পোষ্টমডার্নিজম বিষয়ে আমার উপলব্ধি

Disclaimer: এটা একটা সিরিয়াস পোষ্ট। তাই যারা যারা ক্ষেত্রবিশেষে আমার মতো এন্টেনা-বিষয়ক জটিলতায় আক্রান্ত, তাদের দায় নিতে লেখক দুঃখ ভারাক্রান্ত চিত্তে অসামর্থ জানান দিচ্ছে। 🙂

ঢাবি’তে এসে ঘটনাক্রমে পরিচিত হয়েছিলাম কিছু আঁতেলমার্কা বড়ভাইয়ের সাথে যারা দেখি সব তাত্ত্বিকের কঠিন সমালোচনার পাশাপাশি চলমান সবকিছুকেই ‘জটিল’ সব নতুন নতুন ব্যাখ্যা দেয়। যেমন, একদিন বিকেলে মধূর ক্যান্টিনে বসে আড্ডা মারার সময় এক ভাই বললেন যে, আর্সেনিক গবেষনায় মূল লাভ হইছে কর্পোরেটগুলার। দেশ থেকে আর্সেনিক মোটেও দূর হয় নাই, কেবল পাত্তিওয়ালা জনগণের মধ্যে ভয় ঢুকানো গেছে যে বিনে পয়সায় পাওয়া পানি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কাজেই, বাঁচতে হলে পানি কিনে খেতে হবে। এর মাধ্যমে গণস্বাস্থ্যের কতটা উন্নতি হয়েছে সেই হিসাব বাদ দিয়ে তিনি আমাদেরকে বোঝানো শুরু করলেন কিভাবে কর্পোরেট বানিজ্য এক টাকায় পানি বোতলে ভরে ৭/৮ টাকায় বিক্রি করার একটা নতুন বাজার তৈরী করে ফেলেছে।- আমি ত পুরা টাস্কিফায়েড! আরে, এটা ত ভেবে দেখি নাই।

– তিনি যে ধারায় চিন্তা+বিশ্লেষনটা করেছিলেন, তা’কে সহজভাবে বলা যায় deconstraction। এটা ফরাসী দার্শনিক জ্যাক দেরিদা’র (Jacques Derrida) সবথেকে প্রভাবশালী চিন্তাধারা যা বর্তমান সামাজিক ও মানবিক বিজ্ঞানের জগতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। নতুন এই যুগটা কি? -এটাই হলো পোষ্টমডার্ন, অর্থ্যাৎ উত্তরাধূনিক যুগ, আর এর বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি পোষ্টমডার্নিজম বা উত্তরাধূনিকতা।

Deconstraction বা বিনির্মান জ্ঞানচর্চা+আমাদের পারিপার্শ্বিককে বোঝার একটা বিশেষ পদ্ধতি যা সমাজে বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিসমূহের মধ্যে অবস্থিত নানা বৈপরীত্যকে উন্মোচন করে (সহজ বাংলায় যেটাকে আমরা বলি ল্যাংটা করা)। এই পদ্ধতি যেকোন প্রথাগত আচার-বিশ্বাস-যুক্তি-আইনের উদ্দেশ্য ও বাস্তব ফলাফলের মধ্যকার বৈপরীত্যকে সিষ্টেম্যাটিক্যালী তুলে ধরে। যেমন, গণতন্ত্র সমানাধিকারের স্বীকৃতি দেয়, কিন্তু নিশ্চয়তা দেয় না। আধূনিক বিজ্ঞান মানবতার অগ্রযাত্রার আশ্বাস দেয়, কিন্তু মানবাধিকার হরণে বাঁধা ত দেয়ই না, বরং ক্ষেত্রবিশেষে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আধূনিক রাষ্ট্র সকল নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণের আশ্বাস দেয়, কিন্তু বিশ্বব্যাপী ক্রমঃবর্ধমান দারিদ্র্যের মুখেও রাষ্ট্র ক্রমাগত নিজের (welfare spending) হাত গুটিয়ে নেয়। (এরকম আরো অসংখ্য উদাহরন আছে)। এই পদ্ধতি বঞ্চিত+নির্যাতিত মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করলেও সংগত কারণেই সমাজের প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতার দ্বারা প্রবলভাবে প্রতিরোধের সম্মুখিন হয়।

বিশেষ করে সত্তরের দশক থেকে ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষের বঞ্চনা। গণমানুষের এই বঞ্চনার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে তাই বেড়েছে পোষ্টমডার্নিজমের গ্রহনযোগ্যতা। একারণেই মূলতঃ সমালোচনামূলক শিল্প-সাহিত্যের গন্ডি ছাড়িয়ে পোষ্টমডার্নিজমের আবেদন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। তাই যেখানেই প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার প্রতি মানুষের অনাস্থা+প্রতিবাদ, সেখানেই পোষ্টমডার্নিজম।আধূনিকতার নিবর্তনবাদী রূপ উম্মোচন পোষ্টমডার্নিজমের সবথেকে বড় সাফল্য। এটা বাস্তব অভিজ্ঞতার বিশ্লেষনের মাধ্যমে দেখিয়ে দেয় যে, আধূনিকতা’র ভিত্তি- সার্বজনীনতা- আসলে সার্বজনীন নয়, তা’ ভাগ্যবান কিছু মানুষের জন্য।

কিন্তু পোষ্টমডার্নিজমের সবথেকে বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, এটা বিকল্প কোন সমাজের আশ্বাস দিতে ব্যর্থ। এটা বিদ্যমান সমাজকাঠামোকে শুধু ভাঙ্গেই, তদস্থলে নতুন কিছু গড়ে না। একারণে অনেক বিজ্ঞানীই পোষ্টমডার্নিজমমে পরিত্যাগ করেছেন।

কিন্তু তারপরেও পোষ্টমডার্নিজমের প্রয়োজন আছে আমাদের মননে ‘আধূনিক কূপমন্ডুকতা’র শৃংখল ভেঙ্গে ফেলায়। আধূনিক শিক্ষা আমাদের মনকে মুক্ত করার বদলে একটা বিশেষ ধারায় চিন্তা করতে অভ্যস্ত করে যা আমাদেরকে বিনাবাক্যে বিশেষ কিছু আচার-যুক্তি-আইনকে স্বাভাবিক বলে ভাবতে শেখায়। তবে পোষ্টমডার্নিজমের থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের জীবনকে এগিয়ে নিতে হলে অবশ্যই জানতে হবে কোন কোন প্রেক্ষিতে পোষ্টমডার্নিজমের উদ্ভব+বিকাশ হয়। তারমানে, আধূনিকতা কি কি উপায়ে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরী করে- ক্ষমতায়, সম্পদে, ভোগে।

পোষ্টমডার্নিজম বিষয়ে ইন্টারনেটে অসংখ্য তথ্য আছে, তাই এর বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না। আমি সরাসরি ইতিহাসের আলোকে পোষ্টমডার্নিজমের বস্তুগত সামাজিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরার চেষ্টা করবো।-

কোন সামাজিক মতবাদই সমাজের বাইরে থেকে আসে না। সমাজের মধ্য থেকেই তা’র উদ্ভব হয়। আর ইতিহাসের বিশেষ বিশেষ ক্ষণে মানুষের পারস্পারিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে তা বিশেষ রূপ লাভ করে। David Harvey তার The Condition of Postmodernity (১৯৮৯) গ্রন্থে উত্তরাধূনিকতা বিকাশের সামাজিক পটভূমির যে ব্যাখ্যাটা দিয়েছেন, তা এপর্যন্ত আমার কাছে সবথেকে গ্রহনযোগ্য মনে হয়েছে। তার আলোচনার মূল বিষয়বস্তুটা আগ্রহীদের সাথে শেয়ার করছি।-

