হালুউউউউউউউউউউউউউউউউউম্মম্মম্মম!!!!!

ইতোমধ্যেই আমরা সবাই জেনে গিয়েছি নিউজিল্যান্ডের পূর্ণ শক্তির দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের কথা।এই আনন্দের ডামাডোলে এই খবরটি সম্ভবত অনেকের চোখ এড়িয়ে গিয়েছে।হ্যাঁ,আমাদের ছেলে তামিম উইজডেন ম্যাগাজিনের জরিপে বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছে।২০১০ সালে ৫৯ দশমিক ৭৮ গড়ে ৭টি টেস্টে তামিমের মোট রান ৮৩৭,যার মধ্যে ভারতের বিপক্ষে ১৫১ রানের এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জোড়া সেঞ্চুরির মত ইনিংস রয়েছে।এই অর্জনের পথে তামিম পেছনে ফেলেছে গ্রায়েম সোয়ান এবং ভিরেন্দর শেহবাগের মত ক্রিকেটারদের-যাদের অবস্থান যথাক্রমে ২য় ও তৃতীয়।

বেশ কিছুদিন আগে আয়ারল্যান্ডের সাথে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পরাজয়ের পর রাগে দুঃখে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম এই বলে যে আগামিতে ম্যাচ না জেতা পর্যন্ত বাংলাদেশের খেলা আর দেখবনা।অনেকে বলেছিলেন যে এই প্রতিজ্ঞার ফলে আমাকে নাতি-নাতনি কিংবা নিদেনপক্ষে ছেলে-মেয়ে নিয়ে খেলা দেখতে হবে।তাঁদের ওই মন্তব্যগুলোও ছিলো আমার মতই আবেগের বহিঃপ্রকাশ যাতে দ্বিমত করার কোন কারণ অন্ততঃ তখন পাওয়া যায়নি।

কিন্তু সেই তখন আর এখনের মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব।আজ আমরা অবাক হয়ে দেখছি আমাদের ছেলেরা নিউজিল্যান্ড দলকে পর পর তিনটা “গোল” দিয়ে চতুর্থটা দেবার অপেক্ষা করে-একই দিনে বিশ্বের বাঘা বাঘা খেলোয়ারদের পেছনে ফেলে আমাদের তামিম বিশ্বসেরা ক্রিকেটার হয়,আমাদের সাকিব বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে আবারো প্রমাণ করে।

আমার মনে পড়ে যাচ্ছে সেই পিচ্চিকালে দেখা এশিয়া কাপের সেই ম্যাচগুলো যেখানে আমাদের খেলোয়াররা গো-হারা হারার পরেও কি বিপুল উৎকণ্ঠা নিয়ে বসে থাকতাম! কিংবা আরো পেছনে ফিরে তাকালে ইন্ডিয়া,পাকিস্তান,শ্রীলঙ্কার এ দল এবং আমাদের জাতীয় দলকে নিয়ে গঠিত সেই টুর্নামেন্টের ম্যাচগুলোর কথা-যার একটিতে বাংলাদেশ নভজ্যেত সিং সিধু,অজয় জাদেজাদের নিয়ে গড়া ভারতীয় এ দলকে রফিকের বোলিং শক্তিতে ১ রানে পরাজিত করেছিল।১৯৯৭ সালের এশিয়া কাপে মুড়ি-মুড়কির মত ক্যাচ মিস করা বাংলাদেশ দলকেও মনে পড়ে যাচ্ছে আমার-যে বাংলাদেশের ছেলেরা আজকাল ম্যাচের চরম উত্তেজনাকর মুহূর্তে অসাধারণ থ্রোতে রান আউট করে ম্যাচের গতিপ্রকৃতি পালটিয়ে দেয়।
খুলনায় থাকতে হোয়াংহো চায়নিজ রেস্টুরেন্টে বসে আব্বুর সাথে আমার সে কি উত্তেজনা যে আমাদের খেলোয়াড়দেরকে টিভিতে দেখাবে!!!!তাদের জার্সির রঙ এবং ডিজাইন কেমন হলে ভালো হয় সেটা নিয়ে আম্মুর সাথে কত কত আলোচনা করেছি! কলেজে যোগদানের পর আইসিসি ট্রফি বিজয়ে সবুজ হাউসের পতাকার মাঝে লাল হাউসের পতাকার বৃত্ত বসিয়ে সেটা নিয়ে উন্মাদনার কথা ইমিডিয়েট সিনিয়রদের কাছে শুনে কতই না রোমাঞ্চিত হয়েছি! আমাদের এক বড়ভাই নাকি বাইরের মানুষের সাথে আনন্দ মিছিলে যোগদান করার আগ্রহে কলেজ পালিয়ে ধরাও পড়েছিলেন!!!!

