জমজমাট সিসিবি আড্ডা

রিকশায় করে কাইয়ূম ভাই আর আমি যখন এবিসি অফিসের নিচে গেলাম ঘড়ির কাটা তখন সাড়ে চারটা ছুই ছুই। আমাদের আগেই দেখি একটা নতুন জামাইয়ের মতো পাঞ্জাবি পরে জিহাদ আর খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি নিয়ে মুহাম্মদ দাঁড়িয়ে গল্প করছে এডজ্যুট্যান্ট ইউসুফ ভাইয়ের সাথে। পিছনের রিকশায় ছিলো ব্লগের আসল জামাই মাস্ফু আর রেজোয়ান। ওরা এসে পৌছানোর পর ওখানে দাঁড়িয়েই গল্প শুরু হয়ে গেলো। ইউসুফ ভাইকে লাইটার দিয়ে একটা বেনসন ধরিয়ে দিলাম, আর চামে আমিও ইউসুফ ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে ফট করে একটা বেনসন লাইটস ধরিয়ে ফেললাম (এডজ্যুট্যান্টের পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানার মজাই আলাদা ;;; )। আয়েশ করে সিগারেট সিগারেট টেনে টেনে সেখানেই আড্ডাটা জমিয়ে দিচ্ছিলাম এমন সময় লাবলু ভাইয়ের ফোন –
-কি কামরুল তোমরা কোথায়?
-এইতো ভাইয়া আপনার অফিসের নিচেই আছি
এবার লাবলু ভাই ঝাড়ি দিলেন
-ওপরে না এসে নিচে দাঁড়িয়ে আছো কেন? কটা বাজে দেখেছো ? 😡
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সাড়ে চারটা পার হয়েছে অনেক আগে। ‘এইতো আসছি ভাইয়া’ বলে ফোন রেখে ইউসুফ ভাইকে বললাম , ‘বস, চলেন, লাবলু ভাই মনে হয় খেপছে…।’
শুনে আমার আগেই ইউসুফ ভাই ওপরে উঠার জন্যে দৌড় দিলেন, পিছন পিছন আমরা সবাই।

আরেক রিকশায় ছিলো সামিয়া আর রায়হান। পান্থপথ থেকে আমরা সবাই একসাথে রিকশা নিয়েছিলাম কারওয়ান বাজার এবিসি’র অফিস পর্যন্ত। ওরাও চলে আসলো প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই।

এবিসির কনফারেন্স রুমে একেবারে টেবিল লিডারের আসনে বসে আছেন লাবলু ভাই। ওবায়দুল্লাহ ভাই, সামীউরসহ আরো অনেকে দেখি আমাদের আগেই চলে এসেছেন। ফটাফট হাই-হ্যালো বিনিময় হয়ে গেলো তারপর চেয়ার টেনে যে যার মতো বসে পড়লাম আর শুরু হলো গল্পবাজি। তানভীর , রবিন আর নিহাদ ভাই এলেন একটু পরেই , ওদের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এলো জুনায়েদ আর জুলহাস ভাই তার বিখ্যাত পিচ্চিটাকে সঙ্গে নিয়ে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই এবিসির কনফারেন্স রুম ক্যাডেটে ক্যাডেটে সয়লাব হয়ে গেলো। সায়েদ ভাই আসার সাথে সাথে ‘টুশকি’ ‘টুশকি’ বলে চিৎকার শুরু হলো, রহমান ভাই আসলেন বিশাল এক কেক নিয়ে, তুহিন, নাজমুল, সাজিদ, রাশেদ, শার্লী , আহসান, আকাশ সব মিলে রীতিমতো চিৎকার চেঁচামেচি। এক কোনা থেকে জুনা প্রস্তাব তুললো যেহেতু আমাদের মাস্ফু এখন এক এক্স ক্যাডেটের মেয়ে জামাই হতে যাচ্ছে সেহেতু এখন থেকে তাকে ‘জাস্ট-জামাই’ বলেই ডাকা হউক। আরেক কোনা থেকে পিরা রবিন বললো – ‘ঐ’ এবং সঙ্গে সঙ্গে আর চার-পাঁচ জন বললো -‘সহমত’ :thumbup: । প্রস্তাব পাস হয়ে গেলো।

লাবলু ভাই প্রস্তাব দিলেন ছোট ছোট দল করে আমরা এবিসি’র পুরো স্টেশন্টা ঘুরে দেখবো কিনা, সঙ্গে সঙ্গে সবাই একবাক্যে রাজি। প্রথম দল নিয়ে লাবলু ভাই কনফারেন্স রুম থেকে বের হলেন আর ইউসুফ ভাই ও ওবায়দুল্লাহ ভাইকে নিয়ে আমি সিড়িতে নেমে আসলাম আরেকদফা সিগারেট টানতে (এবিসির ভিতরটা নন-স্মোকিং জোন, সিগারেট টানতে তাই কয়েকবার নিচে নামতে হয়েছিলো)।

