প্রকৃত বন্ধুর ভাবনা

গত সপ্তাহ দুয়েক ধরে বেশ ক’জন পরিচিত মুখ ক্ববরে শায়িত হয়ে গেল! প্রায় প্রতিদিনই মাইকে ঘোষণা শুনতে পাইঃ …. নিবাসী …. নং রোডের …. নং বাড়ীর অমুক গতরাতে ইন্তেকাল করেছেন। মরহুমের নামাজে জানাজা আজ বাদ জোহর …. মাসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। জানাজার পর তাকে … কবরস্থানে দাফন করা হবে।

আবার এ সময়টা বিয়ে শাদীরও ভরা মৌসুম। এমতাবস্থায়, গত সপ্তাহ দুয়েক ধরে প্রায় প্রতিদিনইঃ
১। বাদ জোহর বা আসর কোন না কোন বন্ধু/অগ্রজ অনুজ সহকর্মী/সতীর্থদের জানাজার নামাজ পড়ছি।
২। বাদ আসর কোন না কোন বন্ধু/সতীর্থদের দাফন/কুলখানি অনুষ্ঠানে যাচ্ছি।
৩। বাদ এশা কোন না কোন বন্ধু/সতীর্থদের ছেলে কিংবা মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগদান করে যাচ্ছি।

এটাই জীবন। ব্যক্তি থেমে যাবে, পরিবার ও সমাজ এগিয়ে চলবে। দীপ নিভে যাবে, আলো রয়ে যাবে, ভেসে বেড়াবে অনন্তকাল ধরে মহাশূন্যের আনাচে কানাচে। শুনেছি আমাদের কথাগুলোও নাকি, প্রতিটি উচ্চারণ, অনন্তকাল ধরে ভেসে বেড়াবে মহাশূন্যে, কোথাও হাসি, কোথাও কান্না, কোথাও বা অনুভূতিহীন শুধুই শাব্দিক বচন হয়ে।

এভাবেই চলতে থাকবে মিলন ও বিদায়ের এই বিপরীত সমীকরণ। নিজের শেষ যাত্রার কথা যে মনে আসেনা, তা নয়। আল্লাহুম্মা আন্তাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম। হে আল্লাহ, তুমিই শান্তি, তোমা থেকেই আসে সব শান্তি। তুমিই প্রথম, তুমিই শেষ। আমার শেষটুকু যেন তোমার নামের মতই শান্তিপূর্ণ হয়!

সারাজীবন ধরে বই পুস্তকে এবং ময়মুরুব্বীদের মুখে মৃত্যুক্ষণের ভয়ঙ্কর রূপের কথা শুনে এসেছি। তবে সম্প্রতি আমার অন্ততঃ দু’জন সহকর্মী ঘুমের মধ্যে শান্তিতে (?)পরপারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন। মৃত্যুর পরেও তাদের ছিল হাসিমাখা মুখ। পরকালের কথা তো শুনেছি আরও ভয়ঙ্কর। জীবনে যা কিছু করেছি, তার সবটুকু আমলে নিলে তো স্বয়ং আমি বিচারক হলেও নিজের পরিণতি খুব একটা সুখকর হতো বলে মনে করতে পারিনা। তাহলে উপায় কী? উপায় একমাত্র মহাবিচারকের ক্ষমার উপর ভরসা করা। কারণ আমার গুনাহ করার যেটুকু ক্ষমতা আছে, তাঁর ক্ষমার পরিধি তার চেয়ে অনেক অনেকগুণ বেশী, অচিন্ত্যনীয়ভাবে বেশী। যিনি আমাকে এ ধরায় পাঠিয়েছেন, দিনশেষে (জীবনশেষে) তিনিই আবার আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবেন। কোথায়? তা নিতান্তই অজানা, জানার চেষ্টাও বৃথা। তবে এটুকু ভরসা রাখি, তিনি শুধু শাস্তি দেবার জন্য আমাকে এ ধরায় পাঠান নাই, আবার শুধু নিজ হাতে শাস্তি দেবার জন্য আমাকে উঠিয়েও নেবেন না। আমার তো মনে হয় যখন ডাক আসবে, তখন আমি বন্ধুর বাড়ীতেই বেড়াতে যাবো। আমি অধম হলেও আমার বন্ধু উত্তমের উত্তম।

এসব বিক্ষিপ্ত ভাবনা থেকেই বছর কয়েক আগে একটা ইংরেজী কবিতা লিখেছিলাম। সেটা একটা ইংরেজী কবিতার আসরে প্রকাশিত হয়েছিলো। গতরাতে আমার এক ক্যাডেট কলেজ ফ্রেন্ড এর ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পর এসব চিন্তা আবার মাথায় ভীড় করেছিলো। উল্লেখ্য, গতকালও এলাকাবাসী একজন প্রাক্তন সহকর্মীর জানাজা/দাফন ছিল, আরেকজন ক্যাডেট কলেজ অনুজের শশুড়ের কুলখানি ছিল। কবিতাটি গতরাতে আমার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে এভাবে উপস্থাপন করলামঃ

This poem was published here earlier also. The feelings that produced this poem are again looming large. So I reproduce the poem:

My Friend

Khairul Ahsan

I am bound in eternal friendship,
With The Supreme, The Most High,
Preachers taught me to call Him
My Lord, but I feel easy to call Him
My Friend.

