সপ্তম শ্রেণীর সাতকাহনঃ পর্ব-৪>> “ক্যাডেট কলেজে বেহেশতঃ হাসপাতাল”

যখন থেকে সিসিবি পরিবারের সদস্য হয়েছি, তখন থেকেই একটা আকর্ষণ বা টান কাজ করে, ধীরে ধীরে তা আরো বেড়েছে। কিন্ত নানা ব্যস্ততায় নিয়মিত হতে পারিনি গত বেশ কিছু সময় ধরে। গতকাল ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের ক্লাস শেষ করলাম। আর দুইটা সেমিস্টারও দেখতে দেখতে কেটে যাবে। যদিও আমাদের ব্যাচমেট ক্যাডেটরা নিজ নিজ ভার্সিটি থেকে বের হওয়া শুরু করে দিয়েছে। আমরা পিছিয়ে আছি। তারপরও কাল যখন ০৫ ব্যাচের বিদায়ী কনসার্টে আইয়ূব বাচ্চু এসে মাতিয়ে গেলেন, দেখতে দেখতে ভাবলাম আর কিছুদিন পর আমরাও এই বুয়েটের গণ্ডি ছেড়ে জীবনযুদ্ধের অসীমতায় ঝাঁপ দিব। কোন জায়গায় নতুন এলে যেমন একটা উত্তেজনা কাজ করে, সেই জায়গা ছেড়ে যাবার সময় তার থেকেও বেশি স্মৃতিকাতরতা পেয়ে বসে। পরেরটা পরে দেখা যাবে। কিন্তু চার বছরেরও আগে যে ক্যাডেট কলেজকে পিছনে ফেলে এসেছি, কখনও কখনও ভাবি জীবনের সবচেয়ে সুখের সময় সেখানেই কাটিয়েছি।

সপ্তম শ্রেণীর সাতকাহন
সপ্তম শ্রেণীর সাতকাহন-পর্ব ২>>শিক্ষানবিশি কুচকাওয়াজ
সপ্তম শ্রেণীর সাতকাহনঃপর্ব-৩>>পাঙ্গা,রগড়া,প্যাঁদানি।।।।।(১ম ভাগ)

ডিস্ক্লেইমার:
একটা মানুষ ছোটবেলাতে যেসব ছড়া শিখে, বড় হলেও তা সে ভুলতে পারেনা। আমার অবস্থা অনেকটা সেরকমই। সেভেনের অনেক স্মৃতিই আমার মাথায় ঘুরপাক খায় যখন তখন। সব কথা সবাইকে সবসময় যেমন বলা যায় না, তেমনি সব ঘটনাও উল্লেখ করা যায় না। গত পর্বে ফিজিক্যাল চার্জ নিয়ে যে দুই একটা ঘটনা লিখেছিলাম, তাতেই কেউ কেউ দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। তাই আজকে ওদিককার বিবরণ বিস্তারিত দেয়া থেকে বিরত থাকতে চাচ্ছি। যদিও বিটিং যে কম খেয়েছে, তার সেভেনের লাইফ বৃথা!

সিনিয়রদের শাসনে যখন আমরা দিশেহারা, তখন আমাদের মস্তিষ্কে হাজার ওয়াটের ফ্লাডলাইট হয়ে জ্বলে উঠল একটি অপরিসীম আরামের স্থান-
ক্যাডেট কলেজ হাসপাতাল

ক্লাস টেনে পড়ার সময় অবশ্য আমাদের হাসপাতালের নাম করা হয় ‘বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান হাসপাতাল’

ক্লাস সেভেনের যে কোন ক্যাডেটের জন্য হাসপাতাল হচ্ছে বেহেশত। আমরা সেই বেহেশতের কথা প্রথম জানতে পারি আমাদের ফ-১৯৫০ এর কাছ থেকে। কারণ কলেজে ঢুকার পরের দিনই বেচারার ”সলিডইনপুট-লিকুইড আউটপুট” টাইপ প্রবলেম হওয়াতে সে আমাদের মধ্যে প্রথম হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার গৌরব অর্জন করে! প্রথম ৭ দিনের মধ্যে তিনদিন সে হাসপাতালে কাটিয়ে এল। ততদিনে আমরা সাবধান হয়ে হাঁটা শুরু করেছি। সে দিব্যি হ্যান্ডসুইং দিয়ে রুমে এসে ঢুকল। আমরা তো অবাক! বলি,’কী রে? তুই জানিস না, হাত নাড়ায়ে হাঁটতে না করছে ভাইরা!’ সে বলে, ‘এহ, আমাকে তো হাসপাতালে কেউ কিছু বলল না! সেখান থেকে হ্যান্ডসুইং দিতে দিতে হাউসে আসলাম!’ তখন আমরা তার কাছে হাসপাতালের বর্ণনা শুনলাম ….

