পরকীয়া, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সমাজ বিষয়ে আমার ভাবনা

ডিস্ক্লেইমারঃ এই পোষ্ট সাইদ-রুমানা’র প্রসংগ থেকে শুরু হলেও এটা পরকীয়া বিষয়ে সাধারণ ধারণা নিয়ে আলাপ-সালাপ। কাজেই, এখানে ব্যক্তি সাইদ বা রুমানার বিচার কাম্য নয়।

হামীমের পোষ্টের আলোচনাটা এখন এমন একটা অবস্থানে এসে দাড়িয়েছে যেখানে পরকীয়া ব্যক্তিগত নাকি সামাজিক, নৈতিক নাকি আইনগত, এইসব বিষয় নির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। কারণ, উল্লিখিত পোষ্টে কিছু মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আমার মনে হয়েছে যে,আমরা দুইটা আলাদা আলাদা লেভেলে পরকীয়া বিষয়টাকে বিবেচনা করছি- নৈতিক এবং আইনগত। যারা রুমানার কোনরুপ দায়/দোষ বিবেচনায় আনার বিরুদ্ধে, তারা মূলতঃ বিষয়টাকে নৈতিক দিক থেকে দেখছেন। তাদের মতে, কোন অবস্থাতেই নারীর প্রতি সহিংস হওয়া ‘উচিত নয়’। রুমানাকে হিংস্রভাবে আক্রমণ করে সাইদ যেহেতু গর্হিত অপরাধ করেছেন, তাই আক্রমণের শিকার রুমানার কোন প্রকার দায়/দোষ বিবেচনায় আনা ‘অনুচিত’, রুচিবিরুদ্ধ। কিন্তু আইনের দিক থেকে বিবেচনা করলে সাইদের অপরাধের গুরুত্ব ব্যাপক হওয়া সত্বেও রুমানার পরকীয়া (প্রমাণসাপেক্ষে) একটা সামাজিক অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় আসবেই। পৃথিবীর সকল দেশে ‘বিবাহসম্পর্কের মধ্যে থাকা অবস্থায়‘ অন্য নারী বা পুরুষের সাথে অন্তরংগ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া (অর্থ্যাৎ, পরকীয়া) নারী+পুরুষ উভয়ের জন্যই বেআইনী, এবং সেই কারণে সামাজিক অপরাধ। আইনের এই অবস্থান (আপাতঃদৃষ্টিতে) ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিপন্থী। কিন্তু তা’ সত্বেও কেন এটি উন্নত-অনুন্নত, ধনী-দরিদ্র, প্রাচ্য-পাশ্চাত্য নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল সমাজে বিদ্যমান? কেন এমন একটাও সমাজ নেই যেখানে বিবাহিত নারী+পুরুষকে ইচ্ছামত আরেকজনের সাথে জড়িয়ে পড়তে দেওয়া হয়? অতএব, প্রাসঙ্গিক ভাবেই এসে পড়ে- পরিবার কি অবাধ ব্যক্তিস্বাধীনতা চর্চার স্পেস? পরিবারে ব্যক্তিস্বাধীনতা চর্চার সম্ভাবনাই বা কতটুকু?

সাধারণভাবে আমরা ধরে নিই যে, একজন পুরুষ এবং একজন নারীর মাঝে ভালোবাসার বন্ধনে পরিবার গড়ে ওঠে, তাদের যুগ্ম প্রচেষ্টায় ভালোবাসার ফসল হিসেবে আসে সন্তান-সন্ততি, আরো আসে ধন-সম্পদ, মান-সম্মান, ইত্যাদি। পরিবারের সদস্যের পারস্পরিক ভালোবাসার সম্পর্কের মধ্য দিয়ে প্রত্যেকের জীবন হয়ে ওঠে সুখময়। কিন্তু নারী+পুরুষের ভালোবাসা কি আসলেই পরিবারের প্রকৃত ভিত্তি? তাহলে ধূমধাম করে বিয়ের আচার-সংস্কার পালন কেন? কেন বিয়ে রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি নেওয়া? দুজনে নিজেরা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে একত্রে বসবাস শুরু করলেই ত হয়! অন্যদিকে, পারস্পরিক ভালোবাসা, এমনকি জানাশোনা না-থাকা সত্বেও ত বিয়ে অহরহই হচ্ছে। অর্থ্যাৎ, বিয়ের মাধ্যমে যে পরিবার, তা’র মূলে প্রায়শঃই ভালোবাসা থাকুক বা না-থাকুক, পরিবার গঠন ত হচ্ছেই। অতএব, নারী+পুরূষের ভালোবাসা পরিবার গঠনে আবশ্যক নয়, আবশ্যক হচ্ছে সামাজিক+রাষ্ট্রীয় রীতিনীতি এবং আইন। একারণেই, দুজনে ভালোবেসে একত্রে থাকার ইচ্ছে+চর্চা করলেই যেমন তা’ পরিবার নয়, তেমনি একবার আইনত বিয়ের মাধ্যমে পরিবার শুরু করার পর স্বামী বা স্ত্রী ইচ্ছেমত যখন তখন চাইলেই তা’ থেকে বের হয়ে যেতেও পারে না, বা একই সাথে অন্য কারো সাথেও জড়াতে পারে না।

এপর্যায়ে এটা বলা যায় যে, উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ব্যক্তিস্বাধীনতা বিসর্জন দিয়েই ব্যক্তি (নারী,পুরুষ উভয়ই) বিয়ের মাধ্যমে পরিবার গঠন করে। আর এর বিনিময়ে লাভ করে সামাজিক নিরাপত্তা, যৌন অধিকার, সম্পত্তি, ক্ষমতা, উত্তরাধিকারী, ইত্যাদি।

আচ্ছা, দুইজন মানুষ যদি নিজেরা পছন্দ করে একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নেয় (একইভাবে, ছাড়াছাড়িরও), তা’তে সমাজের কি বলার আছে? নূপুর ভাইয়ের মন্তব্যের রেশ ধরে আমারও জিজ্ঞাসা, “তাতে সমাজ কেন মাথা গলাবে?”- আমার মতে, নূপুর ভাইয়ের উত্থাপিত এই প্রশ্নই হচ্ছে আমার আর তার (এবং আন্দালিব, হোসেনসহ এই মতের আর সকলের) মধ্যে ডিভাইডিং লাইন। উপরন্তু, এইখানে এসে আমেদের চিন্তার মাঝে দুটো আলাদা পর্যায় দেখা যাচ্ছে আইন আর নৈতিকতার প্রেক্ষিতে।

নূপুর ভাইয়ের সাথে আমিও একমত হতে চাই যে, ভালোবাসার কারণের নারী+পুরুষ একত্রে থাকার সিদ্ধান্ত নিবে এবং তাদের যতদিন ইচ্ছা একসাথে থাকবে বা আলাদা হয়ে যাবে। এরমধ্যে সমাজ কোনরূপ মাথা গলাতে পারবে না। আফটারওল, যৌন অধিকার, সন্তান-সন্ততির জন্ম ও লালনপালন, শিক্ষা, নিরাপত্তা, সুখে+অসুখে পারস্পরিক নির্ভরতা, ইত্যাদি সব কিছুই ত’ ব্যক্তিগত পর্যায়ে কেবলমাত্র দুজনের সিদ্ধান্তেই সম্ভব। বাস্তবে এসবের উদাহরণ আছেও। একজোড়া নারী+পুরুষ পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া স্বাভাবিক (natural), যৌন মিলনের ফলে সন্তানের জন্মও একই ভাবে স্বাভাবিক (natural)। এর জন্য বিয়ে করে পরিবার গঠনের দরকার নেই। এটা স্বাভাবিক হওয়ার পরেও তাহলে কেন আমরা সন্তান নেওয়ার বেলায় বিয়ের দিকে যাই, সমাজের স্বীকৃতির মুখাপেক্ষী হই? অর্থ্যাৎ, এপর্যায়ে আমি বলতে চাইছি যে, শুধুমাত্র সন্তানের স্বীকৃতি তথা পরিচয়ের জন্য আমরা বিয়ের মাধ্যমে পরিবার করি। কারণ, পরিবারের মধ্যে অন্যান্য যে সব সুবিধা পাই, সেগুলো পরিবারের বাইরে অবস্থান করেও পাওয়া সম্ভব। আর এই পরিচয় নির্ধারণের কাজটা সমাজ নিজের সিষ্টেম অনুযায়ী করে, এবং তা’ ব্যক্তিস্বাধীনতার তোয়াক্কা না-করেই। আর তাই, একজোড়া নারী+পুরুষ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে একত্রে থাকার মাধ্যমে স্বাভাবিক নিয়মে সন্তান জন্ম দিতে পারা সত্বেও সমাজের স্বীকৃতি অবশ্যক। কারণ, তা নাহলে সমাজ শিশুকে আইডেন্টিটি বা পরিচয় দেয়না। ভেবে দেখুনতো বিবাহসম্পর্কের বাইরে জন্ম নেওয়া শিশুদের কথা- কোন সমাজ কি আজ পর্যন্ত এইসব শিশুর স্বীকৃতি দিয়েছে? দিয়ে থাকলে তা’ কি কিরকম? এই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করলে আমরা বুঝতে পারব কেন সামাজিক পরিচয় দরকার, আর কিভাবে এই একটামাত্র Function (উপযুক্ত বাংলা শব্দ পেলাম না)এর মধ্য দিয়ে সমাজ আমাদের ব্যক্তিস্বাধীনতাকে উল্লেখযোগ্যমাত্রায় সীমিত করে। অর্থ্যাৎ, সমাজের একজন সদস্য হিসেবে বেঁচে থাকলে হলে সমাজের নিয়ন্ত্রণের আওতায় আসতেই হয়, ব্যক্তিস্বাধীনতার বেশ খানিকটা বিসর্জন দিয়ে।

