একাত্তরের একলব্য

মহাভারতের একলব্যের গল্প আমরা অনেকেই জানি।তৎকালীন সময়ের শ্রেষ্ঠ অস্ত্রগুরু ছিলেন দ্রোণাচার্য যিনি কেবল উচ্চবংশীয় রাজপুত্রদের যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষা দিতেন।দুর্যোধন থেকে অর্জুন-মহাভারতের শ্রেষ্ঠ বীরগণ অধিকাংশই এঁর শিষ্য।শূদ্র বংশীয় রাজপুত্র একলব্য দ্রোণাচার্যের কাছে অস্ত্রশিক্ষা করতে চাইলে নিম্নবর্ণের অজুহাতে তিনি তাকে প্রত্যাখ্যান করেন।

ভগ্নহৃদয় একলব্য পরবর্তীতে গভীর জঙ্গলে দ্রোণাচার্যের মূর্তি গড়ে সেটিকে গুরুর সম্মানে পূজা করে নিজে নিজেই কঠোর প্রশিক্ষণে আত্মনিয়োগ করেন।এভাবে বহুদিন কেটে যায়-ঘটনাক্রমে একদিন দ্রোণাচার্য তাঁর শ্রেষ্ঠ ছাত্র অর্জুনসহ বাকিদের নিয়ে সেই বনে হরিণ শিকার করতে আসেন।তাঁর পোষা কুকুরটি হরিণের পিছু পিছু বনের ভিতরে ছুটে যেতে যেতে একসময় হারিয়ে যায়।কুকুরের কান্নার শব্দ শুনে দ্রোণাচার্য এবং তাঁর শিষ্যরা বনের ভেতরে একটি কুটীরের কাছে উপস্থিত হয়ে দেখেন-সাতটি তীরের মাধ্যমে কুকুরটিকে পাশের অশ্বথ গাছের সাথে এমনভাবে গেঁথে ফেলা হয়েছে যে তার গায়ে বিন্দুমাত্র আঁচড় লাগেনি কিন্তু সেটি কোনভাবেই নড়াচড়া করতে পারছেনা।

দ্রোণাচার্যের মূর্তিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পনরত একলব্য

“অদ্ভুত!!!আমি আমার সমগ্র জীবনে তীরন্দাজির এমন তুখোড় প্রয়োগ দেখিনি!!”- দ্রোণাচার্য নিজের অজান্তেই উচ্ছ্বাসিত হয়ে বলে উঠলেন। “কে এই তীরন্দাজ??কোথায় সে??”-একথা বলে তিনি যখন এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন তখন এক কৃষ্ণবর্ণ তরুণ কুটীর থেকে বেরিয়ে এসে সরাসরি তাঁর পায়ের কাছে বসে পড়ল।

“গুরুদেব,আমি একলব্য-নিম্নবর্ণের হওয়ায় আপনার কাছে সরাসরি অস্ত্রশিক্ষার সৌভাগ্য আমার হয়নি।তাই আপনার মূর্তি গড়ে সেটিকেই গুরু মেনে নিজের পরিশ্রমে তীরন্দাজী শিখেছি।আপনার মুখনিঃসৃত প্রশংসাধ্বনি নিঃসন্দেহে আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন-কারণ আপনাকেই আমি আমার গুরু বলে মানি।”- একলব্যের কথায় দ্রোণাচার্য যখন পুলক বোধ করছেন-তাঁর শ্রেষ্ঠ শিষ্য অর্জুনের মনে তখন চলছে ঈর্ষার ঝড়। “তুমিই হবে আমার সেরা ছাত্র”-গুরুর এই বানীতে উদ্বুদ্ধ উচ্চবংশীয় রাজপুত্র অর্জুন যখন অমর খ্যাতির স্বপ্নে বিভোর,তখন কোথা থেকে এই শূদ্রবংশীয় আপদ এসে জুড়ে বসল!!! বিক্ষুব্ধ অর্জুন দ্রোণাচার্যকে আলাদা করে ডেকে মনে করিয়ে দিল প্রতিজ্ঞার কথা- “গুরুদেব,আপনি বলেছিলেন আমিই হব আপনার সেরা ছাত্র-তাহলে এই শূদ্রের পুত্র কিভাবে আপনাকে এত মুগ্ধ করে?”

অর্জুনের কথায় দ্রোণাচার্যের উচ্ছ্বাসে তীব্র বিষাদের ছোঁয়া লাগে। “পুত্র অর্জুন,মনে রেখ-প্রতিপক্ষ যতই প্রবল হোকনা কেন,যত উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিতই তারা হোকনা কেন-সুগভীর সাধনা আর দৃপ্ত সংকল্পের কাছে তারা কিছুই নয়।এ ছেলেটির প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা নেই,কিন্তু স্বীয় সাধনায় সে শুধু আমার শ্রেষ্ঠ ছাত্রকেই নয় বরং স্বয়ং আমাকেও পেছনে ফেলেছে।তবে তাতে তোমার চিন্তার কোন কারণ নেই-অন্যায়ভাবে হলেও আমার প্রতিজ্ঞা আমি রক্ষা করব।”

অর্জুনের সাথে কথা শেষ করে দ্রোণাচার্য একলব্যকে ডেকে পাঠালেন। “পুত্র একলব্য,যদিও আমার পাঠশালায় তোমাকে আমি কখনোই সুযোগ দেইনি,তোমার কথা অনুযায়ী আমিই তোমার গুরু।কাজেই,রীতি অনুসারে তোমার কাছে গুরুদক্ষিণা হিসেবে আমার কিছু প্রাপ্য আছে-তাইনা?”

