ম্যাজিক বয় – ০৫

ম্যাজিক বয় – ০১০২০৩০৪

জ্বীন তাড়ানো কবিরাজের সঙ্গে রফিকের খুব খাতির হয়ে গেছে। কবিরাজ বললে অবশ্য তিনি খুব রাগ করেন। তাকে ডাক্তার ডাকতে হয়। যার সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন, তাকে নাম বলার আগেই বলেছেন, খবরদার আমাকে কেউ কবিরাজ বলতে যাবেন না।
তাহলে কী বলব? শফিক একটু অবাক হয়ে জানতে চেয়েছিলেন।
ডাক্তার। ডক্টরও বলতে পারেন। কিন্তু নো কবিরাজ।
আপনার নামটা?
নাম দিয়ে করবেনটা কি? আমার নাম অ্যান্টোনিও হলে যা, আমিন হলেও তা। আমি শুধু ডক্টর। ঠিক আছে।
কবিরাজরা ইংরেজি জানে না বলেই সবাই জানে, কিন্তু ইনি শুধু ইংরেজি জানেনই না, তার কায়দা-কানুন সব ইংরেজদের মতো। রফিক অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন, তার পকেট থেকে একটা পাইপ বেরোল। তিনি বিলাতী কায়দায় ধোয়া ছাড়লেন। বিলাতী কায়দা জিনিসটা কী রফিক ঠিক জানেন না, কিন্তু কেন যেন মনে হলো এটাই ধোয়া ছাড়ার বিলাতী কায়দা।
তার পোষাক-পরিচ্ছদও যথেষ্ট আধুনিক। ৪৫-৫০ বছরের মানুষরা জিন্সের প্যান্ট পরে না, পরলেও মানায় না। একে মানিয়ে গেছে। পকেটের দিকে একটা তালিও আছে, এটা হালের ফ্যাশন, ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলেরাই করে সাধারণত, ইনিও করেছেন। হাতে ব্রেসলেট, গলায় চেইন; না একে কবিরাজ বলা চলে না। সে না বললেও রফিক তাকে ডক্টরই বলতেন।
লোকটা টপাটপ ইংরেজি বলে। একটু আগে একটা শব্দ বলেছে, যেটার অর্থ জানতে রফিককে ডিকশনারি দেখতে হবে। সে বাথরুম-টাথরুমে গেলে তিনি ইংরেজিটা জেনে যাবেন। জ্ঞানগত পরাজয় তিনি কোনোভাবেই মানতে পারেন না।
কবিরাজ পাইপের ধোয়া ছেড়ে বলল, টানবেন নাকি একটু।
রফিক বিনীতভাবে উত্তর দিলেন, অভ্যাস নেই।
অভ্যাস তো মায়ের পেট থেকে কেউ নিয়ে আসে না। হয়ে যায়। ধরুন।
রফিক ধরলেন। একটা টান দিয়ে প্রচন্ড শব্দে কাশি দিলেন।
রফিক কিছু বলার আগেই কিচ্ছু হয়নি ভঙ্গিতে কবিরাজ ওরফে ডক্টর পাইপটা ফেরত নিয়ে বলল, রফিক সাহেব আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে।
পাইপ টান দিতে গগনবিদারী কাশির শব্দ দেয়াতে পছন্দের কী আছে রফিক বুঝতে পারেন না। কিন্তু লোকটির এলেম আছে। তার কথা মেনে নেওয়াই তার কাছে ঠিক মনে হয়।
তিনি হাসেন।
ডক্টর বললেন, এবার আমি একটু বিশ্রাম নেবো। আপনার ঘর যদিও বিশ্রামের জন্য খুব উপযুক্ত নয়, কিন্তু চলে যাবে। আপনি গিয়ে দেখে আসুন তো প্রস্তুতি কেমন চলছে।
রফিক নীচে নেমে দেখলেন প্রস্তুতি যথেষ্ট চলছে। মরিচের গুড়া করা হয়েছে। সাত পুকুরের পানি নিয়ে এসে সাতটা বোতলে এক সারিতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কবিরাজ নিজে একটা পোটলা নিয়ে এসেছেন, তার ভেতরে উৎকট গন্ধযুক্ত একটা গুড়া আছে। সেটা নাকি আবার গরম করতে হবে। এখন গরম করা চলছে। গন্ধে টিকে থাকা দায়। কিন্তু টিকতে হচ্ছে। কারণ বড় ভাইসাহেব পাইপ টানতে টানতে গম্ভীর ভঙ্গিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সেই ছোটবেলা থেকে তারা জেনে এসেছেন বড় ভাইসাহেব যা করবেন সেটাই তাদের পৃথিবীর আইন। কাজেই তারা দুই ভাই তো বটেই, ফরিদাও চুপ। শুরুতে অবশ্য মৌন প্রতিবাদ করেছিলেন। শরীর খারাপ বলে ঘুমাতে গিয়েছিলেন। ভাইজান গিয়ে ধমক দিয়ে তুলে এনেছেন। ফরিদা মিনমিন করে বললেন, শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে?
