আমি একটা বাঘের বাচ্চা!

গ্রীষ্মকাল, আম কাঁঠালের দিন। নতুন ক্লাস 12!! বাকিটা মনেহয় বলা বাহুল্য!

সারা গেমস টাইম কেটে যায় আমগাছ গুলোর নীচে! গাছগুলাও basketball এর বারি খেতে খেতে fed up হয়ে গেছে! আমি মিউজিক ক্লাব এর প্রানী, মোটামুটি দিনের আলোই দেখিনা! ব্যান্ড প্র্যাকটিস Banned হয়ে যাওয়ায় আমার কিছুটা কুবেরের মতো দশা হোল “অন্ধকারে যে বাস করে মৃদু আলোতে তার চোখ ঝলসাইয়া যা আর চোখ ঝলসানো আলোতে সে হয় অন্ধ।” দীর্ঘদিন পর গ্রাউন্ডে গিয়ে ক্লাসমেটদের আম পাড়ার অভিনব দক্ষতা দেখে আমি মুগ্ধ! দু একবার নিজেও চেষ্টা করেছি, পারিনা। তবুও রোজ ওদের সাথে গিয়ে বসে থাকি!
একটা ব্যাপার আমার জানা ছিলনা, যে যখন বাস্কেটবল টা উপরে ছোঁড়া হয়, গাছের নীচে থাকা ঠিক না। আমি বেশ খুশি খুশি মুখে গাছের নীচে দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ চারপাশের সবাই আমার নাম ধরে ভয়ার্ত চিৎকার! উপর দিকে তাকালাম, কিছু বোঝার আগেই বিশাল একটা বাদামী আম (পরে বুঝতে পেরেছিলাম ওটা বাস্কেটবল ছিল) এসে ঠিক আমার ডান চোখের উপর ভয়ংকর ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লো! বিকট শব্দ, Brassica napus অতঃপর অন্ধকার!
আমি ঘাসের উপর ধরাশায়ী, অথচ তখনো ঘতনার আকস্মিকতায় কেউ আমাকে ধরতে আসছেনা! আশ্চর্য! আমার ধারনা ছিলো আমার চোখটা কোথাও উড়ে চলে গেছে। তারপর… প্রথমে আমাকে দুদিক থেকে দুজন ধরলো। দৃষ্টি আর অন্বেষা। ভালোকথা বাবা, ধরছিস, মহা পূন্যের কাজ করেছিস। কিন্তু তাদের কথোপকথন শুনে মনে হল আমি মরে গেলেই ভালো ছিল!
প্রথমে তো এষা! এষা!! কি হইইছে etc. etc. তারপরঃ

