চাচা কাহিনি

ariba
কলেজে থাকার সময় আমি আর রানা পাশাপাশি ডেস্কে বসতাম।
ব্যাক বেনচারের সুনাম রেখে চলেছি আজীবন, আমাদের ডেস্কও পেছনেই ছিলো। মানে, প্রেপগার্ডের ডেস্ক যেখানে থাকে, তার ঠিক সামনে।
আমি, রানা, শাহেদ, আরিফ, নাইম, তানভীর আর আহমেদ, আমরা এই কয়জন মিলে ঐখানে আলাদা রাজত্ব বানিয়ে ফেলেছিলাম। শাহেদের সুপ্ত নাম ছিলো শাহেদ আলী, সেইখান থেকে ধার নিয়ে আমাদের জোনের নাম ঘোষণা দিয়েছিলাম আলী জোন। ( নাম শাহেদের নামানুসারেই হবে কিনা, এই নিয়ে, হয়ত কিঞ্চিত আলোচনার দরকার ছিলো, কিন্তু শাহেদের বিশাল শরীর আর তাতে বেঁধে রাখা অসুরিক শক্তির কথা মাথায় রেখে কেউ উচ্চবাচ্য করিনি। বা, করার সাহস পাইনি। কি দরকার ভাই প্রাণের মায়া কাটানোর? 🙂

সেই আলী-জোনে বসে আমরা অনেক কিছু করতাম। মূলত গলাবাজিই ছিলো যেসবের মূল ভিত্তি।
আলী জোনের অধিকাংশ কুমিল্লা-বাসী হওয়ায়, ওইখানে বসেই চাপার জোরে কুমিল্লাকে দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ শহর বানিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু তাতেও আঁশ না মেটায়, ওখানে বসেই কুমিল্লাকে স্বাধীন ঘোষণা দিয়ে দেয়া যায় কি না, সেই পরিকল্পনাও চলতো।
রানার বিশেষ অবদান ছিলো- জাতীয় দলে কুমিল্লার একমাত্র প্রতিনিধি এনামুল হক মণিকে স্যার উপাধিতে ভূষিত করার ব্যাপারে। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমাদের ক্লাশের সবাই মণির কথা বলতে গেলেই স্যার মণি বলে সম্বোধন করতো। 🙂

রানা আর আমার ক্রিকেট নিয়ে আলাপ সালাপ চলতো ঘন্টার পর ঘন্টা। দুজনেই টেন্ডুলকারের ভক্ত ছিলাম, আমি একটু বাড়াবাড়িই, তাতেই খুশী হয়ে কি না কে জানে, রানাও ক্লুজনারের বেশ প্রশংসা করতো। ( প্রতি বিশ্বকাপে আমি তখন দক্ষিণ আফ্রিকা সমর্থন করতাম, আর চিরাচরিত নিয়মে বিশ্বকাপ শেষ করতাম ভারাক্রান্ত হৃদয়ে!)
আমাদের দুজনের প্ল্যান ছিলো, ২০১০/১১ তে যে বিশ্বকাপটি হবে, দুনিয়ার যেখানেই আমরা থাকি না কেন, স্টেডিয়ামে বসে একসাথে ফাইনালে বাংলাদেশের খেলা দেখবো। সেই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ যে পরবর্তী চার বছরের জন্যে চ্যাম্পিয়ান হবে, সে কথা তো বলাই বাহুল্য।
*
রানার সাথে আমার একটা বিশেষ বাজি ছিলো। এমনি এমনি বাজি না, কাগজে কলমে স্বাক্ষর সমেত।
বাজির বিষয় ছিলো- বিয়ে। রানা বলেছিলো ও আগে বিয়ে করবে, আমি বলেছিলাম আমি। টাকার অংক খুব বেশি না, সেই কিশোরমনের সাধ্য সীমা যতটুকু যায় আর কি, মাত্র ১০০০ টাকা!
এইচএসসি পাশ করে আমি আর রানা দুজনেই কার্জন হলের ছাত্র, পাশাপাশি বিল্ডিং-এর দুই ডিপার্টমেন্টে পড়ি। বছর ঘুরে গেলো, বিয়ে দুরে থাক, আমরা দুজনের কেউই তখনো একটা প্রেমিকাও জোটাতে পারিনি। ( আমাকে নিয়ে অবশ্য দুর্জনে নানা কথা বলে, কিন্তু, দুর্জন সবসময়েই পরিত্যাজ্য, এ কথা কে না জানে?)
তো, ভার্সিটিতে দ্বিতীয় বছরেই হঠাৎ শুনি রানা প্রেম করে। আমি দেখি সত্যিই। সুরূচি-কে তখন থেকেই ভাবী ডাকতাম কি না মনে নেই, কিন্তু বছর না ঘুরতেই আমাকে বাজীতে হারিয়ে ওরা দুজন বিয়ে করে ফেলে!
এই বাজীতে হেরে অবশ্য খুব একটা দুঃখ পাইনি। বরং আনন্দ চিত্তে দুইজনের মংগলের জন্যে প্রার্থণা করেছিলাম।
*
আজ অনেকদিন বাদে ফেইসবুকে ঢুকে দেখি রানার ছবি। কোলে ওর সদ্যোজাত রাজকন্যা!
তো গত সাত তারিখে এই কান্ড হলো- রানা আমাদের আলি-জোনের প্রথম বাবা হলো, আমরা হয়ে গেলাম তার কন্যার গর্বিত চাচা!
ফেইসবুকে মেয়ে কোলে রানার এই ছবি দেখে মন ভরে গেলো। এতটাই যে, বসে বসে বিয়ের বাজি নিয়ে স্মৃতিচারণ করলাম একা একাই! তারপরে লিখতে বসলাম এই পোস্ট।
মেয়ের নাম রেখেছে আরিবা আদনান সুহা!

