শেষের থেকে শুরুঃ এই আমি

There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx (Preface to the French Edition of Das Capital, 1872).

সিসিবিতে আজ আমার নিজের কথা বলবো, আকাশ ছুঁয়ে ফেলার যে স্বপ্নটা দেখা শুরু করেছিলাম ১৯৯৬-এর দিকে, সেই স্বপ্নের কথা।

সিসিআর থেকে পাস-আউটের পর আর সব ক্যাডেটের মতোই হঠাৎ করে পাওয়া স্বাধীনতার মাঝে খাবি খেতে থাকলেও মনের মধ্যে জন্মানো সমাজ পাঠের আকাঙ্ক্ষাটি কখনো হারিয়ে যায়নি। হাসান স্যারকে দেখে দেখে এই ইচ্ছেটা সিসিআরেই বেশ শক্তপোক্ত হয়ে উঠেছিল। আর তাই পরিবারের সকলের প্রবল আপত্তির মুখেও শুধুমাত্র মায়ের সমর্থন আর গোপন প্রশ্রয়ে ঢাবিতে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়া। সমাজবিজ্ঞান পড়ার তেমন কোন ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল না, শুধু সিসিআরের লাইব্রেরীতে মার্ক্স-এঙ্গেলস রচনাবলীর বঙ্গানুবাদ কয়েক খন্ড আর সিরাজুল ইসলাম, ফজজুল করীম, আহমদ শরীফ, মোতাহের হোসেন, প্রমূখের কিছু প্রবন্ধ। ঢাবিতে চার বছরের সম্মান কোর্সের আমরাই ছিলাম প্রথম ব্যাচ। রেজাল্ট দিতে দেরী, বন্যা, আর ছাত্রলীগ+ছাত্রদলের দখলবাজীর মধ্য দিয়ে অনার্স আর মাষ্টার্স মিলিয়ে পাঁচ বছরের স্থলে সাত বছর চলে গেল। এতে অবশ্য আমার জন্য ভালোই হয়েছিল- সিলেবাসের পড়া শেষ করে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে গিয়ে পড়তাম আমেরিকান সোসিওলজিক্যাল রিভিউ, আমেরিকান জার্নাল অব সোসিওলজি, বৃটিশ জার্নাল অব সোসিওলজি, কন্টেম্পোরারী সোসিওলজি সহ আর কয়েকটা বিদেশী জার্নাল এবং ঢাবি থেকে প্রকাশিত কয়েকটা জার্নাল। ক্যাডেট আর নন-ক্যাডেট বন্ধুদের সাথে আড্ডাও পাশাপাশি চলছিল সমান তালে। অনার্সে হলাম প্রথম শ্রেণীতে ৩য়, আর মাষ্টার্সে ২য়। তবে আমি জানতাম যে ১ম স্থানটি আমি পাইনি আমার মেধা বা পরিশ্রমের ঘাটতির জন্য নয়। আমার এই আত্মবিশ্বাস যে ভুল ছিলনা তা’র প্রতিফলন দেখেছিলাম ২০০৫-এ ফুলব্রাইট আর মনবুশো- দুই বৃত্তিই পেয়ে, যেখানে আমার ডিপার্টমেন্টের টিচাররা মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার বাইরে ছিলেন।

