জীবনের জার্নাল – ২০

প্রথম কোন শিক্ষকের বিদায়ঃ
যে শিক্ষক আমাদের প্রথম পাক্ষিক পরীক্ষাটি নিয়েছিলেন এবং যাঁর পরীক্ষায় আমি আমাদের সেকশনে প্রথম পরীক্ষাতেই সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলাম, তিনিই দুর্ভাগ্যক্রমে সবার আগে আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন জনাব হাফিজ উদ্দিন খান। মূলতঃ পদার্থ বিদ্যার শিক্ষক হলেও তিনি সপ্তম শ্রেণীতে আমাদের অঙ্ক ও জ্যামিতির ক্লাসগুলো নিতেন। তিনি অত্যন্ত স্বাধীনচেতা মানুষ ছিলেন। ঐ অল্প ক’দিনেই আমরা তাঁর কাছ থেকে অনেক ভালো ভালো উপদেশ পেয়েছিলাম। ক্যাডেট কলেজের কঠোর নিয়ম শৃ্ঙ্খলা তাঁর মোটেই ভালো লাগতো না, এটা আমরা বুঝতাম। তিনি প্রিন্সিপালকেও খুব একটা তোয়াক্কা করতেন না। তাঁর বিদায় ভাষণে তিনি আমাদেরকে ভালোভাবে পড়াশুনা করে ‘মানুষ’ হবার উপদেশ দিয়েছিলেন। নিজেদেরকে ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেবার উপযোগী করে তৈ্রী করার কথা বলেছিলেন। এ ছাড়া তিনি মানবিক গুনাবলী অর্জনের উপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। তাঁর শেষ কথাটা আজও আমার কানে বাজেঃ Do not sell yourself to anybody.

হাউস মাস্টার এবং হাউস টিউটরঃ
এমসিসিতে প্রবেশ করেই প্রথম যাকে আমাদের হাউস মাস্টার হিসেবে পেয়েছিলাম, তিনি ছিলেন জনাব সৈয়দ আব্বাস আমজাদ হোসেন, সংক্ষেপে SAAH, ভূগোলের শিক্ষক। তিনি উর্দুভাষী হলেও বাংলা বলতে পারতেন। তিনি খুব স্নেহপ্রবণ ছিলেন, খুব একটা হোমওয়ার্ক দিতেন না, আর পরীক্ষায় ভালো ম্যাপ আঁকতে পারলে দু’হাত খুলে নম্বর দিতেন। বিয়ের পর তিনি ক্লাসে একটু অমনযোগী হয়ে পড়েন। আমাদেরকে “সেলফ স্টাডী”দিয়ে তিনি চেয়ারে হেলান দিয়ে তার একটা নোটবুক খুলে কি যেন পড়তেন আর মিটিমিটি হাসতেন। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম তার নিজের লেখা কোন নোট পড়ে বোধহয় মুগ্ধ হয়ে তিনি হাসছেন। একদিন হঠাৎ তাঁর হাতে ধরা নোট বই এর ভেতর থেকে একটা নীল খামের চিঠি নীচে পড়ে যায়। খামের থেকে একটা হাস্যোজ্জ্বল মুখের ফটো বেড়িয়ে আসে, যেটা ছিলো তাঁর সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর ছবি। সামনের ডেস্ক এর একজন দৌড়ে গিয়ে ছবিটি তাঁর হাতে তুলে দিলে তাঁর ফর্সা মুখটা একটু লাল হয়ে উঠেছিলো। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, তিনি কেন মিটিমিটি হাসতেন।