I call Him my friend because He is
The quickest to reach and respond,
To my cry for help in my deepest
Troubles, and that’s why He is truly
My Friend.

I am what I am, because He is in me,
Deep within; I take my every breath
With His, which He breathed into me,
Before I was born. And so truly is He,
My Friend.

You love me just because my Friend
Is with me. When He would leave me,
So would you, burying me in a grave,
As my mortal remains would be void of
My Friend.

I know my Friend will never leave me.
He would just take my soul with Him,
As He departs. My body will lie in wait,
Until The Resurrection, to meet again,
My Friend.

Yes, it will be the Day Of Judgement too,
I’ll be asked about my words and deeds,
Tough will be to answer those, yet I have
No worries. As I always sought refuge in
My Friend.

Sure He knows of the frailties of my mind,
He was in me when I erred so many times
Satanic whispers got the better of me,
Whenever, by intent or not, I parted from
My Friend.

He is no doubt the Beneficent, the Merciful,
A faith that I nurtured and always relied on.
Irrevocable is His promise of Divine Pardon,
My sins cannot transcend the Forgiveness of
My Friend.

So, oh my mortal friends! Try not scare me
With the dreadful thought of burning in
Hell Fire! Speak not of Divine Punishment,
But of Love, Forgiveness and Compassion of
My Friend.

Poet’s Notes: The poem is written without prejudice. The words emanate from my personal faith and conviction. I wish to offend none who would hold different views.

Dhaka
01 October 2013
Copyright Reserved.

মূল কবিতাটি পাঠকের মন্তব্যসহ এখানে পড়া যাবেঃ
My Friend : My Friend

(ইতোপূর্বে প্রকাশিত)

৪,০৬৩ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “প্রকৃত বন্ধুর ভাবনা”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    মুটামুটি চল্লিশের পর থেকেই মৃত্যু ভাবনা নাড়া দিতে থাকে।
    মাঝরাতে ঘুম ভেংগে যায়। কখনো ঘুম আসে না।
    মনে হয় দেয়ালে দাগ রাখা হলো না।

    এমন মানব জনম কি আর হবে
    মন যা .........


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  2. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    "এটাই জীবন। ব্যক্তি থেমে যাবে, পরিবার ও সমাজ এগিয়ে চলবে। দীপ নিভে যাবে, আলো রয়ে যাবে, ভেসে বেড়াবে অনন্তকাল ধরে মহাশূন্যের আনাচে কানাচে।" - এভাবে ভাবতে পারলে, মন খারাপ হবার আসলেই কোনো কারন আর থাকে না......


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  3. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    খুব ভালো লাগলো লেখাটি। খুব গভীর অনুভব। এটাই জীবন। "ব্যক্তি থেমে যাবে, পরিবার ও সমাজ এগিয়ে চলবে। দীপ নিভে যাবে, আলো রয়ে যাবে, ভেসে বেড়াবে অনন্তকাল ধরে মহাশূন্যের আনাচে কানাচে। শুনেছি আমাদের কথাগুলোও নাকি, প্রতিটি উচ্চারণ, অনন্তকাল ধরে ভেসে বেড়াবে মহাশূন্যে, কোথাও হাসি, কোথাও কান্না, কোথাও বা অনুভূতিহীন শুধুই শাব্দিক বচন হয়ে।" - তাই যেন হয়। এভাবেই তো আমরা বেঁচে থাকবো অনন্তকাল। দালাই লামার একটা পড়ছিলাম। সেখানে বলা আছে একটা নেগেটিভ কথা বলার আগে ভেবে নিতে। কারণ কথাটা এখানেই শেষ হয়ে যাবে না।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
    • খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)
      একটা নেগেটিভ কথা বলার আগে ভেবে নিতে। কারণ কথাটা এখানেই শেষ হয়ে যাবে না

      -- চমৎকার একটা উপদেশ দিয়েছেন দালাই লামা। প্রত্যেকের এ কথাটা মনে রাখা উচিৎ।
      লেখাটা তোমার ভালো লেগেছে জেনে খুশী হ'লাম। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
      এত দেরীতে তোমার মন্তব্যের জবাব দেয়ার জন্য দুঃখিত ও লজ্জিত!

      জবাব দিন
  4. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    এটা ছিল এ বছরের আমার প্রথম পোস্ট। চারজন পাঠকের মন্তব্য কি করে যেন এতদিন আনএকনলেজড থেকে গেছে। এজন্য রাজীব, পারভেজ, আসাদ এবং ওয়াহিদা নূর আফজা- তোমাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।