স্বপ্ন ছিল আমেরিকার এবং সেই সাথে বিশ্বের সেরা কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করবো। বাংলাদেশে ফুলব্রাইট বৃত্তি শুধুমাত্র মাস্টার্স কোর্সের জন্য, তাও আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে অখ্যাত আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে। এটা জেনেছিলাম আমার আগের চার বছরের ফুলব্রাইট স্কলারদের কাছ থেকে। তাই টোকিওর সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্লোবাল স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হলাম মনবুশো বৃত্তি নিয়ে। এজন্য প্রবল বাঁধার মুখে পড়েছিলাম পরিবার+বন্ধুবান্ধব আর শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে। কাউকেই বোঝাতে পারিনি যে, সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার জন্য বড় আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রোগ্রামে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারণ, সেখানে সব প্রফেসর আমেরিকার টপ-টেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি, মাত্র দুজন ছিল ইংল্যান্ড থেকে- তারাও আবার অক্সফোর্ড আর কেম্ব্রিজের! অনেকটা জুয়ারীর মতো ফুলব্রাইট বাদ দিয়ে মনবুশোতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল। আর তাই দু’বছর পর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া লস এঞ্জেলস এ সমাজবিজ্ঞানে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ মিলে গেল। আমি ঠিক বিশ্বাস করতে পারিনি প্রথমে। কারণ, এটি আমেরিকাতে সমাজবিজ্ঞান প্রোগ্রামসমূহে প্রথম ১০-এর মধ্যে, আর আমার পছন্দের স্পেশালাইজেশন মাইগ্রেশন আর এথনোগ্রাফিতে প্রথম ৩-এ। খুব এক্সাইটেড হয়েছিলাম এইজন্য যে, এতোদিন যেসব স্কলারদের বই বা আর্টিক্যাল পড়তাম, এখন তাদের সাথে ক্লাস করতে পারবো বলে। তবে সেই বোধ থেকে কঠিন বাস্তবে ফিরতে সময় লাগেনি একদমই। প্রতি সপ্তাহে ৪শ থেকে ৫শ পাতার পড়া (বই এবং আর্টিকেল মিলিয়ে) আর তিনঘন্টার একেকটা ক্লাসে সেইসবের ব্যবচ্ছেদ প্রাণ ওষ্ঠাগত করে রেখেছিল প্রথম চার বছর। কোন ফাঁকে আমার ৩ নম্বর মাস্টার্স ডিগ্রী, দুইটা কোয়ালিফাইং পরীক্ষা আর সবশেষে ডিসার্টেশন প্রপোজাল শেষ হয়েছে, বুঝতেই পারিনি। প্রতি সপ্তাহে মনে হতো আমি টিকে থাকতে পারছিনা, আমাকে টার্মিনাল মাস্টার্স হাতে ধরিয়ে বের করে দিবে, যেমন দিয়েছে আমার ব্যাচের ২২ জনের মধ্যে ৮ জনকে। প্রপোজাল ডিফেন্স শেষে যখন নিশ্চিত হয়েছিলাম যে, আমার পিএইচডিটা হবে, সেই খুশিটা শেয়ার করেছিলাম সিসিবিতে (মা, মা, আমি পাশ করেছি।)।

গতবছরের আগের বছর জাপানে ছিলাম, হোসেই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা একবছরের ফেলোশীপ নিয়ে আমার ডিসার্টেশন ফিল্ডওয়ার্কের টোকিও পার্ট শেষ করার জন্য। লস এঞ্জেলসের পার্ট আগেই শেষ করেছিলাম। গতবছর টোকিও থেকে ফিরে আর কোন কাজ ছিলো না। ফিল্ডওয়ার্ক শেষ, ডিসার্টেশনের প্রথম ড্রাফটও অনেকটাই তৈরী। তাই বসে না-থেকে ইন্ডিয়ানাতে বল স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে জয়েন করেছিলাম এক বছরের ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি পদে। গত মে মাসে শেষ হয়েছে সেই চাকুরী। এরপর জুনে ইউসিএলএ-তে ডিসার্টেশন ডিফেন্ড করার মধ্য দিয়ে আমার দীর্ঘ ১৮ বছরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া->পড়ানো->পড়া’র যাত্রা শেষ হলো। এখন শুধুই ব্যক্তিগত পছন্দের পড়া, পাশাপাশি জীবিকার জন্য ছাত্র পড়ানো। শুরু করবো আগামী মাস থেকে। আমেরিকার নর্থওয়েষ্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাতার ক্যাম্পাসে, ডঃ হাসান মাহমুদ পরিচয়ে।