প্রকৃতপক্ষে, সামাজিক স্বীকৃতি বা পরিচয়ের জন্যই আমাদের বিয়ে এবং পরিবারনামক জুটি গঠন, আর সবের কোনকিছু জন্য নয়। আর এই পরিচয় শুধুমাত্র ভবিষ্যত সন্তানের জন্য নয়,নিজেদের জন্যও। হামীমের পোষ্টে হোসেন উল্লেখ করেছে যে, “অধিকাংশ নারীর আইডেন্টিটি তৈরী হয় স্বামীকে ঘিরে”। আরও বলেছে যে, “বিয়ে না-ভাঙ্গার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় নারীরাই স্যাক্রিফাইস করে তাদের অর্থনৈইতিক ভিত্তি না থাকার কারণে”। আমি হোসেনের সাথে একমত, কিন্তু আমার অবস্থান আরেকটু স্পেসিফিক। প্রথম বক্তব্যে আমি স্বামীর জায়গায় বলবো পুরুষ, আর নারীর পাশাপাশি সমাজের সকল ব্যক্তিকেও যোগ করবো। অর্থ্যাৎ, পরিবারের ডমিন্যান্ট পুরুষের মাধ্যমে নারী+পুরুষ নির্বিশেষে অধীনস্ত সকল ব্যক্তির পরিচয় নির্ধারিত হয়। দ্বিতীয় বক্তব্যে,বিয়ে না-ভাঙ্গার ক্ষেত্রে নারীর এই অবস্থানকে আমি স্যাক্রিফাইস হিসেবে দেখিনা, দেখি ‘উপায়হীনতা’ হিসেবে; কারণ অর্থনৈতিক ভিত্তি থাকলে নারী এটা মেনে নিত না। নারীর এই মেনে নেওয়া তাই তার ব্যক্তিগত ইচ্ছাধীন নয়, সিস্টেমিক। বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থায় নারী নিজের সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম, অসহায়। কাজেই,’স্যাক্রিফাইস’ নারীর অবস্থাকে ভুলভাবে উপস্থাপণ করে, কারণ স্যাক্রিফাইস বা ত্যাগ আক্ষরিক অর্থেই ব্যক্তির সক্ষমতা+ইচ্ছাধীন। হোসেনের উল্লিখিত আত্মীয়াও তাই নিজের অক্ষমতার জন্য স্বামীর দ্বিতীয় বিয়েকে “অনিচ্ছাসত্বেও মেনে নিতে বাধ্য হয়”, ত্যাগ বা স্যাক্রিফাইস করে নয়।

হোসেন আরো বলেছে “বহুগামীতা পুরুষের জন্য কমন”। বাস্তবিক, আমরা এটাই দেখি যে পুরুষরা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি যৌন স্বাধীনতা ভোগ করে। আর তাই আন্দালিবের সাথে আমিও জানতে চাই, কয়জন পুরুষের পরকীয়ার বিচার হয়েছে? কয়জন পুরুষ পরকীয়ার জন্য শাস্তি ভোগ করেছে?- অতএব, বহুগামীতা পুরুষের জন্য স্বাভাবিক, গ্রহনযোগ্য, অন্ততপক্ষে সমাজের কাছে সহনীয়। নারীকে এখানে স্পষ্টভাবে পুরুষের তুলনায় ডিপ্রাইভড হিসেবে দেখতে পাই। নৈতিক ভাবে এটা অবশ্যই সমর্থনযোগ্য নয়। পুরুষের মধ্যে বহুগামীতার আধিক্য+সমাজের টলারেন্স থেকে এই সিদ্ধান্ত আসে যে, পুরুষ স্বভাবগত কারণে অবিশ্বস্ত,বহুগামী। আর যেহেতু নারীকে পুরুষের সাথে তুলনা করে বিচার করা হচ্ছে, তাই এই ধারণার জন্ম হয় যে, যা পুরুষের স্বভাব (অর্থ্যাৎ, বহুগামীতা) তা’ নারীর স্বভাব নয়। ফলে নারীর বেলায় বহুগামীতা বা অবিশ্বস্ততার প্রশ্নই নেই। অর্থাৎ, নারীর প্রতি পরকীয়ার অভিযোগ তোলা অহেতুক, অনৈতিক, রুচিহীনতা। এজন্যই রুমানা মঞ্জুরের (এবং সেইসাথে সকল নারীর) বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ আনা অনুচিত, অরুচিকর। কারণ, পরকীয়া ব্যক্তিগত স্বভাবজাত, তাও আবার শুধুমাত্র পুরুষের। [নারীর এই ‘ত্যাগীরূপ’ চিত্রায়ণে নারীবাদী পুরুষের একটা মোক্ষম স্বার্থ আছে]।

আমার জানা মতে, বহুগামীতা শুধুমাত্র পুরুষের স্বভাব নয়, পুরো মানব প্রজাতিরই স্বভাব। মানুষ মাত্রই বহুগামী। কোন প্রকার তাত্ত্বিক বিতর্কে না-গিয়েও শুধুমাত্র বাস্তব বিচারের মাধ্যমেই আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি। যেমন, পরকীয়ার যেসব ঘটনাগুলো সম্পর্কে আমরা জানি (ইনডিয়াতে “crime report” নামের সিরিয়ালে পরকীয়ার বাস্তব ঘটনাভিত্তিক কিছু পর্ব আছে), তা’র সবগুলোতেই নারীদেরও নিজের সম্মতিতে অংশ নিতে দেখি। অবিবাহিতদের মেয়েদের বেলায় প্লেটনিক প্রেমকে বিবেচনা করলেও বিবাহিত নারীদের বেলায় অবশ্যম্ভাবীরূপে বহুগামীতাকে স্বীকার করতে হয়। কাজেই, বহুগামীতা শুধুমাত্র পুরুষের নয়, নারীরও স্বভাবজাত। বিয়ের মাধ্যমে পরিবারের জোয়াল কাঁধে তুলে দিয়ে সমাজ নারী+পুরুষের (তথা সমাজবদ্ধ সকল মানুষের) এই বহুগামীতাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। কাজেই, বহুগামীতাকে নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টা ব্যক্তিগত ইচ্ছা/অনিচ্ছা নয়, সমাজের । অর্থ্যাৎ, পরকীয়ার বিবেচনায় ব্যক্তির নৈতিকতা নয়, বরং সমাজের আইন মূখ্য যা’ সমাজ ব্যক্তির উপর চাপিয়ে দেয় Norm (সামাজিক নৈতিকতা) এবং Law (আইন) এর মাধ্যমে। (আর চুড়ান্ত বিচারে, যেকোন Norm এবং Law ব্যক্তিস্বাধীনতাকে অবশ্যম্ভাবীভাবে সীমিত করে)। অতএব, পরকীয়া একটা আইনগত বিষয় এবং একারণে এটা মূলতঃ সামাজিক। আর, সামাজিক বিষয়ে ত সমাজ মাথা ঘামাবেই।

পরকীয়া যে মূলতঃ সামাজিক+আইনগত বিষয়, ব্যক্তিগত+নৈতিক নয় সেটা পরকীয়ার সংগাতেও স্পষ্ট। পরকীয়া মানে একজন বিবাহিত পুরুষ/নারী আরেকজন বিবাহিত পুরুষ/নারীর সাথে অন্তরংগ সম্পর্কে জড়ানো। পরকীয়া হিসেবে বিবেচনা করতে হলে কমপক্ষে একজনকে বিবাহিত হতে হবেই। দুজনেই অবিবাহিত হলে সেটাকে পরকিয়া বলেনা, বলে বিবাহপূর্ব প্রেম, বড়জোর অসামাজিক সম্পর্ক। সমাজের প্রতিক্রিয়াও এই দুইধরণের সম্পর্কের প্রতি আলাদা যেখানে বিবাহপূর্ব প্রেমের ক্ষেত্রে অনেকটা সহনশীলতা থাকলেও পরকীয়ার প্রতি অত্যন্ত কঠোর। কেন? সমাজ কেন শুধুমাত্র বিবাহিতদের ক্ষেত্রে কঠোর আর অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে নমনীয়? কারণ, বিয়ে+পরিবার একটা আইনী সম্পর্ক, ভালোবাসার নয়। ভালোবাসা থাকলে ভালো, না-থাকলেও পরিবার টিকে থাকে। আন্দালিব, বাস্তবের দিকে তাকালে অসংখ্য পরিবার পাবে যেখানে শত শত বিয়ে হচ্ছে পাত্র/পাত্রী নিজেদেরকে না জেনেই, স্বামী এবং স্ত্রী নিজেদের মধ্যে ভালোবাসা না-থাকার পরেও সংসার করে যাচ্ছে বছরের পর বছর। সাহিত্যে, নাটকে, উপাখ্যানেও পাবে। শুধু দরকার কোন রকম আইডিয়ালিষ্টিক ‘পূর্ব ধারণা’ না-নিয়ে দেখার আকাঙ্ক্ষা।

একবার সমাজের আইনের কাছে মাথানত করে বিয়ের মাধ্যমে পরিবার গঠন করলে স্বামী এবং/অথবা স্ত্রী ব্যক্তিস্বাধীনতা অনেকাংশে ত্যাগ করতে হয়। পরিবার টিকিয়ে রাখার স্বার্থ ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে স্থান পায়। যেহেতু পরকীয়ার কারণে সংসার অবধারিতভাবেই ভেঙ্গে যায়, সেটা সন্তানকে ভুক্তভোগী করে। অতএব, বিবাহিতদের জন্য ব্যক্তিগত ভালোবাসার ব্যাপারটা আর শুধুই স্বামী+স্ত্রীর ব্যক্তিগত নয়, তা’তে তৃতীয়পক্ষ হিসেবে সন্তান, চতুর্থপক্ষ হিসেবে বাবা-মা, ভাইবোন, এবং ক্রমান্বয়ে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীসহ আরো অনেকপক্ষ তথা পুরো সমাজ ভুক্তভোগী হয়। একারণেও বোঝ যায়, কেন পরকীয়া অবধারিতভাবেই সামাজিক বিষয়।