হার্ভে আলোচনা শুরু করেছেন জন ক্যালহানের (John Calhoun) একটা উক্তি দিয়ে যার মর্মার্থ দাড়ায় এই রকমঃ ‘পুরাতনের ক্ষয় আর নতুনের আগমনের মধ্যকার সময়টুকু হল একটা পরিবর্তনের কাল যা’ অনিশ্চয়তা, সন্দেহ, ভূল, বন্যতা আর হিংস্র উম্মত্ততায় ভরপুর’। – হার্ভে এই পুরোনো হতে নতুনের আবির্ভাবের প্রেক্ষিতে শিল্প, সাহিত্য, দর্শন, স্থাপত্য, বা নন্দনতত্ত্বের জায়গায় আলোচনা করেছেন পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার, যা’র পরিবর্তনের মধ্যেই সূচিত হয় উত্তরাধূনিকতার। হার্ভে পুঁজিবাদী সমাজের এই পরিবর্তন আমেরিকায় Fordism বা ব্যাপকভিত্তিক শিল্প উৎপাদন ব্যবস্থা (mass production) আবির্ভাবের মধ্যে ব্যাখ্যা করেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যা’ পূর্ণতা পায়।

ফোর্ডিজমের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মাস-প্রোডাকশন (যা’কে আমরা জানি economy of scale হিসেবে)। এখানে লক্ষ্যনীয় যে, শুধু উৎপাদন বাড়ালেই চলবে না, তা’ বাজারজাতও করতে হবে। অর্থ্যাত, মানুষ যা’তে সেসব পণ্য কেনে, সেই ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সংঘবদ্ধ শ্রমিকশ্রেণীকেও নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। – এই লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য পুঁজিবাদী শিল্পসমাজের প্রধান তিন ভিত্তি- রাষ্ট্র, কর্পোরেট পুঁজি, ও সংঘবদ্ধ শ্রমিকশ্রেণী- নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।

১৯৩০ এর দশকে আমেরিকায় মহামন্দার সময় জাতীয় অর্থনীতিকে উদ্ধারের জন্য রাষ্ট্র সরাসরি অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নেওয়া শুরু করে। রাষ্ট্রের এই অংশগ্রহনের মূলে ছিলো দেশীয় শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং এই লক্ষ্যে কর্পোরেট পুঁজি+সংঘবদ্ধ শ্রমিকশ্রেণীকে একটা নির্দিষ্ট পথা চালিত করা। রাষ্ট্র-কর্তৃক বিভিন্ন শিল্পস্থাপনা কিনে নেওয়া, ব্যাপকহারে লোন দেওয়া, সরকারী খাতে (বিশেষ করে সামরিক খাতে) বড় বড় ক্রয়, রাস্তাঘাট, রেলপথ বিস্তার+সংস্কার ইত্যাদি শিল্প উৎপাদনে গতিশীলতা নিয়ে আসার মাধ্যমে রাষ্ট্র কর্পোরাট পুঁজিকে একটা শক্ত ভিত্তির উপর দাড় করায়। এরই ধারাবাহিকতায় মহামন্দার পরবর্তী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষিতে আমেরিকায় শিল্পক্ষেত্রে ব্যাপকভিত্তিক উৎপাদনের জন্য অনুকূল সামাজিক পরিস্থিতি তৈরী হয়। এসময়ই হেনরি ফোর্ডের শিল্প-ব্যবস্থাপনার ধারণা (যা বই আকারে প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১৬ সালে) জনপ্রিয়তা পায়।

ফোর্ডের শিল্প-ব্যবস্থাপনার মূলে ছিল বিস্তৃত শ্রমবিভাজন যা’র মাধ্যমে অল্প খরচে অধিক পণ্য উৎপাদন করা যায়।আর উৎপাদন খরচ কম হওয়াতে সেই পণ্য বেশিরভাগ ক্রেতার নাগালের মধ্যেই থাকে, ফলে বিক্রিও বেড়ে যায় অনেক। এভাবে economy of scale আর্জিত হয়, যা’র মানেই হচ্ছে ‘ক্রমবর্ধমান উৎপাদন>ক্রমবর্ধমান বিক্রি>ক্রমবর্ধমান মুনাফা’। – এই উৎপাদন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে দুটো সমস্যাকে মোকাবেলা করতে হয়; এক, শ্রমিক অসন্তোষ, আর দুই, শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের ভূমিকা পরিবর্তন।

বিস্তৃত শ্রমবিভাজনকে আমেরিকার সংঘবদ্ধ শ্রমিকশ্রেণী শুরু থেকেই কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা শুরু করে। কারণ, এরফলে শ্রমিকরা তাদের বিশেষ ব্যক্তিগত দক্ষতা হারিয়ে ফেলার আশংকা করে যেটা তাদেরকে চাকুরির নিশ্চয়তা দিত। ফোর্ড তাদেরকে মোকাবেলা করলেন অভিনব উপায়ে,- ব্যাপক হারে অভিবাসী আর গ্রাম থেকে শহরে আসা শ্রমিকদেরকে নিয়োগ দিয়ে। কারণ, এই শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ না থাকায় এদেরকে নিয়ন্ত্রন করা সহজ ছিল।

এই নতুন ব্যবস্থায় পুঁজিপতি এবং শ্রমিকশ্রেণীর দ্বন্দ্বে রাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্থাপিত হলো এক সোস্যাল কন্ট্রাক্ট, যা আইনের মাধ্যমে শ্রমিক আন্দোলনকে নিষিদ্ধ করল (Taft-Hartley Act, ১৯৫৩) এবং সেই সাথে পুঁজিপতিদের বাধ্য করল শ্রমিকদের ন্যুন্যতম মজুরী, সোস্যাল সিকিউরিটি, পেনশন, ইত্যাদি প্রদান করতে। ফলে নতুন নিযুক্ত এইসব অভিবাসী+সদ্য শহরে আসা শ্রমিকরা বর্ধিত সামাজিক মর্যাদা লাভ করলো এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সাথে সংঘাতের বদলে সহযোগিতা করা শুরু করলো। পুঁজিপতি+শ্রমিকের এই আপাতঃ সম্মিলিত প্রয়াসকে যুগপতভাবে সহযোগিতা করতে রাষ্ট্রও একাধারে শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য ওয়েলফেয়ার ব্যয় বাড়িয়ে চলল যা একদিকে শ্রমিকদের ক্রয়ক্ষমতা+সহযোগিতা বৃদ্ধি করল, অন্যদিকে অবকাঠামো উন্নয়ন+রাষ্ট্রীয় ক্রয়ের মাধ্যমে পুঁজিপতিকে ক্রমবর্ধমান উৎপাদন>ক্রমবর্ধমান মুনাফা অর্জনের সুযোগ দিলো। আবার ‘শিল্প কর’ থেকে প্রাপ্ত আয় রাষ্ট্রকে এইসব কর্মকান্ড চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থান করল। এভাবে রাষ্ট্র+পুঁজি+শ্রমিকের যৌথ উদ্যোগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত পুজিবাদী দেশগুলোতে উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়।

ফোর্ডিজমের ফলে রাষ্ট্র, পুঁজিপতি ও শ্রমিক- সকলেরই আয়+ব্যয় উভয়ই বৃদ্ধি পায়। যেমন, স্বল্পমূল্যের ফোর্ড-গাড়ি শ্রমিকরা তাদের বর্ধিত মজুরির মাধ্যমে কিনে রাষ্ট্রের ব্যয়ে নির্মিত রাস্তায় চালাতে সক্ষম হয় যা তাদেরকে উন্নত জীবনযাত্রার স্বাদ দেয়। রাষ্ট্রও বর্ধিত হারে সামাজিক কল্যাণমূলক খাতে (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ইত্যাদি) বিনিয়োগ বাড়িয়ে চলে যা শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের উৎপাদনশীলতাও বৃদ্ধি করে। আর এইসব থেকে শিল্প-মালিকও উপকৃত হয় অধিক উৎপাদনক্ষম শ্রমিক+ক্রয়ক্ষম ক্রেতা লাভ করে। – এভাবে ফোর্ডিজম শুধু শিল্প উৎপাদন নয়, বরং সমাজের সর্বাত্মক পরিবর্তন ঘটায় যেখানে কল্যাণ-রাষ্ট্র (Keynesian, Welfare State), কর্পোরেট পুঁজি (monopolized, vertically arranged management) আর আপাতঃ সুবোধ (docile) শ্রমিকের পারস্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমে এক নতুন সমাজব্যবস্থার জন্ম হয় যেখানে ব্যয়+ভোগের মাধ্যমেই নির্ণীত হয় ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান (Consumer Society)।

