বিজ্ঞান ও জনপ্রিয় বিজ্ঞান বিষয়ে আমার অবস্থান

প্রথমেই বলে নেই যে, এই লেখায় বিজ্ঞানের সংজ্ঞাটা নিয়েছি মূলত উইকিপিডিয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে। বিজ্ঞানের সিরিয়াস আলোচনায় শুধু সংজ্ঞা নিয়েই কেটে যেতে পারে কয়েক ঘন্টা। কিন্তু এই লেখাটা খুবই সাধারণ অর্থে বিজ্ঞানকে এবং এর সাথে তুলনা করে ‘জনপ্রিয় বিজ্ঞান’কে বোঝার একটা সরলীকৃত চেষ্টা মাত্র। আমি আগে কখনোই এই তুলনামূলক বিষয়টা সিরিয়াসলি নেই নাই। জনপ্রিয় বিজ্ঞানের প্রতি প্রথম আগ্রহ জন্মেছে মুহাম্মদের কাছ থেকে, তাই এই কৃতিত্ব ওরই। কিন্তু জ্ঞান, জনপ্রিয় জ্ঞান আর ক্ষমতা বিষয়ক আমার মতামত প্রকাশের পর দেখলাম যে, কেউ কেউ আমার মতামতকে বেশ খানিকটা ‘ভুল বুঝে’ ফেলে। আর তাই আমার মনে হয়েছে যে, আমার ধারনায় বিজ্ঞান আর জনপ্রিয় বিজ্ঞানের মধ্যকার পার্থক্য কি তা’ খোলাশা করে বলার সময় এসেছে।

বিজ্ঞান শব্দের সহজ বাংলা অর্থ হল “বিশেষ জ্ঞান”। তবে একাডেমিক বলয়ে বিজ্ঞানের দুইটা অর্থ প্রচলিত- এক, জ্ঞানার্জনের জন্য ‘সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি’ যা সাধারণভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নামে পরিচিত, এবং দুই, উক্ত পদ্ধতি অনুসরন করে আহরিত “জ্ঞান” যা’কে আমরা বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বলে জানি। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির একটা মূল বৈশিষ্ট্য হল এটা যেকোন প্রকার মতবাদ, ধর্ম, নীতি, আদর্শ নিরপেক্ষ। এর আলোচ্য বিষয় ‘কি হচ্ছে বা কি আছে তা’, অর্থ্যাত নিরেট-নির্মোহ-নিরাবেগ বাস্তব। আর এই পদ্ধতিগত কারণেই বৈজ্ঞানিক জ্ঞানও বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান। কি থাকা/হওয়া উচিত, কি থাকলে/হলে ভালো হত- এইসব তাই বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নয় (তবে এইসব বিষয়ে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়েজ আছে সাধারণভাবে আমরা যা’কে পলিসি বলে বুঝি; কিন্তু অনেক সময় পলিসি কাল্পনিক জ্ঞানের ভিত্তিতেও নেওয়া হয়ে থাকে)। বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের আরেকটা বৈশিষ্ট্য- পরীক্ষণযোগ্যতা (experimental)- যা একে ‘সত্য’ থেকে পৃথক করেছে।

‘জনপ্রিয় বিজ্ঞান’ বিষয়টা আমার কাছে একেবারেই নতুন। উইকিপিডিয়াতে খুঁজতে গিয়ে প্রথমেই একটা আর্টিক্যাল পেলাম যেখানে একে সাহিত্যের একটা ধারা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়াও এই ধারায় সাংবাদিকতা ও শর্টফিল্ম এর উল্লেখও রয়েছে। সাহিত্যের ধারা হিসেবে একে ‘বিজ্ঞান সাহিত্য’ হিসেবে বিবেচনা করা যায় (মুহাম্মদও মনে হয় এটাই বলেছিলো) যা’র মূল উদ্দেশ্য উইকি’তে বলা হয়েছে “সাধারণ পাঠকের/জনগণের জন্য বিজ্ঞানের ব্যাখা” করা। এই ধারার সাংবাদিকতা যেখানে নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের খোঁজ খবর জানায়, বিজ্ঞানসাহিত্য সেখানে (আরো বড় পরিসরে) তা সাধারণ জনগনের কাছে হাজির করে বই, টিভি প্রোগ্রাম, পত্রিকার আর্টিক্যাল, বা ওয়েবপেইজ এর মাধ্যমে।

