জীবনের জার্নাল – ১৩

আমাদের ক্লাসের প্রথম এক্সট্রা ড্রিলঃ
এমসিসিতে আমাদের প্রথম বছরের প্রথম টার্মের কথা। নজরুল হাউসের পেছনে ছিলো প্রিন্সিপাল কর্ণেল আনসারী স্যারের বাসা। রাতের বেলায় নজরুল হাউসের রুমে লাইট জ্বালানো থাকলে কে কি করছে তা তিনি নিজ গৃহ থেকে বেশ দেখতে পেতেন। একদিন লাইটস আউটের আগে নজরুল হাউসের আমার তিন সতীর্থের খুব হাউস চাপলো বক্সিং বক্সিং খেলার। যথারীতি খেলা শুরু হলো। রুম ক্যাপ্টেন মনে হয় ঐ সময় বাথরুমে ছিলেন। এর মধ্যে লাইটস আউটের সময় হয়ে গেলে তিনি এসে তাদেরকে থামিয়ে আলো নিভিয়ে দিলেন। আলো নেভানোর পর যে যার বিছানায় হুমড়ি খেয়ে পড়লো। অপরাধীদের একজন, যার বিছানা জানালার পাশেই ছিলো, খেয়াল করলো যে প্রিন্সিপালের বাসা থেকে আলোর দুটো গোল চক্ষু যেন তাদের দিকে ধেয়ে আসছে। প্রিন্সিপালের একটা মেরুন রঙের মাইক্রোবাস ছিলো। বেশীরভাগ সময়ে তিনি সেটা নিজেই চালাতেন। কিছুক্ষণ পরে বারান্দায় প্রিন্সিপাল স্যারের গলার আওয়াজ পাওয়া গেলো। তিনি রুমের সামনে এসে রুম ক্যাপ্টেনকে আলো জ্বালাতে বললেন। সবাইকে বিছানা ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে বললেন। বক্সিংরত তিনিজনের কপাল থেকে তখনো দরদর করে ঘাম ঝরছিলো, তাই অপরাধী সনাক্ত করতে দেরী হলোনা। পরের দিন নোটিশ বোর্ডে ঐ তিনজন আগ্রহী বক্সারদের নাম শোভা পেলো আমাদের ক্লাসের প্রথম “এক্সট্রা ড্রিল” এর অনার্সধারী হিসেবে। তাদের দুজন আজ আমেরিকার নাগরিক। একজন আরিযোনার ফিনিক্সে, অপরজন নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ডসে বসবাসরত। তৃ্তীয়জন বহু যুগ থেকে নিরুদ্দেশ, তার কথা আমাদের ব্যাচের কারো জানা নেই।

গণজ্বরঃ
প্রথম টার্মেই আমার এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা হলো। টার্মের প্রায় মাঝামাঝি সময়, তখনো শ্রাবন মাস চলছে। বৃষ্টি বাদলের দিনে এক আধটু জ্বরজারি সবারই হয়, আমাদেরও দুই একজনের হলো। তবে যখন জ্বর আসতো, বেশ গা ফাটিয়েই আসতো। তখনো আমাদের কলেজে কোন আবাসিক ডাক্তারের ব্যাবস্থা করা হয় নাই। প্রয়োজন হলে মির্জাপুরের কুমুদিনি হাসপাতাল থেকে একজন ‘সফদার ডাক্তার’ টাইপের টেকো মাথা ডাক্তারকে ডেকে আনা হতো। বাকী সময়ে কম্পাউন্ডার রইস সাহেবই টুকটাক ডাক্তারী করতেন। উল্লেখ্য, তখনো আমাদের কলেজে কোন হাসপাতাল বিল্ডিংও নির্মাণ করা হয় নাই। আমাদের হাউসেরই নীচতলার একটা কক্ষকে এম আই রুম হিসেবে ব্যবহার করা হতো। যাদের জ্বর এসেছিলো, তাদেরকে ড়াক্তার সাহেব ভালো করে দেখে টেখে “এ্যটেন্ড সি” দিলেন, যার মানে আমরা যখন পিটি, প্যারেড, ক্লাস, গেমস, ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকবো, তারা তখন শুধুই নিজ নিজ বিছানায় শুয়ে ঘুমাবে। এমনকি খাওয়ার জন্য তাদেরকে ডাইনিং হলেও যেতে হবেনা। হাউস বেয়ারারগণ তাদের খাবার রুমে পৌঁছে দেবে। এমন লোভনীয় ব্যাবস্থাপনা অন্যান্য ক্যাডেটদেরকে ঈর্ষান্বিত করে তুললো। তারাও পথ খুঁজতে লাগলো, কিভাবে শরীরে জ্বর ফাঁদানো যায়। ক্যাডেটদের মধ্যে একজন সবজান্তা টাইপের সিনিয়র বুদ্ধি দিলেন যে বগলের নীচে একটা রশুন কিছুক্ষণ চেপে রেখে রৌদ্রে দাঁড়িয়ে থাকলে তাড়াতাড়ি শরীরে জ্বর আসে।

