রমণীয় রসিকতা

খুব খিয়াল কইরা দেখলাম মেয়েরা আমারে দেখলে সব সময় হাসে। প্রথম প্রথম খুব লজ্জা লাগতো, ভাবতাম, শালার ওদের কি দোষ! আমার চেহারা-সুরৎ, টার্ন-আউটই এমন যে দেখলে কোন মেয়েই হাসি সংবরণ করতে পারে না। অবশ্য সবাই যে এক্কেরে হো হো কইরা হাসে এমন না। অনেকেই খুব রুচিশীলা এবং সংযমী। তারা ঠোট টিপ্পা চোখের কোনে হাসে আবার কেউবা শাড়ির আঁচল অথবা ওড়না দিয়া হাসি গোপন করার চেষ্টা করে।

অবশেষে ক্যামনে ক্যামনে জানি বুইঝা ফেললাম, এরা আসলে শুধু আমারে দেইখা না, সবাইরে দেইখাই এই রকম হাসে। বেশ কিছুদিন আগে একটা বেগুনি শার্ট পইরা এক বন্ধুর বিবাহ-বার্ষিকী’র দাওয়াতে গেলাম, উপস্থিত সব ভাবিরা আমারে নিয়া ব্যাপক হাসাহাসি করলো। বুঝতে পারলাম আমার রুচি নিয়া সন্দেহ করতেছে। তার কয়দিন পর সাদা শার্ট পইড়া আরেক দাওয়াতে গেলাম, এইবার তাঁরা বেগুনি শার্ট পইরা আসিনাই বইলা হাসাহাসি শুরু করলেন। আমি তখন নিশ্চিত হইলাম শুধু আমার সাথেই না তারা সবার সাথেই এমন করে। ওদের হাসতে আসলে কোন কারণ লাগে না।

আমার দোস্ত রুম্মান এই ব্যপারে আমার চেয়েও বেশি প্রতিক্রিয়াশীল। ওর ধারণা মেয়েরা খামাখা হাসে কারণ তাদের মাথায় ঘিলু নাই, পাঙ্গাস মাছের মাথায় যেই পরিমান ঘিলু থাকে একটা মেয়ের মাথায় সেই পরিমান ঘিলুও নাই। আমরা সাধারনত পাঙ্গাস মাছ খাই না, কিন্তু রুম্মানের কথা সত্য-মিথ্যা যাচাই করার জন্য একবার বাজার থেইকা বড় একটা পাঙ্গাস মাছ আনা হইলো। মাথা কাটার পর তার ভিতরে দুই আঙ্গুলের এক চিমটি ঘিলু খুইঁজা পাইতে আমার খুব কষ্ট হইলো। এবং তখন মনে হইলো এর চেয়ে কম ঘিলু কোন মানুষের মাথায় থাকতে পারে, এইটা রুম্মান একটু বেশি বইলা ফালাইছে।

অবশ্য সব ব্যাপারেই রুম্মানের এই রকম নিজস্ব থিওরি আছে। যেমন ও মেয়েদের ভাইটাল স্ট্যাটিক্টিস মাপে চার অঙ্কে, ৬০-৩৬-২৪-৩৬ এইভাবে। শেষের তিনটা তো কোনটা কী জানি, কিন্তু প্রথমটা কী জিজ্ঞেস করলে ও বলে ওইটা মেয়েদের মাথার সাইজ ! অবশ্য আমার নিজের ধারণা মেয়েরা নিজেরাও জানেনা তারা কি জন্যে হাসে। তবে স্বয়ং রবি ঠাকুর মেয়েদের হাসাহাসি নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন। ‘পঞ্চভুত’ রচনার এক জায়গায় তিনি বলেছেন, ‘পুরুষ জাতিকে পক্ষপাতী বিধাতা বিনা কৌতুকে হাসিবার ক্ষমতা দেন নাই, কিন্তু মেয়েরা হাসে কী জন্য তাহা দেবা ন জানন্তি কুতো মনুষ্য………।’ মেয়েরা কী জন্যে হাসে তা স্বয়ং দেবতারাই জানেন না আমরা তুচ্ছ পুরুষ মানুষরা কিভাবে জানবো !

যাই হোক, হাসাহাসির কথা বাদ দিয়া এইবার একটু ঝগড়া-ঝাটির কথায় আসি। মেয়েদের ঝগড়া করতে কারন লাগে কিনা তা আমার চেয়ে বিবাহিত ভাইজানেরা ভাল বলতে পারবেন তবে স্বামী-স্ত্রী সংক্রান্ত গল্পগুলি পড়ে আর বিবাহিত বন্ধু-বান্ধবদের দেখে একটা ব্যপার নিশ্চিত হইছি, মেয়েদের রণমূর্তি খুব ভয়ংকর। ঝগড়া-ঝাটির সময় নাকি সবসময় শেষকথা মেয়েরাই বলে। মহাকবি গ্যাটে আফসোস করে বলেছেন, ‘মহিলারা শেষ কথা বলবেন তাতে আমার আপত্তি নাই, কিন্তু শেষ দশহাজার কথা ওরা বলবেন এটা আমি মানতে পারি না।’ অবশ্য আমার এক দোস্ত এই কথার সাথে তীব্র দ্বিমত কইরা বলছিলো ‘তোরা বিশ্বাস কর আর না কর, আমার বাসায় ঝগড়া-ঝাটির সময় শেষকথা সবসময় আমিই বলি।’
বিশেষ জোরাজুরির পর অবশ্য সে স্বীকার করলো তার শেষকথাটি হচ্ছে, ‘ঠিক আছে, বুঝতে পেরেছি।’