ছাত্রজীবনে পড়াশোনার সর্বোচ্চ ধাপ পিএইচডি, যেখানে ইতোমধ্যেই অর্জিত জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি নতুন জ্ঞান সংযোজনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অর্থ্যাৎ, বিদ্যমান বইপত্র এবং জার্নালে প্রকাশিত জ্ঞানের আলোচনা+সমালোচনার মধ্য দিয়ে সেগুলো আত্মস্থ করার পাশাপাশি কি কি উপায়ে সেই জ্ঞান অর্জিত করা হয়েছে, তা’রও বিশদ চর্চা থাকে। ফলে, পিএইচডি শেষে একেকজন ছাত্র তাদের নির্দিষ্ট স্পেশালাইজেশনে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠে বিদ্যমান জ্ঞানে বিজ্ঞ হওয়ার পাশাপাশি নতুন নতুন জ্ঞান আবিস্কারের সক্ষমতা নিয়ে। শিক্ষাজীবনের অন্যান্য ধাপ হতে পিএইচডি’র পার্থক্য এখানেই।

আমার পিএইচডি অর্জনের এই দীর্ঘ যাত্রায় সবচেয়ে বড় যে বাঁধার মুখে পড়েছিলাম, তা হলো পড়াশোনার প্রতি বাংলাদেশে ছাত্র-শিক্ষকদের সাধারণ দৃষ্টভঙ্গি। আমরা প্রধানতঃ টেক্সট থেকে মুখস্থ করে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিই। এই প্রক্রিয়ায় টেক্সটের পাঠ যথেষ্ট হলেও প্রকৃত জ্ঞানের অনেকখানি অজানা থেকে যায়। আরো বড় সমস্যা হল- পাঠ্যসূচীর পড়ার সাথে বাস্তবের যোগসূত্রের অনুপস্থিতি। এটা বিশেষ ভাবে উপলব্ধি করেছি সমাজবিজ্ঞান পড়তে গিয়ে। পাঠ্য সিলেবাসের সিংহভাগ আমেরিকা+ইউরোপীয় সমাজভিত্তিক। বাংলাদেশ সমাজের সাথে তাই এই জ্ঞানের সম্পর্ক ছিল ক্ষীণ। অথচ, বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রধান লক্ষ্যই হলো বাংলাদেশ সমাজকে বোঝা। জাপানে গিয়ে প্রথম দেখেছি কিভাবে ক্লাসের আলোচনা টেক্সট এর গন্ডি পেড়িয়ে সমাজের নানান বিষয়ে গিয়ে ঠেকে। আর ইউসিএলে-তে এসে দেখেছি বই/জার্নালের ব্যব্যচ্ছেদ করে কিভাবে চলমান ডিসকোর্স আর বাস্তব সমাজের সম্পর্ককে বুঝতে হয়। বাংলাদেশে যেখানে বিভাগ/বিষয় নির্বিশেষে ডিগ্রী শেষে একটা ভালো চাকুরীর চিন্তা পেয়ে বসে, সেখানে ইউসিএলতে দেখেছি অনেক শিক্ষক এবং ছাত্র কিভাবে জ্ঞানের কোন বিশেষ একটা সমস্যা বা ইস্যুকে সারাজীবনের ব্রত হিসেবে নেয়। এরা একেকজন জ্ঞানের প্রতি অনুরাগের বাস্তব মডেল। ফলে, বাংলাদেশে যেখানে সাধারণভাবে পড়াশোনাটা একটা ভালো ক্যারিয়ারের পথ, এখানে পড়াশোনা নিজেই একটা লক্ষ্য। এটা আমার জন্য একটা বিষ্ময়কর প্রাপ্তি ছিল। অনেকে আমার সুদীর্ঘ ছাত্রজীবনের কথা চিন্তা করে আমার ধৈর্য্যের জন্য বাহবা দেয়। কিন্তু এই পড়াটা আমার ক্যারিয়ার অর্জনের লক্ষ্য নয়, বরং পড়াটাই আমার লক্ষ্য। এখানে ধৈর্য্যের কোন ব্যাপার নাই। আমি এই পড়াটা উপভোগ করি। তবে এটা সত্য যে পরীক্ষা বা এসাইনমেন্টের ডেডলাইন, জিপিএ, ইত্যাদির জন্য মাঝেমধ্যে ভালো ঝামেলায় পড়তে হতো। সুখের কথা হচ্ছে, আমাকে আর এইসব ঝামেলা পোহাতে হবে না।

আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, আর শুভানুধ্যায়ীরা অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছে আমাকে পিএইচডি অর্জনের জন্য। কিন্তু আমি জানি যে, আমার এই অর্জন কেবলমাত্র আমার নিজের মেধা আর অধ্যাবসায়ের ফল নয়, বরং আরো অনেকের উদার সহযোগিতা এবং সেইসাথে অসংখ্য “হ্যাপী একসিডেন্ট” এর ফল। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে মনে হতো আমাদের শিক্ষকরা অনেক কিছু পড়ান। কিন্তু বাইরে যাওয়ার পর বুঝেছি তাদের আরো কতটা বেশি পড়ানোর কথা ছিল। কাজেই, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনায় বাংলাদেশের কোন শিক্ষকের মনে রাখার মতো বিশেষ কোন অবদান খুঁজে পাইনা। তবে সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর ডেভিড লয়েড ওয়েঙ্ক, আর ইউসিএলএ-তে প্রফেসর চৌ মিন, রুবেন হারনান্দেজ-লিঁও, আর রজার ওয়াল্ডিঙ্গারের অবদান অপরিমেয়। এছাড়াও অন্যান্য আরো কয়েকজন প্রফেসরের ক্লাসে আমি শিখেছি তত্ত্ব আর পদ্ধতির নানান গলি+চোরাগলি পথে হাঁটাচলা। সমাজবিজ্ঞানের কঠিন এই পথে যে আমি চলতে শিখেছি তা’ বুঝতে পারলাম শীর্ষস্থানীয় কয়েকটা জার্নালে আমার কিছু আর্টিকেল প্রকাশ হলে। আমার ডিসার্টেশনে একটা সমাজতাত্ত্বিক উত্তর (আসলে তত্ত্ব) খুঁজেছি ‘অভিবাসীরা কেন দেশে রেমিটেন্স পাঠায়’ এই প্রশ্নের। যে তত্ত্বীয় মডেল (ক্রিটিক্যাল রিয়েলিষ্ট) দাঁড় করিয়েছি আর যে পদ্ধতি (গ্লোবাল এথনোগ্রাফী) ব্যবহার করেছি তথ্য সংগ্রহ আর বিশ্লেষণের জন্য, সেখানে আমার আগে আর কোন সমাজবিজ্ঞানীকে পাইনি। ফলে, নিজের মধ্যে খানিকটা খুঁতখুতানি ছিল যে, আমি যা’ করতে যাচ্ছি তা’ আসলেই সমাজবিজ্ঞানের ধারায় হচ্ছে তো। আত্মবিশ্বাস ছিল যে, আমি ঠিক সমাজবিজ্ঞানের পথেই আছি। তারপরেও আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিসার্টেশন থেকে একটা অধ্যায়কে আর্টিকেলে বদলে নিয়ে প্যাসিফিক সোসিওলজিক্যাল এসোসিয়েশনে পাঠিয়েছিলাম এবছর। আমেরিকার প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পিএইচডি ক্যান্ডিডেটদের কয়েক ডজন আর্টিক্যালের মধ্য থেকে আমারটা জিতে গেল ‘বেষ্ট আর্টিক্যাল’ পুরস্কার। বুঝলাম, আমার গবেষণা সামান্য পরিমাণে হলেও সমাজবিজ্ঞানে নতুন জ্ঞান যোগ করতে চলেছে। এর পাশাপাশি চারটা জার্নাল থেকে মেনুস্ক্রিপ্ট রিভিউ করার আমন্ত্রণও পেলাম। জানলাম, সমাজবিজ্ঞান আমাকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে বরণ করতে প্রস্তুত।