বিজ্ঞানের সাথে জনপ্রিয় বিজ্ঞানের তুলনায় আমি ‘জ্ঞান হিসেবে বিজ্ঞান’ (science as knowledge)-কেই বেছে নিয়েছি, ‘পদ্ধতি হিসেবে বিজ্ঞান’ নয়।- এখন দেখা যাক, বিজ্ঞান আর জনপ্রিয় বিজ্ঞানের মধ্যে তুলনা করে কি পাওয়া যায়।

এক, বিজ্ঞান হচ্ছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরন করার মাধ্যমে বাস্তব তথ্যের বিশ্লেষনে প্রাপ্ত জ্ঞান। পদ্ধতিগত কারণেই এই জ্ঞান সব সময় ‘পরীক্ষণযোগ্য’।কিন্তু বিজ্ঞানসাহিত্যের বেলায় এই বৈশিষ্ট্য আরোপ করা কঠিন। কারণ, সাহিত্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে না, এটা অনুসরণ করে সাহিত্যের নিজস্ব পদ্ধতি। এর উদ্দেশ্যও ভিন্ন- বৈজ্ঞানিক জ্ঞান উতপাদন করা নয়, তা প্রচার করা। তাই, দুটোর ডোমেইন সম্পূর্ণ আলাদা।

দুই, বিজ্ঞানকে ভিত্তি করে বিজ্ঞানসাহিত্য রচিত হতে পারে, কিন্তু বিজ্ঞানসাহিত্যকে ভিত্তি করে কখনোই বৈজ্ঞানিক জ্ঞান রচিত হয়না। আর এই কারণেই বিজ্ঞানসাহিত্যকদের যে তালিকা দেখলাম উইকি’তে তা’তে লেখক, সাংবাদিক, প্রচারকর্মী, বিজ্ঞানলেখক (!), এমনকি ব্লগলেখকও পাওয়া গেলো বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি। কিন্তু বিজ্ঞানীদের কোন তালিকায় বিজ্ঞানী ছাড়া এইসব লোকজনকে পাওয়া অবাস্তব।

তিন
, বিজ্ঞান জনসাধারনের মাঝে পৌঁছে দেওয়াটা অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ, কিন্তু তা কখনোই বিজ্ঞানচর্চার থেকে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারেনা। কারণ, উপরের পয়েন্টেই দেখিয়েছি যে, বিজ্ঞানসাহিত্য বিজ্ঞানের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল, বিপরীতপক্ষে বিজ্ঞান একেবারেই বিজ্ঞানসাহিত্যের উপর নির্ভর করে না।- এই কারণেই উইকি’র বিজ্ঞানসাহিত্যিকদের তালিকায় গ্যালিলিও, নিউটন, আইনষ্টাইন সহ আরো অনেক খ্যাতনামা বিজ্ঞানীর নাম না পেয়ে আমি মোটেও অবাক হইনি।

চার, যেহেতু বিজ্ঞানসাহিত্যের লক্ষ্য হল বিজ্ঞানকে সাধারণের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া, তাই এর পদ্ধতিও সেই লক্ষ্যেই নির্ধারণ করা হয় বা হওয়া উচিত। সেই পদ্ধতিটা কি? সেটা অবশ্যই বৈজ্ঞানিক জ্ঞান উতপাদনের পদ্ধতি নয়, তা’ প্রচারের পদ্ধতি। কাজেই, বিজ্ঞানসাহিত্যের পদ্ধতি অনুসরণের ‘ফলাফল’ নতুন কোন বৈজ্ঞানিক জ্ঞান উতপাদন নয়, কোনভাবেই। অর্থ্যাত, “প্রচার” বৈজ্ঞানিক জ্ঞান উতপাদনের সাথে কোনমতেই সম্পর্কিত নয়। কিন্তু প্রচারের ফলাফল ত একটা আছে, সেটা কি? ‘সফল’ প্রচারের ফলাফল হল ‘জনপ্রিয়তা’ (লক্ষ্যনীয় “সফল প্রচার”)। কাজেই, জনপ্রিয়তাও বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত নয়।

