থ্রি মিলিয়ন চিয়ার্স ফর অল দোওজ ফ্রেন্ডস সিন্স থার্টি সেভেন ইয়ার্স । অল দোওজ ফ্রেন্ডস ফর এভার ।

[ কলেজের প্রথম দিনের প্রথম স্মৃতির টুকরোগুলো যা উজ্জ্বলতম পূর্ণচাঁদকে ছাপিয়ে অম্লান থাকে আমাদের সবার মনে, সেই কথা ফি বছর একবার করে ভাগাভাগি করি নিশ্চিত বছরের অন্তত এই একটি দিনে । হ্যাঁ । এই ২৫ জুন ছিলো আমাদের ইনটেক ডে । সেইদিন সূর্য সমান উজ্জ্বল সখ্যতার প্রতি স্মৃতিশ্রদ্ধার্ঘ্য আর ভালোবাসায় আমার ফেসবুক উচ্চারণ্টুকু এখানেও দিলাম । আমাদের সবার এমন দিনের অনুভূতির বিম্বিক সাযুজ্যের কথা ভেবে । ]

একই বাসে পেয়ে গিয়েছিলাম একই গন্তব্যের এক সংগী । অজানা অচেনা এক গন্তব্য । জীবনে কখনো যাইনি অথচ সেটাই হবে আমার ঠিকানা, ঘর, বাড়ী, পাঠশালা সব ।
ঠিক এই রকম ঝিরিঝিরি বৃষ্টি । যেমনটা ছিলো আজ সারা দিন ধরে । এর মধ্যে পৌঁছলাম টিনের ট্রাংকে নিজের নাম পরিচয় লেখা খোলের ভেতর আনকোরা নতুনের গন্ধ মাখা জামা, কাপড়, আর নিজের নানান নিত্য ব্যবহার্য নিয়ে । সাপের মতোন আঁকা বাঁকা রাস্তা পার হয়ে, মাঝে একখান রেল ক্রসিং পাড়ি দিয়ে অকস্মাত ঢুকে পড়লাম যেনো সাজানো গাছ-বাগান-দালান ময় এক নতুন জগতে ।
প্রথমেই হোঁচট খেয়েছিলাম যে জিনিসটা দেখে তা হলো ইয়া বড় বড় কতোগুলো মানুষের একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে হাউ-মাউ কান্নার দৃশ্য । এটার কোনো মানে কিংবা মর্ম সেদিন এক বিন্দুও বুঝে উঠতে পারিনি । শুধু জানতে পেরেছিলাম আমাদের এই প্রথম দিনটি ছিলো তাদের শেষ দিন । সময় একদম ঠিক ঠিক মর্মে সেঁধিয়ে দিয়েছিলো বটে এর মানে বুকের ভেতর । আজো যা লহমায় বাজে অনন্য এক নোটেশনে ।
একে একে সবাই যার যার বরাদ্দ হাউসের নির্দিষ্ট রুমের নির্দিষ্ট বিছানা, আলমারী, চেয়ার, টেবিলের দখলদারিত্বে গেলো পৌছিয়ে । এই আমার নতুন পৃথিবী । নতুন ঘর, নতুন বাড়ী । অথচ যেই না এক একটা ক্ষুদে কিশোরকে রেখে তার বামা-মা-ভাই-বোনেরা বেরিয়ে যাচ্ছিলো সবাই কান্নায় ভেংগে পড়ছিলো । ওই বয়সে অমনটা হবারই কথা ।
আমার গল্পটা যদিও ছিলো একটু ভিন্ন রকম । আমি ওখানে ভর্তি হয়েছিলাম আমার একান্ত নিজেরই ইচ্ছায় । বাবার পিটুনির হাত থেকে বাঁচার জন্য । না সেই রকম বেপরোয়া ডানপিটে যে ছিলাম তা নয় । বরং ছিলাম উলটো, গোবেচারা কিসিমের । আর সেই বিপাকেই নিত্য দিন সাঁতার কাটতে গিয়ে ভুলে যেতাম বাড়ী ফেরার কথা, হতো ঘন্টার পর ঘন্টা দেরী । খেলতে গিয়ে এক মাঠ থেকে হয়তো চলে যেতাম দূরের কোনো মাঠে । ফিরতে দেরী । তো সব কিছুর নিরেট ফল ছিলো একটাই । বেদম পিটুনি । যেই দৃশ্য দেখে মা খালারা দল বেঁধে কাঁদতেন ।
তো আমার ছিলো আদতে এক অন্য রকম স্বাধীনতার উল্লাস । যা আমাকে পাখির মতোন উড়িয়ে নিয়ে যেতে চাইছিলো সেই বিকেলে । তাই আমি এক বিন্দুও কাঁদিনি । বরং অন্যরা এক এক জন যতোবার কেঁদে উঠেছে আমি মুখ লুকিয়েছি ততোবার কাবার্ডের পাল্লা খুলে তার ভেতরে ।
সেই প্রথম দিন থেকে শুরু । তারপর এক একটি দিন সখ্যতার ডানার বিস্তারে বেড়েছে বন্ধন সেই অর্ধশতাধিক ক্ষুদে কিশোরের । আমরা দিনে দিনে শত্রু, বন্ধু, সতীর্থ, সহপাঠী, সহযোদ্ধা, ভাই, আত্মীয় সব কিছুই হয়ে উঠতে থাকি একে অন্যের । সেই জীবন যার পুরোটা ধরে প্রতিটা দিন যেনো কোনো হাজার তলা অট্টালিকার ভিত্তির জন্য চলেছে পাইলিং, গড়ে উঠেছে বন্ধনের আরসিসি ফাউন্ডেশন । এ এক অন্য রকম নির্মাণ । যা কোনো অলৌকিক বৃক্ষের শাখায় শাখায় সেই থেকে বাড়ছে তো বাড়ছেই … বুকের ভেতর জগতের প্রকান্ডতম বৃক্ষটি যেনো আমাদের সেই বন্ধুত্ব ।
যাদের কথা মনে ভাবলেই বুকের ভেতর দুমড়ে মুচড়ে ওঠে আবেগের জলোচ্ছ্বাস ।
আমার সেই বন্ধুরা । যাদের সংগে এই অনন্য অলৌকিক সং্যতার জন্ম হয়েছিলো আজ থেকে ঠিক সাঁইত্রিশ বছর আগের ঠিক এই দিনটাতে । তোদের প্রত্যেকের জন্য একটা করে পৃথিবীর উষ্ণতম আলিংগণ, স্মৃতির লোবান মাখা কিছু অশ্রুজল, একসাথে গলাগলি করা হুল্লোড়ের এক তীব্র চিতকারের উচ্চারণ ।
ভালো থাকিস বন্ধুরা । তোরা সবাই ভালো থাকিস । খুউউউউব ভালো থাকিস । সাত সমুদ্র তেরো নদীর এপাড়ে ওপাড়ে যেখানেই থাকিস । ভালো থাকিস । এই সখ্যতার সোনালী লেসটাকে বুক পকেটে যত্নে রাখিস ।
থ্রি মিলিয়ন চিয়ার্স ফর অল দোওজ ফ্রেন্ডস সিন্স থার্টি সেভেন ইয়ার্স । অল দোওজ ফ্রেন্ডস ফর এভার ।