আইডিয়ালী, অবাধ ব্যক্তিস্বাধীনতায় আমার সমস্যা নেই। ব্যক্তি যার যার পছন্দমত সঙ্গী নির্বাচন করবে, যতদিন ভালো লাগে একসাথে থাকবে, ভালো না-লাগলে পারস্পরিক সম্মতিতে ছাড়াছাড়ি করে নতুন জীবন শুরু করবে। এতে অন্য কোন ব্যক্তির বা সমাজের মাথা গলানোর কোন সুযোগই নেই। কিন্তু বাস্তবে এটা অসম্ভব, ব্যক্তিগত আমি+আমরা কি ভাবি না-ভাবি তা’ ধর্তব্যই নয়। এর কারণ, আইডেনটিটি বা পরিচিতি কেবলমাত্র সমাজের কাছ থেকেই পেতে হয়। সমাজ ছাড়া আর কেউ মানুষের পরিচিতি দিতে পারেনা। এই পরিচিতি আবার ব্যক্তিকে আরো অসংখ্য ব্যক্তির (তথা পুরো মানব সমাজের) সাথে সম্পর্কিত করে দেয়। ফলে, সমাজপ্রদত্ত পরিচিতি নিয়ে জীবনযাপন করতে গেলে অনিবার্যভাবেই সমাজ এসে পড়ে। কাকে বিয়ে করবো, কে সে, কি সে সহ চৌদ্দগুষ্ঠি ধরে টানাটানি শুরু হয়ে যায় দুইপক্ষের আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে। যে সমাজের বিয়েতে আত্মীর+প্রতিবেশী+শুভানুধ্যায়ীদের অংশগ্রহন বেশি, সে বিয়ে সংঘটন কঠিন, তা’ ভাঙ্গাও তদ্রুপ কঠিন। সমাজভেদে বিয়ের অনুষ্ঠানে সমাজের এই অংশগ্রহনের মাত্রার পার্থক্যের কারণে ব্যক্তির পক্ষে বিয়ে করা এবং বিয়ে ভাঙ্গার সক্ষমতায় তারতম্য হয়। যেমন, আমেরিকানদের তুলনায় বাঙ্গালী বিয়েতে সমাজের অংশগ্রহন ব্যাপক, আর তাই এখানে ব্যক্তি বিয়ে ভেঙ্গে বেড়িয়ে যেতে চাইলে সেটা অনেক কঠিন। আমার নিজেকে দিয়ে দেখি- আমার বিয়েতে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী অনেকের অংশগ্রহন নিয়ে তিনটা অনুষ্ঠান হয়েছে যা’র মাধ্যমে আমি একটা পরিবার গঠন করেছি, পারিবারিক জীবনের যাবতীয় সুবিধা নিচ্ছি। এখন আমি এবং আমার স্ত্রী যদি একমত হই যে আমরা ডিভোর্স নিবো, সেক্ষেত্রে কি কোন বাঁধা আসা উচিত হবে? আমাদের সন্তান (যখন হবে আর কি…), বাবা-মায়েরা, অন্যান্য আত্মীয়রা, শুভানুধ্যায়ীরা কি এফেক্টেড হবে আমাদের ছাড়াছাড়িতে? যদি হয়, তাহলে তারা ত’ মাথা গলাবেই নিজ নিজ স্বার্থ অনুযায়ী। অর্থ্যাৎ, পরিবার ভাঙ্গার বিষয়টা আদৌ স্বামী+স্ত্রীর শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বিষয় নয়, সংশ্লিষ্ট দুইয়ের অধিক পরিবারের (এবং ৬ এর অধিক ব্যক্তির) বিষয়। অতএব, বিয়ে করা এবং ভাঙ্গা বাস্তবে কোন ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটা সামাজিক বিষয়।

পৃথিবীর প্রত্যেক সমাজে নারী+পুরুষ নির্বিশেষে বিবাহিত ব্যক্তির জন্য পর-নারী/পুরুষের সাথে জড়িয়ে পড়া (তথা, পরকীয়া) আইন অনুযায়ী অবৈধ। প্রত্যেক সমাজই এটাকে সামাজিক অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং প্রচলিত আইনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু যে আইনের মাধ্যমে ব্যক্তির স্বভাবজাত বহুগামীতার উপর এই নিয়ন্ত্রণ, তা’সকল ব্যক্তির জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হয় না,- লিংগ, বয়স, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণীভেদে আইনের ব্যাপ্তি এবং প্রয়োগে তারতম্য হয়। বিচারের এই অসম প্রয়োগ অনৈতিক, কারণ আইন সকল ব্যক্তির জন্য সমান হবে এটা সার্বজনীন। তারমানে, মূলতঃ একটা সামাজিক+আইনগত বিষয় হলেও পরকীয়া নিয়ে আলোচনায় একটা নৈতিক দিক আছে, সেটা কিরূপ?

আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিমানুষের মাঝে নীতিগতভাবে কোনরূপ পার্থক্য অগ্রহনযোগ্য হলেও আমরা অহরহ এর ব্যতিক্রম দেখি। প্রায়শঃই দেখা যায় যে, শক্তিমানদের (সেটা অর্থ, ক্ষমতা, দল, মত যেকোন মাপকাঠিতেই হতে পারে) জন্য আইন নমনীয়, কিন্তু দূর্বলদের বেলায় বজ্রকঠোর। যেমন, রাজনৈতিক ক্ষমতায় শক্তিমান এরশাদ পরকীয়া করলে সেটা হয় লীলাখেলা আর আইজদ্দী করলে করলে হয় লুচ্চামী; প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতায় বলীয়ান অফিসের বড়কর্তা অধ্বঃস্তন সহকর্মীর সাথে পরকীয়া করলে সেটা ‘অফিস এটিকেট’ আর একই অফিসের পিয়ন বা দারোয়ান করলে সেটা নষ্টামী; ধর্মীয়নেতা/পীরসাহেবরা অন্যের স্ত্রীর সাথে জড়ালে সেটা হয় ‘আশীর্বাদ’ আর আমজনতা করলে সেটা চরিত্রহীনতা!!! একেক সমাজে আবার আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে এইসব প্রভাবকের প্রভাবে পার্থক্য বিদ্যমান। যেমন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতারা সাধারণতঃ বেআইনী যৌনসম্পর্ক (পরকীয়া, ধর্ষণ, ইত্যাদি) করে সহজে পার পেয়ে গেলেও আমেরিকায় স্বয়ং প্রেসিডেন্টও দৌড়ের উপরে থাকে। কিছুদিন আগে ইতালীর প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্বব্যাংকের প্রধানও একইভাবে দৌড়াইছে। কিন্তু আমাদের এরশাদ (এবং তার মতো আরো অসংখ্য নেতা+নেত্রী) বহাল তবিয়তে যথাস্থানে রয়েছে।

তবে সাধারণভাবে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে, এবং সুনির্দিষ্টভাবে পরকীয়া সম্পর্কিত আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সর্বত্রই যে অসমতাটা দেখা যায় সেটা লিংগভিত্তিক। অর্থ্যাৎ, এই আইন পুরুষের জন্য নমনীয়, কিন্তু নারীর বেলায় কঠোর। (এখানে আমি প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক দুই ধরণের আইনের কথা বলছি)। একারণে আমরা দেখি, পরকীয়ার অপরাধে পুরুষের তুলনায় নারীর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শাস্তির (যথা, শারীরিক শাস্তি, জেল-জরিমানা, ইত্যাদি) পাশাপাশি অনেক অপ্রাতিষ্ঠানিক শাস্তি (যথা, উপহাস, বদনাম, ইত্যাদি)। এমনকি অভিযুক্ত পুরুষ ক্ষমতাবান হলে অনেক সময় প্রাতিষ্ঠানিক কোন শাস্তিই পায় না, আর অপ্রাতিষ্ঠানিক শাস্তি ত প্রায় নেই বললেই চলে। এজন্যই দিনের পর দিন বেশ্যালয়ে থাকার পরেও দেবদাস নায়ক, আর কোন এক সন্ধ্যায় একলা ঘরে দেবদাসের কেবলমাত্র উপস্থিতিতেই পার্বতী কলংকের ভয়ে সংকিত! এই অবস্থা অনৈতিক এবং অবশ্যই অগ্রহনযোগ্য।

সাধারণভাবে বিবেচনা করলে অনৈতিক এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের দুইটা উপায় দেখা যায়ঃ এক, আইনকে নারী+পুরুষ নির্বিশেষ সকলের জন্য সমানভাবে প্রয়োগ নিশ্চিত করা; দুই, এই আইনকে তুলে দেওয়া যা’তে অসম প্রয়োগের কারণে কেউ সুবিধা না পায়, আর কেউ নির্যাতির না হয়। আসুন, এই পথগুলোকে প্রায়োগিক দিক থেকে চিন্তা করিঃ প্রথম উপায় আইডিয়ালী অনুসরণ করা সম্ভব মনে হলেও বাস্তবে এর মাধ্যমে সমতা বিধান করা কঠিন। কারণ, সমাজের পারিবারিক আইন তৈরী হয়েছে ‘পুরুষের উত্তরাধীকার’ নির্ধারণের সমস্যা বিবেচনায় রেখে। দ্বিতীয়টি অনুসরণ করতে গেলে দুইটো অবস্থা বিবেচনা করতে হয়ঃ এক, পরকীয়ার ফলে সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিনা তা’ নির্ণয় করা এবং সম্ভাব্য ক্ষতিগুলো যা’তে না হয় তা’ নিশ্চিত করা। আমার বিবেচনায়, পরকীয়ার মধ্যে সমাজের ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী। অতএব, আইনের বিকল্প হিসেবে ‘নৈতিক শিক্ষা’র মাধ্যমে মানুষকে পরকীয়া থেকে বিরত রাখা বিবেচনা করা যায়। কিন্তু শুধুমাত্র নৈতিক শিক্ষা মানুষের স্বভাবজাত কোন বৈশিষ্ট্যকে নিয়ন্ত্রণে সক্ষম নয়। বহুগামীতা যদি মানবপ্রজাতির স্বাভাবিক প্রবৃত্তি বলেই ধরে নিই, তাহলে এমন কিছু আইন অবশ্যই দরকার যা’ বিবাহিত নারী+পুরুষের (বিবাহসম্পর্কের বাইরের ব্যক্তির নয়) এই প্রবৃত্তিগত বহুগামীতাকে কার্যকরীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে।

