যা শুনলাম, যা বুঝলাম

লজ্জাহীন ব্যস্ত তথা লজ্জা ঢাকিতে

গতকাল সকালে ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠলাম। ব্রাজিল আর পর্তুগালের খেলা মিস করা যাবে না। তড়িঘড়ি করে কিচেনে টোষ্ট আর চা রেডি করছি। রুমমেট চার্লি হটাৎ জিজ্ঞাসা করলো, টরন্টো যাচ্ছো নাকি? মনে মনে বললাম, সকাল সকাল মাথা নষ্ট নাকি? তারপর খেয়াল হলো, জি-৮ / জি-২০ সামিট। এইটা নিয়ে স্টুডেন্ট ইউনিয়নে বেশ শোরগোল কদিন থেকে। অনেকেই অটোয়া থেকে সামিট প্রটেস্ট করতে টরন্টোমুখী। অনলাইনে স্টুডেন্টস এগেইনষ্ট জি-৮ সামিটের সিগনেচার ক্যাম্পেইন ফর্ম পাঠিয়েছিল, দায়সারাভাবে ফিলআপ করে দিয়েছি। ব্যস, এটুকুই। আমি বললাম, নাহ, যাচ্ছি না। চার্লিও যাচ্ছে না, কিন্তু ওর ইচ্ছা ছিল। তারপর সামিটের পলিটিক্যাল ইকোনমি নিয়ে ‌একদফা বেশ আলোচনা চললো কানাডার সরকার কিভাবে ট্যাক্সের পয়সা খরচা করে এদেশের নাগরিকদের অধিকার খর্ব করছে। মানে, টরন্টো কিভাবে একটা সুপার পোলিসিং সিটিতে রুপান্তরিত হয়ে আকষ্মিকভাবে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে প্রতিহত করছে। মিলিয়ন ডলার খরচ করছে সম্মেলনের চারপাশের সিকিউরিটির জন্য মানে বেড়া দেওয়া আর কয়েক হাত পরপর পুলিশ দাঁড় করিয়ে রেখে। অন্টারিও প্রোভিন্সে পুলিশকে সাময়িকভাবে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সামিটের নিরাপত্তা বেড়ার আশপাশে কাউকে পরিচয়পত্র ছাড়া পাওয়া গেলে তৎক্ষনাত গ্রেফতার করার। এবং সেই আইনে গ্রেফতার করাও হয়েছে। বেশি ক্ষমতা পেলে অপব্যবহারও বেশি হয়, এখানেও তাই হচ্ছে সাধারন প্রতিবাদকারীকে সন্ত্রাসী হিসাবে সন্দেহ করা হচ্ছে। প্রতিবাদ করা যে অধিকার, এবং প্রতিবাদ করলেই যে কেউ সন্ত্রাসী নয় পুলিশের আচরণে এই পার্থক্য উপেক্ষা করা হচ্ছে। ৮৫ বছর বয়ক্স এক হুইলচেয়ারে বসা প্রতিবাদকারীকে সন্ত্রাসী উল্লেখ করায়, মানবাধিকার সংস্থাগুলো সরকারের তীব্র সমালোচনা করছে। তাই বলে প্রতিবাদ থেমে নেই। এখানকার পুলিশের দূর্ভাগ্য যে এখানে গ্রেফতার বানিজ্য নেই, নইলে কিন্তু এই ‌‌ওছিলায় ভালোই আয় রোজগার হতো। যাইহোক, পুরো ব্যাপারটাই হলো মিলিয়ন ডলার শো ডাউন। চার্লির সাথে আলাপ আরো কিছুক্ষন চলতো, কিন্তু ব্রাজিল-পর্তুগাল ম্যাচ শুরু হয়ে যাচ্ছিল তাই ইতি টানা হলো। তখনই মনে পড়লো, গতবছর আমি যখন কোর্স সিলেকশনের সময় পলিটিক্যাল ইকোনমি কোর্স বেশি নিয়েছিলাম, চার্লি আমাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিল যে এজাতীয় কোর্স কিভাবে ভবিষ্যতে চাকরির বাজারে প্রতিযোগী হিসাবে অবস্থান দূর্বল করে দেয়, কারণ পলিটিক্যাল ইকোনোমি সরকারের নীতিকৌশল ও কর্পোরেট বানিজ্য রাজনীতির কৌশলকে সমালোচনা ও প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং সংগত কারনেই এমপ্লোয়ারদের কাছে পলিটিক্যাল ইকোনোমি ব্যাকগ্রাউন্ড কম প্রত্যাশিত তাই চাকরির বাজার সংকুচিত হয়ে যায়।
.

