অনেক প্রতীক্ষার পর গত ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৬ তারিখে অবশেষে আমার আত্মজৈবনিক স্মৃতিকথা “জীবনের জার্নাল” বইটি ‘বইপত্র প্রকাশন’ এর স্টলে ( নং ১২৭-১২৮) আবির্ভূত হয়। ঐদিন সন্ধ্যের পর আমি বইমেলায় গিয়েছিলাম। বইটিকে স্টলে দেখতে পেয়ে মনটা প্রফুল্ল হয়ে উঠেছিলো। অনেকক্ষণ বসেছিলাম, দেখি অনেকেই এসে স্টলের অন্যান্য বই এর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ আমার বইটা হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা ওল্টাতে থাকে। আমি বেশ রোমাঞ্চিত বোধ করতে থাকি, এই বুঝি একটা বই বিক্রী হলো বলে! কিন্তু না, বেশীরভাগ লোকই কয়েকটা পৃষ্ঠা উল্টিয়ে পালটিয়ে বইটিকে আবার যথাস্থানে রেখে চলে যায়। সময় শেষ হবার মাত্র ঘন্টাখানেক আগে বইটি বাঁধাইখানা থেকে শুকানোর পর স্টলে আনা হয়েছিলো। আমি ভাবছিলাম, মাত্র এক ঘন্টা সময়ে বোধহয় বইটির কোন কপি আর প্রথম দিনে বিক্রী হবে না।
একটু পরে দেখছিলাম, দূর থেকে দুজন তরুণ স্টলের দিকে এগিয়ে আসছে। হাঁটার স্টাইল, বেশভূষা আর চেহারায় যে একটা স্মার্টনেস ছিলো, তা দেখে মনে হচ্ছিল যে তারা হয়তো কোন এক্স ক্যাডেট হবে। মনে মনে ভাবলাম, চুপ করে বসে না থেকে একবার একটা মার্কেটিং এর উদ্যোগ নিয়েই দেখি না, কেমন হয়! ছেলে দুটি কাছে এসে সবগুলো বই এর উপর চোখ বুলাতে থাকলো। আমারটার উপর যখন একজনের দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো দেখতে পেলাম, তখন আমি একটু এগিয়ে গিয়ে বল্লাম, এ বইটির লেখক আমি। এখানে আমার নিজের জীবনের কিছু কথা বলা শুরু করেছি। আমার স্কুল জীবন পর্যন্ত এখানে বলা হয়েছে। আমি ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ছিলাম, সেখানকার জীবন সম্বন্ধেই বেশীরভাগ কথা বলা হয়েছে। অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে বল্লাম, “আপনারা যদি ক্যাডেট কলেজে পড়ে থাকেন, তবে আপনারাও আপনাদের জীবনের কথা এখানে খুঁজে পাবেন”। সাথে সাথে বই হাতে নেয়া ছেলেটি আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কোন কলেজে ছিলেন?” আমার উত্তর শুনে সে স্মিত হাসি হেসে বললো, আমিও একই কলেজের ছাত্র। বাকী জনের কথা জিজ্ঞেস করাতে সে জানালো যে সেও এক্স ক্যাডেট, তবে রংপুর ক্যাডেট কলেজের, আগের জনের সাথে একই ব্যাচের। প্রথম ছেলেটি বইটা কেনার আদেশ দিলো, আর তার সাথে সাথে আলাপচারিতা আর সেলফোনের ক্যামেরা দিয়ে ফটো সেশন চলতে লাগলো। ততক্ষণে মেলা কর্তৃপক্ষ প্রধান বাতিগুলো নিভিয়ে দিয়েছে। সেলফোনের ফ্ল্যাশেই ছবি তোলা হলো। আমার ফোন দিয়েই বেশীরভাগ ছবি তোলা হলো, পরে ওরা ওগুলো ওদের ফোনে ট্রান্সফার করে নেয়।
রাতে বাসায় ফিরে দেখি, আমার বইটির ক্রেতা ফেইসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। তার একটু পরে দেখলাম, আমাদের ছবিটাও সে ইসিএফ এ পোস্ট দিয়েছে। তার কিছুদিন পরে ক্যাডেট কলেজ ব্লগে একটি মন্তব্যে তার আরেক ব্যাচমেট নাফিস আমাকে জানায় যে সে আর আমার এই বই এর প্রথম ক্রেতা তারিকুল ইসলাম সজীব একই কলেজের ব্যাচমেট।
বয়সের ব্যবধান পিতা পুত্রের ন্যায় হওয়া সত্ত্বেও আমরা নিমেষেই ভাই এবং বন্ধু বনে গেলাম। এক্স ক্যাডেটদের মাঝে এরকমই হবার কথা। জাস্ট ওয়ান ক্লিক এন্ড দ্য পেজ ওপেনস!
ঢাকা
১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
এমসিসি’র এক্স ক্যাডেট (৪২ তম ব্যাচ) তারিকুল ইসলাম সজীব এসেছিলেন ‘বইপত্র প্রকাশন’ এর স্টলে, আমার লেখা “জীবনের জার্নাল” কিনতে। লেখক (একই কলেজের ৫ম ব্যাচ) কর্তৃক নতুন প্রজন্মের কাছে স্মৃতি হস্তান্তর।
সজীবকে ধন্যবাদ।
বই কেনার ক্ষেত্রে প্রথম যে ধারণা কাজ করে তা হলো লেখক কে?
২য়ঃ বই টি কি বাজার পেয়েছে। মানে বন্ধু বান্ধব কি বইটির কথা বলছে।
৩য়ঃ বইটি পুরষ্কার পেয়েছে কিনা।
এছাড়া পাঠকরা (অধিকাংশ) প্রবন্ধ, কবিতা ও গল্প এড়িয়ে চলে।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, রাজীব।
এছাড়া পাঠকরা (অধিকাংশ) প্রবন্ধ, কবিতা ও গল্প এড়িয়ে চলে। -- এবারে মেলায় ঘুরে ঘুরে যা দেখলাম, তাতে মনে হয়েছে যে অধিকাংশ মানুষ প্রবন্ধ ও কবিতা এড়িয়ে চলে নিঃসন্দেহে, তবে গল্প, উপন্যাস বোধহয় ততটা নয়। গল্প, উপন্যাসের এখনো প্রচুর চাহিদা রয়েছে বাঙালী পাঠকের কাছে, এমনকি অখ্যাত লেখকদেরও।
ভাইয়া গল্প সংকলন এর বাজার নাই। উপন্যাসের আছে।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
গল্প সংকলনের বাজার অন্ততঃ কবিতার চেয়ে ভালো, রাজীব। আমার তাই মনে হয়েছে বইমেলা ঘুরে।
তাতো বটেই ভাইয়া।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
আমার পন্থা হলো বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে লেখক আর বইয়ের বিষয়বস্তু জানা। তারপর র্যান্ডম কয়েকটা পাতা উলটে ভেতরের লেখার স্টাইল ও বিষয়টা বুঝে আগ্রহের মাত্রা নিরূপণ করা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাজে লাগে। এটা বই আর ম্যুভি দুটোর ক্ষেত্রেই আমার জন্য বেশ কার্যকরী হয়। আর লেখক চেনা থাকলেও পন্থাটা একেবারে এড়িয়ে যাইনা।
তবে কিছু বই আবার পূর্ব নির্ধারিত হয়েও থাকে, যে, কিনবো।