জীবনের জার্নাল – ৭

কাজের ছেলেভাইভার পর মেডিকেল টেস্টকে নিছক আনুষ্ঠানিকতা বই অন্য কিছু মনে হয়নি আমার, যদিও সেখানেও প্রায় ২০/২৫ জন প্রার্থী বিভিন্ন কারণে বাদ পড়েছিলো। শেষ বৈতরণীটি পার হবার পর থেকে মনটা বেশ ফুরফুরে থাকতো। আমারও, বাড়ীর আর সবারও। চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচিত হয়েছি, এটা জানার পর আর স্কুলে যাবার তাগিদ অনুভব করতাম না, বাড়ী থেকেও তেমন কোন চাপ ছিলোনা। এই প্রথম জীবন প্রণালীর শক্ত বুনটে কেমন যেন এক ঢিলে ঢালা ভাব অনুভব করতে শুরু করলাম। অবশেষে সেই প্রতীক্ষার পালা শেষ হলো। হাতে এলো কলেজে যোগদানের নির্দেশাবলী। অপেক্ষা করতে লাগলাম, কবে আসবে ০৭-০৭-১৯৬৭।

বাসার ছোটখাট বাজার সদাই করার দায়িত্বটা অনেক ছোট বয়সে আমার কাঁধে চাপে। কারণ ভাইবোনদের সিরিয়ালে আমার অবস্থানটা ঠিক মধ্যখানে। আমার ওপরেও বোন, নীচেও বোন। বড় বোনের ওপরের ভাইটা বাজার করার জন্য অতিশয় মুরুব্বি। আর ছোটবোনের ছোট ভাইটা অতিশয় পিচ্চি। মাসের বাজারটা আব্বা নিজেই করতেন। দৈনন্দিনের দায়িত্বটা তাই এসে পড়েছিল আমার উপর। তখন তো আর এখনকার মত জায়গায় জায়গায় শপিং মল ছিলোনা। পাড়ায় পাড়ায় দুই একটা মুদি দোকান ছিলো বটে, তবে সেখানে সব্জী, মাছ মাংসের মত কোন “ফ্রেশ” আইটেম পাওয়া যেতোনা। বাজারের আভ্যন্তরীণ বিচিত্র অভিজ্ঞতা তো রয়েছেই, বাজারে যাওয়া আসার পথেও যে প্রতিদিন কত চমকপ্রদ ঘটনার সম্মুখীন হতাম! ছোটবেলায় যোগীন্দ্রনাথ সরকারের “কাজের ছেলে” কবিতাটা পড়ে খুব মজা পেয়েছিলাম। বাজার করা শুরু করার পর থেকে আমার অবস্থাটাও অচিরেই সেই কাজের ছেলেটার মতই হয়ে গেলো। (কবিতাটা আপনারা ভুলে গিয়ে থাকলে এখানে পাবেন, ক্লিক বা কপি পেস্ট করলেই পাবেন)- https://tazin02.wordpress.com/2011/02/01/%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%9B%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%97%E0%A7%80%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A5/

গ্রামে গঞ্জে গেলে দেখা যায় যে প্রতি তিন চারশ’ গজ দূরে দূরে একেকটা মাচা বা টং এ মুদি দ্রব্যের কিংবা চা পান এর পসরা সাজিয়ে বসা আছে একজন যুবক অথবা মধ্যবয়স্ক দোকানদার বা চা ওয়ালা, অপেক্ষায় কখন তার দোকানে ক্রেতা কিংবা শুধুই একজন গসিপিস্ট আসবে, আর চায়ের কাপে ঝড় তুলবে। পৃথিবীর আর কোন দেশে যুবশক্তির এমন অপচয় হয়না। অবশ্য বাল্যকালে, এমনকি কিশোরবেলায় আমিও পথেঘাটে ক্যানভাসারদের আহ্বানে সোৎসাহে সাড়া দিতাম এবং তাদের উৎসুক শ্রোতার সারিতে ভিড়ে যেতাম। বলাই বাহুল্য, তাদের চমৎকার বাকপটুতা আর মার্কেটিং স্কিল দেখে আমি এতটাই বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যেতাম যে প্রায়শঃ আমাকে পকেটমারদের খপ্পরে পড়ে পকেটে যা দু’চার টাকা থাকতো, সেটাও হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে বাড়ী ফিরতে হতো।

