ডাইনিং হলের দুই টুকরা……

ক্লাস সেভেন থেকে টুএল্ভ পর্যন্ত ছয় বছরের হাজারটা স্ম্রিতির মধ্যে বিশাল ১টা অংশ জুড়ে আছে ডাইনিং হল। মনে পড়ে ক্লাস সেভেনে ডাইনিং হলটাকে দোযখ মনে হত। কারন জুনিওরদের ফল্ট ধরার পারফেক্ট জায়গা ছিল এটা সিনিওর দের জন্য। কাপা কাপা হাটু নিয়ে ভেতরে ঢুকতাম। বের হয়ে সস্তির ১টা নিঃশবাস ফেলতাম। ধীরে ধীরে এই ডাইনিং হলটাই খুব মজার ১টা জায়গা হয়ে উঠেছিল ক্লাস ইলেভেনে উঠে। আজ ডাইনিং হলের দুটো কাহিনি বলব যেগুলো আমি আমার হোল লাইফ এ কোনদিন ভুল্বনা।

কাহিনী একঃ

কলেজের এখনকার কথা জানিনা, বাট আমরা যখন সেভেন ছিলাম তখন ডাইনিং এর আপারা (বুয়া) আগেই প্লেট এ খাবার সার্ভ করে রাখতেন (ডাল আর ভাত ছাড়া)। ডাল আমারা নিজেরা নিয়ে নিতাম। ভাত দিয়ে দিতেন টেবিলের ইলেভেন বা টেনের আপা। ডাল যতবার ইচ্ছা নেয়া যেত কিন্তু ভাত আর অন্যান্য আইটেম এক্ মাত্র টুয়েল্ভ আর ইলেভেন ছাড়া কেউ এক বারের বেশি নিতে পারতনা। এ কারনে প্রথম বারেই যা নেবার নিয়ে নিতে হত। যেসব টেবিল লিডার একটু ভালো সেসব টেবিলে টেন নিতে পারত। আমারা তখন সেভেন, ফার্স্ট টার্ম। রুলের ঠেলায় দুর্বিষহ অবস্থা। সবার আগে যেটা মাথায় রাখতাম তা হল, কোনমতেই সিনিওর কে বিরক্ত বানানো যাবেনা। আমাদের টেবিলে ভাত দেওয়া হচ্ছে। ভাত দিচ্ছেন খুব ফিগার + ডায়েট সচেতন ১ আপা। আমার টেবিল্মেট প্লেট আগায় দিল। বিলিভ ইট অর নট, আপা ১ টেবিল চামচ বা তার সামান্য বেশি ভাত দিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলেন, আর দেব? ও তো গোবেচারা, মাথায় ঘুরতেসে আপা কে বিরক্ত বানানো যাবেনা। ও ঠিক আছে বলে প্লেট নিয়ে নিল। আমাকেও সেম এমাউন্টের ভাত দিয়ে জিজ্ঞেস করা হল, ঠিক আছে কিনা। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, আপা আর ১টু বেশি। আপা আর কিছু ভাত দিয়ে প্লেট পাস করে দিলেন আমাকে। খাওয়া শুরু হবার ২ মিনিটের মাথায় আমার টেবিল মেটের খাওয়া শেষ হল। বেচারির সম্ভবত বেশ খিদে পেয়েছিল, ও ইতস্তত করে পাশে বসা ক্লাস এইটের আপাকে (গাইড ব্যাচ বলে ফ্রী ছিলাম) বল্লো, আপা, আর ১টু ভাত নিব। আপা খুব অসস্তি নিয়ে বললেন, এখন তো আর ভাত নেওয়া যাবেনা। ও বাকিটা সময় চুপ করে বসে ছিল। আমরা খাচ্ছিলাম।

আমার এত খারাপ লেগেছিল সেদিন। বলে বুঝাতে পারবনা। টার্মের ছুটিতে গিয়ে সে কথা মাকে না বলে থাকতে পারলাম্না। আমার কাহিনী বলা শেষ। হঠাত মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি, মা কাদছেন। দুই চোখ মুছে আমাকে বললেন, তোর টেবিল মেটকে আমার আদর জানাস।

এই ঘটনার জন্য কাউকে দোষ দেয়া যায়না। জাস্ট ভাবতে অবাক লাগে, এই সিনিওর ভীতির কারনে না জানি কত ক্যাডেট দিনের পর দিন আধ পেটা খেয়ে থেকেছে।

ঘটনা দুইঃ

আমরা তখন এইটে। সেভেন এসেছে। রুলের যন্ত্রনা কিছুটা কমেছে। কিন্তু একদিন কোন এক কারনে আমাদের হোল ব্যাচের পানিশ্মেন্ট হল। দিল ইলেভেন। এবারেরটা উপরের উলটা। ফুড পানিশ্মেন্ট। চাও বা না চাও, আমাদের রোজ ১গাম্লা করে ভাত খাওয়ানো হতে লাগ্লো। আপারা এবার ভাত দেওার সময় তাকান্না। নিজের ইচ্ছামত দিয়ে পাস করে দেন প্লেট। পেট ফেটে একাকার হয়ে যাওয়ার অবস্থা!! তেমনি ১দিন খেয়ে দেয়ে কোন্ মতে হাউসে ফিরতেসি লাঞ্চ শেষে। হঠাত ১ দোস্ত দউড়ে এল।

জানিস, আজ না খুব মজার কান্ড হইসে টেবিল এ। আমি বললাম

আরে রাখ তোর মজা। পেট ফাইটা যাইতেসে।

আরে শোন্না, আজ আপাকে ভাত দেবার জন্য প্লেট যখন পাস করতেসিলাম, তখন আমার প্লেট এ এক্ পিস মাংস আসিল। প্লেট যখন ফেরত আসলো, তখন দেখি মাংস হাওয়া!!

