স্মোকিং রুম- জানে বেচে গেছি

মাহফুজ এর কমেন্টে উৎসাহ পেয়ে আবার লিখতে বসলাম। তাছাড়া সবাই দেখি ভাল কথাও লিখতেছে। যদ্দিন পর্যন্ত টিজ না খাই তদ্দিন পর্যন্ত চালায়ে যাব। রক্ত যখন দিয়েছি, আরো দেব। বাংলার ………………

কলেজে বিড়ি খাওয়াটা মোটামুটি বীরত্বের ক্যাটাগরীতেই পড়ে। যতটা না নেশায় খাইতাম, তারচেয়েও খাইতাম ভাবে। একটা বিড়ি খাওয়ার জন্য কত একশান? আর বিড়ি ম্যানেজ করার জন্য যে কত কাহিনি ঘটাইতে হইত?…… কত এস্পিওনাজ, কত ব্ল্যাক্মেইল? তারপর ও বিড়ি খাইতেই হবে। সেই বীরত্বের মাশুল এখন দিচ্ছি। বউ প্রতিবেলায় রিক্সাওয়ালা বলে গালি দেয়। =(( অনেক মহৎ বিড়িখোরের উদাহরন দিসি। লাভ হই নাই। ~x(

যাই হোক। ঘটনা ক্লাশ টুয়েল্ভ এর। লাঞ্চ এর পরে স্যার রাউন্ড দিয়ে চলে যাওয়ার পরে খায়বার হাউজ এর ড্রাইং রুম এ গিয়ে আয়েস করে বিড়িতে শুকটান দেয়া শেষ করছি কেবল। আমাদের একবার বিড়ি সাপ্লাই দিয়ে ধরা খাওয়া ব্ল্যাকমেইলড ঝাড়ুদার রমেনদা টয়লেট পরিস্কার করতে আসছে। দরজা খুলেই দেখি রতন স্যার। :bash: স্যার ইংলিশ পড়াইতেন। ক্লাশে এসে বলতেন, “ভয়েস, আজকে আমি তোমাদের বয়েজ পরাবো”। ক্যাডেটদের বাড়ি পাঠানোর ব্যাপারে তার বিশেষ সুখ্যাতি ছিল। আমি ত আইজ শ্যাষ। ব্যাগ এ কি কি ঢুকাইতে হবে হিসেব করতেছি। 😕

স্যার গন্ধ শুকতে শুকতে (ইংরেজীতে যারে বলে sniffing) আমারে বলে, সিগারেটের গন্ধ পাচ্ছি মনে হয়? কে সিগারেট খায়? প্রিন্সিপাল স্যার কে আজকেই ব্যাপারটা জানাতে হয়। হঠাত রমেনদার কথা মনে পড়ল। জানে পানি ফিরে পাইলাম। খুবই হতাশ এবং আহত সুরে রমেনদাকে ডাকলাম। খুব বিরক্ত স্বরে বললাম, “রমেনদা, কতদিন আপনারে বলছি, ক্যাডেটদের এলাকায় আপনি বিড়ি খাবেন না। আপনাদের কারনে বিনাদোষে আমাদের বদনাম হয়। এখন আপনিই বলেন স্যারকে, এইটা কিসের গন্ধ? স্যার, আজকে আপনিই এর বিচার করবেন”। 😡

স্যার খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। বুঝতে পারছেন শিকার হাত ফস্কে বেরিয়ে যাচ্ছে। স্যার যখনই ব্যাপারটা অবিশ্বাস করতে যাওয়ার চেষ্টা করতে যাচ্ছিলেন, তখনই আমাদের পোষ মানা রমেনদা তার হাত থেকে তীর টা কেড়ে নিলেন। দুঃখিত গলায় বললেন যে তার ভুল হয়ে গেছে, আর হবে না, ইত্যাদি, ইত্যাদি।

আমি তখন ভদ্র ভাবে স্যারকে সালাম দিয়ে, খুবই হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে নাড়তে ডর্ম ফোর এর দিকে রওনা দিলাম। O:-) পিছন ফিরে স্যার এর এক্সপ্রেশ্নটা দেখার ইচ্ছাটা দমন করতে খুবই কষ্ট হয়েছিল।t