সমাজের যে সংজ্ঞা দিয়ে সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার শুরু হয় তা হচ্ছে society is a web of interrelationship in and through which we live। অর্থ্যাৎ, সমাজ হচ্ছে অসংখ্য ব্যক্তির সম্পর্কজাল যার ‘মধ্যে+মধ্য দিয়ে’ আমরা বেঁচে থাকি। বিয়ের মাধ্যমে গঠিত পরিবার হচ্ছে এই সমাজের মূল, যেমন পদার্থের ক্ষেত্রে অণু। সমাজে প্রবেশ না করলে বাবা-মা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবাধব কোনটাই পাওয়া হয় না। প্রকৃতপক্ষে, সমাজের বাইরে ব্যক্তির অস্তিত্ব কল্পনা করা অসম্ভব। আর পরকীয়া যেহেতু পরিবার তথা সকল সামাজিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তাই সমাজ এবং সেই সাথে ‘সামাজিক জীব হিসেবে ব্যক্তির অস্তিত্ব রক্ষা’র স্বার্থেই পরকীয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, এবং সেটা সমাজের মাধ্যমেই। পরকীয়া নিয়ন্ত্রণের বেলায় ব্যক্তির ইচ্ছে+বিবেক+বিবেচনা উপর আমার শ্রদ্ধা আছে, কিন্তু আস্থা নেই। কারণ, কিছু বিবেকবান, নীতিবান মানুষ নিজে থেকেই পরকীয়া পরিহার করলেও সকলেই তা’ করবে এমন ভাবনা অবাস্তব।

তাহলে কি আমি বর্তমানে যেভাবে সমাজ পরকীয়াকে নিয়ন্ত্রণ করছে যেখানে স্বামীর সাত খুন (পড়ুন পরকীয়া) মাফ, আর স্ত্রী ঘরের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেই সর্বনাশ- তা’ মেনে নিচ্ছি? অবশ্যই না। কোন বিবেকবান মানুষের পক্ষে চলমান অবস্থা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আমার মতে, বিদ্যমান পরিবার ব্যবস্থা যা’ মূলতঃ পুরুষকেন্দ্রিক উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে গঠিত বলে এখানে পুরুষের প্রতি পক্ষপাতিত্ব থাকবেই। এটা সিস্টেমিক। উত্তরাধিকারের সিস্টেম সংশোধন করার মাধ্যমে নারীকেও অন্তর্ভূক্ত করা গেলে হয়তো সমাজের নিয়ন্ত্রণ হতে ব্যক্তি স্বাধীনতার (বিশেষ করে ‘জীবন+যৌবন সঙ্গী নির্বাচনের’ ক্ষেত্রে) খানিকটা মুক্তি মিলবে। যেমন, আমেরিকা এবং এরকম আরো কিছু দেশে সন্তানের পরিচয়ের জন্য শুধুমাত্র মায়ের নাম অনুসরণ করা হচ্ছে। এরফলে, সন্তানের আইডেন্টিটির জন্য নারীকে আর পুরুষপ্রধান পরিবারে স্বামীর অধীনতা+নির্যাতনের শিকার হতে হয়না।

কিন্তু পুরো সমাজের কাঠামো না বদলিয়ে শুধুমাত্র আইডেন্টিটিকে মায়ের সাথে জুড়ে দিলে নারীর আপাতঃ মুক্তির পাশাপাশি আরো কিছু unintended+ unexpected সমস্যাও দেখা দেয়। যেমন, পুরুষের মধ্যে ‘ভ্রমর’-টাইপের একটা দল দেখা দেয় যারা শুধু মধূ খেয়ে বেড়ায়, আর সন্তানের লালনপালনের সমূদয় দায়ভার নারীর উপর চাপিয়ে চম্পট দেয়। এমন সন্তান ও নারীর কি অবস্থা হয়, তা’ ‘সিঙ্গেল মাদার’ পরিবারের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করলে মনে হয় না খুব বেশি মানুষ ও’দিকে যেতে চাইবে। কিন্তু এই ‘ভ্রমর’ সাজার সুযোগ ত’ নারীদের নাই, প্রকৃতিগতভাবেই তারা সন্তানের সাথে অবিচ্ছেদ্য। একারণে, এই সমাধানটা বাস্তবে কার্যকরী মনে হয় না। তাইলে আলোচ্য সমস্যার কার্যকরী সমাধান কি?

৫,০৫৫ বার দেখা হয়েছে

৩২ টি মন্তব্য : “পরকীয়া, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সমাজ বিষয়ে আমার ভাবনা”

  1. রেজা শাওন (০১-০৭)

    চমৎকার পোস্ট। মাহমুদ ভাই ধন্যবাদ। অনেকগুলো ব্যাপারকে তুলে এনেছেন।

    আমার এই সংক্রান্ত ছোট একটা লেখায় আপনার একটা কমেণ্ট ছিল। আপনার প্রশ্নটার উত্তর আমার জানা ছিল না। আসলে এই ব্যাপারগুলো খুব একপেশে মনস্তত্ত্ব দিয়ে বিচার করলে,উত্তর বোধহয় পাওয়া যায় না।

    জবাব দিন
  2. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    পৃথিবীর সকল দেশে ‘বিবাহসম্পর্কের মধ্যে থাকা অবস্থায়‘ অন্য নারী বা পুরুষের সাথে অন্তরংগ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া (অর্থ্যাৎ, পরকীয়া) নারী+পুরুষ উভয়ের জন্যই বেআইনী, এবং সেই কারণে সামাজিক অপরাধ। আইনের এই অবস্থান (আপাতঃদৃষ্টিতে) ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিপন্থী। কিন্তু তা’ সত্বেও কেন এটি উন্নত-অনুন্নত, ধনী-দরিদ্র, প্রাচ্য-পাশ্চাত্য নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল সমাজে বিদ্যমান? কেন এমন একটাও সমাজ নেই যেখানে বিবাহিত নারী+পুরুষকে ইচ্ছামত আরেকজনের সাথে জড়িয়ে পড়তে দেওয়া হয়? অতএব, প্রাসঙ্গিক ভাবেই এসে পড়ে- পরিবার কি অবাধ ব্যক্তিস্বাধীনতা চর্চার স্পেস? পরিবারে ব্যক্তিস্বাধীনতা চর্চার সম্ভাবনাই বা কতটুকু?

    আসলেই নাই রে। রাত জাইগা পড়তে পারি না। সাইকো মুভি দেখতে পারি না।
    নাস্তিকতা/ মুক্ত বুদ্ধির চর্চা করতে পারিনা। মাঝে মাঝে জোর কইরা ঈদের নামাযে পাঠায়!

    অর্থ্যাৎ, বিয়ের মাধ্যমে যে পরিবার, তা’র মূলে প্রায়শঃই ভালোবাসা থাকুক বা না-থাকুক, পরিবার গঠন ত হচ্ছেই। অতএব, নারী+পুরূষের ভালোবাসা পরিবার গঠনে আবশ্যক নয়, আবশ্যক হচ্ছে সামাজিক+রাষ্ট্রীয় রীতিনীতি এবং আইন। একারণেই, দুজনে ভালোবেসে একত্রে থাকার ইচ্ছে+চর্চা করলেই যেমন তা’ পরিবার নয়, তেমনি একবার আইনত বিয়ের মাধ্যমে পরিবার শুরু করার পর স্বামী বা স্ত্রী ইচ্ছেমত যখন তখন চাইলেই তা’ থেকে বের হয়ে যেতেও পারে না, বা একই সাথে অন্য কারো সাথেও জড়াতে পারে না।

    দোস্ত এইটা দুঃখজনক। ভাগ্য ভালো এর থেকে মানুষজন বের হয়ে আসতেছে এইটা সুখের ব্যাপার। যারে চিনিনা জানিনা তার উপর বিয়ের প্রথম রাতেই কিভাবে উপগত হওয়া যায়???

    উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ব্যক্তিস্বাধীনতা বিসর্জন দিয়েই ব্যক্তি (নারী,পুরুষ উভয়ই) বিয়ের মাধ্যমে পরিবার গঠন করে। আর এর বিনিময়ে লাভ করে সামাজিক নিরাপত্তা, যৌন অধিকার, সম্পত্তি, ক্ষমতা, উত্তরাধিকারী, ইত্যাদি।

    🙁 :dreamy: 😀 :)) :((

    একজোড়া নারী+পুরুষ পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া স্বাভাবিক (natural), যৌন মিলনের ফলে সন্তানের জন্মও একই ভাবে স্বাভাবিক (natural)। এর জন্য বিয়ে করে পরিবার গঠনের দরকার নেই। এটা স্বাভাবিক হওয়ার পরেও তাহলে কেন আমরা সন্তান নেওয়ার বেলায় বিয়ের দিকে যাই, সমাজের স্বীকৃতির মুখাপেক্ষী হই

    ০১ মুসলিম ০২ আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট।
    এখানের অনেকেই বিয়ে ছাড়াই চলছে। সন্তান হচ্ছে। পরিবার বলতে যা বুঝি তাই। এরা যদি না বলে তাহলে বুঝতেও পারা যায় না যে বিয়ে ছাড়াই এদের চলে যাচ্ছে।
    আর তথাকথিত জারজ দের ক্ষেত্রে একই কথা বলবো। সমাজ। পশ্চিমে এইটা কোনো ব্যাপার না এইটা আমরা দুইজনেই ভালো কইরা জানি।

    ,বিয়ে না-ভাঙ্গার ক্ষেত্রে নারীর এই অবস্থানকে আমি স্যাক্রিফাইস হিসেবে দেখিনা, দেখি ‘উপায়হীনতা’ হিসেবে; কারণ অর্থনৈতিক ভিত্তি থাকলে নারী এটা মেনে নিত না

    খুবই ভালো বলেছিস দোস্ত। আমি ঐদিন আমার বউরে বললাম, ধর আমি যদি হঠাত কইরা (১৫ বছরের পরিচয়) তোমারে কামড় দেই, চোখ তুলে ফেলি? আরো অনেক কথা বলার ছিলো। বউ লাফ দিয়া উইঠা বলে কি, তোমার তো সাহস কম না! এই কথা উচ্চারণের সাহস পাইলা কই থিকা?

    বিয়ে করা এবং ভাঙ্গা বাস্তবে কোন ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটা সামাজিক বিষয়

    :thumbup: :teacup: (সম্পাদিত)


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      কি রে, তুই তো পুরো পোষ্ট কোট করে ফেললি!

