পরগতিশিল

ইদানিং আমার চারপাশে এক জাতের মানুষ খুব বেড়েছে। খুবই উচ্চ ফলনশীল জাতের জীব এরা। মশা-মাছি-তেলাপকার চেয়েও এদের বিস্তার (মাশাল্লা) অনেক দ্রুত। পথে ঘাটে, হাটে মাঠে, চায়ের দোকানে, নর্দমায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কিলবিলিয়ে বাড়ছেই এরা প্রতিদিন। বাস্তবে বা ভার্চুয়াল জগতে, ঘরোয়া আড্ডা কিংবা সিরিয়াস ” টক শো ” সর্বত্রই এঁদের দৃপ্ত পদচারণায় বাংলাদেশ আজ মুখরিত ; রীতিমতো ধন্য। জে, আপ্নে ঠিকই ধরেছেন- এরাই আগামী দিনের কান্ডারী, দেশের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকার, বাংলাদেশের নও- পরগতিশিলের দল। এঁদের চাপে আমাদের মত পরগতির ভেকধারীদের আজ নাভিশ্বাস দশা। আম্রা যারা এতদিন পরগতির মূলা বেঁচে আমজনতার বাহবা নিয়ে আত্নশ্লাঘায় ভুগতাম, তাদের জন্য আজ এক গভীর ক্রান্তিকাল উপস্থিত। সেই দিন হয়তো বেশী দুরে নয় যেদিন বাচ্চারা দল বেঁধে জাদুঘরে গিয়ে আমাদের দেখবে আর হেসে কুটিকুটি হবে। এম্নিতেই ত্যানাবাজিতে উচ্চশিক্ষা প্রাপ্ত পরগতিশিলেদের ত্যানার গিট্টুতে পড়ে আমাদের হাসফাস অবস্থা। আম্রা, পুরানা পরগতিশিলেরা বিপদ বুঝে ভেক পাল্টে, পরিচয় লুকিয়ে টুকিয়ে কোনরকমভাবে টিকটিকির মত টিক্টিক করে টিকে থাকার চেষ্টায় রত ছিলাম। কিন্তু মহান ডারুইন সাহেব তো বলেইছেন পরক্রিতিতে কোন কোনা-কাঞ্চি ফাঁকা থাকবার নয়! আর তাই শরত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে তারঁ কথা পরমান করার জন্নেই বুধহয় নয়া পরগতিশিলেরা অতি দুরতই বংশবিস্তার করে আমাদের টিক্টির জীবন থেকেও নির্বাসন দিয়ে তেলাপোকার মতো আন্ডারগ্রাউন্ডে পাঠিয়ে দিয়েছে। বহুদিন মাটির নিচে থেকে আর কাঁঠাল পাতার উচ্ছিষ্টান্ন খেয়ে দিব্যজ্ঞানে আমি এইসব নয়া-পরগতিশিলের কিছু সাধারণ বইশিস্ট পারাপ্ত হইছি। ভাইবেন্না এইসব আমার স্বতন্ত্র গবেষণার ফল, আমি তো খালি পাতা চিবাইছি আর বিপদ বুজলেই চোউখ বন্দ কইরা ঝিম ধইরা থাকছি। কিন্তুক কুদরতের কথা আর কি বলব, ঝিমানি এক্টু গাড় হইলেই ইয়া বড় জুব্বা পড়া রূপালি দাড়িওলা নূরানী চেহারার কে একজন আমার পিছন থেকে ইয়েতে লাথি মেরে তুলে দিয়ে বলেছেন য়্যাই উঠ, তোর কাছে গুরুত্তপূর্ন তথ্য আসছে, তুই সবার কাছে এইগুলান পরকাশ করবি। তার জন্য যত কষ্ট সহ্য করা লাগবে করবি; উপ্রের অর্ডার আছে। আর এই হইল এই রচনার ইতিহাস।