জি-৮ অনেক বড়ো ব্যাপার। আমি বড় ব্যাপার স্যাপার নিয়ে সাধারনত মাথা ঘামাই না। তাহলে এটা মাথায় ঢুকলো কিভাবে? শুধুমাত্র বন্ধুবান্ধবের কানপড়া, ফেইসবুক আর মিডিয়া থেকে। আমার কয়েকজন বন্ধু আছে যারা বেশ জোরেশোরে এ্যান্টি-ক্যাপিটালিস্ট। তারা সামিটের এজেন্ডার বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন করছে। নিয়মিত ফেইসবুকে আপডেট দিচ্ছে। সেটা দেখতে দেখতেই আমি মোটামুটি নিউজগুলো ফলো করা শুরু করে দিলাম। কাল রাতে আবিষ্কার করলাম আমি আর তোতান মিলে জি-৮ নিয়ে পলাশ ভড়ের সাথে মাঝরাতে অটোয়ার ডাউনটাউনের রাস্তায় গালগল্প করছি। জি-৮ সামিটের নিরাপত্তা জোনের চারপাশ ঘিরে যে বেড়া দেওয়া হয়েছে তাতে রেজারের ব্লেডের মতো ধার, তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। যা তা ব্যাপার নয়, টরোন্টো ডাউনটাউনের মেট্রো টরোন্টো কনভেনশন সেন্টারের চারপাশ জুড়ে ছয় কিলোমিটারব্যাপী তিন মিটার উঁচু এবং ছয় কিলোমিটার লম্বা এই বেড়ার খরচ পড়ছে ৫.৫ মিলিয়ন ডলার। জি-৮এবং জি-২০ সামিট মিলে ইতিহাসের সবথেকে ব্যয়বহুল সামিট হচ্ছে যেটাতে ১ বিলিয়ন ডলারের উপর খরচ করা হচ্ছে। এতো বড়ো পাবলিক ফান্ড বিভিন্ন খরচখরচাবাবদ সরাসরি মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেট সিকিউরিটি/মিলিটারি কোম্পানিগুলোর পকেটোস্থ হচ্ছে বলে সচেতন মানুষজন কানাডার সরকারের গুষ্টি উদ্ধার করছে। তাই এই সামিটের সিকিউরিটি ওয়ালের নাম দেওয়া হয়েছে কর্পোরেট সিকিউরিটি ওয়াল। আমেরিকার ব্লাক ওয়াটার আর কানাডার এসএলসি লাভালিন নিরাপত্তার ঠিকাদারির বিডে জিতেছিল প্রথমে, সেখান থেকে মন্ট্রিয়ালভিত্তিক এসএলসি লাভালিন নিরাপত্তা ঠিকাদারীটা পায়, যারা কিনা আফগানিস্থানে ন্যাটো বাহিনীর দখলদারিত্ত্বের পরিবেশ সহায়ক করতে অবকাঠামো ও অন্যান্য ঠিকাদারীর কাজ করে। তারা ইরাক যুদ্ধেও একই ব্যবসা করেছে। তার মানে দাড়ায়, এসএলসি লাভালিন ন্যাটো বাহিনীকে সহায়তা করে মূলতঃ আফগানদের সমসাময়িক জীবনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্যাতন, দারিদ্রতা এবং সংঘর্ষ আরো বাড়িয়ে তুলেছে। কানাডার মানুষজনের প্রশ্ন হচ্ছে সরকার দেশের মানুষের পয়সায় নিজের দেশের মানুষের বাক ও নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব করার মতো ভাড়ামিটা কেন করছে? এই অধিকার সরকারের আছে কিনা? সবশুনে আমি মনে মনে বলি, ব্যাক্কল নাকি?! সরকার বাহাদুর চাইলে সব করতে পারে।