আমাদের হাউস বেয়ারা রউফ ভাই আর আহসানউদ্দিন ভাইকে এ্যপ্রোচ করা হলো। রউফ ভাই তখন তরুণ বয়সের, আমাদের একাদশ শ্রেণীর বড়ভাইদের সমবয়সী কিংবা তার চেয়ে সামান্য কিছুটা বড় হবে। আমরা কলেজে জয়েন করার মাস খানেক আগে তার চাকুরী হয়। তিনি কিছুটা দুষ্টুমিটা আঁচ করতে পেরেছিলেন হয়তোবা, তাই তিনি তার নতুন চাকুরী হারাবার ভয়ে আমাদেরকে কাঙ্ক্ষিত দ্রব্যটি সরবরাহ করতে রাজী হলেন না। অপরদিকে আহসানউদ্দিন ভাই (এখন থেকে প্রায় পঁচিশ ত্রিশ বছর আগে তিনি ইন্তেকাল করেছেন) অনেক বয়স্ক লোক ছিলেন। দারিদ্র্যের কশাঘাতে তিনি জর্জরিত ছিলেন। তবে তার মিনিটে মিনিটে বিড়ি ফোঁকার বদ অভ্যাস ছিলো। আমাদের স্ট্রাটেজিস্ট সিনিয়র ভাইয়েরা ঐ দুর্বলতাটুকু এক্সপ্লয়েট করলেন। তাকে এক মুঠা বিড়ির মূল্য দেয়ার প্রলোভনে দ্রব্যটি সরবরাহ করতে রাজী করানো হলো।

সত্যি সত্যিই বগলের নীচে রশুন রাখার কারণে কিনা জানিনা, তবে গণহারে জ্বর আসা শুরু হলো। অন্য দুই হাউসের জ্বরাক্রান্তদেরকেও আমাদের হাউসে নিয়ে আসা হলো, কারণ এম আই রুমটা আমাদের হাউসে ছিলো। কমনরুমে ঢালাও বিছানা পাতা হলো। আন্তঃহাউস নানামুখী তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে ভিন্ন ভিন্ন হাউসের ক্যাডেটদের মাঝে তেমন একটা মিল মহব্বত থাকতোনা। কিন্তু জ্বরের কারণে এবং সেই সুযোগে অবাধ দুষ্টুমি করার সুযোগপ্রাপ্ত হওয়ায় তখন জ্বরাক্রান্ত ক্যাডেটদের মাঝে এক অভূতপূর্ব ঐক্য আর ভ্রাতৃ্ত্বের বন্ধন লক্ষ্য করা গেলো। এমনকি একাদশ শ্রেণীর (প্রথম ব্যাচ) একজন ছোটখাটো ফর্সা রঙের বড়ভাইকে নির্দ্বিধায় সপ্তম শ্রেণীর ছোটবাবুকেও তার গোপন “মাসুদ রানা”র সংগ্রহ থেকে উদারভাবে বই বিলি করতে দেখা গিয়েছিলো। উল্লেখ্য, আমাদের বয়সীদের জন্য তখন “মাসুদ রানা” পড়া নিষেধ (ট্যাবু) ছিলো।