বিজ্ঞানসাহিত্যের এই জনপ্রিয়তা বিশেষ সেই বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের যা’র উপর ভিত্তি করে সেই বিজ্ঞানসাহিত্যের জন্ম হয়েছে+যিনি সেই জ্ঞান আবিষ্কার করেছেন। পাশাপাশি অবশ্যম্ভাবীরূপেই জনপ্রিয়তা পায় সেই সাহিত্যিক+তার পৃষ্ঠপোষক।

বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানসাহিত্যের (জনপ্রিয় বিজ্ঞান) এই যে তুলনামূলক সম্পর্কটা আলোচনা করলাম, তা’ সমীকরণ আকারে লিখলে যা পাওয়া যাবে, তা নিম্নরূপঃ

(১) বাস্তব তথ্য+বিজ্ঞানী+বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি= বিজ্ঞান
(২) বিজ্ঞান+বিজ্ঞানসাহিত্যিক (বিজ্ঞানী+সাহিত্যিক+পৃষ্ঠপোষক)+ প্রচার পদ্ধতি= বিজ্ঞানসাহিত্য

-এখানে লক্ষ্যনীয় যে, বিজ্ঞানে অবদানের ক্ষেত্রে পুরো কৃতিত্বই যাচ্ছে বিজ্ঞানীর ঘরে, কিন্তু বিজ্ঞানসাহিত্যে তার সাথে ভাগ বসাচ্ছে আরো কিছু ব্যক্তি+প্রতিষ্ঠান।

আমার বক্তব্যে আমি শুরু থেকেই বোঝানো চেষ্টা করেছি যে, বিজ্ঞান আর জনপ্রিয় বিজ্ঞান আলাদা বিষয়, এদের কনটেন্ট একই রকম মনে হলেও পদ্ধতি+ফলাফলসমূহ (end result) আলাদা। আর জনপ্রিয় বিজ্ঞানের এই ফলাফলসমূহের মধ্যে একটা সম্ভাব্য ফলাফল হল ‘ক্ষমতা’ । এই বিষয়টা বোঝার জন্য আমাদেরকে দৃষ্টিপাত করতে হবে পদ্ধতির উপর। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ফলাফল একটাই- ‘বৈজ্ঞানিক জ্ঞান’। কিন্তু প্রচার পদ্ধতির ফলাফল একটা নয়, অনেক; তার মধ্যে একটা হচ্ছে ক্ষমতা। power/khowledge-এর প্রেক্ষিতে এই ক্ষমতার স্বরূপ প্রকাশিত হয় ।

– প্রচার-প্রকল্প সফল হওয়ার একটা পূর্বশর্ত হচ্ছে ক্ষমতা’র অংশগ্রহন। এইখান থেকেই আমি বলেছিলাম যে, “ক্ষমতার অনুকম্পা ছাড়া ইতিহাসে কোন মতবাদ+জ্ঞানের জনপ্রিয় হবার নজীর নেই।”- এখানে আমি জ্ঞানের জনপ্রিয় হবার কথা বলছি, জ্ঞান আহরন বা উতপাদন নয়। এটা কারো মানতে কষ্ট হলে ইতিহাস দেখতে অনুরোধ করছি। আমি ভুল বলে থাকলে আমিও নিজেকে শুধরে নিই। এইখানে আমি প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার (Disciplinary Power) কথা বলছি, কোন ব্যক্তির নয়। কারণ, প্রচার মূলত একটা সামষ্টিক বিষয়, ব্যক্তিগত নয়।

২,৪৪১ বার দেখা হয়েছে

২৪ টি মন্তব্য : “বিজ্ঞান ও জনপ্রিয় বিজ্ঞান বিষয়ে আমার অবস্থান”

  1. জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)

    আপনার এই পোস্ট পড়ে অনেকটা পরিস্কার হলো আপনার আগের পোস্ট। বোঝা গেল বিজ্ঞান ও জনপ্রিয় বিজ্ঞানের পদ্ধতি আলাদা তাই এদের ফলাফল আলাদা। কিন্তু, একটা জিনিষ এখনও পরিস্কার নয় আপনার আগের পোস্টের উপসংহার কি ছিল? আপনার প্রস্তাব কি ছিল? যে, বিজ্ঞানের জনপ্রিয়করণ নিস্প্রয়োজনীয়? হয়তোবা না? তাহলে কি?