ম্যাজম্যাজ করলে তারও চিকিৎসা আছে। অ্যান্টোনিও আমিন সারাতে পারে না এমন কোনো অসুখই আজ পর্যন্ত তৈরি হয়নি।
তখন জানা গেলো যে লোকটার নাম অ্যান্টোনিও আমিন। কিন্তু এই শংকর নাম কেন? সে মুসলমান না খ্রিস্টান?
ভাইজানকে অবশ্য প্রশ্ন করা যায় না। করলে হয়ত রফিককেও চিকিৎসা করানো হবে। সেটা খুব প্রীতিকর না হওয়ারই কথা। হয়ত কবিরাজ বলল, মরিচের গুড়া মুখে নিয়ে বসে থাকতে হবে। এবং সেটা বিনাবাক্যে মেনে নিতে হবে। ভাইজান থাকলে কোনোকিছুতেই আপত্তি করা যায় না।
রফিককে ইতি-উতি ঘুরে বেড়াতে দেখে ধমক দিলেন, এই তুই এখানে কেন? তোকে না বললাম অ্যান্টোনিও’র সঙ্গে একটু গল্প করতে।
উনি এখন ঘুমাচ্ছেন।
ঘুমালে তুইও ঘুমাবি। যা এখান থেকে। যতসব অপদার্থ। আমার বাবা কি করে তোদের মতো দুটো অপদার্থকে জন্ম দিলেন আমি ভেবে পাই না।
শফিকের অবস্থাও তথৈবচ। তিনি ঘরে দরজা বন্ধ করে ফৌজদারি দণ্ডবিধির একটা বই বের করে বসেছেন। ভাইজান ঘরে ঢোকার পর তিনি আরও মনযোগী। প্রয়োজন বোঝাতে একটা পেন্সিল দিয়ে কিছু পয়েন্টে দাগও দিচ্ছিলেন।
ভাইজান বললেন, তুই বইয়ে আঁকাআঁকি করছিস কেন?
এই একটা মামলায়..
ভাইজান বইটা হাতে নিয়ে বললেন, তুই না দশ বছর ধরে ওকালতি করিস। এখনও ফৌজাদারি কার্যবিধিরা এই প্রাথমিক বইটাই মুখস্থ হয়নি। সেই ছোটবেলার মতোই পড়াশোনায় অমনযোগী আছিস।
এখন তাই তাদের সবার অপেক্ষা তাড়াতাড়ি চিকিৎসাটা হয়ে যাক। হয়ে গেলে রক্ষা। দুপুর থেকে যা শুরু হয়েছে তাতে এখন বাড়িতে তাদের দুই ভাইয়ের অবস্থা শেফালির চেয়েও খারাপ।
শেফালি মহাউৎসাহী। এই ধরনের মানুষ কী করে যেন ক্ষমতাসীনদের মনস্তত্ব পড়ে ফেলে। সে যেকোনো কাজ করার আগেই ভাইজানকে দেখিয়ে নিচ্ছে। একটা গুড়া গরম করে এনে ভাইজানকে দেখিয়ে বলল, বড় চাচা ঠিক হয়েছে। পানির বোতল সাজানোর পরও বড় চাচার মত চায়।
বড় চাচা খুশি হয়ে বললেন, যাক তোমার জন্যই তাহলে সংসারটা টিকে আছে। এরা তো সব গরু গাধা।
জ্বি।
আমার বাবা যখন মারা যান তখন আমার বয়স ২৩, এদের একটা ১০ আরেকটা ৮।
এত ছোট?
আমি পুরো কষ্টটা নিজের করে নিয়েছিলাম। সংসারের কোনো কষ্ট ওদের গায়েই লাগতে দেইনি। সেটাই ভুল হয়েছে। দুটোই হয়েছে বাস্তবজ্ঞানহীন।
আচ্ছা ওনারা আপনাকে এত ভয় পায় কেন?