কিভাবে পরগতিশিলদের চিনবেন –

আমাদের মত এরাও বক্তৃতা দিতে খুব ভালবাসেন। তবে এঁরা করেন “গঠন্মুলক সমালুচোনা “। আমাদের মত আজাইরা প্যাঁচাল পেড়ে অশিক্ষিত মুরুক্ষদের জ্ঞান দিতে গিয়ে এরা মূল্যবান সময়টার অপচয় করেনা।

এঁদের সাথে যেকোন আলোচনাই শুরু হয় গঠন্মুলক সমালুচোনা দিয়ে আর অবধারিতভাবে শেষ হয় অপরজনকে পরতিকিয়াশিল বলে গালাগাল দিয়ে।

এরা যখন অন্যের সমালোচনা করে সেটা হয় গঠন্মুলক, কিন্তু এদের সমালুচোনা করলে সেটা হয় “পরতিকিয়াশিল আচরণ”

দুনিয়ার সব মানুষকে পরগতিশিল করে তোলায় এঁদের খুব আগ্রহ কিন্তু যাদের এরা কাছের লোক মনে করে বা যাদের সাথে এদের নানারকম স্বার্থ জড়িত(যেমন মা-বাবা, ভাই-বোন, বউ-শালি, রাজনৈতিক বড় ভাই…) তাদের পরগতির সাথে পরিচয় করানোতে এঁদের খুব আলিস্যি।

অশিক্ষিত বলে দুনিয়ার সব মানুষের উপর এদের রাগ, কিন্তু তাদের শিক্ষিত করে তোলার জন্য সময় এবং শ্রম দিতে এরা নারাজ।

এরা অবস্থার পরিবর্তন চায় ঠিকই, কিন্তু সেটা সবাই মিলে খেয়ে পড়ে ভালো থাকার জন্য না, ” নিজে ” আরো ভালো থাকতে পারবে বলে।

এরা প্রচলিত রাজনীতির বিশাল সমালুচক। এইসব ” হালুয়া-রুটির ” রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে গেলে উত্তেজনায় এদের গলা কাপ্তে থাকে, মুখ দিয়ে থুথু ছিটকে আসে, চোখ ঠিকরে যায়, ঋদস্পন্দন বেড়ে যায় দ্বিগুণ! কিন্তু এই রাজনীতি থেকে সুবিধা নেয়াকে এরা ব্যাখ্যা করে ” টিকে থাকার অত্যাবশ্যকীয় কৌশল ” হিসাবে।

এরা জনপ্রিয় বিষয়গুলো নিয়ে চ্রমতম পরগতিশিল, কিন্তু সেই পরগতির চর্চা ড্রইংরুম পেরিয়ে বেডরুম পর্যন্ত যেতে পারেনা। কেন? তা করতে গেলে এই পরতিকিয়াশিল সমাজের adaptation নষ্ট হয়ে যাবে তো! আর adopt করতে না পেরে আমি যদি extinct ই হয়ে যাই তাহলে এই পোড়া সমাজটার কি গতি হবে?

ব্যক্তিপূজা এঁদের দারুন প্রিয়। এঁদের সবারই দুই-একজন ব্যক্তিগত” আইডল” আছে। প্রতিদিন একটা সময় বরাদ্দ থাকে উনার বিজ্ঞাপনের জন্য। কেননা প্রচারেই তো প্রসার। উনি কবে কখন কোথায় কিভাবে কিকি করেছিল সব এঁদের নখদর্পণে। কিন্তু ” কেন ” উনি ওইসব করেছিলেন সে ব্যাপারে এঁদের খুব একটা উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়না। আর নিজের আইডলকে মহান্তম করে তোলার জন্য এদের যে চেষ্টা, তাকে বাস্তবে প্রাত্যহিক জীবনে অনুসরণ করতে এঁদের ঠিক ততটাই অনীহা।

এরা সবাই কম্বেশী “চে” র খুব ভক্ত। উহু, আপ্নি আবার ভুল করছেন। উনি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব করেছেন বলে নয়, সমাজতন্ত্রে উনার চেয়ে বড় কুতুব আরো অনেকে আছে, এরা চে কে ভালোবাসেন কেননা চের একটা গেরিলা বাহিনী ছিল বলে!