    জবাব দিন
  2. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
    আপনার এই পোস্ট পড়ে অনেকটা পরিস্কার হলো আপনার আগের পোস্ট।

    ভালো লাগল 🙂 ।

    বিজ্ঞানের জনপ্রিয়করণ নিস্প্রয়োজনীয়

    না, এটা নয়। শুধু এটাই যে, প্রচারের মধ্যে ক্ষমতার প্রশ্নটা জড়িত। এর থেকে বেশি কিছু নয়, কোনভাবেই না। কাজেই, আমার আলোচনায় আর কোন কিছু খুঁজে পাওয়া যাবে না। যেমন, ক্ষমতা ভালো/খারাপ, প্রচারক ক্ষমতা-লোভী/নিঃস্বার্থ, প্রচার করা উচিত/অনুচিত, ইত্যাদি।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
    • জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)
      শুধু এটাই যে, প্রচারের মধ্যে ক্ষমতার প্রশ্নটা জড়িত।

      আচ্ছা, এটা তাহলে আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? আমিও একমত যে জড়িত। কিন্তু, এটাতো কিছু বলছে না আমাদের? কোন উপসঙহারে পৌছতে তো সাহায্য করছে না? আপনি বলছেন বিজ্ঞানের প্রচার একটি ক্ষমতার জন্ম দেয়, হ্যা সেটাতো দেয়ই আমরা দেখতেই পাচ্ছি। বস্তুত আপনার ঐ পোস্টটি দেওয়ার উদ্দেশ্য এটা পরিষ্কার করছে না। বিশেষত, বিজ্ঞানের প্রচারকে একধরণের সাম্রাজ্যবাদ আখ্যা দিয়ে আমার মনে হচ্ছিল আপনি মুহাম্মদকে হালকা হেদায়েতের চেষ্টা করছিলেন। আপনি উপদেশ দিয়েছেন জ্ঞানের প্রচার না করে জ্ঞানের চর্চা করতে। খুবই ভালো কথা। তাহলে কি প্রচারের কোন দরকার নাই? বা যে কষ্ট করে প্রচার করছে তার কোন ক্রেডিট নাই? অনেকটা বুঝলাম, তবে এখনও সংশয়ে আছি।

      জবাব দিন
      • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
        বস্তুত আপনার ঐ পোস্টটি দেওয়ার উদ্দেশ্য এটা পরিষ্কার করছে না। বিশেষত, বিজ্ঞানের প্রচারকে একধরণের সাম্রাজ্যবাদ আখ্যা দিয়ে আমার মনে হচ্ছিল আপনি মুহাম্মদকে হালকা হেদায়েতের চেষ্টা করছিলেন।

        তোমার এই মন্তব্যে আমি একটু মাইন্ড করছি, বলে কয়েই। তোমার সমস্যা হচ্ছে, তুমি মনে করে বসে আছো যে তুমি অলরেডি সব জেনে বসে আছো। কাজেই তোমার যথেষ্ট যোগ্যতা হয়ে গেছে যেকোন কিছুকেই 'পুরোটা-না-পড়েই' নিজের মতো করে 'কল্পনা করে' সেটার সম্পর্কে মন্তব্য+জাজমেন্ট করার। আর তারই সর্বশেষ উদাহরন হল তোমার এই মন্তব্যটা। এবার আমার উত্তরটা শোনো,

        -আমি মুহাম্মদকে অবশ্যই হেদায়েত করতে চেয়েছিলাম, তবে সেটা কেন তা-ও আমার পোষ্টে স্পষ্ট করেই উল্লেখ করেছি (মন্তব্য+প্রতিমন্তব্যের নিচের দিকে)। মুহাম্মদ ফুকো'র বরাত দিয়ে আমার একটা মন্তব্যের বিরোধীতা করায় আমি ওকে দেখাতে চেয়েছি যে, ফূকো সম্পর্কে ওর ধারণা ঠিক নয়, তা-ও সে জানতে চেয়েছিলো বলেই। সেখান থেকেই আমার যাবতীয় নসিহত। তুমি কেনো আমার উদ্ধৃত মুহাম্মদের সেই কমেন্টটা দেখতে পেলে না সেটা বুঝতে পারলাম না।

