গাধা জহির, মাস্তান রাজিব-৪

গাধা জহির, মাস্তান রাজিব-১
গাধা জহির, মাস্তান রাজিব-২
গাধা জহির, মাস্তান রাজিব-৩

রাজিব
এটা বুদ্ধিমানের কাজ হল নাকি নির্বুদ্ধিতা হল ঠিক বুঝতে পারছি না।
আমি বাসা থেকে বেরোনোর আগে একটা চিঠি লিখে এসেছি।
বিকাল বেলা মার চেহারা দেখে এমন খারাপ লাগল যে মনে হল আমি নেই এবং কোথায় আছি এটা না জানতে পারলে মা হয়ত উদ্বেগে মারাই যাবেন। তাই ঠিক করে ফেললাম, যাই করি মাকে টেনশনে রাখব না। আর আমার চোখে তো আমার মায়ের কোনো দোষ নেই। সবটাই গুণ। আমি আরো কিছু চাই, সেটার প্রয়োজনও আছে, কিন্তু এই একটা জায়গায় তো মায়ের কিছু করার নেই।
যে মা বিশ্বাস করেন আমি দুনিয়া জয় করে ফেলব একদিন এবং সেদিনের অপেক্ষায় তিনি দিনরাত খেটে মরছেন সেই মায়ের কাছে আজ আমার নামে অভিযোগ এসেছে। বাইরের লোক এসে যা নয় তা বলে গেছে।
কিন্তু গোপন কান্না ছাড়া মার আর কোনো অভিযোগ নেই।
বিকাল বেলা আমাকে একটু বিষণ দেখে মা বললেন, রাজিব যা হয়ে গেছে তা নিয়ে কখনো ভাবতে নেই। কারণ ওটা আমাদের কারো হাতে নেই। যেটা আমাদের হাতে সেটা নিয়ে ভাবতে হয়।
আমি কিছু বুঝতে না পেরে চুপচাপ তাকিয়ে থাকলাম।
মা বললেন, স্কুলে যা করেছ সেগুলো এই বয়সের ছেলেরা করতেই পারে। কিন্তু সেই বড়ো মানুষ হয় যে ভুলটা শুধরে নেয়। সেটা আমি জোর করে করব না। আমি চাই ভুলটা তুমি বুঝ এবং বুঝে তারপর তোমার মতো করেই নিজেকে সামলাও।
মামা অবশ্য এসবে নেই। তার বক্তব্য এই সবই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তিনি কাল থেকেই চেঁচাচ্ছেন, আমি সবগুলোকে কান ধরে যদি ওঠবোস না করাই…। আমার ভাগ্নের নামে মিথ্যা অপপ্রচার। ঐ গাধা জহিরটাকে আগে সরাতে হবে। দুই টাকার উকিলের ছেলে।
মায়ের চেহারা দেখে আমার মনে হল, এই মাকে উদ্বেগে রাখার কোনো মানে হয় না।
তাই আমি একটা চিঠি লিখে ফেললাম।
‘‘মা আমি যাচ্ছি। সামনাসামনি থেকে এই বিষয়ে তোমার সঙ্গে কথা বলতে পারব না। তাই দূরে যাচ্ছি। আমার বাবাকে চাই। দুদিন সময় তুমি ভাবো। তারপর আমি তোমাকে ফোন করব। ফোন পেয়ে তুমি যদি আমাকে আনতে যাও তাহলে আমি আসব এবং ভাবব তুমি বাবাকে ফিরিয়ে আনার একটা ব্যবস্থা করেছ।’’
চিঠিটা লিখে জহিরকে বলার পর জহির ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল। আর শফিক রেগে গেল।
গাধা হল জহির, কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে তুই তার চেয়েও বড়ো গাধা।
কেন সমস্যা কী ! আমি তো কোথায় যাচ্ছি সেটা লিখিনি।
ঐ হল আরকি ! আমরা তো পালিয়ে যাচ্ছি তাদের টেনশনে রাখার জন্য। টেনশনে থাকলে তারপর গিয়ে না দাবি মানার প্রশ্ন। ভুল হয়ে গেল। বড়ো ভুল।
জহির অবশ্য খুব বড়ো ভুল মনে করল না। শফিক এদিকে যখন চেঁচাচ্ছে তখন জহির আমার কাছ থেকে চিঠির বৃত্তান্ত জেনে নিজেও গিয়ে একটা চিঠি লিখে তার বালিশের নিচে চাপা দিয়ে চলে এল।

