গাধা গুলো চোরাবালিতে

পাবনা ক্যাডেট কলেজের ৯৫-৯৬ সালের ঘটনা। ক্লাস সেভেনের এক ক্যাডেটকে ক্লাস এইট এর এক ভাইয়া Stupid বলেছেন। ক্লাস সেভেনের সেই ক্যাডেট রীতিমত ঝগড়া লাগিয়ে দিয়েছে, প্রায় হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল।(একেবারে নতুন ক্যাডেট বলে) । এমন সময় এক ভাইয়া এসে বল্লেন…এই ছেলে সমস্যা কী?

-ভাইয়া আমাকে স্টুপিড বলে গালি দিয়েছে।

-স্টুপিড কি গালি নাকি?

-জি ভাইয়া। আমি প্রিন্সিপালের কাছে যাবো।

-বোকা ছেলে।তুমি তো আসলেই বোকা।তোমাকে গালি দেয় নাই। Stupid মানে হচ্ছে বোকা। তোমাকে বোকা বলেছে।

-না ভাইয়া। Stupid বলে গালি দেয়।

-তুমি নিজে ডিকশনারী দেখো। stupid মানে বোকা।যাও।

ক্লাস সেভেন এর ক্যাডেট যথারীতি ডিকশনারী খুলে দেখে stupid মানে আসলেই বোকা। তিনি আর কিছু বলতে পারেন না।

 

গনতন্ত্র রক্ষায় নাকি হরতাল দিয়েছে বি,এন,পি । সত্যিই তো হরতাল না দিলে গনতন্ত্র থাকবে না। বিরোধী দল যে দেশে আছে এটা বুঝা যাবে না। আর গনতন্ত্রের প্রহরী তো বিরোধী দল। তাদের একটা দায়িত্ব আছে না?আর সারা দেশের জনগণ তাদের সাথে আছে। এটা হরতাল শেষে বিরোধী দলের নেতাদের মুখে মুখস্ত করা বুলির মত শোনা যায়। তারা কখনোই হরতালের নামে গাড়ি পোড়ানো, দোকান পাট ভাংচুর, মানুষ মারা এসব কখনোই স্বীকার করে না। জনদূর্ভোগ বলে একটা কথা যে আছে বিরোধী দল খুব ভাল করে বলেন (সরকারের অপসাশনে)। হরতালের জন্য জনদূর্ভোগ হয় এটা তারা মুখে ভুলেও আনেন না।মজার বিষয় হচ্ছে আমরা যে এটা বুঝতে পারি এটাও তারা স্বীকার করেন না। আমরা stupid হয়ে থাকি। গালি দেয়া হয় নাকি বোকা বানানো হয় ক্লাস সেভেন এর ক্যাডেট এর মত বুঝতেও পারি না।

সরকারী দল তাদের দেশের (জনগনের স্বার্থ রক্ষার্থে) কোনো প্রকার নাশকতা মূলক কাজ কর্ম থেকে বিরত রাখার জন্য বিরোধী দলের কর্মীদের গণগ্রেপ্তার করে। বিরোধী দলেরও যে একটা জনমত আছে সেটা জানেন না। তারা শিখেও শেখেন না। বিরোধী দলের প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচী ছিলো প্রেস্ক্লাব থেকে। সৌভাগ্যবশত সেদিন কোনো বাধা দেয় নি সরকার(পুলিস)। ফলাফল? প্রেস্ক্লাব থেকে মিছিল বাংলা মোটর আসতে আসতে মিছিল হাওয়া। সেই কর্মসূচি রীতিমত হাস্যরসের যোগান দিয়েছিলো মাত্র। আর কিছুই হয় নি। সরকার কি শিক্ষা নিয়েছিল?