প্রথম হাউস টিউটর হিসেবে আমরা পেয়েছিলাম জনাব শামসুদ্দোহাকে। লম্বা, ফর্সা, সৌ্ম্যকান্তি এই শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আমাকে খুব স্নেহ করতেন। আমি যখন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাউসে একা পড়ে ছিলাম (জীবনের জার্নাল – ১৩ ও ১৪ দ্রষ্টব্য), দোহা স্যার তখন আমার পাশে এসে সান্তনা দিতেন, সাহস যোগাতেন। তিনি আমাদের ইতিহাস পড়াতেন, মাঝে মাঝে ইংরেজী শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে ইংরেজীও পড়াতেন। আমার মনে পড়ে, ইতিহাসের খাতায় তাঁর খুব পছন্দের ছিলো Stanly Lane Pool এর কোটেশন। ওনার প্রচুর কোটেশন ঐ ছোট ক্লাসেও (৭ম-৮ম) মুখস্থ করে আমি দোহা স্যারের কাছ থেকে ইতিহাসে খুব ভালো নম্বর পেতাম। বহুদিন পরে সেদিন এক বিয়ের অনুষ্ঠানে দোহা স্যারের সাথে আমার সাক্ষাত হয়। তিনি আমার এসব স্মৃতির কথা স্পষ্ট মনে রেখেছেন এবং আমার স্ত্রীকেও এর কিছু কিছু বলেছেন। তিনি আমার মা এবং মরহুম পিতা সম্পর্কেও আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। আজ তিনি কিডনী রোগে আক্রান্ত। আমরা অর্থাৎ এক্স এমসিসি ক্যাডেটরা যে তাঁর চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটানোর জন্য আর্থিক সহায়তার হাত প্রসারিত করেছি, তিনি সে কথাও কৃ্তজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেছিলেন। পরম দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন দোহা স্যারকে সম্পূর্ণ আরোগ্য দান করেন এবং বাকী জীবনটা তাঁকে নির্ঝঞ্ঝাট পার করে দেন!

‘মোস্ট ইম্প্রেসড’
প্রথম যে শিক্ষককে দেখে ‘মোস্ট ইম্প্রেসড’ হয়েছিলাম, তিনি জনাব নাজমুল আহসান। তিনি রসায়নের শিক্ষক ছিলেন, কিন্তু ক্লাস ছাড়াও তাঁকে কলেজের সকল চৌহদ্দিতেই তৎপর দেখা যেতো। তিনি মাঝে মাঝে কলেজ এডজুট্যান্ট এরও দায়িত্ব পালন করতেন। আমরা প্রথম কলেজে যাওয়ার কয়েক মাস পরেই তিনি আমাদের হাউস মাস্টার হিসেবেও দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ক্যাডেট হিসেবে যে আমি খুবই ম্রিয়মাণ প্রকৃতির ছিলাম, এটা তাঁর চোখে ধরা পড়তে বেশীদিন লাগেনি। হাউস মাস্টার হিসেবে তাঁর প্রথম রিপোর্টেই তিনি আমার সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, He is rather meek and mild, He should be more sociable and friendly। নিজের সম্পর্কে মন্তব্যটা যে কতটা সত্য ছিলো, তা আমি ছাড়া আর কে বেশী জানতো? তাই উপদেশ পাওয়ার পরেও প্রকৃ্তিগত স্বভাবে পরিবর্তন আনতে পারিনি বলে পরবর্তীতে তাঁকে দেখলেই আমি খুব আড়ষ্ট থাকতাম।