সাব্যস্ত হয়েছিলো, ০৭-০৭-৬৭ তে বাসায় আর্লি লাঞ্চ করে আমি আর আব্বা দু’জনে মিলে রওনা হবো আমার নতুন ঠিকানার উদ্দেশ্যে। বাসার সবাই মিলে সানন্দে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো যে ঐ দিনের বাজারটা আমার না করলেও চলবে। কিন্তু আমার কাছে এ দায়িত্বমুক্তির সিদ্ধান্তটা ভালো লাগছিলো না। বরং খুব চাচ্ছিলাম, শেষ দিনের দায়িত্বটাও ঠিকভাবে পালন করে যেতে। উসখুস করতে করতে আম্মার কাছে গিয়ে আমার ইচ্ছেটার কথা জানালাম। আম্মা প্রথমে কিছুটা আপত্তি করলেও আমার পীড়াপীড়ীতে বাজারের থলেটা হাতে ধরিয়ে দিলেন। তবে হয়তো তাঁর সেদিন আমার উপর খুব মায়া হয়েছিলো। আমি সবসময় হাঁটাপথেই বাজারে যাওয়া আসা করতাম। রিক্সায় যেতে হলে চার আনা (২৫ পয়সা) ভাড়া গুনতে হতো। আম্মা কোন কোন দিন রিক্সাভাড়া বাবদ আমার হাতে অতিরিক্ত চার আনা ধরিয়ে দিলে আমি সেটা বাঁচিয়ে আমার পছন্দমত খরচ করতাম। সেদিন আম্মা আমাকে পাঁচ আনা দিয়ে বললেন, তাড়াতাড়ি বাজার করে যেন রিক্সায় করে বাসায় আসি। আমি রওনা হবার সাথে সাথে আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি এলো। আজ ১০-৭-১৫ তারিখে যখন এই মুহূর্তে আমি এই লেখাটা লিখছি (১২ টা ১২), এখন যেমন আকাশটা মুষলধারে ঝরছে, ঠিক তেমন করেই সেদিন আকাশটা ভেঙ্গে এসেছিলো। অন্যদিন হলে দৌড়ে কোথাও কাভার নিতাম। কিন্তু সেদিন তা ইচ্ছে হলোনা। আমার কোন দুঃখে আমি কখনো কারো সামনে কাঁদতে পারতাম না। ভীষণ লজ্জা লাগতো। কেন যেন সেদিন সকাল থেকেই আমার মনের মধ্যে খুব দুঃখ দুঃখ একটা ভাব এসে জমা হচ্ছিলো। প্রকৃ্তি তার অপার উদারতায় আমার জন্য ইমোশনাল ক্যাথার্সিস (emotional catharsis) এর একটা ব্যবস্থা করে দিলো। আমি বৃষ্টিতে পথ চলতে চলতে প্রাণভরে কাঁদতে শুরু করলাম।

চলবে…

ঢাকা
১০ জুলাই ২০১৫
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

২,৬২৪ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “জীবনের জার্নাল – ৭”

    • খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

      তখনকার দিনে বাসার একজন মুরুব্বী যাওয়াটাই বোধহয় যথেষ্ট ছিলো। দু'জন গেলে বেশী ভালো হতো। আমার মত আর যারা ছিলো, তাদেরও কারো কারো একজন, কারো কারো দু'জন প্যারেন্টস/অভিভাবক গিয়েছিলেন। তখন যাদের নিজস্ব গাড়ী ছিলো, তারা অবশ্য গাড়ী ভর্তি করেই গিয়েছিলো। আমাদের কোন গাড়ী ছিলোনা। আর তখন এখনকার মত রেন্ট এ কার সিস্টেমও চালু ছিলোনা। হাতে গোনা মাত্র কয়েকজনের অভিভাবকের নিজস্ব গাড়ী ছিলো।
      ভালই হয়েছিলো যে বাসার আর কেউ যায়নি। যেতে চায়নি বলা যাবেনা, তাদের যাবার ব্যবস্থা করা হয়নি। যত বেশী কেউ যেতো, তাদের বিদায়ের ক্ষণে আমার ব্যথাটা তত বেশী তীব্র হতো।
      লিঙ্কটার ব্যবস্থা করে দেবার জন্য ধন্যবাদ। আমার অনুচ্ছেদটার ভেতরে এটা ঢুকানো যাবে কি?

