কোথায় পাবো তাদের-শেষ পর্ব

অঙ্কে আমি কোন কালেই ভালো ছিলাম না। ভালো যে ছিলাম না সেটার প্রমানও দিচ্ছিলাম নিয়মিত। পাক্ষিক পরীক্ষায় কোনদিন পাস করিনি। মেট্রিকের আগে টেস্টে পেলাম ৪১। কোনমতে পাশ। রেজাল্ট দেখে প্রিন্সিপাল সোহরাব আলী তালুকদার বলেছিলেন – খবরদার তুমি আমার সামনে আসবা না আজকে থেকে। তোমার চেহারা দেখলে আমার লজ্জা লাগে।  কিন্তু সেই আমি যে এস.এস.সি তে অঙ্কে ৯৮ পেয়ে গেলাম সেটা আমার স্যারদের বাড়তি যত্ন আর নজরদারির ফলেই।
সুরেশ রঞ্জন স্যার যেদিন প্রথম আমাদের কলেজে আসলেন সেদিন আমার তখনকার কলেজ প্রিফেক্টের সাথে হাতাহাতি হয়েছে একচোট। স্যার এসেই শুনেন ক্লাস নাইনের একটা ছেলে কলেজ প্রিফেক্টের সাথে মারামারি করেছে। সবাই বলাবলি করছে -খুব বেয়াদব ছেলে। এমন অবস্থায় যে নতুন এসেছে সেও বাকি সবার মতই ভাববে। ক্লাস নাইনের ওই ছেলে সম্পর্কে তার ইম্প্রেসনও অন্যদের মতোই খারাপ হবে এটাই স্বাভাবিক। বসাক স্যারের তা হলোনা। স্যার আমাদের ক্লাস নিতে এসে শুরুতেই জিজ্ঞেস করলেন
-কামরুল কে? দাঁড়াও দেখি। আমি দাড়ালাম।
-ইদানিং তোমার নাম ডাকসাইটে খুব শোনা যাচ্ছে, তুমি তো দেখি বেশ বিখ্যাত ক্যাডেট।

আমি কোন কথা বলি না।  স্যার বলতে থাকলেন
-আচ্ছা সত্যি করে বলো তো, তোমার নিজের কাছে কি মনে হয়? সবাই যা বলছে সেটা কি ঠিক? তুমি কি দোষী?
সেদিন আমি সত্যিই সত্যি করে বললাম
-ঠিক না স্যার। আমি দোষী না।

স্যার আর সবাইকে বাদ দিয়ে আমাকে বিশ্বাস করলেন। আমার ডেস্কের কাছে এসে বললেন- নিজের কাছে সৎ থাকাটাই আসল। অন্যেরা কে কি মনে করলো, বললো সেটা নিয়ে ভেবো না।
ওই টুকু ছেলের জন্যে এই কথাটা অনেক। তারপর থেকে, কে কি মনে করলো আমি সত্যিই ভাবিনি। হাউজ মাস্টার, ভাইস প্রিন্সিপাল, প্রিন্সিপাল সবার সামনে আমি জোর গলায় বলেছি -স্যার আমি কোন দোষ করিনি। বসাক স্যার আমাকে সৎ থাকার সেই সাহস এনে দিয়েছিলেন। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত আমি স্যারের কথা মেনে চলেছি।

‘কোথায় পাবো তাদের’ সিরিজটা আসলে আমি শুরু করেছিলাম আমার সেই স্যারদের শ্রদ্বা জানাতে। আমার সেই স্যারদের কথা আমি লিখতে চেয়েছিলাম মজা করে। বলতে চেয়েছিলাম সব কিছুর পরও তাদের নিয়েই আমাদের দিবা-রাত্রির কাব্য, তাদের নিয়েই কেটেছে আমাদের এইসব দিন রাত্রি। অনেক খুজেও তাদের মতো কাউকে পাইনি বলেই সিরিজের নাম- কোথায় পাবো তাদের।
লেখার মধ্যে মাঝে মাঝে হয়তো কিছু সীমা লঙ্ঘন হয়েছে। কিন্তু সেটা শুধু আনন্দ ভাগ করার জন্যই। অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিলো না মোটেও। একটা কথা আমি সব সময় বলি। শিক্ষকরা সর্বদাই ক্ষমাশীল এবং সর্বাবস্থায় শ্রদ্ধেয়। আশা করি এখানেও।

ব্যর্থ কি সফল সেটা বাকি সবাই বলবে। আপাতত এই সিরিজটা এখানেই শেষ হোক। অনেক গল্প হয়তো বলা হয়নি, তাতে কি। ক্যাডেট কলেজের গল্প কোনদিন বলে শেষ করা যায় না। যাবে না।

পুনশ্চঃ
১. এতোদিন ধরে যারা কষ্ট করে নিয়মিত সিরিজটি পড়েছেন আর মন্তব্য করেছেন ভালো-মন্দ জানিয়ে তাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
২. শহীদুল জহির আমার খুব প্রিয় সাহিত্যিক। তার একটি গল্পের নামের আঙ্গিকে এই সিরিজটির নাম রাখার লোভ সামলাতে পারিনি। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