নিরাপত্তা ব্যাপারটা একটা জুজু ছাড়া আর কিছু না। এই জুজুর ভয় দেখিয়ে কত মৃর্ত্যু জায়েজ করা হচ্ছে সমসাময়িক পৃথিবীতে সেই পরিসংখ্যানের কোন রেকর্ড নেই। বিশ্বে তথাকথিত শান্তিশৃঙ্খলা ঠিক আছে কিনা তা নিয়ে জি-৮ দেশের মাথা ব্যথার শেষ নেই। তাই তারা আফগানিস্থান, ইরাক, ইরান, উত্তর কোরিয়া ইত্যাদি দেশ নিয়ে চিন্তিত, সেসব জায়গার পরামানু অস্ত্র, সংঘর্ষ, সন্ত্রাস, সংগঠিত অপরাধ এবং মানব ও মাদক পাচার নিয়ে গলদঘর্ম। মজার ব্যাপার হলো, জি-এইট দেশগুলোর প্রত্যেককেই এই একই বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন করা যায়। কিন্তু সেখানেই কবি নীরব! আমাদেরকে শেখানে হয়েছে, ইরান ও উত্তর কোরিয়া দুটি বেয়াড়া দেশ; জ্বী, জি-৮ রাষ্ট্রসমূহ উদ্বিগ্ন হয়ে টেনশন করে এরা যদি কোনভাবে পটকা বানাতে পারে তাহলেই কেল্লা ফতে এবং তাই মূল টার্গেট যেকোন একটা উপায়ে লাল কার্ড ধরিয়ে তাদের খেলা থেকে বাদ দেওয়া। এছাড়া কেউ যেন তাদের সাথে না মেশে, ঈদ, পূঁজা-পার্বণ ও ক্রিসমাসে বেড়াতে না যায়, তারাও যেন যেতে না পারে। বিকিকিনি বাজারসদয় এসবও যেন না করতে পারে সেজন্য ঠুঁটো জগন্নাথ জাতিসংঘকে দিয়ে তাদের উপর পটকা ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কৌশল আরো জোরদার করানো হবে। সবশেষে, বিশ্ব অর্থনীতি ও তার উন্নয়ন বিষয়ক আলোচনা হবে। হান্টসভিলে সভাশেষে, সাংবাদিক ভাইবোনদেরকে সম্মেলন যে বিরাট সফল হলো সেটা জানানো হবে। তারপর টরোন্টোতে ফিরে জি-৮ নেতারা জি-২০ মানে ইর্মাজিং ইকোনোমির দেশগুলো চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল প্রভৃতির নেতাদের সাথে আরেক দফা বসবেন। সেখানে বিশ্বের অর্থনৈতিক দূর্দশা নিয়ে আলোচনা হবে জাতিসংঘের মোড়লের উপস্থিতিতে। এজেন্ডাতে আরো আছে, টেকসই দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন, ব্যাংক ব্যবস্থার সংস্কার, আর্ন্তজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংস্কার যেমন বিশ্ব ব্যাংক এবং বানিজ্য উদারীকরণ বিষয়ক জনগুরুত্ত্বপূর্ন আলাপ-সালাপ – মূলতঃ সবই বাহাস। তারপর বেয়াড়া রাষ্ট্রগুলো কিকি বেয়াদপি করে তার লিস্টি পাঠ করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে উপরওয়ালার আদালতে নালিশ ঠোকা হবে। হারপার, সারকোজি, ক্যামেরুনসহ সকলে নানাধরনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আলোচনা করার পর এই সিদ্ধান্তে উপনিত হবে যে ওবামা যা যা বলেছে তা মোটামুটি সার্বিকভাবে তাদের বক্তব্যের প্রতিফলন। সবশেষে, জি-৮ এবং জি-২০ সবাই একসাথে বলবেন, হীরকের রাজা ভগবান। এরপর এয়ারফোর্স ওয়ান টরোন্টো থেকে ওয়াশিংটন উড়ে যাবে। আপাততঃ এইটুকুই জানি।

কাল রাতে সহজ কথায় জি-৮ বলতে যা শিখলাম তা হলো দাপটশালী পাঁচ গ্রামের মোড়ল মাতব্বর ফড়িয়াদের সমাবেশ যেখানে আলোচনা হয় কোন চাষাটা বেয়াড়া গোছের, কার বাড়ীর গরু বাছুর বিয়ালো, কোন বাড়ির মেয়েটা উঠতি, কোন নাড়ের বউ দেখতে সুন্দরী, কার বাড়ীর উঠোনে তরিতরকারী ফলিয়েছে, কার সাথে কার লাফড়া চলছে আর তাতে মোড়ল মাতব্বরদের কি স্বার্থ এসব আরকি।

পুলিশের কার জ্বলছে...