“গুরুদেব,আপনার মূর্তিকে গুরু হিসেবে মেনে নিয়ে আমি সাধনা করেছি-আমার যা কিছু শিক্ষা তার পুরো কৃতিত্বই আপনার।আপনি গুরুদক্ষিণা হিসেবে যা চাইবেন-নিজের প্রাণ দিয়ে হলেও আমি তা প্রদান করব।”-নম্র অথচ দৃপ্তস্বরে ঘোষণা করল একলব্য।

“দেখ একলব্য, আমার এই যে শিষ্য অর্জুনকে দেখছ-একে আমি কথা দিয়েছি যে একেই আমার শ্রেষ্ঠ শিষ্যের মর্যাদা দেব।কিন্তু তোমার মত তীরন্দাজের উপস্থিতিতে ও কোনভাবেই সে স্থান অর্জন করতে পারবেনা।কাজেই,গুরুদক্ষিণা হিসেবে আমি তোমার ডানহাতের বৃদ্ধাঙ্গুলিটি দাবী করছি।তুমি যদি প্রকৃত অর্থেই আমাকে তোমার গুরু বলে মনে করে থাক তাহলে তোমার ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুলটি আমাকে কেটে দাও।”

দ্রোনাচার্যের কথায় শূদ্রের পুত্র একলব্য বুঝতে পারল-নিম্নবর্নের নিষাদবংশে জন্ম নেয়ায় যত মেধাই থাকুকনা কেন-শ্রেষ্ঠত্বের অধিকার তার নেই।অবর্ণনীয় বিষাদে তার হৃদয় ভেঙ্গে গেলেও সিদ্ধান্ত নিতে এক মুহুর্ত দেরী হলনা তার।হাসিমুখে কোমরে গোঁজা ছুরি দিয়ে বামহাতে নিজের ডান বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে দ্রোনাচার্যের পায়ের কাছে রেখে দিল সে।

দ্রোণ নিজেও বুঝতে পারেননি যে বলার সাথে সাথেই একলব্য নির্দেশ পালন করবে-কারণ একজন তীরন্দাজের বুড়ো আঙ্গুল কেটে নেয়ার অর্থ আক্ষরিকভাবেই তাকে হত্যা করা।দ্রোণ এবং উপস্থিত শিষ্যদের চোখেমুখে হতবাক বিষ্ময় দেখে একলব্য বলল- “গুরুদক্ষিণা হিসেবে আমি যা দিয়েছি তা অতি তুচ্ছ।দ্রোণাচার্য যদি বৃদ্ধাঙ্গুলির পরিবর্তে আমার মস্তকও চাইতেন-আমি সেই মুহূর্তেই নিজের মাথা কেটে গুরুর পায়ের কাছে ফেলতাম।”

তবে নিষ্ঠুরতার এখানেই শেষ নয়-স্বীয় প্রচেষ্টায় এমন অসাধারণ দক্ষতা অর্জনকারী একলব্য যে আসলেই আর তীরন্দাজী করতে পারবেনা এটি নিয়ে দ্রোণাচার্য নিঃসন্দেহ হতে চাইলেন।কাটা আঙ্গুলের যন্ত্রণায় একলব্য যখন কাতরাচ্ছে-তখন তিনি আদেশ দিলেন নিকটতম একটি সহজ লক্ষ্যে তীর ছুঁড়তে।কাটা আঙ্গুলে লক্ষ্যস্থির করতে অক্ষম একলব্য ব্যর্থ হল সে লক্ষ্য ভেদ করতে। “গুরুদেব” দ্রোণাচার্য সন্তষ্ট হলেন নিজের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে পেরে,আর তাঁর “শ্রেষ্ঠ” ছাত্র অর্জুন নিশ্চিন্ত হল নিজের শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষুণ্ণ থাকায়।

(ছবিতে একলব্যকে দেখা যাচ্ছে দ্রোণাচার্যের গুরুদক্ষিণা হিসেবে বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে দিতে,পাশে দাঁড়িয়ে তা দেখছে দ্রোণাচার্যের “শ্রেষ্ঠ” শিক্ষার্থী অর্জুন-পেছনেই দ্রোণাচার্যের মূর্তি,যেটাকে গুরু হিসেবে একলব্য পূজা করত)

প্রিয় পাঠক,মহাভারতে একলব্যের গল্প এখানেই শেষ-এবার আপনাদের এ যুগের এক একলব্যের গল্প শোনাব।চলুন মহাভারতের সময় থেকে আড়াই হাজার বছর ভবিষ্যতে চলে যাই।

১৯ আগস্ট,১৯৭১ সাল।গাজীচর থেকে ছোট ছোট নৌকায় করে ১২৫ জনের একটি মুক্তিযোদ্ধার দল এগিয়ে আসছে চিলমারী রেল স্টেশনের দিকে।চিলমারী থানায় আস্তানা গেঁড়েছে হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল-সাথে আছে তাদের জারজ সন্তান এদেশী রাজাকারেরা।হত্যা,অগ্নিসংযোগ আর নারী নির্যাতনে চারদিক ছারখার করে দিচ্ছে তারা।