‘হাসপাতাল কঠিন আরামের জায়গা, হ্যান্ডসুইং দিয়ে হাঁটা যায়, যত ইচ্ছা ঘুমানো যায়, গল্প করা যায় যার তার সাথে সহজেই, যত খুশি বেশি খাওয়া যায় এবং সবথেকে বড় কথা হাত দিয়ে খাওয়া যায়!’

ওই কদিনে আমাদের সবার অবস্থা অনেকটা লোনা পানিতে মিঠা পানির মাছের খাবি খাওয়ার মত! তাই হাসপাতাল জায়গাটাকে সেই বন্ধুর বর্ণনা শুনে কলেজের ভেতরের কোন জায়গা মনেই হয়নি।

প্রথম ৭দিনে কেউ অসুস্থ্য হয়নি। পরের টার্মে এসে যখন পরিশ্রম বেড়ে গেল, তার সাথে সাথে বেড়ে গেল আমাদের সিক রিপোর্ট করা ছেলেপেলের সংখ্যাও! উপায়ান্তর না দেখে প্রিফেক্ট ভাই নিয়ম করে দিলেন, একদিনে তিনজনের বেশি ক্লাস সেভেন সিক রিপোর্ট করতে পারবে না! যদিও অমানবিক, কিন্তু তাছাড়া কোন উপায় ছিল না। কারণ বাকি ক্লাসও তো আছে! একদিন দেখা গেল আমাদের প্রায় ৬জনের সর্দি লেগেছে,কারও কারও কাশিও অনেক। তিনজন সিকরিপোর্ট করতে পারবে, কে হবে সেই তিনজন? কে কালকের পিটি-তে ডজ মারতে পারবে? এই সৌভাগ্য অর্জনের আশায় একচোট হাতাহাতিও হয়ে গেল দুইজনের মধ্যে! এতে এদের কারও জয় নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই দেখা গেল অন্য তিনজন ওর মধ্যেই সিক রিপোর্টে নাম লিখিয়ে এসেছে!

পর্যাপ্ত অসুস্থ হলে বা সুঅভিনয় করতে জানলে পুরস্কার হিসেবে জুটত দুই বা তিনদিন পিটি-ড্রিল-গেমস এক্সকিউজ কিংবা হাসপাতালে ভর্তি। আমার এক বন্ধু একবার সামান্য পা ব্যথায় ৫ দিন এক্সকিউজ নিয়ে আসল। সে আবার ফুটবল ভালো খেলে। তো গেমস টাইমে এক্সকিউজ স্ট্যান্ডে না থেকে সে আমাদের সাথে ফুটবল খেলা শুরু করে দিল। সাধারণত সবার এত কিছু চোখে পড়ে না। কিন্তু কিছু কিছু ক্লাস এইটের ভাইদের গেমস টাইমের কাজই ছিল নিজেদের খেলা বাদ দিয়ে জুনিয়রের হাজারটা দোষ খোঁজা। গেমসের পর যথারীতি সেই বন্ধুটির কপালে বেদম প্যাঁদানি জুটল। কোন এক মাথামোটা ভাই আমার অনেকটা এরকম ফল্ট বের করেছিলেন, ”আছিব, ফুটবল খেলতে গিয়ে ইচ্ছা করে তুমি বেশি হ্যান্ডসুইং দাও ক্যান?”

হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য ছেলেপেলের উপায়ের কোন শেষ নেই। এদিক থেকে সব থেকে এগিয়ে ছিল তারিক হাউসের র-১৯৭৯। সে অভিনব পদ্ধতি বের করত। বগলে রসুন দিয়ে জ্বর এনে দিব্যি তিনদিন কাটিয়ে আসল। যখনই দেখত হাউসে সেভেনের গণ খাওয়ার টাইম আসছে, তখনই সে কোন না কোন অভাবনীয় তরিকা বের করত অসুস্থ হওয়ার! কিউই জুতার কালি খেয়ে একবার এডমিট হল, আবার নাকে পানি ঢুকিয়ে সর্দি বানিয়ে এডমিট হল! কত রকম কষ্ট করতে হয়েছে শুধু প্যাঁদানি থেকে বাঁচার জন্য! আমি তখন এসব শুনে ভাবতাম, অসুস্থ হওয়ার জন্য নিজের উপর অত্যাচার করে অসুস্থ হওয়াটাও কি এক ধরনের অসুস্থতা না?