মা সর্বক্ষণ উৎসাহ দিয়েছেন যতদূর ইচ্ছে ততোদূর পড়তে। আর স্ত্রী নানান মজাদার খাবার খাইয়ে আর সপ্তাহান্তে এদিক-সেদিক বেড়াতে নিয়ে জীবন থেকে একঘেয়েমীকে দূরে ঠেলে দিয়েছে; পাশাপাশি নানান তত্ত্বের কাঠখোট্টা আলোচনায় মাঝেমধ্যে অংশ নিয়ে আমাকে আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছে। সিসিআর-১৬ এর বন্ধুরা এবং ঢাবি সমাজবিজ্ঞানের কয়েকজন সব সময় ‘তুই পারবি’-টাইপ কথাবার্তা বলে বলে উদ্যোম যুগিয়েছে। সিসিআর হাসান স্যারের মতো মানুষের সংস্পর্শে নিয়ে এসে স্বপ্ন দেখতে এবং সেই স্বপ্নের পথে অবিচল থাকার প্রেরণা দিয়েছে। আর আমার জন্মভূমি বাংলাদেশের সমাজ আমার মধ্যে সমাজপাঠের এক অনির্বান শিখা জ্বালিয়েছে। এদের সবার কাছে আমার অশেষ ঋণ।

এতোদিন আমি শুধু নিজের পড়ার আকাঙ্ক্ষা পুরণের জন্য পড়ে চলেছি। এখন আমার এইসব কাছের+দূরের মানুষের কাছে, বাংলাদেশের সমাজের কাছে ঋণ পরিশোধের একটা দায়ও অনুভব করি।

সিসিবি’কে আমি নিজের বাড়ি মনে করি। কারণ, এখানে সকলেই আমার বড়/ছোট ভাই ও বোন। তাছাড়া, এখানে মনের কথাগুলো মায়ের ভাষায় নিঃসংকোচে শেয়ার করতে পারি। অন্তর্জালের এই ভার্চুয়াল জগতে আমার আগমন এবং বিচরণক্ষেত্রও এই সিসিবি। তাই এখানে শেয়ার করছি আমার ভবিষ্যত কর্ম-পরিকল্পনা, নানাজনের ঋণের ভার খানিকটা লাঘব করার পথের খোঁজে। আর সকলের মতো পরিবারের জন্য অর্থোপার্জন আর বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডা+যৌথ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে তাদের ঋণ শোধের পাশাপাশি আমি বাংলাদেশের সমাজ ও মানুষের জন্যও কিছু কাজ করতে চাই। এই লক্ষ্যে আমি ডিসার্টেশনের বিষয় হিসেবে অভিবাসীরা কেন দেশে টাকা পাঠায় (এবং পাঠায় না) তা’ বোঝার চেষ্টা করছি যা’তে বাংলাদেশের সমাজ+অর্থনীতির জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান আহরণ ও শেয়ার করতে পারি। শীঘ্রই শুরু করবো কয়েকটা নতুন গবেষণা প্রকল্প। আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ থাকল বাংলাদেশের সমাজের বিদ্যমান সমস্যার আলোকে পরামর্শ দেওয়ার।

আগে নতুন কোন তত্ত্ব জানলে/শিখলে তা’র আলোকে নানান বিষয়ের আলোচনা নিয়ে হাজির হতাম সিসিবিতে। কিন্তু নামের শেষে এখন একটা ‘পিএইচডি’ যুক্ত হয়ে ব্যাপারটাকে কঠিন করে তুলেছে। এখন একটা কথা বলতে/লিখতে গেলে কয়েকবার ভাবতে হয়। শুধুই মনে হয়, না-জানি কোথাও ভুল হয়ে গেলো। এই ভার বহনে আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করি। পাশাপাশি, কখনো যদি কারো মনে হয় আমার লেখায় কাউকে কোনভাবে আঘাত দিয়েছি, তাহলে তা’ ধরিয়ে দেওয়ারও আবেদন রইল, যা’তে নিজেকে শুধরে নিতে পারি।

এতোদিন পর্যন্ত আমার স্বপ্নটা স্বপ্নেই ছিল। এখন তা’কে বাস্তবে ছোঁওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সোপান পেয়ে গেছি। চুড়ান্ত সাফল্য অর্জনের পথে আপনাদের সকলের দোওয়া চাই।

৪,৫৭২ বার দেখা হয়েছে

২৮ টি মন্তব্য : “শেষের থেকে শুরুঃ এই আমি”