মাতৃভূমির অপমানের প্রতিশোধ নিতে যারা জীবন আর মৃত্যুর সীমান্তে পা দেবে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই-১৮ বছর বয়েসি বালক নজরুল তাদেরই একজন।সাঘাটা হাই স্কুলে পাঠরত অবস্থায় একাত্তরের ডাক এল-আর তাতে সাড়া দিয়ে বই-খাতা ফেলে বন্দুক হাতে তুলে নিল সে।কৈশোরের গণ্ডি পুরোপুরি না পেরুনো নজরুল ভালমতই জানে যুদ্ধে যাবার পরিণতি কি হতে পারে-মৃত্য,পঙ্গুত্ব কিংবা ধরা পড়লে অবর্ণনীয় নির্যাতন-কোনটাই অসম্ভব নয়।কিন্তু যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময়ে উপনীত নজরুলের এসব ভাবার সময় কোথায়??

ঠিক ভোর চারটায় ছাল্লিপাড়া চর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আর্টিলারি বাহিনী(ভারতীয় বাহিনী নয়) পাকবাহিনীর অবস্থানে অবিরাম শেলিং শুরু করল।ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া পাকিস্তানি সেনারা অবাক হয়ে দেখল-লুঙ্গি কাছা দেয়া ভেতো বাঙ্গালিরা একযোগে তাদের সাতটি অবস্থানে অতর্কিতে আক্রমণ করেছে।এই সাতটি অবস্থান হচ্ছে-১) ওয়াপদা (WAPDA) বিল্ডিং ২)সাঘাটা মাদ্রাসা ৩) সাঘাটা প্রাইমারি স্কুল ৪) খমির মাস্টারের বাড়ি ৫)টাবুরহাট বাজার ৬) বালাবাড়ি এবং ৭) রেলওয়ে ব্রিজ।হানাদার পাকিস্তান বাহিনী আর রাজাকারেরা মিলে প্রায় পাঁচশ জনের মত ছিল,আর মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা ছিল মাত্র ১২৫ জন।এই যুদ্ধে ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন-আর পাকিস্তানিদের ১৩০ জন মারা যায় এবং ৩০০ রাজাকার ধরা পড়ে।১৭ জন শহীদের মধ্যে নজরুলের সহপাঠী আব্দুস সাত্তার এবং সম্পর্কের চাচা নাজিমুদ্দিন মন্ডল মৃত্যুবরণ করেন।এ যুদ্ধের পর নজরুল আরো ৫টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামের সাথে আমার পরিচয় গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা ইউনিয়নের হাশিলকান্দি গ্রামে।বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার হয়ে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত গবেষণার কাজে সেখানে গিয়েছিলাম।গ্রামের মানুষদের সাথে একটি কর্মশালার শুরুতে যখন অংশগ্রহণকারীদের নাম ও পেশা লিখে নিচ্ছিলাম-শ্মশ্রুমণ্ডিত,ছোটখাটো এই মানুষটি তখন আমাকে বললেন- “বাজান,আমার নাম নজরুল ইসলাম-আমার পরিচয় আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা,বর্তমানে কৃষিকাজ করি।”

বয়েসের ভারে এবং দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত ছোটখাটো গড়নের এই মানুষটি যেরকম গর্বের সাথে উচ্চারণ করলেন যে তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা-আমার মনে হল আমি যেন তাঁর চোখে একাত্তরের সেই ঝিলিক দেখতে পেলাম।কর্মশালা শেষে তাই যেটুকু পারলাম লিপিবদ্ধ করে নিলাম সেই আগুনঝরা দিনগুলোর কথা।

স্বাধীনতার প্রায় চার দশক পরে দেশের নানা পরিবর্তন এসেছে।দেশদ্রোহীরা নিজেদের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা লাগাতে পেরেছে,দেশ দুর্নীতিতে পাঁচবার প্রথম হয়েছে,জন্ম নিয়েছে ডিজুস প্রজন্ম যারা কিনা বাংলাদেশে থেকেও নিজেদেরকে খোদ আমেরিকানদের চাইতে খাঁটি আমেরিকান বলে মনে করে,বাংলাদেশ-পাকিস্তান খেলায় পাকিস্তান হারলে দুঃখ পায়।

তবে বদলাননি নজরুল ইসলামের মত কিছু মানুষ-নদীর ভাঙ্গন আর বন্যায় সবকিছু হারিয়েও মুক্তিযুদ্ধের অহংকার বুকে নিয়ে যিনি প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন।

আমার এক দূরসম্পর্কের আত্মীয় যখন নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দিয়েছিলেন-অধীর আগ্রহে প্রশ্ন করে জানতে পেরেছিলাম যে এই এত বছর পর ঠিক কোন সেক্টর কমান্ডারের অধীনে,কত নম্বর সেক্টরে তিনি যুদ্ধ করেছিলেন তা নাকি তাঁর মনে নেই।এই ভদ্রলোক মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে প্রথম শ্রেণীর সরকারী চাকুরি বাগিয়েছেন,নিজের ছেলেমেয়েদেরকে বিসিএস পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটার মাধ্যমে পাস করানোর ধান্ধায় আছেন এবং নিজের শেষ হতে যাওয়া চাকুরি তিন বছর এক্সটেনশান নিয়েছেন।