পরগতির সবচেয়ে সহজ সংগা পাবেন আপ্নি এঁদের কাছে। এবং আমি নিশ্চিত আপ্নি মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না। সেটা কি?
আমার যেটা ভালো লাগে, করতে সুবিধা হয় সেটাই পরগতিশিল! আর যেটা করলে তার কোন লাভ নাই? কি?! এইসব পরতিকিয়াশিল কথাবার্তা খবরদার এঁদের সাম্নে বলতে যাবেন্না। ছিলা খাবার সমূহ সম্ভাবনা আছে!

পরগতি বলতে এরা বোঝে সব সংস্কার পুষে রেখে শুধু অবস্থার পরিবর্তন। সেটা কিভাবে সম্ভব? অত বেশী প্রশ্ন করবেননা, আপ্নি কি একজন পরগতিশিলের থেকে বেশী জানেন?

এরা বিনোদনের ঘোর বিরোধী। বিনোদন আবার কি? যত্তসব ” ভোগের ” চর্চা; যত্তসব পরতিকিয়াশিল আচরণ। আর নিজেদের প্রয়োজনে ? না, এসব হল পরগতির আন্দোলন চালিয়ে যাবার ” ফুয়েল ” মাত্র। দেশ ভরা পরতিকিয়াশিলের মাঝে পরগতির আগুন জ্বলিয়ে রাখা সোজা কাজ না, এত বিপরীত স্রোত ঠেলে চলা মুখের কথা নয়, তাই পরগতির আগুন দ্বিগুণ করে জ্বালাতে তাদের দ্বিগুণ ফুয়েল নিতে হয়!

অবসর সময়ে পরতিকিয়াশিলদের খুঁজে বের করে তাদের গালাগাল দিতে এঁদের যে পরিমান আগ্রহ, সত্যিকার দেশউদ্ধার/পরিবর্তনের কাজে (যেখানে সময়/ অর্থ / শ্রম দিতে হয়) সেভাবে এঁদের খুব একটা দেখা যায়না। তখন জীবিকা, বৌয়ের অসুখ, ভাইয়ের পরীক্ষা, বাসায় পানির লাইন নষ্ট, রাস্তায় জ্যাম ইত্যাদি নানান তুচ্ছ জাগতিক কাজ এসে ভর করে!

