পশু এবং আমরা

আমার এক্ টা সুনাম আছে । আমার কলেজের বন্ধুরা ভাল করেই জানে, কতটা আমড়া কাঠের ঢেকি আমি। পরীক্ষার আগে আগে সবার রুমে রুমে গিয়ে সবাইকে বিরক্ত করে আসতাম। ফলাফল যা হবার তাই হত…প্রতিটা পরীক্ষায় খারাপ করতাম। যা এখনো চলছে …আগামী ১০ জুলাই আমার রিসার্চ প্রপজাল সাবমিট করার লাস্ট ডেট। আজো সিরিয়াসলি শুরু করতে পারলাম না…।কপালে কি আছে জানি না…সময়ের কাজ কখনই সময়ে শেষ করতে পারিনা…এমন কি নিজের শখের কাজ গুলোও না…এই যেমন লেখালেখি করতে লিখতে আমার ভীষন ইচ্ছা করে…কিন্তু আলসেমির জন্য কখনই তা করে হয়ে উঠে নাই…কতবার যে ক্যাডেট কলেজ ব্লগে লিখতে গিয়ে ঘুরে এসেছি আর কত যে খাতার পাতা ছিড়ে কত পাতা লিখেছি তা ইয়ত্তা নেই…কখনই সেগুলো আমি ছাড়া আর কেউ কখনই চর্ম চক্ষে দেখে নাই…আজ একেবারে আদা জল খেয়ে লেগে পড়েছি… যে ভাবেই হোক এক্ টা পোস্ট দেবই…জেদ নয়, মানুষ হিসেবে কিছু দায়িত্ত্ববোধ থেকে।

সারারাত ফেসবুক এ পোকার খেলেছি আর শ্রীকান্ত, বাউল শাহ আব্দুল করিম এর গান শুনেছি। সাথে অবশ্য আরেক্ টা কাজ করতে ভুলিনি…এখন কার গান গুলোর শিল্পী আর শ্রোতাদের গুস্টি উদ্ধার করা। শেষ রাতে বিভিন্ন ব্লগে ঢু মারছিলাম…চোখ আটকে গেল ব্লগার দের উপর অত্যাচার, নির্যাতনের খড়গ নেমে আসার বিষয়টি। শুনেছি আগেই কিন্তু ব্যাপকতা এতটা তা আন্দাজ করতে পারিনি। না লিখে আর ঘুমাতে পারলাম না।

মানুষের যখন গলা টিপে ধরা হয় তখন তাদের আর বাচার পথ থাকে না।বাঘ যেমন শিকার ধরার আগে লেজ দিয়ে মাটিতে এক্ টা আঘাত করে তেমনি শিকারও ধরা পরার আগে জান বাচাতে প্রানপনে ছুটে পালায়…দুজনের ই কিন্তু নিজের স্বার্থ রক্ষায় নিজস্ব কৌশল ব্যবহার করে। কেউ নিজের জীবন বাচাতে খাবার জোগাতে, আর কেউ অন্যের খাবার হবার থেকে বাচতে। চরিত্র দুটি একটু বদলে ফেলুন…বাংলাদেশের জনগন হরিন আর সরকার হচ্ছে বাঘ।সে যে সরকার ই হোক না কেন… কিছু মিল খুজে পান কি?

খুজে পেলে ভাল ।আর না পেলে আর একটু ঝেড়ে কাশি…উদাহরণ দেবার জন্য খুব বেশি দূর যাবার দরকার নেই…তিউনিসিয়া, মিশর এর কথা মনে আছে? বছরের পর রাজতন্ত্র নামের জগদ্দল বোঝা টানতে টানতে জনগণ নিষ্পেষিত, অসহায় হরিণ, মহিষের মত। কখনো সে দৌড়ে পালায় আবার নিরুপায় হলে কখনো আক্ক্রমঙ্কারীকেই তাড়িয়ে দেয়। কি কষ্ট পেয়েছেন?মানুষ আর পশুকে এক করলাম বলে? কষ্ট পাবার কিছু নেই।।কিসু কিছু মানুষ পশুদের চেয়েও অধম। মিশরে রাজতন্ত্র আর আমাদের সোনার দেশে সোনার গনতন্ত্র । কেউ কেউ বলতে পারেন, মিশর আর বাংলাদেশ এক হল নাকি? বিবেকবান মানুষ হলে একবার বুকে হাত দিয়ে বলুন ত মিশর আর বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার মাঝে কোনো তফাত আছে কি?