      জবাব দিন
      • কাজী সাদিক (৮৪-৯০)

        লিখার মধ্যেও ঠিক করে দেওয়া যায়। তবে তার জন্য আপনাকে এডিটে গিয়ে করতে হবে। "নভিসেস প্যারেড"-এ বলছেঃ
        "লেখার যে অংশটুকু লিংক করতে চান সেটুকু সিলেক্ট করে টেক্সট বক্সের উপরের বারে “link” আইকনটিতে ক্লিক করুন। ক্লিক করলে একটি বক্স আসবে যার মাধ্যমে লিংকটি চাওয়া হবে। এই বক্সে কাংখিত লিংকটি পেস্ট করে “Ok” বাটনে ক্লিক করুন। এতেই সেই অংশটুকু লিংক্‌ড হয়ে যাবে।"

        জবাব দিন
  1. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    খুব সুন্দর লিখেছেন খায়রুল ভাই।
    আমিও মুদির দোকান থেকে বাসার জন্য টুকটাক কেনাকাটা করতাম। কিন্তু বাজার কখনো করতাম না। আমাকে দু-একবার বাজার করতে দিয়ে মুরুব্বীরা বুঝে গিয়েছিলেন যে, একে দিয়ে বাজার করা হবেনা। আমিও বুঝে গিয়েছিলাম যে অতসব ঠগ-বাটপারের সাথে আমার পেরে ওঠা সম্ভব নয়। সেই বাজার করা এখনো শিখতে পারিনি।

    জবাব দিন
    • খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

      পরিবারের জন্য বাজার করার দায়িত্বটা আমার কাঁধে fait accompli হিসেবে চেপে বসেছিলো। এর কারণ কিছুটা হাল্কাভাবে আগেই উল্লেখ করেছি। তবে এই দায়িত্বপালন আমাকে অনেক সমৃদ্ধ করেছে। প্রথমতঃ, তোমার ভাষায় "অতসব ঠগ-বাটপারের সাথে পেরে ওঠার" বুদ্ধিটুকু ছোটবেলা থেকেই রপ্ত করতে শিখেছিলাম, যদিও সেটা ছিল অনেক মূল্যের বিনিময়ে। তারপর, এটা আমার নিজের উপর আত্মবিশ্বাস অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছিলো। বাজারে যাওয়া আসার পথের নানারকম বৈচিত্র আমাকে আকর্ষণ করতো। বাকপটু ক্যানভাসারদের একনিষ্ঠ শ্রোতা হিসেবে আম জনতার সাথেও টুকটাক আলাপ সালাপ হতো। মাস পিপল এর সাথে এই যোগাযোগ আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতো এবং আমার ভেতরের জড়তাকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতো। পঁচা মাছ চিনতে শিখেছিলাম, কয়েকদফা বাসায় নিয়ে আসার পর। ওজনের কারচুপি ধরতে শিখেছিলাম। সবচেয়ে উপকার হয়েছিলো আরেকটা বিষয়ে। সেটা এ প্রজন্মের বা তোমাদের প্রজন্মের লোকেরাও বুঝতে পারবে কিনা কে জানে। আমি যখন বাজার করতাম, তখনো দেশে মেট্রিক সিস্টেম চালু হয়নি। পণ্য ক্রয় বিক্রয় হতো মণ, সের, ছটাক আর তোলার হিসেবে। তখন পাটিগণিতে নানারকম আর্যা (some kind of rhymed arithmetical formulae) শেখানো হতো। আমরা শ্লোকের সাহায্যে সেগুলো ধারাপাতের Tables এর ন্যায় মুখস্থ করতাম। বাজার করার সময় সেগুলো ম্যাজিকের ন্যায় কাজে দিতো। দুর্ভাগ্যজনক, যে সেসব আর্যা বা শ্লোক আজ আর আমার মনে নেই। থাকলে দুই একটা উদাহরণ দিলে তুমি সহজে বুঝতে পারতে। তবে, উদাহরণস্বরূপ সহজ ভাষায় বলি, কোন জিনিসের মূল্য মণপ্রতি যত টাকা হবে, আড়াই সের এর দাম ঠিক তত আনা হবে। চালের মণ ৪০ টাকা হলে আড়াই সের এর দাম হবে ৪০ আনা, অর্থাৎ আড়াই টাকা। এভাবে পাটিগণিতের আর্যা প্রয়োগ করে আমি খুব দ্রুত মানসিকভাবে ক্রয়কৃ্ত পণ্যের হিসেব বের করতে পারদর্শী হয়ে উঠেছিলাম। পরবর্তীতে চাকুরী জীবনে যখন একাউন্টস ক্লার্ক তার একাউন্টস লেজার সাইন করানোর জন্য আমার কাছে নিয়ে আসতো, আমি পুরো পৃষ্ঠার সব এন্ট্রির যোগফল মুখে মুখে বের করে ফেলতে পারতাম কোন ক্যালকুলেটর ছাড়াই। একাউন্টস ক্লার্ক ক্যালকুলেটরের সাহায্য নিয়ে যতক্ষণে রেজাল্ট বের করতো, আমি তার অর্ধেক সময়ে নির্ভুলভাবে ফলাফল বের করতে পারতাম।
      তোমার মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই এতকিছু বললাম, রমিত। কথা বলতে বলতে Blew my own trumpet, এজন্য আশাকরি মনে কিছু নেবে না।

