গ তি ও গ ম ন

~ এ ক ~

খুব দ্রুত সরে যাচ্ছে দু’পাশের গাছ, পাখি, নদী ও সবুজ। পথের দু’পাশের সময়ের স্মৃতিবহ সুবিশাল বৃক্ষরাজির শাখা-প্রশাখা চূড়োরা মিলেমিশে তৈরী করেছে যেন অবিরাম সবুজের এক অন্তহীন সম্ভাষণ তোরণ। দুর্বিনীত এই ছুটে চলার মাঝে অপসৃয়মান সবুজের ফাঁক গলে তীরের ফলার মতোন ধেয়ে আসছে অসংখ্য আলোর রেখা। অবিরাম সবুজ এই তোরণের সুদূর সীমান্তে অত্যুজ্জ্বল আলোর বন্যায় অপেক্ষমান বিদায়ী সূর্য। যেনো বসিয়েছে এক সোনালী স্বাগত সভা।

কোন এক তীব্র শব্দ ঝড় যেনো পাল্টে দিতে চাইছে সমস্ত দৃশ্যপট। আলোর রেখাটা তীব্র হতে হতে ভীষণ নাড়িয়ে দিচ্ছে দু’চোখের পাতা। অবশেষে অভ্যেস মতোন সন্ধানী আঙুল খুঁজে পেলো সব শব্দযাতনা থামাবার অপেক্ষমান বোতাম। বাঁ হাতের কব্জি উল্টে চোখ ঢাকলো প্রতীম রোদের আড়ালে। এ্যলার্ম ঘড়ির ডায়ালে এবার স্পষ্ট দেখা গেলো সাতটা একত্রিশ। উঠে প্রথমেই পর্দাটা টেনে দিলো প্রতীম উঁকি দেয়া সূর্যের বিপরীতে। হাত-পা ছড়িয়ে এবার বসে রইলো বিছানায়। দেয়ালের পিঠে বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে পাশের টিপয়ে রাখা প্যাকেট থেকে বের করে নিলো সিগারেট আর পাশে থাকা লাইটার। ধরিয়ে হাল্কা একটা টান দিতেই বড্ড খটখটে শুকনো লাগলো দিনের প্রথম বেনসনের স্বাদটা। স্বপ্নের মধ্যে তীব্র গতিতে গাড়ী ছুটিয়ে শ্রান্ত গলা যেন শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে।

অবাধ্য পা দুটিকে টেনে বিছানা থেকে নামিয়ে সচল করতে হলো। ধীর গতিতে ফ্রীজটার সামনে এসে দরজা খুলে বের করে নিলো একটা ঠান্ডা পানির বোতল। ডাইনিং টেবিলের পাশে এসে বোতলের মুখ খুলে উপুড় করে ধরলো আধভরা জগের ভেতর। একেবারে ঠান্ডা পানিটা খেতে পারে না প্রতীম। তার চেয়ে আধাআধি মিশ্রণটাই ভালো লাগে বেশী। তাড়িয়ে তাড়িয়ে ধীর গতিতে দুই গ্লাস পানি শেষ করলো। এ্যাশট্রেটা তুলে নিয়ে চলে এলো বারান্দায়। মেঝেতে এক পা ছড়িয়ে বসে একহাতে মনযোগ দিয়ে সিগারেটে টান দিতে থাকলো নিয়মিত বিরতিতে। অন্যহাত যেন বিশ্রামে ব্যস্ত তখন ভাঁজ করা অপর হাঁটুর ওপর। সিগারেটটা শেষ হতেই মাথার মধ্যে একে একে স্লাইড শো হলো আজকের “থিংগস টু ডু লিস্ট” টার। সকাল ন’টায় জরুরী মিটিং। তারপর মতিঝিল, মিরপুর, গুলশান, গ্রীনরোড। সবশেষে আবার অফিস। অথচ ইচ্ছে করছে সকালটা এখানেই থাকুক থেমে। আর এই দিন কেটে যাক ঝুলবারান্দার বাতাস আর সোনালী রোদের আমেজে।

তাড়া খাওয়া কাকের মতোন এক ঝটকায় উঠে অকস্মাৎ সোজা বাথরুমের দিকে হাঁটলো। টাওয়েলটা তুলে নেবার আগে এ্যশট্রেটা উল্টে দিলো একবার ওয়েস্ট পেপার বাস্কেট। দিনের প্রথম কাজ, শেভ, গোসল সেরে তড়িঘড়ি তৈরী হয়ে নিলো। গাঢ় নীল প্যান্ট, নীলের বিভিন্নতায় বাঙ্ময় শার্ট আর গলায় আকাশী টাই। কালো জুতোয় ব্রাশ বুলিয়ে নিজের ছায়া তাতে কম্পমান হতেই উঠে দঁড়ালো আয়নার মুখোমুখি। ইচ্ছা-অনিচ্ছার দোটানা উৎড়ে জেলী ও মাখনে মাখানো টোস্ট আর চা শেষ হতে হতে দৈনিকের শিরোনাম আর তার দু-পাঁচটা লাইন পড়ে নেয়াও হলো। এবার আলোর রেখাগুলো যেন গতি পেতে থাকলো চকচকে জুতোর দেয়ালে। তিনটে করে সিঁড়ি টপকে চোখের পলকে দোতলা থেকে পার্কিং স্পেসে নেমে এলো প্রতীম।