২,৮০৯ বার দেখা হয়েছে

৪৭ টি মন্তব্য : “স্মোকিং রুম- জানে বেচে গেছি”

  1. কামরুল হাসান (৯৪-০০)
    বউ প্রতিবেলায় রিক্সাওয়ালা বলে গালি দেয়। =(( অনেক মহৎ বিড়িখোরের উদাহরন দিসি। লাভ হই নাই। ~x(

    :khekz: :gulti:


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
    • রমেনদাকে আপনাদের ১টা পুরষ্কার দেয়া উচিত ছিল।
      হাউস বেয়াড়া,ঝাড়ুদার তাঁদের কারনে যে আমরা কত বিপদ থেকে বেঁচেছি হিসাব নেই।
      অথচ সেই তুলনায় তাঁদের প্রতি কর্তব্যটা অনেক কমই করা হয়।

      আমাদের হাউস বেয়াড়া ছিলেন গোবিন্দ ভাই,উনি এত্ত একজন মাটির মানুষ ছিলেন!!!
      উনাকে দেখলে এখনও শ্রদ্ধা হয়।

      জবাব দিন
  2. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)
    বউ প্রতিবেলায় রিক্সাওয়ালা বলে গালি দেয়। অনেক মহৎ বিড়িখোরের উদাহরন দিসি। লাভ হই নাই।

    আসলেই দোস্ত, সিগারেটের ব্যাপারে মাইয়াদের এই রকম এলার্জি কেন আমিও বুঝি না ......

    জবাব দিন
  3. আমার এইরকম ট্যালেন্টটা কেউ খাইল না

    বস,
    আপনের ট্যালেন্ট তো খুইজাই পাইলাম না...
    দেখলাম -- রমেন ফাসায়া দিলে তো " মিথ্যা " আর "সিগারেট পান" উভয় কেসে ফাঁইসা যাইতেন

    =)) =))

    জবাব দিন
  4. হাসান (১৯৯৬-২০০২)
    আসলেই দোস্ত, সিগারেটের ব্যাপারে মাইয়াদের এই রকম এলার্জি কেন আমিও বুঝি না ……

    সবার না, যেমন আমার এমজিসিসির এক ফ্রেন্ড আমারে গাধা বলে স্মোক বা ড্রিন্ক করি না বলে 😕 স্মোক করা তাদের কাছে খুব 'কিউট' একটা কাজ ;))

    জবাব দিন
  5. আব্দুল্লাহ (২০০৪-২০০৮)
    হাউস বেয়াড়া,ঝাড়ুদার তাঁদের কারনে যে আমরা কত বিপদ থেকে বেঁচেছি হিসাব নেই।
    অথচ সেই তুলনায় তাঁদের প্রতি কর্তব্যটা অনেক কমই করা হয়।

    ভাইয়া এজন্য উনারা মোটা অংকের ঘুষ ও নিতো। আমরা তাস খেলে ৩-৪ ধরা খেয়ে গফুর ভাইকে ১ হাজার টাকার মত দিসিলাম। উনার রেট ছিল ১৫০। পরিচিত থাকলে ১০০ তেও কাজ হইত 😛 😛 😛

    জবাব দিন
  6. তাইফুর (৯২-৯৮)

    জীবনের প্রতিটি বিপদের মূহুর্তে 'রমেন' টাইপ একজন করে মানুষ তোর আশেপাশে থাকুক, যার ঘাড়ে জোয়াল রেখে ... এই কামনা রইল।


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  7. শরিফ (০৪-১০)

    ভাইয়া আপনার ঘটনা পড়ে আমার একটা ঘটনা মনে পড়ল।তখন বাংলা দেওয়াল পত্রিকার কাজ চলছিল।লাইটস অফের পর হঠাৎ কামরুল স্যার আর তসলিম স্যার আসল।আইসা সবার মুখ চেক করতে লাগল কারণ মি, তসলিম নাকি সিগারেটের গন্ধ পাইছে।অথচ গন্ধ আসতেছিল কামরুল স্যারের মুখ থ্যাককা।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহসান (১৯৯৯-২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।