        কাজেই, কথাবার্তা আরেকটু ভালো করে দেখে-বুঝে-চিন্তা-ভাবনা করে বলো।


        There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

        জবাব দিন
        • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
          আপনি উপদেশ দিয়েছেন জ্ঞানের প্রচার না করে জ্ঞানের চর্চা করতে।

          এই প্রসঙ্গও উঠেছিল। এটা যে ভুল ছিল সেই জবাবও আমি দিয়েছি, আমার পোষ্টেই।


          There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

          জবাব দিন
        • জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)
          তোমার এই মন্তব্যে আমি একটু মাইন্ড করছি, বলে কয়েই।

          আমি দুঃখিত, আপনাকে আঘাত করতে চাইনি। আপনি যেই উক্তিটির জন্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন বুঝতে পারিনি যে এটা আঘাত দিয়ে থাকবে। ক্ষমা চাচ্ছি।

          তুমি মনে করে বসে আছো যে তুমি অলরেডি সব জেনে বসে আছো। কাজেই তোমার যথেষ্ট যোগ্যতা হয়ে গেছে যেকোন কিছুকেই ‘পুরোটা-না-পড়েই’ নিজের মতো করে ‘কল্পনা করে’ সেটার সম্পর্কে মন্তব্য+জাজমেন্ট করার।

          ermm... না এটা ঠিক না, বস্তুত ২৩ বছর বয়সে একটা ছেলের যে কোন যোগ্যতাই হয়না এটা আমি শুধু অংক করেই বুঝি। পুরোটা না পড়ে মন্তব্য করিনি। এমনকি আমি বলেওছি যে, আমি মনে করি। আমার উক্তি কোন জাজমেন্টাল উক্তি ছিলো না, সেটা ছিলো একটা হাইপোথেসিস।

          কথাবার্তা আরেকটু ভালো করে দেখে-বুঝে-চিন্তা-ভাবনা করে বলো।

          আপনার উপদেশ গুরুত্বের সাথে গ্রহন করছি, আবারও বলছি আঘাত দিতে চাইনি, দিয়ে থাকলে দুঃখ প্রকাশ করছি।

          জবাব দিন
          • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

            পুরোটা না পড়ে মন্তব্য করিনি।

            - তাইলে ত দেখতে পারার কথা ছিল যে, এক্কেবারে এই প্রশ্নগুলাই (বিজ্ঞানপ্রচারকে সাম্রাজ্যবাদ বলা+মুহাম্মদকে প্রচার ছাড়ার উপদেশ দেওয়া) করেছিলো/ছিলেন মুহাম্মদ নিজে+আরো কয়েকজন। আর তাদের মন্তব্যের উত্তরে আমি আমার বক্তব্য স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি। তারমানে, এই হাইপোথিসিস ত 'নালিফাইড' হয়েই আছে আমার 'ঐ পোষ্ট' ও তার আলোচনায়। তাইলে আবার কেন? 🙂

            আমার এমনিতেই মনটা খারাপ ছিলো, তাই তোমার কথাতে মাইন্ড করে ফেলেছিলাম।- এটা ভুলে যেও।


            There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

            জবাব দিন
  3. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    পড়ে ভাল লাগল। আমি এখন বিষয়টা খুব সাধারণভাবে বুঝি:

    বিজ্ঞান হল সঠিক পদ্ধতিতে জ্ঞানের চর্চা করা।
    জনপ্রিয় বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানসাহিত্য হল সেই বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং ফলাফলের সমঝদারি।

    এতে কোন সন্দেহ নেই যে, সমঝদারি না থাকলে কোনকিছুর বিকাশ ঘটে না। গ্রিক যুগের পর থেকে অনেকটা সময় মানুষ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াকে অবহেলা করে এসেছে, এই প্রক্রিয়ার কোন সমঝদারি না থাকায় এরিস্টটল-প্লেটোদের জ্ঞানের সংশোধন হয়নি। আধুনিক যুগের দোরগোড়ায় এসে বিজ্ঞান আবার সমঝদারি পেয়েছে।