টিকেট কাটতে টাকা লাগে। টাকার একটা বন্দোবস্ত অবশ্য হয়েছে। শফিকের একটা মাটির ব্যাংক আছে। আজ বিকালে সেই ব্যাংক ভেঙে সে তিনশো টাকা বের করেছে। আমি হাতিয়েছি মায়ের ভ্যানিটি ব্যাগ। তাতে তিনটা পাঁচশো টাকার নোট ছিল, দুটো নিয়েছি, সবটা নিলে মা বিপদে পড়ে যাবেন যে !
শফিক তাতেও ক্ষেপে গেল। তোদের দিয়ে জীবনে কিছু হবে না। বড়ো কিছু করতে গেলে মায়া জিনিসটাকে কাটাতে হয়। গৌতম বুদ্ধকে দেখ। সংসার ছেড়ে না গেলে চীন-জাপানের এত লোকের কী হত ভাব ! বুদ্ধ ঘর ছেড়ে না বেরোলে ওরা তো ধর্মই পেত না।
আমরা বুদ্ধের মতো বৃহত্তর মানবকল্যাণে যাচ্ছি না। কাজেই অপরাধবোধ করি না। তাছাড়া শফিকের সব কথা ধরলে এতদিনে আমাদের মহাকাশে চলে যাওয়ার কথা। শফিক কয়েক মিনিটেই প্রমাণ করে দিতে পারে দুনিয়াটা আসলে থাকার কোনো জায়গাই না।
সর্বোচ্চ আর্থিক অবদান রাখছে জহির। সে তার বাবার ক্যাশবাক্সের পুরোটাই মেরে দিয়েছে। এমন বুদ্ধিমানের মতো কাজটা করেছে যে তাকে এরপর আর গাধা ডাকা যাবে না।
আমি শফিককে বললাম, দেখ ও তিন হাজার টাকা নিয়ে এসেছে। তুই এনেছিস তিনশো। কাজেই এরপর ওকে গাধা ডাকলে তোকে দশবার গাধা ডাকতে হবে।
শফিক নিরস্ত হওয়ার ছেলেই নয়। বলল, গাধাদের বেশি প্রশ্রয় দিতে নেই। গাধারা দুয়েকটা বুদ্ধিমানের কাজ করে ফেলে বটে, কিন্তু আসল সময়ে এরা ঠিকই ডোবায়।
পুরো টাকাটা শফিকের পকেটে। পকেটে টাকা না থাকলে নাকি তার আত্মবিশ্বাস আসে না।
পকেট ভরতি টাকা এবং বুক ভরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে গিয়ে অবশ্য শফিক টিকেট কাউন্টার থেকে খালি হাতে ফিরে এল।
শফিক বলল, একটা গোলমাল হয়ে গেছে রে !
কী !
টিকেটের কাউন্টারে বসে আমাদের পাশের বাসার শরাফত ভাই। একা একা ঢাকা যাচ্ছি এটা সে জেনে গেলে…
জহির বলল, ঠিক আছে আমি যাই। আমাকে তো উনি ঠিক চেনেন না।
শফিক কী ভেবে বলল, না। দরকার নেই।
কেন দরকার নেই ? টিকেট ছাড়া যাব নাকি ?
হু।
শফিক বিজ্ঞের মতো বলে। হু। টিকেট ছাড়াই যাব।
টিকেট ছাড়া যাওয়ার একটা ব্যবস্থা আছে বলে আমরা জানি এবং জানি যে সেটা একটা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। তবু রাজি হতে হল, কারণ শফিক মনে করে এখন টিকেট করতে গেলেই ধরা পড়ে যাওয়ার ভীষণ ভয়।
ট্রেনে টিকেট চেকার ভদ্রলোক আমাদের পেয়ে মহাখুশি। শফিক যখন বলল, তাড়াহুড়া করে আসতে হয়েছে বলে আমরা টিকেট কাটিনি তখন তিনি পাল্টা প্রশ্ন করলেন, তোমাদের টিকেট কাটতে হবে কে বলেছে ?
আমাদের টিকেট লাগবে না !
না।
কিন্তু স্টেশনে যাওয়ার পর যদি আমাদের ধরে।
ভদ্রলোক সিগারেটে একটা টান দিয়ে বললেন, সঙ্গে টাকা পয়সা আছে কেমন ?
জহির সঠিক অংকটা বলেই ফেলছিল, কিন্তু শফিক সুন্দর সামলে নিয়ে বলল, খুব একটা নেই।
তাহলে তোমরা ঢাকায় গিয়ে কী করবে ?
