টিটোর গল্প, বউ কথা কও-

‘সবচেয়ে ভালো…/ পছন্দের/ শক্তিশালী…’ এইরকম শর্ত দিয়ে কিছু বেছে নিতে বললে বিপদে পড়ে যাই। এই ব্যাপারগুলো সময়ের সাথে বারবার বদলে যায়। আজ এটা ভালো লাগলো, কাল হয়তো অন্যটা।
তবু মাঝে মাঝে অল্প কিছু লেখা মনে খুব দাগ কেটে যায়। বদলে যাবার তালিকায় ওরা আর থাকে না তখন, বরং পাহাড়ের মতন অবিচল থেকে মনের ভেতর একটা জায়গা করে নেয়।

একাত্তর নিয়ে সবচেয়ে শক্তিশালী লেখা বেছে নিতে বললে আমি তাই চোখ বুজে আহমদ ছফা-র ওঙ্কার তুলে নিবো। তেমনি করে একুশ নিয়ে যদি বাছতে চাই- জহির রায়হানের একুশের গল্প থাকবে লিষ্টিতে, সাথে আরেকটা গল্প- টিটো রহমানের ‘বউ কথা কও’।

টিটো আমার জিগরি দোস্ত। একই ব্যাকগ্রাউন্ডের কলেজে পড়েছি আমরা, ও বরিশালে, আমি কুমিল্লায়। পরিচয় হয়েছে ঢাবি-তে এসে। ঢাবি-র ফিল্ম সোসাইটির জান-প্রাণ দেয়া সদস্য ও। প্রথম বর্ষে এসে ওর তালে পড়ে আমিও ঢুকে গেছি ওখানে। ভালই সময় কাটাতাম টিএসসি-র দোতলায় ফিল্ম সোসাইটির রুমটায়। বিশেষত জমত যখন কোন একটা চলচ্চিত্র উৎসব হতো, দিনরাত খাটুনি, এড জোগাড় করো, স্যুভেনির ছাপাতে ফকিরাপুলে মাহী ভাইয়ের প্রেসে দৌড়াও। এত সব কষ্টের পরে আনন্দে মন ভরে উঠত, যখন টিএসসির অন্ধকার অডিটরিয়মে টর্চ হাতে নিয়ে ঘুরতাম টিকেটম্যান হিসেবে। আর অপেক্ষায় থাকতাম কখন কোন এক সুন্দরী অন্ধকার হাতড়ে এসে টিকেট বাড়িয়ে দিবে, আর আমরা এক হাতে তলোয়ার (থুড়ি, মানে টর্চ) আর অন্যহাতে সুন্দরীর হাত ধরে বীরের বেশে তাকে জায়গামতন বসিয়ে দিবো।
দিনশেষে আমাদের মধ্যে প্রতিযোগীতা হতো আজ কে কজনকে হাত ধরে সিটে পৌঁছে দিয়েছে। টিটো-মিশু-মাসুমের জ্বালায় আমি টপে থাকতে পারতাম না অবশ্য, তবে আমার পার্ফর্মেন্সও নেহায়েত খারাপ থাকতো না।

সেই সময় টিটো যুগান্তরের ফান ম্যাগাজিন বিচ্ছু-তে নিয়মিত ‘আজেবাজে’ লেখা লিখতো। আজেবাজে বললাম এ কারণে, টিটোর ক্ষমতা জানা আছে আমার, তাই ওর হাত দিয়ে বের হওয়া ঐ লেখাগুলোকে আজেবাজে বলতে বাঁধে না একটুও।
সেইসময় পকেটমানি-র খানিকটা টানাটানি চলছিলো আমার। টিটোই একদিন জোর করে পরিচয় করিয়ে দিলো রবি ভাই ( আশীফ এন্তাজ রবি, বিচ্ছুর সম্পাদক) – এর সাথে। ব্যস, আমিও তারপর কদিন অনিয়মিত ভাবে টিটোর চেয়েও ‘আজেবাজে’ লেখা নামিয়ে বিচ্ছুর ফাঁকা জায়গাগুলো ভরতাম। বিপদের দিনে হাল্কা-পাতলা রোজগার হয়েছিলো, রবি ভাইয়ের কাছে তাই অশেষ কৃতজ্ঞতা। আমাদের তিন বন্ধুকে- আমি,আহসান, টিটো- যথেষ্ঠ লাই দিয়েছিলেন তিনি। এমনও দিন গেছে, সকালে উঠে রবি ভাইয়ের কাজীপাড়ার বাসায় চলে গেছি আমরা, ওখানেই নাস্তা করেছি। তারপর দুইজনে কাগজ কলম নিয়ে ওখানে বসেই হাবিজাবি লিখে রবি ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়ে দুপুরে আবার মিতু ভাবীর মজাদার রান্নার লাঞ্চ সেরে তারপর বেরিয়েছি।
আহ, সে বড় সুখের দিন ছিলো।