কারণ আমি ওদের দেখলেই ধমক দেই। ধমক ছাড়া ওদের সঙ্গে কথাই বলতে পারি না। কিন্তু জানো বাইরে লোকের কাছে কিন্তু আমি মাটির মানুষ হিসেবে পরিচিত। লোকজন আমাকে জানে একজন ঠাণ্ডা মেজাজের মানুষ হিসেবে।
আপনি ওনাদের কাছে এসে থাকেন না কেন?
পারি না। চট্টগ্রামের বাইরে এলেই মনে হয় আমি যদি এখানে মরে যাই! চিটাগাংয়ের বাইরে কোথাও মরতে চাই না বলেই আমি চট্টগ্রাম ছাড়তে পারি না। এই তো কাজ শেষ হলে রাতেই রওনা হয়ে যাব। শেষটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ভাইজান রাতেই চলে যাবেন। যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শেষ হবে তত তাড়াতাড়ি। এখন রফিক একটু উৎসাহ বোধ করেন।
শেফালি কী একটা নিয়ে বেরোচ্ছিল। বলেন, শেফালি কাজ-কর্ম হয়েছে। কবিরাজ মানে ডক্টরকে ডেকে তুলব।
শেফালি একটু গলা নামিয়ে বলে, কাকা আপনারও চিকিৎসাটা করিয়ে ফেলেন না কেন?
আমার চিকিৎসা!
আপনি এখন অনেক ভালো। কিন্তু আমার মনে হয় এই মরিচের গুড়ার চিকিৎসা আপনারও একটু দরকার।
আমার চিকিৎসা কেন?
শেফালি হেসে বলে, তাহলে আপনি পুরো ভালো হয়ে যাবেন।
রতনের চিকিৎসাটা দেখে অবশ্য রফিকের মনে হলো এই চিকিৎসা করলে যে কেউ পুরো অসুস্থ হয়ে যাবে।
কবিরাজ পাইপ টানতে টানতে কীসব বলতে লাগল, কোন ভাষা ঠিক বোঝা যায় না। মরিচের গুড়ার ঝাঁঝ, কবিরাজের ওষুধের উৎকট গন্ধ মিলিয়ে একেবারে বমি এসে যাওয়ার জোগাড়। রতন বমিও করে ফেলল। শেফালি পরিষ্কার করতে যাচ্ছিল, কবিরাজ ইঙ্গিতে বাধা দিল। তার চোখ বন্ধ থাকায় সে দেখতে পাচ্ছে না, কিন্তু তাদেরকে এই দৃশ্য সহ্য করতে হচ্ছে। এই কয়দিন রতনের চেহারায় এক ধরনের বিষন্নতা লক্ষ্য করা গেছে, আজকেরটা চরম অসহায়ত্ব। রফিকের ইচ্ছা হলো ভাইজানের বিপক্ষে জীবনে প্রথমবারের মতো দাঁড়িয়ে যান। তিনি তো আর বাঘ-ভাল্লুক না যে খেয়ে ফেলবেন।
রফিক কিছু বলার আগেই শফিক বললেন, ভাইজান একটা কথা ছিল?
কী কথা?
আমার একটা জরুরী মামলার ফাইল দেখতে হবে।
তার চেয়ে জরুরী হলো ছেলের চিকিৎসার সময় বাবার উপস্থিত থাকা।
কবিরাজ এবার চোখ মেলে দৃশ্যটা দেখে বলেন, এখন শুরু হবে চিকিৎসা। সবাই তৈরি হয়ে যান। এখন জ্বীন চলে আসবে। তারপর এখানেই সে আত্মসমর্পন করে যাবে। এখানে কারও হার্ট দুর্বল আছে।
শফিক হাত তুললেন, আমার হার্ট খুবই দুর্বল। আর জ্বীন-ভুতরা আমাকে পছন্দ করে না।
ভাইজান ধমক দিলেন, জ্বীন-ভুতের সঙ্গে মনে হয় তুই প্রেম করতে গিয়েছিলি যে বুঝে গেছিস ওরা তোকে পছন্দ করে না। চুপ করে বস।
কিন্তু আমার হার্ট দুর্বল।
কবে থেকে? তোর হার্টের সমস্যা হলে আমি জানলাম না কেন?