তিনি খুবই পরিপাটি পোশাকে চলাফেরা করতেন। রঙ ঠিক ফর্সা না হলেও স্লিম ফিগার, ব্যাকব্রাশ করা ছোট চুল আর স্মার্ট মুভমেন্ট এর কারণে সকলের পছন্দের ছিলেন। রসায়নের শিক্ষক হিসেবে আমাদের তিনি খুব কমই পড়িয়েছেন, তাই ঐ বিষয়ে তাঁর দখল কেমন ছিলো সে বিষয়ে আঁচ করতে পারিনি। তবে স্বাধীনতার পরে তিনি কয়েক বছর নাইজেরিয়ায় এবং দীর্ঘদিন ব্রুনাই দারুস সালামে শিক্ষকতা করেছেন, এমনকি এখনও তিনি ঢাকার একটি বিখ্যাত ইংরেজী মিডিয়াম স্কুলে রসায়নের ক্লাস (ল্যাব) নিয়ে থাকেন। এ থেকেই বুঝা যায় তিনি তাঁর সাবজেক্টে কতটা পারদর্শী। আমরা কলেজে গিয়েই শুনেছিলাম যে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতেও কমিশন্ড অফিসার হিসেবে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, কিন্তু ব্যক্তিগত কোন কারণের জন্য তিনি শেষ পর্যন্ত পিএমএ’তে যোগদান করেননি। তাঁর আরেকটা বড় পরিচয়, তিনি সেই আমলে ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে ঈগলেটস ক্রিকেট ক্লাব এর পক্ষে খেলতেন। রকিবুলদের সাথে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান একাদশেও চান্স পেতেন। তাঁর অকালপ্রয়াত ছোটভাই এক্স ক্যাডেট মঞ্জুরও নিয়মিতভাবে ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে খেলতেন এবং মৃত্যুর সময় তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সিইও ছিলেন। সেদিন মেকা ইফতার পার্টিতে নাজমুল আহসান স্যারের সাথে অনেকক্ষণ আলাপ হলো। এখনো তিনি যদি তাঁর সাদা চুলগুলো কালো করে আমার পাশে দাঁড়ান, তাঁকে আমার ছোটভাই বলেই অনেকের ভ্রম হবে।

চলবে…

ঢাকা
২৮ অগাস্ট ২০১৫
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

৩,০৩৪ বার দেখা হয়েছে

১৯ টি মন্তব্য : “জীবনের জার্নাল – ২০”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    শামসুদ্দোহা তালুকদার স্যার কে মুটামুটি আমরা সাড়ে পাচ বা পৌনে ছয় বছরের মতো পেয়েছি। প্রথমে ভিপি হিসাবে ছিলেন। রাউন্ড দিতেন। উনার বাড়ি খুব সম্ভবত রাজশাহির ঐদিকে ছিলো। ম্যাডাম ও বোধহয় ওখানেই কোন কলেজে শিক্ষকতা করতেন। তাই যতদূর জানতাম কলেজে উনি একাই থাকতেন।
    আমাদের ইংরেজি তে দুর্বলতার কারণে আমাদের কয়েকটি ক্লাস নিয়েছিলেন।

    স্যারের বই পড়ার বেশ ভালো অভ্যাস ছিলো। আর সেটা মনে হয় একা থাকার কারণেই। লাইব্রেরি থেকে বই ইস্যু করলে বা বই য়ের শেষ পাতায় এস দোহা নামে সাইন দেখতাম।

    আমরা যখন ইলেভেন বা টুয়েলভে তখন মনে হয় স্যার প্রিন্সিপাল হন আমাদের কলেজেই। খুব সরল, ইজি গোয়িং ছিলেন যতদূর মনে পড়ে।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  2. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, রাজীব।
    আমি যে দোহা স্যারের কথা লিখেছি, খুব সম্ভবতঃ তুমিও তাঁরই কথা বলছো। তবে তাঁর নামের শেষে "তালুকদার" ছিল বলে কোনদিন শুনিনি। আমরা তাঁর নাম এমএস দোহা হিসেবেই জেনে এসেছি। তিনি একটু বেশী বয়সে বিয়ে করেছিলেন। অনেকটা নিভৃতচারী ছিলেন। দীর্ঘদিন আমাদের হাউস টিউটরও ছিলেন। লম্বা, ফর্সা চেহারায় একটা আভিজাত্যের ছাপ ছিল। তাঁর পূর্বপুরুষেরা জমিদার ছিলেন, এমনটা শুনেছি বলে মনে পড়ে, তবে নিশ্চিত নই।