আমাদের দল স্বর্গে পৌঁছে গিয়েছে এমনটি বলছিনা।এখনো অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের সিমিং কন্ডিশনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানেরা কতটুকু কার্যকরভাবে খেলতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে।মুশফিকুর রহিমকে আজও দেখলাম মোয়া টাইপের স্ট্যাম্পিং মিস করতে,যদিও পরের বলেই ওই ব্যাটসম্যান আউট হওয়ায় ক্ষতিবৃদ্ধি তেমন একটা হয়নি।আমার মতে,উইকেটকিপার বেছে নেবার সময় কিপিং স্কিলের উপরেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিৎ,কিছুটা উইকেটকীপিং আর কিছুটা ব্যাটিং পারে এরকম হলে সমূহ বিপদ!এছাড়াও রয়েছে বিশ্বমানের ফাস্টবোলারের অভাব,শ্লগ অভারের সুবিধা নিতে ব্যর্থতা,কতিপয় স্টার প্লেয়ারের উন্নাসিকতা ইত্যাদি হাজারো রকমের সমস্যা।

তবুও,আমার মতে বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে আজ সেরা দিন।এই এত্ত এত্ত সমস্যা নিয়েও ক্রিকেটের উইজডেন আমাদের তামিমকে বিশ্বসেরা টেস্ট ক্রিকেটারের মর্যাদা দিতে বাধ্য হয়েছে।যার বদলে তার স্ত্রীকে বোলার হিসেবে পাঠালেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানেরা হাবুডুবু খাবে এরকম লিজেন্ডের নায়ক সেই ডেনিয়েল ভেট্টোরির মুখ থেকে আজ বের হয়েছে- “বাংলাদেশ হ্যাজ শোড আস হাউ টু প্লে”

আসুন দুটি ছবি দেখিঃ

উপরের ছবিটি অনন্য ভঙ্গিমায় সেঞ্চুরি উদযাপনরত আমাদের তামিম ইকবাল

এই ছবিটি প্রথমবারের মত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় করার পর বাংলাদেশের ভিক্টরি ল্যাপের।

বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে আমাদের আবেগের যা পরিমাণ,তাতে ভবিষ্যতে খারাপ খেললে হয়তো অনেক কঠোর ভাষায় সমালোচনা করব।তবে একটা ব্যাপারে আমি নিশ্চিত,আমরা যারা ভেবেছিলাম যে প্রতিজ্ঞা রাখতে গিয়ে আমাদেরকে ছেলে-মেয়ে কোলে নিয়ে খেলা দেখতে হবে তারা আজ নিজেদের এইরকম মারাত্মক(!!) ভুল ধরা পড়ায় কষ্ট পাবার বদলে আনন্দে লাফাচ্ছি।খারাপ খেলার সমালোচনা করতে যদি কার্পন্য না করি, তাহলে আজ যে আমাদের বুক দশহাত ফুলিয়ে দেওয়া কিংবা ছয়ফুট উচ্চতার এই আমাকে বারো ফুট উচ্চতায় তুলে দিলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল,তাতে বুক চিরে আনন্দ প্রদর্শন করতে দ্বিধা কোথায়?????!!!

আমরা তোমাদের নিয়ে গর্বিত,ব্যাঘ্রশাবকেরা!!!!

