ডলফিন, নীলতিমি ও একটি থিসিস পেপার

(১)

ভেজা বারান্দায় দৌড়ানো সহজ কথা নয়। সেটাই করতে হচ্ছে শুভকে। এমনিতেই পাঁচ মিনিট দেরী হয়ে গেছে।থিসিস পেপারটা শুভ স্যার কে দেখাতে পারবে তো? এমনিতেই রশিদ স্যার যে রাগী! এসব ভাবতে ভাবতে একটু অন্যমনস্ক হয়েছিল শুভ। হঠাৎ পা পিছলে গেল।

কিছুটা স্পীডেই দৌড়াচ্ছিল শুভ।তাই পড়ে গিয়ে ভাল ব্যথা পেল সে।কাপড়চোপড় আগেই ভিজে গিয়েছিল। এখন আরো খারাপ হল কাপড়ের অবস্থা। যাই হোক শুভ একটু ঠিক হয়ে নিক।এই সুযোগে আপনাদের সাথে ওকে পরিচয় করিয়ে দেই।

শুভ ক্লাসের লাস্টবয়।পরীক্ষাতে ফেল করা সে মোটামুটি একটা নিয়মে পরিণত করেছে। এছাড়া প্রতিদিন সে ২/১ টা আছাড় খাবেই খাবে।আজকে অবশ্য এটাই তার ১ম আছাড়।নদী ও সমুদ্রের পানি শোধন নিয়ে তার একটা প্লান আছে। সেটাকে সে থিসিস বলে।কিন্তু কেউ এর গুরুত্ব দেয় না।বলে ইউনিভার্সিটিতে না পড়লে থিসিস লেখা যায় না।

 

(২)

রশিদ স্যারের রুম থেকে যখন বের হল শুভ তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। শুভর মুখটা অন্ধকার। ‘গোবেট’, ‘গাধা’, ‘ইচড়েপাকা’ ইথাদি অনেক কথাই শু্নতে হয়েছে তাকে। পরীক্ষায় দশ বিষয়ের ছয়টিতেই ফেল করেছে সে। ‘থিসিস’ দেখা তো দূরের কথা স্যার উল্টো রশিদ স্যার ওকে ওর পরীক্ষার খাতাগুলো দেখিয়েছে আর বলেছে ‘স্কুলের পরীক্ষাতে পাশ করতে পার না আর ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের মত থিসিস লেখো? কালকের মধ্যে তোমার বাবা মাকে ডেকে আনবা।নইলে তোমাকে স্কুল হতে বের করে দিব’।

শুভ গ্রামের ছেলে। মন খারাপ করে গ্রামের দিকে রওনা হল সে।

 

(৩)

নদীটা পেরুলেই গ্রাম। রাত অনেক হয়ে গেছে।নদী পারুবার জন্য নৌকা পেতে ভালই সময় লাগল ।অঘটনটা ঘটল ওই পাড়ের কাছে যেয়ে।

কোন কিছুর সাথে ধাক্কা লেগে নৌকাটা দুলে উঠল ভীষণভাবে।অনেকেই পড়তে পড়তে বেঁচে গেল। কিন্তু শুভর শেষ রক্ষা হল না।থিসিসপেপার সহ শুভ পড়ে গেল নৌকা থেকে। হাত থেকে পড়ে গেল থিসিস পেপারটি। কিন্তু শুভর হাতে রয়ে গেল এর শেষ দুটি পৃষ্ঠা।

(৪)

থিসিসটা উদ্ধার না করে নদী হতে ওঠার কোন কোন ইচ্ছা ছিল না শুভর।কিন্তু মাঝি ভাই নদীতে নেমে এক রকম জোর করেই তাকে উপরে তুলল আর বাসায় দিয়ে আসলো।

পরীক্ষার রেজাল্ট শুনে বাসায় ছোটখাটো একটা তোলপাড় হয়ে গেল। অন্য কেউ হলে পানিতে পড়ার কারণে কিছুটা সহানুভূতি হয়ত পেত। কিন্তু শুভর জন্য আছাড় খাওয়া, পানিতে পড়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়।প্রচুর পরিমাণ বকা খাওয়া সত্ত্বেও যখন ঘুমাতে গেল সে সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়ল। কারণ থিসিসের কাজ করতে গিয়ে গত কয়েক রাত ঘুম হয়নি বললেই চলে।

(৫)

একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙল শুভর।সে যেখনে নদীতে পড়েছিল ঠিক সেখানে একটা ডলফিন। ডলফিনটা যেন তাকে ডাকছে।ঘুম ভেঙে গেল শুভর। সে যেন একটা নতুন আশা দেখতে পেল।

(৬)

মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ে শুভ দৌড় লাগালো নদীর দিকে।কিন্তু কোন ডলফিন সে দেখতে পেল না। হতাশ হয়ে বাসায় ফিরে আসল সে।

(৭)

স্কুল থেকে শুভকে ৩ মাস সময় দিল। এতদিন বাসায় বসে পড়ালেখা করে পরীক্ষায় পাশ করতে হবে।বাসায় বসে পড়ালেখা করার অনেক চেষ্টা করছে সে।কিন্তু কোন পড়াই মাথায় ঢোকে না তার।মাথায় শুধু নদী- সমুদ্র আর থিসিস পেপার। আর প্রতিদিন সেই একই স্বপ্ন। ডলফিন।প্রতিদিন সকালে সে ছুটে যায় নদীর তীরে।কিন্তু কোন ডলফিন সে দেখে না। এভাবে কেটে গেল তিনটি মাস।হঠাৎ এক সকালে দেখা হয়ে গেল তার ডলফিনের সাথে।

(৮)

ডলফিনকে শুভ জিজ্ঞেস করল, তার থিসিস পেপারের কথা সে জানে কিনা। ডলফিন বলল আমার সাথে চল সাগরের নীচে নীলতিমির দেশ নীলপুরীতে।সেখানে তোমার থিসিস পেপার তুমি ফেরত পাবে।

(৯)

নীলতিমির দেশটা অদ্ভুত।সমুদ্রের নীচে অনেক পাহাড়।পাহাড়ের চূড়োতে-ঢালে –পাদদেশে নীলতিমিদের বাসা।পাহাড়গুলোর পাশে সমতল ভূমিতে নীলতিমিদের ইউনিভার্সিটি।সেখানে চশমা পড়া অনেক নীলতিমি লেখাপড়া করে।

ডলফিন শুভকে নিয়ে গেল ছোট্ট নীল তিমি নিলুর বাসায়।নীলুও ইউনিভার্সিটির ছাত্র।ডলফিন বলল আজ নীলুর বাসায় থাক।কাল তোমাকে নিয়ে যাব প্রফেসরের কাছে।তার কাছে আছে তোমার থিসিস পেপার।

নীলুর সাথে ভারী ভাব হয়ে গেল শুভর।নীলু সমুদ্রবিদ্যার ছাত্র।নীলু আর শুভ অনেক কথা বলল।নীলুর কাছ থেকে সমুদ্রবিদ্যার অনেক কিছু শিখল শুভ।

(১০)

দুরুদুরু বুকে প্রফেসরের রুমে ঢুকল শুভ। প্রফেসর সাহেব শুভকে অনেক সন্মান দিলেন। আপ্যায়ন করলেন নিম্ফু ফলের জুস দিয়ে। তারপর নিয়ে গেলেন ল্যাবরেটরিতে।সেখানে এক বিশাল মেশিন দেখতে পেল শুভ।প্রফেসর তাকে বললেন তোমার থিসিসটা আমরা পেয়েছি। সে অনুযায়ী পানি শোধনের এই মেশিন আমরা বসিয়েছি। কিন্তু তোমার থিসিসের শেষ দুটি পৃষ্ঠা ছিল না। তাই আমরা এই মেশিন অন করতে পারছি না।

শুভ মেশিনটা অন করে দিল। আর দেখতে দেখতে পৃথিবীর সব দূষিত পানি শোধিত হয়ে গেল।

 

পরিশিষ্ট

শুভর বাবা মা – রশিদ স্যার – মাঝি ভাই সবাই জানে শুভ পানিতে পড়ে মারা গেছে।আসলে শুভ এখন থাকে নীলপুরীতে।নীলুর সাথে সমুদ্রবিদ্যা পড়ে নীলপুর ভার্সিটিতে।আর ছুটির দিনগুলোতে বাচ্চাতিমিদের পড়ালেখা করায় সে। এভাবেই তার দিন কেটে যাচ্ছে আনন্দে।

১,৪২২ বার দেখা হয়েছে

৬ টি মন্তব্য : “ডলফিন, নীলতিমি ও একটি থিসিস পেপার”

মওন্তব্য করুন : নাছিম জামান লিমন

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।