চলে যায়…

চলে যায়, উড়ে যায়..
শাবকেরা বড় হলে উড়ে যায়,
তাদের শাবকেরাও উড়ে যায়,
পক্ষীমাতার বুক খালি করে উড়ে যায়…
নীড় খালি পড়ে থাকে, পক্ষীমাতার চোখে ভাসে
দু’ফোঁটা নীর, আর বুকে বাজে শুন্যতার হাহাকার!

যে বুকের উষ্ণতা দিয়ে সে তাদের ঢেকে রাখে,
পরম আদরে ঠোঁটে তাদের আধার ধরে রাখে,
সেই বুক খালি হয়ে আসে, একদিন নিমেষে,
যখন তারা চলে যায়, উড়ে যায়…
আর আধার পড়ে রয় নীড়ে, জানান দিতে,
পক্ষীমাতার কাজ যেন শেষ হয়ে গেছে…

নাড়ীর এ বাঁধন যতই শক্ত হোক,
একদিন দু’দিন করে সেটা ঢিলে হয়ে যায়,
ঢিলে করে দিতে হয়, অবশেষে ছেড়ে দিতে হয়…
অনন্ত আকাশ যারে হাতছানি দিয়ে ডাকে,
সাধ্য কি, স্নেহের মায়াজাল তারে সদা বেঁধে রাখে?
তাই তারে হাসিমুখে যেতে দিতে হয়, সে চলে যায়…

 

পাদটীকাঃ  ভালোবাসা নিম্নমুখী। নিজ সন্তানদের প্রতি স্নেহ ভালোবাসা যতটা গাঢ় হয়, তাদের সন্তানদের প্রতি তা হয় আরও ঢের বেশী।

 

ঢাকা
৩০ এপ্রিল ২০১৫
স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

১,৪৩২ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “চলে যায়…”

  1. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    "Your children are not your children.
    They are the sons and daughters of Life's longing for itself.
    They come through you but not from you,
    And though they are with you yet they belong not to you.

    You may give them your love but not your thoughts,
    For they have their own thoughts.
    You may house their bodies but not their souls,
    For their souls dwell in the house of tomorrow,
    which you cannot visit, not even in your dreams.
    You may strive to be like them,
    but seek not to make them like you.
    For life goes not backward nor tarries with yesterday."

    ~ Kahlil Gibran ~ on Children

    সেই অনাগত ভবিষ্যতের দিকেই আমরা কেবলি এগোই আর দৃশ্যমানতায় ম্রিয়মান হতে থাকে আমাদের অতীত ।

    জবাব দিন
    • খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

      নুপূর, সেজন্যেই তো আমি প্রতিবার কবিতা পোস্ট করার পর তোমার মন্তব্যের প্রতীক্ষায় থাকি। আগে থাকতাম ফেইসবুকের ইসিএফ এর পাতায়, আর এখানকার সদস্য হবার পর থেকে এখন থাকি এখানে। সব কবি লেখকই পাঠকের সাথে কানেক্টেড হতে চায়, কানেক্টেড থাকতে চায়। আর এরকম এ্যাপ্রিসিয়েশন কে না চায়, বলো?

      জবাব দিন
      • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

        আপনার এ কথাটা আমাকে ভীষণভাবে ছুঁয়ে গেল খায়রুল ভাই। ইসিএফ এ আপনার লেখা পড়লেও কদাচিৎ মন্তব্য করেছি/করতে পেরেছি আসলে। ব্লগে যতটা আলোচনা/মন্তব্যে সচ্ছন্দ বোধ করি, ফেসবুকে তা করিনা। একটা তাৎক্ষণিকতার মধ্যে সবসময় চলতে হয় ওখানে। তবু আমার অর্বাচীন মন্তব্যগুলো আপনাকে স্পর্শ করেছে জেনে ভালো লাগছে।

        জবাব দিন
  2. মাহবুব (৭৮-৮৪)

    একবার ভাবি- যদি উলটো হতো? স্নেহ-ভালবাসা উর্ধ মুখি হতো?
    সম্ভবত জীবন চক্র থেমে যেত। প্রকৃতি তাই এই চালাকিটা করে রেখেছে হয়তো!
    এই কবিতায় গভীর জীবন বোধের ছোঁয়া পাই। কবিকে অভিনন্দন :hatsoff:

    জবাব দিন
  3. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    যেদিন কবিতাটা লিখেছিলাম, সেদিন কবিতার নীচে একটা দীর্ঘ পাদটীকা জুড়ে দিয়েছিলাম। পরে ভাবলাম, কবির ব্যাখ্যা পাঠকের স্বাধীন ভাবনাকে ব্যাহত করতে পারে। এই ভেবে কবিতার নীচে মূল পাদটীকার শুধু নির্যাসটুকু উল্লেখ করেছিলাম।
    সেকেন্ড থটে মনে হচ্ছে, মূল পাদটীকাটা আলাদা ভাবে এখানে জানিয়ে দিলে কেমন হয়? তাই দিলামঃ
    "পাদটীকাঃ আজ সকালে ফেইসবুকে "Good bye Arzee" শিরোনামে কিছু ছবি দেখে এই কথাগুলো মনে এলো। ছবিতে একজন স্নেহময়ী রমণী তার মেয়ে, জামাই আর নাতিকে বিমানবন্দরে বিদায় জানানোর সময় কিছু ছবি তুলে "Good bye Arzee" শিরোনামে পোস্ট দেন। Arzee হচ্ছে তার নাতি Arzalaan এর আদুরে নাম। খুবই সাধারণ একটা পারিবারিক ছবি। সবার মুখে একটা স্মিত হাসি আঁকা থাকলেও বিদায়ের বেদনার একটা ছাপ সবার চেহারাতেই মূর্ত ছিলো, এমন কি সেই ছোট্ট শিশু Arzee'র চোখে মুখেও।