৩,৯৩৬ বার দেখা হয়েছে

৩৫ টি মন্তব্য : “কোথায় পাবো তাদের-শেষ পর্ব”

  1. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    শেষ পর্ব মানে???? কামরুল কয় কি???
    ওরে কালকে আফটার লান্চ রিমান্ডে নেওন লাগবো।
    নতুন সিরিজের বন্ড লেখায়া তারপর ছাড়া-ছাড়ি।


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  2. সিরাজ (৯৪-০০)

    না মানি না মানবো না..।.।।.।।...কেম বস আমি আনশন করমু.........।তাতেও না হইলে একনি দেশে আইসা বাংলা মটরে রাস্তার মাঝে তোরে পাঙ্গামু........।...।please আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে তুই আবার এই সিরিজ শুরু কর...।।খাইছি তোরে...।খবর আছে...।ছারুম না শয়তান...।।

    জবাব দিন
  3. সিরাজ (৯৪-০০)

    আমরা যারা এখন bd থেকে দুরে আছি আসেন নেটে বসেই কামরুল এর বাসার দিকে পচা ডিম ( না থাকলে যার হাতের কাছে যা আছে তাই ছুড়ে মারি) ...mashruf ভাই ওর বাসার ঠিকানা টা দেও তো......।দেখি কি করন যায়......।।

    জবাব দিন
  4. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    কামরুল,
    বাকিদের কথা জানিনা, তবে তোমার লেখাটা আমার হৃদয় ছুয়ে গেছে। অত্যন্ত সুন্দর লিখেছো।
    প্লিজ এভাবে সিরিজটি শেষ করোনা...।
    ভালো লেখা পড়তে মনে অন্যরকম আনন্দ অনুভূত হয়। আশা করি আমাদেরকে বঞ্চিত করবেনা।
    ভালো থেকো ভাইয়া।

    জবাব দিন
  5. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    আমি ঠিক করছি কামরুল ভাইএর লগে কথা কমু না...
    ওনার লেখা অন্য কোন পোস্ট পইড়া যতই ভাল লাগুক কোন স্মাইলি দিমু না, কমেন্ট তো দূরের কথা... x-(


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  6. @ ফৌজিয়ান ভাই, আহসান ভাই, সায়েদ ভাই, রবিন, সিরাজ, সাব্বির, জিহাদ, মাসরুফ, আদনান , মুহাম্মদ, জুনায়েদ

    এক সময়তো শেষ করতেই হতো। একটু আগে করে ফেললাম এই আর কি। আমার ইচ্ছে ছিলো বোরিং হয়ে যাওয়ার আগেই সিরিজ টা শেষ করে দেয়া। শেষ কয়টা পর্ব আমার নিজের কাছেই একটু কম ভালো লেগেছে। তাই আর না বাড়ানোর সিদ্বান্ত নিলাম।

    কিন্তু সবার ভালোবাসা দেখে আমি মুগ্ধ। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি নতুন কোন সিরিজ নিয়ে হাজির হবো।

    ফৌজিয়ান ভাই,সিরাজ,মাসরুফ,জুনায়েদ কে তাদের নিজ নিজ আল্টিমেটাম থেকে সরে আসার অনুরোধ জানাই। নইলে কিন্তু আমার পালাবার কোন জায়গা নেই।

    জবাব দিন
  7. তারেক (৯৪ - ০০)

    বসাক স্যার ক্লাশে এলেই জর্দা পানের সুন্দর একটা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ত, খুব পছন্দ ছিলো ওটা। স্যারও খুব প্রিয় ছিলেন আমাদের।
    *
    সিরিজ শেষ করিস না দোস্ত। :((


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন
  8. সামিয়া (৯৯-০৫)

    ও বুজছি, এইটা হলো আপনার ভাব বাড়ানোর পোস্ট... x-(
    ভাইয়া আজকে একটা কথা বলি, :shy: আপনার বেশির ভাগ পোস্ট আমাকে বহুত সতর্কতা নিয়ে পড়তে হয়... :shy: আমি একটু নাদান বাচ্চা আসি, সবকিছু সহ্য হয় না :shy: :shy:
    তার পরেও যেই কয়টা পড়তে পারসি...অসাধারণ, (ভাব নিয়েন না বললাম x-( ) পড়সি না বলে গিলসি বললে ঠিক হবে...ভাইয়া আপনি এটার চেয়েও ভালো কোন সিরিজ শুরু করবেন, এইটাই আপনার কাছে চাওয়া।

    জবাব দিন
    • সামিয়া
      এতো সুন্দর করে সত্যি কথাটা বলার জন্য ধন্যবাদ।
      ভাব বাড়াচ্ছি নারে আপু। আমার নিজের কাছেই এই সিরিজটা আর লম্বা করতে ইচ্ছা করছিলো না। বোর লাগছিলো।তবে নতুন কিছু শুরু করার চেষ্টা করবো তো অবশ্যই। ভালো থেকো।

      আমি একটু নাদান বাচ্চা আসি, সবকিছু সহ্য হয় না

      পরক্ষোভাবে আমাকে(অথবা বাকিদের) বুইড়া বলার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কামরুল হাসান

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।