স্নো টার্নড ইনটু রেইন

হঠাত করেই দেখা হয়ে গেলো বন্যা র সাথে ।

জব শেষে বাসায় ফিরেই মেজাজটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল, কারন রান্না করার জন্য কুকার জ্বালাতে গিয়ে লাইটার খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বাইরে কয়েকদিন ধরে একটানা তুষার পড়ছে। তুষার থামলেই আবার শুরু হয় বৃষ্টি।অদ্ভূত আবহাওয়া এই দেশের, দু’বছরে ও এই দেশের আবহাওয়ার সাথে এতটুকু মিলাতে পারিনি।সারাদিনের ক্লান্তি আর পেটে ক্ষুধা। বার্থা স্ট্রীটের শেষ মাখায় নতুন একটা পিজা শপ খুলেছে, তাও আমার বাসা থেকে ১৫ মিনিটের হাঁটা দুরত্ব।এই শীতের মাঝে বাইরে যাব না যাব না করেও শেষ পযন্ত জ্যাকেট টা তুলে নিলাম। পেটের ক্ষুধাটাকে আজ কিছুতেই এড়ানো যাচ্ছেনা।

বাইরে আবার শুরু হয়েছে টিপটিপ বৃষ্টি। আজকে হাঁটতে হাঁটতে বড় বেশী অসহ্য লাগছিলো বৃষ্টিটাকে। দোকানে ঢুকে হিটারের উত্তাপ এ যেনো একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। চমতকার পিজা বানায় ওরা, প্রায়ই আসা হয় দোকানটাতে ইদানী্ং।অর্ডার দেয়ার ঠিক আগের মূহূর্তে যেনো হঠাত কোনো একটা মুখের দিকে চোখদুটো আটকে গেলো। অসম্ভব সুন্দর কোনো মুখ না, কিন্তু এত চিরচেনা! আমাকে এখনো দেখেনি ও। হেঁটে গিয়ে আলতো করে কাঁধটা স্পর্শ করলাম ওর। ঘুরে দাঁড়িয়ে অদ্ভূত চোখে তাকালো,প্র্থমে চিনতে পারেনি। ঠোঁট দুটো অল্প একটু কেঁপে উঠেছিলো, মনে হয় বলতে চাইছিলো, ‘এক্সকিউজ মি’, কিন্তু পর মূহূর্তেই চোখের ভাষাটা যেনো বদলে গেলো, আর ঠোঁটের নড়ে উঠাও বদলে গিয়ে চিতকার করে উঠলো, ‘আরে তুমি??’

অনেক বছরের পুরোনো স্মৃতিগুলো যেনো হঠাত করে নাড়া দিয়ে গেলো মনটাকে। স্মৃতির আঘাতটাকে সামলে শুধু বলতে পারলাম, ‘কেমন আছো?’ সব সময় এই প্রশ্নটা করেই ওর সাথে কথা শুরু হতো আমার। হয়তো ৫ মিনিট আগেই ওকে রিকশা করে এলিফ্যান্ট রোডএ ওর বাসায় নামিয়ে দিয়ে এসেছি, বাসায় গিয়ে ও ফোন করেছে। তখনও আমার প্রথম কথা হতো, ‘কেমন আছো?’ আজ বহু বছর পর সেই পুরোনো প্রশ্নটাই কি বেখাপ্পা শোনালো। ও অবশ্য খুব তাড়াতাড়ি সামলে নিয়ে জবাব দিল, ‘কেমন আছি মনে হচ্ছে?’ একটু বিব্রত হলাম।প্রশ্ন দিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার স্বভাব ওর অনেক পুরোনো। আমাকে বিব্রত করার স্বভাবটাও! উত্তরের অপেক্ষা না করেই একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকলো, ‘কবে এসেছো এখানে?’ ‘কি করছো এখন?’ বললাম, ‘এতটুকোও বদলাও নেই তুমি!’ ও বলল, ‘তাই নাকি?’

প্রশ্ন থামতেই মনে হলো, ওকে বলার মত অবশিষ্ট আর একটা শব্দও নেই আমার কাছে। হয়তো ওর কাছেও ছিল না। তাই একরকম অপ্রাসঙগিক ভাবেই বললো, বিয়ে করেছে এখন। আমি বললাম ‘ও’।
ওর হাসবেন্ড নাকি আর্কিটেক্ট, বলার মত কিছু একটা খুঁজে পেয়ে অনেক কথাই বললো। ওর স্বামীর কাজের কথা, ওদের নতুন গাড়ি কেনার কথা, স্বামীর কাজর সূত্রেই নাকি এই দেশে আসা। বললো, ওর স্বামী নাকি অনেক কেয়ারি্ং। হয়তো বলতে চাইছিলো যে, লোকটাকে অনেক ভালোবাসে, কিন্তু বলল না। সম্ভবত মিথ্যা কথা বলতে চায়নি, তাই।

আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘বিয়ে করেছি কিনা?’, খুব লজ্জা পেলাম। বরাবরই এমন লাজুক ছিলাম আমি। ওকে ভালোবাসি এই কথাটা বলতেও সাড়ে তিন বছর সময় লেগেছিলো আমার। সেইদিনের কথা খুব মনে আছে। কোনো এক বন্ধুর শেখানো কিছু কথা মুখস্ত করে, একটা গোলাপ পিছনে লুকিয়ে গেলাম ওকে প্রপোজ করতে।ওর সামনে গিয়ে শেখানো সব কথা ভুলে আমতা আমতা করছিলাম, আর ও অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছিল। হঠাত কি হলো, লুকানো গোলাপটা বের করে ওর দিকে ছুঁড়ে মেরে দৌঁড়ে পালালাম। পিছনে একবার ফিরে তাকিয়ে দেখলাম, কিছুতেই অট্টহাসি আটকে রাখতে পারছে না। তবু সেই হাসির মাঝেও আমার জন্য একটু প্রশ্রয় দেখতে পেয়েছিলাম ঠিকই। আনমনা দেখে জিজ্ঞাসা করলো, চলো তোমাকে গাড়িতে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসি। আমি বললাম, ‘চলো একটু হাঁটি’।

বার্থা স্ট্রীট এর আলো ছাড়িয়ে আমরা দুজন নিশ্চুপ হয়ে হাঁটলাম। হাঁটতে হাঁটতে চোখদুটো বড় জ্বালা করছিলো। বাইরে তখনো টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছিল। এখন আর বৃষ্টিটাকে অসহ্য লাগছে না, বরং ভালোই লাগছে। চোখদুটোকে আর জোর করে আটকে রাখলাম না। এই জন্যই বৃষ্টিতে হাঁটতে আমার এত ভালো লাগে, কেউ বুঝতে পারেনা যে আমি কাদঁছি।

১,৮৮৫ বার দেখা হয়েছে

৩১ টি মন্তব্য : “স্নো টার্নড ইনটু রেইন”

  1. মুহিব (৯৬-০২)

    মামুন ক্যামনে লিখ ইরাম কৈরে? আবেগী হইয়া গেলাম মনে কয়......

    অঃটঃ যেই ধরণের ক্ষুধার কথা বলেছ, কিন্তু কিছু না খেয়েই চলে আসলা? মাইয়াটারেও কিছু অফার করতা না হয়?

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।