ফোর্ডিজম জাতীয় পরিসর থেকে আন্তর্জাতিক বলয়ে প্রবেশ করে আমেরিকার রাজনৈতিক+অর্থনৈতিক প্রাধান্যের আশ্রয়ে। মার্শাল প্ল্যান+ব্রেটন উড প্রতিষ্ঠানগুলোর (IMF, World Bank)মাধ্যমে এবং মার্কিন ডলারকে আন্তর্জাতিক বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার মধ্য দিয়ে পশ্চিম ইউরোপ আর জাপানের শ্রমবাজার+শিল্প উতপাদনে ফোর্ডিজম প্রবেশ করে। এখানে একটা বিষয় খুবই উল্লেখযোগ্য যে, সকল শিল্প উৎপাদনই কিন্তু ফোর্ডিজমে অন্তর্ভূক্ত হতে পারেনি, পেরেছে শুধু মাত্র যেগুলোতে ব্যাপক উৎপাদন+ব্যাপক মুনাফার পাশাপাশি ‘রাষ্ট্রের সহায়তা+শ্রমিক নিয়ন্ত্রন’ সম্ভব ছিল। যেমন, অটো-ইন্ডাষ্ট্রী। ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ শিল্পে (যেমন-গার্মেণ্টস) তখনও কম স্বল্প মজুরি+স্বল্পস্থায়ী (নারী-শিশু-মাইগ্রেন্ট) শ্রমিকদেরই নিয়োগ করা হতো। একইভাবে, সকল দেশই ফোর্ডিষ্ট শিল্প-বলয়ের অন্তর্ভূক্ত হয়নি। শুধুমাত্র সেইসব দেশেই এটি বিস্তৃত হয়েছে যেখানে প্রচুর পরিমাণে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা+সুবোধ শ্রমিক রয়েছে, সেগুলো এর অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। এই ‘নির্বাচিত’ শিল্প+শ্রমিক অন্তর্ভূক্তির কারণে জাতীয়+আন্তর্জাতিক পরিসরে সাধারণভাবে শ্রমিকদের মধ্যে আয়ের (ফলশ্রুতিতে জীবনযাত্রায়ও) অসমতা দেখা দেয় যা ফোর্ডিজমের বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্রমাগত বেড়েই চলে। ফোর্ডিষ্ট শিল্পের এইসব ভাগ্যবান শ্রমিকদেরকে গোল্ডথর্প বলেছেন The affluent workers আমেরিকায় যারা ছিলো মূলতঃ “সাদা-পুরুষ-সংঘবদ্ধ” শ্রমিক।

‘ফোর্ডিষ্ট শিল্পের শ্রমিক’ আর ‘বাদবাকি শ্রমিক’দের মাঝে মজুরি আয়+জীবনযাত্রা ভিত্তিক এই যে পার্থক্য টানা হলো, তা’ প্রাথমিক পর্যায়ে শিল্পের জন্য সহায়ক হলেও পরবর্তিতে একটা বড় ‘ঝুঁকি’ হিসেবে দেখা দেয়। শ্রমিক ইউনিয়ন তাদের প্রাপ্ত সুবিধাগুলোকে কাজে লাগিয়ে শিল্প-প্রতিষ্ঠানে যেকোন প্রকার পরিবর্তনের (নিয়ন্ত্রন, নতুন উতপাদন পদ্ধতি চালু করা, ইত্যাদি) বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া শুরু করে যা’ শ্রমিকের উপর পুঁজিপতির নিয়ন্ত্রনকে দূর্বল করে দেয়। শ্রমিক ইউনিয়নও নিজেদের প্রাপ্ত সুবিধাগুলোকে সংরক্ষণ করতে গিয়ে উক্ত শিল্পের বাইরে থাকা সকল শ্রমিকদের চোখে ‘সুবিধাবাদী’ হিসেবে চিহ্নিত হয় যা শ্রমিক আন্দোলনে তাদের (শ্রমিক ইউনিয়নের) ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। অন্যদিকে কল্যাণ-রাষ্ট্র নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে চাহিদা (তথা জীবনযাত্রার মান) বৃদ্ধি করার মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে প্রাপ্তির আশাও বাড়িয়ে দেয় যা’র জন্য ক্রমবর্ধমান হারে যে পরিমাণ ‘শিল্পকর’ উপার্জন প্রয়োজন, তা’ স্বভাবতঃই পাওয়া যায় না।

ফলশ্রুতিতে জনগণের মাঝে ক্রমান্বয়ে হতাশা>অসন্তোষ দেখা দেয়। অন্যদিকে এসময় পণ্যের ষ্ট্যান্ডার্ডাইজড মাস-প্রোডাকশনের সাথে সাথে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শাসন, দালানকোঠা, শিল্পকলা, সৌন্দর্যবোধ, ইত্যাদির ষ্ট্যান্ডার্ডাইজেশনের বিরুদ্ধে একটা প্রবল সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে ওঠে খোদ আমেরিকাতেই। এই সাংস্কৃতিক আন্দোলন বিকাশ লাভ করে সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রমিকশ্রেণীর বাইরে অবস্থিত অন্যান্য শ্রম+পেশাজীবি এবং ক্ষেত্রবিশেষে বঞ্চিত সামাজিক গোষ্ঠীসমূহের (এরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বলে পরিচিত) মধ্যে। শিল্পসমাজে এক্সক্লুডেড এইসব দলের সাথে যোগ দেয় বিশ্ব পরিমন্ডলে এক্সক্লুডেড দেশসমূহ (প্রধানত তৃতীয়বিশ্ব)।

– এই প্রকৃয়ায় ফোর্ডিজমের বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়ে চলে বঞ্চিত সাধারণ জনগণের অসন্তোষ যা’ এক সময় গণবিক্ষোভের রূপ নেয়। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৩ এমনই এক উত্তাল সময় যখন শ্রমিক অসন্তোষের সাথে পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপক মুদ্রাস্ফিতী+আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের ফলে তেলের মূল্য বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ফোর্ডিজম+কেইনসীয় রাষ্ট্রনীতির উপর দাড়িয়ে থাকা পুঁজিবাদী বিশ্বব্যব্যস্থা ভেঙ্গে পড়ে।

কর্পোরেট পুঁজি ১৯৭০ এবং ১৯৮০ দশক জুড়ে টিকে থাকার সংগ্রাম শুরু করে অর্থনৈতিক restructuring (প্রযুক্তি উন্নয়ন, যান্ত্রিকীকরণ, নতুন পণ্য+নতুন বাজার, সুবোধ শ্রমিকের নতুন বাজার, প্রতিষ্ঠানের একীভবন এবং উৎপাদনের সময়+পরিবহন ব্যয় কমানো, পণ্যের ডিজাইন ও স্থায়ীত্ব হ্রাস, ইত্যাদি); আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে চলে সামাজিক ও রাজনৈতিক readjustment (মুক্তবাজার, শ্রমিকদের উপরোক্ত সোস্যাল কন্ট্রাক্ট বাতিল, রাষ্ট্রের কল্যাণমূখী কর্মসূচী ও ব্যয় সংকোচন, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবার বিরাষ্ট্রীয়করণ, ইত্যাদি )।