কিউইর রোস্ট দিয়ে পেটপুরে ভোজ দেবার পর তৃপ্তির ঢেঁকুড় না তুলে পরবর্তী শিকা্রের সুতীব্র ক্ষুধায় চলুন সবাই গলা ফুলিয়ে গর্জন করি-

হালুউউউউউউউউউউম্মম!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

২,৬৪৭ বার দেখা হয়েছে

৩৪ টি মন্তব্য : “হালুউউউউউউউউউউউউউউউউউম্মম্মম্মম!!!!!”

  1. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    খিয়াল কৈরাঃ
    "বাংলাদেশ শোড আস হাউ টু প্লে" এটি কিন্তু একটি লিঙ্ক যেখানে ফিলোসফার ভেট্টোরি মামুর বিস্তারিত বক্তব্য দেয়া আছে 😀 লিঙ্কটি ক্লিক করতে ভুলবেননা!!

    জবাব দিন
  2. শাহরিয়ার (২০০৪-২০১০)

    আমি কেবল চিন্তা করতেসি খেলা দেখার পারমিশন ছিল কলেজে...ক্যাডেটরা কী মস্তিটাই না করসে আজকে...এত্তগুলা ক্যাডেট মিলে...ইস...মিস মাই টিভিরুম... 🙁


    People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    বিভিন্ন সময়ে যতই গালাগালি করি না কেন, বাংলাদেশের জয়ে প্রান খুলে উদযাপন করতে আমি কখনোই কার্পন্য করি না, তারপরেও অনেক অনেক দিন পরে বাংলাদেশের জয়ে এত আনন্দ পেলাম। বেশিরভাগ সময়েই আমাদের দলের পারফর্ম্যান্স আমাদের আশাবাদী করার চেয়ে হতাশাই বেশি দিয়ে থাকে, তারপরো আমি সব সময়ই আশাবাদী। প্রথম ম্যাচ জেতার পরে দেয়া আমার পোস্টে পরবর্তী জয় নিয়ে আশংকা আমার মত প্রায় সবার মনেই এসেছিল, কিন্তু সব কিছুকে ভুল প্রমান করে টানা তিন ম্যাচ জিতে গেল টাইগারেরা। সাব্বাশ...

    এর পাশাপাশি তামিমের অর্জনটাও সমান আনন্দের। সাকিব-তামিম বিশ্বের সামনে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন ব্রান্ডের পরিচায়ক হিসেবে কাজ করবে।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  4. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    একটা ছোট তথ্যগত ভুল আছে মাস্ফ্যু।
    তামিম যে পুরষ্কার পেয়েছে সেটা দিয়েছে উইজডেন ক্রিকেটার ম্যাগাজিন
    আমরা যেটাকে ক্রিকেটের বাইবেল বলি সেই উইজডেন নয়। নাম এক হলেও দুটো আলাদা জিনিস। একটা মাসিক ক্রিকেট ম্যাগাজিন (তামিম যেটার পুরষ্কার পেয়েছে), অন্যটা ক্রিকেটের সবচেয়ে সম্মানিত রেফারেন্স বই (এটা প্রকাশিত হয় বছরে একবার)। ক্রিকেটের বাইবেল যেটা, সেটার বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরষ্কারটা পেয়েছেন অন্যজন।

    যাই হোক, এই পুরষ্কারটাও গৌরবের। আগের বছর এটা সাকিব পেয়েছিল।

    তামিমকে অভিনন্দন।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  5. রকিব (০১-০৭)
    বেশ কিছুদিন আগে আয়ারল্যান্ডের সাথে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পরাজয়ের পর রাগে দুঃখে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম এই বলে যে আগামিতে ম্যাচ না জেতা পর্যন্ত বাংলাদেশের খেলা আর দেখবনা।

    বার বার ছোট-বড় দলের কাছে হেরেও হয়তো তাই বাংলাদেশের খেলা আর দেখবো না বলি, এবং পরবর্তী ম্যাচ শুরু হলে নিজের অজান্তেই নজর রাখতে শুরু করি স্কোরকার্ডের দিকে (এবং আমি টের পাই, এই একই কাজ আমি হয়তো বারবারই করে যাবো)।