      জবাব দিন
      • ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

        খুব ভালো বলেছেন খায়রুল ভাই। আসলেই বাংলাদেশে বাজার করতে জানলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে, ব্যবসায় অনেক ভালো করা সম্ভব।// ক্যানভাসারদের লেকচার শুনে মুগ্ধ হয়নি এমন শিশু বোধহয় কমই পাওয়া যাবে। আমিও মুগ্ধ হতাম। বাঙালীর বাকপটুতা প্রশংসনীয়। তবে আজকালকার সচিবদের বেশীরভাগকেই দেখি ভালো বক্তৃতা দিতে পারেনা, পুঁথী পাঠ করে।// আমি যখন ছোট তখনো মণ-সের-ছটাক-তোলা ইত্যাদি প্রচলিত ছিলো। তিরাশী-চুরাশী সালের দিকে ওগুলো উঠে গেলো। আর্যা আমিও দু'একটা মুখস্থ করেছিলাম ক্লাশ ওয়ান-টুতে থাকতে, হালকা মনে পড়ে। তারপর আর ওগুলোর বালাই ছিলোনা। তবে আধুনিক অংকে আমাকে এক্সপার্ট করে দিয়েছিলেন আমার এক কাজিন বড় ভাই। সেই সুবাদে অংকটা আমার খুব কাজে লেগেছিলো, এখনও লাগছে।

        জবাব দিন
  2. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    আপনি ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার আগে কেঁদেছিলেন, আমি কাঁদিনি, হেসেছিলাম। শুধু আমার বড় বোন কেঁদেছিলেন। আমি এতো ভালো একটা জায়গায় যাচ্ছি, আর উনি কাঁদছেন কেন সেটা সেদিন বুঝতে পারিনি। ক্যাডেট কলেজে ভর্তির দিনও হেসেছিলাম। কলেজের আনুষ্ঠানিকতা, বেশভূষা, পরিবেশ সবই আমার কাছে ভালো লেগেছিলো।

    জবাব দিন
  3. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    রমিত, ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার দিন আরো অনেকে যে কারণে কাঁদে, আমার কাঁদাটা অনেকাংশে ঠিক সে কারণে ছিলোনা। সেদিন সকাল থেকেই আমি বেশ বিষন্ন ছিলাম এ কথা ভেবে যে আমি পরিবারে একটা শূণ্যতা রেখে যাচ্ছি। আমি যে কাজটা করতাম, এখন থেকে সে কাজটা বাবাকে করতে হবে, ছোট ভাইবোনগুলো তাদের একজন খেলার সাথী হারাবে, মা তার ফুটফরমাশ খাটার মত একটা হ্যান্ড হারাবে, ইত্যদি ইত্যদি। খুব কম বয়স থেকেই কিছুটা দার্শনিক গোছের ছিলাম বোধহয়, তাই অত শত চিন্তা মাথায় আসতো। সেদিন আকাশ কালো করা বৃষ্টি নেমেছিলো। কলেজে যাবার পর আব্বা আমাকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন যে এর পর থেকে যখনই আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যেতো, তখনই আমার ছোট ভাইবোন গুলো সুর ধরে আমায় ডাকতো যেন আমি তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরি, কেননা বৃষ্টি নামবে।
    "কলেজের আনুষ্ঠানিকতা, বেশভূষা, পরিবেশ সবই আমার কাছে ভালো লেগেছিলো" - আমারও। বলতে দ্বিধা নেই, কলেজে পৌঁছে যখন বন্ধুদের সাথে মিশে যেতাম, তখন বাসার কথা একদম ভুলেই যেতাম।