    সমাজের সচ্ছল ও অবসরভোগী শ্রেণীর সমঝদারি ছাড়া যেমন শিল্পের বিকাশ ঘটে না, তেমনি একটি সমঝদারি শ্রেণী ছাড়া বিজ্ঞানের বিকাশও ঘটে না। যে সমাজের সকলে জন্মের পর অন্ধবিশ্বাস আর অতীতকে আঁকড়ে ধরে থাকায় অভ্যস্ত হয়েছে সে সমাজে বিজ্ঞানের বিকাশ কম হবে। আর যে সমাজের মানুষেরা ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানসাহিত্যের মাধ্যমে জ্ঞানান্বেষণ চালিয়ে যাওয়ার শিক্ষা পাবে সে সমাজে বিজ্ঞানের বিকাশ বেশী হবে।

    এবার জ্ঞান ও জনপ্রিয় জ্ঞানের তুলনার বিষয়ে আসা যাক। আসলে এ দুটোর মধ্যে কোনটা বস এ আলোচনা নিরর্থক। কারণ বিজ্ঞানসাহিত্য নিজেকে বিজ্ঞানের প্রতিপক্ষ হিসেবে হাজির করেনি বরং সহযোগী হিসেবে উপস্থাপন করেছে।

    যিনি আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা সবার বোঝার উপযোগী করে লিখেন তিনি কিন্তু, নিজে কত বস সেটা প্রমাণের জন্য লিখেন না। বরং আইনস্টাইন কত বস ছিলেন সেটা বোঝানোই থাকে তার মূল উদ্দেশ্য। আইনস্টাইন মানবজাতির অংশ হয়ে থাকবেন কারণ তিনি সমঝদার পেয়েছিলেন। অনেকে জীবিত অবস্থায় সমঝদারি পান না, যেমন মেন্ডেল।
    তাই জ্ঞান ও জনপ্রিয় জ্ঞানকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো ঠিক না।

    ক্ষমতার অনুকম্পা ছাড়া ইতিহাসে কোন মতবাদ+জ্ঞানের জনপ্রিয় হবার নজীর নেই।

    অ্যামেরিকার ইতিহাসে সবচয়ে জনপ্রিয় বিজ্ঞান জনপ্রিয়কারক ছিলেন কার্ল সেগান। তার চেষ্টায় জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনেক তত্ত্ব সাধারণ মানুষের বোধগম্য হয়েছে। আর এই জনপ্রিয়করণের কারণেই বর্তমানে জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণায় অনেকের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। খুব সোজা হিসাব:
    - এসব গবেষণায় ফান্ডিং দেয়ে সরকার
    - সরকার ভোট বাচানোর জন্য জনগণ বিরূপ হয়ে এমন কিছু করতে চায় না
    - তাই অনেক ব্যয়বহুল বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সরকার যখন অর্থ দেবে তখন তাকে জনগণের দিকে তাকাতেই হবে
    - যে দেশের জনগণ বিলিয়ন ডলারের বৈজ্ঞানিক প্রজেক্ট দেখলেই বলে উঠে দেশের সব মানুষ এখনও তিন বেলা খেতে পারে না, আর তুমি আলতু ফালতু কাজে এত টাকা খরচ করছ- সে দেশে গবেষণা হবে না এটাই স্বাভাবিক

    কার্ল সেগানদের এই প্রচেষ্টার পেছনে মার্কিন সরকার বা সেখানকার কোন ক্ষমতাশালী কর্তৃপক্ষের হাত ছিল বলে জানি না। এমনকি নাসাও তাকে তেমন সাহায্য করেনি। তার স্ত্রী অ্যান ড্রুয়ান ছিলেন প্রডিউসার। দুজনে মিলেই টেলিভিশনে নিয়শিত বৈজ্ঞানিক ডকুমেন্টারি করা শুরু করেন। এ কালে টিভিতে বৈজ্ঞানিক ডকুমেন্টারির প্রসারের পেছনে তাদের অবদানটাই মুখ্য।
    বর্তমানে এ ধরণের জনপ্রিয় করণের পেছনে কোন ক্ষমতার অনুকম্পা ছিল বলে আমি দেখিনি।