রহমতের কথা আর কি বলব, আমার নূরানী পথপ্রদর্শক শুধু বইশিস্ট চিনায়ে দিয়েই ক্ষ্যান্ত দেন্নাই, উনি আমাকে সঠিকতর পরগতিশিল হবার রাস্তাও বাতলায়ে দিয়েছেন (শুকুর আলহামদুলিল্লাহ) । আহা, জাবর কাটা সেইসব দিনের কথা ভাবতে গেলে ভক্তিতে এখনো আমার চক্ষু বন্ধ হইয়া আসে, গলার ভিতির শক্ত কি যেন দলা পাকাইতে থাকে। কত বিনিদ্র সময় (মাটির তলে দিন না রাত তার ঠাহর রাকতে পারিনাই) উনার লগে আমি পার করসি। কতই না জ্ঞানের কথা উনি আমারে কইসেন, আমি নাদান আদমি তার কতটুকই বা বুজতে পারসি। উনার কথা শুন্তে শুন্তে গুমায় গেসি না গুম থেকে উইঠা আবার উনার মুল্যবান বানীর ধারায় সিক্ত হইসি তার সবকিছু এখন আর আমারো ইয়াদ নাই। তয় মনে আসে বাবার রাগটা ছিল চন্ডালের। কুনুদিন যদি বুজতে পারতেন আমি জাবর কাটার ভান করে দিব্যি এক ঘুম দিয়া নিতাছি, তাইলে সেইদিন আর রক্ষা ছিলনা। বাবাজী রাগ্লে হাত-পা চালাইতে কুনুদিনঈ কসুর করেননাই। উনার দেয়া দাগ গুলাই আম্রার জিবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। সে যাউকগা। নিজের গল্প বইলা আপ্নাদের আর বিভ্রান্ত করবনা। এম্নিতেই মতিকন্ঠ পইড়া পইড়া আপ্নাগো মতিভ্রমের শেষ নাই। আর তাছারা উপ্রের অর্ডার মত আমি তো এমুন বই লিখিতেছি যে সারা দুনিয়া জুইড়া খুঁজলিও এর মত আর একটাও গ্রন্থ পাওয়া যাইবেনা। এই বই হইব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পরগতিশিল কিতাব। এইরকম একটা বইয়ে বেশী ইতিহাস কি মানায়? এইসব তো আর আমার কথা না। আমি মেসেঞ্জার মাত্র। বাবার কাছেই না আমি জান্তে পারছি পরগতিশিল হওয়া কতই না কঠিন। অনেক সাধনার দরকার হয়, অনেক ধৈর্য দরকার হয়। তাতেই সবকিছু না, সাথে সাথে অনেক জানাশোনারো প্রয়োজন হয়। বিশেষ কইরা দুনিয়াবি জ্ঞান। এই কথা শুইনা আমার উৎসাহ একটু পইড়া গেছিলো, তখন বাবাই বুঝাইসে, তুই বই তো আর তোর একার জন্য লিখতাছস না, তুই যে বই লিখতাছস ওইডা সবকালের সব মানুষের লেইগা। তাতে সবার কথা থাক্কন লাগবোনা? আহা; কি জ্ঞান! কি প্রজ্ঞা! আসুক দেখি কেউ এইরকমভাবে জ্ঞানের পরিচয় দিক। তারে দরকার হইলে খুন কইরাও আমার বাপেরে সবার উপ্রে রাখুম ইনশাল্লাহ! থুক্কু,আবার ইতিহাস কওয়া শুরু করলাম। কি করুম, ত্যানাবাজগো ত্যানার গিট্টু ছুডাইতে ছুডাইতে অভ্যাস খারাপ হইয়া গেছে। যা কইতেছিলাম। এত্ত এত্ত কঠিন পথ পাড়ি না দিয়াই কেউ যদি একদিন সকালে ঘুমের থিক্যা উইঠা টের পান উনি ওহী প্রাপ্ত হইছেন যে তিনি একজন পরগতিশিল, তাগো ভয় পাওয়ার কিছু নাই। তাগো জন্য এই চোথা দিয়া গেছেন বাবা।

নয়া পরগতিশিলদের গাইড –

প্রথম কথা, মাথা ঠান্ডা রাখতে হইবেক। কোন অবস্থাতেই মাথা গরম করা যাবেনা। (এ ব্যাপারে আপনি শিবির কর্মীর সাহায্য নিতে পারেন। বিশ্বাস না হলে একা পেলে কোন শিবির কর্মীকে রাগানোর চেষ্টা করে দেখুন) সবসময় মনে রাখবেন, “with big realization comes bigger responsibilities ” । যেহেতু আপনি একজন পরগতিশিল, আপনি অবশ্যি বাকি অশিক্ষিত বর্বর প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী দের থেকে অনেক বেশী জানেন। আপনার আচরণও সেরকম দায়িত্বশীল হতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিক্রিয়াশীলদের মানসিকতা অবোধ শিশুর মত, খালি শরীরটাই যা বড়। ওদের সাথে ব্যাবহার সে বুঝেই করতে হবে। আপনার বাচ্চা পড়া না পারলে আপনি কি ক্ষেপে যান নাকি ধৈর্য ধরে বোঝান? আর তাছাড়া রাগ করে বাচ্চাদের কোন কিছু শিখানো যায়?