~ দু ই ~

বা-শা-র ! সাড়ে আটটা। হাতের কব্জি উল্টাতেই বললো হাতঘড়ি। শোভন আর পরিমিত হাতের ব্যাগটাকে বরাবরই বড় বেশী উপযোগী মনে হয়। তবু যেনো ব্যাকসীটে ছুঁড়ে দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভারমুক্ত করলো হাত। নিজেকেও ব্যাকসীটে থিতু করতেই চোখে পড়লো গাড়ীর ঘড়িতে। আটটা পঁয়ত্রিশ। সময়ের একটাই একক মেনে, একই নিয়ম আর গতিতে চলেও যেন কিছুতেই একই সময় দেবেনা বলে কোন পণ আছে তাবৎ ঘড়ির। এই মূহুর্তে ইচ্ছে হলো বড় সড় কোন ঘড়ির দোকানে গিয়ে দেখে আসে সাজানো সবগুলো ঘড়ি হুবহু একই সময় দিচ্ছে কি না। বাশারের উপর খানিকটা রাগ হলো। সময়টা কিছুতেই ও মিলিয়ে রাখতে পারে না বলে। বাশারের দোষ দিয়ে আর কী লাভ! যে দেশে আটটার বিটিভির খবর যখন শুরু, বেতারের তখন তিন মিনিট সংবাদ পাঠ শেষ। সেখানে বাশার কোনটা মেলাবে!

এতোক্ষণে ড্রাইভিং সীটে বসে দরোজা লাগালো বাশার। একবার চলতে শুরু করলে আর একটুও থামতে সায় দেয় না মন। এই যে গেটটা বন্ধ করে এসে আবার সচল হতে যেটুকু দেরী, তাও যেনো সহ্য হয় না প্রতীমের। বড় অপছন্দ। মনে হয় চলার শুরুতেই যেনো হোঁচট খাওয়া। অথচ এ শহরে না থেমে চলে যাওয়া – সেতো এক পরাবাস্তব স্বপ্ন সম্ভাবনা। এরকম সত্য অভিজ্ঞতা আর উপলব্ধি মজ্জায় থিতু হয়ে গেছে। তবু এই সকালের শুরুটায় নির্বিঘ্নে সাবলীল অফিসে পৌঁছানোটা প্রতীমের এক বিলাসী চাওয়া। অন্য সময় অতোটা নাড়া দ্যায় না বিষয়টা।

সচল হতেই দু’পাশের দেয়ালগুলো সব এক হতে শুরু করলো ধীরে ধীরে। যেনো এক চলমান ক্যানভাস। বুক জুড়ে তার মানুষের মিছিল হেঁটে যাচ্ছে বিপরীতে, গন্তব্যের সমান দূরত্বে। এ সময়টায় চলমান থাকলে অপসৃয়মান মানুষগুলোকে দেখতেই ভালো লাগে বেশী। জ্যামে যখন স্থবির থাকতে হয় নিত্যকার রুটিন মাফিক – তখন কোন দৈনিকের সাহিত্যের পাতা কিংবা হালকা কোন কিছু পড়তেই পছন্দ সবচেয়ে বেশী। নতুবা অমীমাংসিত কোন সিদ্ধান্ত বা হিসেবের আঁকিবুকি কাগজে ও মনে যদি চলে – ব্যস। থেমে থাকা সময় আর থামে না অসহনীয় স্থবিরতায়। চলতে কারই বা লাগে না ভালো !

~ তি ন ~

মিটিং এ মোটেই মন বসছিলো না। অতশত খুঁটিনাটিতে নজর দেবার মতোন স্থিরতা আজ কিছুতেই পেলো না মন। হিসেব আর লাভালাভ ব্লাইন্ড হিটে সৌভাগ্য প্রত্যাশী এক ঝুঁকি প্রেমিকের মতোন সঁপে দিলো অদৃষ্টের হাতে। এটাচ্মেন্ট লিস্ট চেক করে প্রতিটা কাগজে সই আছে কিনা দেখে নিয়ে শিডিউল ক্লোজ করতে বললো ম্যানেজারকে। রুম থেকে বের হবার মুখে ম্যানেজারকে আরেক প্রস্থ তাড়া দিলো – এখুনি বেরিয়ে যাবে। আর কোন কাগজে সই বাকী থাকলে এখুনি করিয়ে নিতে হবে। বেরুলে আজ আর ফিরে আসার সময় নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। এজন্যই অমনটা বারংবার তাগাদা।