আজকে এখানেই শেষ করছি, কারণ লেখাটা এলোমেলো হচ্ছে। কাল এক এ্যান্টি-জি-৮ কর্মীর পোস্টারে দেখলাম: আমি একজন প্রতিবাদী, সন্ত্রাসী নই। এই মূহুর্তে টরোন্টোতে প্রতিবাদকারী ও পুলিশের মধ্যে হাতাহাতি মারামারি চলছে। পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। টরোন্টো ডাউনটাউন এখন রণক্ষেত্র।
.

ছবিসূত্র:
ছবি ১ – অক্সফাম ইন্টারন্যাশনাল ব্লগস
ছবি ২ – সিবিসি নিউজ

.

৩০ টি মন্তব্য : “যা শুনলাম, যা বুঝলাম”

  1. রকিব (০১-০৭)

    জি-২০ নিয়ে টরন্টোতে বেশ গরম পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। যতদূর জানি, অতিরিক্ত প্রায় এক মিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছে জি-২০ এর নেতা-হোতাদের নিরাপত্তা এবং বিক্ষোভকারীদের প্রতিহত করবার জন্য। আজ দুপুর থেকেই টিভিতে গাড়ি পোড়া আর হাতাহাতি দেখেছি। ডাউনটাউনে যাবার ইচ্ছে ছিল; কিন্তু রাতে কাজ থাকায় আজ বিশ্রাম নিতেই ঘরে বসে রইলাম। আমার এক বন্ধুর বাবা আজকে কাজ করছেন ওখানে; দেখি কাল কথা বলে কিছু ব্যাপার স্যাপার বোঝার চেষ্টা করবো।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. শিরীন (৯৬-০২)

    @ রকিব : কাজ করতে যাইস না আপাতত , ডজ দে । তুই চারাগাছ হইতে পারস তয় ডজ ক্যামনে দিতে হয় তা নিশ্চয়ই শিখছস :grr:
    @ রাব্বী ভাই : আপডেটের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া । সাবধানে থাকবেন ।
    ছবিটা মারদাঙ্গা হইছে 😛

    জবাব দিন
  3. সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

    যতটুকু জেনেছি, এই সম্মেলনে সর্বমোট ব্যয় হচ্ছে ১২৪ কোটি ডলার। এর মধ্যে নয় কোটি ৩০ লাখ ডলার খরচ করা হচ্ছে শুধু নিরাপত্তার জন্য। বাকি অর্থ ব্যয় হচ্ছে সম্মেলনের আয়োজনে। বিক্ষোভকারীরা বলছে, সম্মেলনের পেছনে এত অর্থ ব্যয় না করে তা পৃথিবীর দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যবহার করা যেত।
    রাব্বী ভাই, আপনার লেখা পড়া আরো ডিটেইল জানলাম।


    You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

    জবাব দিন
  4. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    খুবই ইন্টারেস্টিং টপিক।

    অর্থনীতির চাকা সচল করার জন্য মাঝে মাঝে ঠেলা দেয়া লাগে, ওই যেমন গাড়ি বন্ধ হই গেলে ঠেলা মারার মতন। জি-৮, ২০, এর পরে ধর উত্তর কোরিয়া, আফগানিস্তান এই গুলা হইলো ঠেলা দেয়ার ইস্যু। এমনে এমনে কি আর ঠেলা যায়, চক্ষু-লজ্জা আছে না একটা, কি কও,


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  5. রাব্বী (৯২-৯৮)

    ধন্যবাদ ফয়েজ ভাই।

    অর্থনীতি তো উদারনীতির, কিন্তু আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধরা খাবার পর এখন নিয়মনীতির ও তদারকীর পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আর যুদ্ধ বানিজ্যের সাথে দাদাগিরি এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর যুদ্ধবিদ্ধস্ত এলাকা পূর্ননির্মাণ ও ব্যবসায়িক ঠিকাদারীর স্বার্থ জড়িত। ইরাক আন্ডার কন্ট্রোল, কিন্তু আফগানিস্থান গিলতে পারছে না। সহজে পারবে এমন কোন সম্ভাবনা নেই মনে হয়। সেক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়া এবং ইরান ভবিষ্যত আশার আলো।