    ভালোবাসা নিম্নমুখী। নিজ সন্তানদের প্রতি স্নেহ ভালোবাসা যতটা গাঢ় হয়, তাদের সন্তানদের প্রতি তা হয় আরও ঢের বেশী। এজন্যই ছবির শিরোনামে মেয়ে ফারাশার নামটা না এসে নাতি Arzee'র নামটাই হয়তো অবচেতনে চলে এসেছে। তাদেরকে বিদায় জানিয়ে তিনি শুন্য বুকে ঘরে ফিরে আসবেন, গভীর বেদনা অনুভব করবেন, আবার প্রকৃতির নিয়মেই কিছুদিন পর স্বাভাবিক হয়ে উঠবেন। এরকম একটা উপলব্ধির কথাই বলতে চেয়েছি কবিতায়। একাকীত্বের অবসরে এ ধরণের ছোট ছোট বিচ্ছেদগুলোও মানুষকে ভীষণভাবে কাঁদাতে পারে।

    জবাব দিন
    • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

      একটা লেখার পেছনের গল্পটা জানতে খুবই ইচ্ছে হয় কখনো কখনো। কোন্‌ অভিজ্ঞতা কিংবা বোধের নির্যাস থেকে লেখাটি তৈরী হলো, তাকে পাঠকও উপলব্ধি করতে চায়। শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন তাঁর কয়েকটি কবিতার নেপথ্যের কথা নিয়ে -- বড় মনোহর সেই কথাগুলো।

      এবং আপনি ঠিকই করেছেন আসলে লেখার পেছনের গল্পটাকে মুল লেখায় না দিয়ে। দৃশ্যটাকে আমার মত করে দেখতে পেলাম। সে অভিজ্ঞতার পর নেপথ্যের কথা শুনে ভালোই লাগছে।
      'কানেক্টেড' হলাম বলে মনে হচ্ছে। 🙂 🙂

      জবাব দিন
  4. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    আমার কিন্তু খুব ইচ্ছা, সেই দিনটাতে হা হা করে হাসার উল্লাসে ফেটে পড়ার -
    যেদিন আমার সন্তান নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আর আমি ওদের কাছে অপ্রয়োজনিয় হয়ে উঠবো।
    ইনফ্যাক্ট, আমি এখন থেকেই ওদের উৎসাহ দেই নিজের কাজ যতটা সম্ভব নিজে করতে সে শপিং হোক বা অন্য কোন কিছু।

    সেই দিনটাতে আসলে কি হবে, এখনও জানি না। আমি কি বেদনার্ত হবো? নাকি একাকিত্ব বোধ করে কষ্ট পাবো? - জানি না।
    তবে আমি এর কোনটিই হতে চাই না। আমার সন্তানরা যদি আমাকে আমার জীবদ্দশায়ই অপ্রয়োজনিয় করে ফেলতে পারে, আমি প্রানপন চেষ্টা করবো সেটা কে নিজের একটা বিরল সাফল্য হিসাবে গন্য করতে।

    খুব অনাকাঙ্ক্ষিত বা নিষ্ঠুর কিছু বলে ফেললাম কি???


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  5. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    কিশোর বয়সে যখন প্রথম প্রথম ছুটি শেষে ক্যাডেট কলেজে ফিরতাম, সেদিন সকাল থেকে মা আর ছোট ভাইবোনগুলোর কারণে বিষন্নতায় ভুগতাম। সতীর্থদের সাথে একসাথে হবার পর আবার তা ভুলেও যেতাম। আমার বড় ছেলেটাকে যখন ক্যাডেট কলেজে দিলাম, তখন ওর যাবার দিনেও ওর মায়ের দুঃখ দেখে আমিও বিষন্নতায় ভুগতাম। এ সবই মনের বিচিত্র খেলা!
    "সেই দিনটাতে আসলে কি হবে, এখনও জানি না। আমি কি বেদনার্ত হবো? নাকি একাকিত্ব বোধ করে কষ্ট পাবো? - জানি না।"
    আমি জানি, আমি দুটোই হবো। আমি বাসায় কম কথা বলি, যার কারণে সন্তানদের প্রতি আমার ভালোবাসার মাত্রাটা অনেকাংশে অপ্রকাশিত। সবাই জানে, মানুষ মেয়ে বিদায় দিয়ে কাঁদে। আমার কোন মেয়ে নাই। আমার ছেলেরা যেদিন আমায় ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাবে, আমি খুব ব্যথিত বোধ করবো সন্দেহ নাই, একাকীত্বও বোধ করবো।

    জবাব দিন
  6. সাইদুল (৭৬-৮২)

    যে বুকের উষ্ণতা দিয়ে সে তাদের ঢেকে রাখে,
    পরম আদরে ঠোঁটে তাদের আধার ধরে রাখে,
    সেই বুক খালি হয়ে আসে, একদিন নিমেষে,
    যখন তারা চলে যায়, উড়ে যায়…

    অসাধারণ! কী কঠিন সত্যি অথচ কেমন অকপট প্রকাশ


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।