ডিয়ার সুহা,
আজকের এই শুভ দিনে, তোমার আলী-জোন, ও জোন বহির্ভুত দুনিয়ার সকল চাচাদের তরফ থেকে এই পৃথিবীতে তোমাকে জানাই স্বাগতম। জায়গা হিসেবে অবশ্য পৃথিবীটা খুব একটা পদের নয়, নানা গোলমাল আর ঝুটঝামেলা লেগেই আছে, তবু মাঝে মাঝে, চোখ বুজে বাবা-মায়ের আদর যখন খাবে, তখন অবশ্য দুনিয়াটাকে খুব একটা খারাপ লাগবে না!
অনেক দোয়া করি, এই পৃথিবীতে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত তোমার জন্যে আনন্দ বয়ে আনুক।
ইতি,
তোমার প্রাণপ্রিয় চাচা-সকল।
পুনশ্চঃ আর তোমার বাবাকে কানে কানে বলো, তার নামের আগে উপাধি বসিয়ে তাকে স্যার রানা ডাকা যায় কিনা, এই নিয়ে অতি শিঘ্রই আমি আলি-জোনের মেম্বারদের সাথে বিশেষ আলোচনা বসাবো।
অনেক ভাল থেক মা মণি।

৩,৫১৪ বার দেখা হয়েছে

৩৮ টি মন্তব্য : “চাচা কাহিনি”

  1. জিহাদ (৯৯-০৫)

    ১। পিচ্চিটা খুবই কিউট। একেবারে sleeping beuty যাকে বলে।

    ২। ছবি দেখে ভাবসিলাম এটা বোধহয় আপনি। আপনাদের দুইজনের চেহারার ধরণে কি বেশ মিল আছে? নাকি মিল খুঁজে পাওয়াটা পুরাপুরিই আমার অবদান। 😕

    ৩। চাচা কাহিনির পর আপনার কাছ থেকে এইবার একটা বাবা কাহিনি শোনার অপেক্ষায় স্টপওয়াচ নিয়া বইসা পড়লাম :grr:


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  2. ১.
    এতোদিন পরে ব্লগ লেখার জন্য তারেক শালার ভাইকে আমার পক্ষ থেকে অনেক গালাগালি এবং নিন্দা।
    ২.
    সুহা মামনির জন্য অনেক শুভ কামনা।
    ৩.
    রানা শালার ভাই কে অভিনন্দন।
    ৪.

    চাচা কাহিনির পর আপনার কাছ থেকে এইবার একটা বাবা কাহিনি শোনার অপেক্ষায় স্টপওয়াচ নিয়া বইসা পড়লাম

    আমিও।

    ৫.
    অফ টপিকঃ
    মাত্র গতকালই আমাদের ব্যাচের জাকারিয়া আমাকে বলল
    'মামা তোমরা তো চাচা হইতেছ'

    এই সুযোগে ওরে ও শুভ কামনা।

    জবাব দিন
  3. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    ছোট্ট সুহা কি জানবে যে জন্মসূত্রে সে কত্তগুলো চাচার অধিকারিণী হয়েছে?
    তারেক ভাই,আপনার এই অসম্ভব মজার লিখাটা পড়ে ক্যাডেট কলেজ পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া অমলিন ভালোবাসা আবারো অন্তর ছুঁয়ে গেল।
    অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া!!

    জবাব দিন
  4. হাসনাইন (৯৯-০৫)

    ভাই আমিও আমার কলেজ লাইফের চার বছর প্রেপ গার্ডের ঠিক আগের বেঞ্চে বসতাম। পোলাপাইন মনে করত ঝামেলা, কিন্তু মজা কোথায় তারেক ভাই নিশ্চয় বুঝতে পারছেন...। 😀

    "রাজকণ্যা সুহার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম " :party:
    এরই সাথে আমাদের কলেজের পরিবারের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেল।।

    জিহাদ কি জানি বলতেছিলি ??......।। 🙂

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : হাসনাইন (১৯৯৯-২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।