সিনিয়র স্ট্রাটেজিস্ট বড়ভাইটি ঘোষণা দিলেন যে আর গোটা দশেক ক্যাডেটকে যদি জ্বরাক্রান্ত করা যায়, তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ বাধ্য হবে কলেজ বন্ধ ঘোষণা করতে। এক অপ্রত্যাশিত ছুটি প্রাপ্তির সম্ভাবনায় যে যার মত নিজ নিজ পন্থায় চেষ্টা করে যেতে থাকলো শরীরে জ্বর ডেকে আনতে। যারা সমর্থ হলো, তারা ইন্সট্যান্টলি সেই সিনিয়র স্ট্রাটেজিস্ট বড়ভাই এর গুডবুকে চলে গেলো। জ্বরাক্রান্তদেরকে বেশ কিছু বাড়তি সুযোগ সুবিধা দেওয়া হলো, যেমন বিকেলে চা এর পরিবর্তে চিকেন স্যুপ। সকালে দুধও বরাদ্দ করা হলো। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো সপ্তম শ্রেণীর যে যতটা কাঁদতে পারলো, সে তত বেশী আদর যত্ন পেতে থাকলো। বিশেষ করে শিক্ষক, সিনিয়র ভাই, বেয়ারা, ডাক্তার, সবার কাছ থেকে পাওয়া এই বাড়তি আদরটুকুর জন্য আমারও ইচ্ছে হলো, জ্বর আসুক!

রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকলে আমাদের হাউস টিউটর, হাউস মাস্টার, ডাক্তার, সবাইকেই কিছুটা চিন্তিত দেখাতে শুরু করলো। প্রিন্সিপাল স্যারও দিনে রাতে কয়েকবার করে আসতে থাকলেন পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখতে। সকালের পিটি বন্ধ হয়ে গেলো। ক্লাসগুলোও হাল্কাভাবে চলছিলো। একদিন দুপুরে ক্লাসে বসে আমিও জ্বর জ্বর অনুভব করতে থাকলাম। মাথাটাও ধরে এলো। ক্লাস শেষে কোনরকমে ডাইনিং হলে গেলাম, কিন্তু কিছু খেতে পারলাম না। রুমে আসার পর রুম ক্যাপ্টেন আমাকে এম আই রুমে রিপোর্ট করতে বললেন। বিকেলে কম্পাউন্ডার সাহেব আমার জ্বর মেপে আমাকে জ্বরাক্রান্ত ঘোষণা করলেন। আমারও কমনরুমে অন্যান্য রোগীদের মাঝে ঠাঁই হলো। ততদিনে প্রথম দিকের আক্রান্তদের জ্বর ছাড়া শুরু হলো, তাই তাদের দুষ্টুমিও বেড়ে গেলো, আর নিজেদের মাঝে খুনসুটিও শুরু হলো। কিন্তু জ্বর ছাড়া শুরু হলে কী হবে, আমাদের সেই সিনিয়র স্ট্রাটেজিস্ট বড়ভাইটির কথা সত্য প্রমাণ করে ঢাকা থেকে হুকুম এলো, কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার। এই ঘোষণা পেয়ে ক্যাডেটদের মাঝে আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করলো। রাতে ঘোষণা দেয়া হলো, যাদের গায়ে জ্বর থাকবে, তারা ছাড়া বাদবাকী সবাই পরদিন সকালে কলেজ ব্যাবস্থাপনায় নিজ নিজ বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। ঘোষণাটা শুনে সবাই ব্যাগ গোছাতে শুরু করলো।

পরদিন সকালে যথারীতি ডাক্তার এলেন। তিনি পরীক্ষা করে দেখলেন যে আমার এবং আরও তিন চারজনের গায়ে জ্বর অনেক বেশী, তাই তিনি ঘোষণা দিলেন যে আমরা ছুটিতে যেতে পারবোনা। জ্বর ভাল না হওয়া পর্যন্ত আমাদেরকে কলেজেই থাকতে হবে। এই রয়ে যাওয়া দলের মধ্যে একমাত্র আমিই ছিলাম সপ্তম শ্রেণীর। ভেবে অবাক হলাম যে কি করে যাদের শরীরে দুই তিনদিন আগে হুড়মুড় করে জ্বর এসেছিলো, কলেজ ছুটির কথা শুনে আবার তাদেরই জ্বর হুরমুড় করেই চলে গেলো! বেলা দশটা এগারটার দিকে সবাই হৈ হুল্লোর করে নির্দিষ্ট বাসে চেপে বসলো। আমদেরকে ঐ কমনরুমে রেখেই সবাই যার যার বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলো।