      ভাগ্য ভালো এর থেকে মানুষজন বের হয়ে আসতেছে এইটা সুখের ব্যাপার

      নদীর এইপার থেকে তোর যেটা সুখের ব্যাপার মন এহচ্ছে, নদীর অপর পারের (মানে যারা বের হয়ে এসেছে বলছিস) অনেকেই কিন্তু অতটা সুখের বলে আর ভাবতে পারছে না। তোকে একটা ঘটনা বলি, একদিন সুপার শপে গ্রসারী করতে গিয়ে ক্যাশিয়ারের লাইনে আমাদের সামনে দেখি একটা মহিলা...হাতে অনেক কিছুর সাথে একটা ইয়া বড় ফুলের তোড়া...জন্মদিনের গিফট। সাথে মহিলার এক কিউট ৪/৫ বছরের ছেলে। আমার বউ পিচ্ছির সাথে একটু আহ্লাদি করতে গিয়ে বলল, হাই সুইটি, তোমার জন্মদিনের ফুলগুলো খুব সুন্দর। পিচ্চি মুখ বেকিয়ে বলল যে তার নয়, জন্মদিন তার 'মামস বয় ফ্রেন্ডস'...... অপত্য স্নেহ জিনিসটা খুব বিরাট একটা বাঁধা বিয়ে নামক জোয়াল কাঁধ থেকে নামানোর বেলায়।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  3. শেখ আলীমুজ্জামান (১৯৭০-৭৬)

    মাহমুদ, লেখাটা পড়লাম। বরাবরের মতই বিশ্লেষণধর্মী ও সুচিন্তিত লেখা।
    আমার মনে হয় এই পরকীয়া বিষয়টি একালের একটি কন্সেপ্ট।
    প্রাচীনকালে হয়তো ছিল না এবং ভবিষ্যতেও হয়তো থাকবে না।
    সমাজে প্রজনন সম্পর্কিত নিয়ম-কানুন এর বিবর্তন(সংস্কার) ঘটলে
    এর বিলুপ্তি ঘটবে।
    সচলায়তনে একটি লেখা দেখলাম এখানেঃ
    http://www.sachalayatan.com/guest_writer/42252

    জবাব দিন
    • সামীউর (৯৭-০৩)
      আমার মনে হয় এই পরকীয়া বিষয়টি একালের একটি কন্সেপ্ট।

      ভাইয়া, এই জায়গাটায় দ্বিমত আছে। গ্রিক বা ভারতীয় পূরাণে দেখবেন জিউসের বা অনান্য দেবতাদের চরিত্রের যে চিত্রায়ণ খুঁজে পাওয়া যায়, তাতে পরকীয়াকে আর যাই হোক সেকেলে বলা যায় না। অনেক দেবতাই অসংখ্য "ডেমিগড" এর জন্ম দিয়েছেন। হারকিউলিস, কর্ণ সবাই দেবতার ঔরসে মর্ত্যের মানবীর সন্তান।

      জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      অনেক ধন্যবাদ আলীমুজ্জামান ভাই।

      সমাজে প্রজনন সম্পর্কিত নিয়ম-কানুন এর বিবর্তন(সংস্কার) ঘটলে
      এর বিলুপ্তি ঘটবে।

      - ভাইয়া, আপনার সাথে একমত যে পরকীয়া মানুষের ইতিহাসের একটা বিশেষ পর্যায়ে এসেছে এবং একারণে আশা করা যায় এর বিলুপ্তিও ঘটবে। কিন্তু সেটা প্রজননের প্রকৃয়ায় রূপান্তরের মধ্যে নয়। কারণ, প্রজননে সমাজের কিছুই করার নেই- সমাজ চাইলেই যেমন প্রজনন ঠেকাতে পারেনা (যেমন, বিয়ে ছাড়াই সন্তানের জন্ম), তেমনি ক্ষেত্রবিশেষে সমাজ স্বীকৃতি দিলেও সন্তান জন্মে না (যেমন, সেম-সেক্স পরিবার)। অর্থাৎ, মানুষের প্রজনন ক্রিয়া পুরোটাই প্রাকৃতিক এবং সমাজ এটা নিয়ন্ত্রণে অক্ষম।

      মূলতঃ উত্তরাধিকার নির্ধারণই সমাজের প্রধান উদ্দেশ্য যা সুনির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমে একেক সমাজ তার প্রেক্ষিত অনুযায়ী একেক সিষ্টেমের মাধ্যমে সম্পন্ন করে।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
      • শেখ আলীমুজ্জামান (১৯৭০-৭৬)

        মাহমুদ, তোমার লেখার কিছু অংশ----- প্রজননে সমাজের কিছুই করার নেই-----, মূলতঃ উত্তরাধিকার নির্ধারণই সমাজের প্রধান উদ্দেশ্য-----, উল্লেখ করে বলছি, প্রজনন ও উত্তরাধিকার প্রকৃতপক্ষে একই সূত্রে আবদ্ধ। মানুষ যখন শিকারী-যাযাবর জীবন যাপন ছেড়ে, কৃষি নির্ভর জীবন যাপন পদ্ধতি বেছে নিল, সম্ভবত তখন ভূমির উত্তরাধিকার নিয়েই এই কঠোর বিধিনিষেধ এর সূত্রপাত।

        সমাজে প্রজনন সম্পর্কিত সংস্কার বলতে আমি কোন সামাজিক বিপ্লবের কথা বলছি না। কারণ, সামাজিক বিপ্লবগুলি আসে বৈজ্ঞানিক বৈপ্লবিক চিন্তা ধারার উপর ভিত্তি করে। যেমন ধরো, পঞ্চদশ শতাব্দীতে কোপার্নিকাস আধুনিক সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের মতবাদ দিলেন এবং এই মতবাদের ফলে ‘সৌরজগতের কেন্দ্র পৃথিবী’ এই তত্ত্ব বদলে গেল। সে যুগে রেণেসাঁ এসেছিল কিন্তু এই দ্য ভিঞ্চি, কোপার্নিকাসর চিন্তা ভাবনার সূত্র ধরেই। ফলাফল, ইউরোপিয়ান ফতোয়াবাজ মোল্লারা (চার্চ) তাদের ক্ষমতা হারালো।

        সমাজের প্রজনন বিধি কথাটির উপরে বিশেষ জোর দিচ্ছি একারণে যে, এক্ষেত্রেও একটা নতুন বৈজ্ঞানিক বিপ্লব শুর হয়েছে। ইন-ভিটরো ফার্টিলাইজেশন এখন ভাত-মাছ। কিছু দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে, মেয়ের জরায়ূ নেই, তাই মা তার সন্তান গর্ভে ধারণ করে জন্ম দিলেন। অথচ, ১৯৭৬ সালে যখন আমি ক্যাডেট কলেজ থেকে বেরোই, তখন যদি কেউ আমাকে বলতো, শাশুড়ীর গর্ভে জামাইয়ের সন্তান- তাহলে আমার মাথাটা কিন্তু নির্ঘাত ঘুরে উঠতো। ভেড়া-ছাগল-গরুর ক্লোনিং শুরু হয়ে গেছে, মানুষেরটা আইন কানুনের প্যাচে আটকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কত দিন? আইন ত মানুষের প্রয়োজনেই।

        আমি মোটেই আশ্চর্য হবো না যদি আর পঞ্চাশ বছর পরে মানুষের প্রজনন পদ্ধতি পুরোটা ই আর্টিফিসিয়াল ভিত্তিক হয়। সে ক্ষেত্রে, সেই সাথে কিন্তু তার একটা কমার্শিয়াল ভিত্তি ও তৈরী হবে। এই যেমন ধরো এখন টিভি কমার্শিয়ালে বলা হচ্ছে, প্রাণ এর ম্যাঙ্গো জুস খুব সুস্বাদু। তখন বলা হবে, প্রাণের তৈরী শিশুরাই শ্রেষ্ঠ----!!

        জবাব দিন
        • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

          আলীম ভাই - আপনার সাথে আমি পুরো একমত। আগামী কয়েকশ বছর পর মানব সন্তান জন্মগ্রহণ হবে ল্যাবে, বড় হবে শিশুপালন সফটওয়ারের মধ্যে দিয়ে এবং সেই সংখ্যা হবে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত। কারণ মানুষের আয়ু যাবে বেড়ে এমনকি মানুষ অমরত্বের দিকেই যেতে পারে। খুবই সিলেকটিভ এগ এবং স্পার্ম ব্যবহার হবে। সেসবের জন্য ব্যাংকও থাকবে। তাই বর্তমান সমাজের এই পারিবারিক রুপটা আর নাও থাকতে পারে। আপনার উপরের লিঙ্কের মতো আবার মহাভারতের যুগের মতো সমাজ হতে পারে। পার্থক্য এই যে এবার আর না্রীদের সন্তান ধারণের বাধ্যবাধকতা থাকবে না। আপসোস যে সেই যুগে জন্মাইতে পারলাম না।


          “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
          ― Mahatma Gandhi

          জবাব দিন
            • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
              সমাজের প্রজনন বিধি কথাটির উপরে বিশেষ জোর দিচ্ছি একারণে যে, এক্ষেত্রেও একটা নতুন বৈজ্ঞানিক বিপ্লব শুর হয়েছে। ইন-ভিটরো ফার্টিলাইজেশন এখন ভাত-মাছ। কিছু দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে, মেয়ের জরায়ূ নেই, তাই মা তার সন্তান গর্ভে ধারণ করে জন্ম দিলেন।

              আলীমুজ্জামান ভাই,
              আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ একটা সাদামাটা আলোচনায় মজার একটা টার্ণ নিয়ে আসার জন্য। আমার পাঠ্য প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে গতবছর এ'বিষয়ে কিছু পড়াশোনা করতে হয়েছিল।

              আপনার উল্লিখিত এই বৈজ্ঞানিক বিপ্লবে কিন্তু বাস্তবে চরম শ্রেণী+লিংগভিত্তিক অসমতা লক্ষ্যনীয়। বায়োলজিক্যাল সায়েন্স শুধুমাত্র প্রসেসটার উৎকর্ষ সাধন করেই যেখানে থেমে যাচ্ছে, সামাজিক বিজ্ঞানের এযাবৎ যত গবেষণা হয়েছে সবাই এই বিপ্লবের মাধ্যমে বিদ্যমান শ্রেণী এবং লিংগ ভিত্তিক বৈষম্য আরো প্রকট আকার ধারণ করার প্রবণতা দেখেছে।

              আমি মোটেই আশ্চর্য হবো না যদি আর পঞ্চাশ বছর পরে মানুষের প্রজনন পদ্ধতি পুরোটা ই আর্টিফিসিয়াল ভিত্তিক হয়।

              ভাইয়া, প্রজনন পদ্ধতি আর্টিফিসিয়াল হলেই কি সেটা ক্ষমতা-নিরপেক্ষ হতে পারবে? আর্টিফিসিয়াল পদ্ধতিও ত' বাস্তবে কোন শ্রেণী, দল, বর্ণ, ইত্যাদির অধীনেই থাকবে। কাজেই, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি প্রসেসকে উন্নত করলেও বিদ্যমান সমাজকাঠামো না বদলিয়ে কোন মৌলিক পরিবর্তন আশা করা কঠিন।


              There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

              জবাব দিন
          • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
            পার্থক্য এই যে এবার আর না্রীদের সন্তান ধারণের বাধ্যবাধকতা থাকবে না।

            @শান্তা আপা,
            নারী যতক্ষণ পর্যন্ত নিজে নিয়ন্ত্রণের জায়গায় আসতে না পারবে, ততক্ষণ পুরুষের হাতে নির্যাতিত হওয়া থেকে রেহাই নেই, সন্তান-ধারণ করতে হোক বা না-হোক। (সম্পাদিত)


            There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

            জবাব দিন
  4. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    আলীম ভাই,

    সামীউরের সঙ্গে একমত। "রাধা-কৃষ্ণ" ভুলে গেলেন? পরকীয়া সম্ভবত মানুষের বোধের সমান বয়সী।
    ................................................................................