এক তাড়া কাজ। অথচ ইচ্ছে করছে সব ফেলে আজকে ছুটে যায় সকালের স্বপ্নের মতোন কোন পথে। তৃপ্তিতে মন পূর্ণতা পাবার আগ পর্যন্ত অটুট থাকুক তার সব সবুজ-সোনালিমা আর সেই তীক্ষ্ণ আলোক বৃষ্টিবাণ। অথচ একটার পর একটা ফোন বেজেই চলেছে। ঠিক যেন তারস্বরে চেঁচাচ্ছে জাগতিক সব সমস্যা-সিদ্ধান্ত-সমাধানের দোলাচল। আশ্চর্য ! এ বড় অবাক নিয়মে পৃথিবী জানায় প্রতিবাদ! নিয়মের গন্ডী ভেঙে বেরুবার জন্য এ যেনো উদগ্রীব পলায়ন পরিকল্পনায় ধ্যানমগ্ন কোন জটিল সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী। অথচ কী নির্মম, সুউচ্চ জাগতিক এক সমস্যা সংকট প্রাচীর নির্বিবাদে জানাচ্ছে সীমানার সীমাবদ্ধতা।

মতিঝিল সারা গেলো খুব সহজে। প্রকৃতি যেনো কৃপা করে কিছু সময়ের জন্য জনসমুদ্রকে সরিয়ে নিয়েছিলো কোন এক ভাটার টানে। বাশারও যেনো পড়ে ফেলেছে আজ প্রতীমের মনের ভাষা। লাগামহীন ছুটিয়ে গাড়ী এবার গুলশানমুখী। ইচ্ছে করেছিলো একবার আড়ং এ ঢুকে পড়ে। আবার মনে হলো রট আয়রনের দোকানগুলোতে নতুন কী এলো দেখা দরকার। নাহ্ থাক। একেবারে সব কাজ শেষ করে তারপর। এর মাঝে কোনও থামাথামি নেই।

ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। একটা বয়সে এমন বৃষ্টি উদ্দাম করে তুলতো। বিন্দু বিন্দু জল চোখে-মুখে-সারা গায়ে মৃদু টোকা দিয়ে যেনো সমর্পণ উৎসব করতো, আর এক অভাবনীয় পুলকে শিহরিত হতো দেহ ও মন দুটোই। ছাতা-রেইনকোট চাপানো, রিকসার হুড্ তোলা-পর্দা টানা সব পথিকদের মনে হতো ভীষণ নগণ্য ও নির্বোধ কতগুলো মানুষ। যারা কখনো জানেনি জীবনের স্পন্দন কতোটা তীব্র বাজাতে পারে বৃষ্টি – এক মাতাল করা সুরে, কোনো বাঁ বুকের অবিরাম ধুকপুকানিতে।

~ চা র ~

তিনটে মেয়ে বই-খাতা-ব্যাগ বুকে আঁকড়ে ব্যাকুল প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে ব্যস্ত সড়কের পাশে, এক দালানের আচ্ছাদনে। কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যের গন্ধমাখা তিনটে মেয়ে। কতোটা সহজ-সুন্দর আর সাবলীল তাদের প্রতীক্ষা আর মায়াময় অপেক্ষাতুর চোখ। জগৎ বা জীবনের হিসেব পংকিলতা এখনো ছোঁয়নি যাদের হৃদয় ও বিশ্বাস। আর তাই প্রতীক্ষার শিকড়ে প্রোথিত করেছে সময় তাদের তিন জোড়া অনড় পা। তাদের চোখগুলো নিবদ্ধ রাস্তার উল্টোপাড়ে ওয়ান্ডারল্যান্ডের গেটে। কখন আসবে সেই সময়তিক্রান্ত যুবক এই প্রতীক্ষায় যতি উপস্থিতি নিয়ে !

মনের মধ্যে ছন্দময় উচ্চারণ যেনো এক শায়ের সম্ভাষণ জানাতে চাইলো অপেক্ষমান তিন সদ্য তরুণীকে। “ইয়ে বাদল তু ইত্না না বারসো। যো ও আনা সকে, ও আ যায়ে তো ইতনা বারসো যো ও যা না সকে।” হে বৃষ্টি তুমি এমন বর্ষিও না যেন – ও না পারে আসতে, ও আসলে পরে এমন বর্ষাও যেনো ও না পারে যেতে। বৃষ্টির কাছে এটুকু চাওয়া ছাড়া আপাততঃ আর কিছুই এদের চাইবার নেই পৃথিবীতে। এ সহজ সত্যটা প্রতীমের খুব জানা। শুধু বলা হলো না।

পুরোনো কেনটাকির পাশ ঘুওে এবার গাড়ী চলছে বনানী বাজারের দিকে। গুলশানের কাজের পাট চুকানো গ্যাছে। চৌধুরী সাহেব প্রস্তাবে রাজী হননি। তিন তিনটে মানুষের সযত্নে নিরলস পাঁচ দিনের শ্রম। ছ’মাসের একটা লাভজনক প্রজেক্ট। অথচ প্রতীমের মনে হচ্ছে, যেন ভালোই হলো চট্-জলদি ব্যাপারটা চুকে যাওয়ায়। প্রস্তাব মেনে নিলে বরং লম্বা সময় চলে যেতো খুঁটিনাটি বিচার বিশ্লেষণ আর সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে। আজ মনে হচ্ছে অমন দু’-পাঁচটা কাজ না হয়ে নির্ভেজাল নিষ্কর্মা কয়টা দিন কাটাতে পারলেই বরং বেশী ভালো লাগতো।

নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির সামনেই থামতে হলো। হ্যামলেট টাওয়ার। একবার ওপরে যাওয়া আর আসা। নাহ্ বাশারকে পাঠিয়ে দিলেই ভালো হয়। ততক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি, চলমান মানুষ, আর পার্ক করে রাখা গাড়ীতে নজর রাখা যাবে। বৃষ্টিটা থেমে এসেছে। একদল ছেলেমেয়ে পাশের ফাস্টফুডের দোকান থেকে বের হলো যেনো খলবল করতে করতে। কারো হাতে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ-এর অসমাপ্ত প্যাক। কারো হাতে কোকের অসমাপ্ত গ্লাস। কারো হাতে সদ্য ধরানো সিগারেট। এরই মধ্যে অন্যপাশ থেকে হেঁটে এলো এলোমেলো কলার, শার্ট আর অবিন্যস্ত চুলের কম্বিনেশনে সযত্নে উদাসী উপস্থাপনে নিমগ্ন এক তরুণ। যেনো গোটা পৃথিবীটার ওপর সবচেয়ে বিরক্ত মানুষটির ভূমিকায় অভিনয় অডিশন হচ্ছে জান বাজী ধরা কোন এক শিক্ষানবীসের। এবার টাওয়ারের অন্য প্রান্ত থেকে খুব সন্তর্পণে, স্থির ও ঋজু ভঙ্গিমায় হেঁটে এলো এক তরুণী। বয়সে সম্ভবতঃ তরুণীই হবে। সমস্ত সতর্কতা সমেত সচেতন পদক্ষেপেও সে লুকোতে পারছে না তার বিপদজনক বয়সের সব বাঁক। শাড়ী পরা এই নারীকে কাছাকাছি আসতে তরুণীর চাইতে একটু বেশী বয়সী বলেই মনে হলো। সম্ভবতঃ কোন এক ব্যস্ত ধনাঢ্য স্বামীর সময় কাটানো সংকটে বিপন্ন স্ত্রী। যে বেছে নিয়েছে পড়াশুনার পরিবেশ আর তারুণ্যের উদ্দীপনাময় একটা সখ্যতার বাগান। পড়ার বিষয় অর্থাৎ সাবজেক্ট, আর পরীক্ষা পাশের মান, যার কাছে বিচার্য কোন বিষয়ই নয়। যতোটা না বিবেচ্য তার সময় ও রঙবর্ণ স্রোতবহ সংলাপ শিল্প। ভাবালুতায় এক পশলা ভিজে ওঠার আগেই সম্বিত ফিরে এলো যেনো। ফিরে আসছে আবার কালো জর্জেট শাড়ী ও বক্রতার শিল্পতরু সেই সাবধানী পদচারিনী। এবার আর একা নয়। অসংখ্য পূজারী পরিমন্ডিত একঝাঁক বহমান তারুণ্য হয়ে। বিস্কিট দৌঁড়ের একদল কিশোর দৌঁড়, লাফ আর ঝাঁপের প্রতিযোগিতায় নেমেছে যেনো ঠিক তার চারপাশে।

বাশার নেমে এলো এতোক্ষণে। এবার মীরপুর। লাঞ্চটা সেরে ফেললে আসলে মন্দ হতো না। কিন্তু কী খাবে! কোথায় খাবে ! এ সবের সমাধান জটিলতা বরাবরই প্রতীমকে অন্ততঃ একটা কিছু খাওয়া থেকেও নিরস্ত করে রাখে অনেক দিনের সারাটা দুপুর।

আসলে নিরস্ত্র আর নিরস্ত হয়েই যেনো কাটিয়ে দিচ্ছে একটা অনিশ্চিত জীবন। সমুদ্রতীরে যেদিন প্রথম লিখেছিলো প্রিয় নাম, ভাবেনি প্রমত্ত ঢেউ এসে তীরে ভাঙতে ভাঙতে তখুনি মুছে দিতে পারে তা। মুছেছে কি? তীব্র আবেগে যতোই চেয়েছে সে অপূর্ব নির্মাণ তার কাংখিত স্বপ্নকে দিক পূর্ণতা। ততোই তীব্র আঘাতে সে ছিটকে দিয়েছে যেনো অসীম দুরত্বে। আশ্চর্য! ফিরিয়ে দেবে না, অথচ প্রতিনিয়ত ঠেলে দেবে সীমাহীন দূরত্বে। এমনও কী সম্ভব ! যদি বলে নীল শাড়ীতে তোমাকে ভীষণ মানাবে, তবে সাদা কিংবা হলদে শেলোয়ার কামিজ যেনো তার গায়ে মিশে থাকবে অনন্তকাল। যদি বলে চশ্মায় সত্যিই তোমার চেহারায় একটা মাদকতা আনে। অমনি দৃষ্টি বিলীন হতে থাকলেও চশ্মা পড়ে থাকবে কোনো এক দুর্ভেদ্য বাক্সে বন্দী হয়ে। যদি বলা যায় সেদিনের জামদানীটায় স্বপ্নের মতোন সুন্দর লাগছিল তোমায়। বলবে, জামদানী বড্ড সেকেলে শাড়ী। আজ হঠাৎ পরেছি, ওসব আবার আজকাল কেউ পরে নাকি। একদিন চুলের সঙ্গে ফুল বেঁধেছিলো তাই প্রতীম বললো গহনার জবরজং বাদ দিয়ে সমস্ত ফুলের গহনায় নারীকে মনে হতে পারে দেবী। অমনি তীক্ষ্ণ গলায় প্রিয়মুখ বললো ওভাবে মেয়েদের ঠকাবার বুদ্ধি এঁটোনা।