বছরের পর বছর ধরে কখনো সেনাবাহিনী, কখনো রাজবংশের মত (রাজবংশের চেয়েও শক্তিশালী) দুটো পরিবারের লোকজন এসে দেশকে কখনো বাবার সম্পত্তি আবার কখনো স্বামীর সম্পত্তি মনে করে ইচ্ছামত ভোগ করে। জনগণকে দেখায় মূলা, মাঝে মাঝে কাচ কলাও দেখায়। আমরা আম জনতা বুঝি কম। বস্তির বাচ্চা পয়দা করার মত একবার ভোট দিয়ে খালাশ হই। লর্ড ব্রাইস এর সুনাগরিক হই। পরে যারা ক্ষমতায় আসে তারা এই জনগণকে শুওরের বাচ্চা বলেও গন্য করে না,মানুষ হিশেবে ত দুরের কথা। মাঝে  মাঝে তারা আমাদের ভয় দেখায়, রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলার ভয়ও দেখায়,মাঝে মাঝে তারা সাধারণ ক্ষমাও ঘোষণা করেন।ক্ষমতা আছে বটে। সেই ক্ষমতায় তারা খুনের মামলার দন্ডপ্রাপ্ত আসামীকেও বেকসুর খালাশ দেন।

আবার তারা বুদ্ধিমান। ক্ষমতা কোথায় ব্যবহার করতে হবে সেটাও জানেন তারা। ক্ষমতা ব্যবহার করে তারা আইন শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়ন কিংবা বাজার নিয়ন্ত্রন, এক কথায় দুষ্টের দমন করবেন না। করবেন বিরোধী মতাদর্শকে পদানত করতে,বিরোধী দলকে নয় । সেই বিরোধী মতাদর্শ টা কোনো দলেরও হতে পারে আবার সর্ব সাধারনেরও হতে পারে।তারা এটি বুঝবেন না…বুঝবেন দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে।সেই ষড়যন্ত্র রুখে দেবার দায়িত্ত্ব সন্ত্রাশী দল ছাত্র উইংকে দেয়া হয়েছে। তারাও মহানন্দে দায়িত্ত্ব নিয়েই জ্বালাও পোড়াও করছে। তারা যে কাকে মারছে আর কাকে ধরছে এটা তারা নিজেরাও জানে না বলে আমার বিশ্বাস। মাঝে মাঝে বুলি ছাড়বেন এই করব সেই করব…কাজের কাজ কিছুই হয়না…

ক্ষমতা বলে আর এক টা কাজ তারা করেন। তা হল জনগণের সম্পদ কে নিজের মনে করে ভোগ করেন কখনো বা নিজেদের বন্ধুদের বিলিয়েও দেন। টেংরাটিলা। মাগুরছরা গ্যাসক্ষেত্র দূর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ এখন পাইনি, বিনিময়ে তারা নেন বিলাশবহুল গাড়ি। আমাদের দেশে তাদের বিচার হয় না…অথচ নিজ দেশে গিয়ে তারা বিচারের সম্মুখীন।আজ পর্যন্ত এক্তা গ্যাস চুক্তি প্রকাশ করা হয়নি। কেন এসব চুক্তি প্রকাশ করা হয় না? আমরা আম জনতা,বুঝি কম।আসুন কম বুঝেই থাকি।বেশী বুঝতে গেলেই চৌদ্দ শিকের ঘর।সাথে জনগণের বন্ধু পুলিশ এর রামগুতা।

গনতন্ত্রের ধারক নামের সন্ত্রাশীদের রক্তচক্ষু আর পুলিশের রামগুতার ভয় কে উপেক্ষা করে কিছু মানুষ। আমাদেরই কিছু সূর্য সন্তান। যারা কলম ধরে যুদ্ধ করে আবার রাস্তায় নেমেও প্রতিবাদ করে নিজের দেশ কে রক্ষা করতে।ছোট্ট মায়ের বুকের ছোট্ট ধন টুকু আকড়ে রাখতে। আজ তাদেরও গ্রেফতার হতে হয়…লেখালেখি করলেও জেলে যেতে হয়?এ কোন গনতন্ত্র? এটিতো নব্য ফ্যাসিবাদ।একবিংশ শতকের ফ্যাসিবাদ।

