~ মরণ সাধার ধ্যানে ~

দমকা হাওয়া হঠাৎ এসেই
জানালা পেরিয়ে কাগজ উড়িয়ে,
করলো যতনে টেবিলে জমানো
কথার অযুত বাহানা গুলোকে সাফ্ ।

বেহায়া আলোক মুখটা লুকিয়ে
সন্ ধি ভাঙার সুযোগ মিলতে
সহসা সকল আঁধার উড়িয়ে
পুরোটা ঘরেই জাগিয়ে তুললো রাত ।

আষাঢ় শ্রাবণ মাসেরা কিযেনো
কুটিল গোপন ফন্ দি ফিকিরে
মরিয়া মেতেছে, যেনোবা কবির
ভাবনা তাড়ানো মহিমা মাখানো কাজ ।

জানেনা আদপে কাগজে আঁকানো
আবেগ মাখানো কথার দ্যোতনা
ঘুণের কামড়ে কবিকে খেয়েছে
পোকার মতোন সারাটা জীবন ভর ।

কিছুটা উদাসী মাতাল বাতাস
খেয়ালী জলের কতক ফোঁটায়
কিয়দ হেঁয়ালী ছড়িয়ে ভেবেছে –
তাতেই হারাবে তাবৎ ভাবনা আজ !

আকাশ কতোটা গভীর জেনেছে
মনের খবর ! চাঁদের নরোম
রূপালী আলোক যতোটা ছুঁয়েছে
নাজুক ভাবুক মনের গভীর তান !

ততোটা যতনে নারীও টানেনি,
বুকের শেকড়ে কিছুটা আনেনি,
খেয়ালী বীণায় সুরের মাতমে,
ভুলেও খানিক বাজাতে পারেনি গান ।

অবাক কথার কবিতা গড়ার
আপন আকুতি প্রাণের গহীনে
হৃদয় লোবাণে যাপনে তাহারে
নিয়ত পুড়িয়ে পুরোটা করেছে ছাই ।

যতোই দাপুটে ঝড়ের শরীরে
আঘাতে হন্ তা চালাক চাবুক,
গোপন গভীরে লোহিত কণিকা
কথাকে আগলে জিইয়ে রেখেছে প্রাণে ।

পংক্তি বোনার স্বগত স্বভাব
বহতা নদীর জলের মতোন
কুশলী কথার মোড়োকে মোড়ানো
যাতনা বিলাসী কবিকে রেখেছে
সতত ক্লিশের গভীরে দাঁড়িয়ে
প্রাণের আবেগে জীবন মাতানো
হাসির দমকে মরণ সাধার ধ্যানে ।

২৬ জুলাই ২০১৫

১,৭৩৫ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “~ মরণ সাধার ধ্যানে ~”

  1. মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

    চমৎকার লাগলো! লেখায় কবির যন্ত্রণাদগ্ধ মনের ছবিটা দারুণ ফুটে উঠেছে।

    ছন্দের কাজ 'নিয়ার টু পারফেক্ট'! একটু দেখুন, যদি ভাবি যে মাত্রাবৃত্তে লিখেছেন তবে,

    দম/২কা/১ হাওয়া/৩ হ/১ঠাৎ/২ এ/১সেই/২
    জানালা/৩ পেরিয়ে/৩ কা/১গজ/২ উড়িয়ে,/৩
    কর/২লো/১ যতনে/৩ টেবিলে/৩ জমানো/৩
    ক/১থার/২ অ/১যুত/২ বাহানা/৩ গুলোকে/৩ সাফ্।/২

    মাত্রা ঠিকই আছে, তবে 'হাওয়া' না লিখে 'বাতাস' লিখলে ছন্দটা আরেকটু যুত করে বসতে পারছে।

    তবে লেখাটির কিছু কিছু পংক্তি স্বরবৃত্তেও যায়,

    দম/১কা/১ হাও/১য়া/১ হ/১ঠাৎ/১ এ/১সেই/১ = ৪+৪

    স্বরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্তের মিশ্রণে লিখে থাকলে ছন্দের কাজ আরো খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

    আরেকটি বিষয়, সব ক'টি অনুচ্ছেদ রুদ্ধদল দিয়ে শেষ হয়েছে, শুধু শেষের দু'টি ছাড়া। অনিয়ম হয় নি, তবে অনিবার্য ছিল না। রুদ্ধদল বেছে নেয়া তেমন কঠিন বলে তো মনে হয় না। পংক্তিটিকে একটু ঘুরিয়ে লিখলে 'প্রাণ' শব্দ দিয়ে শেষ করা যেত, 'গান' এর সাথে তবেই অন্তঃমিল হতো।

    সাফ রাত কাজ* ভর আজ* তান+ গান+ ছাই প্রাণে# ধ্যানে#
    অর্থাৎ সাফ রাত ভর ছাই অন্তঃমিল বা দুরান্তমিল পাচ্ছে না। শব্দ বাছার জন্য কিছুটা সময় লগ্নী করলে মনে তো হয় যুতসই কিছু পাওয়া যাবার সম্ভাবনা আছে।


    দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      তোমার মন্তব্যটির অপেক্ষাতেই ছিলাম ।
      পেলাম খুব তাড়াতাড়ি ।
      স্বরবৃত্তে লিখায় মতলব ছিলোনা । যেখানে যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে তা চলে এসেছে ।
      সমর দেবার চাইতেই মন দেবার বিষয়টি শেকলে বেঁধে রাখে ।
      তবে হ্যা শব্দ নিয়ে খানিক খেললে অন্তমিলটা আনা যেতেই পারতো ।
      শেষ দুটি স্তবক রুদ্ধদল দিয়ে শেষ হলে ভালো হতো নিশ্চিত ।
      আর কিছু হোক না হোক এটুকু করতেই হবে এক সময় ।

      অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমার মন্তব্যে প্রাণিত ও ঋদ্ধ করবার জন্য ।
      এমনটা অব্যহত থাকা চাই ।

      জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      শর্ট কাট সংশোধন হতে পারে কি এমন !
      - - -

      যতোই দাপুটে ঝড়ের শরীরে
      আঘাতে হন্ তা চালাক চাবুক,
      গোপন গভীরে লোহিত কণিকা
      কথার যাদুতে জিইয়ে রেখেছে প্রাণ ।

      পংক্তি বোনার স্বগত স্বভাব
      বহতা নদীর জলের মতোন
      কুশলী কথার মোড়োকে মোড়ানো
      যাতনা বিলাসী কবিকে দিয়েছে
      সতত ক্লিশের গভীরে দাঁড়িয়ে
      প্রাণের আবেগে জীবন মাতানো
      হাসির দমকে মরণ সাধার ধ্যান ।
      - - -

      মন্তব্য চাইছি ।

      জবাব দিন
  2. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    আ হা আ হা।
    এমন স্বাদু কবিতা তার ওপরে এমন সুস্বাদু পর্যালোচনা!
    মোস্তফা ভাই, কবিতার কারুকাজ দেখার চোখ ফুটিয়ে দিচ্ছেন আমার। কত বন্ধ দরজা যে খুলে যাচ্ছে!

    জবাব দিন
  3. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    পুরো কবিতাটাই ভালো লেগেছে, তবে শেষ স্তবকটি অসাধারণ হয়েছে। বিশেষ করেঃ
    "কুশলী কথার মোড়োকে মোড়ানো
    যাতনা বিলাসী কবিকে দিয়েছে
    সতত ক্লিশের গভীরে দাঁড়িয়ে
    প্রাণের আবেগে জীবন মাতানো"...

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।