চলবে…

ঢাকা
২১ জুলাই ২০১৫
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

২,৮৫০ বার দেখা হয়েছে

১৯ টি মন্তব্য : “জীবনের জার্নাল – ১৩”

  1. রাব্বী আহমেদ (২০০৫-২০১১)

    প্রতি ব্যাচেই কিছু ক্যাডেট হারিয়ে যায়। কোথাও সেসব ক্যাডেটদের খোঁজ মেলেনা। কেউ সন্ধান দিতে পারে না। এটা কি আত্মঅভিমান, নাকি নিজেকে সরিয়ে নেয়া ?? জানি না। জানা হয় না কারো ব্যক্তিগত দুঃখ। যে যার মতো ভুলে থাকে ক্ষত। (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
    • খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

      মাত্র গত পরশুদিনই আমাদের ব্যাচের একটা ছোট খাট প্রীতি সম্মেলন হয়ে গেলো সিপিডি'র নির্বাহী পরিচালক ডঃ মুস্তাফিজুর রহমান এর বাসায়। সেখানে আমাদের সেই হারিয়ে যাওয়া বন্ধুটির কিছুটা খোঁজ দিতে পারলো আমাদের আরেকজন বন্ধু যিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিআরআরআই)থেকে অবসরে গিয়েছেন। তিনি নিজেও বহুদিন স্বেচ্ছা নির্বাসনে গিয়েছিলেন। ক্যাডেট কলেজে নবম শ্রেণীতে ওঠার পর তাকে খারাপ রেজাল্টের কারণে কলেজ থেকে বের করে দেয়া হয়েছিলো। সে ধাক্কা সামলে উঠে তিনি বাংলাদেশ কৃ্ষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও মাস্টার্স পাশ করার পর বিআরআরআই এ যোগদান করেছিলেন এবং চাকুরীতে থাকাকালীন পিএইচডি ডিগ্রীও অর্জন করেছিলেন। চাকুরী জীবনে তিনি উচ্চ পদবীতে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। এর থেকে বুঝা যায় যে ক্যাডেট কলেজ থেকে যাদেরকে বের করে দেয়া হয়, বিশেষ করে খারাপ রেজাল্টের কারণে, তারা কতটা ভুল সিদ্ধান্তের শিকারে পরিণত হতে পারে। যাই হোক, সেই বন্ধুটি আমাদের জানালেন যে আমাদের হারিয়ে যাওয়া বন্ধুটি কোন কারণে এইচএসসি'র পরে আর পড়াশোনা করতে পারেন নি। এজন্য তিনি হীনমন্যতায় ভুগতেন এবং এ কারণে আর কখনো কোন ব্যাচমেট এর সাথে দেখা করেননি, তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টাও সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছেন। নৌ বাহিনীর একটা বেসামরিক করণিক পদে চাকুরী করে তিনিও অবসরে গিয়েছেন।

      জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    জ্বরের কারণে কলেজ ছুটি!
    হিংসে হল শুনে।

    আমাদের সময়ে (আসলে আরও অনেক আগে থেকেই) কলেজে স্থায়ী হাসপাতাল ছিল।
    ওখানে আবার জেনারেল ও আইসোলেশন ওয়ার্ড ভাগ করা ছিল।
    বেশি সিরিয়াস কিছু হলে যার যার কাছের সি এম এইচে (আমাদের যশোর) পাঠিয়ে দেয়া হত।

    জুনিয়রদের খুব প্রিয় জায়গা এই হাসপাতাল।
    রিলাক্স মুডে থাকা যায়।
    তবে, সিনিয়র হলে আর তেমন মজা নেই।


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
    • খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

