স্বল্পায়ু কবি রবার্ট লুই স্টিভেনসন, তার একটি কবিতা ও আমার অনুবাদ

আমাদের সময়ে রবার্ট লুই স্টিভেনসন এর From a Railway Carriage কবিতাটি মাধ্যমিক স্কুলের সিলেবাসে পাঠ্য ছিলো। তাই এ কবিতাটি প্রথম সম্ভবতঃ দশম শ্রেণীতে থাকাকালীন পড়েছিলাম। কবিতার ছন্দময়তা, গতিময়তা আর দৃশ্যমান বর্ণনাময়তায় তখনই মুগ্ধ হয়েছিলাম। এখনও যতবার পড়ি, ততবারই মুগ্ধ হই। তখন পুরো কবিতাটি মুখস্থ ছিলো, প্রথম আট পংক্তি এখনো আছে। তার মূল ইংরেজী কবিতাটি ও আমার বাংলা অনুবাদ, দুটোই এখানে দিলামঃ

From a Railway Carriage

Faster than fairies, faster than witches,
Bridges and houses, hedges and ditches;
And charging along like troops in a battle
All through the meadows the horses and cattle:
All of the sights of the hill and the plain
Fly as thick as driving rain;
And ever again, in the wink of an eye,
Painted stations whistle by.
Here is a child who clambers and scrambles,
All by himself and gathering brambles;
Here is a tramp who stands and gazes;
And here is the green for stringing the daisies!
Here is a cart runaway in the road
Lumping along with man and load;
And here is a mill, and there is a river:
Each a glimpse and gone forever!

– Robert Louis Stevenson

ট্রেনের কামরা থেকে (অনুবাদ কবিতা)

পরী আর ডাইনীদের চেয়েও দ্রুত সরে যায়,
ঝোপঝাড় গুলো যায়, ডোবানালা গুলো যায়,
তৃণভূমি, গবাদি আর অশ্বপালের মাঝ দিয়ে
ধাওয়া করা যুদ্ধংদেহী সেনানীর মত যায়;
পাহাড় আর সমতলভূমির সেসব দৃশ্যাবলী
বৃষ্টির ঘন ঝাপটার মত উড়ে উড়ে যায়;
আবার কখনো সখনো চোখের পলকে যেন
রঙ করা স্টেশনগুলো শিস দিয়ে চলে যায়।
ঐ দেখো, একা একা শিশু এক কত কষ্ট করে,
কাঁটাপূর্ণ গাছ বেয়ে গুল্মফল পাড়ে;
ভাবুক এক ভবঘুরে হেথা পলকহীন চোখে,
দাঁঁড়িয়ে দাঁঁড়িয়ে শুধু চারিপাশ দেখে;
আর সূত্রব্য ডেইজিরা তো এ সবুজেই ফোটে!
হেথায় পালায় এক পথ ছোটা ঘোড়ার গাড়ী,
সাথে জড়ো করা বোঝা আর আরোহী ভারী।
হেথা আছে শস্য ভাঙার কল, হোথা আছে নদী,
ক্ষণিকের তরে দেখা দিয়ে এরা চলে যায় সবই!

মূলঃ Robert Louis Stevenson
অনুবাদঃ খায়রুল আহসান

ঢাকা
০৫ মার্চ ২০১৫
স্বত্ব সংরক্ষিত।

স্কটিশ কবি Robert Louis Stevenson ১৩ নভেম্বর ১৮৫০ সালে স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ শহরে এক সম্ভ্রান্ত মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পুরো শৈশবকালে তিনি ভগ্নস্বাস্থ্যের কারণে শয্যাশায়ী থাকতেন। শৈশবকালে তার নার্স Allison Cunnigham তাকে Pilgrim’s Progress এবং The Old Testament পড়ে শোনাতেন, এটাই ছিল সাহিত্যের সাথে তার প্রথম সরাসরি যোগাযোগ। ১৮৬৭ সালে তিনি বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে Edinburgh University তে যোগদান করেন। তার পিতা চেয়েছিলেন তিনিও তার মত সিভিল ইঞ্জিনীয়ার হবেন, আর তিনিও লোক দেখানো তাই পড়তেন, তবে ভেতরে ভেতরে তিনি ফরাসী ভাষা ও সাহিত্য, স্কটিশ ইতিহাস আর Darwin and Spencer এর কর্ম নিয়ে পড়াশোনা করতেন। পরে অবশ্য একসময় তিনি তার পিতাকে জানিয়েছিলেন যে তিনি ইঞ্জিনীয়ার হতে চান না, বরং তিনি লেখালেখি চালিয়ে যেতে চান। এতে তার পিতা কিছুটা মনোক্ষুন্ন হলেও তারা দু’জনে আপোষ করেন যে রবার্ট পাশাপাশি আইনশাস্ত্র পড়ে যাবেন, এজন্য যে যদি তার কখনো সাহিত্যাকাঙ্ক্ষায় ভাটা পড়ে, তবে তিনি যেন একটি সম্মানজনক পেশায় ফিরে আসতে পারেন।