    আমি অবশ্যই মানি অনেক জ্ঞান জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে ক্ষমতার অনুকম্পা এবং স্বার্থ কাজ করে। কিন্তু তাবৎ জনপ্রিয় জ্ঞানকে এই কাতারে ফেলে দিয়ে মাহমুদ ভাই বিশাল সাধারণীকরণ করেছেন বলে মনে হল।

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      মুহাম্মদ, তোমাকে দেখে ভালো লাগল। আমি বিজ্ঞানকে মোটেও জনপ্রিয় জ্ঞানের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড় করাচ্ছি না। কিন্তু দুটোর পার্থক্য আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, আর কেন গুরুত্বপূর্ণ সেটাই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি। এখন তোমার মন্তব্যের কিছু অসামঞ্জস্য দেখিয়ে দেই,

      এক, তুমি বিজ্ঞানের দুইটা অর্থের মধ্যে একটাকে ধরে শুরু করছো যেটা জনপ্রিয় জ্ঞান না, তা'র প্রচারের সাথে তুলনীয়। জনপ্রিয় জ্ঞানকে আমি তুলনীয় মনে করি বিজ্ঞান (as knowledge)এর সাথে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি'র সাথে না; বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাথে তুলনা হবে জনপ্রিয় জ্ঞান প্রচারের।

      দুই, বলছো বিজ্ঞান 'স্বচ্ছল+অবসরভোগী' শ্রেনীর সমঝদারি ছাড়া বিকশিত হয় না। এখানে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টাই তোমার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে যা হলো 'সমাজকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতা'। অর্থ্যাত, তারা সমাজে প্রভাবশালী বা ক্ষমতাবান। তাছাড়া, বলেছো যে, আমেরিকার সরকার গবেষণায় ফান্ড দেয়। সরকার কে কোন শ্রেণীর মধ্যে ফেলবে? ক্ষমতাই ত সরকারের ডিফাইনিং বৈশিষ্ট্য।

      তিন, কার্ল সেগানের উদাহরণ দিয়ে ভালোই করেছো। তার যদি কোন কৃতিত্ব থাকে বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণে (আমি এই বিষয়টা আসলে একেবারেই জানি না), তাহলে তাকে বিজ্ঞান প্রচারক হিসেবে সেই কৃতিত্ব দিতে আমি কোন সমস্যা দেখিনা। কিন্তু তার সেই প্রচার-প্রকল্প কি ব্যক্তিগত প্রয়াস, না সমষ্টিগত? আমি শুরু থেকেই বলে আসছি যে প্রচার একটা সমষ্টিগত প্রয়াস, তুমি সেটা একেবারেই মানতে চাইছো না।(আমি মনে হচ্ছে, এখানে তোমার বিশ্বাসী মন বিজ্ঞানমনষ্ক মনকে হারিয়ে দিচ্ছে)। আরেকটা বিষয়, মনে হচ্ছে তুমি ক্ষমতা'কে খারাপ অর্থে নিচ্ছো, যা আমি কখনোই বলিনা, বলনি, এবং বলবোও না (এর মানে আবার এই না যে ক্ষমতাকে ভালো বলছি, ভালো/খারাপের আলোচনাই না এটা)।