তো, আমরা যখন কার্জন হল থেকে একটা পত্রিকা বের করলাম যুযুধান নাম দিয়ে, তখন টিটোকে চেপে ধরতেই ব্যাটা দুদিন খেঁটেখুঁটে এই গল্প নামিয়ে দিলো। আর আমি সেই গল্প পড়ে পারলে ওরে ধরে মাথায় তুলে নাচি! এই রকম উড়াধুড়া কল্পনাশক্তি না থাকলে আবার লেখক কীসের!

সেই গল্প প্রথম ছাপা হলো আমাদের পত্রিকা- যুযুধানে। একুশের গল্প হিসেবে আমার সবচেয়ে পছন্দের গল্প।
———–
লেখাটা সচলায়তনে পোস্ট করা হয়েছিলো। গল্পের স্ক্যানড কপিও ওখানে রাখা আছে। কেউ পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করতে পারেন।
http://www.sachalayatan.com/konfusias/12615

৪,৬৮৮ বার দেখা হয়েছে

৩৫ টি মন্তব্য : “টিটোর গল্প, বউ কথা কও-”

  1. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    আবারও? কেন কেন কেন? দিলিতো ১২ টা বাজাইয়া। এখন খুব সাবধানে লিখতে হবে, ছোট খাট লেখক লেখক ভাব নিয়া। ~x( ~x(
    তোর লগে :duel: । :chup:


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  2. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    আপনাদের ভার্সিটি জীবনের কাহিনী শুনলে ঈর্ষা হয়। ফিল্ম সোসাইটি, পত্রিকা প্রকাশ, পত্রিকায় লেখালেখি কত কি করতেন। আর আমরা! পরীক্ষার আগেরদিন খাটাখাটনি কইরা পরীক্ষা দেই। আর বাকি সময়টা অপচয় করি।

    জবাব দিন
  3. ১.
    সাধে কি আর তারেক রে ফাঁকিবাজ কই? :chup:
    একটা ট্রেলার দেখাইয়া অনেকদিন পুরা সিসিবি রে ঘোল খাওয়াইয়া বসাইয়া রাখছে। :grr: :grr:
    ২.
    ‘বউ কথা কও’ নিয়ে আর কি বলবো। আমার বন্ধু-বান্ধবদের লেখা নিয়ে আমি বরাবরই উচ্ছাসিত। তারেকের 'সমান্তরাল' আর টিটো'র ‘বউ কথা কও’আমার সব সময়ের পছন্দ। :boss: :boss:

    জবাব দিন
  4. তারেক (৯৪ - ০০)

    টিটো,
    ইচ্ছা করেই দিলাম। তুই এইসব অণুকাব্য ছাড়ান দিয়া ভাল কিছু নামা। x-(

    ফয়েজ ভাই,
    আমি মোটামুটি "কামিং ছুন" স্ট্যাটাসেই থাকি সবসময়। এই যা মুশকিল! B-)

    কামস,
    ট্রেলারটা তো দেখা শেষ করস নাই এখনো। ওইটা দেখ আগে বইসা বইসা। :grr:


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন
  5. তারেক
    তোরে হাতের কাছে পাইলে হাড্ডি-গুড্ডি একটাও আস্তা রাখুম না , বস্মাইশ । ছোট ভাইরা আছে তাই মন খুইলা গালিও দিতে পারতেসিনা।
    সাহস থাকলে মেসেঞ্জারে আয়। :grr: :grr:

