খইমুদ্দির খাট

খইমুদ্দি কখনো কোনদিন খাটে শোয়নি।
এবাড়ী ওবাড়ী গেছে দিনমজুর হিসেবে,
গায়ে গতরে খেটেছে। কাঠমিস্ত্রীর সাথে
শ্রমিক হিসেবে ফুট ফরমাস খেটেছে,
একটা একটা করে অংশ জোড়া লাগিয়েছে।
এভাবেই সে তাদের ঘুমের ব্যবস্থা করেছে।

আনমনে খইমুদ্দি অবাক বিস্ময়ে ভেবেছে,
কি করে এমন খাটের উপর মানুষ ঘুমায়!
খইমুদ্দির জীবনের আধেক রাত কেটেছে
একটি গোয়াল ঘরের স্যাঁতস্যাঁতে কোণে,
বাকী আধেক বাঁশতলার একটি ছাপড়ায়,
চট চাটাই দিয়ে পাতা মাটির বিছানায়।

সেই শয্যাসুখেই খইমুদ্দির বর্ধিষ্ণু সংসারে
জন্ম নিয়েছে একে একে দশটি সন্তান।
অসুখ বিসুখে পাঁচটি শৈশবেই অক্কা পেয়েছে,
বাকী পাঁচটি যমের থাবা থেকে ফিরে এসেছে।
তাতেই সুখী ছিল খইমুদ্দি। মাত্র দুটো বিড়ি
দিয়েও সহজেই খইমুদ্দির শ্রম কেনা যেতো।

খইমুদ্দি মাঝে মাঝে দার্শনিকের ভাব নিতো।
গ্রামের কেউ মারা গেলে, কবর খোঁড়ার জন্য
তাকে ডাকা হতো। মুর্দার খাটিয়া দেখে সে
বিড়বিড় করে বলতো, ওটা গরীবের খাট।
সে ঠিকই বলেছিলো। চিরদিন মাটিতে শোয়া
খইমুদ্দি একবারই খাটে শুয়েছিল, সেই খাটে!

ঢাকা
২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৪
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

১,৭৭৩ বার দেখা হয়েছে

১৪ টি মন্তব্য : “খইমুদ্দির খাট”

  1. মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

    শেষ লাইনের আগ পর্যন্ত এটি একটি সাদামাটা গল্প। সেই সাদামাটা গল্পটিই শেষ লাইনে এসে কোন জাদুমন্ত্রে কবিতায় রূপান্তরিত হয়ে গেল। কুর্ণিশ!


    দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

    জবাব দিন
  2. সাইদুল (৭৬-৮২)

    শেষটা একেবারে কাঁপিয়ে দিলো। এ যেন সুকান্তের একটি মোরগের কাহিনী। খাবার খেতে নয়, ;খাবার হিসেবে'

    চমৎকার


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।