আমি সিক রিপোর্ট প্রথম করি অনেক পরে। প্রথমত, তেমন সিক হইনি। দ্বিতীয়ত, এতই ভয় পেতাম যে, মনে হত সিক রিপোর্ট করতে গেলেও মাইর খাব! অবশ্য একদিন পেট ব্যথা শুরু হল। ভাবলাম এই ছুতায় হাসপাতালে কিছুদিন কাটিয়ে আসা যাবে! কেননা, তখন আমার উপর পুরা টার্ম রুম ডিকেশীপের শাস্তি ঝুলছে। শান্তিতে কবে শেষ ঘুমিয়েছি ভুলতে বসেছিলাম! তো যত না ব্যথা, তার থেকে বেশি আ-উ করা শুরু করলাম। মেডিকেল অফিসার বুঝলেন কিনা জানি না, মুচকি হেসে সিকরিপোর্টে এডমিট লিখে দিলেন! বললেন, ”কয়েকদিন এখানে কাটায় যাও, ঠিকমত টয়লেট হলেই ঠিক হয়ে যাবে!”

ব্যাস, আমি এডমিট হয়ে গেলাম! আমার সাথে রিপোর্টে আসা হাউসমেটকে কাপড়চোপড় পাঠাতে বলে দিয়ে বেডে সেরকম শান্তির একটা ঘুম দিলাম!
আমাদের হাসপাতালে ওয়ার্ডে ১১টা বেড আর এক কেবিনে তিনটা বেড। ছোঁয়াচে রোগীদের কেবিনে রাখা হত। ওয়ার্ডে একটা টিভি ছিল। কোন এক এজি দিয়েছিলেন। তাতে বিটিভি আর ডিডি-৭ ছাড়া আর কিছু আসত না। বলা বাহুল্য,ওই সময়েও আমাদের কলেজে স্যাটেলাইট চ্যানেল ছিল না। আর পরে ডিশ আসলেও হাসপাতালে আমরা যতদিন কলেজে ছিলাম, ডিশ কানেকশন দেয়া হয়নি! সেভেন-এইটে নিজেরাই রিমোট নিয়ে টিভি দেখতে পারতাম,এরপর কঠোরতা জারি করা হয়। স্টাফ ছাড়া কেউ টিভি দিতে পারত না! খাওয়ার সময় গ্লাসে পানির বদলে ডাল নিয়ে ঢকঢক করে খেতাম। মনে আছে, তিন তিনটা পুডিং আর তিন কাপ স্যুপ খেয়েছিলাম হাসপাতালে যেদিন স্পেশাল ডিনার পেলাম প্রথম!

টয়লেট করলেই ব্যথা ভালো হবে,আর তাহলে আমাকে বেহেশত থেকে দোজখে যেতে হবে!- এই ভয়ে পারতপক্ষে ‘বড় কাজ’ না করাই শ্রেয় মনে করলাম! দ্বিতীয়দিন মেডিকেল অফিসার জিজ্ঞেস করলেন ভালো হয়েছে কিনা। বললাম, না স্যার। পরেরদিনও এক কথা!সেদিনও না করলাম। ৪র্থ দিন স্যার বললেন,’বুঝলাম তুমি টয়লেট করতে পারবা না,তোমাকে বাধ্য করতে হবে!’ ভয়ে ভয়ে আর আটকালাম না।
যাই হোক,অভিনয় সেখানেই শেষ নয়! রিলিজ অর্ডার হয়ে গেল, দুপুরে খেয়েই হাউসে যেতে হবে। এই কদিন অনেক ঘুম, অনেক খাওয়া, ধুমসে ক্যারাম খেলে কাটিয়েছি। আবার মনের মত বসে পড়াশুনাও করেছি।এখন এই আরাম ছেড়ে কিভাবে যাই! তো দুপুরে খেয়েই পেটখানা চেপে ধরে স্টাফের কাছে গিয়ে বললাম, স্টাফ আবারো ব্যাথা! স্টাফ বলে কই? বললাম পেটে আর বুকে! স্টাফ বলে, বুকেও ব্যাথা বানায় ফেললা! যাও শুয়ে থাক!