    মাহমুদ,

    ভালো লিখেছো। আমিনের মতো অবস্থা। এ নিয়ে পরে মন্তব্য করবো।

    তবে একটা ছোট্ট ভুল নজরে এসেছে। ৫ নম্বর অধ্যায়ের প্রথম প্যারার শেষাংশে প্রথমতঃ অভিযুক্ত ব্যক্তিটি বিশ্বব্যাংক প্রধান নন, আইএমএফ প্রধান। আর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পরকীয়ার নয়, ধর্ষন ও ধর্ষন চেষ্টার। ধন্যবাদ।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      ভাইয়া,
      ধন্যবাদ ভুলটা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। ঠিক করে দিলাম। ওখানে আমি আসলে দেখাতে চাইছিলাম আমাদের দেশে আর পশ্চিমের দেশগুলোয় যৌন অনাচার বিরোধী আইনের প্রয়োগের তারতম্যের ব্যাপারটি।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  5. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    বোঝা গেলো। ব্যক্তি যখন সমাজে বাস করে, তখন তার যে কোন সমস্যাই সমাজিক হয়ে যাবে বৈকি, দ্বিমত পোষণের অবকাশ দেখিনা।
    সমস্যা সেখানেই যেখানে সমাজ মাথা চাড়া দিয়ে ব্যক্তিকে গৌণ করে ফেলে। এবং এমন একটা পরিস্থিতিতে যখন বলা হয় 'সমাজ কেন মাথা গলাবে?', সেটা এজন্যে বলা হয় না যে সমাজের মাথা গলানোর বাস্তবিক ভিত্তি নেই বা অধিকার নেই। বরং অধিকারের বাড়াবাড়িরকম চর্চাই এ প্রশ্ন উত্থাপনে প্ররোচনা দ্যায়। সেই প্রশ্ন সমাজকে তার অনধিকারচর্চার কথা মনে করিয়ে দেয়ার উদ্ধত প্রয়াস, আর কিছুই না।

    বিয়ে সামাজিক প্রথা তো বটেই, স্বাভাবিক যৌন সম্পর্কের স্বীকৃতি। কিন্তু সন্তান ধারণের জন্য পরিবার বা সমাজ চাপ দিতে পারেনা, দিলে সীমা লংঘিত হয়। এমন কি আকারে ইংগিতে সেটি স্মরণ করিয়ে দিলেও সেনসিটিভ ব্যক্তি আহত বোধ করতে পারেন।আমাদের সমাজে স্ত্রী বাড়ির বাইরে যাবার আগে স্বামীকে বলেছিলো কি না, তা পরিবারের অন্য সদস্যরা প্রায়শঃই জানতে চান, সামাজিক অধিকারবলেই।স্ত্রীর পরিবার ক্ষমতাশালী হলে অনুরূপ ঘটনা ঘটে স্বামীটির ক্ষেত্রেও।ব্যক্তিস্বাধীনতার কিছুটা ত্যাগ করেই তো বিয়ে করে পরিবার তথা সমাজে পদার্পণ (নইলে সমাজ নেবেনা!)।
    তা এই সমাজের চাপে ব্যক্তির সকল স্বাধীনতার যখন মৃত্যু ঘটতে থাকে, তখন কেউ না কেউ তো অচলা্য়তন ভেঙ্গে বেরুবেই। যৌথ পরিবারের প্রবল সামাজিকতা থেকে বেরিয়ে নিউক্লিয়ার পরিবারের নিরিবিলিতে মগ্ন হয়েছি আমরা। অনেক কিছু হারিয়েছি, অনেককিছু পেয়েছিও। গত কয়েকদশকে অনেককিছু পাল্টে গেছে। সমলৈংগিক সম্পর্কও সমাজ মেনে নিতে শুরু করছে।
    এই যে পরিবর্তন, এটা কিন্তু ব্যক্তির ইচ্ছে, তার নিজের মতন করে চলবার স্পর্ধা থেকে এসেছে। ব্যক্তি সমাজকে পদে পদে বাধ্য করেছে একটা সহনশীল অবস্থানে যেতে, সমাজ নিজে থেকে এক কানাকড়িও ছাড় দ্যায়নি, দেবেওনা। ব্যক্তির সম্মিলিত দাবীর সংগে সমাজকে একোমোডেট করতে হয়েছে (বা হবে)।

    পরকীয়া সামাজিক সমস্যা হবার আগে, ব্যক্তির প্রবলেম। আমার মনে হচ্ছে আমরা এখন যৌথ পরিবার আর নিউক্লিয়ার পরিবার থেকে বেরিয়ে ফেসবুক বা ব্লগ পরিবারে ঢুকে পড়েছি, তাই ভাবছি রুমানা পরকীয়া করলে আমারো কিছু বলার আছে। এখানেই আমার আপত্তি। আমি নিজেকে রুমানার ব্যক্তিগত জীবনের কাহিনী জানার জন্যে সঠিক মানুষ বলে মনে করিনা।একটি সুস্পষ্ট নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য আমার তাই তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জানার আগ্রহ বা প্রয়োজন থাকেনা। তিনি সেই ব্যক্তিগত জীবনে কোন সামাজিক অপরাধ করে থাকলেও (যাকে বলা হচ্ছে এই নির্যাতনের প্রধান নিয়ামক) আমার অবস্থান পাল্টায়না। সেই সামাজিক অপরাধ প্রমাণ হলে প্রচলিত আইন সেটাকে দেখুক, আমি তার জন্যে অপেক্ষা করে আমার অবস্থান নেয়াকেও অপেক্ষা করাবোনা, ফেসবুক ব্লগে ছবি ছাপিয়ে মেইল ছাপিয়ে সাতকাহনে সায় দেবোনা। এই যদি সমাজের রায় হয়, এই যদি সমাজের অধিকার হয়, সেই সমাজকে আমি বলতেই পারি, 'কেন মাথা গলাবে?' এটা তো চূড়ান্ত অসভ্যতা। আমি এই অসভ্যতাটুকুরই প্রতিবাদ করছি, এর বেশি কিছু না। আমার দাবী সমাজ আরেকটু সহনশীল হবে, সাঈদের প্রতিও, রুমানার প্রতিও।যে মরে গেছে, আর যে প্রায় মরে আছে দুজনকেই আমরা একটু রেহাই দিতে পারি। অপরাধ করেছে বলেই সাঈদকেও একইভাবে নির্যাতন করে বা তার মৃত্যুতে উল্লসিত হওয়া বা তার ব্যক্তিগত কিচ্ছায় ইন্টারনেট ভাসিয়ে দেয়া অসুস্থতার লক্ষণ। আজকে এ খবরে এর পক্ষে লাফাচ্ছি তো কাল ওর পক্ষে।

    তোমার লেখাটি সুলিখিত, বরাবরের মতোই। পরকীয়ার সামাজিক সংযোগের (+ দায়বদ্ধতার) প্রায় নিঁখুত গাণিতিক প্রমাণ পেলাম, সাথে কিছু প্রতিকারেরও কথাবার্তা।
    মানুষের জটিল মননকে একোমোডেট করতে করতে সমাজ তার রুপ পাল্টাবে যুগে যুগে। বাস্তবতা আমাদের সামাজিক/ব্যক্তিগত মরালিটিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই যাচ্ছে। কি আর করা।
    ভালো থেকো।

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
      সেই প্রশ্ন সমাজকে তার অনধিকারচর্চার কথা মনে করিয়ে দেয়ার উদ্ধত প্রয়াস, আর কিছুই না

      নূপুর ভাই,

      আপনার এই পর্যবেক্ষণের সাথে শতভাগ সহমত। আরো বলি, এই বিষয়ে আমার অবস্থান ব্যক্তির পক্ষে, এবং খুব সম্ভবতঃ অনেক বেশি র‍্যাডিক্যাল। বিয়ে+ পরিবার+ যৌনস্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে কোন একদিন আলাপ জমলে বলবো কেন+কিভাবে।

      ব্যক্তি সমাজকে পদে পদে বাধ্য করেছে একটা সহনশীল অবস্থানে যেতে, সমাজ নিজে থেকে এক কানাকড়িও ছাড় দ্যায়নি, দেবেওনা। ব্যক্তির সম্মিলিত দাবীর সংগে সমাজকে একোমোডেট করতে হয়েছে (বা হবে)

      - খুবই সত্য কথা। প্রমিথিইউসের রূপকথাও ব্যক্তিমানুষের এই সংগ্রামী রূপকেই ইঙ্গিত করে। আর আমি সব সময়ই প্রমিথিউসের দলে। কারণ, বরং সমাজের জন্য ব্যক্তি নয়, বরং ব্যক্তির জন্যই সমাজ। কিন্তু প্রায়শঃই দেখা যায়, ব্যক্তির স্বার্থে (যেমন, স্বাধীনতা) পুরোণো ব্যবস্থা ভেঙ্গে নতুন একটা ব্যবস্থায় সমাজকে নিয়ে গেলেও কিছুদিন পরে সেই সমাজও ব্যক্তিকে নিপীড়ণ করা শুরু করে।