– এই প্রকৃয়ায় যে নতুন উৎপাদন ব্যবস্থার উদ্ভব হয় (Post-Fordism), হার্ভে তাকে ব্যাখ্যা করেছেন ‘Flexible Accumilation’ এর মধ্য দিয়ে যা’ লক্ষ্যনীয় হয়ে ওঠে ‘সার্ভিস সেক্টর’+’টাইম-স্পেস কম্প্রেশন’ এ। সার্ভিস সেক্টরে প্রবেশের মাধ্যমে কর্পোরেট পুঁজি নিজে সরাসরি উৎপাদনে না থেকে শুধু পুঁজি বিনিয়োগে সড়ে আসে, আর উৎপাদনের কাজ দিয়ে দেয় সেমি-কন্ডাক্টর, কন্সাল্ট্যান্ট, ফ্যামিলী+ফ্রীল্যান্স প্রডিউসার, ইত্যাদিকে। অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে ‘টাইম-স্পেস কম্প্রেশন’ আসে যা পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে উৎপাদন সমন্বয় সম্ভব করে। ফোর্ডিজম বা মাস-প্রোডাকশনের যুগে যেখানে পণ্যের মান (স্থায়ীত্ব) আর উৎপাদনের পরিমাণ ষ্ট্যান্ডার্ড (অধিক), পোষ্টফোর্ডিজমে পণ্য আকারে ছোট, স্বল্পায়ু, কিন্তু দামে অধিক (কাজেই মুনাফাও বেশি)।

এই যুগের উৎপাদনের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে- বাজারে নিত্যনতুন পণ্যের আগমন, সেই সাথে নতুন নতুন সেবাখাতের উদ্ভব, এবং এদের সাথে পাল্লা দিয়ে দ্রুত প্রযুক্তিগত+ব্যবসায়িক+সাংগঠনিক পরিবর্তন। একইভাবে ফোর্ডিজম যেখানে বিশাল বিশাল শিল্পশহরের জন্ম দিয়েছে (শিকাগো, ডেট্রয়েট, টয়োটা সিটি, বুসান, ইত্যাদি), পোষ্টফোর্ডিজমে তার ঠিক উল্টোটা, অর্থ্যাত সেইসব শহরের তুলনায় আকারে ছোট কিন্তু আর্থিক মূল্যে অনেক বড় “গ্লোবালসিটি” যেমন- সিলিকন ভ্যালী, দুবাই, সাংহাই, ইত্যাদি। (এখানে উল্লেখ্য যে, ফোর্ডিজম যেমন সব দেশ+শিল্প’কে অন্তর্ভূক্ত করেনি, পোষ্টফোর্ডিজমও মাত্র অল্প কিছু খাত+শহর+দেশ’কে অন্তর্ভূক্ত করেছে)। পূর্বোক্ত ব্যবস্থা যেমন স্থায়ী চাকুরী+সেবা+কল্যাণের স্বীকৃত দেয়, নতুন ব্যবস্থা ঠিক এর বিপরীতে এইসব সুবিধা রদ করে। – ফলশ্রূতিতে পূর্বের ব্যবস্থার শান্ত+নিশ্চিত+তুলনামূলক স্থায়ী অবস্থার স্থানে দেখা দেয় অস্থিরতা-অনিশ্চয়তা-অশান্তি।

– এটাই হচ্ছে পোষ্টমডার্নিজমের যাবতীয় অস্থায়ীত্ব-অস্থিরতা-সংশয়-সংকটের বস্তুগত সামাজিক ভিত্তি।

৫১ টি মন্তব্য : “পোষ্টমডার্নিজম বিষয়ে আমার উপলব্ধি”

  1. আমার মিতা লোকটা বড়ই ভালো এবং জ্ঞানী।
    সবচাইতে ভালো লাগলো শুরুতেই ডিসক্লেমার টা নইলে না জানি কি ভেজাল হইত। নিজেরে ছোট ছোট লাগত 😀 😀

    ভাই দারুণ লিখছেন 😛
    :hatsoff:

    জবাব দিন
  2. রকিব (০১-০৭)


    তিনখানা অ্যান্টেনা লাগাইয়াছি, তথাপি কিছু বোধ হইলো না। নাদান রকিব :(( :(( :(( ।
    মাহমুদ ভাই, কেমন আছেন???? 😀


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  3. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    মাহমুদ ভাই,একটা কাজের কাজ করছেন বস এই পোস্ট দিয়া।আমার ভার্সিটির আঁতেল বন্ধু/বড়ভাইগুলা চান্স পাইলেই কন্ডোম থিকা কন্সট্রাকশন সব কিছুতে মিলুক না মিলুক পোস্ট মডার্নিজম টাইনা আইনা একটা বেরাছেরা লাগায় দিতো আর আমি হা কইরা চাইয়া থাকতাম।এখন আর সেইটা হৈবো না, খপ কইরা জায়গামত চাইপা ধরুম 😀

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
      এখন আর সেইটা হৈবো না, খপ কইরা জায়গামত চাইপা ধরুম

      -এখনই না।
      কারণ, "কন্ডোম থিকা কন্সট্রাকশন" আসলেই আজাইরা, আমাদের ততোটা প্রয়োজনীয় নয় যতোটা প্রচার করা হয়। তবে এর সাথে পোষ্টমডার্ণিজমের সম্পর্ক নিয়ে ভাবি নাই কখনো।

      কন্ডোমের ব্যাপারটা বলি- 'বাঁচতে হলে জানতে হবে' এটা প্রযোজ্য আমেরিকা-ইউরোপে যেখানে উইকএন্ডে মদের টেবিলের পরিচয় ডিনার টেবিল হয়ে বেডে গড়ায়, আর সকাল হলেই তা' মিলিয়ে যায়। (ঐরকম সঙ্গী/সংগিনীর বিদ্যমান স্বাস্থ্য-সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না-থাকাই স্বাভাবিক, ফলে বাঁচতে হলে জানতে ত হবেই ;;; )। আমাদের দেশে নর-নারীর নিবিড়তম সম্পর্কের ফাঁটলটা এখনো মনে হয় এতোটা বড় হয় নাই।

      যে কর্মে কন্ডোমের প্রয়োজনীয়তা প্রচার করা হয়, তা'তে পারস্পরিক বিশ্বাস+মনের যোগ থাকলে 'ইরাম জানা'র প্রয়োজন নাই। (উদাহরণের জন্য সমরেশের 'দৌড়' উপন্যাস স্মরতব্য)।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
      • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

        😮 😮 😮 :(( :(( :(( নাহ এই ব্লগের বেস্ট আঁতেল খেতাব মুহম্মদ না মাহমুদ ভাইরে দিমু সেইটা নিয়া ব্যাপক গবেষণা কর্তে হৈবো দেখতাছি :bash: :bash: :bash:

        আমি কইছিলাম যে ওই বড়ভাইরা নিজের গিয়ান ঝাড়তে সব কিছুর মইদ্যে পোস্ট মডার্নিজম, মার্ক্সিজম,জাদুপরাবাস্তবতা এইসব লাগায় দিতো-প্রাসঙ্গিক হউক বা না হউক কুনু বাছ বিচার নাই।সেইটা কৈতে গিয়াই কন্ডোম থেকে কন্সট্রাকশন উপমার অবতারণা।

        😡 😡 মিয়া আপনে হৈলেন ডক্টর মুহম্মদ জাফর ইকবালের সেই বিজ্ঞানী সফদর আলির মত-সফদর আলীরে এক বেটা কৈছিল-"তোর চামড়া ছিল্লা জুতা বানায় রাখুম"।সফদর আলী তখন গবেষণা কৈরা দেখাইছিল যে ক্যান মানুষের চামড়া দিয়া জুতা বানানো ফিজিবল না-ইলাস্টিসিটি আর সাস্টেইনেবিলিটি কম দেইখ্যা ইত্যাদি ইত্যাদি... :bash: :bash:

        মাহমুদ ভাই,ডিটেইলস এ না যাইতে পারি কিন্তু আপনের এই লেখা পড়ার পর পোস্ট মডার্নিজম সম্পর্কে অন্তত প্রাথমিক ধারণাটা পাইছি, এই শবটা শুনলে এখন আর ডরে তর্ক করা বন করুম না। এই লেখার এইটাই মনে হয় সবচেয়ে বড় সার্থকতা,আমার মত গাবরেও অন্তত এবিসি টা ধরাই দিছে।

        অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।

        জবাব দিন
  4. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    আপনি খুব গুছিয়ে লিখতে পারেন। আপনার পুরো লেখার প্রথম লাইনটা বুঝলে এর পরেরটাও বোঝা যায়- এভাবে চলতেই থাকে। এক লাইন বুঝলেই তার পরেরটা বোঝা যায়। স্টাইলটা মনে হচ্ছে খুব সায়েন্টিফিক।
    ভাল লাগল পড়ে। পোস্টমডার্নিজম নিয়ে আপনার কাছ থেকে লেখা আশা করছিলাম। আমি এর আগে পোস্টমডার্ন দর্শন-আর্ট-সাহিত্য-সিনেমা নিয়ে একটা-আধটু পড়েছি। কিন্তু এর সামাজিক দিকটা একেবারেই জানতাম না। অনেক কিছু পরিষ্কার হল। আরও লিখেন।

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      ধন্যবাদ তোমাকে। অনেকদিন মনে রাখার মতো একটা কমেন্ট করেছো 🙂 ।

      পোষ্টমডার্ণিজমের সাংস্কৃতিক বিপ্লবটা বোঝা অনেকটা সহজ, কিন্তু এর সামাজিক পটভূমি আসলেই একটু জটিল লেগেছে আমার কাছে। ভালো লাগল যে, কয়েকজন বুঝতে পেরেছে আমার বক্তব্য।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  5. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    কমেন্ট গুলা পড়ছি, লেখাটা পড়িনাই এখনো, ভাবতাছি পড়ুম কিনা। আমার আবার সিরিয়াস কিছুই সহ্য হয় না।

    শুন কামের কথা কই, আরিফ কইতেছি তোমার এড্রেস নাকি খুইজ্জা পায়না, আইজ্জকা মেইলে দেখলাম পাইছে। বুঝবার পারতাছিনা তোমারে আজাইরা বিপদে ফেললাম কিনা, 🙁

    জিনিস পত্তর পাইছো কিনা আওয়াজ দিও, আর পারেল টেষ্ট করি নিও। খারাপ থাকলে ফেরৎ দিতে পারবা। আর ট্রাইপড আনতে না পারলে অসুবিধা নাই, আরিফকে দিয়া আসিও।

    এক্টুস আপডেট দিও, এখানে বা মেইলে।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  6. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    উত্তরাধুনিকতা ব্যাপারটা নিয়া আগে কিঞ্চিত ধারণা ছিল। এইবার আরো অনেক ভালোভাবে বুঝলাম। মাহমুদ ভাই এক কথায় দারুণ শিক্ষক। আর কিছু বলার নাই। =)) =)) =))

    জবাব দিন
  7. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    অনেক কিছু জানলাম।
    শুধুমাত্র সাহিত্যে উত্তরাধুনিকতা নিয়ে ভাসা ভাসা পড়েছিলাম, এবার তার সামাজিক প্রেক্ষাপট জানা হলো। লেখাটা খুব ভালো লাগলো মাহমুদ ভাই। আশা করি এর প্রভাবের বিভিন্ন দিক নিয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করবেন।

    দুইটা আবদার ছিলো।
    উন্নয়ন পাঠ নিয়ে আপনার লেখাটা পড়েছিলাম, সেটা নিয়ে আরো বিস্তারিত লিখবেন বলেছিলেন, আশা করি সেটা ভুলে যান নি। ওটার আপেক্ষায় আছি কিন্তু।

    কিছু কিছু জায়গায় বানানের প্রতি আপনি কম যত্নবান। এতো সুন্দর লেখায় বানান প্রমাদ থেকে গেলে কেমন জানি লাগে পড়তে। আশা করি বেয়াদবী হিসেবে নেবেন না। 😛

    আপনার শিক্ষক হবার আগ্রহ জেনে খুব ভালো লাগলো। আমার ধারণা শিক্ষক হিসেবে আপনি চমৎকার হবেন। শুভকামনা রইলো।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      শেষের দিক থেকে দ্বিতীয় প্যারা'য় এসে আমি হঠাত করেই আলোচনা শেষ করেছি, কারণ পোষ্ট অনেক বড় হয়ে যাচ্ছিল।

      কর্পোরেট পুঁজি সরাসরি উতপাদন থেকে সড়ে এসে সেমি-কন্ডাক্টরদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে বাজারের অস্থিতিশীলতার রিস্কটাও নিজের ঘাড় থেকে অন্যদের ঘাড়ে চালান করে দেয়। আর যেহেতু ম্যানুফেকচারের বেশিরভাগ কাজ অন্যদের কাছে ছেড়ে দেয়, তাই কর্মী-শ্রমিকদেরও একটা বড় অংশকে ছাটাই করে দেয়+অস্থায়ী নিয়োগ দেয় যাদেরকে স্থায়ী কর্মীদের জন্য প্রদত্ত সুবিধাগুলো দেওয়া লাগে না। এইভাবে নিজের উপর থেকে বাজারের রিস্ক+উতপাদন ব্যয়ের অধিকাংশ সেমিকন্ডাক্টর+অস্থায়ী কর্মীদের দিয়ে করিয়ে নেয় যাদের সাথে 'সোস্যাল কন্ট্রাক্ট'এ যাওয়া লাগে না।

      অন্যদিকে বড় বড় শিল্পের সেমি-কন্ট্রাক্ট পাওয়ার জন্য উদ্ভব হয় ছোট ছোট ফার্ম, কন্সালট্যান্সি, ইত্যাদি যারা নিজেদের মধ্যে প্রবল প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয় কন্ট্রাক্ট পাবার জন্য। যে যত কম দামে মান-সম্মত সার্ভিস দিতে পারে, সেই পেয়ে যায় কন্ট্রাক্ট। ফলে এইসব ছোট ফার্ম-কন্সালট্যান্সি নিত্য নতুন ডিজাইন, স্বল্প মজুরী, দ্রূত ডেলিভারী, ইত্যাদি উপায়ে নিজেদেরকে কম্পিটিটিভ করার প্রয়াস পায়। টিকে থাকার জন্য এইসব সেকেন্ডারী উতপাদকদের উল্লিখিত উপায়গুলো অনুসরণ করে যেতেই হয় অবিরাম যা' এইসব ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা+কর্মীর উপর ক্রমাগত চাপ তৈরী করেই যায়।

      - এই ব্যবস্থাকে ফ্লেক্সিবল বলা হয়েছে কর্পোরেট পুঁজির দৃষ্টিকোণ থেকে। কারণ, এখানে বৃহত পুঁজি ইচ্ছেমত যেখানে খুশি সেখানে চলে যেতে পারে, যাকে ইচ্ছে তাকে সাব-কন্ট্রাক্ট দিতে পারে, কর্মীদের কোন দায়িত্ব নেওয়া লাগে না (সবগুলোই ফোর্ডিজমের বিপরীত)।

      উন্নয়ন নিয়ে আরেকটু সিরিয়াস লেখার ইচ্ছে আছে। কাজেই, ওটা বাড়ী গিয়ে সময় নিয়ে লিখবো।

      বানানের ব্যাপারটা ঠিকই বলেছো। কিন্তু আমি 'খন্ডত' লিখতে পারিনা। কাজেই... একটা ডেমো দিও, তাইলে পরের লিখা থেকে ঠিক করে লিখা যাবে। বাকিগুলা মনে হয় ঠিক আছে, নাকি? না থাকলে জানান দিও। আজকের পর থেকে কয়েকদিন সিসিবি'তে আর আসতে পারবো না। টার্ম শেষ হয়ে আসছে। বিরাট দৌড়ের উপরে আছি।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  8. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    পোস্টমর্ডানিস্ট ফেমিনিসম সম্পর্কে পড়াশুনা করেছিলাম। এখন বুঝতে পারলাম অদের কথার গুঢ় অর্থ। অনেক সুন্দর একটা পোস্টের জন্য ধন্যবাদ মাহমুদ ভাই।

    কেউ কিছু মনে করবেন না, এটা তো অতি সহজ একটা পোস্ট। এন্টেনার কি দরকার? 😮

    জবাব দিন
  9. সামি হক (৯০-৯৬)

    এর আগে আমি যেইখানেই পড়তে গেছি সেইখানেই এই পোস্টমর্ডানিসম নিয়ে পড়া লেগেছে কিন্তু কখনো এতো গভীরভাবে বিষয়টা নিয়ে পড়ি নাই। মাহমুদ খুব সুন্দর করে পুরা বিষয়টা তুলে ব্যাখা করেছ।