অন্বেষাঃ বেঁচে আছে? হ্যা মনে হয় আছে।
দৃষ্টিঃ এষা, কিচ্ছু হয়নাই, তুই কথা বলতে পারছিস তো? (ব্যাথা চোখে, কথা বলতে না পারার কি ছিলো??)]
অন্বেষাঃ আরে হ্যাঁ বাড়ি খাইয়া উঁহ করছে!
দৃষ্টিঃ আরে কিচ্ছু হয়নাই বাবা উঠ, তোর white dress নোংরা হচ্ছে।
অন্বেষাঃ এহ! চোখ থেকে হাত সরা দেখি, দেখতে পাচ্ছিস?
দৃষ্টিঃ আরে খুলতেই পারছেনা! (বলে তান দিয়ে হাত সরায়ে চোখ খুলে ফেললো! আল্লাহ!!!)
অন্বেষাঃওই উঠ, আম পাড়তে দে!
দৃষ্টিঃ হ্যাঁ তোর আর আম পাড়তে হবেনা। তুই বসে থাক।
অন্বেষাঃ তুই বসে থাক আর আমরা তোকে আম পেড়ে পেরে খাওয়াই (কন্ঠে স্পষ্ট বিরক্তি!!)
বলেই ওরা দুজন আমাকে টেনে তুলে দাঁড় করিয়ে দিলো।
অন্বেষাঃ এইতো শাব্বাস বাঘের বাচ্চা!
সে খেয়ালই করেনাই যে আমার চোখ দিয়ে দরদর করে পানি পড়ছে। এক চোখে পানি দেখে সে পানি মুছে দিয়ে বলে, থাক কান্দিসনা! ওরা হাত ছেড়ে দিতেই আমি টলে পরে যেতে নিলে দৃষ্টি ধরলো।
অন্বেষাঃ ওই, আবার পড়বে নাকি? আমি কিন্তু ধরবোনা!
বহুকষ্টে আমি কোনমতে ওদের হাত থেকে ছাড়া পেলাম। তখনো চোখ খুলতে পারিনি। এই crisis এর মধ্যে কারো মাথায় ই আসেনি যে আমাকে হাসপাতালে নেয়া দরকার। হাসপাতালের কাছেই ছিলাম আমরা তাই আল্লাহর নাম নিয়ে টলতে টলতে একাই হাঁতা দিলাম। আমার হাতে তখনো দৃষ্টির এক্তা আম ছিলো! সেটা এক জায়গায় রেখে গেলাম। ঠিক একটু পরেই শুনি,
দৃষ্টিঃ এই, আমার আম টা কই? এই এষা, কই ফেলছিস?
সারা games time হাসপাতালে বসে চোখে আইসব্যাগ দিয়ে রাখার পর আমি চোখ খুলতে পারলাম। আশ্চর্য কথা এই যে, চোখ এওটুও ফোলেনাই, খালি একটু ব্যাথা! সেটা কথা না, কথা এই যে, আমি ভেবে শুধু অবাক হলাম এই বজ্জাতগুলা একটুও বিচলিত হয়নি, একটুও চিন্তা নাই in fact, আমাকে পরে জিজ্ঞাসাও করেনাই কেমন আছি! আল্লাহ! কি ধরনের প্রানীদের সাথে বসবাস করি! আবার হাসপাতালে আডমিট ডালিয়া আমার কাছে এই অবস্থায় আবদার করল আইসক্রিম খাবে! তাই গেমস শেষে ক্যান্টিন এও ছুটলাম!
আমার সারাজীবন মনে থাকবে এই বাস্কেটবলের বারির কথা! এখন আর ব্যাথা নাই, তবুও যখন মনে পড়ে, আমি খুব কনফিউশন এ পরে যাই! হাসবো, রাগ করবো নাকি হাল ছেড়ে দিবো? পরে ভাবি, এনজয় করি, দারুন একটা মেমরী!!
এই গল্পের প্রধান ভিলেন, এবং at the same time প্রধান চরিত্র কে? উত্তরঃ অন্বেষা! ওর উপরে প্রথমে খুব রাগ হয়েছিলো, পরে ওকেই সবচেয়ে বেশী ধন্যবাদ জানাচ্ছি!
আমার বৃহত্তম অনুপ্রেরণা(!!!) সেঁজুতি। কারন যখন আমি গ্যালারী তে বায়োলজি ক্লাসে বসে এটা লিখছি, সে পুরোটা সময় গড়াগড়ি খেয়ে হেসেছে আর লেখাটা পড়েছে! বারবার বলছে, “আমার কল্পনাশক্তি খুব প্রবল! ঘটনাটা দেখিনাই কিন্তু কল্পনা করেই হাসি পাচ্ছে!”

তোদের সবাইকে…….. থ্যাংকস(!!??!!??)
০১.০৬.১০

১,৪৬৯ বার দেখা হয়েছে

১৪ টি মন্তব্য : “আমি একটা বাঘের বাচ্চা!”

  1. নাজমুস সাকিব অনিক (০৩-০৯)

    আফসোস...প্রথম চান্সেই কট.... :))

    আমাদের আম পাড়া এত কঠিন ছিল না...প্রিফেক্ট রুমের সামনে বেলকুনিতে আম সহ আম গাছের ডাল এসে গড়াগড়ি খাইতো...তবে কাঁঠাল পাড়া বেশ কঠিন ছিল...সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে যেতে হতো...

    :thumbup:

    জবাব দিন
  2. শরিফ (০৩-০৯)

    আমের সিজনের গল্প আমের সিজনেই পোস্ট হল । ভাল লাগলো । কলেজে থাকতে একটা জিনিস বুঝেছি পেড়ে খাওয়া আম এর স্বাদ কিনে খাওয়া আমের চাইতে অনেক বেশি । তবে কলেজে আম পাড়া খুব সহজ ছিল । হাউস এর পাশে আম গাছ ছিল, হসপিটাল এর পাশে আম গাছ ছিল , একাডেমিক ব্লকের পাশেও আম গাছ ছিল । আফটারনুন প্রেপ এর শুরুতে একটা আম না খেয়ে পড়াশুনায় মন বসতো না । 😛

    লেখা ভাল হইছে :clap: :clap:

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    সাব্বাশ বাঘের বাচ্চা 😛

    আমাদের কলেজে আম ছিল না, তবে আমড়া, কাঠাল আর ডাব ছিল। আমাদের হাতে খড়ি হতো হাউসের পিছনে আমড়া গাছে ঢিল মেরে...


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : লুবজানা (২০০৫-২০১১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।