বিজয় সরণীর পর সংসদ ভবনের পাশের গাছ-ছায়া প্রকৃতির মায়াময় বাতাস মনে করিয়ে দিলো ভোরের স্বপ্নটাকে। সাতশো কপোত-কপোতী যেনো বাক বাকুম করে অনর্গল বলে যাচ্ছে জীবনের অন্তহীন সঞ্জীবনী সংলাপ। যেনো এক দারুণ আবিষ্কার তার সমস্ত সম্ভাবনাকে সূঁচাগ্রে অপেক্ষমান করে আহ্বান করছে সকল সর্বোৎসাহী দর্শক। এমনই বিস্ময়তায় বিহ্বল তাকিয়ে আছে একে অন্যের দিকে, সংলাপ সংলাপের দিকে।

নির্বোধ এই কপোত-কপোতীদের দেখে বড় দুঃখ হয় জীবন ও যাপনের ধারাপাতের সাথে তাদের দূরত্ব মেপে। যেখানে এক কৌটা স্নো, একটা লিপস্টিক, এক শিশি আল্তা আর টিনের ফ্রেমে বাঁধা প্রতিবিম্ব ধরে রাখার সফেদ আয়না – এসব ছাড়িয়ে খুব বেশী দূর আজও এগুতে পারেনি জীবন। মাটির সানকিতে সাদা ফুল, এলুমিনিয়ামের তোবরানো বাটিতে অমৃত আলুর ঝোল, কাঁধভাঙা এক ঢাকনায় রাখা নুন লঙ্কা; আর দু’চোখের কোনায় মুক্তোদানা নিয়ে অনাবিল হেসে ওঠা স্তন সন্ধানী মানব শিশু – এসবেই যাপন। আদতে একই সব। কেবল ফ্রেম আর রঙের পরিবর্তন। কোথাও সানকি, কোথাও টিনের থালা, কোথাও মেলামাইন, কোথাও ইন্দোনেশিয়ান চিংড়ি খোদাই কাঁচের থালা, কোথাও সিরামিক – চিনামাটি – পোরসেলিন – পাইরেক্স …………….। পার্থক্য এটুকু কেবল যে, সানকিতে সাদা ভাত ফুলের মতোন উজ্জ্বল আর কোথাও পাত্র নিজেই বিভাষিত নিজ সৌকর্যে। জীবনের এই চিরায়ত চক্র পেরিয়ে – ‘চার’ আর ‘চার’ যোগ করে ফলাফল ‘নয়’ খুঁজে বের করা – এই তো সভ্যতার সমীকরণে আজকের জীবন ও যাপন।

অথচ কী আশ্চর্য ! মানুষ ভুলে যায় সব ! বিলীন হয়ে যায় বোধ। তাবৎ স্নায়ূ ও বাস্তবতা। এ যেনো হ্যামেলিনের বাঁশী শুনে মোহমুগ্ধ সময়ের আশ্চর্য সম্মোহন। এভাবে যে কটা দিন যায় আসলে সেটাই সময়। “বাল বিখারপে, টুঁটি কাবরোঁপে, যাব কোই মেহেজাবিন রোঁতি হ্যায়। মুঝকো আফসার খায়াল আতি হ্যায়, মউৎ কিতনি হাসিন হোতি হ্যায়।” “দীঘল কালো চুল এলিয়ে যখন কোন সুন্দরী কবরের উপর মাথা বিছিয়ে কাঁদে, তখন আমার কাছে মনে হয়, মৃত্যু কতো সুন্দর।” সত্যিই কবি সাহিত্যকরা যেখানটায় এসে মৃত্যুরও সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পেরেছেন, সেই সময়টুকুকে জীবনের শ্রেষ্ঠ আর সুন্দর সময় বলবে না এমন লোকতো নির্ঘাত নির্বোধ।