    তোমার এই লেখাটা পড়তে পড়তে একটা বিষয় মনে হলো, তুমি বলেছ যে -

    মহামন্দার পরে আমেরিকায় মহামন্দার সময় জাতীয় অর্থনীতিকে উদ্ধারের জন্য রাষ্ট্র সরাসরি অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নেওয়া শুরু করে। রাষ্ট্রের এই অংশগ্রহনের মূলে ছিলো দেশীয় শিল্পের উতপাদন বৃদ্ধি করা এবং এই লক্ষ্যে কর্পোরেট পুঁজি+সংঘবদ্ধ শ্রমিকশ্রেণীকে একটা নির্দিষ্ট পথা চালিত করা। রাষ্ট্র-কর্তৃক বিভিন্ন শিল্পস্থাপনা কিনে নেওয়া, ব্যাপকহারে লোন দেওয়া, সরকারী খাতে (বিশেষ করে সামরিক খাতে) বড় বড় ক্রয়, রাস্তাঘাট, রেলপথ বিস্তার+সংস্কার ইত্যাদি শিল্প উতপাদনে গতিশীলতা নিয়ে আসার মাধ্যমে রাষ্ট্র কর্পোরাট পুঁজিকে একটা শক্ত ভিত্তির উপর দাড় করায়।

    এই ২০০৯ সালের দিকে তাকায়ে দেখো আবার ঠিক সেই অবস্থা তৈরী হয়েছে খালি এখনো আমরা বুঝতে পারছি না যে সেই একই পদক্ষেপগুলো এই ২০০৯ সালে এসে সরকার নিলে আবার অর্থনীতি চাংগা হবে কিনা।

    ওহ ২০০৯ সালেই বান্ধা গরু হচ্ছো নাকি? আমার দলে আসার জন্য আগাম শুভেচ্ছা 😀

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
      সামি হক (৯০-৯৬) বলেছেনঃ

      আমার ব্যাচমেট। :awesome: :tuski: :guitar:

      ধন্যবাদ দোস্তো। খুবই ভালো লাগল তোর কমেণ্ট পেয়ে।

      কিন্তু মন্তব্যে 'তুমি তুমি' করে বললে ক্যামুন যেন একটা 'সিনিয়র সিনিয়র' ভাব আসে। কাজেই, ঐটা বাদ দে। তা নাহলে তোর ব্যান চামু :grr:


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  10. জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)

    @মাহমুদ ভাই, গ্রেইট! ভালো হয়েছে, অনেক কিছু বুঝলাম এবং জানলাম, আরও বিস্তারিত এবং বড় হলে ভালো হতো, সম্পুর্ণতা আসতো।

    @অ্যান্টেনা ভাইয়েরা, বলাই বাহুল্য একটি পোস্ট যা কিনা সিসিবিকে সম্বৃদ্ধ করছে, এরকম একটি পোস্টে অ্যান্টেনা ইত্যাদি চতুর্থ শ্রেনীর ছেলেমানুষী জারগন ব্যাবহার পোস্টের গাম্ভীর্যই শুধু মাটি করে দেয়না, লেখক যে কিনা তার মুল্যবান সময় নষ্ট করে, শ্রম দিয়ে এই পোস্ট লিখলো তাকেও নিরুতসাহীত করে। অ্যান্টেনা ভাইয়েরা নিজেদের অনুতসাহকে এভাবে প্রকাশ না করলেই ভালো হয়, কেননা অন্য কেউ উতসাহী হতেও পারে। আর মনটাকে আরও একটু বড় করে চিন্তা করুন। একবার গুগোল করে দেখুন কতগুলো কি ওয়ার্ডে আমাদের সিসিবি টপ থ্রীতে আসে, এইমাত্র দেখলাম "পোষ্টমডার্ণিজম" কি ওয়ার্ডে এই পোস্টটিই প্রথমে। তাহলে? মানুষ ইন্টারনেটে আসে তথ্যের জন্য এবং বিনোদনের জন্য। এমতাবস্থায়, আমার মত হাবড়া বুড়োর লঘু পারিবারিক আলাপে কারো কোন আমোদ থাকতে পারে না, থেকে থাকলে এটাকে উভয় পক্ষের জন্যই তিরস্কারযোগ্য বলা যায়। আমার কোনই সমস্যা নেই কেউ তারো self-gratificationপ্রসুত অলস বিলাসে মেতে থাকতে চাইলে; কিন্তু, পৃথিবীর প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বারান্দা দিয়ে হাটা ছেলেপেলেরা যখন তাদের মুল্যবান সময় এবং শ্রম দিয়ে যায় কোন একটি মহৎ উদ্দেশ্যে, সেই উদ্দেশ্যের নির্যাস বুঝতে না পেরে অবান্তর কথা বলে যাবেন না প্লিজ। এই পোস্ট লিখতে কারো যদি এক ঘন্টা লেগে থাকে, যদি মিনিমাম পেমেন্টও এর জন্য তার প্রাপ্য হয় সেটা ৬ পাউন্ড বা ৬০০ টাকা বাংলাদেশী টাকায়। এই ৬০০ টাকা সমমুল্যের জিনিষ সে বিনামুল্যে দিচ্ছে সিসিবিকে। বর্তমান এই কঠিন পৃথিবীতে ঘোষণার কোনই মুল্য নেই, সিসিবিকে আপনি কতটা ভালোবাসেন আপনি যদি ভেবে থাকেন এটার নির্ধারক হবে শুধুই আপনার ঘোষণা i'm sorry to say, hell! no. ভালোবাসা জিনিষটা মাপা যায়। আপনার সিসিবিপ্রিতী নির্ধারিত হবে এটা দেখে যে, সিসিবিতে আপনার অবদান কত, কতটা ভালো পোস্ট আপনি লিখছেন, আপনার পোস্টের কিওয়ার্ডগুলো কতটা সার্চটার্মে সম্বৃদ্ধ এবং কতটা ট্রাফিক আপনি ড্রাইভ করতে পারছেন। কাউকে আঘাত করতে চাইনি। সিসিবিতে এরকম ভালো পোস্ট আরও লেখা হোক। ধন্যবাদ।

    জবাব দিন
    • কামরুল হাসান (৯৪-০০)

      অর্ণব
      সিসিবির প্রতি তোমার দায়বদ্ধতা, ভালোবাসা দেখে খুব ভালো লাগলো। এ'ও ভালো লাগলো যে সিসিবি'কে নিয়ে তুমি খুব ভাবছো। অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।
      এবার কাজের কথায় আসি-

      তুমি নিশ্চয়ই এতোদিনে বুঝতে পারছো সিসিবি তথ্যমূলক কোন সাইট নয়, একটা কমিউনিটি ব্লগ। তথ্য ও বিনোদনমূলক অনেক লেখা এখানে আসে এবং পারস্পরিক আলোচনা-সমালোচনা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় সেগুলি পূর্ণতা পায়। আর সেই আলোচনা-সমালোচনা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যম হচ্ছে 'মন্তব্য-প্রতি মন্তব্য'। সিসিবি'র সজীবতা হচ্ছে এর 'মন্তব্য' মাধ্যমটি। এখানে যেকোন লেখায় অনেক ধরণের মন্তব্য আসে, লঘু অথবা গুরু, হালকা অথবা ভারী।

      তুমি নিশ্চয়ই আশা করো না সব সময় সব লেখায় খুব ভারী ভারী মন্তব্য হবে! আমার ধারণা কোন লেখার লেখক নিজেও এটা আশা করেন না। ব্লগিং ব্যপারটাই এমন। হালকা- ভারী মতামত নিয়েই এর পূর্ণতা। কেউ হালকা কোন মন্তব্য করলেই সেটাকে 'চতুর্থ শ্রেনীর ছেলেমানুষী' বলাটা আদৌ শোভন কিনা একবার ভেবে দেখো। ভাবার সময় এটাও মাথায় রেখো কাদের উদ্দেশ্যে তুমি কথাটা বলেছো!