আর বাংলাদেশের এক অজপাড়াগাঁয়ের মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামের কাছে প্রশ্ন করে জানতে পারলাম তিনি এগারো নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছিলেন।যে যুদ্ধের বর্ণনা উপরে দেয়া হয়েছে সে যুদ্ধের কমান্ডার ছিলেন খায়রুল নামের সেনাবাহিনীর এক মুক্তিযোদ্ধা(উনার পদবি মনে নেই-পরবর্তীতে কোথায় গিয়েছেন সেটাও জানতে পারিনি)।ভারতের মেঘালয় সাবডিভিশনে(মহেন্দ্রগঞ্জ থানার কাকরিপাড়ায়) এবং রৌমারি থানার বাংলাদেশ সেন্টারে মাত্র ২২ দিন গেরিলাযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন নজরুল।আর সীমিত এই প্রশিক্ষণ নিয়েই মুখোমুখি হয়েছিলেন “এশিয়ার সেরা যুদ্ধবাজ” খেতাবের তথাকথিত দাবীদার সম্পুর্ণ পেশাদার পাকিস্তানি বাহিনীর।

এই এত বছর পরেও নজরুল তাঁর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মান্নান আর সুবেদার আনোয়ারের কথা ভোলেননি।গেরিলাযুদ্ধের প্রশিক্ষণে কি শিখানো হয়েছিল জানতে চাইলে “সারপ্রাইজ এটাক” বা অতর্কিত আক্রমণ এবং “কেমোফ্লেজ” বা ছদ্মবেশের খুঁটিনাটি বর্ণনা দিয়েছিলেন।

হায়,এই পোড়া দেশে সার্টিফিকেটসর্বস্ব মুক্তিযোদ্ধারা পরিচয় ভাঙ্গিয়ে চিফ ইঞ্জিনিয়ার হয়ে অসৎ টাকায় ধানমন্ডিতে বাড়ি বানায়- আর নজরুল ইসলামেরা পড়ে থাকে হাশিলকান্দি গ্রামে।অভাব-অনটনের সাথে নিত্য লড়াই করে তারা শেষ দিনের অপেক্ষায় থাকে।

নজরুল ইসলামকে তাই আমার মনে হয় একাত্তরের একলব্যদের একজন।একলব্য গুরুর আদেশে নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে দিয়েছিলো-আর আমাদের নজরুল বাজী রেখেছিলেন পুরো জীবনটাকেই।অসামাণ্য কৃতিত্বের কারণে একলব্যের যেখানে পাবার কথা ছিল সেরা তীরন্দাজের সম্মান,সেখানে সে পেয়েছিল গুরুর নিষ্ঠুরতা।আর মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে যে নজরুলের হওয়া উচিত ছিল দেশের মাথার মণি, দেশমাতৃকা তাকে ভূমিহীন কৃষকের অবস্থানটুকু ছাড়া আর কিছুই দেয়নি।

প্রিয় পাঠক,উপরের ছবিতে স্বাধীন দেশের ঘি-মাখন খাওয়া এই আমার পাশে শীর্ণকায়,বয়েসের চাইতে বৃদ্ধ যে লোকটিকে দেখছেন তিনিই বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম।স্বাধীন দেশে আমাদের যার যেখানেই যেটুকু অবস্থান-তার পেছনে রয়েছে এই মানুষটি এবং তাঁর সঙ্গীসাথীদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ।চলুন এই মানুষটিকে সালাম জানাই।সেইসাথে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে যে স্বপ্নের পেছনে তাঁরা সর্বস্ব দিয়েছিলেন সেটিকে সত্য করে তুলি।

আমাদের সংগ্রাম চলবেই।

পরিশিষ্টঃ

১)আর মাত্র দশ থেকে বিশ বছরের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করা বীরেরা অধিকাংশই চলে যাবেন না ফেরার দেশে।তাই চলুন-যার যেখানেই সুযোগ হয়,সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা পাওয়ামাত্র চলুন তাঁদের যুদ্ধস্মৃতি যেটুকু সম্ভব সংরক্ষণ করে রাখি।আমি ইতিহাসবেত্তা নই,আমার জ্ঞা্নও অতি সীমিত।কিন্তু আমার ভাবতে ভাল লাগে-আমার এই অতীব আনাড়ি হাতের লেখা পড়েও আজ থেকে ৫০ বছর পরের কোন কিশোর মুক্তিযুদ্ধ নামক জনযুদ্ধের গণযোদ্ধাদের সেলাম জানাবে-আমরা যেটুকু পারবনা সেটুকু তারা কিংবা তাদের পরবর্তী প্রজন্ম সফল করে তুলবে।দারিদ্র্যের যে গ্লানি নিয়ে আজ একজন বাংলাদেশিকে চলাফেরা করতে হয় বিশ্বের পথে পথে-আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম তা থেকে দেশকে মুক্ত করবে-যেমনটি পরাধীনতার গ্লানি থেকে আমাদের পূর্বপুরুষেরা ১৯৭১ সালে করেছিলেন।

২) এই বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামের মোবাইল নম্বর আমি নিয়ে এসেছি।আর কিছু না হোক, কেউ যদি তাঁকে ফোন করে একটি স্বাধীন দেশ আমাদেরকে উপহার দেবার জন্যে সম্মান জানাতে চান তাহলে আমাকে জানাবেন।এটুকুতো আমরা করতেই পারি!