    আমাদের মতো দেশের জন্য মার্তৃসেবা, শিশুস্বাস্থ্য এবং গর্ভপাতের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, খুব ভালো। কিন্তু এরা খাবে কি? তার কোন সদুত্তর নেই। গরীবের এক নম্বর চিন্তা হলো পেট পুরে খাওয়া, তারপর বাকি দুনিয়া।


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
    • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

      আমার একটা ব্যক্তিগত স্টাডি আছে, শেয়ার করি কি বল, 🙂

      অন এভারেজে মানুষের চাহিদা আমার কাছে সীমিতই মনে হয়। দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষই তার নিজের মৌলিক চাহিদা পুরা করতে পারলেই খুশি, বাকী সময়টা সে নিজের মত করে কাটাতে পছন্দ করে, অর্থনীতির ভাষায় বলা হল "আন-প্রোডাক্টিভ" কাজ-কাম।

      চাহিদা সীমিত হলেও সাপ্লাই বা যোগান কিন্তু বন্ধ নেই, যে মানুষ ২ জি তে খুশি তাকে ৪ জির মুলা দেখানো হচ্ছে, সেটা যদি তার দরকার নাও থাকে, তবুও বিভিন্ন ভাবে তাকে আকর্ষনীয় ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, এক পর্যায়ে ২ জির উৎপাদন বন্ধই করে দেয়া হচ্ছে, বাধ্য করা হচ্ছে ৪ জি ব্যবহার করতে, কারন এটা না হলে অর্থনীতির চাকা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

      সবশেষে এটা কিন্তু একটা লুপই, এর বাইরে কিছু নয়। এবং ভয়ানক ক্ষতিকর লুপ। কারন যখন চাহিদা সীমিত হয়ে যাচ্ছে তখন কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টির প্রয়োজন দেয়া দিচ্ছে, যা তৈরী করছে অযৌত্তিক চাপের, কিন্তু উন্নত বিশ্বের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তা অবশ্যই করতে হচ্ছে তাদের।

      মুদ্রার মান, ব্যাংক বা ইন্টারেস্ট এর সংকট প্রান্তিক লোকদের জন্য কোন সমস্যা তৈরী করে না, সমস্যা তৈরী করে না সেই সব লোকদের জন্যও যারা ব্যাংক করে না। মূল্যস্ফীতি তাদের কিছুটা সংকট সৃষ্টি করে বটে, তবে সেটা সাইক্লিক নিয়মেই ঠিক হয়ে যাবার কথা, হয় না দালাল শ্রেনীর জন্য। দালাল শ্রেনী না থাকলে মূল্যস্ফীতির সমস্যা হবে সাময়িক, প্রান্তিক লোকদের জন্য, কারন তারা সরাসরি উৎপাদনে জড়িত, এবং উৎপাদিত পন্যের মালিকও তারাই।

      সন্দেহাতীত ভাবে ব্যাংক এবং ব্যাংকিং ঋনের বর্তমান পদ্ধতি একটা ভুল পদ্ধতি। জীবন যাত্রার মান নির্নয়ের জন্য যে প্যারামিটার ব্যবহার করা হয় তা উন্নত বিশ্বের তৈরি, এবং অবশ্যই কৃত্রিমতা দিয়ে ভর্তি। যে লোক বি এম ডব্লিউ চালিয়ে ২০০ পাউন্ডের বার্গার খায়, তার চেয়ে পায়ে হেটে চলা রুটি খাওয়া লোকের জীবন যাত্রার মান উন্নত হতে পারে, আমরা সবাই জানি, কিন্তু এর স্বীকৃতি দিতে আমাদের "ক্যামন ক্যামন" জানি লাগে।

      এই বৃত্ত ভাংগা দরকার, এবং এর শুরুটা অবশ্যই হতে হবে তৃতীয় বিশ্ব থেকেই, না হলে আমাদের প্রতি বছর একটা না একটা ইরাক, উত্তর কোরিয়া, ইরান দেখতে হবে।


      পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

      জবাব দিন
      • রাব্বী (৯২-৯৮)