না। মানে আমাদের এক চাচা থাকবেন স্টেশনে। আমাকে দেখিয়ে বলে, ওর বাবার আমাদের সঙ্গে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হঠাৎ উনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। যাওয়াটাই বাতিল হয়ে যেত, পরে চাচা বললেন, কোনো অসুবিধা নেই। ট্রেনে তুলে দিলেই সব সমস্যার সমাধান। বললেন, ট্রেনের টিকেট চেকার যে ভদ্রলোক থাকে তার সঙ্গে কথা বললেই সে সুন্দরভাবে পৌছে দেবে। সেজন্যই না টিকেট না করে আপনার কাছে চলে এলাম।
মিথ্যাগুলো শফিক এত সুন্দর সাজিয়ে বলল যে আমাদেরও বিশ্বাস হয়ে গেল।
চেকার ভদ্রলোক হাসেন। বলেন, আমার হাতে যখন পড়ে গেছ তখন চিন্তার কিছু নেই।
আমাদেরও মনে হয় চিন্তার কিছু নেই।
তিনি আমাদের এক জায়গায় বসিয়ে দিয়ে বলেন, তোমরা বসো আমি আসছি।
তিনি যেতেই শফিক বলে, দেখলি তো কেমন কাত করে ফেললাম।
জহির বলল, কিন্তু তাকে এত কিছু বলার কী দরকার ছিল ?
আরে গাধা এসব ক্ষেত্রে একজন-দুজনকে বন্ধু বানিয়ে ফেলতে হয়। যে কোনো জায়গায় গিয়ে একজনকে বন্ধু না বানালে তুই সামলাবি কী করে ! মনে কর এই ট্রেনে আমরা সত্যিকারের ছেলেধরার হাতে পড়ে গেলাম তখন রক্ষা করবে কে ? এই লোকই তো !
কিন্তু লোকটির চেহারা কেমন যেন !
তোর চেহারা কেমন ? অচেনা লোকদের চেহারা আমাদের কাছে সবসময় কেমন যেন মনে হয়। এই যে তোর চেহারার প্রতি তোর এত দরদ, সেই চেহারা দেখে হয়ত এই ট্রেনের একজন লোক ভাবছে এই ছেলেটা বদমাশের হাড্ডি।
চেকার ভদ্রলোক ফিরে আসার পর আরো খুশি। বললেন, তোমাদের আর কোনো চিন্তা নেই। বসার মতো ভালো একটা জায়গা পাওয়া গেছে। ওখানে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকবে। চাইলে ঘুমাতেও পারো। তোমাদের পাশে যে ভদ্রলোক আছেন উনি ঢাকায় তোমাদের চাচার হাতে তোমাদের দিয়ে তবেই যাবেন। দেখো ওনার সঙ্গে ছাড়া স্টেশন থেকে বের হওয়ার চেষ্টা কোরো না। তাহলে কিন্তু ওখানে পুলিশ ধরবে এবং সব টাকা নিয়ে যাবে।
যে লোকটিকে আমাদের অভিভাবক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সে এতক্ষণ ঘুমাচ্ছিল বোধহয়। এখন জেগে ওঠে ঠিক মতো আমাদের তিন জনকে বসিয়ে দিয়ে চেকারকে বলল, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। একদম জায়গা মতো ওদের পৌঁছে দেয়া হবে।
তারপর আমাদের দিকে ঘুরে বলল, তোমারা খাবে কিছু।
ভদ্রতাবশত আমরা মাথা নাড়লাম।
লোকটি চেকার ভদ্রলোকের সঙ্গে এরপর একটু দূরে গিয়ে নিচু গলায় কিছু কথাবার্তা বলল। তারপর চেকারকে একটা কড়কড়ে পাঁচশো টাকার নোট দিলে চেকার বিদায় হল।
লোকটি ফিরে এসে তার বাক্স থেকে একটা মোটা ফ্রেমের চশমা বের করল। যারা চোখে কম দেখে তারা বেশি দেখার জন্য চশমা পরে, কিন্তু এই লোক চশমা দিয়ে আমাদের চেহারাগুলো ভালো করে দেখে তারপর চশমা খুলে আবার সবাইকে দেখল।
দেখে হাসল। বলল, আমি চশমায় একরকম দেখি। চশমা ছাড়া আরেকরকম।
