পরিবর্তন

নতুন কিছু নয়, সেই শিশুকাল থেকেই
ইশকুলের বই দেখলেই আমার গায়ে জ্বর আসে।
সত্যি বলতে, পড়তে বসলেই নিয়মিত মাথা ব্যথার
মিথ্যা অভিযোগ করায়, ডাক্তারের পরামর্শে ক্লাস থ্রিতে
প্রথম ছয়মাস আমি বিশ্রামে ছিলাম।
অনেকটা রেস্ট এন্ড রিক্রিয়েশন লিভ, আর কি।
সেই সময় থেকেই পাঠ্য বইয়ের চেয়ে গল্পের বইতে
আমার আকর্ষণ অনেক বেশি। গল্পের বই ভেবে
‘ভোলগা থেকে গঙ্গা’ আমি শেষ করেছি ক্লাস এইটেই,
যদিও এখন বুঝি, তখন এই বইয়ের কিছুই বুঝিনি।
ত্রিশ বছরে দুনিয়ার কত কিছু বদলে গেলো।
বার্লিন ওয়াল ভেঙে পূর্ব আর পশ্চিম ইউরোপ একাকার,
দেশে এরশাদের পতনের পর নব নব স্বৈরাচারের উত্থান,
বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিবর্তে শান্তিতে নোবেল জয়,
নাইন ইলেভেন-ওয়ান ইলেভেন কতশত নতুন শব্দের মারপ্যাচে
ইরাক, আফগানিস্তান থেকে শুরু করে বাংলাদেশেও সংবিধান সংস্কার,
আরব বসন্তের অজুহাতে লিবিয়া, সিরিয়ায়
সাম্রাজ্যবাদি অ্যাংলো-ফ্রাঙ্কো গুটি বসন্তের আবির্ভাব,
পোশাকি পরিবর্তনের আকাংখায় ইউএস ফ্রাঙ্কেনস্টাইন
ওসামা আজ মৃত, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট ওবামা
দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায়;
এমনকি ফকিরাপুল পানির টাংকির গলি আর গরমপানির গলিতে
হাঁটতে শেখা আমার মতো তৃতীয়বিশ্বের তৃতীয়শ্রেণীর নাগরিক,
আজ পশ্চিম ইউরোপের পাথুরে রাস্তায় ওয়াইন হাতে
পথ চলতি স্বল্প-বসনা রমনীর উদ্দেশ্যে শিষ দেয়।
অর্ধেক দুনিয়া বদলে গেলেও পাঠ্য বই নিয়ে
আমার রুচির কোনও পরিবর্তন হলো না।
আফসোস্, আজও আমার কাছে
ব্রায়ান লেভি, ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা’র চেয়ে
সিডনি শেলডন, জন আরভিং, এমন কি
খবরের কাগজের ‘আবুল মকসুদ’ অনেক বেশি প্রিয়।

৯২১ বার দেখা হয়েছে

৪ টি মন্তব্য : “পরিবর্তন”

  1. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    মনজুর,
    ভালোই হয়েছে এই লেখাটা ক'দিন আগে না পড়ে।এখন ৩১ ডিসেম্বর, রাত বারোটার কিছুক্ষণ আগে এটা পড়ে একটা অন্যরকম অনুভূতি হলো।
    নতুন বছর শুরুর আগে হঠাৎই মনে হলো, তোমার এই লেখা পড়ে, ইতিহাস আসলে কারা লেখে আর কারা তৈরী করে।
    শুভ নববর্ষ।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মনজুর (৮৯-৯৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।