পদ্মাপাড়ের মেয়ে (Sands of Dee এর অনুবাদ)

পদ্মাপাড়ের একটু দূরে থাকতো যে রহিমা
‘গরুগুলি তুই ঘরে নিয়ে আয়’ – বলিলেন তার মা।
রহিমার ছিল টানাটানা চোখ- ঘন কালো তার চুল
ভুল করে সে তো আসিয়াছে হেথা – সেতো স্বর্গের ফুল।
পদ্মাপাড়ে রওয়ানা দিল সেই যে রূপসী কন্যা
প্রকৃতির কোন খেয়ালে আসিল ভরা পদ্মায় বন্যা।

কোন সে খেয়ালে দখিনা বাতাস ভাঙলো যে আড়মোড়া
ভয়ে শঙ্কিত হয়ে ওঠে তার সুন্দর চোখ জোড়া।
ভয়ার্ত-স্বরে গরুগুলোকে ডাকলো শব্দে যবে
জানিল না সে সেগুলো পদ্মা টানিয়া নিয়াছে কবে।

এমনি করিয়া খুঁজিতে খুঁজিতে গেল পদ্মার গ্রাসে
নিঠুর পদ্মা গর্জন করে তখনো অবধি হাসে।
ওরে ও পদ্মা! নিঠুর পদ্মা! ওগো তুই নির্লাজ
কোন সে বিবেকে করলি পাষাণ এমনি নিঠুর কাজ।

. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .

আজিও যবে জেলের নৌকা পদ্মার বুকে যায়
রহিমার সেই ক্রন্দন ধ্বনি আজিও শুনিতে পায়।
কোন সুদূরের প্রান্তর হতে সেই ধ্বনি ভেসে আসে
আজিও তাহার চুলগুলো যেন পদ্মার জলে ভাসে।
আজিকে তাহার স্মৃতিটুকু শুধু অক্ষয় আছে হায়
আত্মা তাহার মিশে আছে কোন অসীমের নীলিমায়।

২০ জুলাই ১৯৯৬

৪,৩২১ বার দেখা হয়েছে

৩৪ টি মন্তব্য : “পদ্মাপাড়ের মেয়ে (Sands of Dee এর অনুবাদ)”

  1. রকিব (০১-০৭)

    চমৎকার অনুবাদ ভাইয়া। সম্ভব হলে ইংরেজি মূল কবিতাটাও দিয়ে দিয়েন এখানেই।
    স্কুলে থাকতে একটা কবিতা পড়া হয়েছিল "মেঘনার ঢল"।
    দ্যা স্যান্ডস অব ডি- ও প্রায় একই ধাচের।

    মেঘনায় ঢল- হুমায়ুন কবির

    শোন্ মা আমিনা, রেখে দে রে কাজ ত্বরা করি মাঠে চল,
    এল মেঘনায় জোয়ারের বেলা এখনি নামিবে ঢল।
    নদীর কিনার ঘন ঘাসে ভরা
    মাঠ থেকে গরু নিয়ে আয় ত্বরা
    করিস না দেরি- আসিয়া পড়িবে সহসা অথই জল
    মাঠ থেকে গরু নিয়ে আয় ত্বরা মেঘনায় নামে ঢল।

    এখনো যে মেয়ে আসে নাই ফিরে- দুপুর যে বয়ে যায়।
    ভরা জোয়ারের মেঘনার জল কূলে কূলে উছলায়।
    নদীর কিনার জলে একাকার,
    যেদিকে তাকাই অথই পাথার,
    দেখতো গোহালে গরুগুলি রেখে গিয়েছে কি ও পাড়ায়?
    এখনো ফিরিয়া আসে নাই সে কি? দুপুর যে বয়ে যায়।

    ভরবেলা গেলো, ভাটা পড়ে আসে, আঁধার জমিছে আসি,
    এখনো তবুও এলো না ফিরিয়া আমিনা সর্বনাশী।
    দেখ্ দেখ্ দূরে মাঝ-দরিয়ায়,
    কাল চুল যেন ঐ দেখা যায়-
    কাহার শাড়ির আঁচল-আভাস সহসা উঠিছে ভাসি?
    আমিনারে মোর নিল কি টানিয়া মেঘনা সর্বনাশী।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    দারুণ অনুবাদ মাহবুব।দারুণ।
    'মেঘনায় ঢল' কবিতাটা স্যান্ডস অফ ডি-র অনুবাদ বটে।
    কবির নাম মনে ছিলোনা। ধন্যবাদ রকিবকে পাঠের সুযোগ করে দেয়ার জন্য।
    হুমায়ূন কবিরের লেখা অল্প যা পড়েছি তাতেই মুগ্ধ।

    জবাব দিন
  3. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    ভাইয়া স্যান্ডস অফ ডি আমাদের পাঠ্য ছিলো। আমার খুবই প্রিয় কবিতা এটি। মেঘনায় ঢল কবিতাটাও দারুণ লাগে। তবে আপনার অনুবাদ আসলেই দারুণ হইছে।
    পাঁচতারা।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ফয়েজ (৮৭-৯৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।