ফিরে এসে দেখি সবার মধ্যমনি হয়ে বসে আছেন শওকত মাসুম ভাই। চুল কেটে ন্যাড়া হয়ে আছি, তাই মাসুম ভাই প্রথম দেখায় আমাকে চিনতেই পারলেন না। একেবারে কাছে গিয়ে বলতে হলো , ‘ভাইয়া আমি কামরুল।’ মুচকি হেসে বললেন ‘চুলটা ফেলে দিয়েছো তো, তাই…………।’ 😛

পরের দলটার সাথে আমি গেলাম এবিসির স্টেশন ঘুরে দেখতে। লাবলু ভাই চমৎকার ভাবে ব্রিফ করছিলেন তিল তিল করে গড়ে তোলা তার রেডিও স্টেশনের নানান টুকিটাকি কথা। ভবিষ্যতে লাইভ কনসার্ট করার জন্যে এবিসিতে একটা স্পেস রেখেছেন লাবলু ভাই, সেখানে লাখ চারেক দামের একটা জিপিএস ঘড়ি লাগানো। সায়েদ ভাই এরকম একটা ঘড়ি কেনার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন। আমরা যারা মিশন থেকে আসিনাই তারা এইবার আর ‘সহমত’ প্রকাশ করতে পারলাম না। এ-রুম থেকে ওই রুম ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম এমন সময় এবিসির রোমা আপু (মগকক, ৮৭-৯৩) লাবলু ভাইকে মনে করিয়ে দিলেন- ‘লাবলু ভাই, আর দেরি করলে আইস্ক্রীমটা গলে যাবে..।’ এইবার সবাই কনফারেন্স রুমের দিকে দৌড় দিলো।

আইসক্রীম আনা হয়েছিল বিশেষ করে সামিয়ার আবদারে। ও খেয়েছেও একেবারে হাত ডুবিয়ে, জামাকাপড় ভরিয়ে :-B । সবাইকে আইস্ক্রীম আর কেক ভাগ করে দেয়ার দায়িত্ব ছিলোও ওর। আমি একফাঁকে ওকে ‘ ডাকু ফুলন দেবী’ বলেছিলাম বলেই কিনা আমাকে মাত্র একবার দিয়ে আর দেয়নি 🙁 । পাশে বসা কাইয়ূম ভাইকে দেখলাম একের পর এক সাবাড় করেই যাচ্ছে 😉 । লাবলু ভাইয়ের আয়োজন এলাহী রকমের ছিলো। পাটিসাপ্টা আর নকশা পিঠা (আসলে আমি এটার নাম ভালোমতো জানি না, দেখতে নকশা করা বলে নাম দিয়ে দিলাম ‘নকশা পিঠা’ ~x( ), আইস্ক্রীম (এটার যা স্বাদ ছিলোনা মাইরি), কেক , কোক।

খাওয়া দাওয়ার পর সিসিবির বর্তমান-ভবিষ্যত নিয়ে গুরুত্বপুর্ণ আলোচনা শুরু হলো। প্রধান বক্তা জুলহাস ভাই । উনার সঙ্গে গুরুত্বপুর্ন আলোচনায় যোগদিলেন লাবলু ভাই, মাসুম ভাই, ওবায়দুল্লাহ ভাই আর ইউসুফ ভাই। সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্বান্ত হলো সবার আগে সিসিবির সদস্যদের একটা তথ্যবহুল ডাটাবেইজ করা হবে। এইফাকে এডজ্যুট্যান্ট ইউসুফ ভাই এডু-মডুদের ঝাড়ি দিলেন এতোদিন পরেও সিসিবি’র ই-বুক বের হচ্ছে না কেন? উনি নাকি নইলে গনহারে সবাইকে রগড়াবেন 😮 । ঝাড়ি খেয়ে মডুরা তৎক্ষনাৎ সেখানে ঘোষনা দিতে বাধ্য হলেন যে আজকে রাতেই সিসিবি’র ই-বুক অন-এয়ার হবে।

প্রায় ঘন্টা তিনেক জমজমাট আড্ডার পর বাধ্য হয়ে উঠতে হলো। বরাবরের মতো এবারো অনেক ইচ্ছে ছিলো জমানো আড্ডা নিয়ে একটা বেশ জম্পেশ পোস্ট দিবো। কিন্তু এখন দেখলাম ক্লান্তি আর আলসেমিতে ফাঁকি মারা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তাই এই ফাঁকিবাজি পোস্ট। আর আমি কেন জানি আড্ডার কথা মজা করে লিখতেও পারি না। অবশ্য লিখেও খুব বেশি লাভ হতো না। কিছু কিছু আনন্দ ঠিক লিখে বুঝানো যায় না। সব কিছু মিলিয়ে এতো দারুন একটা সময় কেঁটেছে যা অনেক অনেক দিন মনে থাকবে।