      জার্নালে ফিরে আসার জন্য অনেক ধন্যবাদ, জুনায়েদ। জ্বরটা অবশ্য তখন অনেকটা মহামারী আকারেই দেখা দিয়েছিলো। আমাদের সময়েও বেশী সিরিয়াস রোগীদেরকে ঢাকা সিএমএইচে নিয়ে আসা হতো, আর কম সিরিয়াসদেরকে মির্জাপুর কুমুদিনি হাসপাতালে। এমসিসিতে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর আমি একবারের জন্যই সেখানে কয়েকদিন ছিলাম। আমার মোটেই ভালো লাগেনি এতটা শুনশান নীরবতা আর আয়েশী বিশ্রাম। হাসপাতালের ফিনাইলের গন্ধটা এখনো নাকে লেগে আছে। আশেপাশে গুঁই সাপের এতটা ঘোরাঘুরিও ভালো লাগতোনা।

      জবাব দিন
  3. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    রইস চাচাকে আমরা বিসিসি তে পেয়েছিলাম।
    আমরা চাচ্চু বলে সম্বোধন করতাম।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  4. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    আমাদের ব্যাচে প্রথম একযট্রা ড্রিল জুটেছিলো আমার ।
    সেই গল্প লিখেছিলাম আমাদের রিইউনিয়ন প্রকাশনায়। এখানেও দিয়েছি "ত্রিরঙ্গ-চতুরঙ্গে মানসপটে ফৌজদারহাটের পঞ্চভুত" লেখায়।
    আর হারিয়ে যাওয়া এমন আমদের ব্যাচেও আছে।
    কিন্তু জ্বরের এমন গল্প মনে হয় একেবারে ইউনিক ।
    মজা পেলাম পড়ে । আর আপনার লেখনীর গুনে মজাটা কয়েক গুণ।

    জবাব দিন
    • খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

      "আমাদের ব্যাচে প্রথম একযট্রা ড্রিল জুটেছিলো আমার" - এ তো এক বিরল সম্মান লুৎফুল! প্রতি ব্যাচের ৫০-৫৫ জন ক্যাডেটদের মধ্যে ক'জনার ভাগ্যেই বা জোটে এমন একটা দূর্লভ মাইলফলক? ব্যাচের প্রথম এক্সট্রা ড্রিল পাবার গৌরব (তখনকার দিনের গ্লানি)?
      গণজ্বরের প্রকোপে (কিছুটা হলেও আরোপিত ও উদ্ভাবিত তো বটেই) ক্যাডেট কলেজ বন্ধ ঘোষণার নজির তো বোধহয় ঐ একটাই।
      লেখাটা পড়ার জন্য এবং মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

      জবাব দিন
  5. মাহবুব (৭৮-৮৪)

    আমরাও খায়রুল ভায়ের "জার্নাল জ্বরে" আক্রান্ত
    "আফসুস ঐ হতভাগ্যদের জন্য যাহারা কোন এক্সট্রা ড্রিলের স্বাদ গ্রহন না করিয়াই ক্যডেট জন্মের ইতি টানিল" :grr:

    জবাব দিন
  6. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    আপনার লেখাগুলো পড়তে দারুণ লাগে। কারণ সময় আলাদা হলেও মানুষগুলো আলাদা হলেও গল্পগুলো একরকম হয়ে যায় কেবলই।

    আমাদের ব্যাচের ইডির খাতা শুরু করেছিলো আমাদের এক বন্ধু ক্লাশ এইটে (আমাদের সময়ে সেভেনকে ইডি দেয়া হতো না খুব সিভিয়ার কিছু না হলে)। ইডির খাতা খোলা সেই বন্ধুর কারণটি ছিলো খুবই সামান্য। প্যারেডে লুজ বেল্ট। উল্লেখ্য লুজ বেল্টে ইডি খাওয়াদের বেল্ট আসলে লুজ হতো না, আসলে তাদের ইডি জুটত যথেষ্ট টাইট বেল্ট না হওয়ায়। আমাদের সেই বন্ধু কলেজ লাইফ শেষ করেছিল এক কম পঞ্চাশে। অবশ্য এই নাম্বারের একটা অংশ ক্লাশ টুয়েলভে ড্রেস রেস্ট্রিকশনে।