  1. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    অভিনন্দন ! অভিনন্দন !
    আর শেষের কথাটা - অভিবাসীদের এক শ্রেণী পয়সা কামানোর জন্য যায় বলে দেশে পয়সা পাঠিয়ে সেখানে তার অবস্থান ও সম্পদের মজুদটাকে মজবুত করে । আর আরেক দল জানে কখনোই দেশে ফিরে যাবে না তবু ট্যাক্স নেট থেকে সরিয়ে কিছু টাকা শীতের সঞ্চয় হিসেবে দেশে পাঠায়। এমন সাদামাটা ধারনার বাইরে তোমার গবেষণালব্ধ তথ্যে এর সত্যি চিত্রটাকে দেখার জন্য উন্মুখ থাকলাম ।

    জবাব দিন
  2. মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

    আমাদের সমাজের জটিল অসুখ এখন। এই রোগ সারাতে প্রয়োজন তোমাদের মতো সমাজবিজ্ঞানীদের। যারা নিরলস ও মেধাবী। তোমার ভেতরে স্বপ্নপুরণের ও নব উদ্যমের যে উচ্ছ্বাস দেখলাম, তা আমাদের নিভু নিভু আশার পিদিমে নোতুন আলোর বিচ্ছুরণ ঘটাবে এই কামনা করে তোমাকে জানাই অভিবাদন।


    দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

    জবাব দিন
  3. মাহবুব (৭৮-৮৪)

    নয় এগারোর ঘটনার পর দেশি বিদেশি কলিগদের সাথে নানা বিষয়ে গভীর আলাপ হতো। সেখানে আমার বক্তব্য ছিল- এখন সময় এসেছে সবচে মেধাবীদের সমাজবিজ্ঞান পড়ার। ডাক্তার এঞ্জিনিয়ার এমবিএ - প্রচলিত ধারা গুলি থেকে বেরিয়ে আসার। কারন- এঞ্জিনিয়ার ভুল করলে বড়জোর একটা বিল্ডিং কি একটা ব্রীজ ভেঙ্গে পড়ে, হতাহত হয় শ কিংবা হাজার। আর সমাজ রাষ্ট্র ইত্যাদির ভুলে? সে ক্ষতি অনেক অনেক বিশাল।
    অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      ভাইয়া,

      অনেক ধন্যবাদ অভিনন্দন আর শুভকামনার জন্য।

      আমাদের দেশে ডাক্তারী আর ইঞ্জিনিয়ারিং এ না-পড়লে রীতিমত করুণা করা হয়। আমার নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে জেনেছি। আর আমেরিকায় এসে দেখলাম ঠিক উল্টো, যদিও এখানেও চাকুরীর বাজারে সমাজবিজ্ঞান/নৃবিজ্ঞানের তুলনায় ডাক্তারী/ইঞ্জিনিয়ারিং আর ফলিত বিজ্ঞানের কদর বেশি। তবে পার্থক্য হলো, এখানকার ডাক্তার+ইঞ্জিনিয়াররা আমাদের দেশের সমাজবিজ্ঞানের ছাত্রের থেকেও প্রায়শঃই বেশি সমাজবিজ্ঞান পড়ে+বোঝে। (সম্পাদিত)


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  4. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    অভিনন্দন, ডঃ হাসান মাহমুদ! তোমার শ্রম ও মেধা এ গরীব দেশের সমাজ উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনার দারোন্মোচন করবে, এই আশা রেখে তোমার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।

    জবাব দিন
  5. Asssalamualikum vaia. First of all let me congratulate u from the core of my heart. Indeed, u were one of the most talented cadet of CCR. ur result in SSC and HSC and ur appointment in class XII depicts it as well. . Pls convey my regards to vbi,unty and to those who stood beside u in the long education period of ur life. May ALLAH bless u. pls keep us in ur prayer. Good to see that u have discovered yourself. I wish ur success in future as well.