    জবাব দিন
    • খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

      সব পুরনোরাই সাধারণতঃ নতুনদেরকে বলে, তাদের দিন ভালো ছিল, মানে বেটার ছিল। তবে আমার কলেজেই আমি তোমরা যখন ছাত্র ছিলে, তখন বহুবার গিয়েছি। আর নিজ চোখে মানের অবনতি প্রত্যক্ষ করে ব্যথিত হয়েছি। তবে সব কিছুই সঠিক নির্দেশনা পেলে আবার ঠিকও হয়ে যায়। তাই আশা রাখি, শিক্ষা ও শিক্ষকদের মানের উন্নতি আগামীতে হবে।
      আমার তথা আমাদের শিক্ষক ভাগ্য সম্পর্কে তোমার হিংসে হবার কারণ যুক্তিযুক্ত। আগামী কয়েকটা পর্ব পড়লে তা আরো বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছি।
      প্রায় প্রতিটি পর্বে মন্তব্য রেখে যাবার জন্য তোমায় আন্তরিক ধন্যবাদ।

      জবাব দিন
  3. মাহবুব (৭৮-৮৪)

    ক্যাডেট কলেজের শিক্ষকদের দৈনন্দিন জীবন অন্যান্য স্কুল কলেজের শিক্ষকদের চেয়ে অনেকটাই আলাদা, তাই তাদের নিয়োগের মাপকাঠিও হয়তো আলাদা ছিল। আমি নিজে ক্যাডেট কলেজে যাবার আগে অন্তত চারটে স্কুলে পড়েছি, তাই মাষ্টার মশাইদের মধ্যে তফাৎ টা সহজেই চোখে পড়েছিল। পরে নতুন কলেজগুলি প্রতিষ্ঠিত হল, সেগুলিকে গড়ে তোলার দায়িত্ব দিয়ে আগের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের বদলী করা হল। তাদের জায়গায় এলেন নতুন প্রজন্মের শিক্ষকেরা। এই নুতুন নিয়োগের বেলা সবক্ষেত্রে হয়তো আগেরকার মান ধরে রাখা যায় নি। প্রথমদিকে যাদের দেখে পরম মুগ্ধ ছিলাম, তাদের অনেকেই শেষ অবধি ছিলেন না। নুতুনদের মধ্যে সেই ম্যজিক চার্মের ঘাটতি ছিল। পরে সময়ের সাথে সাথে তাদের অভিজ্ঞতা বেড়েছে এবং ক্যাডেট কলেজের সার্বিক ঐতিহ্য তারা যে সফল ভাবেই ধরে রেখেছেন সন্দেহ নেই।

    জমজমাট লেখার জন্য খায়রুল ভাইকে আবারো অভিনন্দন।

    জবাব দিন
    • খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

      "নুতুনদের মধ্যে সেই ম্যজিক চার্মের ঘাটতি ছিল। পরে সময়ের সাথে সাথে তাদের অভিজ্ঞতা বেড়েছে এবং ক্যাডেট কলেজের সার্বিক ঐতিহ্য তারা যে সফল ভাবেই ধরে রেখেছেন সন্দেহ নেই।"- অনেক ধন্যবাদ, মাহবুব, তোমার এ সঠিক পর্যবেক্ষণের জন্য।
      আমরা একাদশ শ্রেণীতে ওঠার পর বেশ কিছু নতুন প্রভাষক পেয়েছিলাম। মানের দিক দিয়ে বেশ ঘাটতি ছিল। যে দুই একজন সমমানের ছিলো, তাঁরা কিছুদিনের মধ্যেই অন্যত্র ভালো চাকুরী পেয়ে চলে যায়। একজন তো আবার জাসদের টিকেটে এমপিও হয়েছিলেন, তাঁর নাম ছিল কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।