শফিক যে কোনোভাবে এখান থেকে উঠতে চান। কিন্তু আর উপায় খুঁজে পান না। ছেলের জ্বীন ছাড়ানোর অসহ্য চিকিৎসা চলার সময় অন্য বাবারা কী করেন? কারো কাছ থেকে যদি জেনে নেয়া যেতো! কিন্তু অন্যরা তো এই সমস্যায় পড়ে না কেন? তিনি কেন এমন সমস্যায় পড়েন যেগুলো অভূতপূর্ব। জগতের অন্য মানুষরা বড় সমস্যায় পড়ে, সেগুলো নিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলা যায়, তার ক্ষেত্রে সবকিছু এমন অদ্ভুত কেন? তার বন্ধু-বান্ধবরা সব উকিল, বন্ধু হলেও তারা সব প্রতিদ্বন্দ্বী, তিনি সাহায্য চাইলে সেটা নিয়ে এমন হাসাহাসি করবে যে তার ফিল্ডই শেষ। যে দুযেকজন মক্কেল এখন তা-ও আসে এরাও তার চেম্বার মাড়াবে না। তখন চট্টগ্রামে ফিরে যাওয়া ছাড়া আর উপায় থাকবে না। এবং ফিরে গেলে বড় ভাইজান!
শফিক চোখ বন্ধ করে ফেলেন। বড় ভাইজান ধমক দেন, এই তুই কি ডক্টর নাকি, তুই চোখ বন্ধ করেছিস কেন?
চোখ খুলেই দেখেন, দুজন অচেনা লোক দাঁড়িয়ে। শফিকের কেন যেন মনে হয় এরাই এখান থেকে তাকে এবং তার ছেলেকে রক্ষা করতে পারে।
তাদের একজন কড়া গলায় বলল, এখানে কী হচ্ছে?
বড় ভাইজান আঙ্গুলের ইশারায় তাদেরকে থামতে বললেন। এ বাড়ির কেউ হলে এই ইশারাই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু এই লোকের কাছে বড় ভাইজান যা, শফিক-রফিকও তা।
লোকটি তার হাতের ইশারাকে পাত্তা না দিয়ে জানতে চায়, আপনাদের মধ্যে রফিক সাহেব কে?
রফিক বলে, আমি।
হু।
সেই লোকটি বলে, আমরা এসেছি রতনকে নিয়ে যেতে। তারপর কারো দিকে কোনো ভ্রƒক্ষেপ না করে রতনকে হাত ধরে নিয়ে এসে বলে, রতন তোমার যেসব প্রয়োজনীয় জিনিস আছে সেগুলো নিয়ে তুমি তৈরি হয়ে যাও।
রফিক বলেন, আপনাদের তো ঠিক! মানে…
দুপুরে আমাদের সেক্রেটারি এসেছিলেন। তার সঙ্গে রতন নিয়ে আমাদের একটা চুক্তি হয়েছে।
শফিক একটু অবাক, চুক্তি। কিসের চুক্তি!
ভাইজান ধমক দিয়ে বলেন, আবার কথার মাঝখানে কথা বলছিস। ভদ্রলোকদের কথাটা শুনতে দে। তা ভাই কিছু মনে করবেন না, আপনারা বলুন।
রতনকে আমরা ৫ লাখ টাকায় কিনেছি। এখন থেকে সে আমাদের সম্পদ। আমরা তাকে নিতে এসেছি।
আমাদের কাছে খবর আছে অন্য কেউ তাকে নিয়ে যেতে পারে। তাই আমরা তাকে আমাদের কাছে নিয়ে রাখব।
ফরিদা বলেন, কিন্তু চুক্তিতে তো এমন কোনো কথা ছিল না।
আপনারা হয়ত চুক্তিটা ঠিকমতো পড়েননি। এই যে কপি আছে। রতনের বাবা তো খুব সম্ভব আইনজীবী। উনি আপনাদের পড়ে ভালো করে বুঝিয়ে দেবেন।
বড় ভাইজান বলেন, কিন্তু চিকিৎসাটা শেষ করে গেলে ভালো হতো না। মাঝামাঝি পর্যায়ে আছি। অ্যান্টোনিও এত পরিশ্রম করল। বাই দ্য ওয়ে অ্যান্টোনিওর নাম বোধহয় আপনারা শুনেননি। আমি ছাড়া অবশ্য আর কেউ ওর গুনের কদর করে না।
লোকটি তাকে পাত্তা না দিয়ে বলল, এখন থেকে ওর অসুখ-বিসুখ চিকিৎসা সবই আমাদের দায়িত্ব।
শফিক আপত্তি করতে চাচিছলেন। ছেলেকে এভাবে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় বাবা তো আপত্তি করতেই পারে। আইনগত অধিকার। কিন্তু ছেলে চুক্তিবদ্ধ হয়ে গেলে বাবার কি করা উচিত? না। তিনি ঠিক ভেবে পান না। তিনি আশা করেছিলেন, ভাইজান নিশ্চয়ই কিছু একটা করবেন। কিন্তু ভাইজানের গলায় তেজ নেই কেন? তিনি বরং আপস-মীমাংসার দিকে যেতে চাচ্ছেন।
বড় ভাইজান বিগলিত গলায় বললেন, আপনারা ওকে নিয়ে যাবেন কোথায়?