আমি আগ্রহী হয়ে গেলাম। জিগাইলাম, কেন, কই গেল ওটা?

দোস্ত রহস্যের হাসি দিয়া কয়, ‘খাওয়ার হাফ টাইমে কাটা চামচ দিয়া ভাতের পাহাড় খুইড়া গুপ্তধনরুপী মাংসটারে বাইর করসি………’।

২,৩৭৫ বার দেখা হয়েছে

৩৬ টি মন্তব্য : “ডাইনিং হলের দুই টুকরা……”

  1. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    ম্যানিলা,
    সুন্দর লেখা।
    তোমার প্রথম কাহিনীটি আমাকে প্রচন্ডভাবে নাড়া দিয়েছে। আমি সহজেই ইমোশোনাল হই...কিন্তু আমার ধারণা, এই কাহিনীটি পৃথিবীর যেকোন মানুষকেই ইমোশোনাল করে তুলবে। তোমার সেই বন্ধুটির জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা...। দোয়া করি কষ্ট নামক নীল বস্তুটি যেন তার জ়ীবনে আর কখনো না আসে।

    আমাদের সময়ে কলেজে অবশ্য ক্লাশ সেভেনই ভাত সার্ভ করতো এবং দ্বিতীয়বার ভাত নেবার ব্যাপারে কোন প্রকার বাধা ছিলোনা।

    জবাব দিন
    • আমাদের নিয়ম ছিল ক্লাস ৭ সার্ভ করবে। আর যার ভাত,ডাল যত খুশি নেয়াযাবে। তাই, ১ম ঘটনার মতো কাহিনি আমাদের ছিলো না।

      আমাদেরও তো তাই ছিলো। কিন্তু গার্লসের এই নিয়ম কেন? ক্যামনে কি?

      জবাব দিন
  2. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    খাইতে বইসা ট্রাউজারের হুক আর বেল্ট খুলে দেয়ার ঘটনাও আছে। এমনও আছে কেউ কেউ ৭/৮ প্লেট ভাত সাটিয়ে দিচ্ছে অবলীলায়! ডালে টুইটুম্বুর করে ভাত খেতে চিবুতে হোত না, খুব ফাস্ট খাওয়া যেত। এখন মাঝে মধ্যে সেটার প্রাকটিস চালাতে গেলেই বৌ ঝাড়ি ছাড়ে 😛 😛 ।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  3. তৌফিক (৯৬-০২)

    ১...

    কিন্তু ভাত আর অন্যান্য আইটেম এক্ মাত্র টুয়েল্ভ আর ইলেভেন ছাড়া কেউ এক বারের বেশি নিতে পারতনা।

    শুনে খারাপ লাগল।

    ২...

    লেখা ভালো হইছে আপু। আরো চাই।

    জবাব দিন
  4. শাহরিয়ার (২০০৪-২০১০)

    সেভেনে আমার টেবিল লিডার ছিল ফুয়াদ ভাই!
    জ্বালায় নি তেমন!
    তবে ক্লাস এইটের :grr: ভয়ে আধবাটি ভেজিটেবলস খেতাম আমি একা! :(( :(( !!!!!


    People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.

    জবাব দিন
  5. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    ডাইনিং হল,মস্‌জিদ, হাউস, ব্লক...মোটামুটি সব কিছু টাচ্‌ খাইছে...
    তাই আমার দাবী- হসপিটাল নিয়ে লেখা চাই...দিতে হবে... :((


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  6. অর্চি (৯৯-০৫)

    "খাওয়ার হাফ টাইমে কাটা চামচ দিয়া ভাতের পাহাড় খুইড়া গুপ্তধনরুপী মাংসটারে বাইর করসি………"

    =))

    ম্যানিলা,কোন ক্লাসমেট এটা তোমার?
    তোমাদের ফুড পানিশ্মেন্টের কথা মনে পরে গেল...আহারে আমার টেবিলমেট গুলার অনেক কষ্ট হত! 🙁

    জবাব দিন
  7. সামিয়া (৯৯-০৫)

    আল্লাহগো আমি মিল গুনতাম...বাসায় যাওয়ার আর কয়দিন বাকি...সবচেয়ে খারাপ জায়গা কলেজের x-(

    আহারে ফুড পানিশমেন্টের সময় বহুত কষ্ট হইসে না? আমি না খায়ে থাকতে পারতাম তাও ঐ পানিশমেন্ট...বাপরে...

    জবাব দিন
  8. মুরাদ (২০০২-০৮)

    কত দিন যে কলেজ এ ডায়েট punishment খাইসি ভুলে গেসি। আশলে গুনিওনি কোন দিন।
    "ভাত দিয়ে দিতেন টেবিলের ইলেভেন বা টেনের আপা।"
    😕 😕 😕
    আমাদের তো সবাই কেই নিজের খাবার নিজেকেই নিতে হত। আমাদের কলেজ এ অবশ্য জুনিয়র রা আগে নিতে পারে ইচছামত। short পরলেও সিনিওর রা কিছু বলে না।

    জবাব দিন
  9. amader college eo junior ra bhat serve kore. amader abar mangsho alada alada bati te kore dito, so karo kom porar karon chilo na. kintu ke koto tuku khabe shei bapare kono restriction chilo na. specially ekbarer beshi dui bar nite parbe na emon to chiloi na. ar ha, table e kono junior er kichu short thakle ba na deowa hole table leader always nijer ta junior ke diye diten and take khaite bolten. then table er baki senior ra abar boshe thakten table leader er shei jinishta na asha porjonto. then shobai abar khaowa start korto. eigula to common jinish bolei jantam shob cadet e. girl dekhi purai ulta

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাব্বির (১৯৯৫-২০০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।