৩) অনেক দিন পর একটি বড় ব্লগ দিলাম।পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটলে(এবং ঘটার সম্ভাবনাই বেশি) আগেই ক্ষমা প্রার্থনা করে নিচ্ছি।

৮০ টি মন্তব্য : “একাত্তরের একলব্য”

  1. রকিব (০১-০৭)

    শ্রদ্ধা রইলো নজরুল ইসলাম সহ সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রতি। আপনাদের আত্মত্যাগেই আমরা আজ স্বাধীন দেশের মাটিতে ঘুরে বেড়াই। :salute:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    লেখাটা ভালো লাগল বেশ। মুক্তিযোদ্ধা নজরুলকে সালাম।

    @মাসরুফ,
    চিলমারী থেকে সাঘাটা অনেক দূর- প্রায় ৩০/৩৫ কিলোমিটার হবে। আমার কাছে একটু খটকা লেগেছে চিলমারী থেকে হঠাৎ ঘটনা সাঘাটা'তে চলে আসায়। পারলে আরেকটু ক্লিয়ার করে দিও এই জায়গাটা।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      মাহমুদ ভাই, নজরুল ইসলাম হাইস্কুল আর মাদ্রাসার কথা বলেছেন,আর সেই সময়ে ওখানে সম্ভবত সাঘাটাতেই ওদুটো ছিল তাই সাঘাটার কথা লিখেছি।সময়ের স্বল্পতায় এই বিষয়টা খেয়াল করিনি।বর্ণনা শুনে মনে হয়েছিল চিলমারী অপারেশনটা বেশ বড় আকারের ছিল(৫০০ জনের পাকিস্তান সেনা আর রাজাকারবাহিনী এবং একযোগে সাত জায়গায় আক্রমণ, পুরো এলাকা জুড়ে আর্টিলারি শেলিং-এসব শুনে এমনটি মনে হয়েছে)-তাই ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ মাইল এলাকা কভার করাটা অস্বাভাবিক নাও হতে পারে।সেনাবাহিনীর কেউ থাকলে এ বিষয়ে মতামত দিলে ভালো হয়।এর পরেও যদি তথ্যগত ত্রুটি পাওয়া যায় সেটার জন্য সম্ভবত আমিই দায়ী-ওয়ার্কশপের ফাঁকে ফাঁকে ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে হয়তো এরকম হয়েছে।আর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামের মোবাইল নম্বর যেহেতু আমার কাছে আছেই-কোন বিষয়ে খটকা লাগলে সরাসরি উনাকেই জিজ্ঞাসা করা যাবে।

      অফ টপিক-ভাইয়া সেদিন প্রথম আলোতে দেখলাম ঢাবিতে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে লেকচারার এবং এসিস্টেন্ট প্রফেসর নেবে।দেখেই আপনার কথা মনে পড়েছিল,গাইবান্ধায় থাকায় এবং মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় কল দিতে পারিনি।এপ্লাই করবেন নাকি? ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে না হোক-সোশাল সায়েন্স বিভাগে এসেই আপনার ক্লাস করে যাবার একটা সুযোগ থাকবে তাহলে 🙂

      জবাব দিন
      • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

        আমি ভাবছিলাম সাঘাটা থেকে গাইবান্ধা+বগুড়া অনেক কাছে চিলমারীর তুলনায়। একারণে মনে হয়েছিল যে, পাকি'রা সাঘাটা এটাক করলে ত এই দুই জায়গা থেকেই করার কথা, চিলমারী অনেক দূরের পথ (এইসব এলাকায় আমার অনেক আত্মীয়-স্বজন থাকায় ঘুরাঘুরি করছি বেশ কয়েকবার)। তাই মনে খটকা লেগেছে।- যাই হোক, পারলে নজরুল সাহেবের সাথে কথা বললেই ভালো হবে মনে হয়।

        সেদিন প্রথম আলোতে দেখলাম ঢাবিতে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে লেকচারার এবং এসিস্টেন্ট প্রফেসর নেবে

        - আমার এপ্লিকেশন করা আছে। আর সম্ভবতঃ আমার বসও আছেন সিলেকশন বোর্ডে, যদিও সাদা দলীয় (বিএনপি) হওয়ায় তার ক্ষমতা বেশ কম থাকার কথা। এত কামড়াকামড়ির মধ্যে যেতে ইচ্ছে করে না রে ভাই। কিন্তু আবার ভাবি, ফলাফল যাই হোক একবার ত ঢাবি'র সিলেকশন বোর্ডটা কি জিনিস তা দেখে আসা হবে।


        There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

        জবাব দিন
      • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

        চিলমারিতে পাকিস্তান সেনাদের বেশ শক্ত একটি অবস্থান ছিল।আর যে যুদ্ধের বর্ণনা দেয়া হয়েছে সেটা হয়েছে ওই সাত অবস্থানে।সম্ভবত নোট নেবার সময় আমি কিছুটা মিলিয়ে ফেলেছি।চিলমারিতে হেডকোয়ার্টার কিন্তু বর্ণিত যুদ্ধ হয়েছে ওই সাতটি স্থানে-সম্ভবত এরকম হবে কারণ এই যুদ্ধটাই নজরুল ইসলামের একমাত্র যুদ্ধ নয়-আমি উনার কাছে যুদ্ধের কথা শুনতে চাইলে তিনি হেডকোয়ার্টারের উল্লেখ করেন এবং এর পর যখন লিখতে চাই তখন আলাদা করে এই যুদ্ধটার বর্ণনা দেন।ঠিকভাবে লিখতে না পারার ব্যর্থতাটুকু আমার 🙁