    দারুণ ব্যাপার হলো, জেতার অভ্যাসটা বেশ প্রবল ভাবেই গড়ে উঠছে বাংলাদেশ দলের মধ্যে। আগে যেখানে ভালো খেলা কিংবা সম্মানজনক হারের প্রত্যাশায় বুক বাঁধতাম, এখন জেতার সাহসটা মুখ ফুটে বলেই ফেলি আমরা। জ্যাকব ওরাম ছাড়া বোধহয় পূর্ণশক্তির কিউই টীমই ছিলো মাঠে এই পুরো সিরিজেই; কিন্তু আমাদের সাথে তামিম কিংবা মাশরাফি ছিল না। (আশার ফুলও ছিল না 😛 ) তার পরও কিন্তু বাংলাদেশ জিতে গেছে, এবং ফ্লুক না বরং খেলা দেখিয়েই জিতেছে। বিশ্বকাপের আগে এমনতর ক্রীড়াণক হয়তো বিশ্বকাপের জন্য আরো দৃঢ়-মনোবলসম্পন্ন একটা দলকে ঠেলে দিবে।
    সাব্বাস বাংলাদেশ, সাব্বাস সাকিব, সাব্বাস তামিম, সাব্বাস রকিব (এইটা আমি)। :clap: :clap: :clap:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  6. আজীজ হাসান মুন্না (৯১-৯৭)

    "আমাদের এক বড়ভাই নাকি বাইরের মানুষের সাথে আনন্দ মিছিলে যোগদান করার আগ্রহে কলেজ পালিয়ে ধরাও পড়েছিলেন!!!! "

    আহারে কত কিছুই না আবার মনে করিয়ে দিলে তুমি ....
    সেই উন্মাতাল ১৯৯৭ , আমাদের ক্লাস টুয়েলভের ঘটনাবহুল সময় কাল, এরই মাঝে আইসিসি ট্রফি তে বাংলাদেশের খেলা, মালেয়েশিয়ার কিলাত ক্লাব মাঠ থেকে যেন ইথারে ভেসে আসে কিছু মুহুর্তের ছবি যার জন্য সারা দেশের অনন্ত প্রতিক্ষার প্রহর গোনা আর ক্ষণে ক্ষণে উদ্মেলিত হওয়া | পুরা বাংলাদেশের সাথে আমরা ক্যাডেটরাও তখন একাত্ন| যে জাফরুল্লাহ শরাফত কে তোমরা এত পচাও তাকেও আমরা সবাই ভালোবেসেছিলুম সেইদিন 🙂

    কেনিয়া কে নাটকীয় ভাবে হারানো, ইতিহাসে যেটার নাম হয়ে গেল "এক বলে এক রান " , আমাদের সীমাহীন আনন্দ উল্লাসের মাঝেও আমরা অনুভব করলাম পুরা দেশে কি কান্ডটাই না ঘটে যাচ্ছে | দেশ ও জাতির এই ঐতিহাসিক বিজয়ের মুহুর্তে আপামর জনসাধারণের সাথে এক হয়ে মিশে যাবার মত বিপ্লবী মুহূর্ত ভবিষ্যতে আসবে কিনা এইটা নিয়ে সেদিন ভাববার বেশি অবকাশ ছিল না - এক জীবনে এই সুযোগ আর পাব কিনা ইতিহাসের অংশ হতে সেই চিন্তায় অধিকতর কাতর আমাদের ৩ বন্ধুর অতপর খায়বার হাউস এর পেছনের দেয়াল টপকিয়ে বাইরে বেরিয়ে যাওয়া , আপামর জনতার সাথে বাপক নাচা নাচি, রং মাখা মাখি এর পর জলন্ত সিগারেট হাতে ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর মোড়ের কাছাকাছি নবগঙ্গা নদীর ব্রিজের পাশে বাজার ফেরত ইলিয়াস স্যার এর চোখে পড়ে যাওয়া, পরে ডাইনিং হলের পেছন দিক দিয়ে ঢোকার সময় স্যার এবং স্টাফ দের পূর্ব পরিকল্পিত আ্যম্বুশ এর ফাদে ধরা পড়া - সেটা আরেক ইতিহাস 🙂

    সাবাস বাংলাদেশ |

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সেলিনা (১৯৮৮-১৯৯৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।