    জবাব দিন
  6. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)
    ঢাবি-র ফিল্ম সোসাইটির জান-প্রাণ দেয়া সদস্য ও। প্রথম বর্ষে এসে ওর তালে পড়ে আমিও ঢুকে গেছি ওখানে। ভালই সময় কাটাতাম টিএসসি-র দোতলায় ফিল্ম সোসাইটির রুমটায়। বিশেষত জমত যখন কোন একটা চলচ্চিত্র উৎসব হতো, দিনরাত খাটুনি, এড জোগাড় করো, স্যুভেনির ছাপাতে ফকিরাপুলে মাহী ভাইয়ের প্রেসে দৌড়াও। এত সব কষ্টের পরে আনন্দে মন ভরে উঠত, যখন টিএসসির অন্ধকার অডিটরিয়মে টর্চ হাতে নিয়ে ঘুরতাম টিকেটম্যান হিসেবে।

    আফসোস, ভার্সিটি লাইফ মিস করেছি 🙁 ।
    অন্যরকম হলে আমি তোমাদের মতোন এরকম হতেই পছন্দ করতাম।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  7. Tito Bhaia,

    Ami tomar onek senior (9 years). Tomar lekhata sotti oshadharon - plot and writing style.

    This is certainly a in a different league than any short story that I have read by some current Bangladeshi writers such as Huamyun Ahmed, Imdadul Haque Milon, and many others. You should publish a book with the same title - this should be the first story in the book. And you should include 10/15 more good short stories which you should write if you have not written already. If you do not do that, the story may be lost from the literature for the future generation. I think it should not be that difficult to convince a publisher. You/your friends should let the story known to as many friends/people as possible - like Tarek has done here. It does not matter how good you are, people would not know you initially unless you get yourself known - especially if you can get some favorable reviews by some known writers that will be helpful for your writing career. Wish you the best.

    জবাব দিন
  8. সাইফ (৯৪-০০)

    মাসরুফ,তুমি সহ সবার জন্য বলছি,টিটোর এই গল্পটা জার্মানিতে একটা ফিল্ম ফেস্টিভালে গেছিল,ওখান থেকে ওরা ইনভাইটও করছিল,থাকা খাওয়া ফ্রি ছিল কিন্তু প্লেন ভাড়ার জন্য টিট যেতে পারে নাই.।।.।।.।।..।।।টিটো ভুলে গেছিস নাকি রে............।।দোস্ত কেমন আছিস‌্,্‌্‌,্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌

    জবাব দিন
  9. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)
    প্লেন ভাড়ার জন্য টিট যেতে পারে নাই

    আফসোস,আমি লাখোপতি হইয়া জন্মাই নাই।এইখানে প্রায়ই দেখি বড়লোকের ফাউল পোলাপাইন বাপের টেকায় বিদেশ থিকা ইন্টার্নশীপ কইরা লাফায় লাফায় সেইটা কইয়া পার্ট লয় আর সিভি ভারী করে।

    টিটো ভাই,এইসব দিয়া যদি প্রতিভা ঠেকানো যাইত তাইলে ওরাই দুইন্নায় রাজত্ব করত,আপনার মত প্রতিভাবানেরা না।

    কি গল্প লিখলেন মামা গো-এক্কেরে কইলজায় গিয়া চাক্কু মাইরা দিছে...

    জবাব দিন
  10. হাসনাইন (৯৯-০৫)

    @টিটো ভাই,
    ভাই সিরম...সিরম গল্প। 🙂

    "দিনশেষে আমাদের মধ্যে প্রতিযোগীতা হতো আজ কে কজনকে হাত ধরে সিটে পৌঁছে দিয়েছে। টিটো-মিশু-মাসুমের জ্বালায় আমি টপে থাকতে পারতাম না অবশ্য, তবে আমার পার্ফর্মেন্সও নেহায়েত খারাপ থাকতো না।"
    😀

    জবাব দিন
  11. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    'বউ কথা কও' গল্পটা পড়লাম- অসাধারণ!!!
    আইডিয়াটা মারাত্মক লাগছে...শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ, বস!!!
    টিটো ভাই... :salute:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : টিটো রহমান (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।