      কেউ রসিকতা করে কিছু বললে সেটাকে 'অনুৎসাহিত করা' ভেবে নেয়াটা একান্তই তোমার নিজের কল্পনাপ্রসূত। এই রসিকতাটাও পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার একটা অংশ। আমার ধারণা তুমি হয় রসিকতাটা বুঝতে পারোনি বা তোমার মধ্যে এই বিশ্বাস ভুলভাবে গেঁড়ে বসেছে যে বাকিদের চেয়ে তুমি অনেক বেশি পন্ডিত।

      'অ্যান্টেনা ভাইয়েরা' সম্বোধনটার ব্যবহার তাই রীতিমতো অশোভন। এরপর পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়াকে 'হাবড়া বুড়োর লঘু পারিবারিক আলাপ' বলাটা আমার কাছে অশ্লীল মনে হয়েছে। সবকিছু মিলে তুমি তোমার নিজের মন্তব্যটাও তুমি অনেক 'লঘু' করে ফেলেছো।

      এটা খুবই ভালো লক্ষণ যে, অনেকগুলি কী-ওয়ার্ড গুগুল সার্চে এখন সিসিবি থেকে পেজ আসে। আমরাও চাই এটা উত্তরোত্তর আরো বাড়ুক। তার মানে এই না যে সব সময় ভারী-ভারী মন্তব্য করে যেতে হবে তোমার 'ভালোবাসার পরিমাপকে' এগিয়ে থাকার জন্যে। কিছু হাল্কা কথাবার্তার দরকার আছে বৈকি!!

      খেয়াল করে দেখো এই পোস্টটাতেও বিষয় নিয়ে মন্তব্যই অনেক বেশি, হাল্কা মন্তব্যও এসেছে, কিন্তু সেটাও নিছক রসিকতা, 'self-gratification প্রসূত অলস বিলাস' নয় মোটেও।

      আর সবশেষে একটা কথা, আশা করি তুমি অজস্র ভুল বানানে বাংলা না লিখে শুদ্ধভাবে লেখার চেষ্টা করবে। তুমি নিশ্চয়ই চাও না গুগুল কী-ওয়ার্ড সার্চে ভুল বানানে লেখা তোমার মন্তব্য বা লেখাগুলি পড়ে কেউ বিরক্ত হউক ! অথবা ইন্টারনেটে ভুল বানানে বাংলা লেখার সংখ্যা দিন দিন বাড়ুক ! চাও কি?

      ভালো থেকো।


      ---------------------------------------------------------------------------
      বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
      ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

      জবাব দিন
      • কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

        এর চেয়ে ভালোভাবে আর বলা যেত বলে মনে হয়না। :thumbup: :thumbup:
        'কাউকে আঘাত করতে চাইনি' ট্যাগ লাইনটা বিরক্তির উদ্রেক ঘটাচ্ছিলো আরো ঘটা করে। এই ধরণের মন্তব্য করাটাই সবচেয়ে অবিবেচনাপ্রসুত মনে হয়েছে আমার কাছে। সিসিবির সবাই একই মানসিকতার নয়, তাই সবকিছু সবার মন মতো হবার সুযোগ শুন্যের কাছাকাছি। আর লেখক যদি হালকা মন্তব্যে আহত বোধ করেন তবে সেটা তিনি উল্লেখ করলে অন্যরা এটা খুশি মনেই মেনে নেবেন এই বিশ্বাস আমার অন্তত আছে।
        অন্যদের পারস্পরিক খুনসুটির মিথষ্ক্রিয়াকে যে কেউ অপছন্দ করতেই পারেন, এবং অবশ্যই তা জানাতে পারেন; এই অধিকার আমাদের সবারই আছে। কিন্তু তা অবশ্য অবশ্যই পরিশীলিত ভাষায় হওয়া উচিত।
        ধন্যবাদ।


        সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

        জবাব দিন
        • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

          এই পোস্ট লিখতে কারো যদি এক ঘন্টা লেগে থাকে, যদি মিনিমাম পেমেন্টও এর জন্য তার প্রাপ্য হয় সেটা ৬ পাউন্ড বা ৬০০ টাকা বাংলাদেশী টাকায়। এই ৬০০ টাকা সমমুল্যের জিনিষ সে বিনামুল্যে দিচ্ছে সিসিবিকে

          আমরা সবাই জানি যে সিসিবি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে সবাই(অর্থাৎ ক্যাডেটরা) নিজের পছন্দমত বিষয় কোনরকম পারিশ্রমিকের আশা না করেই প্রকাশ করে কাজেই "বিনা পেমেন্টে নিজের গবেষণালব্ধ কাজ দয়া করে পড়তে দিচ্ছি"এ জাতীয় মনোভাব যদি কারো মাথায় এসে থাকে তবে তা অত্যন্ত সংকীর্ণ মনোভাবের প্রকাশ ঘটায় বলেই আমি মনে করি।তর্কের খাতিরে এটা যদি আমরা ধরেও নেই যে আসলেই বিনামূল্যে পড়তে দিয়ে কেউ আমাদেরকে "বাধিত" করছে বলে আমার তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিৎ,তবে এটাও কিন্তু মনে রাখতে হবে যে প্রকাশ করার মাধ্যমে লেখক যে আত্মতৃপ্তি পেলেন(অন্ততঃ ব্লগার হিসেবে আমি পেয়ে থাকি)তার মূল্যটাও কিন্তু সেই তথাকথিত ডলার হিসেবের চাইতে বেশি বই কম নয়,বিশেষ করে অনেক লেখককে একটা আর্টিকেল প্রকাশ করতে যে ঝক্কি পোহাতে হয় তার কথা চিন্তা করলে ত নয়ই।

          তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত,এ জাতীয় পুরো চিন্তাধারাটাই অত্যন্ত ছেলেমানুষী , ডঃ জাফর ইকবালের "পুঁজিবাদী দেশে একদিন" বা কাছাকাছি নামের গল্পের সেই ঘটনার মত যেখানে সবকিছুকে অর্থের নিরীখে বিচার করা হয়।চিন্তার স্বাধীনতা সবার আছে তবে এই ব্লগের একজন শুভাকাঙ্খী হিসেবে এ চিন্তাধারাকে আমি অসুস্থ বলেই মনে করি।

          আপনার সিসিবিপ্রিতী নির্ধারিত হবে এটা দেখে যে, সিসিবিতে আপনার অবদান কত, কতটা ভালো পোস্ট আপনি লিখছেন, আপনার পোস্টের কিওয়ার্ডগুলো কতটা সার্চটার্মে সম্বৃদ্ধ এবং কতটা ট্রাফিক আপনি ড্রাইভ করতে পারছেন

          ক্যাডেট কলেজ ব্লগের সম্মানিত সদস্যদের সিসিবিপ্রীতি নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা এবং এই মানদন্ড দাঁড়া করানোর অধিকার কাউকে দেয়া হয়েছে কিনা সেটি আমার সম্পূর্ণ অজ্ঞাত।আবারো তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেয়া হয় দেয়া হয়েছে,তাহলেও "কতটা ট্রাফিক ড্রাইভ করতে পেরেছি" এর মত হাস্যকর মাপকাঠি অন্ততঃ আমি মেনে নেবনা।উদাহরণস্বরূপ, জিহাদের "এখনো কিসু শিখতার্লামনা" ব্লগটি সম্ভবত বিডিয়ার পরিস্থিতির পরেই সিসিবির অন্যতম ট্রাফিক-সমৃদ্ধ ব্লগ।আমার সাথে এক তরুনীর ড্রামাটিক ভঙ্গিতে তোলা একটি ছবিকে উপজীব্য করে লেখা দুই শতাধিক কমেন্ট এবং ততোধিক ট্রাফিক আনয়নকারী এ লেখাটি নিঃসন্দেহে একটি মজাদার লেখা(জিহাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি) কিন্তু একে সিসিবির প্রতি অমর অবদান বোধহয় লেখক জিহাদ নিজেও বলবেনা।বরঞ্চ অনেক তথ্যসমৃদ্ধ এবং গবেষণার ক্ষেত্রে মূল্যবান লেখা পাঠকপ্রিয়তা পায়নি এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি।