রিলিজ অর্ডার ক্যান্সেল হল। পুরা ২দিন ভং ধরে থাকলাম পেট আর বুকে ব্যথা! পরেরদিন মেডিকেল অফিসার মারলেন ঝাড়ি! বললেন, ‘ফাইজলামি কর আমার সাথে? আর কখনও যদি পেটের ব্যথা নিয়ে এসে বুকের ব্যথা নিয়ে হাউমাউ করছ তাহলে শিখায় দিব ব্যথা ক্যামনে ফিল করতে হয়!’ সর্বরোগের মহাষৌধ (অন্তত ক্যাডেট কলেজের মেডিকেল অফিসারের কাছে) প্যারাসিটামল দিয়ে আমাকে ডিসচার্জ করে দিলেন তিনি ……

সাত সাতটা দিন হাসপাতালে কাটিয়ে হাউসে ফিরলাম। ফেরার পরপরই সিনিয়রদের তলব, ‘পিন্টু, পেটে যা ছিল তা কি হাসপাতালেই রেখে আসছ? আমরা দেখব না?’ সে এক মহা যন্ত্রণা! বন্ধুরা পর্যন্ত আমার এতদিনের আরাম সহ্য করতে পারল না। পেটের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াটা যে কত বোকামী হয়েছিল, সেটা তখন টিজ না খেলে বুঝতাম না!

দিন যায়, মাস যায়,শীত আসে। তখন সর্দি-জ্বর নিয়ে আবার হাসপাতালে ভর্তি হলাম। গরমের সময় হাসপাতাল থেকে ফেরার কালে বন্ধুরা আম, লেবু পেঁড়ে আনত। আমি ভয়ে আমবাগালে ঢুকতাম না। একদিন সাহস করে আমবাগানে গিয়ে দেখি ক্লাস এইটের দুই ভাই আম পাড়ছে! চোরে চোরে মাস্তুতো ভাই প্রবাদটা অন্তত সেই জায়গায় খাটেনি! কেননা এর পর আমার পাছাতেই দুইটা আম গজিয়েছিল তাদের মাইর খেয়ে!

ছিল প্রচুর কাঁঠাল গাছ। লোভ সামলাতে না পেরে তো একদিন র-১৯৭৯ আস্ত কাঁঠালই পেঁড়ে আনল!সে কাহিনী আগেই বলেছি….

শীত পেরিয়ে বসন্ত এল। এর মধ্যে হঠাৎ একদিন এক বন্ধুর চোখ উঠল। সে হাসপাতালে গেল। সেইদিনই আরেকজনের চোখ উঠল, সে আবার ছিল হাউস ডিকে ওইদিনের জন্য।এখন যেহেতু সে গেলে তার পরেরজন হাউস ডিকে হবে, তাই তার পরের জন চোখউঠা বন্ধুর চোখের দিকে টানা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ কচলায়ে লাল করে নিয়ে সিক রিপোর্টে চলে গেল! এরকম করে ছয়-সাতজন এডমিট হয়ে গেল! শুরু হল মহামারী, সেভেন-এইট-নাইন সব ক্লাসেই খালি চোখ উঠাউঠি!
সিনিয়রদের, বিশেষ করে দ্বাদশ শ্রেণীর ভাইদের প্র্যাকটিক্যাল লিখে দিলে তারা বলতেন, বল কি চাস! ছেলেপেলে ডিকেশীপ এক্সকিউজ চাইত! এভাবে একে একে ডিকেশীপ এক্সকিউজ আর চোখ উঠায় এডমিট হয়ে হয়ে দেখা গেল হাউজে ক্যাডেট আসে আমাদের ক্লাসে দশ এগারো জন! আর দুই তিনদিন পরপরই হাউস ডিকে থাকা লাগে! সে এক মহা ঝামেলা!

এভাবে চোখ উঠা মহামারীতেও আল্লাহর অশেষ রহমতে (নাকি লানতে!!) আমি সুস্থ থেকে হাউস ডিউটি করতে থাকলাম আমার মত আরও কতিপয় হতভাগার সাথে! কিন্তু কিছুদিন না যেতেই নতুন মহামারী দেখা দিল! তা হল চিকেন পক্স! একে তো হাসপাতালে চোখ উঠা রোগী,তার উপর চিকেন পক্স! কোনটা বেশি ছোঁয়াচে? অত বুঝাবুঝির বালাই নাই। চোখ উঠা রোগীর সংখ্যা একসময় পক্সের রোগীর চেয়েও কমে গেল! তখন কারো চোখ উঠলে তার জায়গা হল কেবিনে! তিনজনের কেবিনে ৬-৭জন থাকতে শুরু করল! তাতেও যখন হল না, তখন চোখউঠা রোগীদের মলম ধরিয়েই বিদায় দেয়া হল! কেননা পক্স রোগী নিশ্চয় বেশি ভুগে! আর সময়ও বেশি লাগে।