ঝগড়া-ঝাটির কথা যেহেতু আসলো, সেই গল্পটা বলি। কোন এক অফিসে, যেমন হয়ে থাকে আর কি, এক সহকর্মী আর এক সহকর্মিনীর মধ্যে তুমুল ঝগড়া, বাদানুবাদ। কী নিয়ে ঝগড়া সেটা অবশ্য জানা যায়নি। তবে সেই ঝগড়ার সবশেষে শোনা গেল ভদ্রমহিলা উচ্চকন্ঠে তার সহকর্মীকে বলছেন, ‘আমি যদি আপনার স্ত্রী হতাম, আমি আপনার খাবারে বিষ মিশিয়ে দিতাম।’ এরকম ভয় দেখানোর পরও ভদ্রলোক বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে বললেন, ‘আমি যদি আপনার স্বামী হতাম, আমি সেই বিষ খেতাম।’

ভয়াবহ গ্যাঞ্জামের কথা। তোমার মতো স্ত্রীর স্বামী হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে বিষ খেয়ে মরে যাওয়া ভালো। চিন্তা করে দেখলাম, গোলমাল হ্যায় ভাই, গোলমাল হ্যায়। তবে এরচেয়েও গোলমালের গল্প হচ্ছে জন ড্রাইডেন নামে এক ইংরেজ কবি’র, মোটামোটি ভয়াবহ। ড্রাইডেন তার কবিতায় বউয়ের কবরের জন্যে সম্ভাব্য এপিটাফ লিখেছিলেন এইভাবে-
এইখানে শায়িত আমার স্ত্রী, থাকুন তিনি শান্তিতে
আর আমিও থাকি, আমিও থাকি শান্তিতে।

বুঝা গেল না? ঠিক আছে এই দেশি গল্পটা শুনেন। ক্লান্ত অসুস্থ এক স্বামী ডাক্তারের কাছে যাবার পর ডাক্তার যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বললেন, ‘আপনার এখন বেশ কিছুদিনের জন্যে পুরোপুরি বিশ্রাম প্রয়োজন।’ এবং তারপর কড়া ডোজের ঘুমের ঔষধ দিয়ে ভদ্রলোকের স্ত্রীকে সেটা নিয়মিত খেতে বললেন।

সত্যিই তো, স্ত্রীরা না ঘুমালে স্বামীদের বিশ্রাম হবেই বা কী করে !

সুতরাং বিয়া করার আগে খুব খিয়াল কইরা…….।

(ডিসক্লেইমারঃ
তাবৎ জাহানের নারীদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা পূর্বক, এটা নিছকই ব্যর্থ রম্য প্রচেষ্টা। )

১৫,০৪৩ বার দেখা হয়েছে

১৫৪ টি মন্তব্য : “রমণীয় রসিকতা”

  1. তাইফুর (৯২-৯৮)

    কেম ... তোর বিয়ে হওয়ার সম্ভাবিলিটি আরও দুই বছর পিছাইল ...
    (প্রথম দিকে খুব ভাল লাগলেও ... শেষের দিকে ইট্টু ঝুইলা গেছে ... তারপরও তোর লেখা মানে তোর লেখা ... ৪ দাগায়া গেলাম)


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    কি বলেন কাইয়ূম ভাই? (ক.র....) ;)) ;)) ;))

    লেখা ফাটাফাটি হইছে :hatsoff: :hatsoff:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. তানভীর (৯৪-০০)

    প্রথম দিকে খুব মজা পাচ্ছিলাম, কিন্তু লেখাটা শেষের দিকে এসে একটু কেমন যেন আবেদন হারায়ে ফেলছে। ৩.৭৫ রেটিং দেয়ার উপায় থাকলে তাই দিতাম।
    মামা, আর কত দেরী করবি। কাইয়ূম ভাইরে দিয়া তো আর হবে না।
    কি বলেন কাইয়ূম ভাই? :grr: :grr:

    জবাব দিন
  4. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    বিয়ার বয়স হইলে ছেলেরা নাকি বাপ-মারে কোলবালিস বানাইতে কয়, সিঙ্গল খাট ডাবল করতে কয়.....................আর কাম্রুল রমণীয় রসিকতা নামে পোস্ট দেয় 😀


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  5. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)
    সত্যিই তো, স্ত্রীরা না ঘুমালে স্বামীদের বিশ্রাম হবেই বা কী করে!

    অবশেষে কামরুলের উপলব্ধি! যা বিশ্রাম নেওয়ার অহনই নিয়া নেও!

    অফটপিক : আমি বাসায় ফেরার আগেই আমার বউ ঘুমাইয়া পড়ে!! আমিও শান্তিতে বিশ্রাম নিই!! ;;; ;;; ;;;


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  6. রকিব (০১-০৭)
    আমার দোস্ত রুম্মান এই ব্যপারে আমার চেয়েও বেশি প্রতিক্রিয়াশীল।

    কিছু হইলেই রুম্মান ভাইয়ের ঘাড়ে চাপায় দেন ক্যান!!!!! 😛 😛
    অনটপিকঃ আমারে দেখলেও নারীজাতি কেমনে জানি মুখ টিপা হাসে। কালে কালে তো বিকেল হয়ে গেলো, তিন প্রহরের বিল আর খুইজা পাওয়া হলো না।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  7. শোভন (২০০২-২০০৮)
    খুব খিয়াল কইরা দেখলাম মেয়েরা আমারে দেখলে সব সময় হাসে।

    এইবার বুঝতে পারছি প্রোফাইল পিকচারে ক্যান নিজের ছবি দেন নাই । এইডা দেইখা যদি কোন
    ব্লগ পড়া মেয়ে হাসে এইজন্য । ভাই ঠিক বলছি না । :)) :)) :))

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : বিশ্বপ্রেমিক লেজেহোমো এর্ষাদ (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।