আকাশ বাড়ানোর গল্প

ক ভাই ফোন করেই দিলেন ঝাড়ি-“এই ব্যাটা তোর কলেজের ক্যাডেট আর তোর কোন খোঁজ নেই কেন? শোন,ফ ভাই কিছু টাকা পাঠিয়েছেন, আমার কাছে জমা আছে-নিয়ে যাস।”

ঝকক এর জাকিরের মা অসুস্থ্য হয়ে পড়ার পর আউয়াল “আকাশ বাড়িয়ে দাও” নামের এক লেখার মাধ্যমে উদাত্ত আহবান জানিয়েছে আমাদের সবাইকে যার যার সাধ্যমত সহায়তা করতে।ক্ষুদ্র,তুচ্ছাতিতুচ্ছ আমার পক্ষে খুব বেশি কিছু করা তো সম্ভব না তাই যেটুকু পারি সেটুকু নিয়েই অগ্রসর হচ্ছিলাম।এর মধ্যে ক ভাইয়ের ফোন।ক ভাইয়ের কথামত সন্ধ্যাবেলা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে ফ ভাইয়ের দেয়া টাকা সংগ্রহ করতেই তিনি বললেন-এই ব্যাটা এই নম্বরটা নে,এটা র ভাইয়ের নম্বর।উনি খুব ব্যস্ত,শিগগিরি ছুটিতে চলে যাবেন।আমাকে বলেছেন তোকে নম্বর দিয়ে উনার সাথে যোগাযোগ করতে বলতে।” সেই কথামত যোগাযোগ করলাম,উনি বললেন রাত ৯ টার সময় আসবেন।

অপেক্ষা করতে আমি আমার এক বাইরের বন্ধুর সাথে ধানমন্ডি ২ নম্বরের স্টার কাবাবে বসে ছিলাম।ইচ্ছে ছিল র ভাই ফোন দিলে স্টার থেকে উনার কাছে যাব।হঠাৎ ৮ টার দিকে র ভাইয়ের ফোন-“মাসরুফ তুমি কোথায় ভাই?স্টারে?আচ্ছা আমি নিজেই আসছি ওখানে-কষ্ট করে তোমার আসা লাগবেনা”-বলে কিছু বলার আগেই ফোন রেখে দিলেন।এই র ভাইয়ের সাথে আমার আগে পরিচয় হয়নি,কাজেই আমার বাইরের বন্ধুটি ঘটনা কি জানতে চাইলে আমি ভুলে আরেকজন একই নামের ভাইয়ের বর্ণনা দিচ্ছিলাম।হঠাৎ র ভাই এসে ঝড়ের গতিতে বললেন-“ভাই আমি র,তুমিই তো মাসরুফ,তাইনা?এই নাও আমি একটা ক্যাশ চেক এনেছি তুমি যা যা লেখা লাগে বসিয়ে নিও।” বলে যেমন ঝড়ের বেগে এসেছিলেন ঠিক তেমনি করেই চলে গেলেন।

আমার বন্ধুটা এতক্ষণ আমাদের কীর্তিকলাপ দেখছিল।যেহেতু আমার বর্ণনার সাথে র ভাইয়ের চেহারা একেবারেই মেলেনি,সে আমাকে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলঃ”কিরে এই ভদ্রলোক আবার কে?”আমি বললাম-ইনিই র ভাই,তবে অন্য আরেকজন।”কি করেন ভাইয়া?”ওর এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বললাম -“আমি জানিনা,এর আগে উনার সাথে সম্ভবত সেরকমভাবে কথা হয়নি।”

আমার হাতের বিশাল অঙ্কের ক্যাশ চেকটা দেখে ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।তারপর বলল-“আচ্ছা তোদের ক্যাডেটদের ঘটনাটা কি বল তো?তোকে চেনে না জানেনা,আগে কখনো দেখেনি তারপরেও অতগুলো টাকা নির্দ্বিধায় তোর কাছে দিয়ে দিল?”

আমি মুচকি হেসে বললাম- “ক্যাডেট নন-ক্যাডেট মূল ঘটনা না,মানুষ হিসেবে যে কেউই এমনটি করত।”ও কি যেন একটা বলতে গিয়ে হাল ছেড়ে বলল-আচ্ছা,চল যাই-রাত হয়ে গিয়েছে।

আমি জানি যে মানবতার খাতিরে যে কেউই এমনটি করবেন কিন্তু ক্যাডেট কলেজ সিস্টেমের কট্টর সমালোচক আমার এ বন্ধুটির না বলা কথার মধ্যেও আমি এমন কিছু খুঁজে পেয়েছিলাম যা লিখতে গিয়ে এখনও আমার বুক ভরে যাচ্ছে ক্যাডেট কলেজ ব্যবস্থার প্রতি কৃতজ্ঞতায়।আমি জানি,আমাদের কারো যদি (স্রষ্টা না করুন) বড় ধরণের কন বিপদ হয়-তাকে অন্ততঃ নিঃসহায় হয়ে মরতে হবেনা।

আজ রাতে জাকিরের হাতে সংগৃহীত টাকাগুলো তুলে দেবার সময়ও এমনটি মনে হচ্ছিল।

যাঁরা অর্থ এবং প্রার্থনার মাধ্যমে একজন মাকে বাঁচানোর লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন-তাঁদের সবাইকে বুকভরা কৃতজ্ঞতা-মায়ের রোগাক্রান্তিকালে সহায়তার জন্যে জাকিরের পক্ষ থেকে এবং আমার বুকে গর্ব আর নিশ্চয়তার অভুতপূর্ব অনুভূতি সৃষ্টির জন্যে আমার পক্ষ থেকে।

আসুন,যাঁরা এখনও এ লড়াইয়ে সামিল হইনি তারা আজই সামিল হই।

সবাইকে ধন্যবাদ।

১,৪৬৩ বার দেখা হয়েছে

১৯ টি মন্তব্য : “আকাশ বাড়ানোর গল্প”

  1. আউয়াল (২০০৩-২০০৯)

    মানুষের জন্য কিছু করার পথযাত্রায় থাকেত পেরে খুব ভালো লাগছে। এবার তো আহবান করা ছাড়া কোন সাহায্য করতে পারলাম না। ভবিষ্যতে করতে পারব ইনশাআল্লাহ.................. এগিয়ে আসা ভাইয়েরা তখা সকল বড় মনের মানুষদের ধন্যবাদ।।।।।।।।।

    জবাব দিন
  2. শোভন (২০০২-২০০৮)

    আকাশ বাড়ানোর সামর্থ্য আমার নেই এখন । হয়ত একদিন হবে । তবে মায়ের জন্য রইল
    প্রার্থণা । অসহায়দের প্রার্থণা স্রস্টা ফিরিয়ে দিতে পারবেন না অবশ্যই ।

    জবাব দিন
  3. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    রেজু রে,তুই শ্যাষ!যা যা খাইতে মঞ্চায় খায়া নে-বুঝসই তো দুই দিনের দুইন্না...ব্লগের বিশিষ্ট সন্ত্রাসী রায়হানা থুক্কু স্যাম ক্ষেপসে তোর উপ্রে চাইয়া দেখ :no: :no:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।