তো কেবিন ভরল, ওয়ার্ডের ১১টা বেডও ভরলো, উপায়ান্তর না দেখে হাসপাতালের ফ্লোরেও রোগী থাকার ব্যবস্থা করা হল! সেই জায়গাও যখন ভরে গেল, তখন অস্থায়ী হাসপাতাল হল আমাদের কাসিম হাউসের কমন রুম!! সেখানে যারা পক্স আক্রান্ত, তাদের ম্যাট্রেস ফেলে বেডিং করা হল! সেই কমন রুমও দেখতে দেখতে ভরে গেল! তারপর নতুন কোন ক্যাডেট পক্সাক্রান্ত হলেই তাকে ছুটি দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া শুরু হল!
এইবার যারা তখনও আক্রান্ত হয়নি, তাদেরও পক্সাক্রান্ত হওয়ার পাগলামীতে পেল। একদিন একজনের পক্স হল।ছুটিতে বাসায় যাবে, এমন সময় আরেকজন সুস্থ ছেলে এসে তার পক্স একটা গলিয়ে সেই রস হাতে মাখল! আল্লাহর কী কাম, পরেরদিন তারও পক্স হল!
এভাবে কলেজের প্রায় এক-চতুর্থাংশ বাসায় গেল,এক-চতুর্থাংশ হাসপাতালে এডমিট! এমনে কেমনে!!….

আমি ছিলাম সেইসব দুর্ভাগাদের দলে যাদের আগেই পক্স হয়েছিল। ওই কদিন অনেক খাটনি গিয়েছিল আমাদের। যে কোন কাজেই ডাক পড়ত। দেখতে দেখতে প্রকোপ কমে গেল। মহামারী কাকে বলে তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম। কাসিম হাউসে সুস্থ ক্যাডেট বেশি থাকায় ওইবার ক্রস কান্ট্রিতে বেশি ক্যডেট দৌড়ানোর ফলে আমাদের হাউস পয়েন্ট বেশি নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল!

এরপর বাকি পাঁচ বছরে আরও সত্যিই অসুস্থ হয়ে তিন-চারবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলোকে মাথায় রাখিনি মোটেও। কারণ, তখন হাসপাতালে গিয়ে মন টিকত না, যতই সুযোগ সুবিধা থাকুক! চাইতাম যত তাড়াতাড়ি পারি সুস্থ হয়ে প্রতিযোগিতায় ফিরতে! কারণ, ক্যাডেট কলেজ লাইফ মানেই নিজের অতীতের থেকে ভবিষ্যতকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা! হাসপাতালের আসল মজা ক্লাস সেভেনেই। তাই আশা করি ক্লাস সেভেনে যারা হাসপাতালে ভর্তি হননি তারা পরে আক্ষেপে পুড়েছেন…..

৩,৩৪৯ বার দেখা হয়েছে

৪২ টি মন্তব্য : “সপ্তম শ্রেণীর সাতকাহনঃ পর্ব-৪>> “ক্যাডেট কলেজে বেহেশতঃ হাসপাতাল””

  1. রকিব (০১-০৭)

    হাসপাতাল জায়গাটার প্রতি ক্লাশ নাইন থেকেই বিশেষ কিছু কারণে একটা ভয়াবহ বিতৃষ্ণা কাজ করে। 🙁


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. জুলফিকার (২০০০-২০০৬)

    :boss: কোন এক মাথামোটা ভাই আমার অনেকটা এরকম ফল্ট বের করেছিলেন, ”আছিব, ফুটবল খেলতে গিয়ে ইচ্ছা করে তুমি বেশি হ্যান্ডসুইং দাও ক্যান?” :grr: :grr:

    জবাব দিন
  3. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    আছিব, হাসপাতালের অভিজ্ঞতা লিখতে গেলে ১০ পর্বেও ফুরাবে না! কতো অজুহাত আর কতো সৃজনশীলতা! একবার মহামারি চিকেনপক্সে ফৌজদারহাটের জিমনেশিয়ামকে অস্থায়ী হাসপাতাল করা হয়েছিল। কি সব দিন ছিল!! কতো রকম ইনডোর গেমস যে হতে পারে......... সুই দিয়ে জ্যাভলিন থ্রো! কল্পনা করতে পারো?? :-B :-B :-B


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  4. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    প্রতিটা লাইনে পড়ে হাসছি-মনে হচ্ছিলো আমি আমার ক্লাস সেভেনের হাসপাতাল সময়টা নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছিলাম।দুর্দান্ত স্মৃতিচারণ,এমনিতেই সিসিবিতে স্মৃতিচারণ কিছুটা কম হচ্ছে...এই পস্ট আসায় ইঞ্জিন্টা চালু থাকল...সাবাস পিন্টু :boss:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।