      জবাব দিন
  4. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    এমজিসিসির শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করা এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষক পেয়েছিলাম আমরা। প্রানবন্ত সেই মানুষগুলোর মধ্যে সবচাইতে ক্যারিশমাটিক ছিলেন মিজ নুসরাত হোসেন ম্যাডাম। ছিপছিপে গড়নের ছোটখাট মানুষটির ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়েছিল পুরো এমজিসিসি। ম্যাডামের শাড়ি পরার ঢং, তাঁর হাঁটা, তাঁর কথা বলার অপূর্ব ভংগীমা সবই চমকপ্রদ ছিল। ম্যাডাম আমাদের ভূগোল পড়াতেন। শিক্ষক হিসেবেও তিনি প্রথম সারির ছিলেন বলাই বাহুল্য। ম্যাডাম যখন কলেজ ছেড়ে চলে যান তখন তাঁর মানপত্রটি পড়তে গিয়ে আমি এতো কান্না করেছিলাম যে কান্নার তোড়ে অর্ধেক কথাই বলতে পারিনি ঠিকঠাক মত।
    বছর দুই যেতেই অবিবাহিত একজন সুদর্শন স্যার যোগ দিলেন আমাদের সাথে। স্যার পড়াতেন খুব ভাল। দ্বাদশের একজন আপার সাথে নিদারুন প্রেমের সম্পকর্ে জড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ফলাফল হিসেবে তাঁকে বদলী করে দেয়া হয় ছেলেদের কলেজে। এরপর এমজিসিসিতে অবিবাহিত স্যার আর আসেননি।

    জবাব দিন
    • ইশহাদ (১৯৯৯-২০০৫)
      এরপর এমজিসিসিতে অবিবাহিত স্যার আর আসেননি।

      ইয়ে, আমি জীবনের দেড়তম এপয়েন্টমেন্ট লেটার পেয়েছিলাম এমজিসিসিতে :shy:
      এবং সেটা :just: ব্যাচেলর অবস্থাতেই। তবে, শেষমেশ যোগদান করা হয়নি। =((



       

      এমন মানব জনম, আর কি হবে? মন যা কর, ত্বরায় কর এ ভবে...

      জবাব দিন
    • খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

      আমাদের কলেজের প্রথম ব্যাচের এম এন বি জামালী ভাই যখন এমজিসিসি'র অধ্যক্ষ, ২০০২-০৪ এর দিকে, তখন একবার আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে সেখানে গিয়েছিলাম বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। জামালী ভাই এর স্ত্রী তখন ক্যান্সারাক্রান্ত বলে চিহ্নিত হয়েছিলেন। এজন্য তাঁর মনটা ভীষণ খারাপ ছিল। এমজিসিসিতে গিয়ে আমার শুধু ভারতেশ্বরী হোমস এর কথা মনে পড়ছিলো। দুটো প্রতিষ্ঠানকে একই রকমের মনে হয়েছিলো। (সম্পাদিত)

      জবাব দিন
  5. মুজিব (১৯৮৬-৯২)

    জুনায়েদের সাথে সুর মিলিয়ে বলব, খায়রুল ভাই, আপনার শিক্ষকভাগ্য রিতিমত হিংসা জাগানিয়া। আমাদের সময়ে দেবতুল্য মানসিকতার শিক্ষক যেমন ছিলেন, পাশাপাশি বর্বর ও অর্বাচীন মানসিকতারও ছিলেন বেশ কয়েকজন।


    গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

    জবাব দিন
    • খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

      মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, মুজিব। সত্যিই এটা আমার সৌভাগ্য, আমি অন্ততঃ "বর্বর ও অর্বাচীন মানসিকতার" কাউকেও শিক্ষক হিসেবে পাইনি। বড়জোর এটুকু বলতে পারি, তুলনামূলকভাবে কম প্রতিভাবান বা কম চৌকষ কয়েকজনকে পেয়েছিলাম। যেমন, মিঃ সিম্পসন (তাঁর সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে পারবে 'জীবনের জার্নাল - ২৪ ও ২৫ এ) চলে যাবার পর আমরা একজন ইংরেজী শিক্ষককে পেয়েছিলাম, যিনি ভারতের উৎকল ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজীতে মাস্টার্স করেছিলেন, তাঁর নাম ছিল মীর্জা ইলিয়াস আলী বেগ, সংক্ষেপে বেগ স্যার। সিম্পসনের তুলনায় তিনি নেহায়েৎ পানসে ছিলেন। স্বাধীনতার পরে যে কয়জন তরুন শিক্ষক যোগদান করেছিলেন, তাদের মধ্যেও কয়েকজন প্রতিভাধর ছিলেন, যদিও আবার কয়েকজন বিলো পার (below par)ছিলেন।