আপনি একজন পরগতিশিল তার মানে আপনি অতি অবশ্যই সমাজের আর দশজনের থেকে শিক্ষায়, জ্ঞানে, জানাশোনায় অনেক আউজ্ঞায় থাকা মানুষ। অন্ততপক্ষে আপনি তো জানেন ওইসব নাদান পরতিকিয়াশিলদের থেকে আপনার “লেভেল ” অনেক উপ্রে। আর আমাদের মতো মেকি পরগাছা পরগতির ভেকধারীরা তো আপ্নেদের পায়ের নখেরও যোগ্য না। আবার আউজ্ঞায় থাকা মানুষ হিসেবে আপনার দায়িত্বও অনেক বাইড়া গেছে কিন্তু! সমগ্র পরগতিশিল সমাজের সম্মান এখন থেকে আপ্নার উপ্রে। তাই পুরোপুরি নিশ্চিত না হইয়া সরকারি মন্ত্রী – আম্লাদের মত হুট করে কোন মন্তব্য করার কুনুই প্রয়োজন নাই।

কখনোই অনেক পরতিকিয়াশিলের মাঝে একা এড়ে তর্ক করতে যাবেননা। আপ্নি হয়ত জানেন আপ্নি যা বলছেন সেটাই ঠিক, কিন্তু অরা তো তা জানেনা বলেই তর্ক চালাচ্ছে। আর জানেন তো, অরা আমাদের মত শুধু অবসর সময়ে পরতিকিয়ার চর্চা করেনা। হটাৎ করে কারো জিহাদি জোশ চাঙা হয়ে গেলে দেশ একজন মহান ব্যক্তিকে হারাইব!

কোথাও তর্কে সুবিধা করতে না পারলেও গায়ের জোরে তর্ক চালিয়ে যাবেননা। মনে রাখতে হবে, আপ্নি এখন একজন পরগতিশিল মানুষ, আপ্নার নবজন্ম হয়েছে। গায়ের জোরে কিছু করাটা মৌলবাদীদের কাজ। ওটা আর আপ্নাকে শোভা পায়না। দরকার হলে বিষয়টি নিয়ে ভালমতো কদিন দুনিয়াবি জ্ঞান নিয়া সুবিধাজনক সময়ে আবার সেইটার অবতারণা করবেন। কখনোই ভাববেননা এতে আপনার ” আদর্শিক ” পরাজয় ঘটেছে। বরং এটাকে ধরুন ” টিকে থাকার কৌশলগত বিরতি ” হিসেবে।

কখনো ” নিজস্ব অভিজ্ঞতা” , “ব্যক্তিগত উপলব্ধি” এসবের উপর ভরসা করবেননা। পরতিকিয়াশিলদের দেইখ্যা শিক্ষা ন্যান। তারা কিন্তু নিজস্ব অভিজ্ঞাতা থেকেই সবখানে কিসের জানি মহিমা খুঁজে পায়। আপ্নি কিন্তু খবরদার ওই রাস্তায় হাটবেননা। কোন বিষয়ে আটকে গেলে তার পিছনের বাস্তব কারনটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। জানার চেষ্টা করেন। কোন অলৌকিক চিন্তা মাথায় ঠাই দিবেননা। এমন কিছু মাথায় আসলেও নিজেকে বুঝাইবেন, আমি একজন পরগতিশিল, আমি ভুত বিশ্বাস করিনা।

কথা বলতে গেলে অপরজনকে কক্ষনো হালকাভাবে নিবেননা। এখন আমাগো আগের সুদিন আর নেই। এখন পরতিকিয়াশিলেরাও জাকির নায়েকের বক্তৃতা শোনে, তারাও “বিগ ব্যাং থিওরী” “কোয়ান্টাম মেকানিক্স” এসব শব্দ ব্যাবহার করে তর্ক জুড়তে পারে। সুতরাং ভালো তথ্য প্রমান না জানা থাকুক, অন্ততপক্ষে বিষয়টি সম্পর্কে পুর্নাঙ্গভাবে পরিষ্কার ধারনা না থাকলে আলোচনায় বসার দরকার নাই। মনে রাখতে হইবেক, নিজে বাচলে নেজামির নাম।