      পরকীয়া সামাজিক সমস্যা হবার আগে, ব্যক্তির প্রবলেম। আমার মনে হচ্ছে আমরা এখন যৌথ পরিবার আর নিউক্লিয়ার পরিবার থেকে বেরিয়ে ফেসবুক বা ব্লগ পরিবারে ঢুকে পড়েছি, তাই ভাবছি রুমানা পরকীয়া করলে আমারো কিছু বলার আছে। এখানেই আমার আপত্তি

      ভাইয়া, আমি হামীমের পোষ্টেও বলেছিলাম যে, পরকীয়া কে ব্যক্তিগত সমস্যা মনে করলে আমার সাথে মতের মিল হবে না কখনোই। কারণ, যে অনূমান ধরে নিয়ে আলোচনা শুরু, সেখানে আমাদের মাঝে মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। তারপর কেন পরকীয়াকে সামাজিক সমস্যা মনে করি, তা'র জন্য এই ব্লগটাই লিখে ফেললাম।

      মতের মিল হতেই হবে, এমন ত' আর নয়।
      শুভ ব্লগিং 🙂


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
      • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

        মতের মিল না হওয়াটাই ভালো লাগে আমার কাছে বেশীর ভাগ সময়। ভিন্নমতের চর্চা করাটা অনেক জরুরী। একে অন্যের পিঠ না চাপড়ে বা গালিগালাজ না করে এই কালচারটা আমরা যদি চালিয়ে যেতে পারি, তবে অনেককিছু শেখা যায়।
        আমি তো তোমার মতো পড়াশোনা করা মানুষ না (সিরিয়াসলি বলছি কিন্তু, ঠাট্টা নয়)।
        তোমার সংগে আলোচনা করে যখন দুরূহ ব্যাপার সেপার সহজ হয়ে ধরা দ্যায়, সেটাই আমার কাছে প্রাপ্তি বলে মনে হয়।
        মতের অমিলটা তাই প্রাপ্তি। তাকে প্রকাশ করতে শেখাও তাই।

        জবাব দিন
  6. আন্দালিব (৯৬-০২)

    লেখাটা ভাল লেগেছে মাহমুদ ভাই। দুই দিন আগেই পড়েছি কিন্তু সময় বের করে কমেন্ট করা হয় নি।

    আপনি যেভাবে সামাজিক বিষয়গুলো জানেন, আমি সেভাবে জানি না। তাই এই বিষয়ে কথা বলতে কিছুটা কুণ্ঠাবোধ করি। চিন্তা পরিপক্ব না হলে সেটা প্রকাশ করা অর্বাচীনতা।

    আমি পরকীয়াকে ফিডেলিটির দিক দিয়ে অপরাধ মনে করি। এই ফিডেলিটি আদর্শ পরিবেশে হওয়ার কথা ছিল কেবল দুইজন মানুষের ভিতর বিদ্যমান চুক্তি। আমি বিয়েকে এভাবেই দেখতে পছন্দ করি। কিন্তু আমি পছন্দ না করলেও বিয়ে একটি সামাজিক সম্পর্ক। দুইজনের পাশাপাশি আরো বহু মানুষ এটায় সম্পর্কবদ্ধ হয়। এবং এ কারণেই পরকীয়ার অপরাধীকে পরিবার তথা সমাজ অভিযুক্ত করার অধিকার পায়।

    বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় পরকীয়ার সামাজিক ট্রিটমেন্ট খুবই অসুস্থ। পুরো ব্যাপারটিতে "সমাজ"-এর দৃষ্টিকোণ কেবল যৌনতাকে ঘিরে আটকে থাকে। আমার এই দৃষ্টিভঙ্গিতে আপত্তি আছে। পরকীয়ার অনুষঙ্গ হলেও যৌনতাই একমাত্র উপাদান নয়। নিজের পার্টনারের অত্যাচার, অবহেলা কিংবা ইন-ল পরিবারের সাথে সমস্যাও একটি অনুঘটক। কিংবা মানসিক সাথীর খোঁজেও পরকীয়া হয় (এটা যদিও বাঙালি চাকুরে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্তের মধ্যে বেশি)। আমি এই সকল উপাদান দেখে অনেক সময়ই মনে করি আমার এগুলোকে জাজ করার কোন উপায় নেই। আমি এইসব উপাদান সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল নই। আমি জানি না কেউ কেন কখন কী অবস্থায় পড়ে পরকীয়ায় জড়াচ্ছে। সুতরাং সব না জেনে বিচার করার অধিকার আমার নেই। এই চিন্তাটি কি ভুল?

    সমাজের ব্যাপারে আমার আসলেই কিছু বলার নেই। যদি নিম্নবুদ্ধির ও নিম্নরুচির মানুষ দিয়ে সমাজ গঠিত হয়ে থাকে, তাহলে সেই সমাজকে আমি অস্বীকার করি। আমি সেই সমাজের নিয়মকে ভুল বলে মানি। ক্রমশই এই অনুভূতি তীব্র হচ্ছে, কারণ এই সমাজে মানুষের মানবিক পরিচয় একটি পশুর চেয়ে বেশি নয়।

    মাহমুদ ভাই, একটা প্রশ্নও ছিল সমাজ বিজ্ঞানের গবেষণা নিয়ে। এখানে যে সকল উপাত্ত নেয়া হয়, যে সকল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, সেগুলো তো সবই পপুলার মতামত, তাই না? মানে, এই সমাজে কিছু মানুষ থাকে যারা এই নিয়মের পরিবর্তন চান, কিংবা নিয়মগুলো ভুল মনে করেন। সমাজ বিজ্ঞানীরা কি সেই ভূমিকাকে গোনায় ধরেন?

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      বেশ ভালো লাগছে এই ভেবে যে, আমার বক্তব্য বোঝাতে পেরেছি।

      সমাজের ব্যাপারে আমার আসলেই কিছু বলার নেই। যদি নিম্নবুদ্ধির ও নিম্নরুচির মানুষ দিয়ে সমাজ গঠিত হয়ে থাকে, তাহলে সেই সমাজকে আমি অস্বীকার করি।

      - তোমাকে যতদূর চিনি, তুমি খুব আশাবাদী একটা মানুষ। কাজেই, এইসব হতাশাবাদী কথা মনেও স্থান দিও না। 'নিম্নবুদ্ধির এবং নিম্নরূচির' মানুষ সমাজের কিছুই করতে পারেনা, যা' কিছু পরিবর্তন+সংস্কার তা' সবই করে সমাজের সবথেকে স্থিরবুদ্ধির চৌকিশ মানুষেরা। সেসবই হয় কন্টেক্সট অনুযায়ী। কিন্তু কন্টেক্সট ত ' সতত পরিবর্তনশীল। এই জন্য আজ যা' মানুষের জন্য কল্যাণকর, হয়তো কিছুদিন পর সেটা হয়ে দাঁড়ায় গলার কাঁটা।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  7. হোসেন (৯৯-০৫)

    মাহমুদ ভাই
    আসলে দ্বিমত করার মত তেমন কোন সুযোগ রাখেন নাই। তারপরো কিছু কথা বলি।
    প্রথম কথা হচ্ছে পরকীয়া এর মূল সমাজের প্রচলিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গগঠন এবং কার্যবিধির মধ্যে। আন্দালিব ভাই এর কথায় সেগুলো উঠে এসেছে। রিপিট করলাম না। আমার বক্তব্য ছিল অবশ্যই পরকীয়া নিয়ে চিন্তাভাবনা করার আছে। কিন্তু সেই প্রকল্প হতে হবে জেনেরিক। ব্যক্তি নির্দিষ্ট নয়। অর্থাৎ আমি যদি রুমানা ম্যাডামের সরাসরি সোশাল সার্কেল যা তার বিবাহিত জীবনের সাথে সম্পর্কিত হতাম, তাহলে আমি অবশ্যই এইটা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারি। কিন্তু যদি না হই তাহলে সেইভাবে তুলতে পারি না। যেকোন পরিস্থিতিতেই আমি অবজেক্টিভ মতামত প্রকাশ করতে পারি। কিন্তু নির্দিষ্ট কনভিকশনের সময়ই চলে আসে এক্তিয়ারের প্রশ্ন। ক্রিমিনাল জাস্টিস নাগরিকের বিভিন্ন স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে প্রয়োজন। তাই যেকোন নির্যাতন ইত্যাদি রিজলভের জন্যে আমরা রাষ্ট্রকে দায়িত্ব দিয়েছি। সেই দৃষ্টিতে আমরা খুন, ছিনতাই ইত্যাদি সম্পর্কে সরাসরি মুভমেন্ট তৈরী করতে পারি। কিন্তু পরকীয়া বিষয়টা এইসকল ব্যাপারের মধ্যে পরে না। পরকীয়া নিয়ে আমাদের সমস্যাটা জেনেরিক। এইখানে বিয়ের চুক্তি যাদের মধ্যে এবং তাদের পরিবারসমূহ সরাসরি আক্রান্ত, তাদের এক্তিয়ার আমাদের সমাজ কাঠামোতে আছে(যদিও সেটা যৌক্তিক কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে)। কিন্তু আমি আপনি এই ক্ষেত্রে জেনেরিক মন্তব্য করতে পারি, অবশ্যই উন্নত সমাজ জ্ঞাণ বা নৈতিকতার উন্নয়নের জন্যে পদক্ষেপ নিতে পারি, কিন্তু সরাসরি রুমানাঢ় পরকীয়ার সাথে ডিল করতে পারি না, যদিও রুমানার চোখ তুলে নেওয়া ডিল করার অধিকার রাখি।
    দ্বিতীয় কথা
    আমি সরাসরি বলছি আমার বেশ খারাপ লেগেছে অঈ যায়গাটায় যখন আপনি বললেন যে ইমেইলের ভ্যালিডিটির জন্যে আপনি অপেক্ষা করছেন। পরে ক্ল্যারিফাই করলেন যে সেই পক্ষ নেওয়াটা আসলে পরকীয়া ব্যাপারে সামজিক প্রতিরোধ ইত্যাদি। সমস্যা হচ্ছে রুমানার ঘটনা যদি অনুঘটক হয় আপনার উদ্যোগের তাহলে কিছু প্রশ্ন চলে আসে। পরকীয়া কোন ভাবেই রেয়ার ব্যাপার না, চারদিকে ঘটে চলছে। সেই ঘটনাগুলোই আমি মনে করি যথেষ্ট পরকীয়ার বিপক্ষে সামাজিক প্রতিরোধের অনুঘটকের জন্যে। রুমানার মেইল টা যদি ইনভ্যালিড হয় তাহলে কি আপনি সামাজিক প্রতিরোধের কথা ভাববেন না? সমাজে কি যথেষ্ট যৌন অনৈতিকতা নেই যা আপনাকে ইতিমধ্যেই উদ্ধুদ্ধ করতে পারে?

