শিরোনামহীন কথোপকথন – পাঁচ

পিকো: কি রাব্বী? কি খবর?

আমি: এইইই! ভাইয়ায়ায়ায়া! কি খবর বলো?

আমি ভাল আছি। এখন তোমার বাসায়। আজ থাকছি।

পিকো: গুড! ও তাই? তারপর খবর বলো?

আমি: এইতো চলে …

রাজ ভাইয়ারা শ্রীমঙ্গল গেলো আজ।

পিকো: কি, বেড়াতে গেলো?

আমি: হ্যাঁ। ওর একটা ফ্রেন্ড আছে না ডানক্যানস টিয়ের গার্ডেন ম্যানেজার? ওনার ওখানে। এখানে তো তিনদিনের ছুটি! লং উইকএন্ড।

পিকো: ইয়েস, আই নো ড্যাট।

আমি: জানো? আমরা আজ মান্না দে’র সাথে লাঞ্চ করলাম! ভাবী, ওহী আর আমি। মানে আরো লোক ছিল। লিভি আপা আমাদেরকে ইনভাইট করেছিলেন।

পিকো: ড্যাট’স গ্রেট!

ভাইয়া: হুম। ছবি এবং অটোগ্রাফ। বুইঝো? অরুন্ধতী হোম চৌধুরীও ছিল।

পিকো: ছবি তুলেছো কি?

আমি: হ্যাঁএ্যাএ্যা… :ডি

পিকো: আমি মিস করলাম।

আমি: আমরা অনেকবার তোমার কথা বলেছি। ইনফ্যাক্ট, তুমি গেলে আমাদের যাওয়াটা খুব ঠিক ঠিক হতো।

পিকো: তোমরা তো থাহলে এখন সেলিব্রেটি!

আমি: সে আর বলতে! ভাবী তো মান্না দে’কে বলেই ফেললো যে আমি আপনার গান খুব পছন্দ করি। কিন্তু আমার হাসবেন্ড আপনার খুবই বিগ ফ্যান। তুমি যে দেশে নাই এখন সেইটাও মান্না দে জানেন। সুতরাং তোমার বেশি দুঃখ করার কিছু নেই। হাঃ হাঃ হাঃ

পিকো: আমি গতরাতেও শুনেছি দুইতিনবার এই গানটা – স্বপন যদি মধুর এমন/ হোক না মিছে কল্পনা/ জাগিও না, আমায় জাগিও না …

আমি: এইটা গেয়েছিলো। জানো?

পিকো: হ্যাঁ, আমি নিউজপেপারে পড়েছি। এটা কিন্তু ওনার চাচার গান, কে. সি. দে’র গান।

আমি: ও তাই? আমি জানি না। আমি আসলে ওনার প্রোগামের জন্য খুবই মিসফিট। তুমি থাকলে খুব ভাল হতো। এনিওয়ে, ফ্রি টিকেট দেখেই চলে গেলাম। :ডি

পিকো: তা ঠিক। আমার জন্য খুব বড়ো একটা ব্যাপার হতো।

আমি: ওখানে সালাউদ্দিন লাভলুও ছিলেন। ওহী দেখি চটপট ওনার সাথে খাতির করে ফেললো। তারপর পটায় পটায় শুটিং দেখার ইনভাইটেশন নিয়ে ফেললো। এমন চাল্লু হইছে না! ওহীর লেটেস্ট নাম এখন চাল্লু খান। হাঃ হাঃ হাঃ

পিকো: কেন? ওর হেন্টি নামটা কি হলো?

আমি: হেন্টি তো ওর নিজের রাখা নাম্। এইটা রাজভাইয়া দিছে ওর মিচকামির কারণে।

পিকো: ওকে একটু বুঝায়শুনায় রেখো। বেশি দুষ্টু হলে সমস্যা।

আমি: জানো? কাল আইইউবি’তে অমিতাভ ঘোষ আসছে। রাইটার! দ্য গ্লাস প্যালেস। তারপর দ্য হাংরি টাইড … তুমি মনে হয় পড়ো নাই ওনার লেখা।

পিকো: পড়িনি কিন্তু চিনি। ক্যালকাটা ক্রোমোজম ওনার লেখা না?

আমি: ইয়েস। কিন্তু সবথেকে বড় পরিচয় হলো উনি এ্যানথ্রোপলোজিস্ট!

পিকো: ও তাই? এটা জানতাম না। বইমেলায় যাও নাই?

আমি: আজ ভয়ংকর ভীড় হবে। গেলে একদম চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যাবো।

পিকো: তোমাদের সবার আর খবর কি?

আমি: যোজো-রা এতক্ষন এখানে ছিল। যোজো আজ প্রথম স্টেজে উঠেছে। ব্যাপক এক্সসাইটেড! (আমার বোনের মেয়ে, আসল নাম উদিতা, তার যোজো নামটা কেমন করে যেন চালু হয়ে গিয়েছে)

পিকো: কোথায়? ওদের স্কুলে?

আমি: না। শান্তোমারিয়াম ইউনিভার্সিটি বাচ্চাদের জন্য আজ একটা প্রোগাম করেছে একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে, সেখানে।

পিকো: নাভিদ বাবুর কি খবর?

আমি: :ডি … লেটেস্ট হলো স্কুলের টিসি ওয়ানিং পেয়েছে গত পরশু!

পিকো: হোয়াট? আমি খুবই আপসেট হলাম এটা জেনে। কি করেছিলো?