        দৌড়াদৌড়ি বেড়ে যাওয়ায় সিসিবিতে আসা হয়নি। সেজন্য দুঃখিত। আপনার মতামত বেশ আগ্রহ উদ্দীপক।

        অর্থনীতিতে বলে সম্পদ সীমিত এবং মানুষ অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত যুক্তির মাধ্যমে বিবেচনা করে। তার ভিত্তিতে অনুমিত মডেল দাড় করানো হয়। কিন্তু যেটা বিবেচনায় কম নেওয়া হয় সেটা হলো সংস্কৃতি এবং ব্যক্তির জীবনাচরণ ও দর্শন। চাহিদার ব্যাপারটা পারিপার্শিক নানারকম প্রণোদনার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। মৌলিক প্রয়োজনের ধারনাও অর্থনীতি থেকে আসা গরীবদের চাহিদা নিরুপন করার জন্য। পুজিঁবাদী ব্যবস্থায় যেতেতু মুনাফা অর্জন হলো মূল লক্ষ্য, সেজন্য এগ্রেসিভ বিপনণ ব্যবস্থা চালু থাকে, যাতে মানুষ নতুন নতুন পণ্য ও সেবা কেনে। সমকালীন বিশ্বে জীবনের সচলতা এতো বেশি, সেখানে প্রয়োজন বা অপ্রয়োজনের ভিত্তিতে চাহিদা নিরুপন করা কঠিন। তাই আমরা প্রতিনিয়তই বাজার কৌশলের ফাঁদে পড়ে যাই।

        পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ মৌলিক চাহিদা মিটলেই খুশী থাকবে একথা বলা কঠিন। কারণ সময়টা হলো অসম বিশ্বায়নের। এখন আর মানুষ বিচ্ছিন্ন সেল্ফ সাফিশিয়েন্ট ইকোনমিতে বসবাস করেনা। বস্তুতঃ সেল্ফ সাফিশিয়েন্ট ইকোনমি কখনো ছিল নাকি এটা একটা ইউটোপিয়ান ধারণা তা নিয়ে ডিবেট রয়েছে। মানুষের অর্থনৈতিক বা সামাজিক জীবন উপনিবেশকাল থেকে শক্তভাবে বিশ্ব ব্যবস্থার সাথে যুক্ত। এই ব্যবস্থার সবথেকে শক্তিশালী অংশ হলো বাজার ব্যবস্থা এবং মানি ইকোনমি এবং এর কেন্দ্র পশ্চিমে। যে যেরকম উৎপাদন ব্যবস্থার সাথেই যুক্ত থাকুক, সবাই কোন না কোনভাবে বিশ্বব্যবস্থার সাথে যুক্ত। বৈশ্বিক নানা উপাদান স্থানীয় জীবনকে প্রভাবিত করছে এবং প্রতিনিয়ত জীবন ব্যবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। যেসব সংস্কৃতি এবং উৎপাদন ব্যবস্থা বিশ্ব অর্থনীতির সাথে অপেক্ষাকৃত কম যুক্ত সেগুলোও দ্রুত একীভূত হচ্ছে। আলাদা থাকা এখন সম্ভব না। মানুষজন, অর্থ, তথ্য ও তত্ত্ব, প্রযুক্তি, মিডিয়া পৃথিবীব্যাপি বিচরণ করায় প্রান্তিক মানুষের জীবন ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে এবং বেশি করে কেন্দ্রের সাথে যুক্ত হচ্ছে ও নির্ভরশীলতা বাড়ছে। সাথে সাথে চাহিদার লিষ্টও বড় হচ্ছে।

        প্রান্তিক মানুষ মানেই উৎপাদনের কৌশলের মালিক নয়, তাই তার উৎপাদিত পন্যের মালিকানা সবসময় তার নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা শ্রম বিক্রি করে। তাছাড়া উৎপাদনের উপাদান আবার অনেক ক্ষেত্রেই বাইরের উপর নির্ভরশীল যেমনঃ কৃষিতে সার, কীটনাশক, বীজ, প্রভৃতি। তাছাড়া উৎপাদিত পন্যগুলো বাজারের উপর নির্ভরশীল এবং স্থানীয় বাজারগুলো বাংক ব্যবস্থা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই কেন্দ্রে মন্দা বা মুদ্রাস্ফীতি হলে তা প্রান্তিক পর্যায়েও প্রভাব ফেলে বেশিরভাগ সময়।

