দেশের কথা জানিনা তয় বাংলাদেশের আম্পায়ারগুলা বাংলাদেশের খেলার সময় বেশি চ্যাতে-এইটাই দুঃখজনক।শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত,ওই ব্যাটারে পিটাইতে লোক জড়ো হইছিলো মিরপুর স্টেডিয়ামে,বাংলাদেশ জিত্তা গেছে দেইখা বাঁইচা গেলো x-(

    জবাব দিন
  3. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    আমিনের প্রিয় মনি ভাই অইদিকে সাউথ আফ্রিকা জিম্বাবুয়ের ওয়ানডেতে হেব্বি ভাবে ফিল্ড আম্পায়ারিং করতাসে। বাংলাদেশের প্রথম হিসাবে মনিই মনে হয় এলিট প্যানেলে ঢুকবে।


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  4. সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

    পুরাতন একটা জুক্সি ব্লগ পড়ছিলাম। হঠাত মনে হল এই ব্লগে এই জুক্সটা এক্কেবারে এ্যাপ্রপ্রিয়েট। টিউবলাইট হবার কারণে দূঃক্ষিত 😕
    "একবার স্বর্গের দেবতারা আর নরকের শয়তানেরা মিলে ক্রিকেট খেলবে বলে ঠিক করল। স্বর্গের দেবতারা খেলায় জিত নিয়ে খুবই আত্মবিশ্বাসী, কারণ সব ভালো ভালো ক্রিকেটাররা স্বর্গে তাদের সঙ্গেই আছেন। কিন্তু শয়তানদের এই নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত দেখা গেল না।তাদের নিশ্চিন্ত ভাবভঙ্গি দেখে এক দেবতা এক শয়তানকে ডেকে বলল, কী ব্যাপার, ভালো ভালো ব্যাটসম্যান তো সব আমাদের এখানে,কিন্তু তোমাদেরকে বিশেষ চিন্তিত মনে হচ্ছে না! শয়তান সঙ্গে সঙ্গে দাঁত বের করে শয়তানি হাসি দিয়ে বলল, তোমাদের যতই ব্যাটসম্যান থাকুক, আম্পায়ারগুলো তো সব আমাদের এখানে!"


    You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কামরুল হাসান (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।