শীতের চাদর

ছেঁড়া ছালা গায়ে দিয়ে
ঠাণ্ডা মেঝেতে শুয়ে আছে সে,
গায়ে বিঁধছে সূঁচের মতো
বরফ শীতল ঠাণ্ডা বাতাস
– তবু শিশু শুয়ে থাকে
অভ্যস্ত ভঙ্গীতে, কাঁপতে কাঁপতে ঠক ঠক;
পাশে শুয়ে তার মা
পরনে জীর্ণ শাড়ী শুধু
নেই অতিরিক্ত কোন আচ্ছাদন –
জানুয়ারীর শীত তখন।
নিজের হিম শীতল দেহের ওমে
জড়িয়ে রাখে সে বুকের ধনকে
– তবু কাঁপতে থাকে শিশু;
স্রষ্টা দেখেন শুধু চেয়ে
জানি না কাঁদেন কি না হাসতে থাকেন
অট্টহাসি হায়েনার মতো।
আমার গায়ের চাদর খুলে দিতে ইচ্ছে করে,
পারি না তখন আমি কাঁপি ঠাণ্ডায় –
ভণ্ড আমি বুলি আওড়াই সাম্যবাদ;
গায়ে আমার গরম চাদর অথচ
কাপড় থাকে না অন্যের ঠাণ্ডায় –
ঠাণ্ডায় কুঁকড়ে যাওয়া শিশুকে দেখে
আমি খুশী হই কবিতার নূতন বিষয় পেয়ে,
ঘরে এসে কলম তুলতে গিয়ে দেখি
ঠাণ্ডায় কাঁপছি আমি;-
চাদর ফেলে এসেছি রাস্তায়।

২,০৭০ বার দেখা হয়েছে

২২ টি মন্তব্য : “শীতের চাদর”

  1. মাহফুজ ভাই
    দারুন।
    এর আগে সিসিবির অন্য কবিতা গুলি এড়িয়ে যেতাম। এখন আপনার কবিতা নিয়মিত পড়া শুরু করেছি। কবিতার একজন পাঠক বাড়ানর পুরো কৃতিত্ত্ব আপনার। 😀 😀 😀

    জবাব দিন
  2. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)
    নিজের হিম শীতল দেহের ওমে
    জড়িয়ে রাখে সে বুকের ধনকে
    - তবু কাঁপতে থাকে শিশু;
    স্রষ্টা দেখেন শুধু চেয়ে
    জানি না কাঁদেন কি না হাসতে থাকেন
    অট্টহাসি হায়েনার মতো।

    চমৎকার বন্ধু, চমৎকার :clap: :clap:
    খালি লেখা দিয়েই চলে যাস, আওয়াজ টাওয়াজও দিস মাঝে মধ্যে একটু আধটু 🙂


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  3. রহমান (৯২-৯৮)

    দোস্ত,
    সত্যি বলতে কি তোর লেখায় (কবিতায়) কমেন্ট করে মজা পাচ্ছিনা :no: । তুই কমেন্টের কোন রিপ্লাই দেস না 🙁 । তোর কবিতাগুলো খুবই ভাল লাগে 🙂 কিন্তু এতটা বেরসিক 🙁 যে থাকিস এটা ভাল লাগেনা :no:

    কমেন্ট আর পাল্টা কমেন্ট হলো ব্লগের প্রাণ। তোর কবিতা সবার কেমন লাগছে এটা যেমন তুই কমেন্টের মাধ্যমে জানতে পারছিস তেমনি কমেন্টের উত্তর দিয়ে তুই তোর কবিতার মূল ভাব বা তোর চিন্তাধারা আরো সুন্দরভাবে পাঠকদের সাথে শেয়ার করতে পারবি। মানে টু-ওয়ে কমিউনিকেশন যাকে বলে আরকি। তুই এখন পর্যন্ত ওয়ান-ওয়ে ফলো করছিস যেটা একটু অস্বাভাবিক :-B

    বেশি নাক গলিয়ে ফেলছি বুঝতে পারছি 😛 । রাগ করলি নাতো আবার 🙁 :-/ ? আমাদের সাথে একটু কথা তো বলবি এখানে, নাকি? কষ্ট করে এই যে কমেন্টাইলাম এইটার কিন্তু উত্তর চাই 😡

    জবাব দিন
    • মাহফুজ (৯২-৯৮)

      হাওয়া বুঝার চেষ্টা করলাম গত ৪ দিন ধরে 🙂 আমার বেশ ভাল লাগল সবার কমেন্টস পড়ে। লেখার আর আগ্রহ বাড়তেছে; যারা কবিতা পড়তে পছন্দ করে বা করেন না, তারা সাবধান 🙂

      এই কবিতা অনেক আগে লেখা, '৯৯ তে বোধ হয়। আমি তখন ঢাকার রাস্তায় সারারাত ধরে হেঁটে বেড়াতাম; অনেকটাই হিমু কেস। সেই সময়ের কোন এক রাতের দৃশ্য যা দেখে আমি খুব কষ্ট পাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু কেন যেন পাই নাই। তৃতীয় দৃষ্টিভঙ্গীতে এই পুরো ঘটনাকে একটা রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছি এখানে।

      বন্ধু রহমান, তোর এই সাহস দেওয়া কমেন্ট এর জন্য একটা বিশাল ধন্যবাদ। mahfuj@csebuet.org এ মেইল করিস। আলাপচারিতা হবে। তখন যোগাযোগ এর আরো অন্যান্য মাধ্যম ও আমরা ব্যবহার করব, কি বলিস?

      জবাব দিন
  4. মাহফুজ (৯২-৯৮)

    ব্লগে যারা আমার কবিতা পড়ে বা পড়েন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। সবার encouragement আমার বেশ ভাল লেগেছে। জুনায়েদ কবীর(৯৫-০১) আমাকে এই লিঙ্কটা পাঠিয়েছিল ফেসবুক এ, আমি আগে এইটার কথা জানতাম না। থ্যাঙ্কস, কবীর।

    জবাব দিন
  5. হাসনাইন (৯৯-০৫)

    মাহফুজ ভাই আপনার অনুভূতি চমৎকার।
    বিশেষ করে শেষটায়-

    কাপড় থাকে না অন্যের ঠাণ্ডায় –
    ঠাণ্ডায় কুঁকড়ে যাওয়া শীশুকে দেখে
    আমি খুশী হই কবিতার নূতন বিষয় পেয়ে,
    ঘরে এসে কলম তুলতে গিয়ে দেখি
    ঠাণ্ডায় কাঁপছি আমি;-
    চাদর ফেলে এসেছি রাস্তায়।

    এক্কেবারে ধাক্কা দিয়ে যায়। :hatsoff: :hatsoff:

    জবাব দিন
  6. তৌফিক (৯৬-০২)

    "Dogs of War" বইতে পড়ছিলাম দুনিয়ায় দুই কিসিমের মানুষ আছে- হান্টারস আর গ্রেযারস। আমরাতো মানুষ, এইভাবে অতি সরলীকরণ ঠিক না। তবু, চারপাশে তাকালে আমি খালি হান্টারস আর গ্রেযারসই দেখি।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তৌফিক (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।