আমার কাছে কোন ছবি নেই। যারা ছবি তুলেছেন মন্তব্যে ছবিগুলি দিয়ে দিতে পারেন, বাকি সবার জন্যে।
যারা মিস করেছেন – এটাই শেষ নয়, আমরা আবারো আড্ডা দেবো।

সবশেষে সবার পক্ষ থেকে লাবলু ভাইকে ধন্যবাদ, শত ব্যাস্ততার মধ্যেও আমাদের জন্যে এ বিশাল আয়োজনের কষ্ট সহ্য করার জন্যে।

স্যালুট টু ইউ, লাবলু ভাই। :salute:

৩,৯১৬ বার দেখা হয়েছে

৯৩ টি মন্তব্য : “জমজমাট সিসিবি আড্ডা”

  1. রকিব (০১-০৭)
    লাবলু ভাইয়ের আয়োজন এলাহী রকমের ছিলো। পাটিসাপ্টা আর নকশা পিঠা (আসলে আমি এটার নাম ভালোমতো জানি না, দেখতে নকশা করা বলে নাম দিয়ে দিলাম ‘নকশা পিঠা’ ), আইস্ক্রীম (এটার যা স্বাদ ছিলোনা মাইরি), কেক , কোক।

    😕 😕

    যারা মিস করেছেন - এটাই শেষ নয়, আমরা আবারো আড্ডা দেবো।

    😀 😀

    সিসিবি রকস, লাবলু ভাই রকস!!!!!! :grr: :clap:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)

    সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি যে আপনারা এটা সফল করলেন। যদিও আমি যোগ দিতে পারিনি তারপরও সানাউল্লাহ ভাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই মহান কর্মকান্ডের উদ্যোক্তা যিনি। এবং ধন্যবাদ তাদেরকেও যারা কষ্ট করে যোগ দিয়েছেন এবং এটা সফল করতে সহায়তা করেছেন। সাইবার জগতের বাইরে এমন সত্যিকার সম্মিলন আমাদের শক্তি অনেক অনেক বাড়িয়ে দিবে বলেই আমার বিশ্বাস। সিসিবি চিরজীবি হোক।

    জবাব দিন
  3. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    "যেহেতু আমাদের মাস্ফু এখন এক এক্স ক্যাডেটের মেয়ে জামাই হতে যাচ্ছে সেহেতু এখন থেকে তাকে ‘জাস্ট-জামাই’ বলেই ডাকা হউক"-এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করছি x-( x-( x-(

    জবাব দিন
  4. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    "যেহেতু আমাদের মাস্ফু এখন এক এক্স ক্যাডেটের মেয়ে জামাই হতে যাচ্ছে সেহেতু এখন থেকে তাকে ‘জাস্ট-জামাই’ বলেই ডাকা হউক"-এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করছি x-( x-( x-(

    জবাব দিন
  5. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    "যেহেতু আমাদের মাস্ফু এখন এক এক্স ক্যাডেটের মেয়ে জামাই হতে যাচ্ছে সেহেতু এখন থেকে তাকে ‘জাস্ট-জামাই’ বলেই ডাকা হউক"-এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করছি x-( x-( x-(

    জবাব দিন
  6. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    সিসিবি আড্ডায় সশরীরে এবং ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণকারী সবাইকে ধন্যবাদ। আড্ডাটা আরো হতে পারতো। কিন্তু কি করবো বলো, অফিসের কাজ ছিল। তাই সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে একরকম তাড়িয়ে দিয়েছি সবাইকে। নিশ্চয়ই তাতে কেউ কিছু মনে করোনি। :no: :no: :no:

    তবে এতোজনের অংশগ্রহণ সত্যি আমাকে অভিভূত করেছে। একটা ভার্চ্যুয়াল জগত আমাদের কি দারুণ বন্ধনে আবদ্ধ করেছে! এটা আমরা সবাই মিলে ধরে রাখবো। :hug:

    আগামীতে একটা পুরো দিনের আয়োজন করতে হবে। যতোরকম বাঁদরামি সম্ভব সব তখন করা যাবে! :guitar:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  7. মরতুজা (৯১-৯৭)

    এক পিস পিকনিক করা যাইতে পারে। মাগার অহন না, শীতটা আইলে অইবার পারে 🙂 । সামনের বছর দেশে আহনের সম্ভাবিলিটি আছে। আহারে, যদি এই রকম কিছু একটা সারা দিনের প্রোগ্রাম করা যায় ...

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আদনান (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।