২৫ জুন ২০১৫

১,৫৫৪ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “থ্রি মিলিয়ন চিয়ার্স ফর অল দোওজ ফ্রেন্ডস সিন্স থার্টি সেভেন ইয়ার্স । অল দোওজ ফ্রেন্ডস ফর এভার ।”

  1. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    স্মৃতি সাযুজ্যের কথা ভেবেই এখানে লেখাটুকু দেয়া। আর এই রকম একটা সময়েই (কিছু আগে ও পরে) প্রায় সব কলেজ ও ব্যাচেরই কলেজে প্রথম যাওয়া।
    পড়বার ও মন্ত্যব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ সাইদুল ভাই। (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
  2. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    "তো সব কিছুর নিরেট ফল ছিলো একটাই । বেদম পিটুনি" - অপরাধীর গোবেচারা চেহারাটা মনের মাঝে ভেসে উঠলো। ভীষণ সমব্যথী হ'লাম।
    "বরং অন্যরা এক এক জন যতোবার কেঁদে উঠেছে আমি মুখ লুকিয়েছি ততোবার কাবার্ডের পাল্লা খুলে তার ভেতরে" - শৈশবের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি আর বোঝার ব্যাপারেও কতটা বৈচিত্র!
    লেখার মূল থীমটা তো ভালো লেগেছেই, তবে তার চেয়ে আমাকে বেশী স্পর্শ করেছে ব্যক্তিগত অনুভূতিন ও অভিজ্ঞতার ঐ উদ্ধৃতিগুলো।

    জবাব দিন
  3. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    LGBT নিয়ে লিখালিখির জন্য তথ্য সংগ্রহ ও একধরনের গবেষণায় ব্যস্ত থাকায় শুধু এটি না, আরও কিছু লিখা মিস করে গেছি।
    দেরীতে হলেও তাই পড়তেই হলো।
    আফটার অল ঐ চিয়ার্সের ভাগিদার তো আমিও।
    স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দেয়ায় ধন্যবাদ।
    আমার কাছেও মজার কিছু স্মৃতি আছে।
    বলবো একসময় সে সব কিছু কিছু। 🙂 🙂 🙂

    ভাল লেগেছে......


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      ধন্যবাদ বন্ধু পড়ে মতামতের জন্য।
      কদিন ধরে ব্যস্ততায় আমারও অনেক লেখা পড়বার কাজটা জমে আছে।
      একটু আধটু সময় পেলে ঢু মেরে নোটিফিকেশনগুলো দেখার পর আর বেশী এগোতে পারছি না। একদিন হয়তো টানা কয়েকটা পড়ে আগাই তো আবার দেখি পিছিয়ে পড়ছি।

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : পারভেজ (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।