পৃথিবীর তাবৎ মানুষের জীবনে বোধকরি এই সোনার হরিণের দেখা পাওয়ার সুযোগ মেলে না। আর যারা সৌভাগ্যবান এই সোনার হরিণের দেখা পেয়ে, ওরাই জেনেছে দুঃখ – অগ্নি ও উত্তাপ। ওরাই সফেদ আর সম্পূর্ণ হয়েছে দহনে। আস্বাদন করেছে জীবন পাত্রের সব ঝাল-তেতো-টক ও মিষ্টি। সীমাহীন আকাশে যে ছুঁড়ে দেয়নি সম্পন্ন দৃষ্টি, নদী ও সমুদ্রে সমর্পণ করেনি সম্পূর্ণ হৃদয় আর পাহাড়ের বিশালত্বে যে বিলিয়ে দেয়নি স্বত্তা- তার কাছে তো দৃশ্যবৎ সহজ ও সমতট মনেই হবে মাটি ও পৃথিবী।

~ পাঁ চ ~

দশ নম্বর গোল চক্কর পার হয়ে এগারো … তারপর …। ইনডোর স্টেডিয়ামটা পার হতেই সচকিত হলো প্রতীম। বাশারকে সময় মতোন গাইড না করলে কোথায় যে নিয়ে পৌঁছাবে তা কেউ কোনকালে বলতে পারবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বাশার ! সামনে ডানদিকে ইউ টার্ণ নিয়ে বাঁয়ে প্রথম গলিতে। একেবারে শেষ মাথায় বাঁয়ের শেষ বাড়ীটা। হ্যা, এটাই। দারোয়ান সালাম ঠুকে গেট খুলে দাঁড়ালো। রামজি সাহেব যেমন লোক, অফিসের ব্যাবস্থাটা তেমনই রাশভারী। বাচ্চাদের পিকনিকের গানের লিস্ট করতেও সম্ভবত উনি কনফারেন্স টেবিলে মিটিং ছড়িয়ে বসবেন। এমনটাই তার স্বভাব। খুব তাড়া ছিলো তার। ভিসা ফেস করতে যেতে হবে। আর, প্রতীমের আসতে দেরী হয়েছে সতেরো মিনিট। অতএব, আলোচনা সংক্ষিপ্ত। ব্রিফিং শুধুই নয়, ডিসিশনটাও নিয়ে রেখেছেন আগে থেকেই। ডিলেড হলেও প্রজেক্ট কন্টিনিউড হবে এক্সটেনশন ওয়ার্ক শেষ না হওয়া পর্যন্ত। আন-এভয়ডেবল এক্সটেনশন রিকয়ারমেন্টটা এযাত্রা সব সংকটের সমাধা-সুত্র খুঁজে দিলো যেনো সবাইকে। সিম্পল তিন-চারটা পয়েন্ট ডিসকাস করে ফাস্ট আউটফিল্ডে ফ্লিক করা বলের মতোন দ্রুত গড়িয়ে বাউন্ডারি পার। এক কাপ গরম কফি শেষ করার চেয়েও বেশী দ্রুততায় মিটিং শেষে আবার গাড়ীর ব্যাকসীটে। এ যেনো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি অকৃপণ। সময়ের আগেই আজ ছাড়িয়ে যাওয়া যাবে কর্ম তীর্থের সীমানা।

মীরপুর দশ পর্যন্ত ফিরে আসা গেলো অবলীলায়। তারপরই সব যেনো একটা জট পাকানো সুতোর বলে পরিণত হলো। অক্টোপাসের মতোন আষ্ঠেপৃষ্ঠে পেঁচিয়ে ধরলো ট্রাফিক জ্যাম। গ্রীণ রোডে পৌঁছুতে পৌঁছুতে সম্ভবতঃ ঢাকার স্কাইলাইন পরিপূর্ণ পাল্টাবে তার রঙ আর আলোর তীব্রতা। এরকম দুঃশ্চিন্তায় ভাসমান সময়ে ভর করে যা হোক শেষ পর্যন্ত পৌঁছানো গেলো তার আগেই। তবে অস্বস্তির মাত্রাটা বাড়লো বই কমলো না। চিরায়ত বাঙালী ঢং। স্যাম্পল এখনো ইনকমপ্লিট। আরো কিছু সময় বসতে হবে। আসল দরকারী লোকটিও অনুপস্থিত। এক্ষুনি চলে আসবেন আজগর সাহেব। আর স্যাম্পল কমপ্লিট হবে আধা ঘন্টার মধ্যেই। এমন একটা হিসেব-নিকেষের বোঝাপড়া হতে না হতেই এলেন উনি। এক কাপ স্বাদু চা আর একখানা ধুম্রকুট শলাকার সৎকার হতে না হতেই প্রায় শেষ হয়ে এলো কাজ। অবশ্য আসা মাত্রই কালবৈশাখীর বেগে তাড়া লাগিয়ে আজগর সাহেব অনেকটা যেনো পুষিয়ে দিলেন তার অনুপস্থিতির ঘাটতি। অমন কালবৈশাখী তাড়ার মুখোমুখি হয়ে প্রতীমের নিজের সময় নষ্টের ইস্যুটা তোলা থাকলো সৌজন্যের নিরুপায় দেরাজে।