    ইডি নিয়ে পরবর্তীতে অনেক মজার ঘটনায় হয়েছে। আসলে ব্যাপক প্রয়োগে ইডি শেষ দিকে তার নিজস্ব আতঙ্ক হারিয়ে ফেলেছিলো।
    ======
    গণ জ্বর আমাদের সময় হয়েছিলো। তবে হাসপাতালের সুব্যবস্থা থাকায় ছুটি হয় নি। ত্বে হাসাপাতালে ক্যাডেট সংকুলান না হওয়ায়, হাউস রেস্ট নামক এক বিকল্প ব্যবস্থা চালু হয়েছিলো। হাউস রেস্ট ক্যাডেটকে ডাইনিনয়ে গিয়ে খাবার খাওয়ার কষ্ট টুকু কেবল করতে হত যতদূর মনে পড়ে। এই হাউস রেস্ট নিয়ে ফাঁকিবাজির রাজত্ব কায়েম হয়েছিল ক্যাডেটদের মাজে। হাউস রেস্ট ২ দিনকে বাড়িয়ে ৪-৫দিনও করত পোলাপান। আর হাউস রেস্ট শেষ হলে সেটাকে বাড়ানোর প্রেসেসটা ডিটেইলস মনে নেই। তবে সে সময় বিশ্বকাপ ফুটবল চলছিল (৯৮) আর কলেজের জেনারেটর নষ্ট হওয়ায়, মোটামুটি বেশিরভাগ দিনই প্রেপ অফ থাকত। খুব সম্ভবত সেই সময়টা আমাদের কলেজে ক্যাডেটদের স্বর্গরাজ্য ছিলো।

    জবাব দিন
    • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

      সংযুক্তি: রউফ ভাই আমাদের সময়েও হাউস বেয়াড়া ছিলেন। তবে তখন তিনি আর আপনাদের সময়ের মত টগবগে তরুণ নয় বরং আমাদের শাসন করা অভিভাবক সুলভ একজনই ছিলেন। তবে দু ক্ষেত্রেই তার সততা একই রকমভাবে ক্যাডেটদের জন্য পীড়াদায়ক ছিল।

      জবাব দিন
      • খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

        রউফ ভাইকে একজন নীতিবান ব্যক্তি হিসেবেই চিনেছিলাম। আবার পরিণত বয়সে এসে তিনি ক্যাডেটদের প্রতি যথেষ্ট স্নেহপ্রবণ হয়েছিলেন ন্যায়নীতির সীমারেখার মধ্যে থেকেই, এমন খবরও পেতাম। তার সততার কারণেই হয়তোবা তার পুত্রগণ আজ মোটামুটি সুশিক্ষিত এবং সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত।
        মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

        জবাব দিন
    • খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

      আমার লেখাটা পড়ে তোমার সময়ের স্মৃতিচারণ করার জন্য ধন্যবাদ। ইডি'র অতি মাত্রায় ব্যবহার কখনোই কাম্য নয়। কারণ, একবার কোন ক্যাডেটের মন থেকে ইডি'র ভয়টা উঠে গেলে সে ভীষণ বেপরোয়া হয়ে যেতে পারে। আর তখন প্রয়োজন হতে পারে উচ্চতর শাস্তির, যা শুধু ক্যাডেটের নয়, তার পরিবারেও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

      জবাব দিন
  7. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    একবার আমাদের কলেজে জলবসন্তের প্রকোপ দেখা দেয়।
    এতটাই যে ওয়ার্কসপ খলি করে তা আইসোলেশন ওয়ার্ডে পরিনত করতে হয়েছিল।
    যারাই সুস্থ্য হতো, তাদেরকেই কয়েক সপ্তাহের ছুটিতে পাঠিয়ে দেয়া হতো।
    এভাবে চলতে চলতে একসময় টার্ম এন্ড ছুটি এসে পড়ে।
    গুটি কয়েক অনাক্রান্তদের সাথে আমিও যথাসময়ে ছুটিতে যাই।
    আর বাসায় পৌছেই আক্রান্ত হয়ে পড়ি।

    প্রায় পুরো ছুটিটাই কেটেছিল অসুস্থ্যতায়।

    একই জলবসন্তে আক্রান্ত হয়ে কত কত জন দীর্ঘ ছুটি কাটালো আর আমি কিনা ছুটি হারালাম - এই দুঃখটা দীর্ঘদিন বয়ে বেড়াতে হয়েছিল......


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।