          সিরিয়াস লেখায় চটুল কমেন্ট না করতে বলার অনুরোধকে আমি সাধুবাদ জানাই তবে সেটা করতে গিয়ে যদি কেউ আমার প্রতি "চতুর্থ শ্রেনীর ছেলেমানুষী" বা "হাবড়া বুড়োর লঘু পারিবারিক আলাপ" জাতীয় শ্লেষ এবং সিসিবির প্রতি আমার ভালবাসা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তবে সবার আগে আমার যে কাজটি করতে হবে তা হচ্ছে বক্তার মুখমণ্ডলে প্রথম শ্রেণীর একটি তাগড়া তরুন হাতের চপেটাঘাত বসিয়ে দেবার মত তীব্র ইচ্ছা থেকে নিজেকে সংবরণ করা।

          ধন্যবাদ সবাইকে।

          জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      অর্নব,

      ধন্যবাদ তোমার মন্তব্যের প্রথম অংশের জন্য। ইচ্ছে ছিলো আরো বিস্তারিত আলোচনা করার। কিন্তু সাধারণ পাঠকের কথা চিন্তা করে ছোট করেছি। তবে কেউ বিশেষভাবে আগ্রহী হলে তখন বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাবে।

      গুগুলের বিষয়টা এখন থেকে মাথায় রেখে লেখার মান-উন্নয়নের চেষ্টা করবো।

      তোমার মন্তব্যের দ্বিতীয় অংশের বক্তব্যটা অন্যভাবেও উপস্থাপন করতে পারতে। আশা করি, পরবর্তীতে বিষয়টা মাথায় রাখবে।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  11. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    আমি দেখা যায় শৈশবাক্রান্ত থেকে এই চমৎকার লেখাটা এবং মন্তব্যগুলো গত দুদিনে মিস করেছি। লেখাটা খুব ভালো লাগলো মাহমুদ।

    আজকাল ইউনির্ভাসিটির তরুণ শিক্ষকরা কেন যে কোনো কিছুকে এতো ক্রিটিক্যালি দেখে তার মাজেজা বোঝা গেল! আমার মনে হয়, তারা সবকিছুকে নেতিবাচকভাবে দেখে। সবকিছুতেই স্বার্থ ও বিশেষ উদ্দেশ্য খোঁজে। যেমন ধরো কেন প্রথম আলো এসিডদ্বগ্ধদের নিয়ে কাজ করে, কেন সুশীল সমাজ সুশাসনের জন্য জনমত গঠনে ভূমিকা রাখে..... ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা এসব কিছুকে নৃশংসভাবে কাটাছেড়া করে ফালাফালা করে। আর এটা করতে গিয়ে অনেক ভালো কাজ বা সৎ উদ্যোগকেও অঙ্কুরেই নষ্ট করে দেয়। অথচ তারা ভালো কিছু বিকল্প দিতে পারে না। আঁতেলের মতো ভাব নিয়ে রীতিমতো কসাইয়ের ভূমিকা পালন করে। (সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে আঘাত দেয়ার জন্য বলিনি। কেউ পার্সোনালি নিও না।)

    পোষ্টমডার্ণিজমের সবথেকে বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, এটা বিকল্প কোন সমাজের আশ্বাস দিতে ব্যর্থ। এটা বিদ্যমান সমাজকাঠামোকে শুধু ভাঙ্গেই, তদস্থলে নতুন কিছু গড়ে না। একারণে অনেক বিজ্ঞানীই পোষ্টমডার্ণিজমকে পরিত্যাগ করেছেন

    তোমার এই পর্যবেক্ষণটা তাই আমার কাছে যথার্থ মনে হয়েছে।

    ফোর্ডিজম ও পোস্ট-ফোর্ডিজমকে যেভাবে সহজ করে তুমি প্রকাশ করেছ তাতে :hatsoff: যথেষ্ট নয়। পুঁজির বিকাশ, স্থানান্তর, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের কান্নাকাটির কারণটাও বুঝলাম। তবে আমার আগ্রহের বিষয়টা হচ্ছে পুঁজিবাদ ভীষণ নমনীয় একটা ধারণা। ধাক্কা খেলে সামলানোর চেষ্টা করে, নিজেকে দ্রুত বদলাতে পারে। সে তুলনায় সমাজতন্ত্রীরা ভীষণ কঠোর, ভাঙ্গবে তবু মচকাবে না। তোমার নির্মোহ ব্যাখ্যা আসলেই অসাধারণ।

    মানুষ হিসাবে আমি ব্যক্তিগতভাবে নমনীয়। কিন্তু কিছু মূল্যবোধকে আমি মনে করি সার্বজনীন। ভালো মানুষ হওয়া, প্রতিহিংসাপরায়নতাকে সচেতনভাবে এড়িয়ে চলা, নিজের কাছে সৎ থাকা, মানুষের উপকার করতে না পারলে ক্ষতি না করা, সমাজটাকে একটু একটু করে বদলানো, এগোনোর চেষ্টা করে যাওয়া- এসবই আর কি। কট্টর কোনো পথ বা মত আমার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। আমি যতো শিখি ততো ধারণ করি, বদলাই। নিজেকে কোনো গন্ডিতে আটকে ফেলা বা চকসার্কেলে সীমিত করে ফেলাটা একটা মানুষের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা বলে আমার মনে হয়।

    অনেক কথা বলে ফেললাম। নিজের কথাগুলোও বললাম এ কারণে হয়তো সেটা অন্যকে ভাবাতে পারে। আবারো ধন্যবাদ মাহমুদ।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      সানা ভাই,
      খুব ভালো লাগল জেনে যে, এই পোষ্টটা আপনার কিছু আইডিয়া ক্লিয়ার করেছে। তবে আরেকটা বিষয় জানানোর দরকার মনে করছি- আমি পুঁজিবাদের বিপরীতে কিন্তু সমাজতন্ত্র বা অন্যকোন তন্ত্রকে প্রতিপক্ষ দাঁড় করাচ্ছি না। আগে ত পুঁজিবাদকে ঠিকমত বুঝে নেই, তারপর বিবেচনা করা যাবে বিকল্প লাগবে কি না, লাগলে সেটা কেমন হতে হবে, ইত্যাদি।

      কেউ পার্সোনালি নিও না।

      না, সেই সম্ভাবনা নেই, আপাততঃ এখনই না। কারণ, এখনো 'সিরাম কাটাছেঁড়া' করার যোগ্যতা হয় নাই। আগে কসাই হয়া নেই, তারপরে দেহুমনে মাইন্ড খামু কি না। ;;;


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
      • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)
        তবে আরেকটা বিষয় জানানোর দরকার মনে করছি- আমি পুঁজিবাদের বিপরীতে কিন্তু সমাজতন্ত্র বা অন্যকোন তন্ত্রকে প্রতিপক্ষ দাঁড় করাচ্ছি না।

        ধন্যবাদ মাহমুদ, আমি কিন্তু তোমার লেখা থেকে এ মন্তব্য করিনি। পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের যে সামান্য তুলনাটা আমি করেছি, সেটা বিষয়ের কারণে এসেছে। তোমার কোনো জবাব বা অন্য কিছু নয় ভাইয়া। ভালো থেকো।


        "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

        জবাব দিন
  12. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    মাহমুদ ভাই, বানান নিয়ে একটা কথা। বিদেশী শব্দে তো ণ-ব্যবহৃত হয় না। তাহলে পোষ্টমডার্ণিজম না হয়ে পোস্টমডার্নিজম হওয়াই কি উচিত না? আমি কিন্তু ন-ই ব্যবহার করি।

    জবাব দিন
  13. অনেক কিছু জানলাম। ভালো লাগলো। তবে শুধু সামাজিক বস্তুগত ভিত্তিতে আটকে না থেকে লেখাটা আরো কিছুদূর নিলে, অর্থাৎ উত্তর আধুনিকতার ফর্মটা ব্যাখ্যা করলে উপকৃত হতাম।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।