বনে পশুরা চিৎকার করে ডাক্’তে পারে।কেউ তাদের বাধা দেয় না। কিন্তু এ কেমনতরো দেশ? যেখানে কথা বলার স্বাধীনতাটুকুও নেই।মত প্রকাশের অধিকার নেই।বন ই বোধ হয় ভাল।

১৬-২-১১ তারিখের দৈনিক প্রথম আলোতে সাংবাদিক আব্দুল কাইয়ুম বলেছিলেন,’মিশর থেকে বাংলাদেশ কতদূর?—মিশরের সংগে বাংলাদেশের ভৌগোলিক দুরত্ত্ব বেশি হলেও নিশ্চিন্তে থাকার সুযোগ নেই”

আর একজন ব্লগার ত লিখেছেন ই,”তারপরো লক্ষণ শুভ, আঘাতে আঘাতে তারা জাগিয়ে তুলছে মানুষকে, প্রহারে প্রহারে খরচ করছে শক্তি। স্বৈরশাসনের পতনের শুরু এভাবেই হয়।“

২,০৫৬ বার দেখা হয়েছে

১৯ টি মন্তব্য : “পশু এবং আমরা”

  1. রায়েদ (২০০২-২০০৮)

    আজ আব্বু ফোন করে জানতে চাইল, আমি গতকাল হরতালে যোগদান করেছিলাম কিনা?

    আমি বললাম, যাইনি, কিন্তু যাওয়া উচিৎ ছিল।

    আব্বু বলল, যাওয়া তো উচিৎ। কিন্তু সবাই না গেলেতো লাভ নাই।

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    পশুদের মাঝে সাদা কালো নীল ভাগ নেই, কিন্তু আমাদের মাঝে আছে। আর আমরা এত গাঢ় ভাবে কোন না কোন রঙে রঙ্গীন, তাতে মিশর ভৌগলিক দূরত্বে যত দূরে, মনে হয় তার থেকেও বেশি নিশ্চিত থাকা যায়।

    ব্লগে স্বাগতম।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. নাফিজ (০৩-০৯)

    সবচে প্যাথেটিক ব্যাপার কি জানেন ?? এই দুই মহিলা পরের চল্লিশ বছরও দেশটাকে চুষে খাওয়ার ব্যবস্থা করে যাচ্ছে...একজনের দুই সুপুত্র, আরেকজনের পুত্র তো যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ অ্যাম্বাসীকে নিজের শ্বশুরবাড়ি বানিয়েছে।

    অপেক্ষায় আছি কোনদিন নিজামীর ছেলে মাঠে নামে দেখতে...মজা আরো জমবে...


    আলোর দিকে তাকাও, ভোগ করো এর রূপ। চক্ষু বোজো এবং আবার দ্যাখো। প্রথমেই তুমি যা দেখেছিলে তা আর নেই,এর পর তুমি যা দেখবে, তা এখনও হয়ে ওঠেনি।

    জবাব দিন
  4. আবেদীন (২০০০-২০০৬)

    ওওও এইডা তুই...???
    অয়েলকাম দোস্ত...ব্লগে তোরে দেখে শান্তি লাগতেছে...আমাদের পোলাপাইন তো আর একটাও নাই...
    তুই ফার্স্ট লেখাতেই ফাটায় ফালাইছস...
    চালায় যা দোস্ত... :thumbup: :thumbup:

    জবাব দিন
  5. Eunus

    দোস্ত, তোর কাছএ আমি আরো কিছু expect করছহিলাম। এটার মত Article আমরা Daily ১০-১৫ তা পরি। তোর লেখাতা আমার মনে হল half এ আসে শেশ প্রব্লেম সবাই জানে। Solution এ কি করা যয় সেটআ নিএ তর Discuss করা উছিত। I think.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : Mahmud1147

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।