এটা তো আপনে জানেনই যে পরগতিশিলদের অভিধানে করুণা বলে কোন শব্দ নেই! পরগতিশিলেরা কাউকে করুণা করেনা। তাদের কাছে সব মানুষ সমান। তারা মানুষের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করার জন্য লড়ে, বলে, লেখে। তাই এখন থেকে রাস্তাঘাটে, অফিসে, অনলাইনে, কোথাও কাউকে সাহায্য করলে তার জন্য আত্নশ্লাঘায় ভুইগেননা। মনে করবেন মানুষ হিসেবে তার প্রাপ্যটুকু দিলেন। বরং এখনো সমাজের সবার অধিকার নিশ্চিত করতে পারেননাই বইলা লজ্জা বুধ করবেন।

আপ্নি একজন পরগতিশিল মানুষ তাই আপ্নি অনেক উদার। আমাদের মতো মেকি লোকদেখানো উদার নন, সত্যি সত্যি উদার। কিন্তু আপ্নি যতই উদার হোন, এইসব আবাল পরতিকিয়াশিলেরা সবমসময় আপ্নার ভুল ধরে প্রমান করতে চাইবে সব পরগতিশিলই ভন্ড। অর্থাৎ আপ্নার উপর সমগ্র পরগতিশিল সমাজের ” ইমেজ ” রক্ষা করার কঠিন দায়িত্ব। তাই নিজের গার্লফ্রেন্ড/ বৌকে শুধু সাজুগুজু করে রাস্তায় বেরতে দিয়ে বা চাকরিতে পাঠিয়ে দিয়েই নিজের পিঠ চাপড়াবেননা। আপ্নাকে এতোটাই উদার হতে হবে যে আপ্নার গার্লফ্রেন্ড / বৌকে ছেলেদের সাথে দেখলেও স্বাভাবিকভাবে ধরে নিতে হবে যে, ওর তো ছেলেবন্ধু থাকতেই পারে। আর বিশেষ কারো সাথে ঘনঘন দেখলেও রাগা যাবেনা। বরং তার “ব্যক্তিস্বাধীনতাকে” “সম্মান” করতে হবে। (এভাবে চিন্তা করবেন, কাজে দিবে- আমি নিশ্চই সবদিক থেকে তাকে satisfy করতে পারছিনা, আমাকে আরো interesting হতে হবে!) আপ্নি হয়ত মনের দুঃখে কারো ফোন নম্বর জোগাড় করে বসে যাবেন। হাজার হোক এতোদিনের অভ্যাস তো। তা না করে তার সাথে ব্যপারটা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করেন। কারন কবি বলেছেন, তর্কে মিলায় বস্তু, বিশ্বাসে বহুদুর। তয় তা যেন শালিস মানি তালগাছ আমার না হয়।