অনেক চুলচেরা বিচার ব্যাখ্যা বিশেনলষণের পর মতৈক্যে পৌঁছানোও হলো। স্যাম্পলের খুঁতগুলো সারিয়ে নেয়া গেলো। আজই এ্যাপ্রুভ্যালের জন্য সাবমিট করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু সব ভালো না হয় আজ আর নাইবা হলো। তারচে’ শেষ ভালোটার জন্যে ছোটা উচিৎ। যেটা ভেবেছিলো করবে আরও ক’ঘন্টা আগে। সমস্ত নৈর্ব্যক্তিকতাকে ছাপিয়ে অকস্মাৎ পকেটে বাজতে শুরু করলো ফোন। এখন সম্ভবতঃ পৃথিবীর সমস্ত জরুরী বিষয়গুলো একের পর এক উপস্থাপিত হতে শুরু করবে দ্রুততম সমাধান চাহিদা নিয়ে। তৈমুর লং অর্থাৎ অফিসের তৈমুর সাহেব কতগুলো হেজিপেজি বিষয় নিয়ে তালগোল পাকিয়ে এখন সমাধান খোঁজার আশায় ফোন করেছেন। এ যাত্রা বাঁচা গেলো। ভালোই হলো। দু-চার কথায় সেরে আজকের মতোন নিখোঁজ হয়ে যাবার সংবাদটা অফিসে চালান করে দিয়ে ফোনটা পুরোপুরি বন্ধই করে দিলো প্রতীম।

যতোটা সম্ভব মাথাটা পেছনে এলিয়ে গাড়ীর পেছনের কাঁচের ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে তাকানোর চেষ্টা করছিলো প্রতীম। দৃশ্যমান পাখিটার জায়গায় নিজেকে প্রতিস্থাপিত করার একটা অদম্য আকাংখা ওকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে খোলা আকাশের মধ্যে। খুব কসরৎ করে গাড়ী একপাশে দাঁড় করালো বাশার। যেনো মাটিতে নেমে এলো প্রতীম। মাছ-পাখি-খরগোশ-গিনিপিগ এসব দেখতে দেখতে একটা ফুলের বাস্কেট তৈরী করলো নিজের পছন্দ মাফিক। দোকানী আর ক্রেতা উভয়েই পরিতৃপ্ত। এবার ফেরার পালা, দিনের প্রথম নির্ধারিত কিন্তু শেষ গন্তব্যে।

নিজ নীড়ে। যেখানে অপেক্ষমান অভিমানী পাখি, উন্মাতাল নদী ও দৃশ্যের অপার বিস্তৃত আকাশ। কথা ছিলো একসঙ্গে লেট লাঞ্চ সেরে চলে যাবে সাভারের নীরব সীমান্তে – প্রকৃতির কোমল কোলে। কোলাহলহীন, অনুযোগ আর অভিযোগহীন সম্পূর্ণ পরাবাস্তব পরিবেশে কিছুটা সময় নতুন করে নিজেকে জানার, দেখার। নীল শাড়িতে, সমস্ত কল্পনার রঙ মাখা সাজে, এমনটা আবিষ্কার করবে আজ প্রিয়মকে এমনটা কখনও ভাবা ছিলো না, আদপেও জানা ছিলো না। কিন্তু সময়ের অনেক পরে, তিন ঘন্টা দেরীতে যখন বেলটা বাজালো, তখন – দরোজাটা হা হতেই এমন দৃশ্য! কখনও কোনো মানসপটে আকাঁ ছিলো না। সম্পূর্ণ অচেনা। শান্ত স্নিগ্ধ এক নীল পদ্ম নদী। শুধু তার চোখ আর চাহনীটুকু চিরচেনা। বরাবরের মতোন ক্ষিপ্ত, বিরক্ত আর অনমনীয়।

যা কখনও পারোনি, আজও পারলেনা, কখনোই পারবেনা। সত্যটা জানা … তবু অর্থহীন বসে থাকা … অপেক্ষায় সমস্ত সময় বিলীন করা …। অপেক্ষাকাতর প্রিয় নারী ছুঁড়ে দিতে থাকলো একে একে সব ধাতব শব্দচয়ন। সুদৃশ্য বাঁধাই করা নীলপদ্ম ছবির ভেতর থেকে যেনো একে একে খসে পড়তে থাকলো একটি একটি পত্র পল্লব, তার সব রঙ ও রাগ। সম্পন্ন এক সম্ভাবনা থেকে ধুয়ে মুছে সব ছন্দ-তাল-লয় – সময় স্রোতের নিস্পন্দ পাড়ে এক মলিন আকাশে আঁকা হলো যতিচিহ্নহীন এক স্পন্দনহারা জীবনের ছবি।

প্রিয়ম আজ আর কোথাও যাবে না। আজ নয় হয়তো আজ থেকে আরও বহুদিন। প্রিয়ম আর কোথাওই যাবে না প্রতীমের সহযাত্রী হয়ে। একাকী এক কাপ কফি ছাড়া আজ আর কোনও সঙ্গ নেই ছুটে আসা প্রতীমের। এমন হতেই পারে। হয়তো এমনই হয়।

