আমি ভালো আছি।
– সত্যি?
– হুম, খুব ভালো আছি তো!
– কিভাবে সম্ভব এই লক-ডাউনের মধ্যে ভালো থাকা?
– আসলে আমি ভালো নেই। মানে বলতে চাইছি, ভালো থাকার উপায় নেই। তবে ইচ্ছেটা আছে প্রবল। চেষ্টাও। তাই বলেছি ভালো আছি। সকলকেই বলি ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ্।
আছি কাতারের রাজধানী দোহায়। ২০১৫ সালের আগস্টে এসেছি বউ-জামাই দুজন। এখন হয়েছি তিনজন, আমাদের তিন বছরের কন্যা আফরিনকে নিয়ে। একটা এপার্টমেন্ট বিল্ডিঙের ৩৮ তলায় থাকি। দোহা এয়ারপোর্টে প্লেন ওঠানামা করার সময় সমুদ্রের তীর ধরে সারি সারি যে আকশচুম্বি অট্ট্রালিকাগুলো দেখা যায়, ঐগুলার একটা। বসার ঘরটা সমুদ্র-মুখী। ঠিক নিচেই অনেকগুলো দূতাবাস। আর সামান্য কিছুটা দূরে একটা দারুণ বাড়ি। শুনেছি, আমীরের বড়পক্ষের।
পড়াই নর্থওয়েস্টার্ণ বিশ্ববিদ্যাল-কাতার এ। আর সব স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমারটাও বন্ধ। অনলাইনে পড়ানোর ভাণ চলছে। অনেকেই খুব খুশি অনলাইনে পাঠদান নিয়ে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় তামাশা। ঠিক ডিজনীল্যান্ডের মতো। স্বপ্নের মতো সবকিছু। কিন্তু স্বপ্ন ত স্বপ্নই। বাস্তব অনুপস্থিত। Baudrillard ঠিকই ধরেছিলেন যে, বাস্তবকে হত্যা করা হয়েছে। ঠিক। পড়ানো যে একটা শিল্প, এমনকি একটা বাস্তবিক শেখা+শেখানোর প্রক্রিয়া, সেইখানে বাস্তব প্রবলভাবে অনুপস্থিত। আমি আমার পড়ার ঘরে। আমার ছাত্র-ছাত্রিরা তাদের মতো নিজ নিজ বাড়িতে। কে, কোথায়, কোন অবস্থায় ভার্চুয়াল-ক্লাসে অংশ নিচ্ছি, তা বোঝার নিশ্চিত কোন উপায় নাই। এমনকি সকলে ঠিকমত অংশ নিচ্ছে কিনা সেটাও জানার+বোঝার কোন উপায় নাই। শুধু এইটুকু নিশ্চিত যে, আমরা সকলেই- শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীগণ- ক্লাস চালিয়ে নিতে ইচ্ছুক এবং সচেষ্ট। সকলের নিয়ৎ সহিহ (দায়িত্বশীল নাগরিকতা, হুম)। সমন্বিতভাবে আমরা সকলে এই ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছি যে, আমরা নিয়মিত পড়াশোনা (এবং একইভাবে, অন্যান্য সামাজিক কাজকর্মও) চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা নির্ধারিত পরিমাণ সময় ক্লাসে থাকছি। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী সেমিস্টার শেষে একটা নির্দিষ্ট গ্রেড দরকার। এইটুকু হলেই বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করতে পারবে যে, শিক্ষার্থীরা নিয়মমাফিক নির্দিষ্ট পরিমাণ সময়ঘন্টা ব্যয় করে নির্ধারিত পরমাণ ক্রেডিট অর্জন করেছে। কারণ, প্রোগ্রাম শেষে তাদেরকে ডিগ্রী দেওয়ার একটা শর্ত এইটা।
মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবির জীবন। থাকার নিশ্চয়তা আছে। খাওয়া-দাওয়ারও। সামাজিক-দূরত্বের কালে ইন্টারনেট, জুম, নেটফ্লিক্সসহ আর যা কিছু দরকার তার প্রায় সবকিছুই আছে। তবু কি একটা নেই। ঠিক কি যেন নেই। সবকিছুই বাস্তব। সবকিছুই চেনাজানা। অথচ কিছুই যেন নেই।
আসলে বাস্তবে বাস্তবতাটাই নেই। সবকিছু চলে গেছে পরাবাস্তবে (hyperreal)।
তাই, ভালো আছি।
ভালো থাকার চেয়েও ভালো।
সিসিবি’র ভাই-বোনেরা,
আপনারা সব কেমন আছেন?
ভাল নেই, ভাই!
ভীষণ অস্বস্তির ও অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটছে।
সবসময় মৃত্যুভয় কাজ করছে।
নিজের জন্য না, পরিচিত বা আপন কারও...
সে এক ভয়ঙ্কর অনুভূতি! 🙁
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
জুনা,
মানসিক অবস্থা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। গতকাল সন্ধ্যায় সিসিবি আড্ডায় অন্যান্যদের সাথে তোমাকে দেখে অনেক অনেক ভালো লেগেছে।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
ভাল নেই। মনে হচ্ছে, দুঃস্বপ্নের ঘোরে আছি।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
ভাই,
আপনে ভালো না থাকলে চলেবে ক্যেমনে?
মন ভালো করা কিছু লেখা দেন সিসিবি'তে। সময়টা ভালোর দিকে এগিয়ে যাক।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আমরা কেউ ভালো নেই। ভালো থাকার অভিনয় মাত্র।
ভালো নেই, সবমিলিয়ে যেন এক....জীবন পার করছি ।
"যা কিছু দরকার তার প্রায় সবকিছুই আছে। তবু কি একটা নেই। ঠিক কি যেন নেই।" - এই হাহাহকার যেন আজ সর্বগ্রাসী!
তবুও, এর মাঝেও, লকডাউনের ইতিবাচক দিকগুলোকেও খুঁজে নেয়া যেতে পারে। এতে হতাশা কমবে, ভরসা বাড়বে।