১৮৭৩ সালে তার স্বাস্থ্যের চরম অবনতি ঘটলে ডাক্তারের পরামর্শে রবার্ট স্বাস্থ্যোদ্ধারের নিমিত্তে দক্ষিণ ফ্রান্সে চলে আসেন। সেখানে স্বাস্থ্যোদ্ধারের পর তিনি পুনরায় এডিনবার্গে চলে আসেন এবং সাংবাদিকতায় যোগ দেন। এ সময় The Fortnightly Review এর মত নামকরা সাময়িকী তার লেখা ছাপতে শুরু করে। সেখানে তিনি পুস্তক সমালোচনা ও ছো্টগল্প লেখা শুরু করেন। এ সময় তিনি তার চেয়ে দশ বছরের বড় Fanny Vandergrift Osbourne নামের এক বিবাহিতা আমেরিকান মহিলার সান্নিধ্যে আসেন এবং তাদের মধ্যে প্রণয় শুরু হয়। পরবর্তীতে তিনেি তার সাথে সানফ্রানসিস্কোতে চলে আসেন এবং সেখান থেকে ঐ মহিলা তার স্বামীর বিরুদ্ধে তালাকাদেশ অর্জনের পর ১৮৮০ সালে তাকে বিয়ে করেন।

প্রচন্ড শীত তার সহ্য হতোনা বলে ১৮৮০ সাল থেকে ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত শীতকালে তারা নিয়মিতভাবে দক্ষিণ ফ্রান্সে চলে যেতেন। ঐ বছরগুলোই ছিলো তার সাহিত্যকর্মের সফল সময়। ১৮৮৩ সালে তার প্রথম উপন্যাস Treasure Island প্রকাশিত হয়। এর পরে প্রকাশিত হয় The Strange Case of Dr. Jekyll and Mr. Hyde (1886) এবং Kidnapped (1886) এবং একজন জনপ্রিয় লেখক হিসেবে তার সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

০৩ ডিসেম্বর ১৮৯৪ তারিখে মাত্র ৪৪ বৎসর বয়সে সাহিত্য রচনারত অবস্থায় তার অকালমৃত্যু হয়। সে সময় তিনি সাহিত্যকর্ম নিয়ে তার স্ত্রীর সাথে আলাপ করছিলেন। হঠাৎ প্রচন্ড মাথাব্যথার কথা বলে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন এবং কয়েক ঘন্টা পরে সেরিব্রাল হেমোরেজের কারণে মারা যান।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।

২,১৮৮ বার দেখা হয়েছে

২১ টি মন্তব্য : “স্বল্পায়ু কবি রবার্ট লুই স্টিভেনসন, তার একটি কবিতা ও আমার অনুবাদ”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    কবিতাটি পড়েছিলাম ফেবু তেই আপনার অনুবাদে।
    অনুবাদ বেশ ভালো লেগেছে। সেই সাথে কবি সম্পর্কিত তথ্যাবলী জুড়ে দেয়ায় ভালো লেগেছে। কবির একটা ছবি যদি দিয়ে দিতেন লেখার সাথে তবে খুশি হতাম। আপনার জন্য লিঙ্ক দিয়ে দিলাম। ক্লিক করুন।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    কবিতা পড়া হয় না বললেই চলে, বুঝিও খুব কম। সাধারণ পাঠক হিসেবে মূল কবিতা আর অনুবাদ দুটোই বেশ ভাল লাগলো। কবি পরিচিতি জুড়ে দেওয়ার ভাবনাটাও দারুন।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।