    Omar Karim (93-99)
    CCR 19th intake

    জবাব দিন
  6. নাফিস (২০০৪-১০)

    অনেক অভিনন্দন ডঃ মাহমুদ ভাই ! লেখাটা অসম্ভব ভালো লাগলো। সায়েন্সে এইচএসসি শেষ করলেও আমি সবসময় মনে প্রাণে জানতাম যে আমি আর্টস এর ছেলে। সেই ড্রিম টা আর সেইভাবে পারসু করতে পারলাম না। ডিফেন্সে ঢুকে গেলাম। তবে ইউএস এ এই এক্সচেঞ্জ প্রগ্রাম এ এসে যখন আন্ডারগ্রাড এর মেজর সিলেকশন এর সময় এলো তখন আমি কারো কোন কথা না শুনে সব ফ্যান্সি ইন্জিনিয়ারিং মেজর বাদ দিয়ে IR সিলেক্ট করে ফেলি। আপনার পোস্ট টা পড়ে মনে হলো ভুল কিছু করিনি। ডিফেন্স এ এর ইমপ্লিপিকেশন কি, সেই চিন্তা আর করিনা। দিস ইজ হোয়াট আই এনজয়।
    লেখাটার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ইন্সপিরেশন পেলাম।

    (গত বছর জুন এ LA তে গিয়েছিলাম। আরসিসি এর সাদিব ভাই এর কাছে শুনেছিলাম আপনি নাকি টোকিও তে। দেখা করার ইচ্ছে ছিল... এনিওয়ে, হবে একদিন ! 🙂 (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      নাফিস,
      অল্পের জন্য সাক্ষাৎটা ফসকে গেলো, তাই না? ব্যাপার না, নেক্সট টাইম। (দেশে যাওয়ার পথে কাতার এয়ারে গেলে দোহা'তে ট্রাঞ্জিট নিও, আমার বাসায় দাওয়াত 🙂 )

      পড়াশোনার ক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছেটা অনেক গুরুত্বপুর্ণ আমার কাছে। জীবিকা একভাবে জুটেই যায়, বেশি বা কম। কিন্তু আত্মতৃপ্তি টাকা/ক্ষমতায় আসেনা। ভালো লাগল জেনে যে, তুমি নিজের পছন্দের বিষয়ে পড়াছো। আশা করি, আইআর-এর প্রতি তোমার ভালো লাগা উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাক।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  7. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    খাইছে! আপনি ডাক্তার হয়ে গেছেন? এখন তো খালি রোগী দেখবেন আর পয়সা কামাবেন... 😛

    ব্যাড জোক্স এপার্ট- খুব খুব খুব খুশি এবং গর্বিত হয়ে গেলাম ভাই!
    অনেক অভিনন্দন, মাহমুদ ভাই!

    বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আসলে বলার কিছু নেই। বেশিরভাগ শিক্ষকই কিভাবে পড়াতে হয় তা জানেন না!
    দু'একজন বাদে স্কুল, ক্যাডেট কলেজ, ঢাকা ভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট...কোন খানেই কোন শিক্ষকের কাছ থেকে আমি কিছু 'শিখি' নি।
    তারা শুধুমাত্র পড়া গিলিয়েছেন মাত্র!
    এ কারণেই পড়াশুনার আগ্রহ হারিয়েছিলাম অনেক আগেই...

    যাই হোক, আশা করি আপনি একজন পাঠদানকারী না হয়ে পাঠে উৎসাহ প্রদানকারী এবং পথপ্রদর্শনকারী হবেন।
    অনেকটা প্রফেসর ডেভিড লয়েড ওয়েঙ্ক, প্রফেসর চৌ মিন, রুবেন হারনান্দেজ-লিঁও কিংবা রজার ওয়াল্ডিঙ্গারের মতন!
    আপনার জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা!

    বিঃদ্রঃ ভাই, আমি কোথাও খেলা বিষয়ক লেখালিখি করি না। অন্য জায়গায় জিজ্ঞাসা করেছিলেন- এখানে জবাবটা দিলাম! 😀


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      জুনা,

      ধন্যবাদ। আমার জন্য তোমার শুভকামনা পূর্ণ হোক।
      সিসিবিতে তোমার কমেন্ট মিস করি।
      খেলা নিয়ে লেখালেখি কিন্তু আরো সিরিয়াসলি নিতে পারো। আমি সত্যিই বলছি।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।