এমনিতে আমরা খেলোয়াড়দের ক্লাব টেন্টে রাখি। কিন্তু রতনকে একটা হোটেলে রাখা হবে।
আমরা কেউ কি? মানে বুঝতেই পারছেন! মাত্র ১৪-১৫ বছর বয়স! বাড়ির বাইরে তো থাকেনি।
লোকটি একটু ভেবে বলে, ব্যবস্থাটা শুধু রতনের জন্য করা হয়েছে। তবে আপনাদের কেউ একজন গিয়ে দেখে আসতে পারেন তাকে কোথায় রাখা হয়েছে। আবার আমরাই ফিরিয়ে দিয়ে যাবো।
ভাইজান বলেন, কিন্তু এই এত রাতে না নিয়ে সকালে গেলে হয় না। রাতে আমি ওকে একটু বুঝিয়ে দিতাম কীভাবে কী করতে হয়। এই অপদার্থটা ওকে কিছুই শেখায়নি।
সেটা সম্ভব নয়। আমাদের কাছে খবর আছে অন্য কেউ তাকে হাইজ্যাক করে নিয়ে যেতে পারে। আমাদের সঙ্গে আপনাদের চুক্তি হয়েছে ঠিক, কিন্তু ওকে আমরা এখনও রেজিস্ট্রেশন করাইনি। কাজেই কেউ নিয়ে গেলে আমাদের বা আপনাদের বিশেষ কিছু করার থাকবে না। দুয়েকদিন তাই ওকে আমাদের হেফাজতেই থাকতে হবে। তারপর আর কোনো সমস্যা নেই। ও বাসায় থেকেই খেলতে পারবে।
রতন ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। তাকে ছেড়ে থাকার জন্য যে তার ছেলের কোনো আপত্তি নেই দেখে ফরিদার খুব মন খারাপ হয়। তার ধারণা ছিল রতন তাকে ছেড়ে যেতে চাইবে না, কান্নাকাটি করবে, তিনি বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাকে রাজী করাবেন! তার ভীষণ মন খারাপ হয়।
গাড়িটা চলা শুরু করার পর রফিক একটু অবাক হন। কারণ তার মনে হয় গাড়িটা শহরের দিকে না গিয়ে হাইওয়ে ধরে ঢাকার বাইরের দিকে যাচ্ছে। নিজের ধারণার ওপর তার খুব বিশ্বাস নেই। বহু বছর ঘর থেকে বের না হওয়াতে ঢাকা শহরকে তিনি খুব ভালো চিনতে পারেন না। তবু গাড়িটা যখন কাচপুর ব্রিজে উঠল, তখন তার মনে হলো এরা তাদের অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছে। কোথায়?
লোক দুটো কোনো কথা বলছে না। একজন গাড়িতে ওঠার পর শুধু কাকে যেন ফোন করে বলেছে, রতন এখন আমাদের কাছে। আমরা ওকে জায়গামতো নিয়ে যাচ্ছি।
রফিকের এখন মনে হলো, অনেকগুলো ভুল হয়ে গেছে। মোহামেডানের সেক্রেটারিকে একটু ফোন করে জেনে নেয়া দরকার ছিল এরা তাদেরই লোক কিনা! চুক্তির যে কপিটা দিয়েছিল সেটাও একটু দেখা উচিত ছিল। কী করবেন এখন?
সাহস সঞ্চয় করে বলেন, আচ্ছা আপনাদের না ওকে হোটেলে নিয়ে যাওয়ার কথা?
হোটেলেই তো যাচ্ছি।
কিন্তু আমরা তো ঢাকার বাইরে যাচ্ছি মনে হয়।
ঢাকার কোনো হোটেলে রাখব এমন কথা কি বলেছিলাম। লোকটা কেমন করে যেন হাসে।
রফিক রতনের দিকে তাকান। ওর কোনো ভাবান্তর নেই। কোনো ভীতি নেই। যেন যেখানে যাওয়ার কথা সেই জায়গাটা সে চেনে।

(চলবে…………………)

১,৬৬৬ বার দেখা হয়েছে

১১ টি মন্তব্য : “ম্যাজিক বয় – ০৫”

মওন্তব্য করুন : ফয়েজ (৮৭-৯৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।