        জবাব দিন
    • আদনান (১৯৯৭-২০০৩)

      একটা জিনিস খেয়াল করলাম - কমেন্ট করার ক্ষেত্রে restriction আনা হয়েছে। এখন থেকে আউল-ফাউল লোক এসে ফালতু কমেন্ট করে ব্লগ পরিবেশের অবনতি ঘটাবেনা। ভাল... ...ভাল ...এটা আসলে দরকার ছিল। পঠনে আপত্তি নাই, কিন্তু আমি মনে করি এটা আমাদের স্পেশাল ব্লগ, কমেন্ট উন্মুক্ত করে দিলে সেই স্পেশালিটি-টা আর থাকে না।

      জবাব দিন
  3. মাহমুদ(০২-০৮)
    আর কিছু না হোক, কেউ যদি তাঁকে ফোন করে একটি স্বাধীন দেশ আমাদেরকে উপহার দেবার জন্যে সম্মান জানাতে চান তাহলে আমাকে জানাবেন।এটুকুতো আমরা করতেই পারি!

    ভাইয়া খুবই ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে।ফোন নাম্বার টা দিয়েন ।

    জবাব দিন
  4. মশিউর (২০০২-২০০৮)
    আর মাত্র দশ থেকে বিশ বছরের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করা বীরেরা অধিকাংশই চলে যাবেন না ফেরার দেশে।তাই চলুন-যার যেখানেই সুযোগ হয়,সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা পাওয়ামাত্র চলুন তাঁদের যুদ্ধস্মৃতি যেটুকু সম্ভব সংরক্ষণ করে রাখি।

    সহমত । প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা এক একেকজন এক একটি জীবন্ত ইতিহাস ।
    মুক্তিযোদ্ধাদের :salute:
    লেখা :boss:

    জবাব দিন
  5. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    দূর্দান্ত লিখেছিস মাস্ফ্যু :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:

    তাই চলুন-যার যেখানেই সুযোগ হয়,সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা পাওয়ামাত্র চলুন তাঁদের যুদ্ধস্মৃতি যেটুকু সম্ভব সংরক্ষণ করে রাখি।

    সহমত


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  6. মাস্ফুদা...ফার্স্টেই সশস্ত্র সালাম :salute: ..জটিল লেখা...আপ্নের্চিন্তাভাবনার্স্টাইল্টা অসাধারণ ভাই।মন্মেজাজ হেভী খারাপ ছিল।লেখাটা পড়ে মন ভালো হয়ে গেল।

    মুক্তিযোদ্ধা নজরুল কে স্যালুট দিয়ে ছোট করব না।সামনে পাইলে তারে একবার ধইরা দেখতাম।ভাবতে খুব অবাক লাগে যে এইরকম কিছু মানুষের জন্য এখন যেখানে বসে আছি,সেখানে বসে থাকতে পারতেছি।অথচ সেই মানুষগুলোর আজ অভাবের কোন শেষ নাই।

    ক্যামুন যেন একটা ফিলিংস,বুঝতাছি না।

    জবাব দিন
  7. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    মাস্ফ্যু, দারুণ একটা কাজ করেছো। :thumbup: একজন মুক্তিযোদ্ধাকে জানা, তার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে জানার পুরো বিষযটাই দারুণ ভাবনা। তুমি, আমি, আমরা সবাই তো চাইলে এইরকম করে জীবনে অন্ততঃ একজন করে মুক্তিযোদ্ধাকে ভালো করে চিনতে পারি, জানতে পারি- তাকে সবার সামনে তুলে আনতে পারি। এভাবেই লেখা হবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস। সময় আসলে কমে আসছে। যা করার দ্রুত করতে হবে।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      সানা ভাই- একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধার সাথে আমার প্রথম দেখা ২০০৪ সালে আর্মিতে সিলেকশন পাবার পর মেডিকেল করাতে গিয়ে।সিএমএইচে এক বৃদ্ধ লোক আমার কাছে মোবাইল চাইলেন কাকে জানি ডাকার জন্যে।আমি কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে মোবাইল দিলাম-কথা বলার পর মোবাইল ফেরত দিয়ে সেই লোক জানতে চাইলেন আমি এখানে কি করছি।আর্মিতে যাচ্ছি শুনে বললেন-বাজান,দেশটা আমরা স্বাধীন করে আপনেদের হাতে দিছি,এইটারে রক্ষা করার দায়িত্ব এখন আপনাদের।

      জিজ্ঞাসা করে বুঝতে পারলাম,আমার কাছে মাত্র দুমিনিট মোবাইল ব্যবহার করতে চাওয়া লোকটা একজন মুক্তিযোদ্ধা।একাত্তরে এনাদের যুদ্ধ না করলে অফিসারের বদলে আমি হয়তো আজ পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদের জন্যে আবেদন করতাম।

      আমার হতচকিত ভাব দেখে ভদ্রলোক মৃদু হেসে ভেতরে চলে গেলেন,আর দেখা পাইনি তাঁর।পরে মনে হচ্ছিল,হায়-গোটা মোবাইলটাই তাঁকে দিয়ে দিতে পারতাম যদি!!

      একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধারাই আমার জীবনের আদর্শ।তাই যেখানেই তাঁদের দেখা পাব-সংস্পর্শে এসে ধন্য হবার চেষ্টা করে যাব আজীবন। (সম্পাদিত)

      জবাব দিন
  8. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    পড়লাম মনযোগ দিয়ে। আসলে এধরণের লেখা পড়ার পর বলার কিছু থাকে না। কারণ যে কথাটা মুখে চলে আসে সেটা এসব একলব্যদের কাছে প্রহসন মনে হবে। মুক্তিযোদ্ধারা কিছু পাবার জন্য যুদ্ধ করেননি এটা সত্যি কিন্তু তাই বলে কি আমাদের এমন হতে হবে যে তাদের জন্য কিছুই রাখবো না!!! তাই নজরুল ইসলাম ও সকল বীরদের প্রতি গোপন শ্রদ্ধা।

    ও আর আরেকজনকে প্রকাশ্যেই স্যালুট। সেটা হলো লেখক। দারুণ মাস্ফ্যু............ :hatsoff:

    জবাব দিন
  9. মামুন (০০-০৬)

    বাংলার সকল মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম কে লক্ষ লক্ষ :salute: :salute: :salute:
    লেখক মাশরুফ ভাইকে কিছু বলার নাই,শুধু :salute: :salute: :boss: :boss: :hatsoff: :hatsoff:
    সরাসরি ৫তারা দিয়ে প্রিয়তে যোগ করলাম.........

    জবাব দিন
  10. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    এখাবে যে এক একজন মুক্তিযোদ্ধাকে তুলে আনছো তা নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য। মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামকে হাজার সালাম।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  11. তৌফিক (৯৬-০২)

    সাবাস মাস্ফ্যু।

    মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামকে সালাম।

    পৃথিবীর ইতিহাসই এইরকম, যাই ঘটুক না কেন, সুবিধাভোগী শ্রেণীর সুবিধার নড়চড় হয় না। আর খেটে খাওয়া শ্রেণীর ভাগ্যও পরিবর্তন হয় না।

    জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      আপনার বাবাও তো একজন মুক্তিযোদ্ধা-উনার যুদ্ধগুলো নিয়ে খুঁটিনাটি একটা লেখা দিলে খুব উপকৃত হব তৌফিক ভাই।আমরা তো বটেই-ভবিষ্যত প্রজন্মও জানুক তাদের পুর্বপুরুষদের বীরত্ব আর সাহসিকতার কথা।দয়া করে নিজের আপনজনের বীরত্বের কাহিনী লিখতে সংকোচ বোধ করবেননা- আপনার বাবা যেহেতু একজন মুক্তিযোদ্ধা-পুত্র হিসেবে আপনার যেমন তাঁর উপর অধিকার আছে,বাংলাদেশের সন্তান হিসেবে প্রতিটি নাগরিকেরও অধিকার আছে তাঁর বীরত্ব থেকে অনুপ্রাণিত হবার।একজন মুক্তিযোদ্ধা সারা বাংলাদেশের গর্ব-সেই অধিকারেই আপনাকে অনুরোধ করছি।

      এই ব্লগের সম্মানিত সদস্যরাও যদি তাঁদের পরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখেন তাহলে হয়তো এই সিসিবিতেই আমরা অবহেলিত এই আনসাং হিরোদের একটা ছোটখাটো আর্কাইভ পেয়ে যাবো।হয়তো সংখ্যাটা বেশি বড় হবেনা,কিন্তু যে্টুকু পারব সেটাই বা কম কি?

      জবাব দিন
      • তৌফিক (৯৬-০২)

        তুই আসলে ভুল বুঝছিস একটু। আমার বাপ মুক্তিযোদ্ধা ঠিকই, কিন্তু সেরকম ডাকাবুকো কেউ না। উনার যাদের সাথে যুদ্ধে যাওয়ার কথা ছিল তারা উনাকে ফেলেই ভারত চলে গিয়েছিলেন। নভেম্বরে যখন দেশেই ট্রেনিং শুরু হয় তখন উনি দেশ থেকেই ট্রেনিং নেন। ময়দান ছেড়ে পালাতে থাকা পাক বাহিনীর পালানোর গতিকে একটু বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ধাওয়া দিয়েছিলেন মনে হয় একটা। মুজিববাহিনীর সদস্য ছিলেন, পরে ইউনিয়ন কাউন্সিলের মেম্বার হয়েছিলেন। স্বাধীনতার পরে রাজাকার খুঁজে বের করে পিটিয়েছিলেন কিছু, আমার জ্ঞাতি রাজাকার দাদাকে বাঁচিয়েছিলেন তার দলের রোষ থেকে। আমার বাপের বীরত্ব এইটুকুই। তার বর্তমান হতাশা দেখলে বিশ্বাস হতে চায় না যে তিনি দেশের জন্য অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন, অল্প সময়ের জন্য হলেও। আর উপরে যা বললাম, সেইটাও উনার কাছ থেকে বের করতে আমার অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। একদম কথা বলতে চাননা এগুলো নিয়ে।

        জবাব দিন
  12. আজীজ হাসান মুন্না (৯১-৯৭)

    মাশ্রুফ, আমি যে তোমার লেখার (বিশেষ করে ভাষার এত অসাধারণ গাঁথুনী) কত বড় ভক্ত তা কি তুমি জান ? কমেন্ট না করে আর থাকা গেল না রে !!! এরকম একটা লেখা দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ তোমাকে 🙂

