অশ্রুর বিচিত্র রসায়ন

নারীর দুইটা চক্ষু আছে, যেমন আছে নরের,
মূল কাজটা একই হলেও, ফারাক মাঝে দুয়ের।
নারীর চক্ষু ভরাপুকুর, শাওন মেঘে ঢাকা,
নরের চক্ষু মরুভূমি, জলহীন, করে খাঁ খাঁ।

যতই থাকুক নরের দাপট ভিতর ও বাহির,
পণ সে করুক যতই কঠিন প্রসঙ্গে নারীর,
তার ধনুর্ভঙ্গ পণগুলো সব ভেঙ্গে হয় খানখান,
যখন নারীর গালে অভিমানে বহে অশ্রুবান।

নারীর অশ্রু নাইট্রিক এসিড, লোহাও গলে যায়,
নরের চোখে জল ঝরেনা, ঝাপসা হয়ে রয়।
নারীর চোখের লোনা জলে ভাঙ্গে নরের হিয়া,
যতই কাঁদুক জল ঝরেনা, নরের চক্ষু দিয়া।

ঢাকা
১৫ মার্চ ২০১৪
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

১,৮৫৭ বার দেখা হয়েছে

১৫ টি মন্তব্য : “অশ্রুর বিচিত্র রসায়ন”

  1. সাইদুল (৭৬-৮২)

    চমৎকার।
    আমার শিক্ষক, কবি রফিক নওশাদ আমি সৈনিক পড়াতে গিয়ে বলতেন সৈনিকের ভালোবাসাচোখের জলে নয়, চোখের ক্রোধে।
    আপনি যথার্থ বলেছেন।

    নারীর চোখের লোনা জলে ভাঙ্গে নরের হিয়া,
    যতই কাঁদুক জল ঝরেনা, নরের চক্ষু দিয়া।


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
  2. মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

    চোখ মানুষের অন্যতম প্রিয় অঙ্গ। তাই তো শুনি,

    আমার সারা দেহ খেও গো মাটি
    এই চোখ দুটো মাটি খেও না
    আমি মরে গেলেও তারে দেখার সাধ
    মিটবে না গো মিটবে না।
    (কথা ও সুর: আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, কন্ঠ: সাবিনা ইয়াসমীন, এন্ড্রু কিশোর)

    শুধুই কি প্রিয়াকে দেখবার জন্যে? তবে যে মরে যাবার পর চিতায় শায়িত কবি চিতাগ্নিকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

    রক্ষা করো দুটি চোখ
    হয়তো তাদের
    এখনো দেখার কিছু কিছু বাকি আছে।

    কী দেখার বাকি আছে? পরের পঙক্তিটিতে কবি বলেন-

    অশ্রুপাত শেষ হলে নষ্ট করো আঁখি

    কার অশ্রুপাত? চিতায় শায়িত মরদেহটির নয় নিশ্চয়। কারণ তো তার অশ্রু বিসর্জনের ক্ষমতা তিরোহিত হয়েছে। হ্যাঁ, এই অশ্রুপাত স্বজনের, প্রিয়জনের, বন্ধুজনের, শুভানুধ্যায়ীদের, আরো অনেকের। আরো দেখুন, সেইসব 'অশ্রুপাত' কত মূল্যবান কবির কাছে! যা দেখবার পরে আর কিছু দেখবার প্রয়োজন ফুরোয়। তাই বলেন, 'নষ্ট কর আঁখি'!

    আপনার লেখায় সেই মূল্যবান জিনিসটির কথা এসেছে দেখে ভালো লাগলো। (সম্পাদিত)


    দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

    জবাব দিন
  3. টিটো মোস্তাফিজ

    যতই থাকুক নরের দাপট ভিতর ও বাহির,
    পণ সে করুক যতই কঠিন প্রসঙ্গে নারীর,
    তার ধনুর্ভঙ্গ পণগুলো সব ভেঙ্গে হয় খানখান,
    যখন নারীর গালে অভিমানে বহে অশ্রুবান। :gulli2: :gulli2: :gulli2:


    পুরাদস্তুর বাঙ্গাল

    জবাব দিন
  4. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    🙂 🙂 🙂 🙂

    কবিতার কথা থাক, অশ্রুভেজা চোখের গল্প বলি!

    জীবনের বড় বড় ঘটনায় বাবাগো মাগো মলুমরে গেলুমরে বলে উচ্চস্বরে কাঁদতে না পারলেও কান্নাকাটিতে আমার খানিক 'সুনাম' আছে। স্বজনের মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে বসেছিলাম পাথরের মত। কথা বলি নাই দিনের পর দিন। এখনো মুখে কাঁদতে পারিনা, আমার চোখ কাঁদে সহজেই! মানুষের স্মল এ্যাক্ট অব কাইন্ডনেসে চোখে জল আসে এখনো। ঈদে মাকে কল করে কাঁদিনি এমন হয়নি। হাইওয়েতে অনবদ্য একটি সূযর্াস্ত দেখে, সোনালি ডানার একটি প্রজাপতি দেখে অথবা গেলবার দেশ থেকে ফেরার পর ফ্লাফি আমার মাথায় এসে বসলে সেটি দেখে হাপুশ নয়নে কাঁদলাম। তারার লেখা কবিতা পড়ে তো হামেশাই চোখে জল আসে। মুভি দেখে কান্না করতাম ছোটবেলায়। একাত্তুরের দিনগুলি পড়ছিলাম ময়মনসিংহগামী পদ্মা ট্রেনে বসে। কৈশোর উত্তীর্ণ সেই বয়েসে রুমির জন্য কী কান্নাটাই না করেছিলাম ওড়নায় মুখ ঢেকে! সভ্যতার মুখে থুথু ছিটিয়ে রাজন চলে গেল যেদিন, আমার মুখে শব্দ হয়নি কোন কিন্তু তারা আমার চোখের দিকে তাকিয়েই বললো, কি হয়েছে মা?

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।