আমরা কেউ কিছু বললাম না।
সে চশমাটা রাখতে রাখতে বলল, আসলে কী জানো চশমা ছাড়া আমি ঠিক দেখিই না। এতক্ষণ তোমাদের মূর্তি মনে হচ্ছিল। চশমা দেখার পর এখন তোমাদের চেহারাগুলো দেখলাম। চেহারা তো বেশ ভালো। দেখে মনে হচ্ছে তোমরা বড়ো ঘরের ছেলে।
বড়ো ঘর বলতে ঠিক কী বোঝায় আমরা সঠিক জানি না, তাই এর উত্তর কী হওয়া উচিত না জেনে আমরা সবাই চুপ।
ট্রেন বিচিত্র মানুষের সম্মিলনের এক আজব জায়গা। কেউ ঝিমাচ্ছে, কারও নাক ডাকা এমনকি ট্রেনের বিকট আওয়াজকে ভেদ করে যাচ্ছে। কয়েকজন তরুণ এক কোনায় বসে জমিয়ে তাস পেটাচ্ছে। তাদের চেঁচামেচিতে ঘুমে সমস্যা হচ্ছিল মধ্যবয়সী একজনের। তিনি বললেন, ভাইয়েরা আস্তে।
ভাইয়েরা তাদের স্বরটা একটু নামিয়ে নিলেও নিজেদের মধ্যে ঐ বয়স্ক লোককে নিয়েই এমন রসিকতা করল যে পুরো কামরা ফাটানো হাসি।
বয়স্ক ভদ্রলোক তরুণদের মিলিত শক্তির সঙ্গে লড়াই সুবিধাজনক হবে না ধরে বাথরুমে চলে গেলেন।
এদিকে শফিক পড়েছে এক মহাঝামেলায়। তার পাশের সিটেই একজন মহিলা, তিনি ঘুমাচ্ছেন, কিন্তু কোলের বাচ্চাটি জেগে। সেই বাচ্চাটির কী কারণে যেন শফিককে খুব পছন্দ হয়েছে। সে লাফিয়ে শফিকের কোলে উঠে যেতে চাইছে। শফিক যত সরে সে তত আগায়।
বাচ্চাকে কিছু বলাও যায় না, আবার এই আপদ সহ্য করাও মুশকিল, বাচ্চা-কাচ্চাদের কাণ্ডকীর্তি খুব অনিশ্চিত, কখন কী করে বসে ! বিশেষ করে অচেনাদের শরীরে প্রাকৃতিক কর্ম করাটা এদের খুবই আগ্রহের বিষয়।
শফিক ফিসফিস করে বলল, ভালো ঝামেলায় পড়লাম তো ! কখন হাগু-মুতু করে দেয়।
শফিককে অপ্রস্তুত হতে দেখলে আমাদের সবসময়ই ভালো লাগে। যে বা যারা নেতা প্রকৃতির তাদের বিপাকটা সবসময়ই উপভোগ্য হয়। আমরা সমবয়সীরা সবাই মিলে যেখানে শফিককে ঝামেলায় ফেলতে পারি না, সেখানে অচেনা-অদেখা একটা চার-পাঁচ বছরের বাচ্চা মেয়ে তাকে কেমন নাস্তানাবুদ করে দিচ্ছে। গল্পটা মনে রাখতে হবে। ফিরে আসার পর শফিককে একদিন এই নিয়ে খুব অপ্রস্তুত করতে হবে।
ট্রেনের শব্দটা অনেকের কাছে খুব অপছন্দের। শব্দের সঙ্গে ঝাঁকুনি। কিন্তু আমি তার মাঝে অদ্ভুত একটা ছন্দ খুঁজে পাই।
অন্ধকার-গাছ-পাহাড় পেছনে ফেলে ট্রেন ছুটে চলছে তার ছন্দ নিয়ে। সেই ছন্দে মাথা দোলাতে দোলাতে হঠাৎ মায়ের কথা মনে পড়ে।
মা নিশ্চয়ই এতক্ষণে আমার চিঠিটা পড়ে ফেলেছেন। এবং তারপর…
মায়ের চেহারাটা ভেসে উঠতেই আমি সেটা মুছে ফেলতে চেষ্টা করি। কয়েকদিনের মাত্র ব্যাপার।
চোখটা একটু লেগে আসছিল। হঠাৎ পাশ থেকে শুনি চশমা পরা লোকটির ফিসফিস শব্দ। ঢাকা চলে এসেছে।
চলে এসেছে !
হু। শোনো। নেমে সোজা আমার পেছন পেছন আসবে। ডান-বাম কোনো দিকে তাকাবে না। ঠিক আছে।
সেরকমই কথা ছিল। কিন্তু লোকটার গলা এমন কেন ?
এখন সকালের আধো আলোয় তার চেহারাটাও একটু কেমন যেন দেখাচ্ছে।