      জবাব দিন
  6. ইশহাদ (১৯৯৯-২০০৫)

    প্রথম স্মৃতিচারণটা দেখে রেজা স্যারের কথা মনে পড়ল। তিনিও পদার্থবিদ্যারই শিক্ষক ছিলেন। কলেজে আমার দেখা শ্রেষ্ঠ পদার্থবিদ্যা শিক্ষক। কিন্তু তাঁর স্বাধীনচেতা মনোভাবের সাথে ক্যাডেট কলেজীয় ভাবগাম্ভীর্যের অনুরণন হয়নি, ছেড়ে গেছিলেন আমরা থাকতেই। এভাবেই বুঝি ইতিহাস ঘুরে ঘুরে আসে! রেজা স্যার কলেজ থেকে চলে যাবার পর পদার্থবিদ্যার ওপর চমৎকার দুটো বই লিখেছিলেন।



     

    এমন মানব জনম, আর কি হবে? মন যা কর, ত্বরায় কর এ ভবে...

    জবাব দিন
  7. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    "এভাবেই বুঝি ইতিহাস ঘুরে ঘুরে আসে" - ঠিকই বলেছো। দুটো ঘটনায় বিস্ময়কর মিল রয়েছে। বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, হাফিজ উদ্দিন খান স্যারও আমাদের কলেজ ছেড়ে যাবার পর পদার্থ বিদ্যার উপর একটা বই লিখেছিলেন।

    জবাব দিন
  8. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    আমরা একটি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্টক্লাস ফার্স্টকেও পেয়েছিলাম পদার্থবিদ্যার শিক্ষক হিসাবে।
    অসাধারন ছিল তাঁর লেকচার ডেলিভারী। একবার ভালো করে শুনলে, দ্বিতীয়বার বই পড়া লাগতো না।
    খুবই গোছানো ছিল তাঁর লেকচারগুলো।
    সমস্যা ছিল একটাই, তাঁর কথা থামিয়ে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে বিরক্ত হতেন, আর বলতেন "তুমার কানের ছিদদিরি কি ছোঁটো আঁছে, যে আমার কথা ঢুকতিছে না..."
    কিছুদিন পর উনি নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পেয়ে কলেজ ত্যাগ করলেন।
    পরবর্তিতে শুনেছি তিনি শিক্ষকতার চেয়ে শিক্ষক রাজনিতীতেই বেশি জড়িয়ে পড়েন।
    ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের কুখ্যাত জামাত-শিবিরের সাথে তাঁর ছিল গভীর সখ্য।
    জামাতের রাজনীতিতে এতটাই প্রভাব ছিল তাঁর যে জামাতের টিকেটে তাঁর স্ত্রী মহিলা এমপিও হয়েছিলেন।
    ফিজিক্সে ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হলেও তিনি ক্যারিয়ার আর সেভাবে পারসু করেন নাই। পিএইচডি করেন নাই। তেমন কোন পাবলিকেশনেও জড়ান নাই।
    ফুল প্রফেসারও নাকি আর হওয়া হয় নি তাঁর।

    বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হয়ে তাঁর এই পরিনতি আমাকে ব্যাথিত করেছিল।
    আমার দেখা একজন অসাধারন শিক্ষক শেষ পর্যন্ত হয়ে গেলেন রাজনৈতিক টাউট।
    আরও শুনেছি টাকা কড়ি নাকি বিস্তর কামিয়েছেন নানা উপায়ে।
    জানি না এখন কেমন আছেন তিনি...
    (নাম ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন উল্লেখ করি নাই, পাঠকমাত্রই বুঝবেন...)


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ইশহাদ (১৯৯৯-২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।