পরতিকিয়াশিলদের কথা বাদই দিলাম, এমনকি আম্রা যারা মেকি পরগতিশিল তারাও নর-নারীর বিষয়ে মোটেও আগাতে পারিনাই। এসব ব্যাপারে আম্রা এখনো ভানসর্বস্ব জীব। আপ্নি কিন্তু এসবের সম্পুর্ন উর্ধে। এইটা তো আর আপ্নার জানার বাকি নাই যে মেয়েরা কারো সম্পদ না, সম্পত্তিও না, তারা মানুষ। আমার আপ্নার মত একই রক্তমাংসের, একই চিন্তাভাবনা করতে পারা জীব। আপ্নার “জিগির” দোস্তকে নিয়ে আপ্নি যেভাবে “মাস্তি” করতে পারেন, ওরাও সেভাবে উপভোগ করতে পারে! তাই মাইয়াগো মানুষের মর্যাদা দেওয়াটা তো আপ্নার কাছে পুরান ইস্যু। তবে একটা ব্যাপারে আপনেরা আমার সাথে নিশ্চই একমত হবেন যে আপ্নি-আমি ওদের যতই মর্যাদা দেয়ার চেষ্টা করিনা কেন, তারা নিজেরাই এমন সব কাজ করে যে আপ্নে বিশ্বাস করতে বাধ্য হন যে ছেলেরাই শ্রেষ্ঠ, তাইনা? আমার তো এটা বদ্ধমূল বিশ্বাস। হবে নাই বা কেন? দেশের এতগুলা মানুষ, অর্ধেকই নাকি আবার মেয়ে, এই যে আপ্নার চারপাশেও যত মেয়ে আপনে দ্যাখছেন তার মধ্যে এমন একজনও কি আপনের চোখে পড়ছে যে আপনার চেয়ে যোগ্য? না তো? আমারো তাই। আরে আপ্নার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, আপ্নার নিজের জীবনে দেখা, এগুলো কি মিথ্যা নাকি তালে? কিন্তু বাবা বিশেষ করে এই ব্যপারটা নিয়ে উল্টটাই লিখতে কইসেন। সেইদিনের কথা কখনোই ভুলুম্না আমি। এইসব কথা যেদিন হয় সেদিন হুজুরের সাথে আম্রার সেকি বাহাস! সেদিন বাবার হাত-পাও চলছে খুব। কিন্তু বাবা তো আর এই জগতের কেউ না, উনার সাথে আমি পারবো কেন? তাই আমারে উনার কথাই লিখতি হবেক। আমার আর ইয়েতে লাত্থি খায়ে ঘুমের থেকে উঠার শখ নাই। তয় চুপিচুপি আপ্নাগো কই, আমি কিন্তু আপ্নাগো দলে! যাউকগা, আমার কথায় পাত্তা দিয়েননা। বাবায় কি কইয়া গেছে হেগুলা মন দিয়া শুনেন। মেয়েদের আপ্নার যতই গাধা গবেট মনে হোক, ওইসব চিন্তাকে পাত্তা দিয়া নিষেদ। নিজেরে বুজাবেন আপ্নি না পরগতিশিল, আপ্নি না নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন? এই যে চারপাশে মেয়েদের নির্বুদ্ধিতার এত প্রমান পান তার সব নিশ্চই পরতিকিয়াশিলদের ষড়যন্ত্র। এগুলো আসলে তাগো মেধার ঊনতা নয় বরং তথ্য পাওয়ার ও সেই তথ্য ব্যাবহার করার সুযোগের অভাব, যেই সুযোগ আম্রা ছেলেরাই ওগো দিতে চাইনা। এখন থেকে সুযোগ পেলেই আপ্নার ইয়ার দোস্তের মত ওদের সাথেও দেশ-জাতি-সমাজ, অধিকার-স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করবেন। প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও একবার আগ্রহ তৈরি হয়ে গেলে দেখবেন নতুন তথ্য আত্তস্থ করার ক্ষমতা ওগো আপ্নার আমার থেকে অনেক অনেক বেশী। আর বলার সময় কখনো এটা ভেবে গর্ববোধ করা যাবেনা যে আপ্নে তাকে কিছু “শিখাচ্ছেন”, বরং এইটা ভাবতে হবে যে আপ্নি তার অধিকার ফেরত দিতেছেন!