জহির

শফিক বলল, আমি তখনই বলেছিলাম। আমার কথা মতো তো কোনো কাজ করিস না ! এখন বোঝো !
শফিকের ক্ষোভটা রাজিবের ওপর। কাল থেকে সে রাজিবের সঙ্গে কথাই বলছে না। রাজিব নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিজেকে এমন গুটিয়ে নিয়েছে যে ওকে ঠিক মানাচ্ছেই না। আমার ভূমিকা এখন মধ্যস্থতাকারীর। একে আমরা লোক তিনজন, এখন দুজন কথা না বলাতে চাপটা আমার ওপর দিয়েই যাচ্ছে বেশি। আমাকে সারাক্ষণ কথা বলার ওপর থাকতে হচ্ছে।
একটু আগে শফিক বলল, তোর প্রিয়তম বন্ধুকে বল আর কোনো চিঠি লেখার ইচ্ছা করছে কিনা ! থাকলে কাগজ-কলম এনে দিচ্ছি।
শফিকের রাগ করার কারণ আছে। সত্যি বললে আমারও রাগ হচ্ছে রাজিবের ওপর। ওর একটা ভুল যে এত বড়ো ভুল হয়ে যাবে কে ভেবেছিল !
ঘটনাটা একটু পেছন থেকে বলি। ট্রেনের চশমা পরা ভদ্রলোকের সঙ্গে নেমে আমরা তাকে কাটিয়ে দিতে চাইলাম স্টেশনেই। আমরা বলেছিলাম আমাদের নিতে আমাদের চাচা আসবেন, এখন লোকটি যদি দেখে কেউ আসেনি তাহলে সেটা বড়ো লজ্জার ব্যাপার হবে। কাজেই স্টেশন থেকে নেমেই ভিড়ে হারিয়ে যাব। এই ছিল আমাদের পরিকল্পনা। কিন্তু লোকটির দেখলাম আমাদের দিকে আশ্চর্য মনোযোগ। আমরা কায়দা করে একটু পিছিয়ে পড়েছিলাম, শফিক বলল, আংকেল আপনি এগোন। আমাদের চাচার আসার কথা সাতটায় এখনো তো মনে হয় তার খানিকটা বাকি।
লোকটি বলল, অসুবিধা নেই। চলো বাইরে গিয়ে একটা দোকানে আমরা চা খেতে খেতে অপেক্ষা করি। আমার এমন কিছু তাড়া নেই। তাছাড়া তোমাদের এভাবে ফেলে গেলে কেমন দেখায় ! আমারও তো ছোটো ভাই ভাতিজা আছে নাকি !
আমার একটু চা খেতে ইচ্ছে করেছিল। বাবার কাছ থেকে এই একটা অভ্যাস আমি পেয়েছি। বাবা ঘুম থেকে ওঠে মুখ না ধুয়ে এক কাপ কড়া চা, সেটাকে নাকি বেড টি বলে, তা নাম যাই হোক অভ্যাসে জিনিসটা আমার খুব প্রিয়।
বাড়ি থেকে চলে আসার পরও যখন এই জিনিসটা পাওয়া যাচ্ছে তখন খেয়ে নিলে মন্দ হয় না। তাছাড়া হোটেলে সকাল বেলা চা-টা কেমন হয় সেটা চেখে দেখার একটা ইচ্ছাও হচ্ছিল।
আমি নিমরাজি দেখে শফিক কড়া চোখে একটু তাকাল।
বুঝলাম রাজি হওয়া উচিত হবে না।
বললাম, না। সকালে খালি পেটে চা খাওয়া ঠিক না।
ঠিক আছে খালি পেটে না। আগে তোমাদের পেট ভরাব। তারপর…
শফিক এর মধ্যে একজন লোকের কাছ থেকে জেনে নেয়ার চেষ্টা করছে ফকিরেরপুল নামক জায়গাটা কত দূরে।
আমাদের পরিকল্পনা খুব বিন্যস্ত হয়। তাছাড়া ঢাকা শহর সম্পর্কে ধারণাও সামান্য। শফিক আমাদের ফার্স্ট বয় ইমরানের কাছ থেকে জেনে এসেছে ঢাকা শহরে ফকিরেরপুল নামক জায়গায় নাকি সস্তায় অনেক হোটেল পাওয়া যায়। ঠিক হয়েছে এখানে কোনো একটা হোটেলে গিয়ে একটা ঘুম দিয়েই আমরা বেরিয়ে পড়ব ঢাকা শহর। বাবা-মা অর্জনের বাইরে ঢাকা ঘুরে দেখাটা হবে আমাদের বোনাস।
আমরা চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক এসব জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখব। একটা সিনেমাও দেখব বিকালে। শফিক অবশ্য গুরুত্ব দিচ্ছে ইউনিভার্সিটি যাওয়াটাকে। ইউনিভার্সিটি না দেখলে নাকি ঢাকা শহরই দেখা হয় না। বাংলাদেশের পুরো ইতিহাসই নাকি ওখানে জমা হয়ে আছে।
কথাটা সত্যই হয়ত। কত নাম শুনেছি। কার্জন হল। কলাভবন। টিএসসি। যাব সেখানেও যাব। ঠিক করে রেখেছিলাম। কিন্তু লোকটি যে আমাদের ছাড়ল না।
সে শফিককে ডাক দিয়ে বলল, শোনো বেশি ঝামেলা করো না। বিপদে পড়ে যাবে। তোমাদের টিকেট নেই। এখন আমার সঙ্গে না বেরোলে তোমরা ধরা পড়ে সোজা জেলে। বাবা-মাকে না বলে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছ। পুলিশ ধরে সোজা মারতে মারতে বাড়ি নিয়ে যাবে।
কথাগুলোর মধ্যে একটা বিপদের গন্ধ পাওয়া যায়। গলাটাও ভীতিকর। কিন্তু শফিক তো নেতা। এত সহজে ভয় পেলে নেতাদের চলে না।
সে বলল, বাড়ি থেকে আমরা পালিয়ে এসেছি আপনাকে কে বলল ! আমাদের চাচা হয়ত বাইরে অপেক্ষা করছেন।
অপেক্ষা করছেন না !
হু।
তাহলে চলো বাইরে গিয়ে দেখি।
এরপর আর তর্ক করা যায় না।