    হ্যা ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের পরকীয়ার পরিমান হয়ত কম, বা কম প্রচার হয়। তার মানে কি এইটাই না, যে মেয়ের পরকীয়া এবং তার ফলে একটি পরিবারের ধবংস হয়ে যাওয়াটা আপনাকে আঘাত করেছে বেশী, পরকীয়ার প্রতি জেনেরিক আপত্তির চেয়ে? আমি বলছি আপনার বক্তব্য এইরকম ভাবে যদি ইন্টারপ্রেট করা সম্ভব হয় তাহলে আপনার বক্তব্যটিকেই আমি এম্বিগুয়াস বলব। আমার ইন্টারপ্রেটেশনকে না।

    এমনিতে আমি মনে করি যৌন নৈতিকতা ভিত্তিক যেসকল সম্পর্ক কে নিয়ে সমাজ চলছে সেগুলো নিয়ে পুনরায় ভাবার সময় এসেছে। কিভাবে একটি সুসম এবং মর্যাদাপূর্ণ সিস্টেম তৈরী করা যায়, এবং সেই সিস্টেম সুন্দর শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে ছড়িয়ে দেয়া যায় টা নিয়ে ভাবা উচিত।


    ------------------------------------------------------------------
    কামলা খেটে যাই

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
      কিন্তু নির্দিষ্ট কনভিকশনের সময়ই চলে আসে এক্তিয়ারের প্রশ্ন

      এক্তিয়ারের বিষয়ে তোমার বক্তব্য পরিষ্কার। পরকীয়া ব্যক্তিগত বিষয় বলে সেখানে আমজনতার অধিকার নেই নাক গলানোর। কিন্তু আমি যে পর্যায়ে ইমেইলটার প্রসঙ্গে এসেছি, ততক্ষণে একট হত্যাকান্ড ঘটে গেছে, ভিক্টিম এর কারণ হিসেবে পরকীয়াকে অভিযুক্ত করছে, এবং মিডিয়া একটা পক্ষ নিয়ে অভিযোগকারীর মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। এই অবস্থায় পরকীয়া আর শুধুই পারিবারিক নয়, সামাজিক। এজন্য শুধুমাত্র সাইদের অপরাধের বিচারই যথেষ্ট নয়, একটা হত্যাকান্ডের অনুঘটক হিসেবে পরকীয়ার বিচার এই ক্ষেত্রে সামাজিক ইস্যু, বিশেষ করে মিডিয়া যেভাবে এটাকে কাভারেজ দিয়েছে। আফটারল, আমি বা আমরা ত' আর সাইদ+রূমানার ঘরের বেড়ায় কান লাগিয়ে তাদের দাম্পত্য কাহিনী শুনতে যাইনি, কি বল্? 🙂

      ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের পরকীয়ার পরিমান হয়ত কম, বা কম প্রচার হয়। তার মানে কি এইটাই না, যে মেয়ের পরকীয়া এবং তার ফলে একটি পরিবারের ধবংস হয়ে যাওয়াটা আপনাকে আঘাত করেছে বেশী, পরকীয়ার প্রতি জেনেরিক আপত্তির চেয়ে?

      এখানে সাইদের হত্যাকান্ডের ঘটনাটা আমি জেনেরিক হিসেবে বিবেচনা করেছি, পরকীয়াকে নয়। পরকীয়ার কথা এসেছে শুধুমাত্র এই মৃত্যুর প্রেক্ষিতে, একটা সম্ভাব্য একটা অনুঘটক হিসেবে। আমার মতে, জেনেরিক পরকীয়া আসবে যখন পরকীয়া 'in-itself'' বিবেচ্য বিষয়।

      কিভাবে একটি সুসম এবং মর্যাদাপূর্ণ সিস্টেম তৈরী করা যায়, এবং সেই সিস্টেম সুন্দর শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে ছড়িয়ে দেয়া যায় টা নিয়ে ভাবা উচিত

      - সব সময়ই ভালো লাগে তোমার এই এপ্রোচ। এটাই বটম লাইন। ব্যক্তিগত ভাবে আমার পূর্ণ সমর্থন এই মতের প্রতি। কিন্তু আমি নিজে প্রায়ই এই ভেবে পিছিয়ে যাই যে, 'কার জন্য কোনটা উচিত আর কোনটা উচিত নয় সেটা ঠিক করার' এক্তিয়ার কি আমার আসলেই আছে? দুনিয়া জুড়ে প্রচুর গ্যাঞ্জাম...... সমাজের ব্যান চাই :grr:


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
      • হোসেন (৯৯-০৫)

        মাহমুদ ভাই
        আমি চাপিয়ে দেয়ার ফ্যান আমি না। তবে এটা বিশ্বাস করি মানুষের ভাবনা বিচিত্র হলেও তাদের মাঝে অভিসারীতার প্রবণতা আছে। গোত্রবদ্ধভাবে মানুষ নির্দিষ্ট কিছু চিন্তার দিকে কনভার্জ করে। বিভিন্ন ইস্যুতে আমি ইউটোপিয়ান স্ট্রাকচার খোজার চেয়ে এটা ভাবি ছোট ছোট ধাপগুলো আগে পার হতে। আমার বিশ্বাস আছে মানুষ গোত্রবদ্ধভাবেই যেকোনো সমস্যার সমাধানে পৌঁছবে। রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতে আছে শিক্ষা। তাই প্রোপাগান্ডা বাদ দিয়ে সুষম শিক্ষা মানুষদের দিতে পারলে তারাই সমাধান খুঁজে নেবে।

        একই লজিকে আমি বাম ডান কোনটাকেই ভালো পাই না। সকল ইউটোপিয়াই আদতে সংকীর্ণ এবং মানুষের উপর অপ্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।


        ------------------------------------------------------------------
        কামলা খেটে যাই

        জবাব দিন
  8. তানভীর (০২-০৮)

    অনেক দিন পরে আপনার লেখা পরলাম।বরাবরের মতই বিশ্লেষণধর্মী । এই বিষয়ে ধারনা অনেক কম ছিলো। অনেকটা কনফিউসদ ছিলাম। লেখাটা তাই উপকারি। :clap:
    নূপুর ভাই এর মতামত ও ভালো লাগছে।

    জবাব দিন
  9. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    "সম্পর্ক" বিষয়ক একটা লিখা অনেকদিন ধরেই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
    এই লিখাটা পড়ে মনে হলো, লিখাটা নামিয়েই ফেলতে হবে।
    এই লিখাটায় প্রতিষ্ঠানকে সমুন্নত রাখার একটা ইচ্ছা শুরু থেকেই থাকার কারনে লিখাটা নৈর্ব্যক্তিক হয় নাই।
    তাছাড়া কিছু ভুল তথ্যও আছে।
    প্রচলিত সংজ্ঞায় যাকে পরকীয়া বলে, তাঁর বেশির ভাগই আমাদের আইনানুযায়িই বেআইনি নয়। যেগুলার বিপরীতে কারো জন্য কোনো আইনি প্রতিকার নাই। সেখানে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে আইনি প্রতিকার পাবার আশা করাটা পন্ডশ্রমই হবে।
    অবশ্য এটা ঠিক যে কিছু কিছু ধর্মিয় আইন সম্বলিত দেশে প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ আছে তবে তা খুবই জেন্ডার বায়াসড।
    সেগুলাকে "পরকিয়ার প্রতিকার না" বলে বরং "নারীর প্রতি সহিংসতা" বলাটাই অধিক যুক্তিযুক্ত।

    প্রচলিত অর্থে যাকে "পরকীয়া" নামে ডাকা হয়, তার বড় একটা অংশই হলো প্রেম সম্পর্কিত। লুইচ্চামিটার প্রোপোরশান আসলে ছোট।
    আইন, শাস্তি, কঠোরতা লুইচ্চামির প্রতিকার করতে পারে, কিন্তু প্রেমের প্রতিকার কি তাতে হয়?
    হয় না বলেই আইন, নৈতিকতা, ইত্যাদি দিয়ে পরকীয়া থেকে বেরুনোর কোনো ফর্মুলা বের করা যাবে না।

    যুগলের মধ্যে সম্পর্কের কেমিস্ট্রি নিয়ে তথ্যের ও জ্ঞানের ভারসাম্য না থাকলে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হবার ব্যাপারটা ঘটতেই থাকবে......
    (লুইচ্চামি জাতীয় পরকীয়া বাদ রেখেই বলছি)


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
      এই লিখাটায় প্রতিষ্ঠানকে সমুন্নত রাখার একটা ইচ্ছা শুরু থেকেই থাকার কারনে লিখাটা নৈর্ব্যক্তিক হয় নাই।

      পারভেজ ভাই,
      এই লেখাটার মূল প্রশ্ন ছিল পরিবার, আইনের আওতাধীন বিবাহের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত পরিবার। যেটি প্রথম প্যারার শেষে লিখাছিলাম "পরিবার কি অবাধ ব্যক্তিস্বাধীনতা চর্চার স্পেস? পরিবারে ব্যক্তিস্বাধীনতা চর্চার সম্ভাবনাই বা কতটুকু?"

      এজন্যই আমি ঠিক বুঝলাম না আপনার কেন মনে হলো এখানে আমি পরিবারকে 'সমুন্নত রাখার' ইচ্ছা করছি। আরেকটু সুনির্দিষ্ট করে বললে আলাপে সুবিধা হতো। আর ভুল তথ্যগুলোও বলে দিলে আমার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতাম।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।