সরকার অবশ্য একটা শিক্ষা নিয়েছে। তা হল প্রধান দুইটি দল ছাড়া আর কেউ যেনো ক্ষমতায় আসতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। সে জন্য ড, ইউনুস কে বিদায় করে দিয়েছেন,তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ইস্যুতে বিরোধী দল কে উদ্দেশ্য করে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “সমস্যা আমাদের,আসুন আমরাই সমাধান করি”। আহারে, ক্ষমতার কি সাধ! যারা পরস্পরের মুখও দেখেন না ভাল করে,তারা ক্ষমতায় থাকার জন্য আলোচনায় বসতেও রাজি। হোক না তা পাচ বছর পর পর!!!

সর্বশেষ যে কাজটি আওয়ামী সরকার করেছে তা হল, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফখরুদ্দীন ও মঈনুদ্দীন কে শায়েস্তা করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা কে টেনে এনেছে। এটা কি ড, ইউনুসকে যেভাবে থামিয়ে দেয়া হয়েছে তার লেটেস্ট ভার্সন?

আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি ক্ষমতায় আর ১০ বছর থাকতেন তবে জনগণ খুশি মনেই মেনে নিত। আমি এমনও বলতে শুনেছি, বাংলাদেশ সৃষ্টির থেকে প্রথম বাংলাদেশের মানুষ এই দুই বছর ই শান্তিতে ছিল। আর আমাদের সংবিধানের ধোয়া তুলে তাদের অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হচ্ছে। জনগণের শান্তি নির্বিঘ্ন করাই সংবিধানের ব্যবহারিক উদ্দেশ্য। তাই যদি হয় তবে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফখরুদ্দীন ও মঈনুদ্দীন কে অসাংবিধানিক বলার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বরং আওয়ামী ও বি,এন,পি সরকার সংবিধান কে হাজারবার নিজেদের মত করে কাটা ছেড়া করতে করতে গুবলেট পাকিয়ে ফেলছে।(কিভাবে ফেলছে পরে আরেকটি পোস্টে বিস্তারিত বলবো)। এটা এখন আর আমাদের মহান সংবিধান নেই এটা “ সঙ বিধান” হয়ে গেছে”

আমরা জনতা এই সংবিধানের বেড়াজাল, সরকারী নির্যাতনতন্ত্র,বিরোধী দলের হরতাল, দ্রব্যমুল্যের চাপ আর নানবিধ সমস্যায় জর্জরিত। সমস্যায় সমস্যায় প্যাচ খেয়ে মনে হয় চোরাবালিতে আটকা পরে গেছি।stupid গুলো সবাই চোরাবালিতে পড়ে গেছি। উত্তরনের পথ নেই।কেউ যদি উদ্ধার করতে আসে সেও এই সমস্যার চোরাবালিতে আটকে যায়। বের হবার জানালা নেই। স্বপ্ন নেই।

 

২,০১৮ বার দেখা হয়েছে

১১ টি মন্তব্য : “গাধা গুলো চোরাবালিতে”

  1. আবেদীন (২০০০-২০০৬)

    নিজে বিপদে না পড়লে/নিজের স্বার্থ না থাকলে আজকাল কেওই ঝামেলায় জড়াই না আমরা। এটাই এখন বাংলাদেশে ভাল থাকার স্ট্রাটেজি।

    চারপাশে অনেক অন্যায় দেখি , কিছু বলা হয় না। কারন, ছোটবেলা থেকে মা-বাপ শিখাইছে, ঝামেলার মধ্যে না যাইতে।

    এত অন্যায় আর অবক্ষয় দেখতে দেখতে আমাদের বিবেক সেই কবেই মরে গেছে 🙁 🙁

    জবাব দিন
  2. খালেদ আল নাহিয়ান (২০০৫-২০১১)
    আহারে, ক্ষমতার কি সাধ! যারা পরস্পরের মুখও দেখেন না ভাল করে,তারা ক্ষমতায় থাকার জন্য আলোচনায় বসতেও রাজি। হোক না তা পাচ বছর পর পর!!!

    100% ঠিক কথা। এরা কবরেও ক্ষমতা নিয়ে যাইতে চায়। x-(
    থ্যাংকু ভাইয়া। লেখাটা ভালো লাগল। :boss: :boss: :boss:


    Nahian

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শহীদ (১৯৯৪-২০০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।