বাইরে বেরিয়ে আসার সময় গেটে কেউ একজন আমাদের আটকাতে চেয়েছিল, লোকটি তাদের একজনকে চুপিচুপি এক কোনায় ডেকে নিয়ে কী যেন বলল। তারপর একটা একশো টাকার নোটের বিনিময় হতে দেখলাম। একশো টাকা পেলে কমলাপুর স্টেশনে তিনটা বিনা টিকেটের কিশোরকে ছেড়ে দেয়াই বোধহয় নিয়ম। কাজেই আমরা নির্বিঘেœই ছাড়া পেয়ে গেলাম। লোকটির প্রতি একটু কৃতজ্ঞতাও বোধ হল। আমাদের জন্য বেচারার একশো টাকা গেল। ভালো লোক, না হলে তো আমাদের কাছে টাকাটা চাইত।
লোকটি বেরিয়ে এসে দাঁড়াতেই দেখি একটা ট্যাক্সি ড্রাইভার এসে সালাম দিয়ে তার সামনে দাঁড়াল। লোকটি কী বলতেই ড্রাইভার আমাদের বলল, উঠে পড়ো।
শফিক বলল, আমাদের চাচা !
তোমাদের চাচার কাছে আমি তোমাদের পৌঁছে দেব।
কিন্তু…
ট্যাক্সি ড্রাইভারটি তুলনায় নীরস। সে বলল, কথা নয় কাজ। উঠে পড়ো। এটা ঢাকা শহর। যত কথা তত ঝামেলা।
গোলমালে যে পড়ে গেছি এতক্ষণে বোঝা গেল। কিন্তু দেরি হয়ে গেছে।
শফিক অসহায়ের মতো এদিক-ওদিক তাকায়। কিন্তু কাউকে পাওয়ার আগেই লোকটি ধরে শফিককে ট্যাক্সির মধ্যে উঠিয়ে নিলো। আমরা দৌড় দিতে পারতাম, কিন্তু শফিককে ফেলে যাই কী করে !
কাজেই আমাদেরও ট্যাক্সিতে উঠতে হল।
সেই ট্যাক্সিতে করে, অনেক গলি-ঘুপচি ঘুরে যে বাসাটায় আমাদের নিয়ে আসা হল সেখানেই আমরা গত দু-দিন ধরে আটক।
বাসায় এনে ঢোকানোর পরই আমাদের কাপড়-চোপড় তল্লাশি করে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা লোকটি এবং তার সাগরেদ নিয়ে গেছে। যে কাগজে রাজিবের মায়ের এবং আমার বাবার মোবাইল নাম্বারটা লেখা ছিল। নাম্বারগুলো আমাদের মুখস্থ নেই। সেটা হারানোর পর থেকে আমরা এমন অসহায় যে এখান থেকে মুক্তি পেলেও বাড়ি পৌঁছানোর জো নেই। তাছাড়া টাকা পয়সাও গেছে।
পকেটে টাকা না থাকলে শফিকের আত্মবিশ্বাস থাকে না, টাকার মর্মটা কীভাবে কীভাবে যেন আমাদের মধ্যে সেই সবচেয়ে বেশি বোঝে, কাজেই টাকা দিতে শফিক রাজি হচ্ছিল না। ফল হিসেবে দুটো চড় খেয়েছে। সে এমন চড় যে শফিকের গালটা ফুলে গিয়ে ওর চেহারাটাই ঠিক মতো চেনা যাচ্ছে না। চড়ের প্রভাবে রাতের বেলা থেকে আবার তার জ্বর। তবু শফিক হার মানেনি। জ্বর সত্ত্বেও আমাদের বুঝিয়েছে। চিন্তার কিছু নেই। এখান থেকে মুক্তি পাওয়া দুই মিনিটের ব্যাপার। সকাল হলেই একটা ব্যবস্থা করে ফেলবে। কিন্তু সকালে উঠেই তার মেজাজটা গরম।
গরম হওয়ার কারণ আমাদের সামনে থেকেই চশমাওয়ালা লোকটির ভুঁড়িওয়ালা অ্যাসিস্ট্যান্ট বাড়িতে ফোন করেছে। স্পিকার ফোন অন করে আমাদের কথোপকথন শুনিয়েছে। শুরুতে রাজিবের মা। এবং আমরা অবাক হলাম রাজিবের যে মায়ের জীবন হচ্ছে তার ছেলে সেই মা কেমন নিরুদ্বেগ।
লোকটি ফোন ধরে বলল, হ্যাঁলো। এটা কী আনোয়ারা পারভীনের নাম্বার ?
জি বলছি।
আপনার জন্য ছোট্ট একটা খবর।
কী খবর বলুন।
আপনার ছেলে আমাদের কাছে।
আপনি কে ?
সেটা সাক্ষাতে বলা যাবে। এখন কাজের কথা শুনুন। আপনার ছেলেকে পেতে হলে কালকের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে চলে আসুন।
ফোনটা কে করছে ?
আমরা লোক সুবিধার নই। এরকম নাদুস-নুদুস ছেলেদের বিদেশে ভালো কদর। তাছাড়া ওদের শরীরে কিডনি-টিডনি নামের কীসব জিনিস আছে। সেগুলোর মূল্যও কম নয়। ৫০ হাজার টাকা পেলে আপনার ছেলেকে আপনার কাছে দিয়ে দেব। ব্যবসা হিসেবে এটা খুব ভালো না। বিদেশে এমন ছেলে এক লাখ টাকায় বিকায়। তবু ছেলেগুলো নিজ থেকে যখন আমাদের কাছে ধরা দিয়েছে, আমাদের বিনিয়োগ খুব একটা বেশি নয়, তাই ৫০ হাজারেই আপনার কাছে ছেড়ে দিচ্ছি। রাজি থাকলে জানাবেন। কাল আবার ফোন করব।
রাজিবের মা বললেন, ফোন করার জন্য আপনাকে কত টাকা দিচ্ছে ?
মানে ?
আমার ছেলে বাড়ি থেকে পালিয়েছে তার বাবাকে পেতে। চিঠিটা আমি পড়েছি। মাঝখানে আপনি আসলেন কোথা থেকে ? আমার ছেলেকে বলে দিন ওর এই দাবিটুকু মেটানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। দুনিয়ার সব সম্ভব। শুধু এটা ছাড়া। এখন এটা না পেলে যদি সে আসতে না চায় তাহলে আমার করার কিছুই নেই। আই অ্যাম সরি !

