~ অচেনা শহরের পথে হারাবার রথে ~

প্রাগ থেকে পায়ে হেঁটে যেতে চাই
ভিয়েনা কিংবা ভেনিস,
নিকারাগুয়ার মেঠো পথ
থেকে উগান্ডা-কাম্পালা,
সেন্টপিটার্সবার্গ শহর
ঘুরে রিগা অথবা মিনস্ক !
গন্ডোলায় চড়বার শখ
টানেনি আমাকে তেমন ।
শুধু এক অচেনা শহর
ঘুরে, পথে পথে, খুব শখ ছিলো,
হারাবো দিব্যি আমাকে ।
লস এঞ্জেলেস কিংবা
লাস ভেগাসের নিয়ন রাত,
ঘুমকাতুরে বিরহে ফেলে
ডেনভার কলোরাডো ওহাইও,
দিনের ল্যান্ডস্কেপ ফ্রেমে আঁটা
গ্রেহাউন্ড জানালার চোখে,
রাতের তারার আলোক
নির্দেশ মাখা লাল মাটি লেপা
পথের পাঁজরে, ক্লান্ত
ফেননিভ বিয়ারের সখ্যে
মৃদু কম্পণাংকে আঁকা
পদক্ষেপে অবিরাম হেঁটে –
শখ ছিলো খুব, কোনো এক দিন,
অচেনা শহরের কোনো পথে
নিরুদ্দেশ হবার মতো
সূত্রবিহীন হারিয়ে
যাবো, পুরোনো পত্রিকার
পাতায় ছাপা কোনো তারিখ
বিলীন বাতিল চাকরীর
বিজ্ঞাপনের মতোন ।
খুব যতনে গোনা পুরোনো
কিছু অক্ষর ছাড়া, যার কোনো
মানে নেই আজ একটুও ! ঠিক
সেই রকম, হারিয়ে যাবো …
নিজেকেই নিজে খুঁজে না নিলে
যমেও পাবে না খুঁজে টুজে ।
সিডনী সাঙহাই হ্যানয়
কিংবা টাইম স্কোয়ার,
ম্যানহাটন বা নরফল্ক !
চেরাপুঞ্জি মাসাইমারা
দার্জিলিং থেকে নীলগিরি,
কোলকাতা কলম্বো বালি
চেন্নাই ক্যান্ডি গৌহাটি !
নির্ভেজাল ইচ্ছে ছিলো,
অচেনা শহরের পথ ঘুরে,
বেমালুম যাবো খুব হারিয়ে ।

চেনা শহরের পথগুলো সব
এতো বেশী চেনা, এতো বেশী বশ !
বেহেড মাতাল হলেও
করতলের মতোন, কেনা,
যেখানে কখনো কিছুতেই
চাইলেও হারানো যাবেনা ।

আমার এখন তাই খুব
অচেনা বিভূঁই শহরের
পথ চাই মহা দুর্বোধ্য
নারীর মনের মতোন,
সহস্র বছরেও যাকে
এক রত্তি হয়ে ওঠে না
চেনা । রহস্যময়ী যে,
চিরকাল অজানা অধরা !

নারীতে আমাকে টানেনা
বুঝিবা আদৌ একটুও ।
একাগ্র ভীষণ চাই –
কোনো অচেনা শহরের বুকে,
জনশূণ্য ফুটপাথে কাত
হয়ে, বশ্য বিয়ারের মুখে
চুমু এঁকে, তার বিশ্বস্ত
শরীর বুকে চেপে, ভোরের
আলোর অপেক্ষায় বোঁজা,
মেঘাচ্ছন্ন দৃষ্টি
মাখা চোখে, নিদ্রাদেবীর
দিকে উঁচু বৃদ্ধাংগুলি রেখে,
নিজের সংগে মগ্ন
গভীর অন্তরংগ
আলাপনে, রাতের তারার
উদারতার আশকারাতে,
প্লাথ বা খৈয়ামের অবয়ব
ছায়াময় নক্ষত্রের সাথে,
অর্থহীন বাতচিতে, রাত
নেশাতুর সকাল হলেই,
পথের ঠিকানা খোঁজার
তাগাদায়, ফের পা বাড়াবো
অপেক্ষাতুর অজানায় !

২০ জুলাই ২০১৫

২,০৮৮ বার দেখা হয়েছে

১৭ টি মন্তব্য : “~ অচেনা শহরের পথে হারাবার রথে ~”

  1. আরিফুল হক শোয়েব (২০০২-২০০৮)

    আমি ভ্রমণপাগল। কবিতাটি পড়ে মনে হোল এই মুহূর্তে বেরিয়ে পড়ি ইউরোপের রাস্তায়, আফ্রিকার সেরেঙ্গেটিতে। ঘর-ছাড়া একটা আবেদন আছে। প্রিয়তে রাখলাম। :boss:

    জবাব দিন
  2. আরিফুল হক শোয়েব (২০০২-২০০৮)

    হারিয়ে যাবার ইচ্ছেটা বোধ হয় অস্তিত্বের ভেতর বুনে দেয়া। নইলে যে জানার জো নেই কেউ আদৌ খুঁজতে আসবে কি না! লিখা পড়ে হারানোর তীব্র বাসনা অনুভব করেছি।

    জবাব দিন
  3. মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

    নির্মলেন্দু গুণের 'অনন্ত বরফ বীথি'-র ধাচের লেখা। তবে অনেক মিলের মাঝেও কিছু ভিন্ন বক্তব্য, ভিন্ন অভিজ্ঞান খুঁজে পাওয়া যায়। কিছু কিছু অংশ স্বতন্ত্র মহিমা পেয়েছে। পুরো লেখার গায়ে উপমা-রূপক যেন তারাপুঞ্জের মতো ছড়িয়ে আছে। সুখপাঠ্যও বেশ!


    দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      পড়েছিলাম কিনা মনে নেই । সম্ভবত পড়িনি । তবে তোমার দেয়া লিংক থেকে পড়লাম ।
      খুব ঠিক বলেছো । আরো কটা লাইন আমার কবিতাটায় লিখতে গিয়েও লিখা হয়নি । সেসব মনে পড়লো । হুবহু কোনো জায়গার কথা নয় । তবু মনে পড়লো গুণের কবিতাটা পড়ে ।
      গুণ লিখেছেন মৃত্যু পরবর্তী ভাবনায় আর আমি লিখেছি অমন হরিয়ে নিরুদ্দেশের গায়ে মৃত্যুর মতোন জীবন থেকে হারাবার ছবি আকার অন্তর্গত ভাবনায় ।
      তোমার মন্তব্য বরাবরই যেমন এক ভিন্ন মাত্রার যোগ ঘটায় । এখানেও তেমনটিই ঘটালে আবার ।
      অগুন্তি ধন্যবাদ তোমাকে মোস্তফা । (সম্পাদিত)

      জবাব দিন
  4. সাইদুল (৭৬-৮২)

    গতকাল পড়েছি, রাস্তায় ছিলাম। মন্তব্য লেখা হয়নি। আজ আবার পড়লাম। আবার। এখনও ভালো লাগছে


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : লুৎফুল (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।