    জবাব দিন
  13. শোয়েব (১৯৯৫-২০০১)

    মাসরুফ, ভাই তোমাকে অভিনন্দন জানানোর সঠিক ভাষা খুজে পাচ্ছি না, অসাধারণ একটি লেখা আর কাজ করেছ, বয়েসে আমার ছোট হলেও তোমার প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ ছিল আগে থেকেই, সেটি আরো বেরে গেলো 🙂 ।

    আর নজরুল ইসলাম আর উনার মত সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কিছু বলার মত বা সঠিক সম্মান শ্রদ্ধা জানানোর মত যোগ্যতা আমার নাই, তাই নীরবে শুধু :salute: (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      ভাইয়া এইগুলা কি যে বলেন না!!! আমি ছোটখাটো মানুষ-ভুল চুক করলে কানের উপরে দুইটা দেবেন বসিয়ে-শ্রদ্ধাবোধ আবার কি?? 😀

      মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান...তাঁদের কিয়দংশ দেশপ্রেম সবার বুকে থাকলেও এই জাতিকে ভিক্ষার থলি নিয়ে ঘুরতে হতনা।

      তবে,এরকম থাকবেনা।আমরা এগিয়ে যাবোই।

      জবাব দিন
  14. সাইফ (৯৪-০০)

    মাস্ফু, এ যাবতকাল তুই যত পোস্ট দিয়েছিস আমার বিচারে এইটা সর্বশ্রেষ্ঠ।ব্লগে নিরবে ঢুকি নিরবে বের হয়ে যাই,আমার কাছে মনে হয় আমরা যে যেই উদ্দেশ্যেই ব্লগ লিখি না কেন সবার লেখার মধ্যে একটা সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকা উচিত।কিন্তু কে কার চাইতে বেশি জ্ঞানী সেই প্রতিযোগিতায় সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ি...অন্যের কাছে নিজেকে কত বেশি ভারিক্কি আর জ্ঞানের ভারে কে কত কুজো হতে পারি সেই ইদুঁর দৌড়ে অনেকেই প্রায় যখন ধরাশায়ি তখন তোর এই সুন্দর পোস্টের জন্য তোকে অভিবাদন.. একাত্তরের একলব্য সংশপ্তক মানুষ্ টিকে আমার সালাম আর শ্রদ্ধা জানিয়ে দিস।

    জবাব দিন
  15. শাহাদাত মান্না (৯৪-০০)

    ম্যাশ পটেটো,তোর এই লেখার সাহিত্যগুণ বিচার করবে যারা তারা নির্বোধ।এই লেখার আবেগ বুঝে নিবে একদল বোকা,যারা স্বদেশকে ভালোবাসে প্রাণভরে। দায়িত্ববোধ বিবেচনায় লেখাটা আরো ভালো লেগেছে।

    জবাব দিন
  16. রায়হান রশিদ (৮৬ - ৯০)

    ১।
    অসাধারণ মাসরুফ, স্রেফ অসাধারণ! যেমন বিষয়বস্তু, তেমন তার উপস্থাপন এবং প্রকাশ। কিন্তু শুধু ভাষার দক্ষতা দিয়ে এমনভাবে লেখা যায় না, সেটা বেশ বুঝতে পারি। এই লেখাটি আগে চোখে পড়েনি ভাবতেই বিব্রত বোধ করছি। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বয়ানগুলো লিপিবদ্ধ করার যে উদ্যোগের কথা তুমি জানিয়েছো, তাতে কোনভাবে যদি আইসিএসএফ এ আমরা স্বেচ্ছাসেবকরা (তুমিও যাদের একজন) সাহায্য করতে পারি তাহলে রীতিমতো সম্মানিত বোধ করবো। নির্দ্বিধায় জানাবে আশা করি।

    ২।
    আরেকটি অনুরোধ সিসিবি-র সব বন্ধুদের প্রতি। মিডিয়া-আর্কাইভে সিসিবিতে লেখা মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত লেখাগুলো নিয়মিতভাবে আপলোড হচ্ছে না মনে হয় ইদানিং। কেউ যদি সিসিবি-র পক্ষ থেকে বিষয়টা দায়িত্ব নিয়ে তদারক করার উদ্যোগ নিতেন, তাহলে সত্যিই খুব ভাল হতো। এই লেখাটি আপলোড এর কথা তো বলাই বাহুল্য।
    ===============
    টুইটার একাউন্ট

    জবাব দিন
  17. একজন মাশরুফ'এর জন্য সমগ্র পুলিশবাহিনী'র উপর দিনকে দিন ক্রমবর্ধমান হারে শ্রদ্ধা বেড়েই চলেছে। ফেসবুকে আপনার চমৎকার লেখা স্টাটাসগুলো নিয়মিতই পড়ি, কিন্তু এই লেখা পড়ে জানতে পারলাম, লেখালেখির অভ্যাস গড়ে উঠেছিলো বহু আগে থেকেই।
    আপনার সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করছি।
    ভাল থাকুন, এবং একজন সৎ পুলিশ হিসেবেই শুধু নয়, একজন সত্যিকারের মানুষ হিসেবেও আপনি সবার অনুকরণীয় হয়ে উঠুন, এই দোয়া করছি।
    আমীন।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।