আমার বাবাকে ফোন করে আরো বিশ্রি অভিজ্ঞতা।
বাবা চিৎকার করে বললেন, কুলাঙ্গার ছেলে। মাকে চায় ! জানে ওর মা কী ! যে মা ওকে চার বছরের ফেলে চলে যায় সেই মা…। ওকে আপনি বিদেশে পাচার করে দিন। আমার কোনো সমস্যা নেই। আবার কায়দা করে লোক দিয়ে ফোন করাচ্ছে। এই ফোন করার জন্য তোকে আমি জেলের ভাত খাওয়াতে পারি। গনি উকিলের নাম শুনেছিস ?
না। শুনিনি।
এখন শুনে নে। আর একবার ফোন করলে…
ভুঁড়িওয়ালা লোকটি ভড়কে গিয়ে বলল, কিন্তু ৫০ হাজার টাকা।
নাটক করছিস। নাটক একেবারে পেটের ভেতর ভরে দেব। গনি উকিলের সঙ্গে মাতবরি।
লোকটি ঠিক বুঝতে পারল না। চিঠির বিষয়টাই বা কী ! তাছাড়া বাবা-মায়ের এমন নিরাসক্তিও তাদের অভিজ্ঞতায় নতুন।
যাদের ভুঁড়ি বড়ো তাদের মগজ ছোটো হয়। তাছাড়া বাবার গালাগাল খাওয়াতে তার আত্মবিশ্বাসও কমে যাওয়ারই কথা। লোকটি ফোন রেখে বলল, ইরফান ! ইরফান !
আমরা জানলাম চশমা পরা লোকটির নাম ইরফান। এই লোকটি ছেলে-ধরা। সে বিদেশে ছেলে পাচার করে।
শফিকের কাছে অবশ্য এসব সমস্যার চেয়েও এখন বড়ো হল আমাদের অপরাধ। আমরা চিঠি লিখে আসতে গেলাম কেন ? চিঠির কারণেই তো বাবা-মারা ভাবছেন পুরো বিষয়টা আমাদের সাজানো নাটক।
নাটক আমরা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু নাটকের নাটাইটা যে এভাবে আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি।
এখন মনে পড়ল, টিকেট চেকারকে এই লোকটি পাঁচশো টাকার একটা কচকচে নোট ধরিয়ে দিয়েছিল। সেটাই আমাদের মূল্য। বিনা পরিশ্রমে এরকম দেশীয় ৫০ হাজার এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এক লাখ টাকা মূল্যের জিনিস পেলে টিটিকে পাঁচশো টাকা দেয়াটা বোধহয় নিয়ম।