      'ব্যক্তি বিজ্ঞান প্রচারকের' সাথে অন্য যারা প্রচার-প্রকল্পে অংশ নেয় তাদের মোটিভগুলো দেখা যাক,- সরকার যেমন ভোটের জন্য বিজ্ঞান গবেষণার অর্থ দেয়(কপিরাইটঃ তুমি), টিভি-চ্যানেলও দর্শকের জন্য ডকুমেনণ্টারী প্রচার করে, কোন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান সামাজিক দায়/সুনামের জন্য সেইসব অনুষ্ঠান+বই প্রকাশকে স্পন্সর করে, প্রকাশক প্রফিটের জন্য সেই বই প্রকাশ করে। - এইভাবে দেখা যায়, প্রচারে একেক প্রতিষ্ঠানের একেক উদ্দেশ্যে থাকে, যা'র সফল পরিসমাপ্তি ঘটে সেই সেই উদ্দেশ্যের সাধনে। যেমন, জনগণের ভোটের কথা মাথায় রেখে গবেষনা-ফান্ড দিলে ভোট মিলবে, ফলে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে; ডকুমেন্টারী প্রচার করে তা জনপ্রিয় হলে সেই টিভি-চ্যানেলের দর্শক বাড়বে, তা'তে সেই চ্যানেলের ব্যবসা+সুনামের টিভি-জগতে প্রভাবও বাড়বে; বই জনপ্রিয় হলে প্রকাশকের মুনাফা+ব্যবসায়িক সুনাম বাড়বে, সাথে প্রকাশনা জগতেও অবস্থান দৃঢ় হবে।

      দেশের প্রেক্ষিতে বলি, গণিত প্রতিযোগীতার সাফল্যে বিজ্ঞান হিসেবে গণিতের প্রচার হয়েছে, কিন্তু সেই সাথে প্রথম আলো'রও একটা ভালো বিজ্ঞাপণ হয়েছে, আর তা'তে সংবাদপত্রের জগতে তা'র অবস্থান আরো দৃঢ় হয়েছে। তার সহজ মানে হচ্ছে, অন্যান্য পত্রিকার তুলনায় সেই জগতে প্রথম আলো'র ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

      জনপ্রিয় করণের পেছনে কোন ক্ষমতার অনুকম্পা ছিল বলে আমি দেখিনি।

      ব্যক্তিগত বিশ্বাসের কারণে তুমি একটা জিনিস নাও দেখতে পারো, সেটা বিশ্বাসের ব্যাপার। কিন্তু বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান+পদ্ধতি প্রমাণ দাবী করে। - এখন ব্যক্তিগত বিশ্বাস ধরে থাকা না থাকা তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। প্রচারের ব্যাপারটাকে আমি কখনোই বিজ্ঞান বা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাথে এক করে দেখতে চাইনা, এমনকি বিজ্ঞানের ডোমেইনের মধ্যেই না।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  4. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    তাইলে এই বিষয়ে বিতর্ক শেষ? সফল পরিসমাপ্তি? :clap: :clap: :clap:

    আমি ভাবতাছি কিছু প্যাচ লাগাবো কিনা!! ~x( দেখা যাক। সময় পাইলে!! 😉


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  5. মোস্তফা (১৯৮৮-১৯৯৪)

    বিজ্ঞানের অবদান কে অস্বীকার করবে এমন কেউই নেই। বিজ্ঞান সাহিত্য একটা নুতন দিক হলেও আমি দেখি যে এর অবদানও কম নয়। অনেকেই বিজ্ঞান কে ভয় পায়। তাই তারা সহজ ভাষায় বিজ্ঞান জানলে তাদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। অনেকেই অংক ভয় পায় কিন্তু পাজল্‌ সল্ভ করতে করতে অংক ভীতিটা ধুর হয়ে যায়।

    মুহাম্মদের কথাতেই যদি বলি তারা একে অপরের সহযোগী, প্রতিযোগী নয়। তবে মুহাম্মদের প্রতি একটি ব্যাক্তিগত অনুরোধ হল অনুবাদের চেয়ে ভাবান্তর যদি করো তাহলে সেটা আরো বেশী উপযোগী হবে বলে আমার মনে হয়। অনুবাদের ফলে মুল কথা ঠিক থাকে কিন্তু মুল ভাব অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়। তাই মুল ভাবটা বুঝে, সেটা ঠিক রেখে অনুবাদটি করতে পারো। তাতে তোমার নিজের বুঝাটাও ভাল হবে সেই বিষয়ের উপর। ভাল ভাল লেখাগুলোর অনুবাদ যত বেশী বেশী হবে, তত আমাদের বাংলা ভাষার বই সমৃদ্ধ হবে। সেই দিক দিয়ে তোমার পরিশ্রম প্রসংসার দাবী রাখে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : স্বপ্নচারী (১৯৯২-১৯৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।