    জবাব দিন
  4. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    সিসিবিতে বেশ কদিন অনিয়মিত হয়ে পড়ায় আগের লিখাটা পরে পড়া হলো ।
    তাতে পড়ার আনন্দ কিছু কমেছে বলে মনে হয়নি ।
    আর আমার মনে পড়লো জীবনে প্রথম একা বাজার করতে যাওয়ার স্মৃতি ।
    আব্বা আমাকে বাজারে পাঠিয়ে পেছন থেকে ফলো করছিলেন । যা আমি মোটেও টের পাইনি ।
    কুড়িটা কৈ মাছ খুব স্বস্তা মনে করে কিনে ফেলেছি । মাছওয়ালা তা বাজারের ব্যাগে দিতে উদ্যত হয়েছে এমন সময় পেছন থেকে আব্বার গলা শুনতে পেলাম ।
    "না ওগুলো নেবো না।" আমি খুব বিস্মিত হলাম আব্বার আবির্ভাবে আর আহত হলাম আমার প্রথম বাজার করার কৃতিত্বটা এভাবে ফসকে যাওয়ার পরিণাম দেখে। ওখান থেকে সরে আসতেই আব্বা বললেন, মাছগুলো জ্যান্ত ছিলো না বলেই দামে কম চেয়েছিলো। আর জ্যান্ত না হলে কৈ মাছ খাওয়ার কোনো মানে নেই, কারণ তাতে কোনো স্বাদ নেই। সময়টা ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি ।

    জবাব দিন
  5. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    আমরা যেদিন প্রথম কলেজে গেলাম, ২৫/০৬/১৯৭৮-এ সেদিনও ঘনঘোর বর্ষা ছিল সারা আকাশ জুড়ে।
    ঢাকা থেকে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বিআরটিসির কোচে উঠেছিলাম।
    সারা রাস্তা সেই মেঘ সেই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে যখন কলেজে পৌছুলাম, দেখি সেখানেও একই ভাবে বৃষ্টি ঝরে যাচ্ছে...

    বত্রিশ বছর পর বেশ কজন বন্ধু সপরিবারে ভাড়া করা টুরিস্ট বাস নিয়ে কলেজে বেড়াতে গেলাম ২৫/০৬/২০১০-এ তৎকালীন প্রিন্সিপাল আমাদের সহপাঠি সাজ্জাদের আমন্ত্রনে।
    কি তাজ্জব ব্যাপার! সেদিনটাও সেই একই ভাবে সারা রাস্তা বৃষ্টি আমাদের সাথে সাথে চললো এক্কেবারে ঝিনাইদহ পৌছুনো পর্যন্ত!!!

    বত্রিশ বছরের ব্যবধানে দুইটা দিন আবহওয়াগত ভাবে কিভাবে এতটা মিলে গেল, ভাবতেই অবাক হচ্ছিলাম...

    অবশ্য একটা ঘোর অমিল কিন্তু ছিল।
    ৩২ বছর আগে পৌছে আমরা কলেজ থেকে থেকে প্রিন্সিপালের বাঙ্গলোর দিকে তাকিয়ে দেখেছিলাম।
    আর ৩২ বছর পরে পৌছে আমরা প্রিন্সিপালের বাঙ্গলো থেকে কলেজের দিকে তাকিয়ে দেখেছিলাম...


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  6. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    "৩২ বছর আগে পৌছে আমরা কলেজ থেকে থেকে প্রিন্সিপালের বাঙ্গলোর দিকে তাকিয়ে দেখেছিলাম।
    আর ৩২ বছর পরে পৌছে আমরা প্রিন্সিপালের বাঙ্গলো থেকে কলেজের দিকে তাকিয়ে দেখেছিলাম..." - ঘোর অমিলটা খুব সুন্দর করে তুলে ধরলে!
    বিআরটিসি'র কোচটাও দারুণভাবে মিলে গেছে আমার সাথে।
    পুরনো লেখা পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : লুৎফুল (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।