১,৪১৮ বার দেখা হয়েছে

৭ টি মন্তব্য : “গাধা জহির, মাস্তান রাজিব-৪”

  1. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    ধারণা করেছিলাম কিডন্যাপারদের হাতে পরবে কিন্তু এত আগে বুঝিনি। গল্পের স্পেস ছোট হয়ে গেল। গল্প টানতে এবার খবরই আছে......

    তবে মামুন ভাই আছে না.......দারুণ। অপেক্ষা করছি।


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  2. মোস্তফা মামুন (৮৭-৯৩)

    লেখাটা অনেকেই মন দিয়ে পড়ছে দেখে ভালো লাগছে। মতামতগুলো নিচ্ছি। এগুলো আমার পরবর্তী লেখার সময় সাহায্য করবে নিশ্চিত।

    তৃতীয় এবং চতুর্থ অধ্যায় সম্ভবত সত্যিই একটু স্লো। কামরুল বিষয়টা প্রথম নজরে এনেছে। কিন্তু কামরুল তুমি তো এই লেখার পুরনো পাঠক? মতামতটা কিন্তু তখন পাওয়া যায়নি, এখন পাওয়া গেছে, এটাই কি ক্যাডেট কলেজ ব্লগের অবদান! এখানে যে কোনো কিছু মন খুলে বলা যায়!

    আমি আসলে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজ এবং ফেব্রুয়ারি বইমেলার লেখালেখি নিয়ে একটু ব্যস্ততার মধ্যে আছি। তাছাড়া খানিকটা প্রযুক্তিবিমুখ মানুষও বটে। তাই নিয়মিত লিখতে পারছি না। কিন্তু দেখছি।

    অনেকগুলো লেখা দারুণ। চালিয়ে যাও!

    জবাব দিন
  3. হাহাহহহা!!

    মামুন ভাই

    পুরো উপন্যাসটা আমি একসাথে পড়ে ফেলেছি। ফলে পুরোটা সম্পর্কে আমার মতামত ছিল, 'দারুন'! :clap: :clap:

    কিন্তু এখানে আমি পড়ছি একটা একটা করে পর্ব। ফলে মতামতটাও আলাদা পর্বের জন্যই এসেছে। কিন্তু একবারে পুরোটা পড়লে যে কেউই আমার মতো 'দারুন' বলবে বলে আমার ধারনা। 🙂

    আর এমনিতেও একটা উপন্যাসের প্রতিটা অধ্যায়ে টান টান উত্তেজনা আর মজা ধরে রাখা বেশ কঠিন। গল্পকে ডাল পালা মেলতেও দিতে হবে। আর সেটা করতে গেলে মাঝে মাঝে কোন কোন অধ্যায়ে গতি হ্রাস পেতেই পারে।

    তাই আমার নিজের ধারনা উপন্যাস একবারেই পড়া উচিত। ধারাবাহিক ভাবে পরলে অনেক সময় রস আস্বাদনে কিঞ্চিৎ ঘাটতি থেকে যায়।

    আর মন খুলে মতামত দেয়াটা কিছুতা তো ক্যাডেট কলেজ ব্লগের অবদানই। এই সমাবেশের প্রতি তাই কৃতজ্ঞতা।

    এখানে নিয়মিত ঢু মারুন। সবাই মিলে আপনাকে প্রযুক্তিমুখি করে ফেলবে।

    বরাবরের মতোই আমি আপনার মুগ্ধ পাঠক।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তানভীর (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।