আমি: কি জানি একটা মারামারি করছিলো মনে হয়। সে অবশ্য এইটা নিয়ে খুবই শরমিন্দার মধ্যে আছে। বেশি কাউকে বলে নাই এখনো। :ডি

পিকো: হেসো না। দুদিন পরপর এসব একদম ভাল না। তুমি ওকে ভালভাবে কাউন্সেলিং করো।

আমি: কোন কাউন্সেলিং-এ কাজ হয় না্। নেটিভেটি পুরা ঘটনায় লজ্জিত যদিও এবার। কিন্তু তার বক্তব্য হলো, এই মারামারিটা নাকি ক্লাসে ন্যয় প্রতিষ্ঠার জন্য করা লাগছে এবং দরকার ছিলো। সে এই মর্মে আরো জানিয়েছে, সে কখনো মারামারি নিজে শুরু করে না। অন্যরা তাকে ট্র্যাপ করে। নাদুভেদুর যেহেতু মারামারির স্কীল খুব ভাল। তাই ফিনিশিংটা সবসময় ওর হাতে হয়। এইজন্য সব দোষ ওর ঘাড়ে পড়ে। ওর মা (আমাদের বোন) পুরা শকড! মাইর দেয়ারও নাকি ইচ্ছা হয় নাই এবার। :পি

(আমরা আদর করে নাভিদকে নেটিভেটি ডাকি)

পিকো: নাভিদকে ডাকো।

আমি: ওরা তো বাসায় চলে গেছে। সকালে ছিলো এখানে যোজোর প্রোগামের পর।

পিকো: আচ্ছা ঠিক আছে। ওর সাথে আমি পরে কথা বলবো। মা কেমন আছে?

আমি: ভাল আছে। দিদাকে নিয়ে বিজি।

পিকো: আমি গত সপ্তাহে কথা বললাম। অনেক কষ্টে ফোনে ধরতে পেরেছিলাম মাকে। লাইন পাওয়া যায় না।

আমি: আম্মা যে ব্যাপক ঘুরাঘুরির ভেতর আছে, জানো?

পিকো: নাতো। কার সাথে ঘুরছে?

আমি: আনোয়ারা আন্টি আর দিল রওশন আন্টির সাথে। দিল রওশন আন্টি দেশে এখন। আমাদের বাসায় দুদিন ছিলেন। আম্মা ওনাদের সাথে ঘুরে বেড়িয়ে খুবই মুভড।

পিকো: হুম। সাবধানে চলাফেরা করতে বলো।

আমি: বললেই তো আর শোনে না। বান্ধবীদের সাথে কলকাতায় যাবার প্লান করছে। এদিকে পায়ের অবস্থা ভালো না।

পিকো: কেন? পায়ের অবস্থা কি ডেটোরিয়েট করেছে?

আমি: না, তা করেনি। একা একটানা চলাফেরা করার মতো অবস্থাও হয়নি। এখনো বা পাটা খুঁড়িয়ে হাটে।

পিকো: ডাক্তারের সাথে কথা বলে মার আরেকটা চেক-আপ করাও। রাজকে বলো এপোয়ন্টমেন্ট নিতে।

আমি: আচ্ছা, বলবো।

পিকো: আমার এখন উঠতে হবে। ওহী বাবুকে বলো যে আমার তোমার সাথে কথা হয়েছে এবং আমি তোমাদের রাত দশটার দিকে আবার অনলাইন হবো।

আমি: জো হুকুম, মেজর। অনেক ভাল থেকো।

পিকো: টেইক কেয়ার অফ ইউরসেলফ। বাই।

আমি: টা টা …

______________________________________________________________

কথোপকথনটি আমার বড় ভাই পিকো এবং আমার মধ্যকার। কথোপকথনের সময়কাল একুশে ফেব্রুয়ারি ২০০৮।
হোসেন সোহেল শাহনেওয়াজ – পিকো (জন্ম: ১৩ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৩ এবং মৃর্ত্যু: ২৫শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯)

২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে ঢাকায় বেশ কিছু সংখ্যক ভাগ্যাহত মানুষ নির্মম এবং নিষ্ঠুরতম অসহায়ভাবে প্রাণ হারান। তাঁদের সকলের স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নিচের গানটি:

হোয়ার হ্যাভ অল দ্য ফ্লাওয়ারস গন?

কথা এবং সুর: পেট সিগার, ১৯৬১


Where have all the flowers gone, long time passing?
Where have all the flowers gone, long time ago?
Where have all the flowers gone?
Gone to young girls, every one!
When will they ever learn, when will they ever learn?

Where have all the young girls gone, long time passing?
Where have all the young girls gone, long time ago?
Where have all the young girls gone?
Gone to young men, every one!
When will they ever learn, when will they ever learn?

Where have all the young men gone, long time passing?
Where have all the young men gone, long time ago?
Where have all the young men gone?
Gone to soldiers, every one!
When will they ever learn, when will they ever learn?

And where have all the soldiers gone, long time passing?
Where have all the soldiers gone, a long time ago?
Where have all the soldiers gone?
Gone to graveyards, every one!
When will they ever learn, when will they ever learn?

And where have all the graveyards gone, long time passing?
Where have all the graveyards gone, long time ago?
Where have all the graveyards gone?
Gone to flowers, every one!
When will they ever learn, oh when will they ever learn

৬ টি মন্তব্য : “শিরোনামহীন কথোপকথন – পাঁচ”

মওন্তব্য করুন : আশহাব (২০০২-০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।