        ব্যাংক একটি মুনাফামূখী আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ব ব্যবস্থার সাথে যুক্ত রাখে। ব্যাংক ব্যবস্থা পশ্চিমের অর্থনৈতিক মডেলগুলোকে ব্যবহার করে আর্থিক লেনদেন করে। স্বাভাবিকভাবেই তা প্রান্তিক পর্যায়ের প্রয়োজন মেটাতে সবসময় সক্ষম নয়। সেজন্যই হয়তো মাইক্রো ফাইনান্সের আর্বিভাব। সেটাও একটা নিও লিবারেল ইকোনমির প্রজেক্ট। জীবনযাত্রার স্টান্ডার্ড ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয় পশ্চিমের ইনডিকেটগুলোকে যা আমাদের মতো দেশগুলোতে অনেকসময় কাজ করে না। তাই হয়তো এতো সংকটের পরও আমরা সবচেয়ে সুখী মানুষের দেশ হই।


        আমার বন্ধুয়া বিহনে

        জবাব দিন
        • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

          মানছি তোমার কথা।

          কিন্তু যে পরিবর্তন অযৌক্তিক, তাকে ত্যাগ করা বাঞ্জনীয়। কারন তা না করলে সেই পরিবর্তন নতুন পরিবর্তন কে ডেকে আনবে এবং পরিনতিতে একসময় ধ্বংস অনিবার্য।

          আমি আলাদা থাকতে বলছি না, আমি বলছি, অপ্রয়োজনীয় জিনিসের উৎপাদন বন্ধ করে দিতে। কৃত্রিম চাহিদা এবং কৃত্রিম সংকটের বেড়াজাল ভাংতে বলছি। ইনফ্যাক্ট, এটা ভাংবেই, অন্য কেউ কিছু করতে না পারলে, যে নিজেই নিজেকে ধ্বংস করবে।

          এই পরিবর্তন উন্নত বিশ্ব করতে পারবে না, করতে পারবে তৃতীয় বিশ্ব। উন্নত বিশ্ব চাইবে সবাই তার মত চলুক, এটা ভুল ধারনা, কারন তাদের জীবন ভুল ভাবে চলছে।


          পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

          জবাব দিন
          • রাব্বী (৯২-৯৮)

            ভাল বলেছেন ফয়েজ ভাই। আমিও চাই অর্থনীতির এবং বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন হোক। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টাটা কে এবং কিভাবে পরাবে সেটা ভাববার একটা বিষয়। গরীব মানুষ নিয়ে উন্নত বিশ্ব নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে এবং তাকে দমিয়ে রাখতে চায়। উন্নত বিশ্বের চালিকা শক্তি নব্য উদারবাদী অর্থনীতির পরিবর্তন প্রয়োজন, কারণ এর মূল প্রতিপাদ্য তালগাছ আমার।


            আমার বন্ধুয়া বিহনে

            জবাব দিন
      • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

        ফয়েজ ভাই,
        দুর্দান্ত বলেছেন। :boss: :boss:
        একচোখা নিও-লিবারেল (মুক্তবাজার) অর্থনীতির গুষ্টি কিলাই। :chup: 😡


        There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

        জবাব দিন
  6. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
    কাল রাতে সহজ কথায় জি-৮ বলতে যা শিখলাম তা হলো দাপটশালী পাঁচ গ্রামের মোড়ল মাতব্বর ফড়িয়াদের সমাবেশ যেখানে আলোচনা হয় কোন চাষাটা বেয়াড়া গোছের, কার বাড়ীর গরু বাছুর বিয়ালো, কোন বাড়ির মেয়েটা উঠতি, কোন নাড়ের বউ দেখতে সুন্দরী, কার বাড়ীর উঠোনে তরিতরকারী ফলিয়েছে, কার সাথে কার লাফড়া চলছে আর তাতে মোড়ল মাতব্বরদের কি স্বার্থ এসব আরকি।

    - পরিচিত উপমা দিয়ে পলিটিক্যাল ইকোনোমি'র সারাংশটা বেশ ভালো ভাবেই তুলে ধরেছো :clap: ।

    পাঁচতারা।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাব্বী (১৯৯২-৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।