তারপরও মেয়ে দেখলে বা শুনলে যদি আপ্নার চোখের সামনে মানুষের বদলে শুধু বর্তুলাকার কোন অংশ ভেসে ওঠে, মুখের ভেতরের পানি সামলাতে কষ্ট হয়, শরীরের বিশেষ বিশেষ জায়গায় রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়, ইত্যাদি নানা শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয় তাইলেও লজ্জা পাইয়েননা। এইসব নিয়ে লজ্জা পাওয়া তো আর পরগতিশিলদের মানায়না, তাইনা? আর তাছাড়া আপ্নি যদি সারাদিন খালিপেটে ঘুরেন আর আপ্নার খিদে পায় তাহলে কি আপ্নি লজ্জাবুধ করেন? নিশ্চই না?(কি সব আবুল তাবুল কথা কন তো দিকি? আমার তো এইসব লিখার সুময় চিন্তা করতে গিয়াই… এইসব কি কুনু সাম্লানুর বিশয়?) তয় একটা মৌলিক বিষয় ভুইলে গেলে চলবেনা। আম্রা যাদের নিয়ে কথা বলছি তারা কিন্তু খাবার না, মানুষ। আমাদেরই মত রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ। ওদেরো পছন্দ-অপছন্দ, সাধ-আহ্লাদ, আবেগ-অনুভূতি আছে, ঠিক আমাদেরই মত। কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের থেকে বেশি। তাই খাবারের মত মেয়েদেরকেও মাছিরুপী মানুষ থেকে বাঁচানোর নামে ঢেকে রেখে একাই “খেতে” মঞ্চাইলে শিকগিরি কোন মনরোগ বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নেন। কেন? আপ্নার কাছের কোন মানুষের কখনো ছিন্তাই হয়েছে? আচ্ছা, হোক বা না হোক, ছিন্তাই করার জন্য আপ্নে ছিন্তাইকারীকে দোষ দিবেন তার “লোভ” সামলাতে পারেনি বলে নাকি ভিকটিমকে দোষ দিবেন যে তোমার কাছে নিশ্চই এমন কিছু ছিল যা ছিন্তাইকারীকে “প্রলুব্ধ” করেছে? অথচ ঠিক তার উল্টোটা করতেছেন এক শ্রেণীর মানুষের বেলায়! আবার সেইটাকে ঠিকও মনে করেন! (সব পাগলই এভাবেই নিজেদের সুস্থ দাবী করে কিনা!) আপনার আশু চিকিৎসা প্রয়োজন। আর নাহলে একদম শেষের পয়েন্টে চলে যান, আপ্নার সকল শংসয় দুর হয়ে যাইবেক ইনশাল্লা!

আপ্নি এখন থেকে পরগতিশিল তার মানে আপ্নি এখন থেকে শোষিত-নিপীড়িত-বঞ্চিত-অবহেলিত মানুষের পক্ষে। আপ্নি এটা মানুন চাই না মানুন, ভান করে হইলেও লোকজনকে এটা অবশ্যই বোঝাতে হবে। কেননা এটা পরগতিশিলতার সবচেয়ে বড় “স্টাইল” । এই জায়গায় ভুল করা যাবেনা, তালে ধরা খাইবেন। মনে রাখতে হবে “ইমেজ” সবার আগে। তাই দোষ যারই হোক, সবসময় মজুর-শ্রমিক এসব “নিম্নশ্রেণীর” মানুষের পক্ষ নিন। নইলে আপ্নার পরগতিশিলতা সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দিব কিন্তু!

পরতিকিয়াশিলেরা, মৌলবাদীরা কিন্তু তাদের “আদর্শর” জন্য লজ্জা তো পায়ইনা বরং গর্ববোধ করে। এবং হামেশাই তাদের “আদর্শর” জন্য জান পর্যন্ত কুরবান করতে প্রস্তুত থাকে। তাই আপ্নার যদি আপ্নার “পরগতিশিল আদর্শ” সম্পর্কে কণামাত্র সন্দেহ থাকে তাহলে আগে সন্দেহ দুর করেন। যদি সন্দেহ দুর করতে গিয়ে আরো বাইড়া যায় তাহলে নির্দ্বিধায় বাকি ঈমানি ভাইদের সাথে যোগ দেন। লাইনে আসেন, লাইন পরিষ্কার রাখেন, নতুনদের সুযোগ দ্যান। এতে দোষের কিছু ্নাই। এতে বরং আপ্নার ঈমান আরো শক্ত হইব (সুভানাল্লা)।

আইজকা এই পর্যন্তই। বাবায় বলছে দুনিয়ার সব গুরুত্ত্বপূর্ন কিতাবই খোপেখোপে পরকাশ হইছে। এইটাও তাই হইবে। যদি এই কিতাব একটুও নয়া পরতিকিয়াশিলদের কাজে লাগে তাইলেই আমি বাবার হাত-পায়ের থেকে নিরাপদ থাকুম ইনশাল্লাহ!

৪ টি মন্তব্য : “পরগতিশিল”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    মাহবুব ১ম লেখায় ফ্রন্ট রোল দেয় নাই।
    তার নতুন লেখা আর প্রকাশ করার জন্য এডু সাহেব এর কাছে আবেদন করছি।

    লেখা ভালো হইছে।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তাহমিনা শবনম (৮৪-৯০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।