একটি নক্ষত্রের বিদায়

আজ সকালে উঠে অভ্যাসবশতঃ অনলাইনে পত্রিকা খুলেই দেখি হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যু-সংবাদ! – আমার কাছে এটা একটা আকষ্মিক সংবাদই। কারণ, পত্রিকা মারফত বেশ কিছুদিন ধরে জানতে পারছিলাম তার শরীরিক অবস্থার ক্রমান্নতির কথা। আশা করেছিলাম তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসবেন আমাদের মাঝে।

আমার পাঠাভ্যাসে এক বিশাল অংশ জুড়ে আছেন হুমায়ুন আহমেদ। শুরু করেছিলাম তার ‘আমার আছে জল’ আর ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’ দিয়ে, সে-ই ক্লাস সিক্সে। এরপর থেকে আমার পাঠ-তালিকা হুমায়ুনময়- নন্দিত নরকে, শংখনীল কারাগার, দারুচিনি দ্বীপ, হিমু, মিসির আলী থেকে শুরু করে কবি পর্যন্ত শতাধিক উপন্যাস যা’র অর্ধেকেরও বেশি একাধিক বার পড়া। টিনএজে এমন অনেক বার হয়েছে যে, হুমায়ুন আহমেদের কোন একটা বই পড়ে মন এতোটাই আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে যে, সারাদিন কোন খাবার খাইনি, কোন কাজ করিনি, কারো সাথে পর্যন্ত কথা বলিনি! শরৎ চন্দ্র, তারা শংকর, শওকত আলী, সুনীল-শীর্ষেন্দু-সমরেশ-বুদ্ধদেবে প্রবল আকর্ষণ থাকা সত্বেও হুমায়ুন আহমেদই লেখক হিসেবে আমার প্রথম পছন্দ, সব সময়ের জন্য। এর পেছনে কোন যুক্তি নেই। হুমায়ুন আহমেদের প্রতি আমার এ’ই যে দূর্বলতা, এটা পুরোটাই আবেগী- আমি জানি। আমি মানুষ বলেই নিজের এই দূর্বলতা নিয়ে আমার কোন সংকোচ নেই।

যখন এই লেখাটা লিখতে শুরু করেছিলাম, ভেবেছিলাম অনেক কিছু লিখবো বাংলা সাহিত্যে আর নাটকে হুমায়ুন আহমেদের অবদান নিয়ে। কিন্তু বারবার চিন্তার জাল ছিড়ে যাচ্ছে। বলতে/লিখতে চাওয়া কথা গলার মধ্যে দলা পাকিয়ে থেকে যাচ্ছে। আর অবাধ্য চোখদুটো ভিজে উঠছে। শুধুই মনে হচ্ছে আমার প্রিয় লেখক আর কোন উপন্যাস লিখবেন না, আর কোন নাটক তৈরী করবেন না। তিনি যে চলে গেছেন না-ফেরার দেশে!

প্রিয় হুমায়ুন আহমেদ, যেখানেই থাকুন, যেভাবেই থাকুন, ভালো থাকুন, চিরকাল।

১,১২২ বার দেখা হয়েছে

৩ টি মন্তব্য : “একটি নক্ষত্রের বিদায়”

  1. মীম (২০০৬-২০১১)

    হুমায়ুন আহমেদ স্যারের বইয়ে সব সময় অদ্ভুত সুন্দর কিছু লাইন খুঁজে পাই যেটা সারাক্ষণ মাথায় ঘুরতে থাকে। আর খুব আবেগ আপ্লুত হয়ে কখনো ভাষা হারিয়ে ফেললে উনার কাছ থেকে ঐ লাইনগুলো ধার করি। একটা মানুষ কিভাবে যে এতো সহজ করে খুব জটিল ভাষাহীন অনুভুতিগুলোকেও ভাষা দিতেন তা বুঝতে পারি না।
    মানুষের মৃত্যু হয় কিন্তু স্বপ্নের মৃত্যু নেই
    উনার কাছ থেকেই ধার করা লাইন। যে স্বপ্ন উনি আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন তার মাঝেই উনি বেঁচে থাকুন চিরকাল।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।