প্রতীমের ভাবনায় যেনো ছায়ারা এসে বাড়ালো হাত। সাভারে ইতিমধ্যে দিনের আলোয় সূর্যাস্তের লালিমা মেখে অপেক্ষমান বিকেল হারিয়েছে – অন্ধকারের সমর্পণে। ঘরে ফেরা পাখির ব্যস্ত ডানারা ক্রমশঃ অপসৃয়মান আকাশ ও আলোর দিগন্তে। জোনাকী, ঝিঁঝিঁ পোকা, কোলা ব্যাঙ সব ব্যস্ত সমস্বর সন্ধ্যা সংগীত সভায়। শহরের আলোকিত ঘর, বারান্দা কিংবা সমান ব্যস্ত সড়ক সভায় সে সুর বাজেনা কখনও, কদাচও।

সেই সন্ধ্যা সংকট কাটাতে যেনো – কফির আধপোড়া গন্ধ আর নীলক্ষেতের পরিতৃপ্ত এক গোছা সাজানো ফুলের সুবাস – হঠাৎ সারা ঘরে আধিপত্য ছড়াবার এক তীব্র প্রতিযোগিতায় মেতে উঠলো। গন্ধের পেছনে ছুটতে ছুটতেই মনের মধ্যে একটা গতির সঞ্চার হলো আবার।

কফিটা আরও গরম হলে আরো ভালো লাগতো। কিংবা হয়তো চুমুক দিতেই হলো অনেক দেরী। তাই বঞ্চিত হতে হলো আরো ভালো লাগা থেকে। আর তাই, অনাস্বাদিত আরো গরম কফির তৃষ্ণাটাই হয়তো চিরকাল জাগিয়ে রাখবে গরম … আরও একটু গরম … কফির নেশাটা। বহতা জীবন ও জলের এমনই ধারা।

এভাবে একটি বিদায়ী সূর্যের সোনালী আলোকপ্রভা যেনো এক নতুন সূর্য স্নানের আহবান জানিয়ে বলে গেলো, চলাই কর্ম … চলাই ধর্ম …। আজ যেই স্রোতে নোঙর ফেলে প্রতীম জেনেছে – চলাই পরম কর্ম আর অযথা তার মাঝে যতিচিহ্ন আঁকার চেষ্টাই জগতের ধর্ম। ঠিক সেখানেই অকস্মাৎ এক অর্গল ভাঙা স্রোতের তোড় তার জীবন ভেলাকে পুনর্বার ছুটিয়ে দিলো নোঙর ভেঙ্গে চিরায়ত গতি ও গমনে।

২০০ বড় মগবাজার, ঢাকা ১২১৭
[ রচনাকাল ~ ডিসেম্বর ২০০৩ ]

১,৬৯৫ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “গ তি ও গ ম ন”

  1. মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

    প্রথম প্রথম আপনার লেখায় সুকারু শব্দের নিপুণ বুনন দেখে মুগ্ধ হতাম। এখন মুগ্ধ হচ্ছি, উত্তরোত্তর এর গতিময়তা বৃদ্ধি পেতে দেখে। একেকদিন একেকটা চমক দেখিয়েই যাচ্ছেন।


    দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

    জবাব দিন
  2. সাইদুল (৭৬-৮২)

    ভালো লেগেছে। সংলাপ থাকলে পাঠকের জন্যে একটু সুবিধা হয়। তোমার গদ্য পদ্য কোনটাই না পড়ে ওঠা যায় না।


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
  3. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    "অবিরাম সবুজ এই তোরণের সুদূর সীমান্তে অত্যুজ্জ্বল আলোর বন্যায় অপেক্ষমান বিদায়ী সূর্য। যেনো বসিয়েছে এক সোনালী স্বাগত সভা।"
    'বিদায়ী সূর্য' এর এই সভাটি 'স্বাগত সভা' না হয়ে বিদায়ী সভা হলেই ভালো মানাতো কি? আমি ঠিক শিওর নই যদিও...
    "সাতশো কপোত-কপোতী যেনো বাক বাকুম করে অনর্গল বলে যাচ্ছে জীবনের অন্তহীন সঞ্জীবনী সংলাপ।" - দারুণ হয়েছে।
    নীল শাড়ী তোমার একটা অবসেশন, এটা তোমার লেখায় বেশ বোঝা যায়।
    গল্পের শেষটুকু ভারী সুন্দর হয়েছে।

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      অনেক অনেক ধন্যবাদ খায়রুল ভাই ।
      সোনালী সন্ধ্যার আহবান ডাকছে যেনো ... আরো ছোটার ... আরো সামনে যাবার ইশারায় ...
      তাই বলা স্বাগত ।
      আপনার মন্তব্যে ভাবিত হলাম । এমনটা কি তাহলে পাঠকের মনে দ্বৈত ভাবনার জন্ম দিচ্ছে !
      অনেক অনেক ধন্যবাদ আবারো মন্তব্যে অনুপ্রাণিত করবার জন্য ।

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাইদুল (৭৬-৮২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।